justice demands that such evidence cannot be made the sole ground of conviction. It may be used only as a corroborative piece of evidence.”
১৯১. জনাব আজমালুল হােসেন কিউসি এ বিষয়ে State of uP os MK Anthonv, AIR 1985 SC 48 মামলাটি উদ্ধৃত করেন। ঐ মামলায় আসামি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছিল। ঐ মামলায় পি.ডব্লিউ-৯ বলেছিল যে, সে আসামিকে সংলগ্ন একটি কক্ষে বসে থাকতে দেখেছিল এবং তাকে দেখে এই সাক্ষী তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “কী হয়েছে” ? এবং পরে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জবাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রার্থনার ভঙ্গিতে বলেছিল, “যে ভুল সে করেছে সেজন্য ঈশ্বর যেন তাকে ক্ষমা করেন, সে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছে।”
১৯১, বিজ্ঞ দায়রা জজ তার সেই বিবৃতিটি নিম্নোক্তভাবে উদ্ধৃত করেন :
“হে ঈশ্বর, আমাকে ক্ষমা করাে, আমি এক ভয়ানক কাজ করেছি; আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করেছি।”
১৯২. ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের সামনে এই প্রশ্নটি এসেছিল যে, সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৯ কর্তৃক প্রদত্ত বর্ণনা মতে-
উপরােক্ত এক্সট্রা-জুডিশিয়াল স্বীকারােক্তি অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্তকরণের ভিত্তি হতে পারে কিনা। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট সাহু ও অন্যান্য (উপরে বর্ণিত) মামলায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলােকে এই মামলার বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন এবং এই অভিমত প্রদান করেছিলেন যে, এমন কোনাে আইন বা যুক্তি নেই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সাক্ষ্য হিসেবে এক্সট্রা-জুডিশিয়াল স্বীকারােক্তি অন্য কোনাে সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা বিশ্বাস করা যাবে না। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট এআইআর ১৯৭৪ এসসি ১৫৪৫ (১৯৭৫), ১ এসসিআর ৭৪৭, এআইআর ১৯৭৫ এসসি ২৫৮, এআইআর ১৯৬৬ এসসি ৪০ এবং এআইআর ১৯৭৭ এসসি ২২৭৪ মামলায় দেওয়া পূর্বের সিদ্ধান্তগুলাের বিশ্লেষণ করে নিম্নোক্ত মতামত প্রদান করেন :
“It thus appears that extra-judicial confession appears to have been treated as a weak piece of evidence but there is no rule of law nor rule of prudence that it cannot be acted upon unless corroborated. If the evidence about extra-judicial confession comes from the mouth of witness/witnesses who appear to be unbiased, not even remotely inimical to the accused, and in respect of whom nothing is brought out which may tend to indicate that he may have a motive for attributing an untruthful statement to the accused; the words spoken to by the witness are clear, unambiguous and unmistakably convey that the accused is the perpetrator of the crime and nothing is omitted by the witness which may militate against it, then after subjecting the evidence of the witness to a rigorous test, on the touchstone of credibility, if it passes the test, the extra-judicial confession can be accepted and can be the basis of a conviction. In such a situation to go in search of corroboration itself tends to cast a shadow of doubt over the evidence. If the evidence of extra-judicial confession is reliable, trustworthy and beyond reproach the same can be relied upon and a conviction can be founded thereon.”
৫০১
১৯৩. কিন্তু বর্তমান আপিলগুলােতে পি.ডব্লিউ-৮ এবং ১৫ কর্তৃক ব্যক্ত এক্সট্রা-জুডিশিয়াল স্বীকারােক্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ, বজলুল হুদা কর্তৃক যেটিই স্বীকার করা হােক না কেন তা পি.ডব্লিউ-৮ কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় তা প্রত্যক্ষ প্রকৃতির সাক্ষ্য। কিন্তু এতে শ্রুত সাক্ষ্যের উপাদান রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১৫ পরােক্ষ প্রকৃতির। তদুপরি, আপিলকারীদের স্বীকারােক্তিমূলক বিবৃতি তাদের কথাবার্তায় হুবহু প্রতিভাত হয়নি, যেমনটি হয়েছিল উপরে বর্ণিত মামলায়।
১৯৪. এখানে এটি প্রতীয়মান হয় যে, আপিলকারী বজলুল হুদার বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযােগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ এএফএম মহিতুল ইসলাম (পি.ডব্লিউ-১), হাবিলদার মাে: কুদুস শিকদার (পি.ডব্লিউ-৪), নায়েক সুবেদার আব্দুল গনি (পি.ডব্লিউ-৫), হাবিলদার গানার সােহরাব আলী (পি.ডব্লিউ-৬), এ.এল.ডি সিরাজুল হক (পি.ডব্লিউ-১২), লে. নায়েক আব্দুল খালেক (পি.ডব্লিউ-২১), হাবিলদার আব্দুল আজিজ (পি.ডব্লিউ-২২)-কে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করেছে। হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাদের প্রদত্ত রায়ে বিস্তারিতভাবে এই সাক্ষীদের সাক্ষ্য তুলে ধরেছেন।
১৯৫. এজাহারকারী পি.ডব্লিউ-১ ঘটনার সময়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে প্রেসিডেন্টের পি.এ
হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি (সাক্ষী) বলেছেন যে, ঘটনার দিন ভাের ৪.৩০/০৫টার সময় টেলিফোন মেকানিক আব্দুল মতিন তাকে (সাক্ষী) ঘুম থেকে ডেকে তােলেন এবং বলেন যে, প্রেসিডেন্ট তার (সাক্ষী) সাথে ফোনে কথা বলতে চাইছেন। এরপর তিনি (সাক্ষী) ফোন ধরলে প্রেসিডেন্ট তাকে বলেন যে, দুষ্কৃতকারীরা তাঁর ভগ্নিপতি সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণ করেছে এবং পুলিশ কন্ট্রোল রুমে তাকে (সাক্ষী) যােগাযােগ করতে নির্দেশ দেন। তিনি (সাক্ষী) চেষ্টা করেও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যােগাযােগ করতে ব্যর্থ হন; যদিও গণভবনে সংযােগ পান, কিন্তু কেউ উত্তর দেয়নি। ইতােমধ্যে প্রেসিডেন্ট নীচে অফিস রুমে নেমে আসেন এবং নিজেই তার (সাক্ষী) কাছ থেকে রিসিভারটি নিয়ে কথা বলতে চান। ঠিক সেই সময় এক ঝাঁক বুলেট অফিস রুমের দেয়ালে আঘাত করে, কাচের জানালা ভেঙে যায়, তখন তারা টেবিলের পাশে নীচে শুয়ে পড়েন। গুলিবর্ষণের কিছুক্ষণ পরে প্রেসিডেন্ট দোতলায় চলে যান এবং শেখ কামাল নীচে নেমে বারান্দায় দাঁড়ান। ঠিক সেই সময় খাকি এবং কালাে পােশাকধারী ৩/৪ জন সেনা কর্মকর্তা হাতে অস্ত্রসহ তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং আপিলকারী বজলুল হুদা শেখ কামালের পায়ে গুলি করলে তিনি লুটিয়ে পড়েন এবং তিনি (শেখ কামাল) পি.ডব্লিউ-১ (সাক্ষী)-কে আক্রমণকারীদের এটি বলতে বলেন যে, তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে। পি.ডব্লিউ-১ আক্রমণকারীদেরকে শেখ কামালের পরিচয় জানালে আপিলকারী বজলুল হুদা শেখ কামালকে লক্ষ করে ব্রাশ ফায়ার করে। একটি বুলেট তার পায়ে এবং অন্যটি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৫০-এর পায়ে আঘাত করেছিল। শেখ কামাল ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার এক পর্যায়ে পি.ডব্লিউ-৫০ তাকে (পি.ডব্লিউ-১) পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে চায় এবং যখন ঘাতকরা দরজার কাছে আসে তখন বজলুল হুদা তার চুল ধরে টেনে পেছনে নিয়ে আসে। তার (বজলুল হুদা) সাথে আরেকজন সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তা ছিল। বজলুল হুদা পি.ডব্লিউ-১ এবং অন্যদের মেইন গেটের সামনে লাইন করে দাঁড় করায়। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরে তারা বঙ্গবন্ধুর উচ্চ কণ্ঠস্বর শুনতে পান। এরপরই তিনি (সাক্ষী) এলােপাতাড়ি গুলি ও নারীদের আর্তচিৎকার শুনতে পান। তিনি (সাক্ষী) এটিও বর্ণনা করেছেন যে, শেখ নাসেরকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং কীভাবে- ফারুক রহমানের জিজ্ঞাসায় বজলুল হুদা বলেছিল, “অল আর ফিনিশড”।।
৫০২
তিনি (পি.ডব্লিউ-১) বজলুল হুদার ঐ কথা শুনে বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ডিফেন্স এই সাক্ষীকে জেরা করাকালে শেখ কামালের হত্যাসম্পর্কিত এই সাক্ষীর সাক্ষ্য চ্যালেঞ্জ করেনি এবং সেহেতু, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য অবিতর্কিত রয়েছে। পি.ডব্লিউ-৪ ফিল্ড আর্মি রেজিমেন্টের একজন জওয়ান। ঘটনার সময় তিনি তার কোম্পানির অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কর্তব্যরত ছিলেন। এই সাক্ষী বলেন যে, বজলুল হুদা ও অন্য তিনজন ছিলেন ফিল্ড আর্টিলারি ইউনিটের সেনা কর্মকর্তা। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ভাের ৫টার সময় তিনি (সাক্ষী) সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাবকে রােড নম্বর ৩১ বাসভবনের সামনে জিপ থেকে নামতে দেখেছিলেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবন প্রহরার জন্য ঐ বাড়িটিকে অস্থায়ী ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করে সেখানে তিনি (সাক্ষী) ও অন্য গার্ডরা অবস্থান করছিলেন। এরপর তিনি (সাক্ষী) অন্য গার্ডদের সাথে নিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে পৌছে তারা বিউগলের সুরে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তখন তিনি (সাক্ষী) দেখেছিলেন লেকের দক্ষিণ দিক থেকে প্রেসিডেন্টের বাসভবন লক্ষ করে এলােপাতাড়ি গুলিবর্ষণ হচ্ছে এবং ঐ সময় কালাে ও খাকি পােশাকধারী সেনা কর্মকর্তারা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে চিৎকার করতে করতে বাসভবনে প্রবেশ করছিল। তখন তিনি (সাক্ষী)। গেটের কাছে বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও অন্যদের দেখেছিলেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা শেখ। কামালকে দেখে বজলুল হুদা স্টেনগান থেকে তাকে গুলি করে এবং শেখ কামাল অভ্যর্থনা কক্ষের ভেতরে লুটিয়ে নিচে পড়ে যান। বজলুল হুদা আবার শেখ কামালকে গুলি করে এবং তাঁকে হত্যা করে।
তারপর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) তার ফোর্সসহ গুলি করতে করতে দোতলায় উঠেছিল। বজলুল হুদা এবং নূর হােসেন ফোর্সসহ তাকে অনুসরণ করে। এই সাক্ষীও তাদের নির্দেশনা অনুসারে তাদেরকে অনুসরণ করেছিল। এ সময় তিনি (সাক্ষী) দেখেছিলেন যে, মহিউদ্দীন ও তার ফোর্স প্রেসিডেন্টকে নীচতলার দিকে নিয়ে আসে, যখন প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘তােরা কী চাস? এবং এর পরপরই বজলুল হুদা ও নূর হােসেন তাদের স্টেনগান থেকে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করলে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। বজলুল হুদা ও মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)-কে এই সাক্ষী গেটে দেখেছিলেন। বজলুল হুদা, মেজর নূর হােসেন ও তার ফোর্স দোতলার দিকে যাচ্ছিল যখন বজলুল হুদা এবং মেজর নূর হােসেন প্রেসিডেন্টকে সিঁড়িতে গুলি করেছিল- মর্মে এই সাক্ষীর জবানবন্দি তার জেরাতে বজলুল হুদা কর্তৃক অস্বীকৃত হয়নি বা কোনাে। সাজেশনও দেওয়া হয়নি এবং সেহেতু, এই সাক্ষীর সাক্ষ্যের incriminating part অখণ্ডিত (uncontroverted) রয়েছে। আপিলকারী মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এই সাক্ষীর এই মর্মে প্রদত্ত সাক্ষ্য চ্যালেঞ্জ করেনি যে, এই সাক্ষী তাকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের গেটে চিনতে পেরেছিল এবং দেখেছিল
মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও তার ফোর্স বঙ্গবন্ধুকে নীচতলার দিকে নিয়ে আসছে। ১৯৬. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৫ও আর্টিলারি ইউনিটের একজন জওয়ান, যিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি বলেন যে, তিনি ঘটনার দিন ভাের ৫টার সময় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন এবং তারপর পতাকা উত্তোলনের পর তিনি (সাক্ষী) দেখেন যে, প্রেসিডেন্টের বাসভবন লক্ষ করে এলােপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি (সাক্ষী) গার্ড রুমের দিকে যান। ৫/৭ মিনিট পরে গুলিবর্ষণ থেমে যায়। এ সময় তিনি বজলুল হুদা, মেজর নূর এবং খাকি ও কালাে পােশাকধারী অন্য জওয়ানদের বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে একটি গাড়ি থেকে নামতে দেখেন। বজলুল হুদা তার কাছে কিছু জানতে চায় এবং তারপর ওয়্যারলেসে আরেকজনের সাথে কথা বলে। এর ঠিক পরপর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এবং তার ফোর্স পূর্ব দিক থেকে এসে ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করে। তখন তাকে (সাক্ষী) ও অন্য নিরাপত্তা প্রহরীদের গার্ডরুমে আটক
৫০৩
করে রাখা হয়েছিল। এই সাক্ষী (পি.ডব্লিউ-৫) বজলুল হুদা ও মহিউদ্দীনকে (ল্যান্সার) চিনতে পেরেছিল, যখন তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গুলিবর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করছিল- সাক্ষীর এই বিবৃতি ডিফেন্স চ্যালেঞ্জ করেনি।
১৯৭. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৬ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গার্ড রেজিমেন্টের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি (সাক্ষী) বলেন যে, ১৫ আগস্ট ভাের ৪.৩০ মিনিটে হাবিলদার গনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গার্ড রুমের সামনে সব সিকিউরিটি স্টাফকে ফল-ইন করিয়ে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর কালাে পােশাকধারী ফোর্স নিয়ে ২/৩টি ট্রাক এসে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের পশ্চিম দিকে এসে থামে এবং লেকের দিক থেকে প্রেসিডেন্টের বাসভবন লক্ষ করে গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছিল। পি.ডব্লিউ-১ ও পি.ডব্লিউ-৪ প্রদত্ত সাক্ষ্য সমর্থন করে এই সাক্ষী বলেন যে, বজলুল হুদা ও কালাে পােশাকধারী ল্যান্সার ইউনিটের একজন অফিসার এবং আর্টিলারি ইউনিটের কয়েকজন জওয়ান প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করেছিল। এর কিছুক্ষণ পর বজলুল হুদা ও আরেকজন শেখ কামালকে গুলি করে এবং গুলির আঘাতে তিনি রিসিপশন কক্ষের ভেতরে লুটিয়ে পড়েন। বজলুল হুদা তখন তাকে লক্ষ করে আবার গুলি করে। এরপর বজলুল হুদা ও অন্য একজন অফিসার দোতলায় যায়। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি (সাক্ষী) গুলিবর্ষণের আওয়াজ ও নারীদের আর্তচিৎকার শুনতে পান। এই সাক্ষীর জেরাতে তার দেওয়া জবানবন্দির incriminating অংশ বজলুল হুদা কর্তক চ্যালেঞ্জ করা হয়নি এবং সেহেত, পি.ডব্লিউ-৬ দেখেছিলেন যে, বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করে হত্যা করেছিল মর্মে পি.ডব্লিউ-৬ প্রদত্ত সাক্ষ্য অবিতর্কিত রয়েছে।
১৯৮. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১১-এর বর্ণনামতে ১৪ আগস্ট রাতে তিনি তার দোকানের সামনে আয়ােজিত নৈশকালীন প্যারেডে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি (সাক্ষী) বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এবং ফারুক রহমানকে চিনতে পেরেছিলেন। এই সাক্ষী আরাে বলেন যে, ভাের ৪টার সময় তিনি অন্যদের সাথে একটি গাড়িযােগে রওনা হয়ে ভাের ৪.৩০ মিনিটে যখন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ৮০ গজ পশ্চিমে আসেন তখন তাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। এরপর রিসালদার সারওয়ার তাদেরকে মহিউদ্দীনের আদেশ অনুসরণ করতে বলে। মহিউদ্দীন তাদেরকে নির্দেশ দেয় বাসভবনের সামনে কারাে চলাচলের অনুমতি না দিতে এবং কর্তব্যরত পুলিশদের নিরস্ত্র করতে বলে। এরপর তিনি (সাক্ষী) বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ভেতর থেকে গুলিবর্ষণ এবং হ্যান্ডস আপ’ বলার শব্দ শুনতে পান। রিসালদার সারওয়ার তাকে নির্দেশ দেয়, যেন কেউ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করতে না পারে এবং সেই সময় মহিউদ্দীন, মেজর নূর, বজলুল হুদা ও অন্যরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তিনি (সাক্ষী) বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ভেতর থেকে গুলিবর্ষণের আওয়াজ ও নারীদের আর্তচিৎকার শুনতে পান। এরপর মহিউদ্দীন, মেজর নূর, বজলুল হুদা বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসে এবং তখন মেজর নূর সুবেদার মেজরকে নির্দেশ দেয় সব শেষ হয়েছে কিনা তা দেখতে। সারওয়ারের মাধ্যমে বজলুল হুদা তাকে নির্দেশ দেয় লেকের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লােকজনকে সরিয়ে দিতে। এরপর তিনি (সাক্ষী) ট্যাঙ্ক চলাচলের শব্দ শুনতে পান এবং একটি ট্যাঙ্ক প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে আসে, যেটি থেকে ফারুক রহমান নেমে আসে। মহিউদ্দীন, মেজর নূর, বজলুল হুদা ও অন্যরা তার কাছে আসে এবং কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে। এরপর ফারুক রহমান ট্যাঙ্ক নিয়ে চলে যায়। ঘটনার সাথে বজলুল হুদার সম্পৃক্ততা বিষয়ে এই সাক্ষীর জবানবন্দি প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি এবং সেহেতু, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য অবিতর্কিত রয়ে গেছে।
১৯৯, সংশ্লিষ্ট সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১২ ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল ল্যান্সার ইউনিটে কর্তব্যরত ছিলেন। ফারুক রহমান ছিল এই ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার। পি.ডব্লিউ-১২ বলেন যে, প্যারেড গ্রাউন্ডে তিনি।
৫০৪
আপিলকারী বজলুল হুদা এবং অন্য অভিযুক্ত ফারুক রহমান ও মহিউদ্দীনকে (ল্যান্সার) দেখেছিলেন। প্যারেডের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছিল রাত ৩.৩০-এর পরে যখন তিনি (সাক্ষী) আপিলকারী বজলুল হুদা, ফারুক রহমান, মহিউদ্দীনসহ (ল্যান্সার) অন্যদের দেখেছিলেন এবং ফারুক রহমান তাদের সাথে মেজর ডালিম, বজলুল হুদা ও অন্য একজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। ফারুক রহমান ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাদেরকে জানায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রেসিডেন্ট সেই মিটিংয়ে দেশে রাজতন্ত্র চালুর ঘােষণা দেবেন এবং তারা ঐ রাজতন্ত্র সমর্থন করে না। তাই তারা সেনাবাহিনীর লােকদের তাদের নির্দেশ অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছে।
এরপর ফারুক রহমান ভাণ্ডার থেকে অস্ত্র আনার নির্দেশ দেয় এবং সেই নির্দেশ অনুসারে তারা অস্ত্রশস্ত্র বের করে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসে। এরপর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) তাদেরকে গাড়িতে ওঠার নির্দেশ দেয়। সেনা কর্মকর্তারা তিনটি ট্রাকে ওঠে এবং অন্যরা ওঠে আরেকটি ট্রাকে। ভাের ৪.৩০ মিনিটে তারা বালুরঘাট ক্যান্টনমেন্ট রেল ক্রসিং, ফার্মগেট ও মিরপুর রােড হয়ে ধানমন্ডি ৩২-এ গিয়েছিল। ৩২ নম্বর রােডের মাথায় এসে মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) তাদেরকে ট্রাক থেকে নামার নির্দেশ দেয়। এরপর মহিউদ্দীন। (ল্যান্সার) তাদেরকে ব্রিফ করে যে, তারা যেন গুলিবর্ষণের শব্দ পেয়ে ভীত না হয়। এরপর রােড ৩২-এ কাউকে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সে তাদেরকে নির্দেশ দেয়। এরপর সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১২ প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সংঘটিত অন্য ঘটনাগুলােও বর্ণনা করেন। বজলুল। হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), ডালিম ও ফারুক রহমানকে প্যারেড গ্রাউন্ডে চিনতে পারা এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবন অভিমুখে গাড়িবহর অগ্রসর হওয়া সম্পর্কে তাদের অপরাধের দায় উল্লেখে এই সাক্ষী তার জবানবন্দিতে যা বলেছেন তা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।
২০০. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২১ সংশ্লিষ্ট সময়ে পাপা ব্যাটারির দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারিতে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি বলেন যে, নৈশকালীন প্যারেডে তিনি যােগ দিয়েছিলেন এবং তারপর তাকে অন্য সেনাদের সাথে বিমানবন্দর রানওয়ের দক্ষিণ দিকে রাখা হয়। রাত অনুমান ০২টার সময় মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), বজলুল হুদা এবং অন্যদের সাথে নিয়ে কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদ সেখানে আসে। মেজর রশিদ তাদেরকে অস্ত্র ও গােলাবারুদসহ প্রস্তুত হতে বলেছিল- জরুরি এক দায়িত্বে তাদের প্রেরণ করা হবে এই কথা বলে। রাত ৪.৩০ মিনিটে ৩২ নম্বর রােডে ট্রাক এসে পৌঁছায় এবং তখন তাদেরকে ট্রাক থেকে নামতে বলা হয়। কমান্ডিং অফিসার তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয় ৩২ নম্বর রােডে কাউকে চলাচলের অনুমতি না দিতে। তারপর ফজরের আজানের পরে তিনি (সাক্ষী) পূর্ব দিক থেকে গুলির আওয়াজ শুনেছিলেন এবং এরপর তিনি (সাক্ষী) জানতে পারেন যে, আপিলকারী এবং অন্য অভিযুক্তরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে।
২০১. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২২ সংশ্লিষ্ট সময়ে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির একজন সিপাহি ছিলেন। তিনি বলেন যে, ১৪ আগস্টের নৈশকালীন প্যারেডে তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। রাত অনুমান ২.৩০ মিনিটে কমান্ডিং অফিসার খােন্দকার আব্দুর রশিদ আপিলকারী বজলুল হুদা ও অন্য অফিসারদের সাথে সেখানে আসে। মেজর রশিদ তাদেরকে এক বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিল এবং বলেছিল, প্রয়ােজনে তাদের গুলি ছুড়তে হতে পারে। তিনি (সাক্ষী) ৩২ নম্বর রােডে তাদের আসা। ও আপিলকারীকে চিনতে পারা সম্পর্কে পি.ডব্লিউ-২১ প্রদত্ত সাক্ষ্য সমর্থন করেছেন। আপিলকারী এই সাক্ষীকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
২০২. আপিলকারী মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)-এর বিরুদ্ধে প্রণীত হত্যার অভিযােগ প্রমাণের জন্য প্রসিকিউশন পক্ষ পি.ডব্লিউ-৪, ৫, ৭, ১১, ১২, ২১, ২২-কে পরীক্ষা করেছে।
৫০৫
২০৩. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৪ বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের প্রবেশপথে তিনি মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও বজলুল কে চিনতে পেরেছিলেন। এই আপিলকারী (মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)] তার ইউনিটের ফোর্সসহ গুলি করতে করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দোতলায় যায়। তারপর তারা প্রেসিডেন্টকে নিচতলায় নামিয়ে আনতে থাকে এবং তখন বজলুল হুদা ও মেজর নূর সিঁড়িতে তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) গুলি করে হত্যা করে। প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর এই আপিলকারী ও অন্যরা নীচে নেমে আসে এবং দক্ষিণ দিকে চলে যায়। ঘটনার সাথে আপিলকারীর সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এই সাক্ষীর প্রদত্ত দোষারােপমূলক বক্তব্য তাকে জেরা করাকালে এই আপিলকারী চ্যালেঞ্জ করেনি। সেহেতু, আপিলকারী তার ফোর্সসহ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গুলি করতে করতে প্রবেশ করেছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে অস্ত্রের মুখে নিচে নামিয়ে এনেছিল মর্মে এই সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্য অবিতর্কিত রয়ে গেছে।
২০৪. এই আপিলকারী তার ফোর্সসহ গুলি করতে করতে বাসভবনে প্রবেশ করেছিল মর্মে পি.ডব্লিউ-৪-এর প্রদত্ত সাক্ষ্য পি.ডব্লিউ-৫ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। আপিলকারী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের প্রদত্ত জবানবন্দি চ্যালেঞ্জ করেনি এবং সেহেতু এই সাক্ষীর বর্ণনা মতে ঘটনাস্থলে আপিলকারীকে চিনতে পারা এবং হত্যাকাণ্ডে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ অবিতর্কিত রয়েছে। পি.ডব্লিউ-১১ প্যারেডে আপিলকারীকে চিনতে পেরেছিলেন এবং দুজনকে সিভিল ড্রেসে দেখেছিলেন, যারা ১৪ আগস্ট রাত ১২টায় আপিলকারীর অফিস থেকে বের হয়ে এসেছিল এবং সেই সময় আপিলকারী তাদের একজনকে ‘হুদা’ নাম ধরে ডেকে তার কাছে আসতে বলেছিল। এই সাক্ষী এটিও বলেন যে, যে দুজন সিভিল ড্রেসে ছিল তাদের জন্য আপিলকারী আর্মি ড্রেসের ব্যবস্থা করেছিল। বজলুল হুদার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালােচনাকালে এই আপিলকারীর সম্পৃক্ততার বিষয়টিও আলােচনা করা হয়েছে।
২০৫. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১২-এর বর্ণনামতে, তিনিও ১৪ আগস্ট রাতে প্যারেড গ্রাউন্ডে এই আপিলকারীকে চিনতে পেরেছিলেন। আপিলকারী প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের গাড়িতে ওঠার নির্দেশ দেয় এবং এরপর তারা ছয়টা ট্রাকযােগে বালুরঘাট, ক্যান্টনমেন্ট রেল ক্রসিং-মহাখালী রােড ও ফার্মগেট হয়ে রাত ০৪.৩০ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ রােডের মাথায় এসে পৌছায়। তিনি (সাক্ষী) আপিলকারীর সাথে একই ট্রাকে ছিলেন এবং রােড ৩১-এর মাথায় আপিলকারী তাদের সবাইকে ট্রাক থেকে নামার নির্দেশ দেয়। এরপর এই আপিলকারী তাদেরকে ব্রিফ করে বলে যে, তারা যেন বাসভবনের ভেতরে থাকা মেজর ডালিমের ফোর্সের গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনে ভীত না হয়। এরপর আপিলকারী কয়েকজন ফোর্স সাথে নিয়ে রােড ৩২-এর বাসভবনে প্রবেশ করেছিল। আপিলকারী তার ফোর্সসহ ৩২ নম্বর রােডে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করেছিল। এ সম্পর্কে এই সাক্ষীর জবানবন্দির incriminating part আপিলকারী কর্তৃক জেরাতে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। আপিলকারী বজলুল হুদার অপরাধমূলক সম্পৃক্ততা বিবেচনার সময় এই সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্য বর্ণনা করা হয়েছে। প্যারেড গ্রাউন্ডে তার উপস্থিতি এবং ঘটনার ঠিক আগে ৩২ নম্বর রােডে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ সম্পর্কে এই সাক্ষী তার জবানবন্দিতে যা বলেছেন তিনি তা তার জেরাতেও পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।
২০৬. বজলুল হুদার সম্পৃক্ততা বিবেচনার সময় পি.ডব্লিউ-২১-এর যে সাক্ষ্য ইতােমধ্যে আলােচনা করা হয়েছে তা পি.ডব্লিউ-২২ সাক্ষ্য প্রদানপূর্বক সমর্থন করেছেন। তিনি (পি.ডব্লিউ-২২) আরাে বর্ণনা করেছেন যে, তাকে পি.ডব্লিউ-২১ ও অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটি খালের পাশে ৩২ নম্বর রােডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কমান্ডার তাদের নির্দেশ দিয়েছিল, যেন কোনাে বহিরাগত ৩২ নম্বর রােডে প্রবেশ করতে না পারে। এরপর গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিনি (সাক্ষী) নায়েক নজরুল, সিপাহি
৫০৬
খালেক ও অন্যদের সাথে নিয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হন এবং একটি বাড়ির সামনে আর্টিলারি ইউনিট ও ল্যান্সার ইউনিটের সেনা কর্মকর্তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে, বাড়িটি প্রেসিডেন্টের বাসভবন। এরপর তিনি (সাক্ষী) গার্ডদের, কামান্ডার নজরুল, খালেক ও অন্যদের সাথে নিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে প্রবেশ করে মৃতদেহগুলাে দেখতে পান। এরপর তিনি (সাক্ষী) বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বাসভবনের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও অন্যরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। অপরাধে যুক্ত করে এই সাক্ষী কর্তৃক বিবৃত জবানবন্দি তার জেরায় আপিলকারী কর্তৃক চ্যালেঞ্জ করা হয়নি এবং সেহেতু, তার সাক্ষ্য অবিতর্কিত রয়ে গেছে।
২০৭. ফারুক রহমানের বিরুদ্ধে প্রণীত হত্যার অভিযােগ প্রমাণের জন্য প্রসিকিউশন পি.ডব্লিউ-১, ৪, ১১ এবং ১২-কে পরীক্ষা করেছে।
২০৮. পি.ডব্লিউ-১ সাক্ষ্য প্রদানকালে বলেন যে, ঘটনার সময় তিনি প্রেসিডেন্টের বাসভবনের গেটে ফারুক রহমানকে দেখেছিলেন এবং তখন ফারুক রহমান জানতে চাইলে বজলুল হুদা বলেছিল- “অল আর ফিনিশড”। এই সাক্ষী কর্তৃক আপিলকারীকে চিনতে পারার বিষয়টি তার জেরাতে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।
২০৯. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৪-এর বর্ণনামতে, ঘটনার সময় মেজর ফারুক ট্যাঙ্কে চড়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের গেটের সামনে এসেছিল এবং সেই সময় মেজর নূর, মেজর আজিজ পাশা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), বজলুল হুদা ও অন্যরা তার কাছে আসে ও কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে। এই সাক্ষী ডেকে উপস্থিত ফারুক রহমানকে শনাক্ত করেন এবং বলেন যে, এর কিছুক্ষণ পরে ফারুক রহমান বজলুল হুদা ও সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাবকে ডাকে এবং বজলুল হুদাকে মেজর পদমর্যাদার ও সুবেদার আব্দুল ওয়াহাবকে লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার ব্যাজ পরিয়ে দেয় এবং তারপর তাদেরকে যথাক্রমে মেজর হুদা ও লেফটেন্যান্ট জোয়ার্দার বলে সম্বােধন করে। ঘটনার সময় বা প্রায় একই সময়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের গেটে এই আপিলকারীর উপস্থিতি সম্পর্কে এই সাক্ষী তার জবানবন্দিতে যা বলেছেন তা এই আপিলকারী কর্তৃক অস্বীকৃত হয়নি।
২১০. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১১ জবানবন্দি প্রদানকালে বলেন যে, ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট নৈশকালীন প্যারেডে তিনি টু-আইসি ফারুক রহমানকে দেখেছিলেন এবং সেই সময় রিসালদার মােসলেহ উদ্দিন তাকে স্যালুট দিয়েছিল। এই সাক্ষী এরপর প্রেসিডেন্টের বাসভবন অভিমুখে সৈন্যদের যাত্রার বিষয়টি বর্ণনা করেন। তিনি (সাক্ষী) এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এই সাক্ষী আরাে বলেন যে, ফারুক রহমান একটি ট্যাঙ্কযােগে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটের সামনে এলে মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), মেজর নূর, বজলুল হুদা, রিসালদার সারওয়ার ও আর্টিলারি ইউনিটের অন্য সেনা কর্মকর্তারা তার কাছে। আসে এবং কিছু সময় তার সাথে কথা বলে। এরপর ফারুক রহমান ট্যাঙ্ক নিয়ে চলে যায়। এই সাক্ষী ডকে উপস্থিত ফারুক রহমানকে শনাক্ত করেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে এই সাক্ষী তাকে চিনতে পেরেছিলেন এবং তিনি (সাক্ষী) ঘটনার সময় বা প্রায় একই সময়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটের সামনে তাকে দেখেছিলেন মর্মে এই সাক্ষী প্রদত্ত জবানবন্দি ফারুক রহমান কর্তৃক চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।
২১১. পি.ডব্লিউ-১১-কে সমর্থন করে পি.ডব্লিউ-১২ বর্ণনা করেন যে, তিনি ১৪ আগস্ট রাতের প্যারেডে ফারুক রহমান এবং অন্য অভিযুক্তদের দেখেছিলেন। এই সাক্ষী আরাে বলেন যে, ফারুক রহমান প্যারেড পরিদর্শন করেছিল এবং আরডিএম নৈশ ক্লাস অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয় এবং তারপর তাদেরকে রাত ০৩.৩০-এ ফল-ইন অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফারুক রহমান, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এবং
৫০৭
অন্য আশুযুক্তরা প্যারেড গ্রাউন্ডের পাশে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এবং এরপর তারা তাদের (সৈন্যদের) সামনে আসে। এরপর এই সাক্ষী প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে রােড ৩২ নম্বর অভিমুখে সৈন্যদের যাত্রা করার বিষয়টি বর্ণনা করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছানাের পর কীভাবে গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন সেটিও এই সাক্ষী বর্ণনা করেছেন। আপিলকারী সুলতান শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে প্রণীত হত্যার অভিযােগটি প্রমাণের জন্য সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশন পি.ডব্লিউ-১৪-কে পরীক্ষা করেছে এটি দেখানাের জন্য যে, বালুরঘাটে নৈশকালীন প্যারেডে সে (সুলতান শাহরিয়ার) উপস্থিত ছিল, যেখানে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
২১২. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১৪ সাক্ষ্যদানকালে বলেন যে, বালুরঘাটে নৈশকালীন প্যারেডে তিনি উপস্থিত ছিলেন। প্যারেড শেষ হয়েছিল রাত ২.০০/২.৩০ মিনিটে। ঐ সময় তাদেরকে ফল-ইন অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার পর তিনি (সাক্ষী) ফারুক রহমান, মহিউদ্দীন এবং অন্য অভিযুক্তদের ও দুজন সিভিল পােশাকধারীকে দেখেছিলেন। তিনি (সাক্ষী) তাদের সাথে মেজর রশিদকে আর্টিলারি ইউনিটের কয়েকজন অফিসারের সাথে দেখেছিলেন। ফারুক রহমান একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাদেরকে ফল-ইন পজিশনে থাকার নির্দেশ দেয় এবং তারপর সিভিল ড্রেসে থাকা দুজনকে মেজর ডালিম ও মেজর সুলতান শাহরিয়ার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আপিলকারী ফারুক রহমান বলেছিল পি.ডব্লিউ-১৪ ও অন্য জওয়ানরা তাদের সাথে কাজ করবে এবং তাদের এসব নির্দেশনা মানতে সৈন্যরা বাধ্য ছিল। এরপর এই সাক্ষী ট্যাঙ্কগুলাের চলাচল এবং অন্যান্য ঘটনা বর্ণনা করেন। ডিফেন্স এই সাক্ষীর এই মর্মে প্রদত্ত জবানবন্দি অস্বীকার করেনি যে, বালুরঘাটে রাত ২টা থেকে ২.৩০ পর্যন্ত নৈশ প্যারেডে এই সাক্ষী সিভিল পােশাকে এসেছিল বা ফারুক রহমান আপিলকারীকে জওয়ানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। নৈশ প্যারেডে আপিলকারীর অংশগ্রহণ এবং তাকে চিনতে পারার বিষয়ে এই সাক্ষীর সাক্ষ্য, যা অপরাধের দায় আরােপমূলক, তা অবিতর্কিত রয়ে গেছে।
২১৩. স্বীকৃতমতে এই আপিলকারী সেনাবাহিনী থেকে একজন বরখাস্তকৃত/অব্যাহতি প্রাপ্ত অফিসার। এ কারণে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে তার আর্মির প্যারেডে উপস্থিত থাকার কথা ছিল না। আপিলকারী পক্ষে বিজ্ঞ কৌসুলি দাবি করেছেন যে, এই আপিলকারী বালুরঘাটে উপস্থিত ছিল- এটি দেখানাের জন্য পি.ডব্লিউ-১৪-এর সাক্ষ্যের কোনাে সমর্থনমূলক প্রমাণ নেই। কিন্তু এটি প্রতীয়মান হয় যে, বালুরঘাটে তার উপস্থিতি সম্পর্কে পি.ডব্লিউ-১৪-এর জবানবন্দি এই আপিলকারী অস্বীকার করেনি। পি.ডব্লিউ-১৪-এর জবানবন্দি তুলে ধরে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৪২ ধারার অধীনে পরীক্ষার সময়ও আপিলকারী এ বিষয়ে কোনাে ব্যাখ্যা দেয়নি। এমন কোনাে বিধি বা আইন নেই যে, কোনাে সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্য সমর্থিত না হলে তা গ্রহণ করা যাবে না।
২১৪. সাধারণ নিয়ম হিসেবে আদালত একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা যদি সমর্থিত না-ও হয়ে থাকে। আইন যদি সমর্থনের বিষয়টির উপর জোর দিয়ে না থাকে, তবে সমর্থনের উপর আদালতের জোর দেওয়া উচিত নয়, যদি ঐরূপ একক সাক্ষীর সাক্ষ্যের প্রকৃতি এমন হয় যে, তা সমর্থিত হওয়া প্রয়ােজন এবং একক সাক্ষীর সাক্ষ্য সমর্থিত হওয়া প্রয়ােজন ছিল বা ছিল না সেই প্রশ্নটি অবশ্যই নির্ভর করে প্রত্যেক মামলার ঘটনা ও অবস্থাদির উপর।
২১৫. মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)-এর বিরুদ্ধে প্রণীত হত্যার অভিযােগ প্রমাণের জন্য প্রসিকিউশন সাক্ষী হিসেবে পি.ডব্লিউ-১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৭, ২৯, ৩২, ৩৪ এবং ৩৫-কে পরীক্ষা করেছে। সংশ্লিষ্ট সময়ে পি.ডব্লিউ-১৭ ছিলেন টু-ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের একজন নায়েক, যার পাপা ব্যা
৫০৮
ছিল আপিলকারী। তিনি (সাক্ষী) ১৪ আগস্ট ১৯৭৫-এ বালুরঘাটে নৈশ প্যারেডে আপিলকারীর উপস্থিতির বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই সাক্ষী প্যারেড সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, প্যারেডের পরে মহিউদ্দীন (আর্টিলারি ) পাপা ব্যাটারির কামানের পেছনে দাড়িয়ে ছিল এবং সুবেদার হাশেমকে ডেকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। তারপর হাশেম জওয়ানদের ডেকে নির্দেশনার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়। এরপর আপিলকারী তাদেরকে ট্রাকে ওঠার নির্দেশ দেয় এবং এই সাক্ষীসহ কিউবেক ব্যাটারি থেকে ৪/৫ জন বন্দুকধারীকে ডেকে পাঠায়। তারপর হাশেম ছয়টি কামানের ট্রাক পরীক্ষা করে দেখেছিল। এরপর রাত ৩.৩০/৪টার সময় কামান বােঝাই ট্রাকগুলাে অগ্রসর হতে শুরু করে। এই সাক্ষী একই গাড়িতে আপিলকারীর সাথে ছিলেন। রাত ৪টার দিকে ট্রাকগুলাে কলাবাগান এলাকায় পৌছায়। এরপর আপিলকারীর নির্দেশে কামানগুলাে ৩২ নম্বর রােডে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও রক্ষীবাহিনী হেড কোয়ার্টার লক্ষ করে স্থাপন করা হয়েছিল।
এই সাক্ষী আরাে বলেন যে, আপিলকারীর নির্দেশে তারা চার রাউন্ড কামান-গােলা ছুড়েছিল এবং কিছুক্ষণ পরে যখন সকালের আলাে ফুটে উঠেছিল তখন তারা আপিলকারীর নির্দেশে কামানগুলাে বন্ধ করে এবং সেগুলাে ট্রাকে তুলে ব্যারাকে ফিরে যায়। এই সাক্ষী প্রদত্ত সাক্ষ্যের দোষারােপমূলক অংশ তার জেরাতে আপিলকারী কর্তৃক চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।
২১৬. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১৮ টু-ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের একজন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন যে, আপিলকারী তাদের ব্যাটারি কমান্ডার ছিলেন। এই সাক্ষী ১৪ আগস্ট রাতের নৈশ প্যারেড, যেখানে এই আপিলকারী ও অন্য অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাক্ষী) বলেন যে, নৈশ প্রশিক্ষণটি রাত ১২.৩০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং এই আপিলকারী ঐ প্যারেড পরিদর্শন করেছিল। পি.ডব্লিউ-১৭-কে সমর্থন করে এই সাক্ষী বলেন যে, রাত অনুমান ৩.৩০/৪টার সময় আবুল কালাম তাদের ফল-ইন পজিশনে রাখে এবং তখন ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ও আপিলকারী সেখানে আসে এবং ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাদের বলে যে, রক্ষীবাহিনীকে নজরদারিতে রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাদের করতে হবে এবং তাদেরকে গাড়িতে ওঠার নির্দেশ দেয়। এই সাক্ষী এরপর বর্ণনা করেন যে, তাদের গাড়িগুলাে ধানমন্ডি অভিমুখে যাত্রা করে যখন তিনি (সাক্ষী) চার রাউন্ড গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরে এই আপিলকারী তাদেরকে কামানগুলাে জড়াে করতে বলেছিল। তার নির্দেশ অনুসারে তারা গণভবনের দিকে অগ্রসর হয়েছিল এবং সেখানে পৌঁছার পর আপিলকারী গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং এক ঘণ্টা পরে ফিরে এসে তাদেরকে নিউ মার্কেট হয়ে রেডিও স্টেশন যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
২১৭. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২১ টু-ফিল্ড আর্টিলারি পাপা ব্যাটারির একজন সিপাহি। তিনি সাক্ষ্য দানকালে বলেন যে, পাপা ব্যাটারির কমান্ডার ছিল আপিলকারী। তিনি (সাক্ষী) নৈশ প্যারেড, যেখানে আপিলকারী মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) ও অন্য অভিযুক্তরা উপস্তিত ছিল, সে বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাক্ষী) আরাে বলেন যে, রাত অনুমান ৪.০০/৪.৩০ মিনিটে অস্ত্রসহ তাদের ট্রাক ৩২ নম্বর রােড অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল এবং রােড ৩২-এ গিয়ে থামার পর সেনাবাহিনীর কয়েকজনকে গাড়ি থেকে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ৩২ নম্বর রােড ধরে কাউকে চলাচলের অনুমতি না দিতেও তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই সাক্ষীর সাক্ষ্য ডিফেন্স কর্তৃক কোনােভাবেই চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। পি.ডব্লিউ-২২, ২৪ এবং ২৫ বিমানবন্দর এলাকায় পাপা ব্যাটারির টু-ফিল্ড আর্টিলারি ইউনিটের ১৪
৫০৯
আগস্ট রাতের প্যারেডের বর্ণনা দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, কমান্ডার আপিলকারী ঐ প্যারেডে উপস্থিত ছিল। তদের সাক্ষ্য এই আপিলকারী কর্তৃক অস্বীকৃত হয়নি। পি.ডব্লিউ-২৫ আরাে বলেছেন যে, প্যারেড শেষে ফারুক রহমান তাদেরকে ব্রিফ করেছিল।
২১৮. সংশ্লিষ্ট সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২৭ মহিউদ্দীন (আর্টিলারি)-এর অধীন পাপা ব্যটারির টু-ফিল্ড আর্টিলারির সিপাহি ছিলেন। তিনি (সাক্ষী) ১৪ আগস্ট রাতের নৈশ প্যারেড বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাক্ষী) বলেন যে, আপিলকারীর নির্দেশে ও তার আদেশে তিনি একটি গাড়িতে ওঠেন এবং গাড়িটি যখন বালুরঘাটে আসে তখন আপিলকারী তাদের বলেছিল যে, রক্ষীবাহিনী সৈন্যদের আক্রমণ করতে পারে। তারপর তিনি একটি গাড়িতে কামান যুক্ত রয়েছে দেখেন এবং অন্য গাড়িগুলােতেও কামান যুক্ত ছিল। এরপর তারা মহাখালী-ফার্মগেট-গ্রিন রােড-এলিফ্যান্ট রােড হয়ে কলাবাগান অভিমুখে অগ্রসর হন। এরপর কলাবাগানের কাছে তাদের কয়েকজনকে গাড়ি থেকে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং আপিলকারী তাদের নির্দেশ দিয়েছিল যেন ঐ রাস্তায় কেউ চলাচল করতে না পারে। এই সাক্ষী আরাে বলেন যে, যখন সূর্য উদিত হয় তখন একটি আর্মির গাড়িতে করে তাদেরকে গণভবনে নিয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে তিনি রেডিও মারফত মেজর ডালিমের কণ্ঠে শুনেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এই সাক্ষীর সাক্ষ্যের দোষারােপমূলক অংশ এই আপিলকারী চ্যালেঞ্জ করেনি।
পি.ডব্লিউ-২৯ টু-ফিল্ড আর্টিলারি ইউনিটের পাপা ব্যাটারির একজন সিপাহি। তিনি বলেন যে, আপিলকারী পাপা ব্যাটারির কমান্ডার ছিল। এই সাক্ষী নৈশ প্যারেডের বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, রাত ০৩.৩০ মিনিটে প্যারেড সমাপ্ত হয়েছিল এবং তারপর তাদেরকে বালুরঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে তারা সেনা কর্মকর্তাদের গাড়িতে অস্ত্র বােঝাই করতে দেখেন। তাদেরকেও অস্ত্র লােড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর তারা শহরের দিকে যাত্রা শুরু করে।
২১৯. পি.ডব্লিউ-৩২ আপিলকারীর কমান্ড অধীন টু-ফিল্ড আর্টিলারির একজন সিপাহি। তিনি বলেন যে, ১৪ আগস্ট নৈশ প্যারেডে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং তাদের ইউনিটকে ফল-ইন পজিশনে রাখা হয়েছিল যখন আপিলকারী ও অন্য অফিসাররা সেখানে উপস্থিত ছিল। তদেরকে রাত ৩./০৩.৩০ মিনিটে দ্বিতীয় বারের জন্য ফল-ইন পজিশনে রাখা হয়েছিল যখন সেখানে মেজর রশিদ ও অন্য অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিল। মেজর রশিদের আদেশে তারা ট্রাকে ওঠেন এবং তখন নায়েক শামসুল ইসলাম তাকে গােলাবরুদ দেয়। তিনি (সাক্ষী) আরাে বলেন যে, ফজরের আজানের পূর্বে তাদের ট্রাক চলতে শুরু করে এবং যখন তারা তেজগাঁও বিমানবন্দরের পাশে পৌছান তখন লেফটেন্যান্ট হাসান তাদেরকে ঐ সড়ক দিয়ে কোনাে যানবাহন চলাচলের অনুমতি না দিতে নির্দেশ দেয়। তিনি (সাক্ষী) আরাে বলেন যে, তিনি এরপর জানতে পেরেছিলেন যে, আপিলকারী এবং অন্য সহযােগী আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। আপিলকারী এই সাক্ষীর সাক্ষ্য কোনােভাবে চ্যালেঞ্জ করেনি।
২২০. রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৩৪ আপিলকারীর কমান্ড অধীন টু-ফিল্ড আর্টিলারির একজন সুবেদার। তিনি (সাক্ষী) বলেন যে, ১৪ আগস্টের নৈশ প্রশিক্ষণে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের ইউনিট ছয়টি বন্দুকসহ চেয়ারম্যান বাড়ি হয়ে নতুন বিমানবন্দর অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল এবং রাত দশটার দিকে গান এরিয়ার কাছে মহিউদ্দীন (আর্টিলারি)-এর অধীনে বন্দুকের গুলিবর্ষণের আওয়াজ শুনতে পান। রাত ২.৩০ মিনিটে তাদেরকে ফল-ইন পজিশনে রাখা হয়েছিল এবং এরপর তারা একটি গাড়িতে উঠে
৫১০
মহাখালী হয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি অভিমুখে অগ্রসর হয় এবং সেখান থেকে তাদের গাড়ি উত্তর দিকে মােড় নিয়ে মিরপুর রােড ধরে এগােতে থাকে। এরপর গাড়িটি একটি লেকের পাশে থামে এবং তখন আপিলকারী বন্দুকের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ঐ সড়কে কাউকে চলাচলের অনুমতি না দিতে। আপিলকারী এই সাক্ষীর সাক্ষ্য চ্যালেঞ্জ করেনি।
২২১. পি.ডব্লিউ-৩৪-কে সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৩৫ বলেন যে, তিনি টু-ফিল্ড আর্টিলারির পাপা
ব্যাটারির একজন সুবেদার মেজর ছিলেন এবং এটির কমান্ডার ছিল আপিলকারী। এই সাক্ষী ১৪ আগস্টের নৈশ প্রশিক্ষণের বিস্তারিত বর্ণনা দেন এবং বলেন যে, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর আপিলকারীদের কাছে প্যারেডটি হস্তান্তর করেছিল। তিনি (সাক্ষী) আরাে বলেন যে, ঘটনার পর তিনি প্রেসিডেন্টের হত্যার কারণ সম্পর্কে ফোর্সকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং তখন তিনি (সাক্ষী) জানতে পারেন যে, এই আপিলকারী ও অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। আপিলকারী এই সাক্ষীর জাবানবন্দি চ্যালেঞ্জ করেনি।
২২২. নথিতে থাকা সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ১৫ আগস্টে শেখ কামাল এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে আপিলকারী বজলুল হুদার অংশগ্রহণ সম্পর্কে তার বিরুদ্ধে নথিতে অবিতর্কিত সাক্ষ্য রয়েছে। পি.ডব্লিউ-১, ৪ এবং ৬ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং তারা বর্ণনা করেছেন যে, বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করে হত্যা করেছিল। পি.ডব্লিউ-৪ এটিও বলেছেন যে, বজলুল হুদা মেজর নূরকে সাথে নিয়ে প্রেসিডেন্টকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তাছাড়া, এই তিনজন সাক্ষী ছাড়াও পি.ডব্লিউ-৫ এবং ৭ ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বজলুল হুদাকে চিনতে পেরেছিলেন। পি.ডব্লিউ-১১, ২১ এবং ২২ এই আপিলকারীকে নৈশ প্যারেডেও দেখেছিলেন, যেখান থেকে সে অন্যদের সাথে নিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে এসেছিল এবং শেখ কামাল ও প্রেসিডেন্টকেও হত্যা করেছিল। সুতরাং, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনায় এই আপিলকারীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল মর্মে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে হত্যার অভিযােগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
২২৩. আপিলকারী ফারুক রহমানের বিরুদ্ধে প্রণীত হত্যার অভিযােগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে পি.ডব্লিউ-১১ এবং ১২ বলেন যে, তারা নৈশ প্যারেডে তাকে দেখেছিলেন, যেখান থেকে সে তার ফোর্সসহ ধানমন্ডি অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল এবং তারপর তাকে ঘটনার সময় বা প্রায় কাছাকাছি সময়ে একটি ট্যাঙ্কসহ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দেখা গিয়েছিল এবং সে তখন বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), নূর হােসেন ও অন্যদের সাথে কথা বলছিল। এরপর সে (ফারুক রহমান) প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছিল। এই সাক্ষীদের সাক্ষ্য এটি পর্যাপ্তভাবে প্রমাণিত করে যে, এই আপিলকারীও ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে হত্যার সাথে তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
২২৪. মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) সম্পর্কে দেখা যায় যে, পি.ডব্লিউ-৪ ও ৫ এই আপিলকারীকে দেখেছিলেন যখন সে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গুলিবর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করছিল। পি.ডব্লিউ-৪ এটিও বলেছেন যে, তিনি দেখেছিলেন আপিলকারী বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি বেয়ে যখন নিচে নামিয়ে নিয়ে আসছিল তখন বজলুল হুদা এবং মেজর নূর তাঁকে (প্রেসিডেন্ট) গুলি করে হত্যা করে। তাছাড়া, এই দুজন সাক্ষী, পি.ডব্লিউ-১১ ঘটনার সময় বা এর কাছাকাছি সময়ে তাকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের গেটে দেখেছিলেন। পি.ডব্লিউ-১২ও
৫১১
ঘটনার ঠিক পূর্বে তাকে (মহিউদ্দীন) দেখেছিলেন, যখন সে ট্রাক থেকে ৩২ নম্বর রােডের প্রবেশপথে নেমেছিল। এই সাক্ষীগণ ছাড়া পি.ডব্লিউ-২১ এবং ২২ও তাকে দেখেছিলেন, যখন ৩২ নম্বর রােডের মাথায় তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং, আমি দেখতে পাই যে, হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে যথার্থ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পি.ডব্লিউ-১৪-এর প্রদত্ত সাক্ষ্য আলােচনাকালে এটিও বলা হয়েছে যে পি.ডব্লিউ-১৪ কর্তৃক এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, বালুরঘাটে ১৪ আগস্টের নৈশ প্যারেডে আপিলকারী সুলতান শাহরিয়ার উপস্থিত ছিল এবং সে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
২২৫. আপিলকারী মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) সম্পর্কে পি.ডব্লিউ-১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৭, ২৯, ৩২, ৩৪ এবং ৩৫ নৈশ প্যারেডে তার উপস্থিতি প্রমাণ করেছেন, যেখান থেকে তার ইউনিটের সেনারা কলাবাগান লেক সার্কাস খেলার মাঠের দিকে অগ্রসর হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ও রক্ষীবাহিনী সদর দফতর লক্ষ করে কামান স্থাপন করেছিল। এই সাক্ষীরা এটি প্রমাণ করেছেন যে, মহিউদ্দিনের আদেশে তার সেনারা কলাবাগান খেলার মাঠ থেকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ও রক্ষীবাহিনী সদর দফতর লক্ষ করে চার রাউন্ড কামানের গােলা নিক্ষেপ করেছিল। এই আপিলকারী সাক্ষীর এই জবানবন্দি অস্বীকার করেনি। নথিতে থাকা এই সাক্ষ্যের আলােকে এটি বলা যায় না যে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনায় এই আপিলকারীকে সম্পৃক্ত করার পর্যাপ্ত কোনাে উপকরণ নেই। নৈশ প্যারেডে অংশগ্রহণের ঘটনাটিকে ব্যতিক্রম হিসেবে অনুমান করা যায় না। এমনকি কলাবাগান খেলার মাঠে কামানসহ তাকে চিনতে পারার পর এবং ঘটনার সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর লক্ষ করে কামানের গােলা নিক্ষেপের বিষয়টির পরও বিজ্ঞ প্রথম বিচারক এটিকে কোনাে ব্যতিক্রম হিসেবে গ্রহণ করেননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোনাে সন্দেহ নেই যে, আপিলকারী ঘটনার সাথে জড়িত ছিল এবং অন্য সহযােগী আসামিদের হত্যাকাণ্ড সংঘটনে সহায়তা করেছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে অত্যন্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
২২৬. আরাে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রসিকিউশন পক্ষের উপরােল্লিখিত সাক্ষীগণের সকলেই ল্যান্সার ও আর্টিলারি ইউনিটের সেনাসদস্য। আপিলকারীগণ ও অন্য সহ-অভিযুক্তরা ঐ ইউনিটগুলােতে কর্মরত ছিল। তাদের সাথে সাক্ষীদের কোনাে শত্রুতা ছিল বা প্রসিকিউশনকে সমর্থন করতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়াটা সাক্ষীদের অভিপ্রায় ছিল তা দেখাতে ডিফেন্স ব্যর্থ হয়েছে। ডিফেন্স এই সাক্ষীদের সাক্ষ্য কোনােভাবে খণ্ডন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাক্ষীগণ কর্তৃক মৌলিক বিষয়গুলাে সম্পর্কে প্রদত্ত সাক্ষ্য চ্যালেঞ্জ না করে বরং তারা (আপিলকারীগণ) কার্যত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাদের অংশগ্রহণ স্বীকার করেছে। সাক্ষীদের সকলেই নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযােগ্য। তাদের সাক্ষ্য নাকচ করার কোনাে জোরালাে কারণ নেই।
হাইকোর্ট ডিভিশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ এবং বিজ্ঞ দায়রা বিচারকও তাদেরকে নিরপেক্ষ ও নির্ভরযােগ্য সাক্ষী হিসেবে বিশ্বাস করেছেন। প্রথম বিজ্ঞ বিচারকও বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), ফারুক রহমান এবং সুলতান শাহরিয়ারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিশ্বাস করেছেন পি.ডব্লিউ-১, ৪, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২২, ২৫ প্রদত্ত সাক্ষ্য বিশ্বাস করেই। কিন্তু তিনি (প্রথম বিজ্ঞ বিচারক) ঘটনার সাথে মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)-এর সম্পৃক্ততা সম্পর্কে পি.ডব্লিউ-১৬, ১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩২ এবং ৩৫ প্রদত্ত সাক্ষ্য বিশ্বাস করেননি। প্রথম বিজ্ঞ বিচারক পি.ডব্লিউ-৪৪ এবং ৪৫-এর সাক্ষ্যের খণ্ডিত বিবেচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, প্যারেডের কমান্ডিং অফিসারের সাথে দণ্ডিত ব্যক্তির উপস্থিত থাকা ছিল ডিউটির অংশ এবং ১৪ আগস্ট রাতের সেই প্যারেড পূর্ব নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত ছিল।
৫১২
প্রথম বিজ্ঞ বিচারক এই স্বীকৃত ঘটনা বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, আপিলকারীরা অন্যদের সাথে নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে ষড়যন্ত্র রচনা করেছিল, ভাণ্ডার থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়েছিল, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী আর্টিলারি সরিয়েছিল, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আর্টিলারির সাথে সেনা নিয়ােজিত করেছিল এবং তারপর তারা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছিল, যা ইতােমধ্যে আলােচনা করা হয়েছে।
২২৭. এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোনাে সাক্ষী বিশ্বাসযােগ্য ও নির্ভরযােগ্য কিনা সে মর্মে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ডিভিশন প্রদত্ত কোনাে সিদ্ধান্ত একটি ঘটনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত কিনা এবং সেই সিদ্ধান্ত এই কোর্টের (আপিল বিভাগ) প্রতি বাধ্যকর ও সেটিকে কি অবশ্যই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করতে হবে? আপিলকারীর বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ Nurul Islam [43 DLR (AD) 6] মামলাটি উদ্ধৃত করেন। চারজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পি.ডব্লিউ-১, ৩, ৭ এবং ৮-এর সাক্ষ্যে দৃশ্যমান অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্য আছে কিনা, যা প্রসিকিউশন কেসের সত্যতাকে সন্দেহাবুত করে, সেটি বিবেচনা করার জন্য এই মামলায় আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জর করেছিলেন। আপিল বিভাগ তাদের সাক্ষ্য পর্যালােচনায় এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তাদের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করা কঠিন এবং এই পর্যবেক্ষণ দেন যে, হাইকোর্ট ডিভিশনের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ড বহাল রাখতে গিয়ে এই প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সাক্ষ্যের গুরুত্বপূর্ণ অসামঞ্জস্য বিবেচনা করেননি। ফলে, বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক উদ্ধৃত সিদ্ধান্তটি বর্তমান মামলায় প্রযােজ্য নয়।
২২৮. আপিলকারীর বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক Hazrat Ali (54 DLR 636) মামলাটিও উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে, যখন অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউশন কেসের অন্যতম অংশ সম্পর্কে সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালত কর্তৃক অবিশ্বাস করা হয়, তখন ঐ সাক্ষীদের সাক্ষ্য অন্য কোনাে সূত্র থেকে প্রাপ্ত স্বতন্ত্র সমর্থন ছাড়া গ্রহণ করা যেতে পারে না। এই মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ বিতর্কিত নয়। বর্তমান আপিলগুলােতে বিজ্ঞ আইনজীবী সাক্ষীদের সাক্ষ্যে কোনাে বড় ধরনের অসংগতি, যা প্রসিকিউশন কেসের অন্যতম অংশকে অবিশ্বাস্য প্রতিপন্ন করতে পারে, তা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২২৯. আপিলকারীদের বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক Muslim Uddin [38 DLR (AD) 311] মামলাটিও উদ্ধৃত করা
হয়। ঐ মামলায় মৃতের স্ত্রী মাজেদার (পি.ডব্লিউ-১) সাক্ষ্যের, যা অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৩, যাকে পুলিশ ঘটনার অনেক পরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, দ্বারা সমর্থিত ছিল। তার উপর নির্ভর করে হত্যার অভিযােগে আপিলকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। হাইকোর্ট ডিভিশন তার দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছিলেন। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী পি.ডব্লিউ-১-এর সাক্ষ্য বিবেচনায় আপিল বিভাগ এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, সে (মৃতের স্ত্রী) ঘটনার সময় কুঁড়েঘরে উপস্থিত ছিল, কিন্তু অন্য সাক্ষীগণ কর্তৃক এটি সমর্থিত হয়নি এবং বিস্তারিত বর্ণনাসহ অনেক আসামিকে চিনতে পারা তার (মৃতের স্ত্রী) পক্ষে একেবারে অসম্ভব ছিল। ঐ মামলায় আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে-
“কোনাে ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের সামনে মূল কাজ হলাে তর্কিত ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ যা প্রসিকিউশন সাক্ষীগণ কর্তৃক তাদের জেরায় দেওয়া উত্তরগুলাে বিবেচনার উপর নির্ভর করে।
“অতএব, কোনাে মামলায় সাক্ষীর জবানবন্দিকে বদলে দেওয়া বা জেরাকারীর নিজ মামলা প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যাশিত ঘটনা বের করে আনার জন্য জেরা অনিবার্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জেরার উদ্দেশ্য দুটি : জেরাকারী পক্ষের (আসামি) কেস তুলে ধরা এবং সাক্ষীর বিশ্বাসযােগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
৫১৩
“সাক্ষী জবানবন্দিতে কেবল সেই ঘটনাগুলােই ব্যক্ত করেন যা প্রসিকিউশন পক্ষে যায় এবং যা অপর পক্ষে যায় তা সে ব্যক্ত করে না। “কোনাে ফৌজদারি মামলায় জেরার লক্ষ্য হলাে সেই ঘটনাগুলােই তুলে আনা যা ডিফেন্সের বক্তব্যকে সমর্থন করে এবং যা প্রসিকিউশন পক্ষকে সমর্থন করে না। প্রতিপক্ষ অবশ্যই তাদের নিজেদের সাক্ষী তলব করে তাদের অনুকূল ঘটনাগুলাে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু, “there is something dramatic in proving one’s own case from the mouth of the witnesses of the opponent “পূর্বের পর্যবেক্ষণে যেমনটি বলা হয়েছে, বর্তমান আপিলগুলােয় সাক্ষীগণ কর্তৃক প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যের দোষারােপমূলক অংশ ডিফেন্স চ্যালেঞ্জ করেনি। সেহেতু, তাদের সাক্ষ্য অখণ্ডিত রয়ে গেছে। ডিফেন্স সাক্ষীদের জেরা করে তাদের অনুকূল ঘটনা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেহেতু, এই মামলায় (মুসলিম উদ্দিন) প্রদত্ত সিদ্ধান্ত আসামিপক্ষকে সাহায্য করার পরিবর্তে প্রসিকিউশন কেসকেই সহায়তা করছে।”
২৩০. আপিলকারীগণ কর্তৃক উদ্ধৃত Safdar Ali os Crocon [5 DLR (FC) 107(64)] মামলায় এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যে, কোনাে ফৌজদারি মামলায় প্রসিকিউশন ও ডিফেন্স কর্তৃক উপস্থাপিত সমগ্র সাক্ষ্য মূল্যায়ন করা আদালতের দায়িত্ব। সমগ্র সাক্ষ্য পরীক্ষার পর যদি আদালত এটি মনে করেন যে, আসামির পক্ষে তুলে ধরা ‘ডিফেন্স’টি সত্য এবং এটি পরিষ্কার যে, ঐরূপ ধারণা সমগ্র প্রসিকিউশন কেসে প্রভাব ফেলে, তাহলে ঐ অবস্থায় আসামি সন্দেহের সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। অনুগ্রহ হিসেবে নয়, বরং তার অধিকার হিসেবে। কারণ প্রসিকিউশন তার কেস যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণ করেনি।
২৩১. উপরে বর্ণিত আইনের ভাষ্য ফৌজদারি বিচার পরিচালনায় একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হওয়ায় তা বিতর্কিত নয়। কিন্তু বর্তমান আপিলগুলােয় আপিলকারীগণ কর্তৃক তুলে ধরা ডিফেন্স ভার্শন প্রসিকিউশন কেসকে পরিবর্তন করে না, বরং তা প্রসিকিউশন কেসকে সমর্থন করে।
২৩২. তাছাড়া, Movezuddin [31 DLR (AD) 37] মামলাতেও নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে :
“We like to observe that the contradiction in the statement of a witness, either with his own statement or with the statement of another witness, is a task of appreciation of the evidence, and therefore, it is within the jurisdiction of the trial Court and the Court of appeal on fact, to deal with the question. No doubt there is a certain rule of prudence governing the case of contradicting statements. It is first to be seen whether the alleged statement is a discrepant statement or contradictory statement. The discrepant statement is one which is either irrelevant or incoherent, but it is not irreconcilable. A discrepant statement is not fatal to the credibility of a witness. A contradictory statement is one which is conflicting and is not reconcilable with other statements either of his own or any other witness. The question in such case is, that it is open to a Court of fact either to reject the whole evidence of a witness as untrustworthy or to reject the contradictory part as unreliable or to rely upon that portion, which in the opinion of the Court, fits in with other evidence and the facts and circumstances of the case.”
৫১৪
২৩৩. তদনুসারে ঘটনাস্থলে মেজর বজলুল হুদার উপস্থিতি এবং তাকে সাক্ষীগণ চিনতে পেরেছিলেন সে সম্পর্কে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের কিছু অংশ তুলে ধরে জনাব মামুন যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা খুবই ক্ষুদ্র বিষয় ও তা সাক্ষীদের বক্তব্যের অসামঞ্জস্য তুলে ধরে না। বিজ্ঞ আইনজীবী সাক্ষীদের কোনাে পরস্পরবিরােধী বক্তব্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং, তিনি আমাদের জিজ্ঞাসায় এটি এড়িয়ে গেছেন যে, বজলুল হুদার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সাক্ষীদের দোষারােপমূলক বক্তব্য জেরাতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কিনা।
২৩৪. সুলতান শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে প্রণীত অভিযােগ বিবেচনার সময় এর আগে সংবিধানের ১০৩(৩) অনুচ্ছেদের অধীনে ঐরূপ ঘটনাসম্পর্কিত বিষয়গুলাে বিবেচনা করার প্রশ্নটি ইতােমধ্যে আলােচনা করা হয়েছে।
২৩৫. জনাব মােঃ আব্দুর রাজ্জাক খান নিবেদন করেন যে, সুলতান শাহরিয়ার ঘটনাস্থল বা এর কাছে উপস্থিত ছিল না এবং তার কোনাে ওভার্ট অ্যাক্ট না থাকায় বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্য আসামিদের সাথে তার অংশগ্রহণ না থাকায় তাকে ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণ সম্পূর্ণ বেআইনি। সুলতান শাহরিয়ারকে পেনাল কোডের ৩৪ ধারার আওতায় আনতে হলে এটি প্রতিষ্ঠিত হতে হবে যে, তার কিছু ওভার্ট অ্যাক্ট ছিল বা ঘটনার সাথে সম্পর্কিত এমন কোনাে কাজ সে করেছিল, যার দ্বারা সেও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অপরাধ সংঘটনে অন্য অপরাধ সংঘটনকারীদের সাথে অংশ নিয়েছিল এবং সেও সেটির পক্ষে কোনাে কাজ করেছিল। পি.ডব্লিউ-১৪ তাকে বালুরঘাটে প্যারেডে দেখেছিলেন। কিন্তু এটি ছাড়া। তার (সুলতান শাহরিয়ার) বিরুদ্ধে নথিতে অন্য কোনাে সমর্থনমূলক সাক্ষ্য নেই যা থেকে বলা যায় যে, সে কোনােভাবে কথিত ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। তাছাড়া, ঘটনার পরে ১৫ আগস্ট ভাের ৬টার সময় রেডিও স্টেশনে সুলতান শাহরিয়ারের উপস্থিতি ছিল তার অফিসিয়াল ডিউটির অংশ এবং সে কারণে তাকে হত্যার অভিযােগে দায়ী করা যায় না। জনাব রাজ্জাক খান আরাে নিবেদন করেন যে, যেহেতু সুলতান শাহরিয়ার ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে উপস্থিত ছিল না এবং হত্যাকাণ্ডে সে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি, সেহেতু, তার কাজ (অ্যাক্ট) তাকে সেই অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে না। যে অপরাধ মূল অপরাধীরা সংঘটিত করেছিল। Md. Shamsul Hoque 0s State 20 DLR 540, Amor Kumar Thakur vs State 40 DLR (AD) 147, Hazrat Ali vs State 44 DLR (AD) 51 এবং Dharan Pal os State of Haryana (1978) 4 SCC 440 মামলাসমূহে প্রদত্ত সিদ্ধান্ত অনুসারে তার (সুলতান শাহরিয়ার) ঐ অ্যাক্ট বড়জোর হত্যা প্ররােচনার অপরাধ যা পেনাল কোডের ১০৯ ধারার অধীনে শাস্তিযােগ্য।
২৩৬. জনাব খান আরাে নিবেদন করেন যে, ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হওয়ার পর ষড়যন্ত্রের অভিযােগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
২৩৭. জনাব খান সাইফুর রহমান নিবেদন করেন যে, ফারুক রহমান এবং মহিউদ্দীন (আর্টিলারি)-কে ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে উপস্থিত পাওয়া যায়নি এবং মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) কর্তৃক কলাবাগান খেলার মাঠে আর্টিলারি সেনা মােতায়েন করার সাথে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার কোনাে সম্পর্ক নেই। অতএব, তাদের দুজনকে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে বেআইনিভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদি দেখা যায় যে, সংঘটিত অপরাধটি একটি ‘বিদ্রোহ ছিল, তবে তা হবে একটি সেনা অপরাধ’ (মিলিটারি অফেন্স) এবং তাহলে সাধারণ অভিপ্রায় ও তা থেকে উদ্ভূত দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত পেনাল কোডের ৩৪ বা ৩৮ ধারার বিধান কোনােভাবে বর্তমান আপিলগুলাের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে না।
৫১৫
২৩৮, অন্যদিকে জনাব আনিসুল হক এবং অ্যাডভােকেট জেনারেল নিবেদন করেছেন যে, সুলতান শাহরিয়ারের
ক্ষেত্রে ৩৪ ধারা প্রযােজ্য নয় তা ধরে নেওয়া হলেও তার জন্য সে প্রকৃত কোনাে সুবিধা পাবে না। কারণ, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে তার অংশগ্রহণ প্রসিকিউশন কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে। জনাব হক এটিও নিবেদন করেন যে, যেহেতু ১২০এ ধারাটি একটি স্বতন্ত্র অপরাধ, সেহেতু সুলতান শাহরিয়ারকে পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড প্রদান করা যেতে পারে।
২৩৯. কোনাে কিছুকে সাধারণ অভিপ্রায় (common intention) হিসেবে গণ্য করা ও ঐ অভিপ্রায় থেকে উদ্ভূত দায়িত্ব নিরূপণের ক্ষেত্রে ৩৪, ৩৫ এবং ৩৮ ধারার প্রকৃত সারমর্মকে, যা নিচে বিধৃত, পরীক্ষা করতে হবে :
“34. When a criminal act is done by several persons, in furtherance of the common intention of all, each of such persons is liable for that act in the same manner as if it were done by him alone.
35. Whenever an act, which is criminal only by reason of its being done with a criminal knowledge or intention, is done by several persons, each of such persons who joins in the act with such knowledge or intention is liable for the act in the same manner as if the act were done by him alone with that knowledge or intention.
38. Where several persons are engaged or concerned in the commission of a criminal act, they may be guilty of different offenses by means of that act.”
২৪০. এই বিধানগুলাে পাঠ করলে দেখা যায় যে, ৩৪ এবং ৩৫ ধারা অপরাধের সামগ্রিক ফলাফলের জন্য দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে, যখন ৩৮ ধারা কেবল ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা (individual responsibility) সৃষ্টি করে। ৩৪ ধারা প্রযােজ্য হবে যেখানে সাধারণ অভিপ্রায় রয়েছে এবং যখন সবার সাধারণ অভিপ্রায়। অনুসারেই একটি অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়, তখন প্রত্যেকেই সমভাবে দায়ী হবে। ৩৫ ধারাটির ক্ষেত্রে বা প্রত্যেক আসামির অপরাধটি সম্বন্ধে জ্ঞান বা অপরাধ সংঘটনের অভিপ্রায়ের অস্তিত্ব থাকতে হবে, যদি কর্মটিকে অপরাধমূলক সাব্যস্ত করতে জ্ঞান বা অভিপ্রায় প্রয়ােজন হয়। অতএব, যদি দুইজন ব্যক্তি একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রহার করে এবং এটি করতে গিয়ে যদি তাদের একজনের অভিপ্রায় হয় তার মৃত্যু ঘটানাে এবং অন্যজনের অভিপ্রায় হয় কেবল গুরুতর জখম করা, তাহলে সেখানে কোনাে সাধারণ অভিপ্রায় নেই। তাদের কৃত অপরাধগুলাে হবে ভিন্ন প্রকৃতির। সাধারণ অভিপ্রায়ে যদি অপরাধটি সংঘটিত হয় বা এটি সংঘটনে যদি প্রত্যেক আসামির প্রয়ােজনীয় অভিপ্রায় বা জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে ঘটনার ফলাফল অন্যরকম হবে। একই ধরনের কর্ম থেকে উদ্ভূত দায়ের বিভিন্ন মাত্রার বিষয়টি ৩৮ ধারায় বিধৃত রয়েছে।
২৪১. নিম্নে বর্ণিত উদাহরণটি বিষয়টিকে পরিষ্কার করবে :
“A attacks Z under such circumstances of grave provocation that his killing of Z would be only culpable homicidal not amounting to murder. B having
৫১৬
ill-will towards Z and intending to kill him, and not having been subject to the provocation, assists A in killing Z. Here, though A and B are both engaged in causing Z’s death, B is guilty of murder, and A is guilty only of culpable Homicide.”
২৪২. ৩৪ ধারায় বিধৃত সাধারণ অভিপ্রায়ের অর্থ হলাে, একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক কর্মটিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মনের যুগপৎ সচেতনতা এবং যদি তাদের কেউ কমন ডিজাইন কার্যকর করতে সাহায্য করে তাহলে সেই ব্যক্তি তার কর্মের দ্বারা পরিকল্পিত অপরাধ সংঘটনে সহ-অংশগ্রহণকারী হিসেবে অংশ নিয়েছে বলে গণ্য হবে। এই ধারাটির সারমর্ম হলাে মূল অপরাধ সংঘটনে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। এর সাথে অবশ্যই থাকতে হবে সক্রিয় অংশগ্রহণ, যা কারাে কর্তৃক নিষ্ক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণেও হতে পারে, যেমন, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বা ঘটনার কাছাকাছি উপস্থিত থাকা; সহ-অংশগ্রহণকারীরা যারা প্রকৃত পরিকল্পিত অপরাধটি সংঘটিত করে তাদেরকে সাধারণ অভিপ্রায় অনুসারে সাহায্য করা এবং সময়মতাে তার ভূমিকা পালনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা।
২৪৩. এখন প্রশ্ন হলাে, উপরের নীতিটি যদি বর্তমান আপিলগুলাের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয় তাহলে ফলাফল কী হবে?
২৪৪. যেমনটি আগে বলা হয়েছে, আপিলকারীরা নাইট প্যারেডে অংশ নিয়েছিল এবং এটির ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য। আপিলকারীরা ও অন্য আসামিরা কমান্ড অফিসারের অধীন জওয়ানদের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যেমন রক্ষীবাহিনী সদর দফতর, বিডিআর সদর দফতর, রেডিও স্টেশন, মিন্টু রােড এবং ৩২ নম্বর রােডে নিয়ােজিত করেছিল। রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর এবং বিডিআর সদর দফতরে সেনা মােতায়েন ছিল তাদের পূর্বপরিকল্পনার অংশ, এই আধাসামরিক বাহিনীকে প্রতিরােধ করা- যদি তারা কোনাে তথ্য পায় বা সহযােগিতা চাওয়া হলেও তারা যেন প্রেসিডেন্টকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে না পারে। রেডিও স্টেশনে সেনা মােতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পক্ষে কোনাে ব্যক্তি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক ব্যক্তি বা অন্য কোনাে উৎস থেকে কোনাে সাহায্য চাওয়া হলে তা প্রতিরােধ করা। মিন্টু রােডে সেনা মােতায়েনের উদ্দেশ্যও ছিল মন্ত্রিদের প্রতিরােধ করা, যেন তারা প্রেসিডেন্টের সুরক্ষার জন্য জনসাধারণ বা অন্য কোনাে বাহিনীকে জমায়েত করতে না পারে।
২৪৫. মামলার নথি থেকে দেখা যায় যে, মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) ৩২ নম্বর রােডের কাছে কলাবাগান খেলার মাঠে কামানসহ নিয়ােজিত ছিল; সুলতান শাহরিয়ার নিয়ােজিত ছিল রেডিও স্টেশনে; ফারুক রহমান রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর থেকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে এসেছিল; মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), বজলুল হুদা এবং কয়েকজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্য। অস্ত্র ও কামানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আপিলকারীদের আনাগােনা ছিল অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অংশ- কোনাে বাধা ছাড়া প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য। বজলুল হুদা ও মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। দেখা যায় যে, ফারুক রহমান হত্যাকাণ্ডে অংশ না নিলেও সে ঘটনার সময় তাদের সবার সাধারণ অভিপ্রায় অনুসারে কর্মটি বাস্তবায়নের জন্য প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে হত্যাকাণ্ডের সময় কামানসহ
৫১৭
উপস্থিত ছিল; তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে অন্যরা যদি প্রতিরােধ করতে আসে সেজন্য। এবং যদিও তার অংশগ্রহণ ছিল পরােক্ষ এবং বিক্ষিপ্ত, তারপরও সে ঘটনাস্থলে বা ঘটনাস্থলের কাছেই উপস্থিত ছিল। মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) কলাবাগান খেলার মাঠে তার সেনা ও কামানসহ অবস্থান নিয়ে সহযােগী আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও অন্যদের, যারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন প্রহরায় নিয়ােজিত ছিল তাদের সহযােগিতা করেছিল, যদি ফোর্স প্রেসিডেন্টকে উদ্ধার করার জন্য আসে তবে তাদের প্রতিরােধ করা এবং সেই উদ্দেশ্যে সে চারটি কামানের গােলা নিক্ষেপ করে অন্যদের জানান দিতে যে, সে কামানের গােলা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত আছে। অতএব, ফারুক রহমান এবং মহিউদ্দীনের (আর্টিলারি) কর্মকাণ্ড ৩৪ ধারার (পেনাল কোডের) আওতায় পড়ে। কারণ তারা প্রয়ােজন হলে অপরাধ সংঘটনে অংশ নিতে প্রস্তুত ছিল।
২৪৬. এটি স্বীকৃত যে, সুলতান শাহরিয়ার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। ঘটনার পূর্বে সে রেডিও স্টেশনে নিয়ােজিত ছিল। আগেই বলা হয়েছে, তার কাজটি ছিল কেউ রেডিও স্টেশন থেকে সাহায্য চাইলে তাকে প্রতিরােধ করা। কাজেই প্রশ্ন ওঠে, যেহেতু সে ঘটনাস্থলে শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিল না, সেহেতু তার ঐ কাজটি কি ৩৪ ধারার (পেনাল কোডের) আওতায় পড়ে? হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ মনে করেছেন যে, সে (সুলতান শাহরিয়ার) অন্য আসামিদের সাধারণ অভিপ্রায়ের অংশীদার ছিল; যদিও তার অংশগ্রহণ সক্রিয় ছিল না, পরােক্ষ ছিল যা ৩৪ ধারার (পেনাল কোডের) আওতায় পড়ে। প্রথম বিজ্ঞ বিচারক এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, নৈশ প্যারেডে উপস্থিত না থাকলেও রেডিও স্টেশনে তার উপস্থিতি ছিল, যা সেই ঐকমত্যের অংশ, যেটিতে সে অন্য দণ্ডিতদের সাথে অংশ নিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঘটনা সংঘটনের উদ্দেশ্যে। প্রথম বিজ্ঞ বিচারক এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, নৈশ প্যারেডে তার উপস্থিত থাকা, রেডিও স্টেশনে তার উপস্থিতি ঐ ঐকমত্যের অংশ ছিল যেটিতে সে অন্য দণ্ডিতদের সাথে মিলিতভাবে ঐকমত্য পােষণ করেছিল, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঘটনাটি (হত্যাকাণ্ড) সংঘটনের লক্ষ্যে। দ্বিতীয় বিজ্ঞ বিচারকও ভাের ৪.৩০/০৫.০০টার সময় রেডিও স্টেশনে তার (সুলতান শাহরিয়ার) উপস্থিতির বিষয়টি নজরে নিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ এ প্রসঙ্গে উপসংহারে আসতে নিম্নবর্ণিত মামলাগুলাে বিবেচনায় নিয়েছেন :
Barendra Kumar Ghose vs Emperor, AIR 1925 (PC) 1, Shreekantiah Ramayya Muni Palli, vs State of Bombay, AIR 1955 SC 287, Tukaram Gonapat vs State of Maharashtra, AIR 1974 SC 514, Ramaswami vs State of TN, AIR 1976 SC 2027, Abdur Rahman Mandol vs State, 29 DLR (SC) 247, Bangladesh vs Abed Ali, 36 DLR (AD) 234, Abdus Samad vs State 44 DLR (AD) 233 478 State vs Tajul Islam 48 DLR 305.
২৪৭. ইতােমধ্যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে, পেনাল কোডের ৩৪ ধারার মূল বৈশিষ্ট্য হলাে কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উপাদান। সব ক্ষেত্রে এইরূপ অংশগ্রহণের জন্য শারীরিক উপস্থিতির প্রয়ােজন নেই। সাধারণ অভিপ্রায়ের অর্থ হলাে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজটিতে অংশ নেওয়া। এই ধারা অনুসারে সকল ব্যক্তি কর্তৃক একত্র হয়ে সাধারণ অভিপ্রায়ে কোনাে অপরাধ সংঘটন করা। যারা উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সাহায্য করে তাদের সকলেই সমভাবে দোষী হবে। অতএব, তদনুসারে সাধারণ অভিপ্রায় একটি অপরাধ, যা সংঘটিত হয়েছে তা সংঘটনের অভিপ্রায় এবং আসামিদের প্রত্যেকে সেই অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করেছে।
৫১৮
২৪৮. Barendra Kumar Ghosh (পূর্বোক্ত) মামলায় প্রিভি কাউন্সিলের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ এই ধারায় অন্তর্গত নীতিটি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছন। এই মামলায় তিনজন ব্যক্তি পােস্ট মাস্টারকে লক্ষ করে গুলি করেছিল, যাদের মধ্যে একজন ছিল আপিলকারী বরেন্দ্র কুমার। সে খুবই ব্যতিক্রমী পােশাক পরিহিত ছিল, যে কারণে তাকে আলাদাভাবে চিনতে পারা গিয়েছিল; এবং এই ব্যক্তিরা যখন ঠিক রুমের ভেতরে ছিল তখন ঘরের দরজা দিয়ে আরেকজনকে অন্যদের সাথে বাইরে আঙিনার ঠিক প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। এই ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় ছিল, কিন্তু সে কোনাে গুলিবর্ষণ করেনি। বরেন্দ্রর পক্ষে এই ডিফেন্স নেওয়া হয়েছিল যে, সে রুমের বাইরে ছিল এবং সে আঙিনায় দাঁড়িয়ে ছিল এবং খুব ভীত অবস্থায় ছিল। সে গুলিবর্ষণকারী দলের একজন হিসেবে উপস্থিত ছিল কিনা বা সে এই দলের কামান্ডার ছিল কিনা বা রিজার্ভ ছিল কিনা বা দলের পাহারায় নিয়ােজিত ছিল কিনা- এই বিষয়গুলাে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা প্রমাণের জন্য বিশেষ কোনাে গুরুত্ব নেই। কেন সে সেখানে ছিল এবং কেন সে নিজেকে সরিয়ে রাখেনি তা সে বলেনি। এমনকি আঙিনায় তার সঠিক অবস্থানটি কী ছিল তা-ও সে নির্দেশ করেনি। বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ বরেন্দ্রর সাজা বহাল রাখতে গিয়ে ৩৪ ধারার ব্যাপ্তি ব্যাখা করে নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“By section 33 a criminal act in section 34 includes a series of acts and, further “act includes omission to act, for example, an omission to interfere in order to prevent a murder being done before one’s very eyes. By section 37, when any offense is committed by means of several acts whoever intentionally cooperates in the commission of that offense by doing any one of those acts, either singly or jointly with any other person, commits that offense. Even if the appellant did nothing as he stood outside the door, it is to be remembered that in crimes as in other things “they also serve who only stand and wait.” By section 38 when several persons are engaged or concerned in the commission of a criminal act, they may be guilty of different offenses by means of that act. Read together, these sections are reasonably plain. Section 34 deals with the doing of separate acts, similar or diverse by several persons; if all are done in furtherance of a common intention, each person is liable for the result of them all, as if he had done them himself for “that act” and “the act” in the latter part of the section must include the whole action covered by “a criminal act” in the first part, because they refer to it.”
২৪৯. অতএব, পেনাল কোডের ৩৪ ধারার মূল বৈশিষ্ট্য হলাে কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উপাদান। সব ক্ষেত্রে এইরূপ অংশগ্রহণ শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে হওয়ার প্রয়ােজন নেই। ঘটনাস্থলে আসামির শারীরিক উপস্থিতি পূর্বশর্ত- এমন মামলার সাথে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট ঐসব মামলার পার্থক্য টেনেছেন যেখানে অনুরূপ বা পৃথক কোনাে কর্ম দ্বারা আসামির উপস্থিতি প্রয়ােজন নয় যা তাকে এই ধারার আওতায় আনতে পারে।
৫১৯
২৫০. Ramazani (পূর্বোক্ত) মামলায় এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে, ৩৪ ধারার পূর্ববর্তী ৩৩ ধারার সাথে একত্রে পড়লে এটি পরিষ্কার হয় যে, ৩৪ ধারায় বর্ণিত কোনাে কাজ (act) একক কোনাে কাজ হিসেবে ধারাবাহিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, “যখন কোনাে অপরাধমূলক কাজ কয়েকজন ব্যক্তি কর্তৃক কৃত হয়”। অতএব, ৩৪ ধারার এই ব্যাখ্যা এটি বােঝায় যে, “যখন অপরাধমূলক কর্ম কয়েকজন ব্যক্তি কর্তৃক কৃত হয়”। সংঘটিত অপরাধমূলক কাজে (criminal action) বিভিন্ন সহযােগীদের কৃত কাজ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সকলে অবশ্যই একই পথে বা অন্যভাবে ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজে অংশ নেয়। এবং যুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভিকটিমকে কেউ যেন উদ্ধার করতে আসতে না পারে সেজন্য একজন পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে বা অন্য কোনােভাবে- সে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজ করার জন্য। ঐ ধরনের ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে পরিকল্পিত অপরাধ সংঘটনে তার সহযােগী অংশগ্রহণকারীদের মতােই একটি কাজ (act) করে। শারীরিক সহিংসতা সম্পর্কিত কোনাে অপরাধে ৩৪ ধারার প্রয়ােগের জন্য এটি প্রয়ােজন যে, যে ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনে প্ররােচনা বা সহায়তা দেয় তাকে অবশ্যই ঐ অপরাধের প্রকৃত সংঘটনে সহায়তার জন্য শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে, যে অপরাধ সংঘটন যৌথ অপরাধমূলক উদোগের (the joint criminal venture) উদ্দেশ্য। যারা এভাবে বা অন্য কোনােভাবে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করে তা অপরাধমূলক কাজে তাদের প্রকৃত অংশগ্রহণের নামান্তর। ৩৪ ধারার সারমর্ম হলাে, একটি নির্দিষ্ট ফলাফলের জন্য অপরাধমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মানসিক ঐকমত্য। ঐরূপ ঐকমত্য ঘটনাস্থলেও গড়ে উঠতে পারে এবং এভাবে ঐকমত্যটি সকলের অভিপ্রায়ে হতে পারে।
২৫১. Srikantiah, (পূর্বোক্ত) মামলায় এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যে-
“The essence of section 34 that the person must be physically present at the scene of occurrence coupled with actual participation which, of course, can be of a character such as standing by a door, provided that is done with the intention of assisting in furtherance of common intention of them all and there is a readiness to play his part in the prearranged plan when the time comes for him to act”. A five-member Bench of this Court also took similar view in Abdur Rahman Mondal’s case (supra) as follows:
“The common intention to bring about a particular result may well develop on the spot as between a number of persons. All that is necessary is either to have direct proof of prior concert or proof of circumstances which necessarily lead to that inference or the incriminating acts must be incompatible with the innocence of the accused and incapable of explanation on any other reasonable hypothesis. Further, it is the essence of section 34 that the person must be physically present at the actual commission of the crime.”
২৫২. Rasool Bux 0s State 22 DLR (SC) ২৯৭ মামলায় পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট বরেন্দ্র ঘােষ মামলায় দেওয়া অভিমতটি অনুমােদন দিয়েছেন এবং প্রিভি কাউন্সিল পর্যবেক্ষণের আলােকে মামলাটি বিবেচনা করেছেন। ঐ মামলায় লালু বক্স ও রসুল বক্স মােসাম্মৎ রােশনাকে তার বাবার বাড়ি থেকে, প্রয়ােজনে
৫২০
বলপ্রয়ােগ করে, অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল। তারা দুজনই মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় ছিল। যখন আঙিনায় তাদের উপস্থিতি জানা যায় তখন তারা তাদের মূল পরিকল্পনা ত্যাগ করেছিল। কিন্তু। প্রয়ােজনে তারা তাদের বহন করা অস্ত্র ব্যবহার করে পালিয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ ছিল। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “সাধারণ অভিপ্রায়, যদি তা শুরুতে উপস্থিত না-ও থাকে, তবু তা মুহুর্তের উত্তেজনায় তৈরি হতে পারে যখন তারা দেখে যে, তারা অন্যদের দ্বারা ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েছে…”। তাদের পালিয়ে যাওয়া প্রতিরােধ করতে যারা এগিয়ে এসেছিল তাদের একজনকে লালু বক্স গুলি করেছিল এবং রসুল বক্সও দুটি গুলি চালিয়েছিল। পর্যবেক্ষণে আরাে বলা হয়েছে যে, তারা পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাধারণ অভিপ্রায়ে বাধা প্রদানকারীদের প্রতিরােধ করার জন্য গুলি চালিয়েছিল। অতএব, এটি কীভাবে বলা যায় যে, তারা তাদের দুজনই সাধারণ অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য গুলি চালায়নি।”
২৫৩. Tajul Islam মামলায় (পূর্বোক্ত) হাইকোর্ট বিভাগ অভিযােগের সমর্থনে প্রসিকিউশন কর্তৃক উত্থাপিত সাক্ষ্যে দেখেন যে, বাদশা তার স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিল যে, সে বিরজা রানীর দ্বিতীয় পুত্রকে পা দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং অভিযুক্ত ইনু তাকে দা দিয়ে দুই টুকরাে করে কেটেছিল। স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী অপর অভিযুক্ত বলেছিল যে, অপরাধ সংঘটনের জন্য তারা বিরজা রানীর বাড়িতে গিয়েছিল এবং কেউ কেউ নৌকায় বা বিরজার প্রতিবেশীদের বাড়ির দরজার সামনে বা রাস্তায় পাহারা দেওয়ার জন্য অবস্থান করছিল। অনুমিত হয় যে, অপরাধ সংঘটনে কেউ যেন বাধা দিতে এগিয়ে না আসতে পারে সেজন্য। মামলার ঘটনার আলােকে বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ নিমােক্ত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“In an offense involving physical violence, normally presence at the scene of the occurrence of the offender sought to be rendered liable on the principle of joint liability is necessary; such is not the case in respect of other offenses where offense consists of adverse acts which may be done at a different time and place.”
২৫৪. Noor Mohammad Mohol Yusuf Momin 0s State of Maharashtra (পূর্বোক্ত) মামলায় বিচারিক আদালত মােঃ তকি হাজী হুসেইন মােমিনকে ৩০২ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন এবং আপিলকারীসহ অপর তিনজন অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করেছিলেন। খালাসের বিরুদ্ধে আনীত আপিলে বােম্বে হাইকোর্ট খালাসের আদেশ বাতিল বা রিভার্স করে আপিলকারী ও অন্য দুজনকে ভারতীয় পেনাল কোডের ১২০বি এবং ৩০২ ধারা তৎসহ ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। আপিলকারীকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২/১০৯ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়ছিল এবং দুটি অভিযােগে তাদেরকে যাবজ্জীবন করাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। আপিলকারীকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্তকরণ নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বাতিল করা হয়েছিল :
“From the evidence it seems highly probable that at the time of the actual murder of Mohd. Yahiya the appellant was either present with other three co-accused or was somewhere nearby. But this evidence does not seem to be enough to prove beyond reasonable doubt his presence at the spot in the company of the other accused when the murder was actually committed…we
৫২১
are, therefore, inclined to give to the appellant the benefit of doubt in regard to the charge under section 302 read with section 34, IPC.”
২৫৫. শারীরিক সহিংসতা ছাড়া অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে ৩৪ ধারার প্রয়ােগের বিষয়টি Tukaram Ganput (supra) মামলায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যেখানে আপিলকারী তুকারামসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযােগ ছিল যে, তারা একটি কোম্পানির গুদাম ভেঙে সেখান থেকে কয়েক বান্ডিল তামার তার চুরি করেছিল। এবং একটি লরিতে করে নিয়ে গিয়েছিল। লরিটি একটি weigh-bridge-এ এসে থেমেছিল, যেখানে সেগুলাে বিক্রির জন্য দালালরা উপস্থিত ছিল। অপরাধস্থলে আপিলকারীদের উপস্থিতির বিষয়ে কোনাে সাক্ষ্য ছিল না। নিম্ন আদালতগুলাের ঐকমত্যসূচক সিদ্ধান্ত ছিল এই যে, আপিলকারীর দখলে চুরি হওয়া গুদামের ডুপ্লিকেট চাবি ছিল যা ফ্যাক্টরিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সে weigh-bridge-এ উপস্থিত ছিল। আপিলকারী তার কাছে গুদামের চাবি থাকা ও weigh-bridge-এ তার উপস্থিতির বিষয়ে কোনাে ব্যাখ্যা দেয়নি। ঘটনার প্রেক্ষাপটে সাধারণ অভিপ্রায়’-এর নীতি প্রয়ােগ করে সুপ্রীম কোর্ট নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপিলকারীর দণ্ডাদেশ বহাল রাখেন :
“Mere distance from the scene of crime cannot exclude culpability under section 34 which lays down the rule of joint responsibility for a criminal act performed by a plurality of persons. In Barendra Kumar Ghosh vs King Emperor (1924) 52 IA 40 (AIR 1925 PC 1) the Judicial Committee drew into the criminal net those ‘who only stand and wait.’ This does not mean that some form of presence, near or remote, is not necessary, or that mere presence without more, at the spot of crime, spells culpability. Criminal sharing, overt or covert, by active presence or by distant direction, making out a certain measure of jointness in the commission of the act is the essence of section 34. Even assuming that presence at the scene is a prerequisite to attract section 34 and that such propinquity is absent, section 107 which is different in one sense, still comes into play to rope in the accused. The act here is not picking the godown lock but housebreaking and criminal house trespass. This crime is participated in by those operating by remote control as by those doing physical removal. Together operating in concert, the criminal project is executed. Those who supply the duplicate key, wait at the weigh-bridge for the break-in and bringing of the booty and later secrete the keys are particeps criminis.”
২৫৬. নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে এটি ছিল ২ নম্বর আসামির ভূমিকা। এই আইনগত অনুমানকে কি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর বলা যায়?
২৫৭. উপরের সিদ্ধান্তটিতে যৌথ দায়ের নীতিগুলাে আলােচিত হয়েছে। কেবল অপরাধ সংঘটনস্থল থেকে দূরে থাকলেই সেটিকে যৌথভাবে অপরাধ সংঘটনে পেনাল কোডের ৩৪ ধারার অধীনে ব্যক্তির অংশগ্রহণমূলক দায়কে বাইরে রাখতে পারে না। অবশ্য হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ আপিলকারী সুলতান
৫২২
শাহরিয়ারের উপস্থিতি সম্পর্কে উপরােক্ত সিদ্ধান্তটির ratio decidendi মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে আমি মনে করি যে, প্রসিকিউশনকে সুলতান শাহরিয়ারের উপস্থিতি এবং সকলের সাধারণ অভিপ্রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অপরাধ সংঘটনে তার অংশগ্রহণ ছিল তা প্রমাণ করতে হবে, তার অপরাধটিকে পেনাল কোডের ৩৪ ধারার আওতায় আনার জন্য।
২৫৮. ষড়যন্ত্র সফল হলে ষড়যন্ত্রের অভিযােগে দোষী সাব্যস্তকরণ আদেশ প্রদান করা যায় না- এ মর্মে যে সাবমিশন রাখা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, AIR 1938 Mad 130-এ রিপাের্টেড Shamsul Hoque মামলায় যেটি 8DLR48-এ রিপাের্টেড মামলাতে অনুসরণ করা হয়েছে, সেখানে এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যে, যখন দুই বা ততােধিক ব্যক্তি কোনাে অপরাধ সংঘটন করেছে বলে দাবি করা হয় তখন অপরাধ সংঘটনে দায়ী ব্যক্তিকে মূল অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত করা উচিত এবং যে ব্যক্তিরা। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনে সহযােগিতা করেছে তাদেরকে ১০৯ ধারার (পেনাল কোডের) অধীনে অভিযুক্ত করা যায়। দেখা যায় যে, AIR 1938 Mad 130-এ রিপাের্টেড মামলা, যা 8 DLR 48-এ রিপাের্টেড মামলাতে অনুসরণ করা হয়েছে, তা পরবর্তীকালে AIR 1961 SC 1241 (অনুচ্ছেদ ৭ ও ৮)-এ রিপাের্টেড Kandinalla Subbaiah-এর মামলায় উল্টে দেওয়া (overruled) হয়েছে। Annur Kumar Thakur মামলাসম্পৃক্ত ঘটনা এবং আইনের নীতিগুলাে সম্পূর্ণ আলাদা। যেহেতু আসামির বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযােগ ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে যেখানে এই আদালত কোনাে আইনানুগ সাক্ষ্য পাননি যে, “নন্দলালের মৃত্যু ঘটাতে ২-৪ নম্বর আপিলকারীদের নিজস্ব কোনাে অভিপ্রায় ছিল, বিশেষ করে যখন সে রাতের বেলায় তাদের অনুরােধে মেডিয়েশনে অংশ নিতে গিয়েছিল।”
২৫৯. Hazrat Ali মামলায় আপিল বিভাগ নথিতে থাকা সাক্ষ্য মূল্যায়নে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, হজরত আলী জহুরা খাতুনের হত্যার অপরাধ সংঘটনে সহযােগিতা (abetted) করেছিল এবং সেহেতু তাকে ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্তকরণ ৩০২/১০৯ ধারায় পরিবর্তন করেছিলেন।
২৬০. Dharan Pal মামলায় এটি লক্ষ করা হয়েছিল যে, সাধারণ অভিপ্রায়ের অস্তিত্ব বা অন্য কিছু নির্ভর করে প্রত্যেক মামলার ঘটনা ও অবস্থাদির উপর এবং তথ্যপ্রমাণের অভাবে “মূল অপরাধী কর্তৃক সংঘটিত প্রত্যেক অপরাধের জন্য তার সঙ্গী বা সঙ্গীদের যৌক্তিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।” উপরের মামলাগুলাের ঘটনা বর্তমান মামলার ঘটনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
২৬১. অতএব, দেখা যায় যে, ১২০এ ধারায় সংজ্ঞায়িত ষড়যন্ত্র এবং ৩৪ ধারায় বিধৃত সাধারণ অভিপ্রায় অনুসারে কর্ম করার মধ্যে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য নেই। প্রথমটির ক্ষেত্রে অপরাধের সারমর্ম হলাে, আইনভঙ্গের জন্য ঐকমত্য পােষণ ও সম্মিলিত হওয়া। এমনকি যদি বেআইনি কর্মটি এর ফলে হয়ে থাকে তখন অপরাধটির সারমর্ম ৩৪ ধারার অধীনে অন্য সব আসামির সাধারণ অভিপ্রায়ে সংঘটিত একটি অপরাধমূলক কর্ম; যার অর্থ এই যে, সেখানে অপরাধমূলক আচরণের একাত্মতায় ঐ কর্ম সংঘটিত হলে ঐ ব্যক্তি শাস্তিযােগ্য হবে, যেন কর্মটি সে নিজে একাই করেছে।
২৬২. ১২০বি ধারার উপধারা (১) কোনাে অপরাধ সংঘটনে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্ররােচনার শাস্তির সমান শাস্তি আরােপ করে। এই ধারা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১০৭ ধারায় সংজ্ঞায়িত প্ররােচনার (abatement) অপূর্ণতা পূরণের জন্য এই ধারাটি প্রবর্তিত হয়েছে। ১০৭ ধারার অধীনে “দ্বিতীয়ত” এটি বিধৃত হয়েছে যে, কোনাে ব্যক্তি ঐ কাজ করতে প্ররােচিত (abate) করে, যখন সে অন্যদের সাথে ষড়যন্ত্রে মিলিত হয় ঐ কাজ করার জন্য, যদি ঐ ষড়যন্ত্র অনুসারে সেটি করতে কোনাে কাজ বা বেআইনি
৫২৩
ব্যত্যয় (omission) হয়ে থাকে। কোনাে অপরাধ সংঘটনে প্ররােচনা (abatement) ১০৯ ধারা এবং ১১৬ ধারার অধীনে, যেটি হয় শাস্তিযােগ্য, যদি অপরাধটি সংঘটিত না-ও হয়ে থাকে। কিন্তু এটি পরিষ্কার যে, কোনাে ষড়যন্ত্র প্ররােচনা (abatement) হিসেবে গণ্য হবে না, যদি কোনাে কাজ বা বেআইনি ব্যত্যয় ঐ ষড়যন্ত্র অনুসারে না হয়ে থাকে। অতএব, ১২০বি ধারা প্রযােজ্য হবে সেই সব মামলায় যেখানে দেখা যাবে যে, কোনাে মারাত্মক অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমান আপিলগুলােতে কোনাে কাজ বা বেআইনি ব্যত্যয় হয়নি। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের বর্ধিত সংজ্ঞা ১২০এ ধারায় বিধৃত হয়েছে, যেখানে ১০৭ ধারার সারমর্ম অনুসারে যে কাজগুলাে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্ররােচনার (abatement) অন্তর্ভুক্ত নয়। ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, যেখানে পেনাল কোডে ঐরূপ ষড়যন্ত্রের শাস্তির জন্য কোনাে স্পষ্ট বিধান নেই।
২৬৩. Noor Mohammad Mohol Yusuf Momin (পূর্বোক্ত) মামলায় ৩৪, ১০৭ এবং ১০৯ ধারার ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যগুলাে নিম্নবর্ণিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে :
“So far as section 34. Indian Penal Code is concerned, it embodies the principle of joint liability in the doing of a criminal act, the essence of that liability being the existence of a common intention. Participation in the commission of the offense in furtherance of the common intention invites its application. Section 109. Indian Penal Code, on the other hand, may be attracted even if the abettor is not present when the offense abetted is committed provided that he has instigated the commission of the offense or has engaged with one or more other persons in a conspiracy to commit an offense and pursuant to that conspiracy some act or illegal omission takes place or has intentionally aided the commission of an offense by an act or illegal omission. Turning to the charge under section 120B. Indian Penal Code, criminal conspiracy was made a substantive offense in 1913 by the introduction of chapter V-A in the Indian Penal Code. Criminal conspiracy postulates an agreement between two or more persons to do, or cause to be done, an illegal act or an act which is not illegal, by illegal means. It differs from other offenses in that mere agreement is made an offense even if no step is taken to carry out that agreement. Though there is close association of conspiracy with incitement and abetment the substantive offense of criminal conspiracy is somewhat wider in amplitude than abetment by conspiracy as contemplated its very nature is generally hatched in secret. It is, therefore, extremely rare that direct evidence in proof of conspiracy can be forth-coming from wholly disinterested quarters or from utter strangers. But, like other offenses, criminal conspiracy can be proved by circumstantial evidence. Indeed, in most cases proof of conspiracy is largely inferential though the inference must be founded on solid facts. Surrounding circumstances and antecedent and subsequent conduct, among other factors,
৫২৪
constitute relevant material. In fact, because of the difficulties in having direct evidence of criminal conspiracy, once reasonable ground is shown for believing that two or more persons have conspired to commit an offense then anything, done by anyone of them in reference to their common intention after the same is entertained becomes, according to the law of evidence, relevant for proving both conspiracy and the offenses ‘committed pursuant thereto.” 248. State of Andhra Pradesh vs Kandimalla Subbaiah, AIR 1961 SC 1241 alcun ficba71
জন্য যে পয়েন্টটি উত্থাপন করা হয়েছিল তা হলাে, যদি প্ররােচনার পরিণতিতে কোনাে অপরাধ সংঘটিত। হয়ে থাকে, যখন এটি ষড়যন্ত্রের ফলে সংঘটিত হয়, তখন প্ররােচনার কারণেই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে এবং তা মূল অপরাধ সংঘটনের জন্য শাস্তিমূলক কিনা। সুপ্রীম কোর্ট এই পয়েন্টে নিম্নবর্ণিত উত্তর দিয়েছিলেন:
“Conspiracy to commit an offense is itself an offense and a person can be separately charged with respect to such a conspiracy. There is no analogy between section 120B and section 109 IPC There may be an element of abetment in a conspiracy; but conspiracy is something more than an abetment. Offenses created by sections 109 and 120B, IPC are quite distinct and there is no warrant for limiting the prosecution to only one element of conspiracy, that is, abetment when the allegation is that what a person did was something over and above that. Where a number of offenses are committed by several persons in pursuance of a conspiracy it is usual to charge them with those offenses as well as with the offense of conspiracy to commit those offenses.”
২৬৫.পরবর্তীকালে State of Andhra Pradesh vs Cheemalapati Ganeswara Rao, AIR 1963 SC 1850
-এই মামলায় নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল :
“The offense of conspiracy is an entirely independent offense and though other offenses are committed in pursuance of the conspiracy the liability of the conspirators for the conspiracy itself cannot disappear. In the Indian Penal Code, as originally enacted, conspiracy was not an offense. Section 120B, which makes criminal conspiracy punishable, was added by the Indian Criminal Law Amendment Act, 1913 (VIII of 1913) along with section 120A. Section 120A defines conspiracy and section 120B provides for the punishment for the offense of conspiracy. Criminal conspiracy as defined in section 120A consists of an agreement to do an illegal act or an agreement to do an act which is not illegal by illegal means. Section 120B provides that whoever is a party to a conspiracy to commit an offense punishable with death, imprisonment for life or rigorous imprisonment for a term of two
৫২৫
years or upwards shall be punishable in the same manner as if he has abetted such offense unless there was an express provision in the Code for the punishment of such conspiracy. Criminal conspiracy was, however, not an unknown thing before the amendment of the Indian Penal Code in 1913. But what the amendment did was to make that conspiracy itself punishable. The idea was to prevent the commission of crimes by, so to speak, nipping them in the bud. But it does not follow that where crimes have been committed the liability to punishment already incurred under section 120B by having entered into a criminal conspiracy is thereby wiped away. No doubt, as already stated, where offenses for committing which a conspiracy was entered into have actually been committed it may not, in the particular circumstances of a case, be desirable to charge the offender both with the conspiracy and the offenses committed in pursuance of that conspiracy. But that would be a matter ultimately within the discretion of the Court before which the trial takes place.”
২৬৬. তদনুসারে আপিলকারীদের ১২০বি ধারার অধীনেও যথাযথভাবেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সাক্ষ্য ও এই মামলায় প্রযােজ্য আইনের সার্বিক পর্যালােচনায় আমার মতামত হলাে এই যে, হাইকোর্ট বিভাগ যৌক্তিকভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আপিলকারীরা ও অন্য আসামিরা বাসভবনে অবস্থানরত প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্র রচনা করেছিল এবং তাঁদের ও অন্য তিনজন
নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যার মাধ্যমে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছিল।
২৬৭. তবে উপরােক্ত আলােচনার আলােকে আমার মতামত হলাে এই যে, আপিলকারী ফারুক রহমান, মহিউদ্দীন (আর্টিলারি), মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এবং বজলুল হুদার আইনি দণ্ড পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার পরিবর্তে পেনাল কোডের ৩০২ ধারার সাথে পঠিতব্য ১২০বি এবং ৩৪ ধারার অধীনে হওয়া উচিত ছিল এবং সুলতান শাহরিয়ারের দণ্ড পেনাল কোডের ৩০২/১২০বি ধারার অধীনে হওয়া উচিত ছিল।
২৬৮. তদনুসারে তাদের প্রতি আরােপিত দণ্ড সংশােধন করা হলাে। আপিলকারীদের বিজ্ঞ আইনজীবী দণ্ড হ্রাসের প্রশ্ন উত্থাপন করে নিবেদন করেন যে, যেহেতু আপিলকারীরা দীর্ঘকাল ডেথ সেলে রয়েছে এবং এমনকি এই ডিভিশন এটি পেয়েছেন যে, হাইকোর্ট ডিভিশনের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ যথার্থভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযােগ প্রমাণিত পেয়েছেন, সেহেতু ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিলকারীদের প্রতি আরােপিত দণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে হাসকরণ করা হােক।
২৬৯. বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান এই প্রসঙ্গে Nurul Hoque Kazi vs State 7 BLC (AD)
52 মামলার একটি সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করেছেন। ২৭০. বিজ্ঞ কৌসুলি জনাব আব্দুল্লাহ-আল-মামুন নিবেদন করেছেন যে, আপিলকারীরা দীর্ঘকাল হলাে ডেথ সেলে রয়েছে। তাদের সাজা ঘােষণার পর তা কার্যকর করতে এইরূপ প্রলম্বিত বিলম্ব অমানবিক সাজা, নির্যাতনতুল্য এবং তা সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বিধৃত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এই অনুচ্ছেদের বিধান হলাে, কোনাে ব্যক্তিকে নির্যাতন করা যাবে না বা নিষ্ঠুর অমানবিক সাজা দেওয়া যাবে না বা
৫২৬
আচরণ করা যাবে না। মামলাসমূহে বর্ণিত নীতির আলােকে এই আপিলকারীদের প্রতি আরােপকৃত দণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হওয়ার যােগ্য।
২৭১. বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল এই যুক্তি তুলে ধরেছেন যে, আপিল শুনানি শেষ
করতে বিলম্ব রাষ্ট্রপক্ষের কোনাে অবহেলা নয়। বরং এটি প্রকৃতপক্ষে আসামি-আপিলকারীদের অবহেলার জন্য। আসামিগণসহ আপিলকারীরা পরিকল্পিতভাবে পরিণতি জেনে সজ্ঞানে নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। সেহেতু, সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে তারা কোনাে বিশেষ অনুকম্পা পেতে পারে না।
২৭২. জনাব আনিসুল হক অবশ্য এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে, আপিলকারীরা সর্বোচ্চ দণ্ড পাওয়ার যােগ্য। কারণ তারা কেবল নির্মমভাবে জাতির পিতা ও দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেনি, তারা তিনজন নারী এবং একজন শিশুকে হত্যা করেছে। তারা তাদের কর্ম দ্বারা মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ সংঘটিত করেছে। তারা দেশের সর্বমান্য পরিবারের বংশের বাতি নিভিয়ে দিয়েছে এবং তারা এই কাজ করেছে এই উদ্দেশ্যে যেন ভবিষ্যতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনাে ব্যবস্থা নিতে না পারে। ফলে যখন কেউ এরকম চরম নৃশংস, হিংস্র এবং নারকীয় প্রক্রিয়ায় কোনাে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে এবং যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার নিদোষ একজন শিশু বা অসহায় নারী বা সর্বজনপ্রিয় ও সম্মানিত কোনাে নেতা হন তখন চরম দণ্ডই যথাযথ প্রতিকার। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞ কৌসুলি Machhi Singh vs State of Punjab, (1983) 3 Supreme Court Cases 470 মামলাটি উদ্ধৃত করেছেন।
২৭৩. আমাদের নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য আমরা হাইকোর্ট বিভাগের নথি আনিয়েছি এবং আদেশনামা পর্যালােচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, আপিলকারীরা কখনােই হাইকোর্ট বিভাগে বা আপিল বিভাগে আপিল নিষ্পত্তিতে কোনাে চেষ্টা করেনি। বরং রাষ্ট্রপক্ষই হাইকোর্ট বিভাগে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য বারবার প্রার্থনা করেছে এবং এইরূপ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। হাইকোর্ট বিভাগে ডেথ রেফারেন্স নিস্পত্তির পর আপিলকারীরা লিভ পিটিশন দাখিল করার পর পিটিশনগুলাে শুনানির জন্য কোনাে পদক্ষেপ নেয়নি। কেবল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনেই লিভ পিটিশনগুলাের এবং আপিলগুলােরও শুনানি হয়েছিল। সর্বোপরি আপিলকারী বজলুল হুদা এবং মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) মামলার বিচার চলাকালে পলাতক ছিল এবং ডেথ রেফারেন্স শুনানির সময় মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) কয়েক বছর পরে বিলম্ব মার্জনার প্রার্থনাসহ লিভ পিটিশন দাখিল করেছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের কোনাে অবহেলার কারণে বিলম্ব ঘটেনি। যেহেতু, কনডেমড প্রিজনার ডেথ রেফারেন্স এবং তাদের আপিলগুলাের শুনানির জন্য কোনাে সময়। কোনাে পদক্ষেপ নেয়নি, সেহেতু তারা কনডেমড সেলে তাদের আটককালের কারণে এটি নিবেদন করতে অধিকারী নয় যে, তারা নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর সাজা বা আচরণের শিকার হয়েছে। তাছাড়া, তারা এই পয়েন্টটি কখনাে উত্থাপন করেনি। বরং, তাদের আচরণ থেকে এটি পরিষ্কার যে, তারা নিজেরাই আপিলগুলাে নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ঘটানাের চেষ্টা করেছে।
২৭৪. ৩৬৭ ধারার উপধারা (৫) মূলত ছিল নিম্নরূপ :
“যদি কোনাে আসামি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিযােগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনাে দণ্ড আরােপ করেন সেক্ষেত্রে আদালত তার রায়ে কারণ উল্লেখ করবেন যে, কেন তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়নি।”
৫২৭
২৭৫. এটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মৃত্যুদণ্ড প্রদান করাটা ছিল একটা নিয়ম (rule) এবং স্বল্প দণ্ড প্রদান ব্যতিক্রম (exception) যা ছিল মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বিবেচনা (discretion)। তদুপরি এই বিধান ১৯৭৯ সাল থেকে কার্যকর হওয়া Ordinance No. XLIX of 1978-এর দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, যা নিম্নরূপ :
“Section 367(5) provides that “if the accused is convicted of an offense punishable with death or, in the alternative, with imprisonment for life or imprisonment for a term of years, the Court shall in its judgment state the reasons for the sentence awarded.”
২৭৬. এই সংশােধনীর ফলাফল হলাে মৃত্যুদণ্ড বা হ্রাসকৃত সাজা প্রদানের বিষয়টি প্রতিটি মামলার ঘটনা বিবেচনায় আদালতের সতর্ক বিবেচনার উপর অর্পণ করা হয়েছে। Abul Khair os State, 44 DLR (AD) 225 মামলায় আপিল বিভাগ এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, সাজা বা দণ্ড হাস করার জন্য বিলম্ব নিজে কোনাে extenuating circumstances নয়। আপিল বিভাগ প্রদত্ত পর্যবেক্ষণটি নিম্নরূপ :
“Delay by itself in the execution of sentence of death is by no means an extenuating circumstance for commuting the sentence of death to imprisonment for life. There must be other circumstances of a compelling nature which together with delay will merit such commutation. We find no compelling extenuating circumstances in this case and therefore, find no ground whatsoever to interfere.”
২৭৭. ভারতে ১৯৭৩ সালে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরে ৩৬৭(৫) ধারাটি নতুনভাবে প্রণীত হয়। ধারা ৩৫৪(৩)-এ সমজাতীয় বিধান রয়েছে, যা নিম্নরূপ :
“Section 354(3) When the conviction is for a sentence punishable with death or, in the alternative, with imprisonment for life or imprisonment for a term of years, the judgment shall state the reasons for the sentence awarded, and, in case of sentence of death, the special reason for such sentence.”
২৭৮. এই নতুন বিধানের অধীনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান এখন একটি নতুন বিধি। কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ উল্লেখে মৃত্যুদণ্ড আরােপ করা যেতে পারে। Jagmohan Singh vs State of uP, AIR 1973 SC 947 মামলায় এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে-
“A large number of murders is undoubtedly of common type. But some at least are diabolical in conception and cruel in execution. In some others where the victim is a person of high standing in the country, society is liable to be rocked to its very foundation. Such murders cannot simply be whisked away by finding alibis in the social maladjustment of the murderer. Prevalence of such crimes speaks, in opinion of many, for the inevitability of death penalty not only by way of deterrence, but as a total emphatic disapproval by the society.”
৫২৮
২৭৯. Bachan Singh os State of Punjab, AIR 1980 SC 898 মামলায় বচ্চন সিংকে তিন ব্যক্তিকে হত্যার জন্য ৩০২ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাঞ্জাব হাইকোর্ট কর্তৃক বহাল রাখা হয়েছিল। স্পেশাল লিভের মাধ্যমে সে একটি ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য এসেছিল। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৫৪(৩) ধারার অধীনে প্রাপ্ত ঘটনায় নিম্ন আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড আরােপের ‘বিশেষ কারণ ছিল কিনা তা বিবেচনার জন্য লিভ গ্রান্টেড হয়েছিল। সুপ্রীম কোর্টে দ্বৈত বেঞ্চ ৩০২ ধারার অধীনে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রদান এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ধারা ৩৫৪(৩)-এ বিধৃত দণ্ড প্রদানের প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা সম্পর্কে সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি একটি সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রেরণ করেন। সুপ্রীম কোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখেন এবং নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন:
“Attuned to the legislative policy delineated insections 354(3) and 235(2) propositions (iv)(a) and (v) (b) in Jagmohan, shall have to be recast and may be stated as below: (a) The normal rule is that the offences of murder shall be punished with the sentence of life imprisonment. The Court can depart from that rule and impose the sentence of death only if there are special reasons for doing so. Such reasons must be recorded in writing before imposing the death sentence, (b) While considering the question of sentence to be imposed for the offence of murder under section 302, Penal Code, the Court must have regard to every relevant circumstance relating to the crime as well as the criminal. If the Court finds, but not otherwise, that the offense is of an exceptionally depraved and heinous character and constitutes, on account of its design and the manner of its execution, a source of grave danger to the society at large, the Court may impose the death sentence.”
২৮০. ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট Nalini, 1999 5 SCC 253 মামলায় কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৫৪(৩) ধারা অনুসারে প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন। এই মামলায় বিচারপতি DP Wadhwa পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন যে-
“Cruelty of the crime committed has known no bounds. The crime sent shock waves in the country. General elections had to be postponed. It was submitted more than once that principal perpetrators in the present case are already dead but then for the support which Nalini (A-1), Santhan (A-2), Murugan (A-3) and Ariuv (A-18) afforded for commission of the crime it could not have been committed. Each one of these four accused had a role to play. Crime was committed after previous planning and executed with extreme brutality. There were as many as two dry runs as to how to reach Rajiv Gandhi after penetrating the security cordon. A former Prime Minister of the country was targeted because this country had entered an agreement with a foreign country in exercise of its sovereign powers. Rajiv Gandhi being the head of the
৫২৯
Government at that time was signatory to the accord which was also signed by the head of the Government of Sri Lanka. The Accord had the approval of Parliament. It was not that Rajiv Gandhi had entered into the Accord in his personal capacity or for his own benefit. Though we have held that object of the conspiracy was not to commit any terrorist act or any disruptive activity, nevertheless murder of a former Prime Minister for what he did in the interest of the country was an act of exceptional depravity on the part of the accused, an unparalleled act in the annals of crimes committed in this country. In a mindless fashion not only was Rajiv Gandhi killed but along with him others died and many suffered grievous and simple injuries. It is not that intensity of the belt bomb strapped on the waist of Dhanu was not known to the conspirators as after switching on the first switch on her belt bomb Dhanu asked Sivarasan to move away. Haribabu was so keen to have pictures of the crime that he met his fate in the blast itself. We are unable to find any mitigating circumstance not (sic) to upset the award of sentence of death on the accused.”
২৮১. ইন্দিরা গান্ধী হত্যা মামলায় তথা Kehar Singh vs State AIR 1988 SC 1883 মামলায় কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৫৪(৩) ধারার প্রেক্ষাপটে মৃত্যুদণ্ডের মতাে চরম দণ্ড প্রদান সম্পর্কে একই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। এই মামলায় ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট কেহার সিং এবং সাওয়ান্ত সিংয়ের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রেখেছিলেন। Ozha J পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন যে-
“Then there is the question of a sentence which was argued to some extent. But it must be clearly understood that it is not a case where X is killed by Y on some personal ground for personal vendetta. The person killed is a lady and no less than the Prime Minister of this country who was the elected leader of the people. In our country we have adopted and accepted a system wherein change of the leader is permissible by ballot and not by bullet. The act of the accused not only takes away the life of a popular leader but also undermines our system which has been working so well for the last forty years. There is yet another serious consideration. Beant Singh and Satwant Singh are persons who were posted on the security duty of the Prime Minister. They are posted there to protect her from any intruder or from any attack from outside and therefore if they themselves resort to this kind of offense, there appears to be no reason or no mitigating circumstance for consideration on the question of sentence. Additionally, an unarmed lady was attacked by these two persons with a series of bullets and it was found that a number of bullets entered her body. The manner in which mercilessly she was attacked by these 2 persons on whom the confidence was reposed to give her
৫৩০
protection repels any consideration of reduction of sentence. In this view of the matter, even the conspirator who inspired the persons who actually acted does not deserve any leniency in the matter of sentence. In our opinion, the sentence awarded by the trial COURT and maintained by the High Court appears to be just and proper.”
২৮২. কোন কোন মামলায় মৃত্যুদণ্ড আরােপ করা যেতে পারে সেটির শ্রেণিবিভক্তির পর ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Machhi Singh (supra) মামলায় নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“When the victim of murder is (a) an innocent child who could not have or has not provided even an excuse, much less a provocation, for murder (b) a helpless woman or a person rendered helpless by old age or infirmity (c) when the victim is a person vis-a-vis whom the murderer is in a position of domination or trust (d) when the victim is a public figure generally loved and respected by the community for the services rendered by him and the murder is committed for political or similar reasons other than personal reasons.”
২৮৩. জনাব মামুন কর্তৃক উদ্ধৃত Pratt-এর মামলায় প্রতীয়মান হয় যে, জ্যামাইকায় বিদ্যমান বিধি অনুসারে প্রিভি কাউন্সিলের জুডিশিয়াল কমিটিতে আপিল দায়েরের জন্য একটি কঠোর সময়সীমা রয়েছে এবং সেখানে এই বিধানও রয়েছে যে, ঐ সময়সীমা কালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত থাকবে। ঐ মামলায় আরাে কিছু বিষয় (প্লি) উত্থাপিত হয়েছিল। প্রিভি কাউন্সিল তাদের ঐ সকল প্লি গ্রহণ করেছিলেন এবং নিম্নবর্ণিত কারণ উল্লেখে তাদের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে হ্রাস বা পরিবর্তন করেছিলেন :
“Prolonged delay in carrying out a sentence of death after that sentence had been passed could amount to inhuman…punishment or other treatment contrary to section 17(1) of the Jamaican Constitution irrespective of whether the delay was caused by the shortcomings of the state or the legitimate resort of the accused to all available appellate procedures. A state that wished to retain capital punishment had to accept the responsibility of ensuring that execution followed as swiftly as practicable after sentence, allowing a reasonable time for appeal and consideration of reprieve and, if the appellate procedure enabled the prisoner to prolong the appellate hearings over a period of years, the fault was to be attributed to the appellate system that permitted such delay and not to the prisoner who took advantage of it.”
২৮৪. Henfield-এর মামলায় প্রিভি কাউন্সিল Pratt-এর মামলায় বর্ণিত নীতিগুলাে অনুসরণ করেন এবং আবেদন গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা প্রদান করে নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“They therefore reviewed the relevant considerations, at pp. 34-35, and concluded that in any case in which execution was to take place more than five
৫৩১
years after sentence there would be strong grounds for believing that the delay was such that execution thereafter would constitute inhuman punishment contrary to section 17(1).”
২৮৫. Guerra-এর মামলায় প্রিভি কাউন্সিল Pratt-এর মামলায় গৃহীত নীতিগুলাে অনুসরণ করেন এবং নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“Where a person was sentenced to death in a common law jurisdiction, execution was required to be carried out by the state as swiftly as practicable after sentence, allowing a reasonable time for appeal and consideration of reprieve, since under the common law a long-delayed execution was not in accordance with the due process of law. In Trinidad and Tobago such an execution, if not stayed, would constitute a cruel and unusual punishment contrary to section 5(2)(b) of the Constitution and would not be in accordance with the due process of law under section 4(a) of the Constitution.” It thus appears that the principles laid down in the above decisions are not applicable in the present case, applying the principles of due process of law as applicable in a common law jurisdiction is not applicable to our legal judicial system since we have codified laws on the subject and (2) there are uniform decisions of our Superior Court that mere delay is not a legal ground for commutation of a sentence.”
২৮৬. প্রতীয়মান হয় যে, উপরে বর্ণিত সিদ্ধান্তগুলােয় দেওয়া নীতিগুলাে বর্তমান মামলাগুলাের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয়। কমন ল জুরিসডিকশনে প্রযােজ্য ডিউ প্রসেস অব ল-এর নীতি আমাদের বিচারব্যবস্থায় প্রযােজ্য নয়। যেহেতু সংশ্লিষ্ট আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং আমাদের উচ্চ আদালতের অভিন্ন সিদ্ধান্ত রয়েছে, সেহেতু দণ্ডাদেশ বা সাজা পরিবর্তন করার জন্য কেবল বিলম্ব কোনাে আইনানুগ যুক্তি নয়।
২৮৭. তদনুসারে, আমি মনে করি যে, আপিলকারীগণসহ আসামিরা পরিকল্পিতভাবে পরিণতি জেনে সজ্ঞানে বর্বর অপরাধ সংঘটিত করেছে এবং সেহেতু দণ্ড প্রদানের বিষয়ে তারা বিশেষ কোনাে সহানুভূতি পেতে পারে না। অতএব, আমি আপিলগুলােতে কোনাে মেরিট পাই না এবং তদনুসারে আপিলগুলাে ইতােমধ্যে বর্ণিত পরিবর্তনসহ (মােডিফিকেশন) খারিজ (ডিসমিসড) করা হলাে। বিচারপতি মােঃ আব্দুল আজিজ আমার বিজ্ঞ ভ্রাতা বিচারপতি তফাজ্জল ইসলাম প্রদত্ত রায়, যেখানে ঘটনার গুণাগুণ, সাক্ষ্য, আইন ও কেস ল আলােচিত হয়েছে তা আমি পড়েছি এবং আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি আমার বিজ্ঞ ভ্রাতাবৃন্দ বিচারপতি জনাব মােঃ মােজাম্মেল হােসেন ও বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রদত্ত পর্যবেক্ষণসমূহের সাথেও একমত।
২৮৯, আমার বিজ্ঞ ভ্রাতাবৃন্দের সাথে একমত হয়ে মামলায় প্রকাশিত ঘটনা ও অবস্থাদি এবং কৌসুলিগণের নিবেদন এবং হত্যার শিকার প্রেসিডেন্টের দুই ভগ্ন হৃদয়ের কন্যার অবর্ণনীয় কষ্ট ও বেদনা এবং ১৯৭৫ সাল থেকে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারার সমগ্র জাতির লজ্জার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছু যুক্ত করার সুযােগ নিচ্ছি।
৫৩২
২৯০. নিরীহ নিরস্ত্র ব্যক্তি এবং নারী ও শিশুদের হত্যা করা ইসলাম ধর্মে একটি মহাপাপ এবং অন্য ধর্মেও তা সভ্যতা ও মানবতার বিরুদ্ধে একটি বড় অপরাধ। ইসলাম ধর্মে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড একমাত্র সাজা। অন্য ধর্মগুলােতেও এবং ফৌজদারি আইনে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়া অনুরূপ সাজার বিধান রয়েছে।
২৯১. আপিলকারীদের বিজ্ঞ কৌসুলিগণ দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারী লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার এই তিনজনের দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দিসহ নথিতে থাকা ঘটনাদি, সাক্ষ্য ও তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
২৯২. বর্তমান মামলায় দেখা যায়, দণ্ডপ্রাপ্তরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে (ফজর নামাজের সময়) প্রজাতন্ত্রের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট, জাতির পিতা এবং প্রজাতন্ত্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাদের ৩ (তিন) পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং ৯-১০ বছর বয়সী কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামাল ও শেখ জামালের স্ত্রীদের এবং প্রেসিডেন্টের ভ্রাতা শেখ নাসের রহমান, অন্যদের এবং নিরাপত্তা অফিসার সহ ১১ (এগারাে) ব্যক্তিকে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৩২ নম্বর রােডে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
২৯৩. রেসপন্ডেন্ট পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর জনাব আনিসুল হক এইরূপ নিরস্ত্র ব্যক্তি, নারী এবং শিশুকে কোনাে প্ররােচনাহীনভাবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে দানবিক ও বর্বর বলে অভিহিত করেছেন, যা সভ্যতার জানা নেই এবং যা মানব ইতিহাসে বিরল।
২৯৪. বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম এই ঘটনাকে বেদনাদায়ক ও অমানবিক বলে অভিহিত করেছেন (তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন যখন তিনি শেখ রাসেল হত্যার সাক্ষ্য তুলে ধরছিলেন)। জনাব আজমালুল হােসেন কিউ. সি. এটিকে horrendous killing হিসেবে বর্ণনা করছেন। সিনিয়র আইনজীবী জনাব তৌফিক নেওয়াজ, সিনিয়র আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী জনাব আবদুল মতিন খসরু, সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসােসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জনাব এএফএম মেসবাহউদ্দিন আহমেদ সর্বোচ্চ বার এবং দেশের সকল বারের পক্ষে দু চোখে অশ্রু ঝরিয়ে ঘটনাটিকে বেদনাদায়ক, নির্মম ও নিষ্ঠুর হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটি করতে গিয়ে তাঁরা ইয়াজিদের পিশাচ বাহিনীর হাতে সংঘটিত কারবালা হত্যাযজ্ঞের’ কথাটি মনে করিয়ে দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা কীভাবে ঘটনা সংঘটিত করেছিল এবং কীভাবে অপরাধীরা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারগুলাের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপােষকতায় সুরক্ষিত হয়েছিল, আশ্রয় পেয়েছিল, পুরস্কৃত হয়েছিল- সে মর্মে নথিতে থাকা সাক্ষ্য তুলে ধরে তারা (বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ) সকলেই বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে ঘটনা বর্ণনাপূর্বক বিচার প্রার্থনা করেছেন।
২৯৫. রেসপন্ডেন্ট পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলিগণ নথিতে থাকা সাক্ষ্য ও তথ্যাদির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিবেদন করেন যে, দণ্ডিত অপরাধীরা সময়ে সময়ে তদানীন্তন মন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমেদ, ডেপুটি চিফ অব আর্মি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যিনি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সেনাপ্রধান হয়েছিলেন ও পরবর্তীকালে চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতা দখল করেছিলেন তাদের সাথে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আলােচনা করেছিল। এসব থেকে উঠে এসেছে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুব সকালে কর্নেল সাফায়েত জামিলের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট হত্যার কথা শুনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিক্রিয়া, স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের একজন পুলিশ
৫৩৩
অফিসার কীভাবে পি.ডব্লিউ-১ এএফএম মহিতুল ইসলামকে নাটকীয় ভাষায় তার এফআইআর গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাঁর জীবন ও চাকরির প্রতি হুমকি দিয়ে তাঁকে বের করে দিয়েছিল। এসবই বাস্তবে হয়েছিল খােন্দকার মােশতাক আহমেদ, যিনি ঘটনার পর প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তার কর্তৃক জারিকৃত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ জারির অব্যবহিত পর। অপরাধীদের ১৯৭৫-এর ৪ নভেম্বরে তার/মেজর জেনারেল খালেদ মােশাররফ কর্তৃক বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের পঞ্চম সংশােধনীর তফশিলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক এবং পরবর্তীকালে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ কর্তৃক ও এরপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপােষকতায় তাদেরকে (অপরাধীদের) বাংলাদেশের বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। তারা (রেসপন্ডেন্ট পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলিবৃন্দ) প্রশ্ন রাখেন- ঐরূপ বর্বর গণহত্যার বিচারের পরিবর্তে কীভাবে রাষ্ট্র তাদের রক্ষাকারীর ভূমিকা রেখেছিল, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র এবং পাবলিক এক্সচেকার ব্যবহার করে কীভাবে জাতির আবেগের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের বিচারের আওতায় না এনে কুখ্যাত অপরাধীদের আশ্রয় ও চাকুরি দিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে অবমাননা করেছে।
২৯৬. সিনিয়র কৌঁসুলি জনাব আজমালুল হােসেন কিউ.সি তীব্রভাবে সরকার তথা রাষ্ট্রের ভূমিকা তুলে ধরেন। জনগণের অভিভাবক হিসেবে যার দায়িত্ব নাগরিকদের অধিকার, স্বাধীনতা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখা। কিন্তু প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানস্বীকৃত নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা ছিনতাই করেছিলেন। বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ জারির পর তা রুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বর্বর অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি (কৌসুলি) আরাে বলেন যে, তৎকালীন সরকার অপরাধীদের সুরক্ষাকারীর ভূমিকা নিয়েছিল, তাদের বিচার করার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে, যা ছিল বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা।
২৯৭. জনাব হােসেন আরাে নিবেদন করেছেন যে, দলীয় কার্যক্রম দ্বারা সংবিধান রুদ্ধ করা হয়েছিল; যদিও সামরিক আইন কোনাে আইন নয়, এটি এক জংলি আইন। আমাদের সুপ্রীম কোর্ট সামরিক আইনকে ‘পূর্বোক্ত সংবিধান হিসেবে অভিহিত করেছেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি যিনি একজন নাগরিক তাকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক করা হয়েছিল, যিনি পরবর্তীকালে ছিনতাইকারীর শপথ পরিচালনায় বাধ্য
হয়েছিলেন, যিনি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিলেন।
২৯৮. রেসপন্ডেন্ট পক্ষে বিজ্ঞ কৌসুলি জনাব আনিসুল হক গভীর দুঃখের সাথে এটি উল্লেখ করেছেন যে, বিচার পাওয়ার জন্য ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা দেখার জন্য দণ্ডিত আসামিদের দায়েরকৃত আপিলগুলাে দ্রুত শুনানির লক্ষ্যে প্রসিকিউশন বিফলভাবে গভীর বেদনা, উদ্বেগ ও অসম্মান নিয়ে হাইকোর্ট ডিভিশনের এই কোর্ট থেকে ঐ কোর্টে ঘুরেছেন। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ শুনানি করতে অস্বীকার করেছেন বিব্রত বােধ করে, কী কারণে তা তারাই ভালাে জানতেন। তিনি (বিজ্ঞ কৌসুলি) এটি বলে শেষ করেন যে, কোনাে ভীতি ছাড়া ও পক্ষ অবলম্বন না করে বিচার করার শপথ নেওয়া বিজ্ঞ বিচারকদের এই মামলায় ঐরূপ দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতে অবশ্যই আর কোনাে মামলায় যেন পুনারবৃত্তি না ঘটে, কোড অব কন্ডাক্ট-এ বিধৃত কারণে। আপিলকারীদের বিজ্ঞ কৌসুলিবৃন্দ এই সুযােগ নিয়েছিলেন এবং বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দের বিব্রত হওয়ার কারণে আপিলগুলাে শুনানিতে বিলম্ব হওয়ায় কনডেমড সেলে আপিলকারীদের প্রলম্বিত অবস্থানের কারণে দণ্ডিতদের প্রতি আরােপকৃত মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তনের যুক্তি নিয়েছেন।
৫৩৪
২৯৯. বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল সাক্ষ্যে পাওয়া নির্মমতার গভীরতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিবেদন করেন যে, যখন ক্রন্দনরত রাসেল তার মায়ের কোলে ফিরে যেতে চেয়েছিল, যখন জখমপ্রাপ্ত নাসের বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ও পানির জন্য কাঁদছিলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যখন তাঁর স্বামী বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে রক্তের মাঝে মৃত পড়ে থাকতে দেখেন এবং কেঁদে কেঁদে তাকেও মেরে ফেলতে বলেন তখন নরপিশাচরা সব বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে কারবালার নরপিশাচ ইয়াজিদের মতাে পৈশাচিক বলপ্রয়ােগে বুলেটে ঝাঁঝরা করে তাদের সবাইকে নীরব করে দিয়েছিল।
৩০০. জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যে, তৎকালীন সরকার ঐ অপরাধীদের কেবল প্রশ্রয় দেয়নি, লে. কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমানকে দেশে ‘ফ্রিডম পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের এবং দৈনিক মিল্লাত’ নামে একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশের, সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও অনুমতি দিয়েছিল। মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) খােন্দকার আব্দুর রশিদকে ১৯৯৬-এর সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল এবং খােন্দকার রশিদকে বিরােধীদলীয় নেতা করা হয়েছিল, জনগণের ঘৃণা ও বিরােধিতা সত্ত্বেও। তিনি নিবেদন করেন যে, এটি কেবল কোনাে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা ছিল না, অপরাধীরা চেয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের আদর্শ, মূল্যবােধ ও অর্জনকে হত্যা করতে।
৩০১. জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল আরাে বলেন যে, বর্বর অপরাধীরা, যাদের আইন ও বিচারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই, তারা কোনাে ক্ষমা বা অনুকম্পা কোনােটিই পাওয়ার যােগ্য নয়, এবং অন্য কোনাে দেশ, যাদের আইন ও বিচারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই সেখানে অর্থাৎ কোনাে মুসলিম দেশ যেটি ইসলাম ও মানবতার বড় শত্রু সেখানে আশ্রয় নেওয়ারও যােগ্য নয়।
৩০২. জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল এটি নিশ্চিত করতে জোরালােভাবে নিবেদন করেছেন যে, ভবিষ্যতে কোনাে বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি কোনাে শক্তি বা চাপের কাছে যেন নতি স্বীকার না করেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণ না করেন বা বিচার বিভাগের অমর্যাদা করে কোনাে ক্ষমতা দখলকারীর শপথ পরিচালনা না করেন। আমরা রেসপন্ডেন্ট পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলিগণকে শ্রবণ করেছি। তাঁদের নিবেদন বিবেচনার দাবি রাখে।
৩০৩. হত্যাকাণ্ডের পৈশাচিক ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুব প্রত্যুষে (ফজর নামাজের সময়) তৎকালীন লালবাগ থানা ও বর্তমান ধানমন্ডি থানাধীন রােড ৩২, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দাপ্তরিক বাসভবনে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সেখানে তদানীন্তন প্রেসিডেন্টসহ ১১ (এগারাে) জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। প্রেসিডেন্টের দুই কন্যা শেখ হাসিনা, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর বােন শেখ রেহানা ঐ সময় বিদেশে অবস্থান করায় সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, তাঁরা রাতারাতি এতিম হয়ে পড়েন।
৩০৪. নথিতে থাকা সাক্ষ্য ও তথ্যাদি থেকে দেখা যায় যে, দণ্ডিত আসামিরা ব্যক্তিগত অর্জন ও স্বার্থে নিরস্ত্র প্রেসিডেন্ট, তাঁর স্ত্রী, ভাই এবং তিন পুত্র ও তাদের স্ত্রীদের কোনাে প্ররােচনা ও প্রতিরােধ ছাড়া হত্যা করেছিল। পি.ডব্লিউ জনাব মহিতুল ইসলাম, প্রেসিডেন্টের তৎকালীন পি.এ, গুলিবর্ষণে শরীরে জখমপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করে লালবাগ পুলিশ স্টেশনে যান ঘটনার বিষয়ে এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) দায়ের করতে। কিন্তু পুলিশ অফিসার হত্যাকাণ্ডের তথ্য রেকর্ড করার পরিবর্তে তাকে বের করে দিয়েছিল।
৫৩৫
৩০৫. হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব সরকারের একজন মন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট হন। তিনি ২৬.৯.১৯৭৫ তারিখে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ জারি করেন। এরপর দ্রুত দেশের পট পরিবর্তিত হয়েছিল। সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল, দণ্ডিত আসামিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, খােন্দকার মােশতাক আহমেদকে অপসারণ করা হয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান এবং পরবর্তীকালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও এরপর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এরপর জেনারেল এইচ এম এরশাদ প্রেসিডেন্ট হন, ১৯৯০-এ গণঅভ্যুত্থানে অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত। ২৩.৪.১৯৭৭ তারিখে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক আদেশ নং-১, ১৯৭৭ জারি করা হয় এবং সংবিধানের পরবর্তী পঞ্চম তফশিলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দণ্ডিত আসামিদেরসহ দুষ্কৃতকারীদের সব হত্যাকাণ্ড এবং তাদের কৃত সব কর্ম ও অপরাধের বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দণ্ডিত আসামিদের বাংলাদেশের বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
৩০৬. ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের শেষে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর পি.ডব্লিউ-১ জনাব মহিতুল ইসলাম বর্তমান এফআইআর দায়ের করেন যার ভিত্তিতে ধানমন্ডি পুলিশ স্টেশন কেস নং- ১০(১০) ১৯৯৬ তারিখ- ০২.১০.১৯৯৬ শুরু হয়। সরকার সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে এবং ২৬.৯.১৯৭৬ তারিখে জারিকৃত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ বাতিল করে, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স রিপিলিং অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নম্বর-২১), ১৯৯৬ তারিখ ১৪.১১.১৯৯৬-এর মাধ্যমে। দণ্ডিত আসামি লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান (তার মায়ের মাধ্যমে) এবং লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার খান যথাক্রমে ১৯৯৬ সালের রিট আবেদন নম্বর-৫৩১৩ এবং ১৯৯৬ সালের রিট আবেদন নম্বর-৫৩২১ দায়ের করে Repealing Act চ্যালেঞ্জ করে এবং ধানমন্ডি থানার কেস ও লালবাগ থানা পুলিশ স্টেশন কেস নম্বর- ১১(১১), ১৯৭৫ তারিখ ০৪.১১.১৯৭৫ হাইকোর্ট ডিভিশনে চ্যালেঞ্জ করে এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনে চ্যালেঞ্জ করে যথাক্রমে সিভিল আপিল নম্বর-১৮/১৯৯৭ এবং সিভিল আপিল নম্বর-১৯/১৯৯৭ দায়ের করে ব্যর্থ হয়েছিল। রিট আবেদনগুলােয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ বাতিল করে Indemnity Repeal Act being Act No. 21 of 1996 বহালপূর্বক প্রদত্ত রায় ও আদেশ এই ডিভিশন বহাল রাখেন (সূত্র: 49 DLR 133 Ges 1998 BLD (AD) 155]। এরপর বর্তমান মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। দণ্ডিত আসামিরাসহ ২০ জন চার্জশিটভুক্ত আসামিদের বিচারে (১৫ জন) পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারা তৎসহ ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং বিজ্ঞ দায়রা জজ কর্তৃক দায়রা মামলা নম্বর-৩১৯/১৯৯৭- এ ০৮.১১.১৯৮ তারিখে প্রদত্ত রায়ে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয় লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দীন (আর্টিলারি)-এর উপস্থিতিতে এবং বাকি আসামিদের অনুপস্থিতিতে। তিনি (দায়রা জজ) অনুমােদনের জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ডেথ রেফারেন্স নম্বর-৩০/১৯৯৮ প্রেরণ করেন। বিচারের সম্মুখীন হওয়া বর্ণিত ৩ (তিন) দণ্ডিত আসামি ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল দায়ের করে।
৩০৭. সংক্ষেপে উপরােক্ত ঘটনাদি যা মানবিক মূল্যবােধ, নৈতিকতা, অধিকার ও স্বাধীনতা, আইনশৃঙ্খলা ধ্বংসের এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৫ জারির কারণে ডিউ প্রসেস অব ল-এর মাধ্যমে নাগরিকের বিচার পাওয়ার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত অধিকারকে প্রতিরােধ ও বঞ্চিত করার এক বিস্ময়কর চিত্র। সভ্য সমাজের কাছে এটি কেবল অশ্রুত ও অপ্রত্যাশিত ছিল না, বরং ছিল অচিন্ত্যনীয় যে, সরকার
৫৩৬
সংবিধান প্রয়ােগকারী হিসেবে এবং নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতার, দেশের আইনশৃঙ্খলার অভিভাবক হিসেবে নাগরিকের বিচারপ্রাপ্তিতে সহায়তা করতে বাধ্য থাকলেও এর পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র এবং জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ বেআইনিভাবে ও কোনাে কর্তৃত্ব ছাড়া অপব্যবহার করে তাদের নিজেদের স্বার্থ ও রাজকীয় উচ্চাশা পূরণে অপরাধীদের সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও প্রশ্রয় দেয়।
৩০৮. বিচার প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করা মানুষের মাঝে প্রতিবাদ সৃষ্টি করে যা অবশেষে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞ বিচারকদের বিব্রত হওয়ার কারণে বিচার প্রদানে বিলম্বও লজ্জাজনক এবং তা একই সময়ে বিচার বিভাগের জন্য সার্বিকভাবে অসম্মানজনক যা ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যকে হতাশ করে এবং বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থাকে হালকা করে; অমানবিক পরিবেশের এবং বিচার বিভাগের প্রতি তাদের স্থাকে নষ্ট করার ধারণা সৃষ্টি করে, যার ভয়াবহ পরিণতি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ক্ষতিকর। ৩০৯. এটি
লজ্জাজনক যে, আমরা ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না সুবিধাবাদী সরকারের ঐরূপ বিশ্বাসঘাতকতা, অনৈতিকতা
এবং কর্তৃত্বহীন কর্মকাণ্ডের ও গভর্নমেন্ট মেশিনারিজের অপব্যবহারের সমালােচনা করতে, নিন্দা জানাতে। স্বজন হারানাে কোনাে পরিবারের বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। উচিত নয় কয়েক দশক ধরে বেদনা, নিপীড়ন ও অসম্মান নিয়ে বিচার প্রার্থনায় তাদের ছুটতে হবে কালাে আইনের আবরণে সরকারি বাধার বিরুদ্ধে। এমনকি কোনাে বিজ্ঞ বিচারক তার শপথের প্রতি অনুগত থেকে, কোনাে ভীতি ও পক্ষপাত থেকে দূরে থেকে আচরণবিধির বাইরে গিয়ে বিচার সম্পন্ন করতে বিব্রত বােধ করা উচিত নয়। সরকারের ঐরূপ কর্মকাণ্ড চূড়ান্তভাবে দায়িত্বহীন, দুঃখজনক, অমর্যাদাকর এবং লজ্জাজনক, কেবল জাতির জন্য নয়, বিশ্বের সভ্য সম্প্রদায়ের জন্যও, যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তির হানি করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করতে এবং বিশ্বাস করতে চাই যে, বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাদের নীতিহীন ভূমিকার পুনরাবৃত্তিতে জড়িত হবেন না এবং সরকারি ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং আইন ব্যবহা র করে সরকার পর্যায়ে কোনাে বর্বর অনৈতিক কাজের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।
৩১০. জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল এই বলে শেষ করেন যে, জনগণের এটি জানার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে যে, কীভাবে এবং কোন ক্ষমতাবলে দণ্ডিত আসামিদের ঐরূপ পৈশাচিক অপরাধসমূহ সংঘটনের পর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে সুবিধাভােগী সরকার সুরক্ষা দিয়েছিল ও পৃষ্ঠপােষকতা করেছিল, দেশের ও পাবলিক এক্সচেকারের সুনামের বিনিময়ে।
৩১১. বর্তমান মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, এটি বলা বাহুল্য, বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের নিবেদন নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য কঠিন। কিন্তু আমরা একমত যে, প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের জানার অধিকার রয়েছে কীভাবে এবং কোন ক্ষমতাবলে সরকার অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে তাদের সুরক্ষা দিতে, আশ্রয় দিতে ও পুনর্বাসিত করতে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সরকার কর্তৃক ব্যয় করা হয়েছিল।
৩১২. তারপরও স্বৈরাচার ও অবিশ্বস্ত সরকারের অপকর্ম ও পৈশাচিক শক্তির চেয়ে আইনের হাত অনেক বেশি লম্বা ও শক্তিশালী। বর্তমান মামলায় এটি প্রতিভাত হয়েছে যে, বিলম্বিত বিচার সবসময় বিচারকে অস্বীকতি নয়, বরং বিচার প্রতিকার প্রার্থীর প্রাপ্য। এই দেশের জনগণের প্রতি আমাদের উচ্চ সম্মান। রয়েছে। তারা সবসময় গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সংস্কৃতি বহাল রাখতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চকিত কষ্ট ও প্রতিকূলতার মাঝেও গণতান্ত্রিক চেতনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকারকে জবাবদিহিতায় রাখতে জনগণ তাদের গণতন্ত্রের অগ্রসেনার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
৫৩৭
৩১৮. বিজ্ঞ দায়রা জজ, ঢাকা কর্তৃক ০৮.১১.১৯৯৮ তারিখে প্রদত্ত রায় এবং দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে দণ্ডিত আপিলকারী লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬০৪/১৯৯৮; মেজর মােঃ বজলুল হুদা ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৩/১৯৯৮; লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৬/১৯৯৮; লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) ক্রিমিনাল আপিল নম্বর২৬১৭/১৯৯৮ এবং মেজর (অব) একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ৪৩৪/২০০৭ দায়ের করে।
৩১৯, অতঃপর বিচারপতি মােঃ রুহুল আমীন এবং বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সমন্বয়ে গঠিত মাননীয় হাইকোর্ট ডিভিশন একত্রে ডেথ রেফারেন্স নম্বর ৩০/১৯৯৮ এবং বর্ণিত পাঁচটি ক্রিমিনাল আপিল শুনানি করেন। ডিভিশন বেঞ্চ বর্তমান আপিলকারীগণসহ ১৫ (পনের) জন আসামিকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ড সম্পর্কে রায় ও আদেশ প্রদান বিষয়ে বিভক্ত মতামত প্রদান করেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ প্রথম বিচারক বিচারপতি মােঃ রুহুল আমীন চার দণ্ডিত আপিলকারী, যথা লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর মােঃ বজলুল হুদা এবং মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং অন্য পাচ দণ্ডিত, তথা লে. কর্নেল আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল শরি ডালিম, লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল এসএইএ মবিনুর চৌধুরী এবং লে. কর্নেল মােঃ আজিজ পাশা সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করেন। আপিলকারী লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান (অব) কর্তৃক দাখিলকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬০৪/১৯৯৮, আপিলকারী মেজর মােঃ বজলুল হুদা কর্তৃক দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৩/১৯৯৮ এবং আপিলকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান কর্তৃক দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৬/১৯৯৮ খারিজ করা হয়েছে। বর্ণিত চার আপিলকারীসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ৯ (নয়) জনকে পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণ বহাল রাখা হয় এবং বিজ্ঞ দায়রা জজ কর্তৃক পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে প্রদত্ত দণ্ড হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ প্রথম বিচারক কর্তৃক বহাল রাখা হয় এবং এভাবে বিজ্ঞ দায়রা জজ প্রদত্ত রায় ও আদেশ বহাল রাখা হয়। ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০ বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্তকরণ ও প্রদত্ত দণ্ডের বিষয়টি বিজ্ঞ প্রথম বিচারক সংশােধন করে পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে তাকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, যেহেতু সে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের একজন অংশীদার ছিল। কিন্তু পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে তাকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ড প্রদান রদ করা হয়। প্রথম বিজ্ঞ বিচারক আপিলকারী লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স খারিজ করেছেন এবং তার দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৭/১৯৯৮ মঞ্জুর করেছেন এবং তার বিষয়ে বিজ্ঞ দায়রা জজ কর্তৃক প্রদত্ত দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডাদেশ রদ করেছেন। তদনুসারে, হাইকোর্ট ডিভিশনের প্রথম বিজ্ঞ বিচারক এই পাঁচ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসম্পর্কিত বিজ্ঞ দায়রা জজ প্রদত্ত রায় ও আদেশ রদ করেছেন।
৩২০. ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বর্তমান আপিলকারীগণসহ সকল ১৫ (পনের) আসামির ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করেছেন এবং ১৫ (পনের) আসামীকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডাদেশ সম্পর্কে প্রদত্ত রায় ও আদেশ বহাল রেখেছেন এবং বর্ণিত আপিলগুলাে খারিজ করেছেন।
৩২১. হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ প্রদত্ত উপরােক্ত বিভক্ত মতামতের আলােকে মামলাগুলাে তাঁদের মতামতসহ কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগের তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক বিচারপতি ফজলুল করিম সমীপে প্রেরিত হয়। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক বর্ণিত ছয় আসামিসংশ্লিষ্ট
৫৩৯
ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন, সেই সব বিষয়ে যেগুলাে সম্পর্কে ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাঁদের মতামত প্রদানে বিভক্ত হয়েছিলেন। অর্থাৎ, ঐ ৬ (ছয়) আসামি, যারা দ্বিতীয় বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল, কিন্তু বিজ্ঞ প্রথম বিচারক কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়নি। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক ৩০.০৪.২০০১ তারিখে প্রদত্ত তাঁর রায় ও আদেশ দ্বারা লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ এবং রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন-সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স সম্পর্কে বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারকের প্রদত্ত মতামত গ্রহণ করেন এবং আপিলকারী লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৭/১৯৯৮ খারিজ করেন। কিন্তু বিজ্ঞ প্রথম বিচারকের সাথে একমত হয়ে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক তিন আসামি যথা, ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার এবং মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স খারিজ করেন এবং তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডাদেশ রদ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ থেকে তাদের খালাস প্রদান করেন।
৩২২. হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আপিল খারিজ করে ৩০.৪.২০০১ তারিখের রায় ও আদেশের বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দোষী আপিলকারীরা তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ একত্রে শুনানি অন্তে পাঁচটি গ্রাউন্ডে একটি কমন লিভ মঞ্জুর আদেশ দেন, যা আমার বিজ্ঞ বিচারক ভাই মােঃ তাফাজ্জুল ইসলাম তার রায়ে পুনরালােচনা করেছেন।
৩২৩. প্রথম গ্রাউন্ডের বিষয়ে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সুযােগ ও এখতিয়ার সম্পর্কে বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট জনাব খান সাইফুর রহমান, ৫৬/২০০৭ ও ৫৮/২০০৭ নম্বর ফৌজদারি আপিলের আপিলকারীদের পক্ষে নিবেদন করেছেন যে, ডিভিশন বেঞ্চের প্রথম বিজ্ঞ বিচারক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক প্রদত্ত একটি স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি অগ্রাহ্য করেছেন, যেগুলাে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণােদিত মর্মে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তবে শুনানি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বাকি দুটি স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কে কোনাে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং এ কারণে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৭ ধারাসহ ৪২৯ ধারার বিধান অনুসারে চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে রায় প্রদান করার জন্য ৩৭৮ ধারার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার যুক্তির সমর্থনে তিনি Hethubha os. State of Gujarat reported in 1970 (1) SCC (Cr) 280, Union of India vs. Anantha Padma Nabiah reported in 1971 SCC (Cri), Sajjan Singh vs. State of MP reported in 1999 SCC (Cri) 44
Ges Mohim Mondal os. State reported in 15 DIR 615 মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন।
৩২৪. রেসপন্ডেন্ট-রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আনিসুল হক কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৭, ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধানগুলি উল্লেখ করেন এবং নিবেদন করেন যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের মামলাগুলিতে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহ থেকে দেখা যায় যে, মামলাটি কীভাবে পরিচালনা করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্তৃত অধিকার বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারককে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি মামলাটি কীভাবে (এবং কী পদ্ধতিতে) শুনবেন তা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে বিবেচনা করবেন। তারপর তিনি নিবেদন করেন যে, যেক্ষেত্রে মামলায় একাধিক আসামি রয়েছে এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন, সেক্ষেত্রে বিচারকরা যে আসামির মামলায় তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হয়েছেন সেই আসামির মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের সামনে উত্থাপন করা হবে এবং অন্যদিকে, যখন বিজ্ঞ বিচারকরা সব আসামির ক্ষেত্রে সমভাবে বিভক্ত হন তখন অভিযুক্তের পুরাে মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয়
৫৪০
ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন, সেই সব বিষয়ে যেগুলাে সম্পর্কে ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাঁদের মতামত প্রদানে বিভক্ত হয়েছিলেন। অর্থাৎ, ঐ ৬ (ছয়) আসামি, যারা দ্বিতীয় বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল, কিন্তু বিজ্ঞ প্রথম বিচারক কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়নি। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক ৩০.০৪.২০০১ তারিখে প্রদত্ত তাঁর রায় ও আদেশ দ্বারা লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ এবং রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন-সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স সম্পর্কে বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারকের প্রদত্ত মতামত গ্রহণ করেন এবং আপিলকারী লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৭/১৯৯৮ খারিজ করেন। কিন্তু বিজ্ঞ প্রথম বিচারকের সাথে একমত হয়ে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক তিন আসামি যথা, ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার এবং মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স খারিজ করেন এবং তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ডাদেশ রদ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ থেকে তাদের খালাস প্রদান করেন।
৩২২. হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আপিল খারিজ করে ৩০.৪.২০০১ তারিখের রায় ও আদেশের বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দোষী আপিলকারীরা তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ একত্রে শুনানি অন্তে পাঁচটি গ্রাউন্ডে একটি কমন লিভ মঞ্জুর আদেশ দেন, যা আমার বিজ্ঞ বিচারক ভাই মােঃ তাফাজ্জুল ইসলাম তার রায়ে পুনরালােচনা করেছেন।
৩২৩. প্রথম গ্রাউন্ডের বিষয়ে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সুযােগ ও এখতিয়ার সম্পর্কে বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট জনাব খান সাইফুর রহমান, ৫৬/২০০৭ ও ৫৮/২০০৭ নম্বর ফৌজদারি আপিলের আপিলকারীদের পক্ষে নিবেদন করেছেন যে, ডিভিশন বেঞ্চের প্রথম বিজ্ঞ বিচারক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক প্রদত্ত একটি স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি অগ্রাহ্য করেছেন, যেগুলাে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণােদিত মর্মে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তবে শুনানি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বাকি দুটি স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সম্পর্কে কোনাে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং এ কারণে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৭ ধারাসহ ৪২৯ ধারার বিধান অনুসারে চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে রায় প্রদান করার জন্য ৩৭৮ ধারার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার যুক্তির সমর্থনে তিনি Hethubha os. State of Gujarat reported in 1970 (1) SCC (Cr) 280, Union of India vs. Anantha Padma Nabiah reported in 1971 SCC (Cri), Sajjan Singh vs. State of MP reported in 1999 SCC (Cri) 44
Ges Mohim Mondal os. State reported in 15 DIR 615 মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন।
৩২৪. রেসপন্ডেন্ট-রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আনিসুল হক কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৭, ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধানগুলি উল্লেখ করেন এবং নিবেদন করেন যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের মামলাগুলিতে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহ থেকে দেখা যায় যে, মামলাটি কীভাবে পরিচালনা করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্তৃত অধিকার বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারককে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি মামলাটি কীভাবে (এবং কী পদ্ধতিতে) শুনবেন তা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে বিবেচনা করবেন। তারপর তিনি নিবেদন করেন যে, যেক্ষেত্রে মামলায় একাধিক আসামি রয়েছে এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন, সেক্ষেত্রে বিচারকরা যে আসামির মামলায় তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হয়েছেন সেই আসামির মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের সামনে উত্থাপন করা হবে এবং অন্যদিকে, যখন বিজ্ঞ বিচারকরা সব আসামির ক্ষেত্রে সমভাবে বিভক্ত হন তখন অভিযুক্তের পুরাে মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয়
৫৪০
৩২৭. এই বিষয়ে উপমহাদেশের উচ্চতর আদালতসমূহের সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করার পর বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল নিবেদন করেন যে, এই মামলায় বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক মেজর বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের আনীত দরখাস্ত শােনেন ও বিবেচনা করেন এবং ৬.২.২০০১ তারিখে প্রদত্ত আদেশে যথাযথ মতামত দেন যে, ৯ জন দোষী সাব্যস্ত বন্দির মামলা শুনানির জন্য বিবেচনা করা হয়নি এবং যাদের বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণ সমভাবে বিভক্ত এমন বাকি ৬ (ছয়) জনের মামলার শুনানি করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
৩২৮. জনাব আজমালুল হােসেন, বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট রেসপন্ডেন্ট-রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ প্রসিকিউটর হিসেবে উপস্থিত হয়ে আমাদের নিকট কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের অধ্যায় XXVII-এর বিধান তুলে ধরেন, যেখানে সাজা নিশ্চিতকরণের বিধান উল্লেখ করা আছে এবং সেই সাথে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের পার্ট ৭-এ অধীন অধ্যায় XXXI-এর বিধানও তুলে ধরেন, যেখানে ফৌজদারি আদালতের রায় ও আদেশের ফলে উদ্ভূত আপিলের বিধান উল্লেখ করা আছে। তিনি উপস্থাপন করেন যে, যেক্ষেত্রে দায়রা আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের নিশ্চিতকরণ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হবে না। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রমের বিশদ বিধান কোডের অধ্যায় XXVII-এ দেওয়া রয়েছে। আইনটির পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে মি. হােসেন নিবেদন করেন যে, বিচারকগণ যখন সাজা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন তখন ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারকের দ্বারা এটি প্রদত্ত বা স্বাক্ষরিত হতে পারে না এবং তদনুসারে তাদের মতামতসহ মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের কাছে প্রেরণ করা হবে, যিনি যেভাবে উপযুক্ত বলে মনে করেন সেভাবে শুনানির পরে (যদি থাকে) তার মতামত প্রদান করবেন এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারা অনুসারে মামলাটি তাদের মতামতসহ একই আদালতের অপর একজন বিচারকের সামনে পেশ করা হবে, যিনি যেভাবে উপযুক্ত বলে মনে করেন সেভাবে শুনানির পরে (যদি থাকে) তার মতামত প্রদান করবেন এবং রায় ও আদেশ তার এই মতামত অনুসারে হবে। ৭৫ ডিএলআর ৬১৮-এ বর্ণিত মামলা ব্যতীত তিনি এই বিষয়ে আর কোনাে নজির উল্লেখ না করে বিস্তৃত বিবরণ উপস্থাপন করেন। তিনি নিবেদন করেন যে, একই আদালতের বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের কাছে তাদের মতামতসহ মামলাটি প্রেরণের অর্থ হলাে এর মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের বিষয় চূড়ান্ত হতে হবে। যদি না দুজন বিচারক তাদের সম্মতি দেন। তিনি আরাে নিবেদন করেন যে, বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক স্বাধীন, কারণ এই শুনানি (যদি থাকে) যেভাবে তিনি উপযুক্ত মনে করেন” এই শব্দগুচ্ছের দ্বারা সেই পরিস্থিতিকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, যেখানে এবং যেভাবে তিনি উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে মামলাটি শুনবেন- তা সম্পূর্ণ বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের বিবেচনার অধীন এবং এর মাধ্যমে এটি স্বীকৃত যে, তৃতীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত বলে মনে করেন তিনি সেভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরােপুরি স্বাধীন। অন্য কথায়, মি. হােসেন কঠোর প্রচেষ্টায় এই যুক্তি তুলে ধরেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারাসহ ৩৭৮ ধারা অনুসারে তৃতীয় বিচারক কোনাে যুক্তি-তর্ক শুনবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাঁরই। তদনুসারে, তিনি উল্লেখ করেন যে, যাদের বিষয়ে মতামতের পার্থক্য রয়েছে তাদের অর্থাৎ উপরােক্ত সেই য় দোষী ব্যক্তির মামলা বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কোনাে দোষী আপিলকারীদের মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনানি না করে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক যে মতামত দিয়েছেন তার মাঝে কোনাে অবৈধতা নেই। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের XXVII অধ্যায়ে সাজা নিশ্চিতকরণের জন্য বক্তব্য
৫৪২
প্রদানের বিধান বিধৃত হয়েছে। কোডের ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগে মামলার কার্যক্রম দাখিল করা হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রদত্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না। সুতরাং মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে হাইকোর্ট বিভাগের কাছে মামলার কার্যক্রম জমা দিতে হবে। কোডের ৩৭৭ ধারা অনুসারে, সাজা নিশ্চিতকরণের আদেশ হাইকোর্ট বিভাগের কমপক্ষে দুজন বিচারক প্রদান করবেন এবং স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা যখন তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন, তখন কোডের ৩৭৮ ধারার বিধান অনুযায়ী, “তাদের মতামতসহ মামলাটি অন্য বিচারকের সামনে পেশ করা হবে এবং উক্ত বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে শুনানির পর তার মতামত প্রদান করবেন এবং এই মতামত অনুসারে রায় ও আদেশ হবে। আইনের বিধান অনুসারে দেখা যায় যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের সপ্তম খণ্ডের XXXI অধ্যায়ে আপিলের বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে কোডের ৪১০ ধারা এমন একটি বিধান যা কোনাে দায়রা জজ/অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক অনুষ্ঠিত বিচারে দোষী সাব্যস্ত অভিযুক্তকে হাইকোর্ট বিভাগের কাছে আপিল দায়ের করতে অধিকারী করে। এটি আইনের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি যে, একবার ফৌজদারি আপিল দায়ের করা হলে তা অবশ্যই গুণাগুণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং তা কখনােই শুনানির অভাবে খারিজ করা যাবে না। আপিলের শুনানির সময় আপিলকারী বা তার আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত থাকলেও, আপিল আদালত মামলার রেকর্ডটি পর্যালােচনা করা এবং মামলার গুণাগুণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বা কর্তব্য এড়াতে পারবেন না। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকরা যখন আপিল আদালত হিসাবে তাদের মতামতে সমভাবে বিভক্ত হবেন, “তাদের মতামতসহ মামলাটি একই আদালতের আরেকজন বিচারকের কাছে উত্থাপন করা হবে” এবং উক্ত বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে তিনি শুনানির পরে (যদি থাকে) তাঁর মতামত প্রদান করবেন এবং রায় ও আদেশ এই মতামত অনুসারে হবে। কোডের ৩৭৮ ধারার সাথে ৪২৯ ধারার বিধান মনােযােগ সহকারে পড়ে দেখা যায় যে, যদিও এই উভয় ধারার বিধানগুলি প্রকৃতির ক্ষেত্রে অভিন্ন, যখন একটি ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকরা তাদের মত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন তখন ৪২৯ ধারা অনুসারে, “মামলা, তাদের মতামতসহ একই আদালতের আরেকজন বিচারকের কাছে উত্থাপন করা হবে এবং উক্ত বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে তিনি শুনানির পরে (যদি থাকে) তার মতামত প্রদান করবেন এবং রায় ও আদেশ এই মতামত অনুসারে হবে।
৩২৯. উপরের শব্দগুচ্ছ থেকে আমরা দেখতে পাই যে, “অন্য একজন বিচারক”-এর পর “একই আদালতের এবং “এই শুনানি” ও এরপর “যদি থাকে”- এই অভিব্যক্তি ৩৭৮ ধারায় নেই। কোডের ৪২৯ ধারায় এই দুটি অভিব্যক্তি যুক্ত করে আইনপ্রণেতাগণ এই কথাটি বলতে চেয়েছিলেন যে, আপিল নিষ্পত্তি করার সময় ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণ যখন তাদের মতামত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত হন, তখন তাদের মতামতসহ মামলাটি একই আদালতের অন্য বিচারকের নিকট প্রেরণ করা হবে। এর অর্থ হলাে আপিল আদালতের একজন বিচারক, যিনি কোনাে বক্তব্য শুনবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে “সম্পূর্ণ স্বাধীন” এবং বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে মতামতের পার্থক্যগুলি সমাধান করে আপিলের সিদ্ধান্ত নিতেও স্বাধীন।
৩৩০. শুনানি চলাকালীন উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের সুযােগ এবং এখতিয়ার সম্পর্কে বিস্তৃত বক্তব্য প্রদান করেন। আমাদের নজরে এসেছে যে, ২০০৭ সালের ৫৬ এবং ২০০৭ সালের ৫৮ নম্বর ফৌজদারি আপিলের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান, যার যুক্তিগুলি অন্যান্য
৫৪৩
আপিলকারীদের পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ গ্রহণ করেছেন, 1999 SCC (CRI) 44, ILR 38 Cal 202, 1970 (1) SCC (Cr) 280, 1971 SCC (Cri) 535, 15 DLR 615-এ প্রতিবেদিত মামলার নজির উত্থাপন করেন এবং তিনি আরাে বলেন যে, “শুনানি”-এর সাথে যেভাবে তিনি উপযুক্ত মনে করেন”-এর কোনাে সহ-সম্পর্ক নেই এবং তদনুসারে, দুজন বিচারকের দ্বারা রায় স্বাক্ষরিত না হওয়ায় ৩৭৭ ধারার বিধান লজ্জিত হয়েছে এবং আইনের দৃষ্টিতে কোনাে রায়ই হয়নি। ফলে রায় এবং দোষী সাব্যস্তকরণ ও সাজার আদেশ আইনে কার্যকর নয়। সতর্কতার সাথে যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, রেসপন্ডেন্ট পক্ষ তাদের বক্তব্যের সমর্থনেও একই মামলাগুলির উপর নির্ভর করে। এই প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্তগুলি পরীক্ষা করা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। Dharam Singh Vs. State of UP reported in 1964 (1) CrLJ 78 মামলায় সব আসামির বিষয়ে মতামতের পার্থক্য ছিল। এক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের বিচারক ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ও ১৪৯ ধারার অধীনে দশ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষ খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং দশজন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ তাদের মতামতে বিভক্ত হয়ে যান এবং বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের সামনে বিষয়টি পেশ করা হয়, যিনি একজন বিচারকের সাথে একমত হয়ে দশজন আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং একজন অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করেন, যেখানে রায় ও আদেশ বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের মতামত অনুসারে হয়।
৩৩১. Babu Vs. State of the uP reported in AIR 1965 SC 1467 মামলায়, আপিলটি ছিল ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০৪ এবং ৩৪ ধারার অধীনে অভিযুক্ত আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজা প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে। বিজ্ঞ প্রথম বিচারক সাক্ষ্যের কিছু অংশ অবিশ্বাস করে আপিল খারিজ করেন এবং বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক আপিল মঞ্জুর করেন। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারা অনুসারে, কোনাে বক্তব্য যদি থাকে তা তিনি শুনবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তৃতীয় বিচারকের এবং এটি স্বীকৃত যে, তিনি যেভাবে যথাযথ বলে মনে করবেন সেভাবে তিনি পার্থক্য সমাধানে সম্পূর্ণ স্বাধীন। Hethubha Vs. State of Gujarat reported in AIR 1970 SC 1266 মামলায়, বিচারিক আদালত ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ধারাসহ ৩৪ ধারার অধীনে তিনজন আসামিকে খালাস প্রদান করেন, তবে সব অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩০৪ পার্ট-২ ধারা তৎসহ পঠিতব্য ৩৪ ধারার অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাদের পাঁচ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অভিযুক্ত নম্বর-১-হেথুভা এবং নম্বর-২- রণুভা ৩২৩ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং ৩ নম্বর আসামি মালুবাকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩২৩ ধারাসহ ৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। অভিযুক্ত ১ ও ২-কে তিন মাসের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং ২ নম্বর আসামিকে দুই মাসের জন্য সাজা দেওয়া হয় এবং সব সাজা একই সাথে চলার কথা থাকে। সব আসামি গুজরাটের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। বিচারপতি ডিভান সিদ্ধান্ত দেন যে, ধারা ৩০২-এর অধীনে অপরাধের জন্য আসামি ১ দোষী ছিল এবং অভিযুক্ত ২ এবং ৩-কে ধারা ৩২৪সহ ধারা ৩৪-এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারপতি শেলাত সব আসামিকে খালাস প্রদান করেন। কারণ তিনি অভিযুক্তের পরিচয় সংক্রান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। মামলাটি কোডের ৪২৯ ধারার অধীনে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক বিচারপতি মেহতার সামনে উত্থাপিত হয়, এবং তিনি ৩০২ ধারা অনুসারে ১
৫৪৪
নম্বর আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ৩০২ ধারাসহ ৩৪ ধারার অধীনে অভিযুক্ত ২ ও ৩-কে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের দণ্ডিত করেন। ধারা ৩২৩-এর অধীনে অভিযুক্ত ১ এবং ২-এর এবং ধারা ৩২৩সহ ধারা ৩৪-এর অধীন অভিযুক্ত ৩-এর সাজা বহাল রাখা হয়। ধারা ৩০৪ পার্ট ২-এর অধীনে সব আসামিকে দোষী সাব্যস্তকরণের বিষয়টি উপরে বর্ণিত মতে পরিবর্তন করা হয়। আপিলের সময় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে, তৃতীয় বিচারক পুরাে মামলাটি পরিচালনা করতে পারেন।
৩৩২. union of India Vs. BN Anantha Padma Nabiah reported in AIR 1971 SC 1836 মামলায়, সব অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে মতামতের পার্থক্য ছিল। তৃতীয় বিচারকের কাছে মামলাটি প্রেরণ করা হয়। 46969 Jetta Golo Bhagat Ram Vs. State of Rajasthan reported in (1972) 3 SCR 303 মামলাটি বিবেচনা করেন, যেখানে তৃতীয় বিচারক সিদ্ধান্ত দেন যে, ভগত রাম ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৮৯ ধারা সেই সাথে ১২০বি, ২১৮ এবং ৩৪৭ ধারার অধীন অপরাধের জন্য দোষী ছিলেন। এটি সিদ্ধান্ত হয় যে, যেহেতু প্রথম এবং দ্বিতীয় বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ পেনাল কোডের ৩৪৭, ২১৮, ৩৮৯ এবং ১২০বি ধারার অধীনে অভিযােগের বিষয়ে ভগতকে খালাস দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সেহেতু তৃতীয় বিচারকের জন্য এই বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার এবং ভগত রামকে ভারতীয় পেনাল কোডের ১২০বি এবং ২১৮ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করাটা অনুমােদিত ছিল না। এক্ষেত্রে দুই বিচারকের মধ্যে মতামতের পার্থক্যের কারণে ভগত রামের সাজা ও সাজা খালাস সম্পর্কিত পুরাে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। Hethubha Vs. State of Gujarat reported in AIR 1970 SC 1266 মামলায় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এই পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে, ভগত রামের মামলায় কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার পরিধি নিশ্চিত করা হয়নি। ধারা ৪২৯-এর অধীনে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকরা তৃতীয় বিচারকের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করেন কিনা সে মর্মে কোনাে প্রশ্নও তােলা হয়নি বা এই তিনটি মামলায় এই বিষয়ের সিদ্ধান্তের প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়নি। Babu Vs. State of UP reported in AIR 1966 SC 1467, Hethubha Vs. State of Gujarat reported in AIR 1970 SC 1266 472 Union of India Vs. BN Anantha Padma Nabiah reported in AIR 1971 SC 1836, যা ভগত রামের মামলার সিদ্ধান্ত হওয়ার সময় প্রতিবেদিত হয়নি। এই তিনটি মামলা বিবেচনা করে সুপ্রীম কোর্ট Babu Vs. State of uP reported in AIR 1966 SC 1467 মামলায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারা অনুসারে এটি তৃতীয় বিচারকের এখতিয়ার যে, তিনি কোনাে বক্তব্য, যদি থাকে, শুনবেন কিনা তার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং এটি স্বীকৃত যে, তিনি যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে পার্থক্য নিরসন করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। Hethubha Vs. State of Gujarat reported in AIR 1970 SC 1266 2671? ata GPIT AIR 1965 SC 1467-এ বর্ণিত সিদ্ধান্ত পর্যালােচনা করে বলেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারায় দুটি বিষয় লক্ষণীয়: প্রথমত, মামলাটি অন্য বিচারকের সামনে রাখা হবে এবং দ্বিতীয়ত, রায় ও আদেশ বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের মতামত অনুসারে হবে। তদনুসারে, সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে, বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক পুরাে মামলাটি পরিচালনা করতে পারেন বা করবেন এবং বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক, যার কাছে মামলাটি ৪২৯ ধারা অনুসারে উত্থাপন করা হয়েছিল, পুরাে মামলাটির উপর সিদ্ধান্ত নিয়ে সীমা ছাড়িয়ে। | যাননি। তদনুসারে আপিলটি খারিজ করা হয়েছিল।
৫৪৫
৩৩৩. Andhra Pradesh Vs. PT Appaiah reported in AIR 1981 SC 265 মামলায় ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে দুজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। আপিলের সময় ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকরা আঘাত করে। অভিযুক্তরা যে অপরাধ করেছিল তার প্রকৃতির বিষয়ে পৃথক মতামত দেন। বিচারপতি মাধব রেডিড পেনাল কোডের ৩০৪ অনুচ্ছেদ ১-এর অধীনে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন এবং বিচারপতি শ্রীরামুলা দায়রা জজ ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্তকে যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন মর্মে সিদ্ধান্ত। নিয়ে আপিল খারিজ করে দেন। তবে তৃতীয় বিচারক বিচারপতি রামচন্দ্র রাজু উভয় আসামিকেই খালাস প্রদান করেন। সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন যে, যে তৃতীয় বিচারকের সামনে এই মামলাটি মতামতের জন্য উত্থাপন করা হয়, তিনি পুরাে মামলাটি পরিচালনা করতে সক্ষম এবং তিনি কেবল অপর দুই বিচারকের মধ্যে মতপার্থক্য সম্পর্কিত বিষয়ে তাঁর রায় সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য নন। সুপ্রীম কোর্ট union of India Vs. BN Anantha Padina Nabiah reported in AIR 1971 SC 1836 মামলার ক্ষেত্রে করা পর্যবেক্ষণগুলির উপর নির্ভর করেন, যা নিম্নরূপ: Hethubha Vs. State of Gujarat মামলায় সাম্প্রতিক অপ্রতিবেদিত সিদ্ধান্তে এই প্রশ্নটি বিবেচনার জন্য উত্থাপিত হয়েছিল। এই আদালত সিদ্ধান্ত নেন যে, বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক পুরাে মামলাটি পরিচালনা করতে পারতেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার ভাষা এই মর্মে সুস্পষ্ট যে, আপিল কোর্টের বিচারকদের মতামত নিয়ে মামলাটি একই আদালতের অপর একজন বিচারকের সামনে উত্থাপন করা হবে। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অপর লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যটি হলাে, রায় বা আদেশ বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের মতামত অনুসারে হবে।
৩৩৪. Tanviben Pankaj kumar Divetia Vs. State of Gujarat reported in AIR 1997 SCC 7156 মামলায়, অভিযুক্ত আপিলকারীকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ধারাসহ ৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে তিনি গুজরাট হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেছিলেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ধারাসহ ১২০বি ধারা এবং ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ ধারার অধীনে অভিযােগের দায় থেকে আপিলকারীর খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত আপিল খারিজ করে দেন। একজন বিচারক অভিযুক্তকে খালাস দেন এবং অপর বিচারক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন। বিষয়টি তৃতীয় বিচারকের কাছে প্রেরণ করা হয়। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক পেনাল কোডের ৩০২ ধারার অধীনে আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্তকরণ বহাল রাখেন। তদনুসারে, হাইকোর্ট আপিলকারীর আপিল খারিজ করে দেন। আপিলে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে: “কোনাে বক্তব্য, যদি থাকে, তবে তা শুনবেন কি শুনবেন না সে বিষয়ে তৃতীয় বিচারক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী এবং এটি অনস্বীকার্য যে, তৃতীয় বিচারক যেভাবে যথাযথ মনে করেন সেভাবে তিনি বিভেদের সমাধান করে আপিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
৩৩৫. বিচারপতি জনাব জি এন রায় নিম্নরূপ পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন:
Babu Vs. State of uttar Pradesh, (AIR 1965 SC 1467) মামলায় এই আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নেন যে, যেখানে তৃতীয় বিচারক দুই বিচারকের মধ্যে মতামতের পার্থক্য দেখা গিয়েছিল এমন কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করেন না, কিন্তু কেবল
৫৪৬
ইঙ্গিত দেন যে, যদি তার এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়ােজন হতাে, তাহলে তিনি দুজনের মধ্যে একজন এই বিষয়ে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তাঁর সাথে তিনি একমত, তাহলে এই ধরনের সিদ্ধান্তও আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ততীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত বলে মনে করেন সেভাবে তিনি আপিলের সিদ্ধান্ত নিতে যে স্বাধীন, তা Hethubha Vs. State of Gujarat, (AIR 1970 SC 1266) 978 Union of India Vs. BN Anantha Padna Nabiah, AIR 1971 SC 1836 মামলায় পুনঃউচ্চারিত হয়েছে। State of A. PV PT Appaiah, AIR 1981 SC 365 মামলায়, এই আদালত কর্তৃক এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এমনকি উভয় বিচারকই যদি কোনাে মামলায় অভিযুক্ত দোষী ছিলেন এমন সিদ্ধান্তও নেন কিন্তু অভিযুক্ত কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের প্রকৃতি সম্পর্কে মতপার্থক্য থেকে যায়, তাহলেও তৃতীয় বিচারকের জন্য গুণাগুণের ভিত্তিতে মামলাটি বিবেচনা করে অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে ধরে নিয়ে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ উন্মুক্ত ছিল।
৩৩৬. Sajjan Singh os. State of MP reported in (1999) 1 SCC315 পৃষ্ঠা ৩২৪ অনুচ্ছেদ ১০-এ সুপ্রীম কোর্ট বলেছেন, যে রায়ের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৩৬ অনুচ্ছেদের অধীনে অথবা সংবিধানের ১৩৪ অনুচ্ছেদের অধীনে অথবা কোডের ৩৭৯ ধারার অধীনে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আপিল দায়ের হয় সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
৩৩৭ . Mattar vs. State of UP (2002) 6 SCC 460 7/2013 96701 OPTICP Indian Penal Code-43 ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলাকালে একজন অভিযুক্ত মারা যায়। হাইকোর্টে বিজ্ঞ প্রথম বিচারক আপিলকারীকে খালাস দেন এবং বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। বিষয়টি তাঁদের কাছে প্রেরণ করা হলে তিনি আপিল খারিজ করেন এবং অভিযুক্ত আপিলকারীদের দোষী সাব্যস্ত করেন। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট বলেন যে, এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর স্বাধীনভাবে বিষয়টি পরীক্ষা করে মতামত প্রকাশ করা উচিত। কারণ ব্যাখ্যা ব্যতীত শুধু কোনাে একটি মতের সাথে একমত নির্দেশ করাটাই গ্রহণযােগ্য নয়।
৩৩৮. Radha Mohan Singh os. State of uP(2006) 2 SCC 450 মামলায় ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-এর ১৪৯ ধারার সাথে পঠিত ১৪৭, ১৪৮, ৩২৩, ৩২৪ এবং ৩০২ ধারার অধীনে পাঁচজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-এর ১৪৯ ধারার সাথে পঠিত ৩০২ ধারার অধীনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অভিযুক্ত আপিলকারী এলাহাবাদ হাইকোর্টে আপিল করেন। দ্বৈত বেঞ্চে বিজ্ঞ প্রথম বিচারক বিচারপতি আগারওয়াল আপিল মঞ্জুর করেন এবং আরােপিত দণ্ড ও সাজা বাতিল করেন কিন্তু বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক বিচারপতি মিশ্রা আপিলটি খারিজ করেন এবং বিজ্ঞ দায়রা আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্তকরণ ও আরােপিত দণ্ড বহাল রাখেন। বিষয়টি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর কাছে প্রেরণ করা হলে তিনি সকলের দণ্ড বহাল রাখেন। আপিলে সুপ্রীম কোর্ট বলেন, বিচক্ষণতার নীতি অথবা বিচারিক শিষ্টাচার কোনাে হিসেবেই আসামিদের খালাসের পক্ষে থাকা বিচারকের মত গ্রহণ করার কোনাে বাধ্যবাধকতা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর নেই। আপিলকারী কর্তৃক উত্থাপিত এই যুক্তি গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
৩৩৯. Sarat Chandra Mitra os. Emperor reported in ILR 38 Cal 2002 মামলায় দ্বৈত বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকগণ একজন অভিযুক্ত শরৎচন্দ্র মিত্রর বিষয়ে সমভাবে বিভক্ত ছিলেন এবং বিষয়টি বিজ্ঞ তৃতীয়।
৫৪৭
বিচারক-এর সামনে পেশ করা হয়। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট বলেন যে, দুজন বন্দির মামলায়, যাদের দণ্ড বিষয়ে আপিল আদালতের বিচারকগণের মতামত বিভক্ত ছিল, ওই বন্দির মামলার বিষয়টিই একমাত্র বিষয় যা অপর বিচারকের সামনে নেওয়া উচিত। তবে যেক্ষেত্রে একজন অভিযুক্তের অপরাধ বিষয়ে তারা সমানভাবে বিভক্ত, যদিও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে তারা একমত, ওই অভিযুক্তের সম্পূর্ণ মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর সামনে পেশ করা হয় এবং শুধু সে পয়েন্টে নয় যেখানে মতপার্থক্য রয়েছে, বরং মামলার বিষয়ে মতামত প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনা করা তার কর্তব্য।
৩৪০. Nemai Mondal vs. State of West Bengal reported in AIR 1966 Calcutta 194 part মামলায় দশজন আপিলকারী ছিলেন। দ্বৈত বেঞ্চের উভয় বিজ্ঞ বিচারক সর্বসম্মত ছিলেন যে, আপিলকারী… ১, ৯, ১০-এর দণ্ড বাতিল হবে। অতএব আপিলকারী ১, ৯, ১০-কে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং তাদের ব্যাপারে কারাে কোনাে মতপার্থক্য ছিল না। যে ভিন্নমতের বিষয় সিদ্ধান্তের জন্য আসে তা হলাে আপিলকারী ২-৮-এর বিষয় এবং তা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক দ্বারা সমাধানকৃত। বিচারপতি মুখার্জি বলেন, যেসব মামলায় মতপার্থক্য রয়েছে তা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর সামনে পেশ করা উচিত।
৩৪১. State of uP vs. Dan Singh reported in (1997) 3 SCC 74732 মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-এর ১৪৭, ৩০২/১৪৯, ৪৩৬/১৪৯, ৩০৭/১৪৯ ধারার অধীনে এবং Protection of the Civil Rights Act, 1955-এর ৪(iv), (x) ধারা এবং ৫.৭ ধারার অধীনে অভিযুক্ত করা হয়। দায়রা জজ, দান সিং এবং অন্যান্যসহ ৩২ জন অভিযুক্তকে খালাস দেন। রাজ্য এলাহাবাদ হাইকোর্টে আপিল দায়ের করে। বিচারপতি কাটজু জিৎ সিং ও কিষাণ সিং নামে দুজন অভিযুক্তকে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-এর ৩২৫ ও ৩৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং তাদের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং ৩০ জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস প্রদান করেন। বিচারপতি রাজেশ্বর সিং পৃথক মতামত প্রদানের মাধ্যমে ৬ জন পুরুষ এবং চারজন নারী অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ২২ জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস প্রদান করেন। ২২ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির খালাস বিষয়ে প্রদত্ত প্রথম আদেশটি ছিল দ্বৈত বেঞ্চের। পরবর্তীকালে মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর কাছে নেওয়া হয়। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক বিচারপতি মাথুর, দশজন অভিযুক্ত যাদের বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারকগণ ভিন্নমত পােষণ করেছেন, তাদের আপিল শুনানির পর বিচারপতি কাটজুর সাথে একমত হন যিনি জিৎ সিং এবং কিষাণ সিং নামে দুজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন এবং ৩০ জন অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করেছিলেন। রাজ্য কর্তৃক ৩২ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটা বিশেষ অনুমতির (স্পেশাল লিভ) আবেদন দাখিল করা হয়। একজন নারীর ক্ষেত্রে অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর হয়নি এবং এর ফলে তাদের খালাস চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং ২৮ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর হয়। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট নিম্নরূপ পর্যবেক্ষণ দেন :
“According to this section, if there is a difference of opinion amongst the Judges of the Bench, then their opinions are laid before another Judge. It is only after the Third Judge gives his opinion that the judgment or order follows. It is clear from this that the judgment or order which can be appealed against, under Article 136 of the Constitution, is only that which follows after the opinion of the Third Judge has been delivered. What BN Katju and Rajeshwar Singh, JJ. wrote was not their judgments but they were their opinions. Due to disagreement amongst them,
৫৪৮
section 392 of the Code of Criminal Procedure required the appeal as a whole to be laid before the Third Judge (vs. P Mathur, J in this case) whose opinion was to prevail. The first order of 15-4-1987 was clearly not contemplated by section 392 of the Code of Criminal Procedure and is, therefore, non est.”
৩৪২. যখন বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক সামগ্রিকভাবে আপিলটি শােনেন তখন শুধু মতামত প্রদানের বিকল্পই তাঁর থাকে , বরং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর ধারা ৩৯২-এর প্রােভাইসাে-এর অধীনে তিনি বৃহত্তর বেঞ্চ দ্বারা আপিলটি পুনঃশুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চাইতে পারেন। এটা এমন একটা বিকল্প যা এই প্রােভাইসাে-এর অধীনে বিচারপতি বিএন কাটজু এবং বিচারপতি রাজেশ্বর সিং এই দুজন বিচারকের যে কোনাে একজনের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু তারা তা করেননি। যা স্পষ্ট তা হলাে আপিলটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে রায় এবং আদেশ প্রদানের দ্বারা যা বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর মতামত অনুসরণ করে। স্পেশাল লিভ পিটিশন হওয়ায়, হাইকোর্ট কর্তৃক ১৯.৫.১৯৮৮ তারিখে চূড়ান্ত আদেশের মাধ্যমে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পরেই কেবল এটি দায়ের করা যেত। যদিও এই আদেশটি ৩২ জন অভিযুক্তর মধ্যে মাত্র ১০ জনের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে; আদেশটি পূর্বের ১৫.৪.১৯৮৭ তারিখের আদেশের সাথে একত্রে পড়তে হবে এবং এর প্রভাব হবে এটা যে, ১৯.৫.১৯৮৮ তারিখের আদেশটি চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে, যার মাধ্যমে রাজ্যের আপিল আংশিকভাবে মঞ্জুর হয়েছিল, যেখানে ৩২ জনের মধ্যে মাত্র দুজন অভিযুক্তকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৪ ধারার সাথে পঠিতব্য ৩২৫ ধারার অধীন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং অন্য সব অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করা হয়েছিল।
৩৪৩. Granade Venkata vs. Corporation of Calcutta reported in 22 CWN745 মামলায় ভেজাল ঘি বিক্রির জন্য একজনকে Calcutta Municipal Act-এর ৪৯৫ এ(১) ধারার অধীনে অভিযুক্ত করা হয়। এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কর্পোরেশনের সহকারী এনালিস্ট, যিনি বিতর্কিত ঘির নমুনা বিশ্লেষণে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া প্রয়ােগ করেছিলেন এবং প্রাপ্ত ফলাফল থেকে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কিছু শতাংশ বিদেশি চর্বি দিয়ে ঘি ভেজাল করা হয়েছিল, তার জেরার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রমাণের উপর নির্ভর করতে ম্যাজিস্ট্রেট আসামিপক্ষকে অনুমতি দিয়েছিলেন। কোনাে পক্ষ থেকে অপর কোনাে সাক্ষীকে পরীক্ষা করা হয়নি এবং আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, এই বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড কাজ অনুসারে এ ধরনের কোনাে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আসামিপক্ষ এনালিস্টকে জেরা করেছিল। ম্যাজিস্ট্রেট আসামিপক্ষকে এই প্রমাণের উপর নির্ভর করার অনুমতি দিয়েছিলেন, যা রায়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। দণ্ডের বিরুদ্ধে দুজন বিচারকের সামনে রুল শুনানি হয়, যাদের উভয়েই একমত পােষণ করেন যে দণ্ড বহাল থাকতে পারে না। বিচারপতি চিট্টি এই ভিত্তিতে পুনর্বিচারের পক্ষে ছিলেন যে, এখানে কোনাে সন্তোষজনক তদন্ত ছিল না এবং বিচারপতি স্মিথার অন্যভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিষয়টি বিজ্ঞ ততীয় বিচারক বিচারপতি উডােফ-এর সামনে নেওয়া হলে তিনি বলেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২০ ধারার অধীনে কোনাে মামলা প্রেরণ করা হলে, যে বিষয়ে প্রেরণকারী উভয় বিচারক একমত, সেই বিষয়ে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক ভিন্নমত হবেন না, যদি না এরকম করার মতাে যথেষ্ট ভিত্তি থাকে। Muhammed Shafi vs. Croon reported in 6 DLR (WP)104 মামলায় হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দেন যে, ধারা ৩৭৮ অথবা ৪২৯ কোনােটিই আইনসংক্রান্ত প্রশ্নে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বা পরবর্তী সময়ে পুরাে মামলায় বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর মতামত প্রদানের বিষয়ে বাধা
৫৪৯
দেয় না। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর ৪২৯ ধারার অধীনে যে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর নিকট মামলাটি আনা হয়েছে তিনি বিচারকগণের বেঞ্চের কর্তৃত্ব প্রয়ােগ করেন এবং সেজন্য তাঁকে একক বিচারক হিসেবে নয় বরং একটি বেঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। মামলাটি এমন নয় যা একক বিচারক দ্বারা পরিচালিত বরং এমন, যা তিনজন বিচারক দ্বারা পরিচালিত, যদিও বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক দুজন অসম্মত বিচারকের পরবর্তী পর্যায়ে তা পরিচালনা করেন।
৩৪৪. Mahin Mondal os. State reported in 15 DLR 615 মামলায় আপিলকারী মহিম মণ্ডলসহ অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে পেনাল কোডের ৩০৪, ১৪৮ এবং আরাে অন্যান্য ধারার অধীনে বিচার করা হয়েছিল। মহিম মণ্ডলকে পেনাল কোডের ৩০৪ এবং ১৪৮ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এ যথাক্রমে পাঁচ বছর ও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অভিযুক্ত আসাব মণ্ডলকে পেনাল কোডের ৩২৩ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আপিলকারী মহিম মণ্ডল তাকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও দণ্ড প্রদানের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। আপিল গ্রহণের পর একটি ডিভিশন বেঞ্চ কেন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই কোডের অধীনে প্রদত্ত দণ্ড এবং সাজা বাতিল করা হবে না- তস্মর্মে কারণ দর্শানাের জন্য স্বতঃপ্রণােদিত রুল জারি করেন। রিভিশন মামলাটি ওই একই আদালত কর্তৃক জারিকৃত রুল থেকে উদ্ভূত। আপিল এবং রিভিশন মামলাটি শুনানির পর, অভিযুক্ত মহিম মণ্ডল দাঙ্গার জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হতে পারেন কিনা এই বিষয়ে একটি দ্বৈত বেঞ্চের মতামত ভিন্ন হয়। ফলে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে বিষয়টি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক বিচারপতি মােরশেদের নিকট নেওয়া হয়। এই মামলায় বিচারপতি মােরশেদ বলেন, সম্পূর্ণ মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর নিকট রাখা দরকার এবং এই মামলায় মতামত প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনা করা তাঁর দায়িত্ব। State Os. Abul Khair reported in 44 DLR 284 মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দুজন বিচারক দুজন আপিলকারীর দোষী সাব্যস্তকরণ এবং সাজার বৈধতা বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করেন, কিন্তু আবুল খায়ের নামক একজন অভিযুক্তের দণ্ডের বিষয়ে একমত পােষণ করেন। মামলাটি বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর নিকট নেওয়া হয়। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক মােশাররফ এবং মইনুদ্দিন নামক দুজন অভিযুক্ত অর্থাৎ যাদের বিষয়ে বিচারকগণ ভিন্নমত পােষণ করেছিলেন, শুধু তাদের মামলাটি সমাধান করেন।
৩৪৫. ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ৫৬ এবং ৫৮/২০০৭ মামলায় আপিলকারী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান বলেন যে, নথিতে থাকা উপকরণ ও প্রমাণাদির সুস্পষ্ট বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বর্তমান মামলাটি একটি বিদ্রোহের মামলা, যা প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের হত্যার দিকে পরিচালিত হয় এবং এটা শুধু হত্যার মামলা নয় এবং সে কারণেই কোর্ট মার্শালের পরিবর্তে সাধারণ ফৌজদারি আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত আপিলকারীকে দণ্ড প্রদান এই বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ করেছে। জনাব খান যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার আগের রাতে ঢাকা সেনানিবাসে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক বিষয়াদি, কার্যক্রম, ব্রিফিং, অনুশীলন এবং ঘটনাগুলাে সুস্পষ্টভাবে বিদ্রোহ গঠন করে এবং এগুলাে শুধু হত্যা মামলা নির্দেশ করে না। ক্যান্টনমেন্ট ঘটনাস্থলের অন্তর্ভুক্ত এবং ক্যান্টনমেন্ট কার্যক্রম, ব্রিফিং এবং অনুশীলন মামলার ঘটনার অন্তর্ভুক্ত এবং সেজন্যই পেনাল কোডের ৩৪ বা ১২০এ ধারার অধীনে কোনাে | চুক্তি বা পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা, প্রাক-কনসার্ট, সাধারণ উদ্দেশ্য, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র অথবা সাধারণ
৫৫০
অভিপ্রায়ের লক্ষ্যবস্তু এমন বিষয় আইনত অনুমেয় নয়। জনাব খান পরবর্তী সময়ে উল্লেখ করেন যে বিদ্রোহের সময় কোনাে ব্যক্তির হত্যা কোর্ট মার্শাল কর্তৃক বিচারযােগ্য এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২-এর ৫৯ ধারা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, যেহেতু, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অপরাধ সংঘটনের সময় সক্রিয় চাকরিতে ছিলেন, সেহেতু, ফৌজদারি আদালতের পরিবর্তে মার্শাল কোর্টে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারে তাদের বিচার হওয়া উচিত ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি Jamil Huq os. Bangladesh reported in 34 DLR 161 (AD) 125 মামলাটি উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ১৯৮১ সালের ২৯/৩০ মে রাতে সংঘটিত বিদ্রোহ, যার ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু ঘটে, তার বিচার হয়েছিল কেবল কোর্ট মার্শাল দ্বারা আর্মি অ্যাক্ট-এর ৩১ ধারার বিধান অনুযায়ী এবং একইভাবে সক্রিয় চাকরিতে থাকা সেনাকর্মীদের দ্বারা ১৫ আগস্টের দুর্ভাগ্যজনক রাতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার ফৌজদারি আদালতের পরিবর্তে কোর্ট মার্শাল দ্বারা হওয়া উচিত ছিল এবং সেই হিসেবে অভিযুক্ত আপিলকারীর দণ্ড ও সাজা আইনে সমর্থিত নয়। জনাব খান যুক্তি দেন যে, বিদ্রোহের ক্ষেত্রে এবং হত্যার ক্ষেত্রে শাস্তির তীব্রতা একরকম নয় এবং পার্থক্য হলাে কোর্ট মার্শাল দ্বারা একটি বিচারে আপিলকারীদের সুবিধা যেহেতু সেখানে হত্যার জন্য সাজার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের একটি বিকল্প রয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তিনি আরাে যুক্তি দেন যে আর্মি অ্যাক্ট-এর ৩১ ধারার অধীনে মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প অন্য যে কোনাে সাজা আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এ উল্লিখিত হিসেবে অনেক কম শাস্তি বহন করে। জনাব খান সাইফুর রহমান বলেন যে, প্রতিপক্ষ কর্তৃক আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এর ধারা ৯১ ও ৯২-এর বিধানের ভিত্তিতে এই মামলা বিচারের জন্য ফৌজদারি আদালত অথবা কোর্ট মার্শালের যুগপৎ এখতিয়ারের আবেদন আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯২(২) ধারার প্রােভাইসাের পরিপ্রেক্ষিতে এর শক্তি হারিয়েছে এবং মামলা বিচারের যুগপৎ এখতিয়ারের প্রশ্নে ভুল ধারণা করা হয়েছে।
৩৪৬. রেসপন্ডেন্ট পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আনিসুল হক বলেন যে, বর্তমান মামলাটি বিদ্রোহের নয়, বরং কেবল হত্যা মামলা হওয়ায় অভিযুক্ত আপিলকারীকে ফৌজদারি আদালতে বিচার করায় বেআইনি কোনাে কিছু ঘটেনি। কারণ, যদি তর্কের খাতিরেও স্বীকার করি, বিদ্রোহের সাথে খুনও ঘটেছিল। জনাব হক উপস্থাপন করেন যে, আর্মি অ্যাক্ট-এর ধারা ৯৪ ও ৯৫-এর বিধান অনুসারে খুনের মতাে সিভিল অপরাধের মামলার ক্ষেত্রে কোর্ট মার্শাল এবং ফৌজদারি আদালত উভয়েরই যুগপৎ এখতিয়ার ছিল এবং একই সাথে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারার অধীনে প্রয়ােজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়েছিল এবং ফৌজদারি আদালতে মামলার বিচার করায় বেআইনি কিছু সংঘটিত হয়নি। জনাব আনিসুল হক বলেন যে, অনুমতি মঞ্জুরের আদেশ নম্বর ৩-এর বক্তব্যে এখানে কি বিদ্রোহ আছে যা হত্যা অথবা কেবল হত্যা সংঘটিত করেছে”- এই অংশটুকু ভুল বােঝা হয়েছে; কারণ বর্তমান মামলার মতাে খুনের জন্য আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এর ৫৯(২) ধারার অধীনে এখানে যুগপৎ এখতিয়ার আছে। পরবর্তীকালে তিনি বলেন, বর্তমান মামলায় যুগপৎ এখতিয়ার থাকায় দায়রা আদালত আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯৪ ও ৯৫ ধারা এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারার বিধান পুরােপুরি পালন করে বিচার করেছেন যা দায়রা আদালতের ২৪.৩.১৯৯৭ তারিখের আদেশ দ্বারা প্রমাণিত এবং সে হিসেবে বিচার সম্পন্ন করায় বেআইনি কিছু সংঘটিত হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি MSK_Ibratos. Commander-in-Chief, Royal Pakistan Navy reported in 4 DLR (SC) 128, Balbir Singh vs. Punjab reported in 1995 1 SCC 90 মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেন।
৫৫১
৩৪৭. রেসপন্ডেন্ট পক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম উল্লেখ করেন যে, বর্তমান মামলায় হত্যার অপরাধ বিচার করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত আপিলকারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কোনাে অভিযােগ আনা হয়নি। দ্বৈত বেঞ্চের বিচারকগণ এবং সেই সাথে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক নথিতে থাকা তথ্য-প্রমাণাদি বিবেচনা করে বিদ্রোহের কোনাে মামলা পাননি বরং তারা হত্যা মামলা পেয়েছেন এবং সে হিসেবে তাঁরা তাঁদের রায় প্রদান করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, আপিলের পর্যায়ে প্রথমবারের মতাে বিচার আদালতের এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আসামিপক্ষের মাধ্যমে বিদ্রোহের বিষয়টি উত্থাপন আইনত টেকসই নয়। তিনি Haider Ali Khan Os. State reported in 1994 BLD (AD) 270 = 47 DLR (AD) 47 মামলা এবং Zulfiqur Ali Bhutto vs. State reported in PLD 1979 SC 53 Stivant উল্লেখ করেন। জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের পক্ষে নাজিমুদ্দিন রােডে আদালত বসাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিট পিটিশন ২০৩২/১৯৯৭ মামলা যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিল, যা 49 DLR (AD) 157-এ রিপাের্টেড হয়েছে এবং আপিলকারী সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের পক্ষে ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট ১৯৯৭-এর এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিল, যা ৩ বিএলসি (এডি)৮৯-এ রিপাের্টেড হয়েছে তা উল্লেখ করে বলেন যে, অভিযুক্ত আপিলকারী এটি একটি বিদ্রোহ মামলা যা হত্যা সংঘটিত করেছে কিন্তু কেবল হত্যা মামলা নয়, এই ভিত্তিতে কখনাে কোর্টের এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করেনি এবং সেই হিসেবে খুনের মামলা বিচার করার এখতিয়ার দেওয়ানি আদালতের নাই মর্মে আপিলকারীর যুক্তি আইনে সমর্থিত নয়। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল বিদ্রোহের বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অনুমতি মঞ্জুর সম্পর্কে প্রথম বিচারকের প্রত্যাখ্যানের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। কার প্রশিকিউশনের কোনো বিদ্রোহের মামলা নেই, তবে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট দুর্ভাগ্যজনক রাতে এবং ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে হত্যার একটি মামলা আছে। জনাব মাহবুবে আলম বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ ও উল্লেখ করেছেন। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম অভিযুক্ত আপিলকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং মহিউদ্দীন (আর্টিলারি)-এর দেওয়া লিখিত বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন যে, আপিলকারীরা কেউই এই বিষয়ে কোনাে বিরােধিতা করেনি যে, বিদ্রোহ চলাকালীন হত্যা সংঘটিত হয়েছিল। তিনি জনাব আনিসুল হকের বক্তব্যকে একই প্রসঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, যেহেতু এই মামলায় আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯৪ ধারার অধীনে নির্ধারিত কর্মকর্তা কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে কোনাে বিচক্ষণতা প্রয়ােগ করা হয়নি অথবা বিচারের ফোরামের বিষয়ে অভিযুক্ত আপিলকারী কর্তৃক কোর্টে কোনাে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি, সেহেতু সর্বোচ্চ আদালতে এসে প্রথমবারের মতাে বিচারের ফোরামকে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারীর নাই। এই প্রসঙ্গে জনাব অ্যাটর্নি জেনারেল Major EG Barsay vs. State of Bombay reported in AIR 1961 SC 1762 Santo Tags 76376 Jamil Huq os. Bangladesh reported in 34 DLR (AD) 125 মামলাটি উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, বিচারের ফোরাম একটি পদ্ধতিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সিভিল কোর্টে অনুসরণ করা পদ্ধতিটি কোর্ট মার্শালে অনুসৃত পদ্ধতির চেয়ে অনেক ভালাে এবং স্বচ্ছ, দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারীর ক্ষতির প্রশ্নটি উত্থাপিতই হয়নি। আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এ বিদ্রোহের অপরাধটি সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তবে আর্মি অ্যাক্ট, | ১৯৫২-এর ৩১ ধারায় বিদ্রোহ এবং অবাধ্যতার অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। তাছাড়া, নেভী অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ৩৫ ধারায় বিদ্রোহের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯৪ ধারা অনুসারে, কোর্ট মার্শালের অধীনে সিভিল অপরাধের বিষয়ে ফৌজদারি আদালতের এখতিয়ার রয়েছে এবং নির্ধারিত
৫৫২
কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে যে, কোন আদালতে মামলাটি দায়ের করা হবে এবং যদি সেই কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেন যে, মামলাটি কোর্ট মার্শালে দায়ের করা হবে তাহলে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সামরিক হেফাজতে আটক রাখার নির্দেশ দেবেন। আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এর ৯৪ ও ৯৫ এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর ৫৪৯ ধারা কোর্ট মার্শাল এবং ফৌজদারি আদালতের যুগপৎ এখতিয়ারের ক্ষেত্রে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আর্মি অ্যাক্টের ৯৪ ও ৯৫ ধারা উল্লেখ করা সুবিধাজনক হবে যা নিম্নরূপ :
“94. When a criminal Court and a Court Martial have each jurisdiction in respect of a civil offense, it shall be in the discretion of the prescribed officer to decide before which Court the proceedings shall be instituted and, if that officer decides that they shall be instituted before a Court Martial, to direct that the accused person shall be detained in military custody. 95.(1) When a criminal Court having jurisdiction is of the opinion that proceedings ought to be instituted before itself in respect of any civil offence, it may, by written notice, require the prescribed officer, at his option, either to deliver over the offender to the nearest magistrate to be proceeded against according to law, or to postpone proceedings pending a reference to the Government. (2) In every such case, the said officer shall either deliver over the offender in compliance with the requisition or shall forthwith refer the question as to the Court before which the proceedings are to be instituted for the determination of the Government, whose order upon such reference shall be final.”
৩৪৮. কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর ৫৪৯ ধারা পুনরুল্লেখ করা প্রয়ােজন যা নিম্নরূপ :
549. Delivery to military authorities of person liable to be tried by Court Martial. (1) The Government may make rules consistent with this Code and the Bangladesh Army Act, 1952 (XXXIX of 1952), the Bangladesh Air Force Act, 1953 (VI of 1953), and the Bangladesh Navy Ordinance, 1961 (XXXV of 1961), and any similar law for the time being in force as to the cases in which persons subject to military, naval or air force law, shall be tried by a Court to which the Code applies, or by Court Martial, and when any person is brought before a Magistrate and charged with an offense for which he is liable, to be tried either by a Court to which this Code applies or by Court Martial, such Magistrate shall have regard to such rules, and shall in proper cases deliver him, together with a statement of the offense of which he is accused, to the commanding officer of the regiment, corps, ship or detachment, to which he belongs, or to the commanding officer of the nearest military, naval or air force station, as the case may be, for the purpose of being tried by Court Martial.
৫৫৩
(2) Apprehension of such persons. Every Magistrate shall, upon receiving a written application for that purpose by the commanding officer of any body of soldiers, sailors or airmen stationed or employed at any such place, use his utmost endeavors to apprehend and secure any person accused of such offense.”
৩৪৯. আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯৪ এবং ৯৫ ধারার পূর্বোক্ত বিধানগুলি থেকে দেখা যায় যে, হত্যার ক্ষেত্রে কোর্ট মার্শাল এবং সাধারণ ফৌজদারি আদালত উভয়ের যুগপৎ এখতিয়ার রয়েছে। তবে আর্মি অ্যাক্ট-এর ৫৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সেনা আইনের বিষয় না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেনা আইনের অধীনে হত্যার মামলা বিচার করা যাবে না, যদি না অভিযুক্ত ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে চাকরিতে থাকাকালে বা বাংলাদেশের বাইরে যে কোনাে স্থানে বা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট একটি সীমান্ত পােস্টে কর্মরত থাকাকালীন। পিরাধ সংঘটন করে থাকে। আরাে দেখা যায় যে, ধারা ৫৯ (১)-এর প্রয়ােগও আর্মি অ্যাক্টt-এর ৯২ (২) ধারা দ্বারা সীমাবদ্ধ, যেখানে এই বিধান রাখা হয়েছে যে, সে এই আইনের বিষয় থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরে ৬ মাসের মধ্যে বিচার শুরু হতে হবে। এটি প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান মামলায় যুগপৎ এখতিয়ার আছে, দায়রা আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচারের ক্ষেত্রে Rule 2 of Criminal Procedure Rules (Military Offenders) 1958-এর অধীনে সেনা চিফ অফ স্টাফকে নােটিশ প্রেরণের মাধ্যমে আর্মি অ্যাক্ট-এর ৯৪ এবং ৯৫ ধারা এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারার অধীনে প্রয়ােজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছে যা ৩.৪.১৯৯৭ তারিখের ১২ নম্বর আদেশ থেকে প্রমাণিত। MSK Ibrat vs. Commander in Chief, Royal Pakistan Navy reported in 8 DLR (SC) 128 মামলায় পাকিস্তান নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে চুরির অভিযােগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং স্পেশাল জজের সামনে হাজির করা হয়েছিল, যিনি আপিলকারীকে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে নাকি বিচারকের নিজের দ্বারাই বিচার করা উচিত সে বিষয়ে অনুসন্ধান জানিয়ে কমান্ডিং অফিসারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কমান্ডিং অফিসার জবাবে জানিয়েছিলেন যে, অভিযুক্তকে কোর্ট মার্শাল দ্বারা বিচার করা উচিত।
৩৫০. এরপর ঐ বিচারক, অভিযুক্তকে নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন যা চ্যালেঞ্জড হয়েছিল। সুপ্রীম কোর্ট বলেন যে, কমান্ডিং অফিসারের কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নৌ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করায় বিচারক সঠিক ছিলেন। Joginder Singh os. Himachal Pradesh reported in AIR 1971 SC 500 মামলার আসামি একজন ল্যান্সনায়েক দশ বছরের এক কিশােরীকে ধর্ষণ করেছিল। ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৬ ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারা প্রতিপালন করা হয়নিএই যুক্তিতে আপিল আদালতের সামনে এই দণ্ড চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। আপিল খারিজ করার সময় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট নিম্নরূপ পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন:
“In respect of an offense which could be tried both by a criminal Court as well as Court Martial, sections 125, 126 and the Rules have made suitable provisions to avoid a conflict of jurisdiction between the criminal Courts and the Court Martial. But it is to be noted that in the first instance, discretion is left to the officer mentioned in section 125 to decide before which Court the proceedings should be instituted. Hence, the officer commanding the army, army corps, division or independent brigade in which the accused person is serving or such other officer as may be prescribed will have to exercise his
৫৫৪
discretion and decide under section 125 in which Court the proceedings shall be instituted. It is only when he exercises his discretion that the proceeding should be instituted before a Court Martial, that the provisions of section 126(1) come into operation. If the designated officer does not exercise his discretion and decide that the proceedings should be instituted before a Court Martial, the Army Act would not obviously be in the way of a criminal Court exercising its ordinary jurisdiction in the manner provided by law.”
৩৫১ . Balbir Singh vs. Punjab reported in 1995 1 SCC 90 মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিমান বাহিনীর চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক ভারতীয় পেনাল কোডের ধারা ৩০২ এবং ১৪৯-এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত হন। অভিযুক্তের পক্ষে দাবি করা হয়েছিল যে, যেহেতু তিনি চাকরিতে কর্মরত ছিলেন, তাই তাকে কোর্ট মার্শালে বিচার করা উচিত। সুপ্রীম কোর্ট আপিল খারিজ করেন এবং নিমরূপ পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“When a criminal Court and Court-Martial each have jurisdiction in respect of the trial of the offense, it shall be the discretion of the officer commanding the group, wing or station in which the accused in serving or such other officer as may be prescribed, in the first instance, to decide before which Court the proceedings shall be instituted and if that officer decides that they should be instituted before a “Court Martial”, to direct that the accused persons shall be detained in Air Force custody. Thus, the option to try a person subject to Air Force Act who commits an offense while on “active service” is in the first instance with the Air Force Authorities. The criminal Court, when such an accused is brought before it, shall not proceed to try such a person or to inquire with a view to this commitment for trial and shall give a notice to the commanding officer of the accused, to decide whether they would like to try the accused by a Court Martial or allow the criminal Courts to proceed with the trial. In case, the Air Force Authorities decide either not to try such a person by a Court Martial or fail to exercise the option when intimated by the criminal Court within the period prescribed by Rule 4 of the 1952 Rules, the accused can be tried by the ordinary criminal Court in accordance with the Code of Criminal Procedure. On the other hand, if the Authorities under the Act opt to try the accused by the ‘Court Martial’, the criminal Court shall direct delivery of the custody of the accused to the Authorities under the Act and to forward to the authorities a statement of the offense of which he is accused. It is explicit that the option to try the accused subject to the Act by a Court Martial is with the Air Force Authorities and the accused has no option or right to claim trial by a particular forum.”
৩৫২. আপিলে নিম্ন আদালতের এখতিয়ারকে বিলম্বিত পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ করা যায় না, বিষয়টি Haider Ali Khan vs. State reported in 1994 BLD (AD) 270 = 47 DLR (AD) 47 মামলায় সুপ্রিম কোর্টে
৫৫৫
আপিল বিভাগ দ্বারা ভালােভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্য উপস্থাপনের সময় সেই মামলাগুলাের প্রতিও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যেখানে আপিলকারী সৈয়দ ফারুক রহমান ১৯৯৭ সালের ২০৩২ নম্বর রিট পিটিশনে আদালত স্থানান্তরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যা ৪৯ ডিএলআর (এডি) ১৫৭-এ রিপাের্টেড হয়েছিল এবং সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং সৈয়দ ফারুক রহমানের মামলা যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিল, 3 BLC (AD) ৪9-এ রিপাের্টেড হয়েছিল, যেখানে অভিযুক্ত আপিলকারী কখনাে এই কারণে আদালতের এখতিয়ারকে এই যুক্তিতে চ্যালেঞ্জ করেনি যে, খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল বিদ্রোহ চলাকালীন।
৩৫৩. পি. ডব্লিউ ৮-এর সাক্ষ্যের সতর্ক পর্যালােচনায় যিনি তার জেরায় বলেছেন যে-
“ইহা সত্য নহে যে তখন আর্মির চেইন অব কমান্ড ভাঙ্গিয়া পড়ে। তবে তখন কিছু বিপথগামী অফিসারের কর্মকাণ্ডের জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে ভীতসন্ত্রস্ত ভাব লক্ষ করিয়াছি কিন্তু আমি চেইন অব কমান্ডের মধ্যে ছিলাম।”
জেরায় পি.ডব্লিউ ৯ বলেন যে-
“ইহা সত্য নহে যে, আমার বিবেচনায় ১৫ আগস্টের ঘটনা একটি অভ্যুত্থান।”
চিফ অব স্টাফ এম জি শফিউল্লাহ পি.ডব্লিউ ৪৫ হিসেবে বলেন যে-
“ইহা সত্য নহে, আমার চেইন অব কমান্ডে ১৫ আগস্ট/৭৫ ভােরে একটি সফল সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং এই সামরিক অভ্যুত্থানে খােন্দকার মােশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করি এবং স্ব-ইচ্ছায় আমরা সকল বাহিনীর প্রধান আনুগত্য দেই দেশব্যাপী প্রচার প্রচারিত হয় বা আমার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আমি আজ ভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিলাম। আমার রাজনৈতিক অভিলাষ পূর্ণ করার জন্য ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানে আমি সরাসরি জড়িত থাকার কারণে উক্ত অভ্যুত্থান প্রতিহত করার জন্য কোনাে ব্যবস্থা বা আদেশ-নির্দেশ দিই নাই। নিজ থেকে বলিল ঐ দিন কোনাে অভ্যুত্থান হয় নাই।”
৩৫৪. পি.ডব্লিউদের পূর্বোক্ত বিবৃতিগুলির সতর্ক পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে, যে হত্যার জন্য দণ্ডিত আপিলকারীরা এবং অন্যরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিল তা বিদ্রোহের সময় করা হয়নি। দ্বৈত বেঞ্চের বিজ্ঞ প্রথম বিচারক-এর রায়ে আমরা দেখতে পাই যে, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে/১৫ আগস্ট ভােরবেলা সেনাবাহিনীতে কোনাে বিদ্রোহ হয়নি। বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-ও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন এবং নিমােক্ত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“From all this aforesaid evidences of the persons in authority and Army, Navy, Air Force, BDR, Police and Rakkhi Bahini having owed the allegiances and no chain of command was ever disturbed, there was no mutinous situation as contemplated in the aforesaid section.”
৩৫৫. লিখিত জবাব থেকে দেখা যায় যে, দণ্ডিত আপিলকারী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দীন (আর্টিলারি) এদের মধ্যে কেউই কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৪২ ধারার অধীনে পরীক্ষার সময় এমন কোনাে প্রকার বক্তব্য প্রদান করেনি যে, খুনের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল বিদ্রোহের মধ্যে। বিদ্রোহ চলাকালীন হত্যাকাণ্ডগুলাে করা হয়েছিল- এই মামলায় যুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি থেকে
৫৫৬
এরকম দেখা যায় না, বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং সেনাবাহিনীতে যদি কিছু ঘটে থাকে তবে তা ঘটেছিল হত্যা সংঘটনের পর। পেনাল কোডের ৩০২ ধারার অধীনে শাস্তিযােগ্য হত্যার অপরাধটি আর্মি অ্যাক্টের অধীনে অপরাধ নয়, বরং এটি আর্মি অ্যাক্টের ধারা ৮(২)-এ বর্ণিত সিভিল অপরাধ। আর্মি অ্যাক্টের ৫৯ ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, যদি আর্মি অ্যাক্টের অধীন কোনাে ব্যক্তি, এই আইনের অধীনস্থ নয় এমন ব্যক্তির হত্যা, নরহত্যা যা খুনের শামিল নয় বা ধর্ষণের অপরাধ করে, সে উক্ত আইনে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে না। এবং এই আইনের অধীনে তার বিচার করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি চাকরিতে সক্রিয় থাকা অবস্থায় বা বাংলাদেশের বাইরে বা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সীমান্তের পােস্টে থাকা অবস্থায় উল্লিখিত কোনাে অপরাধ না করেন। যখন কোনাে সিভিল অপরাধের বিচার করার জন্য ফৌজদারি আদালত এবং কোর্ট মার্শালের যুগপৎ এখতিয়ার থাকে তখন আর্মি অ্যাক্টের ৯৪ অনুচ্ছেদের অধীনে কোন আদালতে মামলাটি পরিচালনা করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া নির্ধারিত কর্মকর্তার এখতিয়ার। যদি তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এটি কোর্ট মার্শালে দায়ের করা হবে, তবে তিনি নির্দেশ দিতে পারেন যে, অভিযুক্তকে সামরিক হেফাজতে আটক করা হবে। কিন্তু বর্তমান মামলার ক্ষেত্রে, নির্ধারিত কর্মকর্তা তার এখতিয়ার প্রয়ােগ করেননি বা কোর্ট মার্শালের সামনেও বিষয়টি রাখেননি। তদুপরি, দণ্ডিত আপিলকারীরাও বিচারের সময় ফৌজদারি আদালতের সামনে কোনাে আপত্তি উত্থাপনই করেননি। ফোরামের বিষয়ে কেবল নির্ধারিত কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন এবং বর্তমান মামলায় নির্ধারিত কর্মকর্তা বা অভিযুক্ত আপিলকারী কেউই বিচারের ফোরামকে চ্যালেঞ্জ করেননি বরং আপিল বিভাগে, বিলম্বিত পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন; আর এই জাতীয় চ্যালেঞ্জ আইনে টেকসই নয়। যেহেতু এই মামলায় ফৌজদারি আদালতে সিভিল অপরাধের বিচারকে আইনসঙ্গত ও বৈধ বলা হয়েছে, সেহেতু আসামিপক্ষ দ্বারা উত্থাপিত যুক্তি আইনে সমর্থিত নয়।
৩৫৬. পেনাল কোডের ৭ অধ্যায়ে সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীসম্পর্কিত অপরাধের বিধান রয়েছে এবং বিশেষত পেনাল কোডের ১৩৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, উপরােক্ত তিনটি সেবার অধীন ব্যক্তিরা ৭ অধ্যায়ে বর্ণিত কোনাে অপরাধের জন্য পেনাল কোডের অধীনে শাস্তির আওতাধীন নয়। পেনাল কোডের ৫ ধারায় এটি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়ােজিত কর্মকর্তা, সৈনিক বা বিমানবাহিনীকে বিদ্রোহ ও পলায়নের শাস্তি দেওয়ার জন্য কোনাে আইনের বিধান বাতিল, পরিবর্তন, স্থগিত বা প্রভাবিত করার অভিপ্রায় পেনাল কোডের কোনাে বিধানে নাই। সুতরাং, প্রতীয়মান হয় যে, পেনাল কোডের ১৩৯ ধারা এটা ভালােভাবে স্পষ্ট করেছে যে, বিদ্রোহের শাস্তি দেওয়ার জন্য পেনাল কোডের কোনাে বিধান অন্য কোনাে আইনের বিধানকে বাতিল, পরিবর্তন বা প্রভাবিত করবে না। এ ধরনের কোনাে প্রয়ােজন। থাকলে কোর্ট মার্শাল দ্বারা বিদ্রোহের বিচারে কোনাে অসুবিধা নেই। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, বিচারের ফোরাম পদ্ধতিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হয় এবং একটি দেওয়ানি আদালত যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তা কোর্ট মার্শালে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তার চেয়ে অনেক পরিষ্কার ও স্বচ্ছ এবং সে কারণে অভিযুক্ত আপিলকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনাে সম্ভাবনা নেই। latail Hugos, Bangladesh reported in 34 DLR (AD) 125 পৃষ্ঠা ১৩৮, প্যারা ৩৭ মামলায় সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ Law of Court Martial (Current Legal Problem 1950 at page 193)-4 golfato Prof. Holland-95 পর্যবেক্ষণ অনুমােদনের সাথে উদ্ধৃত করেছেন, যা নিম্নরূপ :
“It is clear that the present attitude of the Courts whether justified by authority or not is in favor of abdication controlling authority. Therefore I suggest a strong case for further reform…. I would accordingly suggest that
৫৫৭
the jurisdiction of Court Martial should be statutorily confined to the offenses against discipline and all the jurisdiction over civil offenses should be taken away except where it is reasonable and impracticable to arrange for a civil trial.”
৩৫৭. আমরা দেখতে পেয়েছি যে, রায় ঘােষণার আগে, বিজ্ঞ দায়রা জজ তার ২৪.৩.১৯৯৭ তারিখের আদেশ দ্বারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নােটিশ পাঠিয়েছিলেন এবং সেনা সদর দপ্তর Criminal Procedural Rules (Military Offenders) ১৯৫৮-এর বিধান অনুসারে ২.৪.১৯৯৭ তারিখের অফিস স্মারকপত্র দ্বারা জানিয়েছিল যে, ফৌজদারি আদালতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের বিচার করার ক্ষেত্রে কোনাে বাধা নেই এবং এর মাধ্যমে আর্মি অ্যাক্টের ৯৪ ধারার বিধান প্রতিপালন করা হয়েছে। সুতরাং আমরা ফৌজদারি আদালতে (অর্থাৎ দায়রা আদালত) বিচার সম্পর্কে কোনাে অবৈধতা পাই না।
৩৫৮. নেভি অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ৩৫ ধারায় বর্ণিত বিদ্রোহের সংজ্ঞা থেকে আমরা দেখতে পাই না যে, প্রসিকিউশন বিদ্রোহের মামলা করেছে অথবা সেখানে কমান্ডের ব্যর্থতার কোনাে চিহ্ন ছিল, যা বিদ্রোহের দিকে নিয়ে যায়; বরং সাক্ষীদের প্রমাণ থেকে নিচের উভয় আদালত, অর্থাৎ দায়রা আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগ, যুগপৎভাবে পেয়েছেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ষড়যন্ত্র এবং হত্যা সংঘটিত করেছে। তবে উভয় আদালতই পেয়েছেন যে, এটি হত্যা মামলা এবং হত্যার লক্ষ্যে পরিচালিত বিদ্রোহের মামলা নয়।
৩৫৯ . Major EG Barsay vs. State of Bombay reported in AIR 1961 SC 1762 Ton
সুপ্রীম কোর্ট নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন :
“The scheme of the Act therefore is self-evident. It applies to offenses committed by army personnel described is section 2 of the Act; it creates new offenses with specified punishments, imposes higher punishments to pre-existing offenses, and enables civil offenses by a fiction to be treated as offenses under the Act; it provides a satisfactory machinery for resolving the conflict of jurisdiction. Further it enables, subject to certain conditions, an accused to be tried successively both by Court Martial and by a criminal Court. It does not expressly bar the jurisdiction of criminal Courts in respect of acts or E omissions punishable under the Act, if they are also punishable under any other law in force in India; nor is it possible to infer any prohibition by
necessary implication.”
৩৬০. আপিলকারীদের পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান, জনাব আবদুর রাজ্জাক খান এবং
জনাব আবদুল্লাহ-আল-মামুন একযােগে এই বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন যে, নথিতে থাকা সাক্ষ্য এবং উপকরণগুলি কেবল এটিই প্রতিভাত করবে যে, সেখানে হত্যার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কোনাে মামলা ছিল না, তবে তৎকালীন মুজিব সরকার পরিবর্তনের জন্য বিদ্রোহ করার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা ছিল। অতএব, অভিযুক্ত আপিলকারীদের দণ্ড ও সাজা বাতিল হওয়া উচিত। তারা উল্লেখ করেন। যে, বিদ্রোহের অপরাধের সংজ্ঞা অনুসারে বিদ্রোহের অভিযােগ তার নিজের সাথে ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব বহন করে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনাব খান সাইফুর রহমান বলেন যে, সেখানে বিদ্রোহ করার ষড়যন্ত্র ছিল এবং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের সদস্যদেরসহ
৫৫৮
হত্যা করার জন্য নয়। জনাব খান সাইফুর রহমান বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর মতামত উল্লেখ করেন এবং বলেন : বিজ্ঞ ততীয় বিচারক ১৫ আগস্টের ঘটনাকে বিদ্রোহ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন এবং বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক-এর উক্ত পর্যালােচনা ঘটনার সময় উদ্ভূত বিদ্রোহ হিসেবে অবস্থার পর্যালােচনা। তিনি বলেন যে, এই আপিলকারীদের দ্বারা হত্যা সংঘটিত হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মর্মে কোনাে প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। তিনি আরাে উপস্থাপন করেছেন যে, আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাড়িএই ঘটনাস্থানগুলােকে চার্জে এবং মামলায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই এবং এই মামলায় কোনাে সহ-আসামির দ্বারা ষড়যন্ত্রের কোনাে বর্ণনা নেই এবং এর ফলে এই জায়গাগুলােকে একই ঘটনার সময় মামলার বিষয়ে যুক্ত করে ঘটনাস্থলের বাইরে মামলার ঘটনাকে প্রসারিত করা মামলার সাথে অপ্রাসঙ্গিক | প্রমাণাদির অবৈধ মিশ্রণ এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রমাণাদির সাথে মামলার অলংকরণ এবং সেজন্য হত্যা ও হত্যার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত আপিলকারীদের দণ্ড ও সাজা আইনে সমর্থিত নয়। Md. Shamsul Haque vs. State reported in 20 DLR 540 মামলার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, কোনাে ষড়যন্ত্র যখন ষড়যন্ত্রের পর্যায় অতিক্রম করে এবং এর অনুসরণে অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন ষড়যন্ত্র অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় অর্থাৎ এর অনুসরণে যদি কোনাে অপরাধ সংঘটিত হয় তবে ষড়যন্ত্রের জন্য কোনাে দণ্ড প্রদান করা যাবে না। প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আনিসুল হক, বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম একমত হয়ে বলেছেন যে, বর্তমান মামলায় অভিযুক্ত আপিলকারীরা যথাযথভাবে পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। কারণ একই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযােগ যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণিত হয়েছে। জনাব মাহবুবে আলম বলেন যে, অভিযুক্ত আপিলকারীদের বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযােগে বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি, বরং হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযােগ গঠন করা হয়। আপিলকারীদের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবীর জবাবে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল উল্লেখ করেন যে, আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক উল্লিখিত পি.ডব্লিউদের সাক্ষ্য দুই রকম, একটি ঘটনার পূর্বের পরিস্থিতি সম্পর্কিত এবং অন্যটি ঘটনাপরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কিত এবং এইভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বিজ্ঞ আসামিপক্ষের আইনজীবী দ্বারা উদ্ধত প্রমাণগুলােকে বিদ্রোহের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না, বরং এটি হত্যার প্রমাণ যা মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য অনুসারে, নথিতে থাকা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে দেখা যায় যে, ষড়যন্ত্রের প্রথম উদ্দেশ্যটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা এবং সেই অনুসারে দণ্ডিতরা পূর্ব-পরিকল্পনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার জন্য ধানমন্ডি ৩২ রােডের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে আসে এবং এই লক্ষ্যে তারা রেডিও স্টেশন এবং শহরের অন্যান্য অঞ্চল দখলের জন্য বলপ্রয়ােগ করে। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আরাে জোর দিয়েছেন যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায় না এবং পরিস্থিতি ও অপরাধীদের দ্বারা তাদের সাধারণ পরিকল্পনা অনুসরণ করে যে কাজগুলি করা হয়েছিল তা থেকে প্রাপ্ত অনুমান দ্বারা এটি প্রমাণিত হয়। তিনি Shivnarayan Laxminarayan Joshi vs. State of Maharashtra reported in AIR:1980 SC 439 978 Mohd. Osman Mohammed Hossain Maniyur vs. State of Maharashtra reported in AIR 1981 SC 1062 মামলার সিদ্ধান্তের বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপিলকারীদের যুক্তির জবাবে, হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিজ্ঞ বিচারকের সবাই এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০ ধারার প্রয়ােগযােগ্যতা বাতিল করে দিয়েছিলেন এবং এভাবে প্রসিকিউশন এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০ ধারা প্রয়ােগের মাধ্যমে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল এবং জনাব আনিসুল হক উভয়ই
৫৫৯
মিলিতভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০ ধারা কেবল নির্দিষ্ট কিছু ঘটনাকে ষড়যন্ত্রের জন্য প্রাসঙ্গিক করে তােলে। ১০ ধারার সুস্পষ্ট পাঠে দেখা যায় যে, এটি সাক্ষ্যের একটি বিধি যা নির্দিষ্ট কিছু ঘটনাকে অর্থাৎ সাধারণ অভিপ্রায় প্রকাশিত হবার পর ঐ সাধারণ অভিপ্রায়ে এই জাতীয় ব্যক্তির (ষড়যন্ত্রকারী) যে কোনাে একজনের দ্বারা বলা, করা বা লিখিত কিছু করা- এগুলােকে প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখায়। State of Maharashtra vs. Damu Gopinath Shinde reported in AIR 2000 SC 1691 মামলায় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট বলেছেন যে, ১০ ধারায় বলা হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের কারও দ্বারা তাদের সাধারণ অভিপ্রায়ে কিছু বলা, করা বা লেখা, কেবল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই নয়, ষড়যন্ত্রের সাথে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রাসঙ্গিক ঘটনা হিসেবে সরবরাহ করে। তদুপরি কোনাে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ষড়যন্ত্রের পক্ষ ছিল তা দেখানাের জন্য উক্ত ঘটনাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ধারা ১০-এর বিধি প্রয়ােগের একমাত্র শর্ত হলাে দুই বা ততােধিক ব্যক্তি একসাথে কোনাে অপরাধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে বলে বিশ্বাস করার জন্য যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি থাকতে হবে। সুপ্রীম কোর্ট আরাে বলেছেন যে, এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০ ধারার মূলনীতিটি এজেন্সি তত্ত্ব (Theory of Agency) এবং সেহেতু, প্রত্যেক ষড়যন্ত্রকারী ষড়যন্ত্রের বিষয়টি পরিচালনার জন্য তার সহযােগীর এজেন্ট।
৩৬১. অভিযুক্ত আপিলকারী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী খান সাইফুর রহমানের বক্তব্যের জবাবে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যে, অভিযুক্ত আপিলকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি)-এর দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য এবং স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং সেজন্য এই জবানবন্দি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আরাে বলেন, সাক্ষী পি.ডব্লিউ ৫১ এবং পি.ডব্লিউ ৬১-এর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এবং মামলার রেকর্ড থেকেও দেখা যায় যে, ধারা ১০-এর বিষয়ে বিজ্ঞ প্রথম বিচারক-এর পর্যালােচনাগুলাে রেকর্ডে থাকা সাক্ষ্য-প্রমাণাদির পুরােপুরি ভুল ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল। তারা সবাই স্বেচ্ছায় স্বীকারােক্তি দিয়েছিল। লিপিবদ্ধকারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বীকারােক্তির ফর্মের কয়েকটি কলাম পূরণ না করা মারাত্মক কিছু নয়। এই যুক্তির সমর্থনে তিনি State vs. Nolini reported in (1999) 5 SCC 353 and State vs. Lalu Miah reported in 39 DLR (AD) 117 মামলাগুলাের উল্লেখ করেন। আপিলকারীদের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবীর এই বক্তব্যের জবাবে, যখন কোনাে ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্রের পর্যায়ের বাইরে চলে যায় এবং অপরাধ সংঘটিত হয় তখন ষড়যন্ত্র অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় অর্থাৎ ষড়যন্ত্রের জন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, যদি তার অনুসরণে অপরাধটি সংঘটিত হয়। তার যুক্তি প্রমাণ করার জন্য তিনি State of Andhra Pradesh os. Kandimalla Subbaiah reported in AIR 1961 SC 1241, State of Kerala vs. Sugathan reported in AIR 2000 SC 3323. Kehar Singh vs. State (Delhi Admn) reported in AIR 1988 SC 1883 মামলাগুলাের সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেছেন।
৩৬২. আপিলকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের পক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আবদুর রাজ্জাক খান সাক্ষ্যের প্রাসঙ্গিক অংশ উপস্থাপন করে নিবেদন করেন যে, বিজ্ঞ দায়রা বিচারক বহিরাগত ঘটনা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, উক্ত অপরাধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধান ছাড়াই অভিযুক্ত আপিলকারীকে পেনাল কোডের ১২০বি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন, বরং বিচারিক আদালত অগ্রহণযােগ্য সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেছেন। এটি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে দ্বৈত বেঞ্চের বিচারকগণ আইনগত ভুল করেছেন। তিনি উপস্থাপন করেছেন যে, আপিলকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধে জড়িত থাকার কোনাে আইনি প্রমাণ নেই। দেখা যাচ্ছে যে, পি.ডব্লিউ-৪৩, আসামি আপিলকারী লেফটেন্যান্ট
৫৬০
কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে ১৯৭৫ সালের জুন/জুলাই মাসে খােন্দকার মােশতাকের বাড়িতে একটি সভায় অংশ নিতে দেখেছিলেন। আসামি শাহরিয়ার, ফারুক, খােন্দকার। দাউদকান্দির একটি মাদ্রাসায় সভা শেষে খােন্দকার মােশতাক আহমেদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও অন্যদের সঙ্গে গােপন বৈঠকে যােগ দেন। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ষড়যন্ত্র সর্বদা গােপনীয়তার মধ্যে লুকানাে থাকে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেওয়া অসম্ভব। Shiv Narayan LaXmi narayan Joshi vs. State of Maharashtra reported in AIR 1980 SC 439 মামলায় বিচারপতি ফজল আলী পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন যে, ষড়যন্ত্র সর্বদা গােপনীয়তার মধ্যে থাকে এবং এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেওয়া অসম্ভব। কেবল একটি সাধারণ পরিকল্পনা অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা সম্পাদিত কাজ বা বেআইনি। ব্যত্যয় হতে প্রাপ্ত অনুমান থেকে এই অপরাধটি প্রমাণিত হতে পারে।
৩৬৩ . Mohd. Usman Mohammad Hossain Maniyar vs. State of Maharashtra reported in AIR 1981 SC 1062 পৃষ্ঠা ১০৬৭ প্যারা ১৬ মামলায় বিচারপতি বাহারুল ইসলাম পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন যে :
“It is true that there is no evidence of any express agreement between the appellants to do or cause to be done the illegal act. For an offense under section 120B the prosecution need not necessarily prove that the perpetrators expressly agreed to do or cause to be done the illegal act; the agreement may be proved by necessary implication. In this case, the fact that the appellants were possessing and selling explosive substances without a valid license for a pretty long time leads to the inference that they agreed to do and/or caused to be done the said illegal act, for, without such an agreement the act could not have been done for such a long time.”
৩৬৪. প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্য সতর্ক পর্যালােচনা থেকে এবং পূর্বোক্ত তিন দণ্ডিত আপিলকারীর দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে দেখা যায় যে, এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে। কুমিল্লার BARD-এ। এরপর ১৯৭৫ সালের জুন/জুলাই মাসে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে খােন্দকার মােশতাক আহমেদের বাড়িতে, যেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, খােন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং অন্যরা উপস্থিত ছিল। তৎপরবর্তীকালে আগামসি লেনে খােন্দকার মােশতাক আহমেদের বাড়িতে, রমনা পার্কে এবং এরপর ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডে এই ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২ এবং পি.ডব্লিউ-১৪ তাদের সাক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত নাইট প্যারেড সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেছেন। নাইট প্যারেড শেষে অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং অন্যদের সম্মেলন ও ব্রিফিং হয়। মধ্যরাতের পরে সব অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অন্যরা, যারা ল্যান্সার রেজিমেন্টের প্যারেড গ্রাউন্ডে জড়াে হয়েছিল এবং তাদের ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত দায়িত্ব দেওয়ার পরে First Bengal Lancer Unit ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যদের সাথে 2nd Field Artillery Regiment থেকে কামান এবং হালকা অস্ত্রসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মােতায়েন করা হয়েছিল এই অপরাধটি সংঘটিত করার জন্য, যা ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডে গিয়ে শেষ হয়। ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক পি.ডব্লিউ-২১, পি.ডব্লিউ-২২, পি.ডব্লিউ-২৪, পি.ডব্লিউ-২৬, পি.ডব্লিউ-৩২, পি.ডব্লিউ-৩৪, পি.ডব্লিউ-৩৫, পি.ডব্লিউ-৩৯, পি.ডব্লিউ-৪০, পি.ডব্লিউ-৪২ এবং পি.ডব্লিউ-৪৪-এর সাক্ষ্যকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ বিবেচনা করেছেন। পি.ডব্লিউ-২১-এর সাক্ষ্য 2nd
৫৬১
Field Artillery Regiment-এর প্রস্তুতি প্রকাশ করে, পি.ডব্লিউ-২২-এর সাক্ষ্য হামলার প্রস্তুতি দেখায় এবং পি.ডব্লিউ-২৪-এর সাক্ষ্য প্রকাশ করে যে, First Bengal Lancer Regiment-এর একজন অবসরপ্রাপ্ত রিসালদার সরাসরি ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল।
৩৬৫. বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক অভিযুক্ত আপিলকারী এবং প্রতিপক্ষের পক্ষে দাখিলকৃত বক্তব্য বিবেচনা করে যথাযথভাবে এটি পেয়েছেন যে, পি.ডব্লিউ-২৫, পি.ডব্লিউ-২৬, পি.ডব্লিউ-৩২, পি.ডব্লিউ-৩৪, পি.ডব্লিউ-৩৫, পি.ডব্লিউ-৩৯, পি.ডব্লিউ-৪০ এবং পি.ডব্লিউ-৪১ ষড়যন্ত্র এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ প্রমাণে একে অপরকে সমর্থন করেছেন। সকল সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে আরাে বলেছেন যে, অভিযুক্ত আপিলকারীরা, যথা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম সেনাবাহিনীকে সম্বােধন করে তাদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার জন্য এবং ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ ভােরবেলা চড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে সাধারণ অভিপ্রায়ে। অভিযান পরিচালনা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং তার সহযােগীদের দ্বারা মােতায়েন অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে যায় এবং অবৈধ উপায়ে অবৈধ কাজ করার জন্য ওই জায়গাগুলােতে জড়াে হয় এবং তারা সকলেই পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে অপরাধ সংঘটিত করে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে এটিও প্রতিভাত হয় যে, First Bengal Lancer Regiment এবং 2nd Field Artillery Regiment-কে দেশের স্বার্থে একটি বিশেষ জরুরি দায়িত্ব পালন করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও প্ররােচিত করা হয়েছিল।
৩৬৬. লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের ব্রিফিং অনুসারে অফিসারদের কমান্ডে থাকা সৈনিকদের শেখ ফজলুল হক মনি, বাংলাদেশের মাননীয় মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি, রেডিও স্টেশন, ক্যান্টনমেন্ট, রক্ষীবাহিনী সদর দফতরের দূরে মােতায়েন করা হয়েছিল এবং বিডিআর প্রতিরােধের জন্যও অনেককে মােতায়েন করা হয়েছিল। মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি)কে পাঠানাে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে বাড়ির প্রহরীদের সন্ত্রস্ত করার জন্য এবং যদি প্রয়ােজন হয় তবে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য। মেজর বজলুল হুদা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) ও আজিজ পাশা রাষ্ট্রপতির বাসভবনে গিয়েছিল এবং রিসালদার মােসলেম উদ্দিন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছিল। এ থেকে দেখা যায়, ফজলুল হক মনির বাড়ি, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি, রেডিও স্টেশন, রেসকোর্সের কোণ, তেজগাঁও বিমানবন্দরের নিকট, মিরপুর রােড, কলাবাগান লেক সাইডে উক্ত সেনা মােতায়েন এলােমেলােভাবে করা হয়নি, বরং একটি সুবিন্যস্ত ও পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফলাফল হিসেবে কেবল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে তার পরিবারের সদস্যদেরসহ হত্যা করার জন্যই নয়, বরং তাদের কোনাে প্রতিরােধ গড়ে না ওঠে সেজন্য এবং পরিবারের সদস্যসহ বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থলে যেন কোনাে সহায়তা না পৌঁছায় তা নিশ্চিত করার জন্য।
৩৬৭. দেখা যাচ্ছে যে, ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকগণ বিজ্ঞ দায়রা জজ কর্তৃক প্রদত্ত রায় ও আদেশ এবং ১৬ জন প্রসিকিউশন সাক্ষী যথা: পি.ডব্লিউ-৪৩, পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৪, পি.ডব্লিউ-২১, পি.ডব্লিউ-২২, পি.ডব্লিউ-২৪, পি.ডব্লিউ-২৫, পি.ডব্লিউ-২৬, পি.ডব্লিউ-৩২, পি.ডব্লিউ-৩৪, পি.ডব্লিউ-৩৫, পি.ডব্লিউ-৩৯, পি.ডব্লিউ-৪০, পি.ডব্লিউ-৪১ এবং পি.ডব্লিউ-৪৪-এর সাক্ষ্য পর্যালােচনা করে পেয়েছেন যে, প্রসিকিউশন সফলভাবে পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে ষড়যন্ত্রের অভিযােগ প্রমাণ করেছে। অধিকন্তু, বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক এটি পেয়েছেন যে, অভিযুক্ত আপিলকারী যথা: লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং
৫৬২
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক প্রদত্ত দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য এবং স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং এগুলােকে আইনানুগ প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অভিযুক্ত আপিলকারীদের পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং সেজন্য অত্র মাননীয় আদালতের হস্তক্ষেপের কোনাে প্রয়ােজন নেই।। ধারা ১২০এ এবং ১২০বি, পেনাল কোড ১৮৬০-এ ষড়যন্ত্র:
“120A. When two or more persons agree to do, or cause to be done,
an illegal act, or
an act which is not illegal by illegal means, such an agreement is designated a criminal conspiracy: Provided that no agreement except an agreement to commit an offense shall amount to a criminal conspiracy unless some act besides the agreement is done by one or more parties to such agreement in pursuance thereof.”
120B. (1) Whoever is a party to a criminal conspiracy to commit an offense punishable with death, [imprisonment for life] or rigorous imprisonment for a term of two years or upwards, shall, where no express provision is made in this Code for the punishment of such a conspiracy, be punished in the same manner as if he had abetted such offence. (2) Whoever is a party to a criminal conspiracy other than a criminal conspiracy to commit an offense punishable as aforesaid shall be punished with imprisonment of either description for a term not exceeding six months, or with fine or with both.]
৩৬৮. অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অপরাধটি সংঘটিত হয় যখন দুই বা ততােধিক ব্যক্তির মধ্যে তাদের সাধারণ পরিকল্পনার অগ্রগতিতে কোনাে অবৈধ কাজ বা কোনাে কাজ অবৈধ উপায়ে করার জন্য একটি চুক্তি থাকে।
৩৬৯. অন্য যে কোনাে অপরাধের মতাে ষড়যন্ত্রের অপরাধটি প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য বা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যেতে পারে, তবে বাস্তবে ষড়যন্ত্র প্রমাণে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। Yusuf Mornin vs. State of Maharashtra reported in AIR 1971 SC 885 LD মামলায় বিচারপতি দুয়া সিদ্ধান্ত দেন যে :
“A conspiracy from its very nature is generally hatched in secret. It is, therefore, extremely rare that direct evidence in proof of conspiracy can be forthcoming from wholly disinterested quarters or from utter strangers. But, like other offenses, criminal conspiracy can be proved by circumstantial evidence. Indeed in most cases proof of conspiracy is largely inferential though the inference must be founded on solid facts. Surrounding circumstances and antecedent and subsequent conduct, among other factors, constitute relevant material. In fact, because of the difficulties in having direct
৫৬৩
evidence of criminal conspiracy, once reasonable ground is shown for believing that two or more persons have conspired to commit an offense then anything done by any one of them in reference to their common intention after the same is entertained becomes, according to the law of evidence, relevant for proving both conspiracy and the offenses committed pursuant thereto.”
৩৭০. পূর্বের Barindra Kumar Ghose vs. Emperor reported in CWN 1114 মামলায় বিচারপতি জেনকিন্স নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন :
“A conspiracy consists not merely in the intention of two or more, but in the agreement of two or more to do an unlawful act, or to do a lawful act by unlawful means. Though to establish a charge of conspiracy there must be agreement, there need not be proof of direct meeting or combination, nor need the parties be brought into each other’s presence. The agreement may be inferred from circumstances raising a presumption of a common concerted plan to carry out the unlawful design. Nor is it necessary that all should have joined in the scheme from the first; those who come in at a later stage are equally guilty, provided the agreement is proved.”
[ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে]
৩৭১. ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Jena Gaid Sardar Sardul Singh Caveeshar vs State of Maharashtra reported in AIR 1965 SC 682 মামলার রায়ে অভিমত ব্যক্ত করেন :
“The essence of conspiracy is therefore, that there should be an agreement between persons to do one or other of the acts described in the section. The said agreement may be proved by direct evidence or may be inferred from acts and conducts of the parties”
৩৭২. ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Sanjaya Gandhi vs State (Delhi Adma) reported in AIR 1980 SC 1382 মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“… it is well settled that in order to prove a criminal conspiracy which is punishable under section 120B of the Indian Penal Code, there must be direct or circumstantial evidence to show that there was an agreement between two or more persons to commit an offense. This clearly envisages that there must be a meeting of minds resulting in an ultimate decision taken by the conspirators regarding the commission of an offense. It is true that in most cases it will be difficult to get direct evidence of an agreement to conspire but a conspiracy can be inferred even from circumstances giving rise to a conclusive or irresistible inference of an agreement between two or more persons to commit an offense.”
৫৬৪
৩৭৩. বিচবরপতি কে. জগন্নাথ শেঠী Kehar Singh vs State (Delhi Admn) reported in AIR 1980 SC 1983 মামলবর রায়ে নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদবন করেন:
“Generally, a conspiracy is hatched in secrecy and it may be difficult to deduce direct evidence of the same. The prosecution will often rely on evidence of acts of various parties to infer that they were done in reference to their common intention. The prosecution will also more often rely upon circumstantial evidence. The conspiracy can be undoubtedly proved by such evidence direct or circumstantial. But the Court must enquire whether the two persons are independently pursuing the same end or they have come together to the pursuit of the unlawful object. The former does not render them conspirators, but the latter does. It is, however, essential that the offense of conspiracy requires some kind of physical manifestation of agreement. The express agreement, however, need not be proved. Nor actual meeting of two persons is necessary. Nor is it necessary to prove the actual words of communication. The evidence as to transmission of thought sharing the unlawful design may be sufficient.”
৩৭৪. ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট ষড়যন্ত্রে আপিলেন্টদের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনাে প্রত্যক্ষ অবৈধ সাক্ষ্য নেই এরূপ যুক্তির মুখে Suresh Chandra Bhari vs State of Bihar reported in AIR 1994 SC 2420 মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে :
“Where the conspiracy alleged is with regard to commission of a serious crime of the nature as contemplated in section 120B read with the proviso to sub-section (2) of section 120A of the IPC then in that event mere proof of an agreement between the accused for commission of such a crime alone is enough to bring about a conviction under section 120B and the proof of any overt act by the accused or by any one of them would not be necessary. The provisions in such a situation do not require that each and every person who is a party to the conspiracy must do some overt act towards the fulfillment of the object of conspiracy, the essential ingredient being an agreement between the conspirators to commit the crime and if these requirements and ingredients are established the act would fall within the trapping of the provisions as contained in section 120B since from its very nature a conspiracy must be conceived and hatched in complete secrecy, because otherwise the whole purpose may be frustrated and it is common experience and goes without saying that only in very rare cases one may come across direct evidence of criminal conspiracy to commit any crime and in most of the cases it is only circumstantial evidence which is available from which an inference giving rise to the conclusion of an agreement between two or more persons to commit an offense may be legitimately drawn.” [emphasis added]
৫৬৫
৩৭৫. বিচারপতি কাদরি State vs Nalini (1999) 5 SCC 253 মামলায় অভিমত ব্যক্ত করেন যে-
“it is not necessary that all the conspirators should participate from the inception to the end of the conspiracy; some may join the conspiracy after the time when such intention was first entertained by any one of them and some others may quit from the conspiracy. All of them cannot but be treated as conspirators. Where in pursuance of the agreement the conspirators commit offenses individually or adopt illegal means to do a legal act which has a nexus to the object of conspiracy, all of them will be liable for such offenses even if some of them have not actively participated in the commission of those offenses.” [emphasis added]
৩৭৬. প্রধান বিচারপতি এস আর দাশ Roy Frey vs Superintendent, District Jail, Amritsar reported
in AIR 1958 SC 119 মামলার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের সাথে প্রকৃত/বিধিবদ্ধ অপরাধের তুলনায় নিম্নবর্ণিত ব্যাখা প্রদান করেন :
“The offense of a conspiracy to commit a crime is a different offense from the crime that is the object of the conspiracy because the conspiracy precedes the commission of the crime and is complete before the crime is attempted or completed, equally the crime attempted or completed does not require the element of conspiracy as one of its ingredients. They are, therefore, quite separate offenses.”
৩৭৭. উপরােক্ত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অভিমত হলাে, যদি আসামিদের আচরণ ষড়যন্ত্রের পর্যায় ছাপিয়ে যায় এবং সে অনুসারে প্রকৃত অপরাধটি সংঘটিত হয় সেক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধ সংঘটনের সুনির্দিষ্ট অভিযােগের সাথে ষড়যন্ত্রের অভিযােগ গঠন একসঙ্গে চলবে, যেহেতু ষড়যন্ত্র অথবা প্রকৃত অপরাধ অথবা উভয়ই একই ঘটনায় প্রমাণ করা যেতে পারে। শুধু ষড়যন্ত্রের ফলে একটি প্রকৃত ফৌজদারি অপরাধ পরিণতি পাওয়া, ষড়যন্ত্রকে একটি পৃথক এবং স্বতন্ত্র অপরাধ গণ্য হওয়াকে কলুষিত অথবা বাতিল করে না। যদি একবার ষড়যন্ত্র সংঘটিত হয়ে পেনাল কোডের ১২০বি ধারার ফৌজদারি অপরাধ দানা বাঁধে, পরবর্তী প্রকৃত ঘটনা সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও সেটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে থাকবে। পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অপরাধের বিস্ততি পরবর্তী সময়ে সংঘটিত প্ৰকত অপরাধের সমান। তদনুসারে অত্র মামলার সব আপিল আবেদনে আপিলকারী আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ১২০বি
ধারার অভিযােগ সঠিকভাবে গঠন করা হয়েছে।
৩৭৮. পেনাল কোড, ১৮৬০-এর ৩৪ ধারা সম্পর্কিত বিষয়বস্তু সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত কার্য।
জনাব খান সাইফুর রহমান এবং জনাব আবদুর আবদুর রাজ্জাক খান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) উপস্থিত ছিল না। যেহেতু তারা অপরাধ সংঘটনের সময় ঘটনাস্থলে শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিল না, সেহেতু তাদেরকে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার
৫৬৬
অধীনে অভিযুক্ত করে দণ্ড প্রদান করা যায় না। এ প্রসঙ্গে লক্ষ করা যায় যে, আপিলকারী আসামিসহ সব আসামি সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে পূর্ব পরিকল্পনা এবং অভিসন্ধি অনুযায়ী পৃথকভাবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মােতায়েন ছিল এবং যারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিল এবং যারা উপস্থিত ছিল না তারাও সমানভাবে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে অপরাধ সংঘটনের জন্য সমভাবে দায়ী।।
৩৭৯. পেনাল কোডের ৩৪ ধারা রুল অব এভিডেন্স হওয়ায় এবং তা স্বতন্ত্র অপরাধ সম্পর্কিত না হওয়ায় উক্ত ধারার অধীনে অপরাধ সংঘটিত হয় তখনই যখন দুই বা ততােধিক ব্যক্তি তাদের সকলের সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে ইচ্ছাকৃতভাবে যৌথভাবে একটা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন করে। সাধারণ অভিপ্রায়ে যারা অপরাধ সংঘটন করতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে একটি পূর্বযােগ অথবা পূর্ব-আয়ােজিত পরিকল্পনা সূচিত করে। একটি অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণের ঘটনা থেকেও পেনাল কোডের ৩৪ ধারার অধীনে সাধারণ অভিপ্রায় inference হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
৩৮0. Rasod Bux os State reported in 22 DLR (SC) 297 মামলায় একজন আসামি ভিকটিমকে লক্ষ করে গুলি ছােড়ে, কিন্তু আপিলকারী ফাঁকা আকাশে দুই রাউন্ড গুলি ছােড়ে। এই যুক্তি দেখানাে হয়েছিল যে, আপিলকারীর হত্যা করার কোনাে অভিপ্রায় ছিল না। পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট দোষী সাব্যস্তকরণ ও সাজার রায় ও আদেশ বহাল রাখেন। রায় প্রদানের সময় বিচারপতি হামুদুর রহমান নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“There is no doubt that to bring a case within the ambit of section 34, PPC, it is necessary that some overt act or acts must be established to lead to the inference that the participators in the crime acted in pre-concert or under some prearranged plan but this does not mean that every participant in the crime must be shown to have committed the same kind of act. It is sufficient to show that they joined together in the commission of a particular act, for then they must all be deemed to have intended the natural and inevitable consequences of that act even if some of them did nothing but merely helped by their presence the commission of the act.”.
বিচারপতি বি কে বেহেড়া Tunu os State of Orissa reported in 1988 CriLJ 524 মামলায় অভিমত ব্যক্ত করেন যে-
“Common intention is to be gathered from the acts and conduct of the accused persons preceding, attending and succeeding the occurrence. No doubt, the petitioner, who had stood on the road and blocked it had not participated in the actual assault, but his conduct in blocking the road and forcing PW 14 to stop the car and thereby facilitating the other two persons to attack PW 14 would undoubtedly show that he had shared the common intention with the other two petitioners to attack and assault PW 14. It is not necessary that to attract section 34 of the code, every person must have assaulted and caused hurt.”
৫৬৭
৩৮১. অত্র মামলায় আপিলকারী আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট
কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (দ্বিতীয় আর্টিলারি) পক্ষে উপস্থাপন করা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভাের ৪.৩০ থেকে ৫.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত ঘটনার সময় তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে তারা শারীরিকভাবে উপস্থত ছিলেন I In this context it would be pertinent to consider the case of Tukaram Ganpat Pandare vs State of Maharashtra reported in AIR 1974 SC 514, where some articles were stolen from the godown and carried away by a lorry which stopped at a weigh bridge. There was no evidence about the presence of the appellants at the scene of offense but he was found in possession of a duplicate key of the burgled godown and he was present at the Weigh Bridge. R Krishna Lyer, J held :
“Mere distance from the scene of crime cannot exclude culpability under section 34 which lays down the rule of joint responsibility for a criminal act performed by a plurality of persons. In Barandra Kumar Ghosh vs King Emperor, (1924) 52 IA 40 =AIR 1925 PC 1 the Judicial Committee drew into the criminal net those ‘who only stand and wait.’ This does not mean that some form of presence, near or remote, is not necessary, or that mere presence without more, at the spot of crime, spells culpability. Criminal sharing, overt or covert, by active presence or by distant direction, making out a certain measure of jointness in the commission of the act is the essence of section 34. The act here is not picking the godown lock but house-breaking and criminal house trespass. This crime is participated in by those operating by remote control as by those doing physical removal. Together operating in concert, the criminal project is executed. Those who supply the duplicate key, wait at the weighbridge for the bread-in and bringing of the booty and later secrete the keys are particeps criminis.” [emphasis added]
৩৮২. বিচারপতি জনাব মো: বদরুজ্জামবন State vs Tajul Islam reported in 48 DLR 305 মামলায় পেনাল কোডের ৩৪ ধারা বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“Section 34 does not create any distinct offense. This section is intended to meet a case where members of a party acted in furtherance of the common intention of all but it was difficult to prove exactly the part played by each of them. It means that if two or more persons intentionally do a thing jointly, it is just the same as if each of them had done it individually. Common intention within the meaning of this section presupposes a prior concert. There must be a prior meeting of minds to form a prearranged plan to commit an offense. A common intention with meeting of minds to commit an offense in furtherance of the common intention invites the application of section 34 of the Penal Code. In offenses involving physical violence, normally presence at the scene of the offense of the offender sought to be rendered liable on the principle of joint liability is necessary but such is not the
৫৬৮
case in respect of other offenses where offense consists of diverse acts which may
be done at different times and places.”
৩৮৩. তিনি Bernasconi vs State of Tamil Nadu reported in AIR 1976 SC 2027 মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আরাে পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে-
“Thus we find that some of the confessing accused did not participate in the forcible taking away of the six victims but they played their part truly by remaining on guard so as to overcome any outside interference with the attainment of their objective. All the essential conditions so far the presence of a common intention were clearly proved in this case. There cannot be a clearer case of applicability of section 34 of the Penal code than this.”
৩৮৪. পেনাল কোডের ৩৪ ধারা বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Suresh os State of UP reported in AIR 2001 SC 1344 at page 1348 para 21 মামলায় নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“Even the concept of presence of the co-accused at the scene is not a necessary requirement to attract section 34 i.e. the co-accused can remain a little away and supply weapons to the participating accused either by throwing or by catapulting them so that the participating accused can inflict injuries on the targeted person. Another illustration, with advancement of electronic equipment can be etched like this; One of such persons in furtherance of the common intention, overseeing the actions from a distance through binoculars can give instructions to the other accused through mobile phones as to how effectively the common intention can be implemented. We do not find any reason why section 34 cannot apply in the case of those two persons indicated in the illustration.”
৩৮৫. সাধারণ অভিপ্রায় বিষয়ে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Rishi Deo Pandey VS state of uP reported in AIR 1955 SC 331 at page 332 para 2 মামলায় নিম্নলিখিত অভিমত ব্যক্ত করেন :
“It is now well settled that the common intention referred to in section 34 presuppose a prior concern, a prearranged plan i.e a prior meeting of minds. This does not mean that there must be a long interval of time between the formation of common intention and the doing of the act. It is not necessary to adduce direct evidence of the common intention. Indeed, in many cases it may be impossible to do so. The common intention may be inferred from the surrounding circumstances and the conduct of the parties”
৩৮৬. এমন পরিস্থিতিতে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, পেনাল কোডের ৩৪ ধারা প্রযােজ্য হওয়ার জন্য আসামির উপস্থিতি জরুরি, কিন্তু সব ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতি আবশ্যকভাবে প্রয়ােজন নেই। পেনাল কোডের ৩৪ ধারার প্রযােজ্যতার ক্ষেত্রে ব্যক্তির উপস্থিতি প্রতিটি মামলার নিজস্ব ঘটনা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। একজন অপরাধীর উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে যদি সে উপস্থিত থেকে প্রকৃত ঘটনা/অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণ করে অথবা সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে
৫৬৯
নিজেকে আয়ত্তাধীন রাখে। ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন সহজতর করার লক্ষ্যে আসামির উপস্থিতি ফৌজদারি অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহণের নামান্তর। মূল আসামিসহ সব আসামি সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে অপরাধে অংশগ্রহণ করে এটা জেনে যে, সন্নিকটে কিছু সহযােগিতা অপেক্ষা করছে এবং যারা তাদের সাধারণ অভিপ্রায় এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এ ধরনের সহযােগিতা প্রদান করছে এবং অংশগ্রহণকারীর এরূপ ভূমিকা যা মূল আসামির কাজের সাথে সম্পর্কিত, তাদের যৌথভাবে ৩৪ ধারার অধীনে অপরাধের জন্য দায়ী করা যায়, যেহেতু সে সকলের সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে কাজ করেছে। পেনাল কোডের ৩৪ ধারার অধীনে আসামির উপস্থিতির অর্থ ঘটনাস্থলের সাথে এক প্রকার নৈকট্য (proximity) বােঝানাে। নৈকট্য (proximity) একটি আপেক্ষিক শব্দ, যেটি মামলার ঘটনাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় অথবা মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
৩৮৭. বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল এবং জনাব আনিসুল হক উভয়ই পি.ডব্লিউ-১, পি.ডব্লিউ-৪, পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৪, পি.ডব্লিউ-৩৭, পি.ডব্লিউ-৪২, পি.ডব্লিউ-৪৮, পি.ডব্লিউ-৫০, পি.ডব্লিউ-২০, পি.ডব্লিউ-৪৫, পি.ডব্লিউ-৪৭, পি.ডব্লিউ-৪৮ এবং পি.ডব্লিউ-৪৯ প্রদত্ত সাক্ষ্য উল্লেখে উপস্থাপন করেন যে, সব আপিলকারী আসামি তাদের সাধারণ অভিপ্রায় এবং পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের স্ব-স্ব ন্যস্ত কাজ নির্ধারিত স্থানে সম্পন্ন করে এবং এভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যদের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। প্রত্যুত্তরে তারা উপস্থাপন করেন যে, পেনাল কোডের ৩৪ ধারার নীতি প্রযােজ্য হবে সব আপিলকারী আসামিসহ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের ক্ষেত্রেও, যারা তৎকালীন প্রেসিডেন্টের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে যায়নি।
৩৮৮. অত্র মামলার অসামান্য এবং ব্যতিক্রমী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিমত হলাে, ঘটনাস্থল রােড নম্বর ৩২, বাসা নম্বর ৬৭৭-এ শারীরিক উপস্থিতির প্রয়ােজন নেই; যেখানে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত যে, সব আপিলকারী আসামি অন্যান্য আসামি দ্বারা নির্ধারিত স্ব-স্ব অপরাধমূলক কাজ তাদের সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে সংঘটন করেছে। আসামির শারীরিক উপস্থিতির প্রয়ােজনীয়তা নির্দিষ্ট একটি মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। অত্র মামলার প্রকৃত ঘটনা হলাে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টরা। উক্ত আপিলে বিজ্ঞ সিনিয়র অ্যাডভােকেট এবং স্টেট কাউন্সেল জনাব তৌফিক আজিজের উপস্থাপনার সাথে আমি একমত পােষণ করি যে, অত্র মামলাটিকে একটি অসামান্য এবং ব্যতিক্রমী হিসেবে বিবেচনার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতিকে প্রদত্ত সাংবিধানিক এবং আইনগত ব্যক্তিত্ব, পদমর্যাদা, ক্রিয়াকলাপ, বিশেষাধিকার এবং দায়মুক্তির বিষয়গুলাে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃত যে কোনাে অনিষ্ট অপরাধের শামিল এবং সংবিধানের লজ্ঞান, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। অত্র আপিলের ঘটনা ব্যতিক্রমী অবস্থা বিশেষের সাথে জড়িত, যেহেতু আপিলকারী আসামিরা একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মাধ্যমে জাতির জনক এবং প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করেছে। রাষ্ট্রপতিকে প্রদত্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষাধিকার, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষাকবচ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার মতাে ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটনে যে অবৈধ সমর্থন এবং পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের জাল প্রয়ােজন, তার সাথে বাসভবন অথবা অন্য কোনাে স্থানে বসবাসরত সাধারণ নাগরিকের তুলনা হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সাধারণ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য আপিলকারী আসামিরা স্ব-স্ব ন্যস্ত কাজে অংশগ্রহণ করে
৫৭০
বিস্তৃত এলাকা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে শুরু করে নতুন বিমানবন্দর, মহাখালী, মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা, মিরপুর রােড, মন্ত্রিবর্গের বাসভবন, শাহবাগের রেডিও স্টেশন, রেইস কোর্সের কর্নার, কলাবাগান লেকসাইড, ধানমন্ডি এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবন পর্যন্ত পূর্ব-পরিকল্পনার আবরণে ঢেকে রাখা হয়। যদিও পেনাল কোডের ৩৪ ধারায় রুল অব এভিডেন্স রয়েছে, যা কোনাে স্বতন্ত্র অপরাধ গঠন করে না, সেক্ষেত্রে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে এবং আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা করার সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে আপিলকারী আসামিদের অবৈধ কাজকে পেনাল কোডের ৩৪ ধারার অধীনে বিবেচনা করা যায়। পূর্ব-পরিকল্পনা এবং অভিসন্ধি অনুসারে এবং তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আপিলকারী আসামিদেরকে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা করার অবৈধ কর্মে নিয়ােজিত করা হয়। তদনুসারে আমার অভিমত হলাে : আপিলকারী আসামিদের পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে দণ্ড প্রদান অবৈধ হয়নি এবং সেহেতু উক্ত দণ্ড সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক হস্তক্ষেপযােগ্য নয়। যেহেতু অপরাধ সংঘটন বিষয়ে বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্ট ডিভিশন ঐকমত্য রায় দিয়েছেন, সেহেতু অপরাধ সংঘটনে আপিলকারী আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে ঐকমত্য রায়ে এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করার মতাে সুযােগ নেই। তৎপরিপ্রেক্ষিতে সব আপিল খারিজযােগ্য এবং ডেথ রেফারেন্স বহাল রাখা যেতে পারে।
৩৮৯. এখন এটি প্রামাণিকভাবে/সাক্ষ্যগতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে যে, আপিলকারী আসামিরা পেনাল কোডের ৩০২ ধারার সাথে ৩৪ ধারার অধীনে অপরাধ সংঘটন করেছে কিনা। প্রসিকিউশন কর্তৃক উপস্থাপিত সাক্ষী পি.ডব্লিউ-৪৪, পি.ডব্লিউ-৪৩, পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৩ এবং পি.ডব্লিউ-১৪-এর সাক্ষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান অপারেশনের দায়িত্বে ছিল এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ফোর্সের সদস্যদের পরিচালনা করে। সাক্ষী পি.ডব্লিউ-২০, পি.ডব্লিউ-২৩, পি.ডব্লিউ-২৪, পি.ডব্লিউ-২৫, পি.ডব্লিউ-৩৫, পি.ডব্লিউ-৩৯, পি.ডব্লিউ-৪০, পি.ডব্লিউ-৪৪, পি.ডব্লিউ-১, পি.ডব্লিউ-৪, পি.ডব্লিউ-১৫, পি.ডব্লিউ-১৬, পি.ডব্লিউ-৪২, পি.ডব্লিউ-৪৪, পি.ডব্লিউ-৪৫ এবং পি.ডব্লিউ-৪৬-এর সাক্ষ্য থেকে এটা প্রাদুর্ভূত হয়েছে। যে, তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির বাসভবন, ধানমন্ডি-৩২, রেডিও স্টেশন এবং বালুরঘাটে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান কর্তৃক সেনাদের ব্রিফিং এবং সংহতকরণ পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলাে করা হয়েছে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমে সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে। পি.ডব্লিউ-৪৩ তার জবানবন্দিতে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লার বিএআরডি, দাউদকান্দির মাদ্রাসার সভা শেষে খােন্দকার মােশতাক আহমেদের বাড়িতে মেজর খােন্দকার আ রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ এবং কিছু সেনা অফিসারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে উল্লেখ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে আপিলেন্টদের উপস্থিতি সম্পর্কে পি.ডব্লিউ-১৪ তার জবানবন্দিতে বর্ণনা করেন। রাতে প্যারেড শেষে তিনি প্যারেড গ্রাউন্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, নাজমুল হােসেন আনসার এবং অন্যদের সাধারণ পােশাকে দেখেছেন। সাধারণ পােশাকে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান মেজর ডালিম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ারকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান তাদের আদেশ মান্য করার নির্দেশনা প্রদান করেছিল। তিনি সাক্ষী লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে ভাের ৫.৩০ ঘটিকার পর রেডিও স্টেশন থেকে বের হতে দেখেছিলেন। পি.ডব্লিউ-১৪ সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, রাত্র ২.৩০ ঘটিকায় ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে বালুরঘাট সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডে
৫৭১
এবং ভাের ৫.৩০ ঘটিকায় রেডিও স্টেশনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের উপস্থিতি ছিল। পি.ডব্লিউ-২৪ তার সাক্ষ্যে আরাে প্রকাশ করেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত প্রায় ৩.০০/৩.১৫ ঘটিকায় মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ প্যারেড গ্রাউন্ডে যায়, যেখানে মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং অন্য অফিসারদের তাদের কমান্ডিং অফিসারের (সিও) সামনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ব্রিফ করে। মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট সৈয়দ ফারুক রহমান তাদেরকে বরখাস্তকৃত অফিসার মেজর ডালিম, মেজর রশিদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার এবং ক্যাপ্টেন মাজেদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ তাদেরকে ইউনিট থেকে গােলাবারুদ সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। তারা যখন ল্যান্সার ইউনিট থেকে যাত্রা শুরু করে একটি রাস্তায় থামে তখন পি.ডব্লিউ-২৪ সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, ক্যাপ্টেন মাজেদ এবং ক্যাপ্টেন মােস্তফাকে দেখতে পান। তিনি মেজর ডালিম, নূর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মাজেদ, ক্যাপ্টেন মােস্তফা এবং অন্যান্য অফিসারকে রেডিও স্টেশনে ঢুকতে দেখেন। পি.ডব্লিউ-৩৭ রেডিও স্টেশনের ভিতরে খােন্দকার মােশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ারকে দেখতে পান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ারের অনুমতি নিয়ে পি.ডব্লিউ-৩৮ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল ১০.০০ ঘটিকায় রেডিও স্টেশন ত্যাগ করেন। পি.ডব্লিউ-৪২ রেডিও স্টেশনের ভেতরে মেজর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) এবং অন্যদের দেখতে পান। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিকেলবেলা মেজর শফিউল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান এবং মেজর মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার)-কে বঙ্গভবনে দেখতে পান।
৩৯০. পি.ডব্লিউ-৪৮ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রেডিও স্টেশন এবং বঙ্গভবনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে দেখতে পান। বঙ্গভবনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের উপস্থিতি পি.ডব্লিউ-১৫, পি.ডব্লিউ-২০, পি.ডব্লিউ-৪৬ এবং পি.ডব্লিউ-৪৭ প্রমাণ করেছেন।
৩৯১. বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পি.ডব্লিউ-৬০ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদানকালে আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অস্থায়ীভাবে পদায়নকরণ এবং সেনা অফিসারদের চাকরি আত্তীকরণ সংক্রান্ত আর্মি হেডকোয়ার্টার কর্তৃক ইস্যুকৃত নথি উপস্থাপন করেন। পি.ডব্লিউ-৫৭ এবং পি.ডব্লিউ-৬০-এর সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
৩৯২. পি.ডব্লিউ-১৭ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে প্যারেডে এবং বিকেলবেলা রেজিমেন্ট প্যারেড গ্রাউন্ড এবং সন্ধ্যায় বালুরঘাটে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকে (আর্টিলারি) দেখেছিলেন। পি.ডব্লিউ-১৭-এর সাক্ষ্য থেকে প্রকাশ পায় যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদসহ অন্যরা একত্রে অবস্থানকালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল। মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) নির্দেশে কলাবাগান লেক সাইডে ৬টি কামান সংহত ও মােতায়েন করা হয় এবং তারই আদেশে পরবর্তী সময়ে কামানগুলাে ব্যারাকে ফেরত আনা হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) জড়িত থাকা বিষয়ে পি.ডব্লিউ-১৮ সাক্ষ্য প্রদান করেন। পি.ডব্লিউ-১৮-র সাক্ষ্য অনুযায়ী তারা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) আদেশে অস্ত্র ও গােলাবারুদ সংগ্রহ করেন এবং সকাল অনুমান ৭.০০/৭.৩০ ঘটিকায় গণভবনের উত্তর পাশে অবস্থান নেন। ইউনিটে ফেরার পূর্বে তারা শহরে ঘুরে বেড়ান। পি.ডব্লিউ-১৮ জবানবন্দিতে প্রকাশ
৫৭২
করেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ (আর্টিলারি) একত্রে অবস্থানকালে আর্টিলারি ট্রুপস এবং কামান সন্নিবেশের বিষয়ে প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে।
৩৯৩. পি.ডব্লিউ-২১ প্রকাশ করেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাত্রিবেলা এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৯.০০ ঘটিকায় তাদের প্যারেড ছিল। তাদের সি.ও মেজর খােন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা এবং অন্য অফিসাররা রাত ২.০০ ঘটিকায় প্যারেড গ্রাউন্ডে আসে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ বিশেষ জরুরি কাজের জন্য অস্ত্র ও গােলাবারুদ নেওয়ার জন্য তাদের আদেশ করে। উক্ত সাক্ষী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকেও (আর্টিলারি) শনাক্ত করেন। তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকে (আর্টিলারি) রাত ২.০০ ঘটিকায় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখেছিলেন। যখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) তাদেরকে অস্ত্র ও গােলাবারুদ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল তখন তিনি সেখানে মেজর বজলুল হুদা এবং অন্য অফিসারদের উপস্থিত থাকতে দেখেছেন। পি.ডব্লিউ-২২ আরাে বলেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে নতুন বিমানবন্দরে তাদের প্যারেড ছিল এবং প্যারেড গ্রাউন্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) নিশ্চিতভাবে উপস্থিত ছিল। তিনি বলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) নির্দেশক্রমে তারা ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাত প্রায় ৯.০০ ঘটিকায় প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌছান। এবং মধ্যরাত ১২.০০ ঘটিকা পর্যন্ত তারা রাত্রিকালীন প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাত প্রায় ২.৩০ ঘটিকার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ, সঙ্গে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) এবং মেজর বজলুল হুদা কিছু অপরিচিত অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং মেজর রশিদ তাদের বলে যে, প্রয়ােজনীয় গােলাবারুদসহ তাদেরকে একটি বিশেষ কাজে যেতে হবে। তিনি আরাে বলেন, তাকে পি.ডব্লিউ-২১-এর সাথে ধানমন্ডি ৩২ রােডসংলগ্ন ছােট খালের পাশে নামিয়ে দেওয়া হয়। উক্ত সাক্ষী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাত ২.৩০ ঘটিকায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) উপস্থিতি প্রমাণ করেন, যখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) ট্রুপকে ব্রিফ করছিল। পি.ডব্লিউ-২১ বলেন, পি.ডব্লিউ-২৭ তার সাথে ছিলেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) ছিল তাদের ব্যাটেল কমান্ডার। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) তাদের বলেছিল, বালুরঘাটে ল্যান্সার থেকে ১৩০/১৫০ জন সৈন্য এবং আর্টিলারি থেকে ৬০/৭০ জন সৈন্য নিয়ােজিত আছে। পি.ডব্লিউ-২৭ গ্রিন রােড হয়ে মিরপুর কলাবাগান রােডে অগ্রসর হন। পি.ডব্লিউ-২৭ এবং ২৩-কে কলাবাগানে নামানাে হয় এবং উক্ত রাস্তায় কোনাে যানবাহন প্রবেশ করতে
দিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) তাদের নির্দেশ দেয়। পি.ডব্লিউ-২৭ আপিলকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) নতুন বিমানবন্দরে রাত ৩.০০/৩.৩০ ঘটিকায় এবং ভােরবেলায় কলাবাগান এবং গণভবনে উপস্থিতি সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতের প্যারেডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) উপস্থিতি পি.ডব্লিউ-৩৪-এর সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত। তিনি ৬টি কামান নতুন বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে দেখেন। পি.ডব্লিউ-৩৪ কামানের পাশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকে (আর্টিলারি) দেখেন এবং যে রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করার জন্য ট্রপসকে নির্দেশ দেয়। পি.ডব্লিউ-৩৪ উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে হালকা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পান এবং পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) পাশ থেকে কামান থেকে শেল নিক্ষেপ করা হয়।
৫৭৩
৩৯৪. পি.ডব্লিউ-৩৫ তার জবানবন্দিতে বিবৃত করেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন। তিনি পি.ডব্লিউ-১৮-এর কাছে শুনেছিলেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) তার অধিকাংশ সৈন্যবাহিনী নিয়ে ধানমন্ডি গিয়েছেন। উপরােক্ত সাক্ষ্য থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদের (আর্টিলারি) দোষ প্রমাণে সাক্ষীগণ পরস্পরকে সমর্থন করেন।
৩৯৫, আপিলকারী মেজর বজলুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রমাণ এবং মামলার সমর্থনে প্রসিকিউশন একাধিক সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য মান্য করেন, যারা পি.ডব্লিউ-১, পি.ডব্লিউ-৪, পি.ডব্লিউ-৫, পি.ডব্লিউ-৬, পি.ডব্লিউ-৭, পি.ডব্লিউ-৮, পি.ডব্লিউ-৯, পি.ডব্লিউ-১১, পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৫, পি.ডব্লিউ-২১,
পি.ডব্লিউ-২২, পি.ডব্লিউ-৪৬, পি.ডব্লিউ-৪৭ এবং পি.ডব্লিউ-৬০ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
৩৯৬. পি.ডব্লিউ-১১ বলেন যে, রাতে প্যারেডের সময় আর্মি অফিসাররা পি.ডব্লিউ-১১-এর বাসার বিপরীতে অবস্থিত মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদের (ল্যান্সার) অফিসে যায়। সেখানে তিনি কয়েকজন অপরিচিত আর্মি অফিসারকে সাধারণ পােশাকে দেখতে পান এবং মধ্যরাত প্রায় ১২.০০ ঘটিকার সময় মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদকে (ল্যান্সার) সাধারণ পােশাকে কাউকে “Huda, come here” বলতে শােনেন। তখন হুদা অন্য একজনকে বলে “Dalim, wait”। তারপর পি.ডব্লিউ-১১-কে এসডিএম হিসেবে সরাসরি “kote”-এ (হালকা অস্ত্র রাখার স্থান) যেতে বলে অস্ত্র আনার জন্য। তদনুসারে তিনি রাত ৩.৩০ ঘটিকায় “kote”-এ গিয়ে ১৮টি কার্তুজ ম্যাগাজিনসহ একটি জি-৩ রাইফেল সংগ্রহ করেন। সৈন্যবাহিনী একাধিক দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) তার দলকে ব্রিফ করে এবং তাদেরকে গাড়িতে উঠতে বলে। পি.ডব্লিউ-১১ বর্ণিত দুজন ব্যক্তিকে সাধারণ পােশাকে দেখেছিলেন কিন্তু পরে তাদের আর্মি পােশাকে দেখেন, যাদের মধ্যে একজন মেজর এবং অন্যজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি রিসালদার সারােয়ারের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, তারা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এবং মেজর বজলুল হুদা। গাড়ির সাথে পি.ডব্লিউ-১১ রাত প্রায় ৪.৩০ ঘটিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের নিকটে আসেন, যেখান থেকে বাসভবনের দূরত্ব ৮০ ফুট হবে। তিনি তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের পাশ থেকে ভয়ংকর গুলির শব্দ শুনতে পান এবং ঠিক পরেই ‘hands up’, ‘hands up’ শব্দ শুনতে পান। তিনি ৩/৪টি কামানের শেল নিক্ষেপের শব্দও শুনতে পান। পি.ডব্লিউ-১১-কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটের বাইরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং বাইরে থেকে অথবা বাসভবন থেকে কাউকে বাইরে বা ভেতরে প্রবেশ করতে না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে তিনি মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এবং মেজর বজলুল হুদাকে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ রােডের বাসভবনে প্রবেশ করতে দেখেন।।
৩৯৭. পি.ডব্লিউ-১২ তার জবানবন্দিতে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে প্যারেডে তারা রাত ৩.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। তিনি তিনজন অপরিচিত অফিসারকে ইউনিফর্মে দেখতে পান। তারা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম এবং মেজর বজলুল হুদা। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদের ব্রিফ করে যে, তারা অবশ্যই রাজতন্ত্রকে সমর্থন করে না, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান পরের দিন রাজতন্ত্র ঘােষণা করতে যাচ্ছেন এবং সেজন্য সৈন্যবাহিনীকে তার ও অফিসারদের আদেশ মানতে হবে এবং যুদ্ধের প্রয়ােজনে “kote” থেকে গােলাবারুদ সংগ্রহের জন্য আরাে নির্দেশ প্রদান করে। পি.ডব্লিউ-১ মামলার এজাহারকারী এএফএম
৫৭৪
মুহিতুল ইসলাম, যিনি তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন, তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৮.০০ ঘটিকা থেকে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি সেখানে রাত কাটান। রাত অনুমান ৪.৩০-৫.০০ ঘটিকায় রাষ্ট্রপতি মহােদয় তাকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের (পিসিআর) সাথে যােগাযােগ করতে বলেন। তিনি পিসিআরের সাথে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত হতে না পারায় রাষ্ট্রপতি মহােদয় পি.ডব্লিউ-১-এর রুমে চলে আসেন। হঠাৎ তাদের জানালায় গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে রাষ্ট্রপতি মহােদয় সাহসিকতার সাথে গুলিবর্ষণ সম্পর্কে নিকটে উপস্থিত আর্মি এবং পুলিশ সেন্ট্রির নিকট অনুসন্ধান করেন। তখনই শেখ কামাল নিচে নেমে আসেন। ঐ সময় ৩/৪ জন খাকি এবং কালাে পােশাক পরিহিত আর্মি অফিসার বাসভবনে প্রবেশ করে এবং মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে লক্ষ করে গুলি করলে তিনি কক্ষে লুটিয়ে পড়েন। গুলিতে পি.ডব্লিউ-১ এবং বাসভবনের পুলিশ গার্ডের ইনচার্জ পি.ডব্লিউ-৫০ (ডিএসএ) আহত হন। মেজর বজলুল হুদা তাদেরকে আটক করে বাসভবনের প্রধান গেটের সামনে লাইন করিয়ে রাখায় তারা পালাতে পারেননি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশেষ শাখার একজন অফিসারকে গুলি করা হয়। তারপর কিছু আসামি গুলি করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে বাসভবনের উপরতলায় উঠে যায়। এজাহারকারী এবং পি.ডব্লিউ-৫০ বাসভবনের উপরতলা থেকে নারীদের কান্না এবং অবিরাম গুলির শব্দ শুনতে পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই শেখ নাসেরকে উপরতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনা হয় এবং তাদের অফিসসংলগ্ন বাথরুমে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপতির ছােট ছেলে শেখ রাসেল এবং গৃহকর্মী রামা ওরফে আবদুর রহমানকে নীচে নামিয়ে আনা হয়। শেখ রাসেল মায়ের কাছে যেতে চাইলে আসামিরা তাকে মায়ের ক নিয়ে যাবার কথা বলে এজাহারকারীর কাছ থেকে ছিনিয়ে দোতলায় নিয়ে যায় এবং তারপর পি.ডব্লিউ-১ আবারও গুলির শব্দ শুনতে পান। এ সময় মেজর বজলুল হুদা গেট থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানকে (ল্যান্সার) বলে “all are finished”, তখন পি.ডব্লিউ-১-এর উপলব্ধি হয় যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বাসভবনে থাকা অন্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঐ সময় ধানমন্ডি ৩২ রােডে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনের রাস্তায় ট্যাঙ্ক চলতে দেখা যায়। সকাল অনুমান ৮.০০ ঘটিকায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিলের মৃতদেহ বাসভবনে আনা হয়। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভােরবেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম মুজিব, শেখ কামাল, শেখ নাসের এবং বিশেষ শাখার একজন পুলিশ অফিসার এবং অন্যদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। পি.ডব্লিউ-১ তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে ঘটনার সময় এবং ঘটনার পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এবং মেজর বজলুল হুদাকে উপস্থিত থাকতে দেখেছেন। পি.ডব্লিউ-১-এর সাক্ষ্য থেকে এটাও প্রকাশ পায় যে, ১৯৭৩ সালে আরিচা ফেরিঘাটে পরিচয়ের মাধ্যমে পি.ডব্লিউ-১-এর সাথে মেজর বজলুল হুদার জানাশােনা হয়।।
৩৯৮. পি.ডব্লিউ-৪ জবানবন্দিতে বলেন, ৮ জন সৈন্যসহ তিনি ধানমন্ডি ৩২ রােডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে যান এবং ভােরবেলা যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছিলেন তখন লেকসাইড থেকে বাসভবন লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করা হয়। পি.ডব্লিউ-৪ মেজর বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এবং মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদকে (ল্যান্সার) রাষ্ট্রপতির বাসভবনের গেটে দেখতে পান। মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী বাসভবনের বারান্দায় আসে এবং সেখানে শেখ কামালকে দেখতে পেয়ে আসামি বজলুল হুদা স্টেনগান
৫৭৫
দিয়ে তাঁকে গুলি করে এবং পুনরায় অভ্যর্থনা কক্ষে চলে যায়। মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যদের গেটে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরীকে নিয়ে একত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের উপরতলায় গিয়ে গুলিবর্ষন শুরু করে। তারপর পি.ডব্লিউ-৪ দেখতে পান মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) বঙ্গবন্ধুকে নিচতলায় নিয়ে আসছে। পি.ডব্লিউ-৪ যখন মেজর বজলুর হুদার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী মেজর একেএম মহিউদ্দীনকে (ল্যান্সার) কিছু একটা বলে। ঐ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের কাছে কিছু একটা জানতে চাইলে জবাবে মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী তাদের স্টেনগান থেকে নির্দয়ভাবে তাঁর প্রতি গুলিবর্ষণ করে। তারপর মেজর বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) নিচে নেমে আসে এবং বাসভবনের দক্ষিণের গেট দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যায়। এরপর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (ল্যান্সার) ফিরে আসে এবং ট্যাঙ্ক থেকে নেমে মেজর বজলুল হুদা এবং অন্য অফিসারদের সাথে কথা বলে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মােঃ এ আজিজ পাশা, মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদের (ল্যান্সার) উপস্থিতিতে মেজর বজলুল হুদা সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাব জোয়ার্দারের ব্যাজ পরিবর্তন করে এবং পি.ডব্লিউ-৪-কে ধানমন্ডি ৩২ রােডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের দায়িত্বে রাখে। পরে তাকে কফিনের বক্স তৈরির জন্য মােহাম্মদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট ভােরবেলা ফজরের নামাজের পর আর্মি পরিবহন সাপ্লাই কোম্পানি ৯টি মৃতদেহ নিয়ে যায়। মেজর বজলুল হুদা সকাল অনুমান ৯.০০/১০.০০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃতদেহ একটি পিক-আপ ভ্যানে করে বিমানবন্দরে নিয়ে যায়।
৩৯৯, পি.ডব্লিউ-৫ জবানবন্দিতে বলেন, তিনি যখন কুমিল্লায় ওয়ান ফিল্ড আর্টিলারিতে ছিলেন তখন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ছিল কমান্ডিং অফিসার এবং মেজর বজলুল হুদা ছিল তার অ্যাডজুট্যান্ট। তাকে ঢাকায় বদলি করা হয় এবং তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সকাল ৬.০০ ঘটিকা পর্যন্ত গার্ড ডিউটি করাকালে ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৫.০০/৫.৩০ ঘটিকার সময় মেজ বজলুল হুদাকে ধানমন্ডি ৩২ রােডে মােটর সাইকেল চালাতে দেখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভাের অনুমান ৪.০০/৪.১৫ ঘটিকার সময় সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাব জোয়াদার সেখানে যায় এবং গার্ড চেক করে নতুন গােলাবারুদ দেওয়ার কথা বলে পুরাতন গােলাবারুদ নিয়ে নেয়। ভাের অনুমান ৪.৪০ ঘটিকার সময় পি.ডব্লিউ-৪ এসে দায়িত্ব বুঝে নেন এবং পতাকা উত্তোলনের সময় হঠাৎ দক্ষিণ দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয় এবং ৫/৭ মিনিট পর মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর
চৌধুরী খাকি ও কালাে পােশাক পরিহিত সৈন্যদের নিয়ে সেখানে আসে।
৪০০. পি.ডব্লিউ-৫ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বিকেলবেলা মেজর বজলুল হুদাকে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মেজর বজলুল হুদা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নূর চৌধুরীকে ৭/৮ জন সৈন্যসহ দেখতে পান।।
৪০১. পি.ডব্লিউ-৬ বলেন, তিনি ছিলেন কুমিল্লায় ওয়ান ফিল্ড আর্টিলারিতে। হাবিলদার পি.ডব্লিউ-৪, পি.ডব্লিউ-৫সহ তারা ২৫ জন সৈনিকের একটি দল ধানমন্ডি ৩২ নং রােডে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের প্রহরায়
৫৭৬
ছিলেন। গার্ড রুমে প্রবেশের সময় রাত্র অনুমান ৪.১৫/৪.৩০ ঘটিকায় পি.ডব্লিউ-৫ গার্ড রুমের সামনে তাদেরকে ফল ইন করিয়ে তাদের থেকে গােলাবারুদ নিয়ে নেন। তারপর পূর্ব দিক থেকে সেনাবাহিনীসহ ২/৩টি ট্রাক আসে এবং রাষ্ট্রপতির বাসভবনের ১/২ বাড়ি পশ্চিমে এসে থামে। তারা দেখেন যে, লেকের দক্ষিণ দিক থেকে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। তখন তারা বাসভবনের পূর্বে দেয়ালের পাশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ঐ সময় পি.ডব্লিউ-৬ দেখতে পান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে দোতলায় যাচ্ছেন এবং তারপর শেখ কামাল নিচে নেমে আসেন। ঐ সময় মেজর বজলুল হুদা, খাকি পােশাকে থাকা আরেকজন অফিসারসহ অন্যান্য অফিসার ও ল্যান্সারের সৈন্যরা কালাে পােশাকে সেখানে আসে এবং মেজর বজলুল হুদা এবং অন্য আরেকজন অফিসার শেখ কামালকে গুলি করলে তিনি অভ্যর্থনা কক্ষের দ্বারদেশের নিকট নিচে লুটিয়ে পড়েন। কিন্তু মেজর বজলুল হুদা তাঁকে আবার গুলি করে। তিনি (সাক্ষী) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃতদেহ সিঁড়িতে পড়ে থাকতে দেখেন। ঐ সময় মেজর বজলুল হুদা কোনাে সিভিলিয়ানকে বাসভবনে প্রবেশ করতে না দিতে রক্ষীদের আদেশ করে এবং প্রকৃতপক্ষে মেজর বজলুল হুদা রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পি.ডব্লিউ-৭ জবানবন্দিতে বলেন, তিনি কুমিল্লায় ওয়ান ফিল্ড রেজিমেন্টে যােগদান করেছিলেন, যেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে কাজ করছিল এবং মেজর বজলুল হুদা ছিল অ্যাডজুট্যান্ট। ঐ প্রাসঙ্গিক। সময়ে তাকে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে রক্ষীর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১/২ আগস্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সার রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম কর্তৃক শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে ঘােষণা পি.ডব্লিউ-৫ শুনতে পান। তিনি মেজর বজলুল হুদাকে মেজরের ব্যাজে এবং সুবেদার মেজর আব্দুল ওয়াহাব জোয়ার্দারকে লেফটেন্যান্ট ব্যাজে দেখতে পান।
৪০২. আসামি আপিলকারীর বিজ্ঞ কৌঁসুলি জনাব খান সাইফুর রহমান, জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং জনাব আল-মামুন একই সুরে উপস্থাপন করেন যে, নথিতে থাকা সাক্ষ্য সঠিকভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে আপিলকারী আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে অভিযােগ প্রমাণ করা হয়নি, যার ফলে ন্যায়বিচার লংঘিত হয়েছে। জনাব সাইফুর রহমান খান উপস্থাপন করেন যে, আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খানের দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য এবং স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ছিল না। যেহেতু তাদের বক্তব্য পুলিশ হেফাজতে দীর্ঘ রিমান্ড শেষে ভয় দেখিয়ে রেকর্ড করা হয়েছে এবং সেহেতু দ্বৈত বেঞ্চের বিজ্ঞ প্রথম বিচারক সঠিকভাবে তা উপলব্ধি করেছেন এবং তদনুসারে তিনি আসামিদের তর্কিত দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি বিশ্বাসযােগ্য নয় মর্মে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট উপস্থাপন করেন। যে, দ্বৈত বেঞ্চের বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক নথিতে থাকা বস্তুগত সাক্ষ্য সঠিকভাবে বিবেচনায় না নিয়ে ভুলভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ছিল এবং তদনুসারে উক্ত রূপ বক্তব্যকে আইনগত সাক্ষ্য হিসেবে কথিত দোষ স্বীকারকারী আসামি এবং অত্র মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেন। জনাব খান সাইফুর রহমান আরাে উপস্থাপন করেন। যে, আপিলকারী আসামিদের দ্বারা কোনাে ষড়যন্ত্র সংঘটিত হয়নি। বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট উপস্থাপন করেন। যে, দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি যেহেতু সত্য ও স্বেচ্ছাধীন ছিল না, সেহেতু সেগুলাে বিবেচনায় নেওয়া যাবে না।।
৪০৩. আপিলকারী আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট জনাব আবদুর রাজ্জাক খান উপস্থাপন করেন যে, হাইকোর্ট ডিভিশন দুটি সমান্তরাল রায় এবং দুটি স্বতন্ত্র
৫৭৭
রায় প্রদান করেন, যা আইনের দৃষ্টিতে কোনাে রায় নয়। তারপর তিনি উপস্থাপন করেন যে, ঘটনার ২১ বছর পর প্রাথমিক তথ্য বিবরণী রুজু করা হয়েছে, যেখানে ঘটনার বর্ণনায় অলঙ্করণ করা হয়েছে। তখন তিনি উপস্থাপন করেন যে, আপিলকারী আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। বিচারিক আদালত এবং সেই সাথে হাইকোর্ট ডিভিশনও রেকর্ডে থাকা সাক্ষ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা করেছেন এবং আপিলকারী আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
৪০৪. জনাব আবদুর রাজ্জাক খান আরাে উপস্থাপন করেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার খান, যিনি ১৫.০৮.১৯৭৫ খ্রি. থেকে ফরেন সার্ভিসে যােগদান করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ে সংযুক্ত ছিল এবং এর পূর্বে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্তীকৃত করা হয়েছিল এবং ২৯.১১.১৯৭৭ তারিখে তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয় তার সার্ভিস বই তদন্তকারী কর্মকর্তা পি.ডব্লিউ-৫৭ জব্দ তালিকা প্রদর্শনী-৯ প্রস্তুত করেছেন। যেহেতু শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিল না এবং কোনাে সাক্ষীই অপরাধ সংঘটনে তার অংশগ্রহণের বর্ণনা দেননি, সেহেতু অপরাধ সংঘটনে তার কোনাে সম্পৃক্ততা ছিল না এবং সেহেতু তার দোষী সাব্যস্তকরণ ও সাজা বাতিলযােগ্য।
৪০৫. আপিলকারী আসামি মেজর বজলুল হুদা এবং মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) পক্ষে বিজ্ঞ কৌসুলি জনাব আব্দুল্লাহ আল-মামুন জনাব সাইফুর রহমান খান এবং জনাব আবদুর রাজ্জাক খানের মতাে একই নিবেদন করেছেন। তিনি আরাে উপস্থাপন করেন যে, মেজর বজলুল হুদা কর্তৃক কথিত দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য এবং স্বেচ্ছাপ্রণােদিত নয়, যেহেতু সেটি প্রলম্বিত পুলিশ রিমান্ড শেষে গ্রহণ করা হয়েছিল। তিনি আরাে বলেন, যেহেতু ডিভিশন বেঞ্চের প্রথম বিচারক দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাধীন নয় বিবেচনায় অগ্রাহ্য করেছেন, দ্বিতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সেটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল না। তিনি নিবেদন করেন যে, ডিভিশন বেঞ্চের উভয় বিজ্ঞ বিচারক (সাক্ষ্য আইনের) ১০ ধারাকে অগ্রাহ্য করেছেন এবং আপিলকারী আসামির বিরুদ্ধে স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে ষড়যন্ত্র প্রমাণ করা যায় না। যেহেতু ষড়যন্ত্রটি ষড়যন্ত্রের পর্যায় ছাড়িয়ে গেলে এবং ষড়যন্ত্র অনুসারে মূল অপরাধ সংঘটিত হলে এভিডেন্স অ্যাক্টের ১০ ধারার বিধান প্রযােজ্য হয় না, যেটি বর্তমান মামলায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর হয়েছে।
৪০৬. রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ প্রসিকিউটর জনাব আনিসুল হক এবং বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মাহবুবে আলম একমত হয়ে নিবেদন করেন যে, বিচারিক আদালতের বিজ্ঞ দায়রা জজ এবং হাইকোর্ট ডিভিশনের তিনজন মাননীয় বিচারপতি নথিতে থাকা সাক্ষ্যের যথাযথ মূল্যায়নে বিষয়ে concurrent findings প্রদান করেছেন যে, আপিলকারী আসামিরা পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে অপরাধ করেছে। তাঁরা নিবেদন করেন যে, সাক্ষীদের সাক্ষ্য সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারীদের মধ্যে মেজর বজলুল হুদা, মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান ঘটনাস্থল ধানমন্ডি ৩২ রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে যায় এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের রেফারেন্স দিয়ে উল্লেখ করেন যে, মেজর বজলুল হুদা শেখ কামাল, শেখ নাসের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত একজন পুলিশ অফিসারকে গুলি করে হত্যা করে। তারা নিবেদন করেন যে, মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদও (ল্যান্সার) লেকের দিকে গুলিবর্ষণ করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করে এবং ঘটনাস্থলে থাকা অন্যদের হত্যা করে অপরাধ সংঘটনকর্মে অংশগ্রহণ করে। তারা সাক্ষীদের
৫৭৮
সাক্ষ্য তুলে ধরে এটি দেখান যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মূল ভূমিকা পালন করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং এভাবে সে পুরাে ঘটনাচক্র ও উপাখ্যানকে পরিচালিত করে, যা সংঘটিত হয় বালুরঘাট থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত; তারপর ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে এবং পরে ধানমন্ডি ৩২ রােডের ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে, রেস কোর্সের নিকট রেডিও স্টেশন এবং ঘটনার পর বঙ্গভবনে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ষড়যন্ত্র এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের ১১জন সদস্য এবং ২জন অফিসারকে হত্যার ঘটনায় মূল ভূমিকা পালন করে। তারা সকলে সাধারণ অভিপ্রায় বাস্তবায়নে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করেছিল।
৪০৭. লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) সম্পর্কে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্য উল্লেখে তারা নিবেদন করেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার সাধারণ অভিপ্রায়কে পূরণার্থে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রত্যক্ষ সাক্ষীরা আসামিদের পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানে দেখেছিলেন। তারা পরিশেষে উপস্থাপন করেন যে, সব আপিলকারী আসামি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং শেষে হত্যা করে। এটি বিদ্রোহ সংঘটনের কোনাে ষড়যন্ত্র ছিল না এবং পরিশেষে জনাব আনিসুল হক বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থাপন করেন যে, আপিলকারী আসামিরা প্রথমে বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডে সমবেত হয়ে নিজ নিজ নির্ধারিত গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে। তারা আরাে নিবেদন করেন যে, ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌছাতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যের আলােকে আপিলকারী আসামিদের ঘটনার পূর্ববর্তী আচরণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা-পরবর্তী তাদের আচরণ বিবেচনা করা প্রাসঙ্গিক এবং এই আপিলকারী আসামিরা হত্যার সাধারণ অভিপ্রায় পূরণার্থে স্ব-স্ব নির্ধারিত গন্তব্যে বেরিয়ে পড়েছিল। রেডিও স্টেশন ও বঙ্গভবনে উপস্থিতি ও ষড়যন্ত্রে এবং পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যায় তাদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে। তাঁরা উপস্থাপন করেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৭ ধারার কোনাে লঙ্ঘন হয়নি। যেহেতু, ডভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ তাদের মত প্রদানে সমভাবে বিভক্ত ছিলেন, সেহেতু কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধান অনুসারে মামলাটি তাদের মতামতসহ একই আদালতের তৃতীয় বিচারকের নিকট মতামতের জন্য পাঠানাে হয়, যিনি শুনানি গ্রহণান্তে মতামত প্রদান করেন, যা রায় বা আদেশে প্রতিফলিত হয়। আলােচনা এবং সাক্ষ্য পর্যালােচনায় আমার অভিমত হলাে, হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক প্রদত্ত রায় ও আদেশে আইনবহির্ভুত কিছুই হয়নি বরং আইনানুসারেই তা প্রদত্ত হয়েছে। সেহেতু, সব আপিল খারিজযােগ্য এবং ডেথ রেফারেন্স বহাল করা যেতে পারে।
৪০৮. বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারকের পরিসর ও এখতিয়ার : পাঁচটি ভিত্তি/যুক্তি বিবেচনায় লিভ টু আপিল মঞ্জুর করা হয়। প্রথম যুক্তি ছিল তৃতীয় বিচারকের পরিসর ও এখতিয়ার সম্পর্কিত।
৪০৯. এই মামলায় বিজ্ঞ দায়রা জজ ৫ আপিলকারীসহ মােট ১৫ জনকে আসামিকে পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এটি প্রতীয়মান হয় যে, বিজ্ঞ দায়রা জজ আসামিদের পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করলেও তার জন্য পৃথক কোনাে দণ্ড আরােপ করেননি। আসামি-আপিলকারীরা বিজ্ঞ দায়রা জজের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চে পৃথক পৃথক আপিল রুজু করে।
৫৭৯
ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারক উপস্থিত আপিলকারীগণসহ অন্য চারজনকে তাদের বিরুদ্ধে প্রণীত অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে প্রদত্ত দণ্ড ও সাজা বহাল রাখেন এবং ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দায়রা জজ প্রদত্ত রায় ও আদেশ বহাল রাখেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন মাজেদ সম্পর্কিত ডেথ রেফারেন্স বিজ্ঞ প্রিজাইডিং বিচারক পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার সাজা পরিবর্তিত আকারে ১২০বি ধারায় প্রদান করে মৃত্যুদণ্ড আরােপ করেন এবং তাকে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ৩৪ ধারার অধীনে প্রদত্ত সাজা বাতিল করেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি)সহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জন আসামির ডেথ রেফারেন্স না-মঞ্জুর করা হয় এবং তদনুসারে দ্বৈত বেঞ্চের প্রিজাইডিং বিচারক ক্রিমিনাল আপিল নম্বর ২৬১৭/১৯৮ মঞ্জুর করেন। যদিও। ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক দণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ জন আসামির সাজা বহাল রাখেন। ডিভিশন বেঞ্চের দুজন বিচারকের বিভক্ত রায়ের ফলে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ ও ৪২৯ ধারার বিধান অনুসারে তাদের মতামতসহ মামলাটি তৃতীয় জজ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিজ্ঞ বিচারক জনাব মােঃ ফজলুল করিমের নিকট প্রেরণ করা হয় এবং উক্ত বিচারক তার মতাে করে শুনানি অন্তে প্রদত্ত মতামতের আলােকে রায় ও আদেশ প্রদান করেন। আমরা ইতােমধ্যে লক্ষ করেছি যে, মেজর হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিজ্ঞ তৃতীয় বিচারক ০৬.০২.২০০১ তারিখে প্রদত্ত রায় ও আদেশে নিম্নবর্ণিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন:
“In view of the discussion above and equally divided opinion of the learned Judges of the division Bench, I am of the opinion that the cases of above 9 condemned prisoners over whom the learned Judges not being divided in opinion are not contemplated to be heard both under the provision of sections 378 and 429 of the Code of Criminal Procedure. But only the case of accused Abdul Mazed over whom there is difference as regard the conviction under the two separate sections of Penal Code and the case of those five other condemned prisoners over which the learned Judges are equally divided in opinion i.e. convicted by one learned Judge and acquitted by another learned Judge, are before this Court for an opinion. Upon delivery of the opinion by this Court, the Judgment and order shall follow such opinion in order to dispose of the entire death reference”
৪১০. পরবর্তীকালে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধান অনুযায়ী তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক ডেথ রেফারেন্সটি এবং সংশ্লিষ্ট আপিলগুলাে নিষ্পত্তি করেছিলেন। এটা প্রতিভাত হয়েছে যে, যে মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকে সে মামলাগুলাে তৃতীয় বিচারক কীভাবে নিষ্পত্তি করবেন সে সম্পর্কে উপমহাদেশের সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তগুলাে কোনাে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেনি। মামলার একটি দীর্ঘ ক্রম থেকে এটা আমাদের নজরে এসেছে যে, উপমহাদেশের সুপ্রীম কোর্ট মামলাগুলােকে দুটি বৃহৎ শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। প্রথমত, যেখানে সব আসামি। মতপার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ, যেখানে প্রথম বিজ্ঞ বিচারক সব আসামিকে খালাস প্রদান করেছেন এবং দ্বিতীয় বিজ্ঞ বিচারক সব আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। দ্বিতীয়ত, যখন সাক্ষ্য প্রমাণ বা আইনের বিভিন্ন বিধান অনুসারে দোষী সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে আইনগত বিষয়ের উপর অথবা কতিপয় আসামিকে
৫৮০
খালাস প্রদানের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের অবস্থান খুব পরিষ্কার নয়। যা হােক, Mohin Mondal os. State reported in 15 DLR 615 মামলায় পেনাল কোডের ৩০৪ এবং ১৪৮ ধারা এবং অন্যান্য বিধান অনুযায়ী ছয়জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের বিজ্ঞ সতীর্থ বিচারক শুধু আসামি মহিম মণ্ডলকে পেনাল কোডের ১৪৮ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে ভিন্নমত প্রদান করেছিলেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার অধীনে মামলাটি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সমীপে উত্থাপন করা হয়েছিল। এরপর তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক বিচারপতি মােরশেদ নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছিলেন :
“Although my learned brothers have both concurred in affirming the conviction of appellant Mohim Mondal under section 304 of the Pakistan Penal Code as well as the sentence pronounced upon him thereunder, the entire case with regards to this appellant also is now before me, inasmuch as there has been a disagreement with regard to his conviction under section 148 of the Penal Code.”
৪১১. বিচারপতি মােরশেদ নিম্নলিখিতভাবে আরাে পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছিলেন :
“Under the provisions of section 429, Criminal Procedure Code upon the difference of opinion between the Judges the case has to be laid before a Third Judge, and this necessarily means that the whole case has to be referred to the Third Judge and not merely the point or points on which the Judges differ. The Judgment or order shall follow the opinion given by the Third Judge.”
৪১২. যে আসামির সম্পর্কে মতপার্থক্য ছিল সে আসামি সম্পর্কিত সম্পূর্ণ মামলা তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সম্মুখে উত্থাপিত হবে, যিনি মামলায় তাঁর মতামত প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনা করতে কর্তব্যবােধ দ্বারা বাধ্য। State Vs. Abul Khair reported in 44 DLR 284 মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারক দুই আপিলকারীকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও সাজার বৈধতার প্রশ্নে সমভাবে বিভক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা আসামি আবুল খায়েরকে দোষী সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে একমত পােষণ করেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার অধীনে মামলাটি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সমীপে উত্থাপন করা হয়েছিল। তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক যে দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকগণ ভিন্নমত পােষণ করেছিলেন, তাদের মামলা বিবেচনা করেছিলেন।
৪১৩. ভারতীয় আদালতগুলাের সিদ্ধান্তসমূহের ক্ষেত্রে আমরা Dharan Singh os. State of uP reported in 1964 (1)CriLJ 78 মামলাটি উল্লেখ করতে পারি। সেখানে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে, ১২ আসামির একটি বিচারে বিচারিক আদালত ১০ জন আসামিকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১৪৯ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছিনে এবং ২ জন আসামিকে খালাস প্রদান করেছিলেন। রাষ্ট্র খালাসের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছিল এবং ১০ জন আসামি দোষী সাব্যস্তকরণের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছিল। ডিভিশন বেঞ্চের বিজ্ঞ বিচারকগণ তাদের সিদ্ধান্তে সমানভাবে বিভক্ত হয়েছিলেন। এর ফলে বিষয়টি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সমীপে উত্থাপিত হয়। তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক একজন আপিলকারীর খালাস বহাল রেখে এবং একজন আপিলকারীর খালাস রদ রহিত করে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণের
৫৮১
একজনের সাথে একমত পােষণ করেন। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট নিম্নলিখিতভাবে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার ব্যাপ্তি পরীক্ষা করেন :
“All that section 429 says in the opinion of the two Judges who disagree shall be laid before another Judge who, after giving such hearing, if any, as he thinks fit, shall deliver his opinion and the judgment or order should be in accordance with such opinion. Now it is obvious that when the opinions of the two Judges are placed before a Third Judge he would consider those two opinions and give his own opinion and the judgment has to follow the opinion of the Third Judge, consequently that opinion is based on the judgment of the Court. For all practical purposes the Third Judge must consider the opinions of his two colleagues and then give his own opinion but to equate the requirements with appeals against acquittals is not justified by provisions of section 429 or by principle or precedent.”
Babu Vs. State of UP, AIR 1965 SC 1467 মামলায় হাইকোর্টের দুজন বিচারকের মতামতের মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়। বিষয়টি তৃতীয় বিচারক সমীপে উত্থাপিত হয়। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারা এটি বিধৃত করে করে যে, তৃতীয় বিচারকের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কোন কোন বিষয়ের ওপরে, যদি থাকে, তিনি যুক্তি-তর্ক শ্রবণ করবেন এবং এটি ধরে নেবেন যে, তিনি যেভাবে যথার্থ মনে করেন সেভাবে ভিন্নতা নিরসনের ক্ষেত্রে স্বাধীন।
৪১৪. Hethubha Vs. State of Gujarat reported in AIR 1970 SC 1266 মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশনের দুজন বিচারকের মধ্যে মতের ভিন্নতা ছিল এবং যথারীতি বিষয়টি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সমীপে উত্থাপিত হয়। এই সিদ্ধান্তে বিচারপতি রয় (Ray, J) নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন :
“Counsel for the appellants contended firts that the Third learned Judge under section 429 of the Criminal Procedure Code could only deal with the differences between the two learned Judges and not with the whole case. The same contention had been advanced before Mehta J, in the High Court who rightly held that under section 429 of the Criminal Procedure Code the whole case was to be dealt with by him, The Court in Babu vs State of Uttar Pradesh) 1965) 2 SCR 771= (AIR 1965 SC 1467) held that it was for the Third learned Judge of decide on what points the arguments would be heard and therefore he was free to resolve the difference as he thought fit. Mehta J, here dealt with the whole case, Section 429 of the Criminal Procedure Code states that when the Judges comprising the Court of Appeal are equally divided in opinion, the case with their opinion thereon shall be laid before another Judge of the same Court and such Judge, after such hearing, it any, as he thinks fit, shall deliver his opinion, and the judgment and order shall follow such opinion”. Two
৫৮২
things are noticeable: first, that the case shall be laid before another Judge, and secondly, the judgment and order will follow the opinion of the Third learned Judge, It is, therefore, manifest that the Third learned Judge can or will deal with the whole case”.
৪১৫. AIR 1971 SC 1836-এ প্রকাশিত Union of India Vs. BN Anantha Padma Nabiah atlon 377
অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মতের ভিন্নতা ছিল। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সম্পূর্ণ মামলা বিবেচনা করতে পারতেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার ভাষা সুনির্দিষ্ট যে, যে বিচারকগণের সমন্বয়ে আপিল আদালত গঠিত তাঁদের মতামতসহ মামলাটি একই আদালতের অন্য একজন বিচারকের সমীপে উত্থাপিত হবে। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অপর উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, “রায় অথবা আদেশ হবে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের মতামত অনুসরণ করে”।
৪১৬. AIR 1981 SC 265-এ প্রকাশিত State of Andhra Pradesh Vs. PT Appaiah মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারকগণ সব অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্নমত পােষণ করেন। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সম্পূর্ণ মামলাটি নিয়ে কাজ করতে উপযুক্ত এবং তিনি শুধু অন্য দুজন
বিচারকের মধ্যে মতপার্থক্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে তাঁর রায় সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য নন।
৪১৭. Tanviben Pankajkumar Divetia vs. State of Gujarat reported in (1997) SCC 7 156 = AIR (1997) SC 2193 মামলায় ৪২৯ ধারার (নিজস্ব আইন) অভিন্ন বিধানের উপর ভারতের সুপ্রীম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিম্নরূপ :
“The plain reading of section 392 clearly indicates that it is for the Third Judge to decide on what points he shall hear arguments, if any, and it necessarily postulates that the Third Judge is free to decide the appeal by resolving the difference in the manner he thinks proper.” Citing the case of Babu vs State of UP reported in AIR 1966 SC 1467 it has been held that where the Third Judge did not consider it necessary to decide a particular point on which there had been difference of opinion between the two Judges, but simply indicated that if at all it was necessary for him to come to a decision on the point, he agreed with all that had been said about by one of the two Judges, such decision was in conformity with law. That the Third Judge is free to decide the appeal in the manner he thinks fit has been reiterated in Hethubha vs State of Gujarat reported in AIR 1948 All 237 and Union of India vs BN Anantha Padma Nabiah reported in AIR 1971 SC 1836. In State of Andhra Pradesh vs PT Appaiah reported in AIR 1981 SC 265 it has been held by this Court that even in a case when both the Judges had held that the accused was guilty but there was difference of opinion as to the nature of offense committed by the accused, it was open to the Third Judge to decide the appeal by holding that the accused was not guilty by considering the case on merit”.
৫৮৩
৪১৮. তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের পরিধি এবং এখতিয়ার নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট Sajjan Singh vs. State of MP reported in (1999) 1 SCC 315 Tom Forro Gaspar প্রদান করেন :
“It is the Third Judge whose opinion matters; against the judgment that follows there from that an appeal lies to this Court by way of special leave petition under Article 136 of the Constitution or under Article 134 of the Constitution or under section 379 of the Code. The Third Judge is, therefore, required to examine the whole of the case independently and it cannot be said that he is bound by that part of the two opinions of the two Judges comprising the Division Bench where there is no difference. As a matter of fact the Third Judge is not bound by any such opinion of the Division Bench. He will not hear the matter as he is sitting in a three-Judge Bench where the opinion of the majority would prevail.”
৩১৯. Mattar vs. State of UP (2002) 6 SCC 460 মামলায় যেখানে মাত্র একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ছিল, ভারতের সুপ্রীম কোর্ট পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে-
“The Judges in different dissenting opinions have given detailed reasons, for and against the acceptance of the version as deposed by these eyewitnesses. The Third learned Judge, under these circumstances, was required to independently examine the matter and express his opinion. It is not permissible to only or merely indicate the agreement with one or the other view without giving reasons therefore.”
৩২০. Sarat Chandra Mitra vs. Emperor reported in ILR 38 Cal 202 মামলায় ভারতের হাইকোর্ট
ডিভিশন পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে-
“Two points are worthy of note in connection with this section: first, that what is laid before another Judge is the “case” and, secondly, what the judgment or order follows is the opinion delivered by such Judge. I am not now concerned with the question of the trial of two prisoners with regard to one of whom the Judges composing the Court of Appeal may agree in their opinion, while as regards the other the Judges may be equally divided in opinion. In such a contingency it is quite possible to maintain the view that, upon a reasonable interpretation of the term “case” what has to be laid before another Judge is the case of the prisoner as to whom the Judges are equally divided in opinion. I am now concerned only with the contingency in which the Judges of the Court of Appeal are equally divided in opinion upon the question of guilt of one accused person, though upon certain aspects of the case they may be
৫৮৪
agreed in their view. In such a contingency, what is laid before another Judge, is not the point or points upon which the Judges are equally divided in opinion, but the “case”. This obviously means that, so far as the particular accused is concerned, the whole case is laid before the Third Judge, and it is his duty to consider all the points involved, before he delivers his opinion upon the case. The judgment of order follows such opinion which need not necessarily be the opinion of the majority of the three Judges; for instance, at the original hearing of the appeal, one Judge may consider the prisoner not guilty, another Judge may consider him guilty under one section of the Indian Penal Code, and liable to be punished in a certain way; the Third Judge may find him guilty under a different section and pass such sentence as he thinks fit. It is this last opinion which prevails, subject to the provisions of section 377 of the Criminal Procedure Code in the case of confirmation of sentences of death.“
৪২১. Ahmed Sher vs. Emperor reported in AIR 1931 Lah 513 মামলায় কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে মতপার্থক্য ছিল। এখানে মােট ৪১ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি ছিল। প্রথম বিচারক ৯ জন আসামিকে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩২৫, ১৪৯ এবং ১৪৭ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং অন্যদের খালাস প্রদান করেন। বিচারকদ্বয়ের উভয়েই সব অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস প্রদান করেছিলেন। ৩০২ ধারার অধীনে একটি স্বতঃপ্রণােদিত আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সমীপে উত্থাপিত হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক শুধু সেই আসামিদের মামলার প্রতি দৃষ্টি দিবেন, যে আসামিদের ক্ষেত্রে দুজন বিচারক ভিন্ন মত প্রদান করেছিলেন। যে আসামিদের ক্ষেত্রে বিচারকগণ ভিন্নমত প্রদান করেছিলেন তাদের মামলা বিচার করতে গিয়ে তৃতীয় বিচারক শুধু ভিন্ন মত সম্পর্কে নন, বরং সকল বিষয়েই পর্যালােচনা করতে পারেন।
৪২২. Nernai Mondal vs. State of West Bengal reported in AIR 1966 Calcutta 194 মামলায় কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিচারকদ্বয় ভিন্নমত প্রদান করেছিলেন এবং যথারীতি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে একজন তৃতীয় বিচারকের নিকট মামলাটি পাঠানাে হয়েছিল। বিচারপতি মুখার্জি পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছিলেন যে,
— “What is laid before the Third Judge is “the case” itself and not merely the points of difference or the views of difference. The case with the differing opinion is placed before the Third Judge. In other words, it is the duty of the Third Judge to decide “the case” and not merely the points on which the Judges differed. No doubt in doing so, the two differing opinions have to be considered by the Third Judge….
At the same time, the word case” normally would mean in the case of a number of appellants, the case of each appellant considered separately. In other words, if out of three, two Judges of the Division Bench agree on one and disagree in respect of other two appellants, then the “case” that is referred to
৫৮৫
under section 429 of the Code of Criminal Procedure is the case not of the appellant on which they agree but the appellants on whom they had disagreed. The case in such a context means the case in respect of the appellants on which the two Judges are equally divided. The words “equally divided” in section 429 of the Criminal Procedure Code seem to support that construction.”
৪২৩. Bhagat Ram vs. State of Rajasthan reported in AIR 1972 SC 1502 tot 499791 glu
অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ছিল। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে বিষয়টি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সমীপে উত্থাপিত হয়েছিল। ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এই মত পােষণ করেন যে-
“In view of the fact that the State appeal against the acquittal of Bhagat Ram for offenses under section 120B, 218, 347 and 389, IPC had been dismissed by the Division Bench, it was, in our opinion, not permissible for the Third Judge to reopen the matter and convict Bhagat Ram for offenses under sections 347, 389 and 120B IPC. The matter had been referred under section 429 of the Code of Criminal Procedure to Jagat Narayan, J because there was a difference of opinion between Tyagi, J and Lodha, J regarding the correctness of the acquittal of Bhagat Ram for offenses under section 161, IPC and section 5(1) (a) of Prevention of Corruption Act. Jagat Narayan, J could go only into this aspect of the matter and arrive at his conclusion.”
৪২৪. সুপ্রীম কোর্ট আরাে অভিমত পােষণ করেন যে-
“The present was not a case wherein the entire matter relating to the acquittal or conviction of Bhagat Ram had been left open because of a difference of opinion between the two Judges. Had that been the position, the whole case relating to Bhagat Ram could legitimately be considered by Jagat Narayan, J and he could have formed his own view of the matter regarding the correctness of the order of acquittal made by the trial Judge in respect of Bhagat Ram. On the contrary, as mentioned earlier, an express order had been made by the Division Bench upholding the acquittal of Bhagat Ram for offenses under sections 120B, 218, 347 and 389, IPC and the State appeal in that respect had been dismissed. The above decision of the Division Bench was binding upon Jagat Narayan, J and he was in error in convicting Bhagat Ram for offenses under section 120B, 218 and 347, IPC despite the order of the Division Bench. It was, in our opinion, not within the competence of the learned Judge to reopen the matter and pass the above order of conviction in the face of the earlier order of the Division Bench.”
৪২৫. State of UP vs. Dan Singh reported in (1997) 3 SCC 747 মামলায় কয়েকজন অভিযুক্তের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ছিল। বিচারপতি কিরপল (Kirpal, J) পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে-
৫৮৬
“What is clearly evident is that appeal is finally disposed of by the judgment and order which follows the opinions of the Third Judge. This being so special leave petition could only have been filed after the appeal was disposed of by the High Court vide its final order dated 19.5.1998. Even though the said order purports to relate only to ten out of thirty-two accused’s the said order has to be read along with the earlier order of 15.4.1987 and, in law, the effect would be that the order dated 19.5.1998 will be regarded as the final order whereby the appeal of the State was partly allowed, with only two of the thirty-two accused being convicted under section 325 read with section 34, IPC, while all the other accusers were acquitted.”
৪২৬. Granude Venkata Vs. Corporation of Calcutta reported in 22 CVVN 745 মামলায় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে নির্দেশিত মামলায় তৃতীয় বিচারক জোরালাে কোনাে হেতু না থাকলে যেসব বিষয়ে উভয় বিচারক একমত পােষণ করেছিলেন সেসব বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করবেন না।
৪২৭. Mohammed Shafi Vs. Crown reported in 6 DLR (WP) 104 মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিজ্ঞ বিচারকের মধ্যে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ছিল এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে বিষয়টি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক সমীপে উত্থাপিত হয়। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, যে বিচারকের সম্মুখে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারার অধীনে মামলাটি উত্থাপিত হয়েছে সেই তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের কর্তৃত্ব চর্চা করেন এবং সে কারণে তিনি একক বিচারক হিসেবে গণ্য না হয়ে বেঞ্চ হিসেবে গণ্য হবেন। একক বিচারক দ্বারা মামলাটি বিচার করা হয়নি, মামলাটি এমন যা তিনজন বিচারক কর্তৃক বিচার করা হয়েছে, যদিও ভিন্নমত প্রদানকারী বিচারকদ্বয়ের পরবর্তী পর্যায়ে তৃতীয় বিচারক বিচার করছেন।
৪২৮. Abdur Raziq Vs. State reported in 16 DLR (WP) 73 মামলায় এই অভিমত পােষণ করা হয়েছে
যে, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ ও ৪২১ ধারার সরল পাঠ এটাই প্রকাশ করে যে, যে বিচারকের নিকট মামলাটি প্রেরিত হয়েছে সেই তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের উভয় বিচারকের মধ্যে কারও মতামতের সাথে একমত পােষণ করার প্রয়ােজন নেই। তিনি একটি স্বাধীন মতামত প্রদান করে সিদ্ধান্ত দেবেন। ৪২৯. আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তসমূহসহ উপমহাদেশের মামলার নজিরের সতর্ক নিরীক্ষণ থেকে এটা দেখা যায় যে, যখন আপিল আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকবৃন্দ তাঁদের মতামতের ক্ষেত্রে সমভাবে বিভক্ত হন এবং বিষয়টি যখন তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সমীপে উত্থাপিত হয়, তখন বিচারকদ্বয়ের মতামতসহ মামলাটি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধান অনু আদালতের তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকের সমীপে উপস্থাপন করা হয়। এই বিচারক শুনানি অন্তে যেরূপ উপযুক্ত মনে করেন সেইরূপ মতামত প্রদান করবেন এবং রায় অথবা আদেশ এইরূপ মতামতকে অনুসরণ করবে। “তিনি যেরূপ উপযুক্ত মনে করেন সেইরূপ শুনানি (যদি থাকে) অন্তে”- এই বাক্যটি প্রকাশ করে যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক কীভাবে মামলার শুনানি করবেন এটা সম্পূর্ণরূপে তার স্বেচ্ছাধীন এখতিয়ার।
৪৩০. তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক তাঁর বিবেচনায় যেভাবে উপযুক্ত মনে করেন সেভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৪২৯ ধারা অনুযায়ী তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক কোন
৫৮৭
বিষয়ে যুক্তি-তর্ক শ্রবণ করবেন তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন। “যদি কোনাে” (“if any) শব্দগুচ্ছটি এটি ধরে নেয় যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকদের মধ্যকার মতপার্থক্য সমাধানের ক্ষেত্রে স্বাধীন। উপমহাদেশের নজির আইন, বিশেষ করে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তসমূহের সতর্ক পর্যালােচনা থেকে গ্রহণযােগ্য দৃষ্টিভঙ্গি এটি যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারকই সিদ্ধান্ত নিবেন তিনি কোন কোন বিষয়ে যুক্তি-তর্ক শ্রবণ করবেন; তিনি সম্পূর্ণ বিষয় নাকি ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণের মধ্যে যে বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে শুধু সেই সব বিষয় শ্রবণ করবেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধান থেকে “রায় এবং আদেশ এই মতামত অনুসরণ করবে” (“judgment or order shall follow such opinion”)- এই বাক্যটি এ ধারণা দেয় যে, সেটাই তৃতীয় বিচারকের সিদ্ধান্ত যা আদালতের রায়। অন্যভাবে বললে আদালতের রায় তৃতীয় বিচারকের মতামতের ভিত্তিতেই প্রস্তুত হয়।
এই মামলায় আমরা দেখেছি যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক বিচারপতি মােহাম্মদ ফজলুল করিম প্রাথমিকভাবে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণের মধ্যে যেসব অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ছিল সেই সব অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে আপিল শুনানির জন্য কতিপয় আপিলকারীর পক্ষে পৃথকভাবে দাখিলি দরখাস্ত শ্রবণ করেছিলেন। ইতােমধ্যে দেখা গেছে যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক এই সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দরখাস্ত শুনানি অন্তে ৬.০২.২০০১ তারিখে এই মর্মে এক পৃথক আদেশ প্রদান করেন যে, ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণ যে ৯ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বন্দির বিষয়ে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে বিভক্ত হননি, সেই সব কারাবন্দির মামলা কোড অব। ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ উভয় ধারার বিধান মতে শুনানির জন্য বিবেচিত হবে না, এবং যথারীতি তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকগণের মধ্যে যে ছয়জন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল সেই ছয়জনের শুনানি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মামলার সব বিষয় বিবেচনা করে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর মােঃ বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, বিই উ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর এ কে এম মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচবিএম নূর চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মােঃ আজিজ পাশা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহামেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ সম্পর্কিত ডেথ রেফারেন্স কনফার্ম করে সাজা বহাল রাখেন, এবং যথারীতি আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান কর্তৃক দাখিলি ফৌজদারি আপিল নম্বর ২৬১৬/১৯৯৮, আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান কর্তৃক দাখিলি ফৌজদারি আপিল নম্বর ২৬০৪/১৯৯৮, আসামি মেজর মােঃ বজলুল হুদা কর্তৃক দাখিলি ফৌজদারি আপিল নম্বর ২৬১৩/১৯৯৮ এবং আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক দাখিলি ফৌজদারি আপিল নম্বর ২৬১৭/১৯৯৮ খারিজ হয় কিন্তু আসামি ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাসেম, মেজর আহাম্মদ শরিফুল হােসাইন ওরফে শরিফুল ইসলাম এবং ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসারের সাথে সম্পর্কিত ডেথ রেফারেন্স নম্বর ৩০/১৯৯৮ প্রত্যাখ্যাত হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারার বিধান যথাযথ অনুসরণের পর যেসব বিষয়ের উপর যুক্তি-তর্ক শ্রবণ করা আবশ্যক ছিল, সেসব বিষয় নিষ্পত্তি করেছেন এবং ঐ বিষয়ে তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক যেরূপ উপযুক্ত মনে করেছেন সেইরূপে মতপা ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন। সুতরাং আমরা তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক প্রচারিত রায় এবং আদেশের মধ্যে কোনাে অবৈধতা পাই না। নথি পাঠ করে আমরা আরাে দেখতে পাই যে, তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৭৮ এবং ৪২৯ ধারা অনুসারে রায় প্রদান করেছেন। সুতরাং, এই প্রসঙ্গে আসামি-আপিলকারীগণ পক্ষের যুক্তিতে আমরা কোনাে সারবত্তা খুঁজে পাই না।
৫৮৮
৪৩১. এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) রুজু করার ক্ষেত্রে বিলম্ব- প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) রুজুকরণে বিলম্ব দ্বিতীয় হেতুর বিষয়ে আমার বিজ্ঞ ভ্রাতা বিচারপতি মােঃ তফাজ্জল ইসলাম তার রায়ে ঘটনাসমূহ, প্রাসঙ্গিক আইনসমূহ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে পরিবারের সদস্যগণ ও আত্মীয়স্বজনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর বাংলাদেশে বিরাজমান পটভূমি ও দৃশ্যপটসহ এফআইআর দায়েরে বিলম্বের কারণসমূহ বিশদভাবে আলােচনা করেছেন। আমার বিজ্ঞ ভ্রাতা তার রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকগণের স্ব-স্ব মতামত বিবেচনা করেছেন এবং দেখেছেন যে, বিজ্ঞ বিচারকগণ রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বিলম্বের ব্যাখ্যা বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে জোরালাে যুক্তি প্রদান করেছেন। তদনুসারে আমার বিজ্ঞ ভ্রাতা দেখেছেন যে, এফআইআর রুজুতে বিলম্বের পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। বিষয়বস্তুর এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি আমার বিজ্ঞ ভ্রাতার সাথে সম্পূর্ণ একমত।
৪৩২. বিদ্রোহের ফলে হত্যা অথবা নিছক হত্যা- তৃতীয় যে হেতুর ভিত্তিতে লিভ মঞ্জুর হয়েছিল তা মামলাটি বিদ্রোহের ফলে হত্যা নাকি নিছক হত্যা সম্পর্কিত। ৪৩৩. আসামি-আপিলকারী পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবীগণের নিবেদনের জবাবে রাষ্ট্র-রেসপন্ডেন্ট পক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব আনিসুল হক নিবেদন করেছেন যে, লিভ মঞ্জুরের আদেশে এটা বিদ্রোহের ফলে হত্যা নাকি নিছক হত্যা- এই সম্পর্কিত বিবৃতির ভুল ধারণা করা হয়েছে। কেননা প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং নথিতে রক্ষিত বিষয়বস্তুর পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ থেকে এটি একটি হত্যা মামলা বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিদ্রোহের ফলে হত্যার কোনাে মামলা ছিল না এবং এই কারণে বিদ্রোহ এবং হত্যা দুটি পৃথক অপরাধ। ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টে বিদ্রোহের অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। যা হােক, ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের পঞ্চম অধ্যায় আর্মি অ্যাক্টের অধীন অপরাধসমূহ এবং বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার জন্য শাস্তির বিধান নির্দেশ করে। ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের ৩১ ধারায় বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। এটা দেখা যায় যে, নেভী অর্ডিন্যান্স ১৯৬১-এর ৩৫ ধারায় বিদ্রোহের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, যা নিম্নরূপ :
“35. In this Ordinance, mutiny means a combination between two or more persons subject to service law, or between persons two at least of whom are subject to service law
(a) to overthrow or resist lawful authority in the armed forces of Bangladesh or any forces co-operating therewith or in any part of any of the said forces;
(b) to disobey such authority in such circumstances as to make the disobedience subversive of discipline, or with the object of avoiding any duty or service, or in connection with operations against the enemy; or
(c) to impede the performance of any duty or service in the armed forces of Bangladesh or in any forces co-operating therewith, or in any part of any of the said forces.”
৪৩৪. পেনাল কোডের ৩০০ ধারায় হত্যার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যখন কোনাে বিদ্রোহের অপরাধ সংঘটিত হয় তখন এটা শুধু কোর্ট মার্শাল দ্বারা বিচার্য। আর্মি অ্যাক্টের পঞ্চম অধ্যায়ে হত্যার অপরাধের
৫৮৯
সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। আর্মি অ্যাক্টের ৩(২) ধারা অনুসারে সিভিল অপরাধ বলতে ফৌজদারি আদালত কর্তৃক বিচার্য বাংলাদেশে সংঘটিত কোনাে অপরাধকে বুঝায়। এই আইনের ৮(৭) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত অথবা সরকারের অনুমতিক্রমে অন্য কোথাও প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার আদালতকে ফৌজদারি আদালত বলা হয়েছে। আর্মি অ্যাক্টের ৫৯ ধারায় সিভিল অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই আইনের ৫৯ ধারার ১ উপধারা বিধৃত করে যে, এই আইন দ্বারা বাধ্য ব্যক্তি, যিনি কোনাে সিভিল অপরাধ সংঘটন করেন, তিনি এই আইনের অধীন একটি অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবেন, এবং দোষী সাব্যস্ত হলে এই আইনের বিধান অনুসারে সাজাপ্রাপ্ত হবেন। কিন্তু, ৫৯ ধারার ২ উপধারা বিধৃত করে যে, এই আইন দ্বারা বাধ্য কোনাে ব্যক্তি যদি এই আইন দ্বারা বাধ্য নন এমন কোনাে ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যার অপরাধ সংঘটন করেন, তবে তার বিচার এই আইন দ্বারা হবে না, যদি তিনি নিম্নলিখিত কোনাে একটি অবস্থায় অপরাধ সংঘটন করেন:
ক) সক্রিয় সেবায় থাকাকালীন, অথবা
খ) বাংলাদেশের বাইরে কোনাে জায়গায়, অথবা
গ) সীমান্তবর্তী কর্মস্থলে।
৪৩৫. এর মানে হচ্ছে যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিসমূহ যদি আর্মি অ্যাক্ট দ্বারা বাধ্য না হন, এবং অপরাধ সংঘটনের সময়অপরাধীরা যদি সক্রিয় সেবায় থেকে আর্মি অ্যাক্ট দ্বারা বাধ্য না হন, তবে একটি হত্যা মামলার বিচার আর্মি আইনের অধীনে হতে পারে না। আর্মি অ্যাক্টের ৮(১) ধারা অনুযায়ী সক্রিয় সেবা বলতে সেই সময়কে বােঝায় যে সময়ে এই রকম ব্যক্তি সামরিক অভিযানে অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়ােজিত কোনাে বাহিনীতে সংযুক্ত থাকে, অথবা শত্রু দ্বারা দখলকৃত একটি স্থানে মার্চলাইনে থাকে, অথবা একটি বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নিয়ােজিত কোনাে বাহিনীর একটি অংশ হয়।
৪৩৬. এটা বলা যথেষ্ট যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কেউ আর্মি আইনের ৮(১) ধারায় সংজ্ঞায়িত সক্রিয় সেবায় নিয়ােজিত ছিল না। তদনুসারে, যেহেতু ধারায় উল্লিখিত তিনটি বিকল্প শর্তের কোনােটাই পূরণ হয়নি, সেহেতু ৫৯ ধারার (২) উপধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিগণের বিচার আর্মি আইনের অধীনে হতে পারে না।।
৪৩৭. অধিকন্তু, ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের ৯৪ ও ৯৫ ধারাদ্বয় কোর্ট মার্শাল এবং ফৌজদারি আদালতের সম-এখতিয়ারের বিষয়টি নিয়ে আলােচনা করে। ৯৪ ধারা বিধৃত করে যে, যখন কোনাে সিভিল অপরাধের ক্ষেত্রে একটি কোর্ট মার্শাল এবং একটি সাধারণ ফৌজদারি আদালতের যৌথ এখতিয়ার থাকে, তখন কোন আদালতের সম্মুখে কার্যধারা রুজু করা হবে তা নির্ধারণের স্বেচ্ছাধীন এখতিয়ার সেনাবাহিনীর নির্ধারিত কর্মকর্তার রয়েছে। যদি তিনি সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, মামলাটি কোর্ট মার্শাল সম্মুখে রুজু হবে তবে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সামরিক হাজতে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করবেন। যা হােক, আর্মি অ্যাক্টের ৯৫ ধারাধীন একটি মামলায় যখন একটি এখতিয়ারসম্পন্ন ফৌজদারি আদালত মনে করেন যে, কোনাে সিভিল অপরাধ সম্পর্কিত কার্যধারা এই আদালতে রুজু করা উচিত, তখন আদালত একটি লিখিত নােটিশ দ্বারা নির্ধারিত কর্মকর্তাকে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আসামি হস্তান্তর করতে এবং সরকারের নিকট প্রেরিত রেফারেন্স চলমান থাকাকালীন কার্যধারা মুলতবি রাখতে বলতে পারেন। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরপূর্বক সামরিক আদালতে বিচার্য ব্যক্তি সম্পর্কে বিধানসমূহ নির্দেশ করে।
৫৯০
৪৩৮. বিগত ২৪.০৩.১৯৯৭ তারিখের ১১ নম্বর আদেশের পাঠ থেকে দেখা যায়, বিজ্ঞ দায়রা জজ কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর রুল (মিলিটারি অফেন্ডারস) ১৯৫৮-এর ২ বিধির অধীন চিফ অফ স্টাফ আর্মি বরাবর দায়রা আদালতে বিচারসম্পর্কিত একটি নােটিশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ দায়রা জজ প্রদত্ত বিগত ৩.৪.১৯৯৭ তারিখের ১২ নম্বর আদেশ থেকে আরাে দেখা যায়, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের আর্মি আইনের অধীন দায়রা আদালতে বিচার করতে কোনাে বাধা নেই মর্মে জজ অ্যাডভােকেট জেনারেল ডিভিশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কার্যালয়, থেকে ইস্যুকৃত বিগত ২.০৪.১৯৯৭ তারিখের ৫৫ ২৫/২/ জে এ জি নম্বরের একটি স্মারকমূলে জানানাে হয়েছিল।
৪৩৯, অত্র মামলায় দেখা যায় যে, বিজ্ঞ দায়রা জজ এই মামলা নিয়ে অগ্রসর হওয়ায় পূর্বে উপরােল্লিখিত আদেশসমূহ প্রদান করার মাধ্যমে আইনের সব বিধান প্রতিপালন করেছেন এবং অত্র মামলায় নির্ধারিত কর্মকর্তা সামরিক আদালতের সম্মুখে বিচার অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর স্বেচ্ছাধীন এখতিয়ার প্রয়ােগ করেননি।
৪৪০. এই মামলায় জনাব আনিসুল হক Joginder Singh os. Himachal Pradesh reported in AIR 1971 SC 500 মামলাটি নজির হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেখানে আসামি, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ল্যান্সনায়েক, তার বিরুদ্ধে দশ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযােগ আনা হয়। সে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩৭৬ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং সামরিক আদালত দ্বারা নয়। সুপ্রীম কোর্ট সম্মুখে এই যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল যে, আদালতের বিচারের পূর্বে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৫৪৯ ধারা প্রতিপালন করা হয়নি। সুপ্রীম কোর্ট এই যুক্তিতে আপিল খারিজ করেন যে, নির্ধারিত কর্মকর্তা কর্তৃক বিচারের ফোরাম সম্পর্কিত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগের অনুপস্থিতিতে সামরিক আইন অবশ্যই আইনের বিধান অনুসারে সাধারণ এখতিয়ার প্রয়ােগকারী ফৌজদারি আদালতের মতাে হবে না।
৪৪১. Balbir Singh os. Punjab reported in 1995 1 SCC 90 মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময় বিমানবাহিনীর সক্রিয় সেবায় ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা কোন কোর্টের সম্মুখে কার্যধারা রুজু করা উচিত ছিল এই মর্মে তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করেননি। অভিযুক্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০২ এবং ১৪৯ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়। সুপ্রীম কোর্ট আপিল খারিজ করে পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন যে, বিমানবাহিনী আইন দ্বারা বাধ্য এবং সক্রিয় সেবায় নিয়ােজিত থাকাকালীন একটি অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির বিচারের ফোরাম বেছে নেওয়ার ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষের হাতে এবং এ কারণে, একটি নির্দিষ্ট ফোরাম দ্বারা বিচার দাবি করার অধিকার অভিযুক্ত ব্যক্তির নেই।
৪৪২. রাষ্ট্রপক্ষ অত্র মামলায় ৬১ জন সাক্ষীকে পরীক্ষা করেছিল। তাদের কাউকেই বিদ্রোহ চলাকালীন হত্যা সম্পর্কে আসামিপক্ষে জেরা করা হয়নি। নথি থেকে দেখা যায় যে, আসামিপক্ষ কর্তৃক বিচারিক আদালতে, বিলম্বিত পর্যায়ে হাইকোর্ট বিভাগে ডেথ রেফারেন্স এবং স্ব স্ব আপিল শুনানির সময় এ রকম কোনাে অজুহাত উত্থাপিত হয়নি।
৪৪৩. Haider Ali Khan vs. State reported in 1994 BLD (AD) 270 = 47 DLR (AD) 47 মামলায় সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছিলেন যে, নিম্ন আদালতের এখতিয়ার নিয়ে আপিলে বিলম্বিত পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না। একই নীতি Zulfiqar Ali Bhutto vs. State PLD 1979 SC মামলায়ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল দেখিয়েছেন যে, আসামি সৈয়দ ফারুক। রহমানের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন নম্বর ২০৩২/১৯৯৭ দায়ের করে নাজিম উদ্দিন রােডে আদালত বসানােকে চ্যালেঞ্জ করা হয় যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায় এবং 49 DLR (AD) 157-তে প্রকাশিত।
৫৯১
আসামি সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং সৈয়দ ফারুক রহমানের পক্ষ থেকে ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট, ১৯৯৭-এর বৈধতা হাইকোর্ট বিভাগে চ্যালেঞ্জ করা হয়, যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়ে 3 BLC (AD) 89-এ প্রকাশিত হয়, কিন্তু আসামি আপিলকারী কখনাে বিদ্রোহ চলাকালীন হত্যা এবং স্বাভাবিক ফৌজদারি আদালতের অপরাধটি বিচারের এখতিয়ার নেই- এই হেতুতে আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেনি।
৪৪৪. পি.ডব্লিউ-৮, পি.ডব্লিউ-৯ এবং পি.ডব্লিউ-৪৫ প্রদত্ত সাক্ষ্যের সতর্ক পরীক্ষণ থেকে দেখা যায়, হত্যাসমূহ বিদ্রোহ চলাকালীন সংঘটিত হয়েছিল তা সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা প্রকাশিত হয় না মর্মে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি সাক্ষীগণ সমর্থন করেন। প্রথম বিজ্ঞ বিচারক এবং তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক উভয়েই তাঁদের রায়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বিদ্রোহের ফলে হত্যার কোনাে মামলা ছিল না। বিজ্ঞ দায়রা জজ সম্মুখে কোনাে অভিযােগ গঠিত হয়নি। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ৩৪২ ধারার অধীনে বিবৃতি প্রদানের সময় আসামি আপিলকারী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক দাখিলকৃত বিবৃতি এটি প্রকাশ করে না যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখের হত্যাসমূহ বিদ্রোহ চলাকালীন সংঘটিত হয়েছিল- এই মর্মে রাষ্ট্রপক্ষের পেশকৃত যুক্তিতে আমরা সারবত্তা খুঁজে পাই।।
৪৪৫. আমরা দেখেছি যে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞ বিচারক এই বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছিলেন এই বলে যে, দায়রা জজ আদালতে বিচার অনুষ্ঠানে কোনাে অবৈধতা নেই। বিচারের ফোরাম পদ্ধতিগত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, সামরিক আদালত অনুসৃত পদ্ধতির চেয়ে সিভিল আদালত অনুসৃত পদ্ধতি ঢের ন্যায্য এবং স্বচ্ছ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দণ্ডিত আপিলকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনাে প্রশ্ন উঠে না। এই উদ্দেশ্যে Jamil Huq os. Bangladesh, 34 DLR (AD) 125-এর ১৩৮ পৃষ্ঠার ৩৭ অনুচ্ছেদে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ল অফ কোর্ট মার্শাল (কারেন্ট লিগ্যাল প্রবলেম ১৯৫০, পৃষ্ঠা ৯৩) বইতে প্রকাশিত Prof. Holland-এর পর্যবেক্ষণ সমর্থন করে নিম্নলিখিত উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন :
“I would accordingly, suggest that the jurisdiction of the Court Martial should be statutorily confined to the offenses against discipline and all the jurisdiction over civil offenses should be taken away except where it is reasonable and impracticable to arrange for a civil trial.”
৪৪৬. আমরা দেখি যে, রায় প্রচারের পূর্বে বিজ্ঞ দায়রা জজ তাঁর বিগত ২৪.০৩.১৯৯৭ এবং বিগত ০২.০৪.১৯৯৭ তারিখের আদেশমূলে সংশ্লিষ্ট আর্মি কর্তৃপক্ষকে নােটিশ প্রদান করেছিলেন, এবং তার উত্তরে আর্মি সদর দপ্তর ক্রিমিনাল প্রসিডিউরাল রুলস (মিলিটারি অফেন্ডারস), ১৯৯৮-এর বিধানানুসারে বিগত ০২.০৪.১৯৯৭ তারিখের অফিস স্মারকমূলে জানান যে, ফৌজদারি আদালতে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি ব্যক্তিদের বিচারে কোনাে বাধা নেই, এবং এতদ্বারা আর্মি অ্যাক্টের ৯৪ ধারার বিধান প্রতিপালিত হয়েছে। উপরােল্লিখিত আলােচনা ও সিদ্ধান্তের আলােকে আমি এই দৃষ্টিভঙ্গি পােষণ করি যে, যেহেতু আসামি-আপিলকারীগণ ১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের ৮(১) ধারার মর্মানুযায়ী চাকরিতে সক্রিয় ছিল না, সেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তিগণের বিচার আর্মি অ্যাক্ট অনুযায়ী করা যায় না, এবং এই কারণে, অত্র মামলার ঘটনায় বিদ্রোহের ফলে হত্যার কোনাে অপরাধ ছিল না। অধিকন্তু, যদিও তর্কের খাতিরে কাউকে ধরে নিতে হয় যে, আর্মি অ্যাক্টের ধারা ৮(২), তৎসঙ্গে পঠিতব্য ধারা ৫৯(২)-এর মর্মানুযায়ী সংঘটিত অপরাধটি ছিল সিভিল অপরাধ, তথাপি আর্মি
৫৯২
অ্যাক্টের ধারা ৯৪, তৎসঙ্গে পঠিতব্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ধারা ৫৪৯-এর বিধান প্রতিপালন সাপেক্ষে ঐসব অভিযুক্ত ব্যক্তির দায়রা আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে কোনাে আইনগত বাধা নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যেহেতু সংঘটিত অপরাধসমূহ নিছক হত্যা-প্রকৃতির, সেহেতু অত্র মামলায় অভিযুক্ত-আপিলকারীদের ফৌজদারি আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে কোনাে আইনগত বাধা নেই।।
৪৪৭. হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র অথবা বিদ্রোহ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র চতুর্থ যে হেতুর ভিত্তিতে লিভ মঞ্জুর হয়েছিল,তা এটা হত্যার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা নাকি বিদ্রোহ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্রের মামলা- এই প্রশ্ন সম্পর্কিত। অত্র মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারীগণ এবং অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ এবং ১২০বি ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। দণ্ডপ্রাপ্ত আপিলকারীদের পক্ষে দাবি করা হয়েছে যে, নথিতে রক্ষিত সাক্ষ্য-প্রমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যগণকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা হিসেবে প্রকাশ করে না, বরং এটা তৎকালীন মুজিব সরকারকে পরিবর্তন করার জন্য বিদ্রোহ সংঘটনের লক্ষ্যে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের একটি মামলা হিসেবে প্রকাশ করে। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখােমুখি হয়ে আমরা ইতােমধ্যে পেনাল কোডের ৩০২ এবং ১২০বি ধারার বিধান উপরে আলােচনা করেছি। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সংজ্ঞা পেনাল কোডের ১২০এ ধারায় প্রদান করা হয়েছে। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংঘটনের জন্য অবশ্যই দুই বা ততােধিক ব্যক্তির মধ্যে তাদের অভিন্ন পরিকল্পনানুযায়ী অবৈধ পন্থায় একটি অবৈধ কর্ম সম্পাদনের চুক্তি থাকতে হবে। পেনাল কোডের ১২০বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সাজার বিধান রয়েছে। সুতরাং, যখন কোনাে ব্যক্তি দুই বছর বা তার অধিক মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড দ্বারা শাস্তিযােগ্য অপরাধ সংঘটনের জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের পক্ষ হয় অথবা যেখানে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের শাস্তির জন্য পেনাল কোডে কোনাে বিধান না রাখা হয় তখন সে এমনভাবে সাজাপ্রাপ্ত হবে যেন সে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছিল।
৪৪৮. অত্র মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যের সতর্ক বিশ্লেষণ থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্রে আসামি আপিলকারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি বিবেচনা করব। যেমনটা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যদের মধ্যে আসামি আপিলকারীগণ পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী। এখানে, এটা নির্দিষ্ট করা হবে, এই ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য ছিল, নাকি মুজিব সরকার পরিবর্তনে বিদ্রোহ সংঘটনের জন্য ছিল। আমাদের সর্বোচ্চ আদালত এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ষড়যন্ত্রের সাক্ষ্য-প্রমাণ স্পষ্টত বােধগম্যও নয়, স্বচ্ছও নয়; বরং ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের রূপরেখা সবসময়ই অতি গােপনে অঙ্কিত হয়। ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের সরাসরি সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া সবসময়ই অসম্ভব। কিন্তু, অত্র মামলায় রাষ্ট্র-রেসপন্ডেন্ট পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী এবং বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল পি.ডব্লিউ-৪৩-এর সাক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যিনি জবানবন্দি প্রদান করেছেন যে, ১৯৭৫ সালের মার্চে খােন্দকার মােশতাক কুমিল্লার বিএআরডি-এ অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে যােগদান করেছিলেন। সম্মেলন শেষে খােন্দকার মােশতাকের আত্মীয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ আরাে কয়েকজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ খােন্দকার মােশতাক, মাহাবুবুল আলম চাষী, তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সাথে রেস্ট হাউজে গােপন বৈঠক করে, যেখানে তারা ষড়যন্ত্রের রূপরেখা অঙ্কন করে।
৪৪৯. নিম্নলিখিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য রাষ্ট্রপক্ষের মামলা সমর্থন করে। পি.ডব্লিউ-১১ প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সারে ছিলেন, যার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল মােমিন এবং তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং তার স্কোয়াড্রন
৫৯৩
কমান্ডার ছিল মেজর এ কে এম মহিউদ্দীন (ল্যান্সার)। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে একটি নাইট প্যারেড ছিল। যদিও তিনি নাইট প্যারেডে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু তিনি তার এসডিএম-এর নির্দেশে তার স্টোরের সামনে যান, যেখানে প্যারেড শেষ হয়। পি.ডব্লিউ-১১ সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, রিসালদার মােসলেমউদ্দিন, মেজর মহিউদ্দীন, মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, লেফটেন্যান্ট নাজমুল হােসাইন আনসার, রিসালদার সারােয়ার, মেজর নুরুল হক, এলডি আবুল হাশেম মৃধা, দফাদার মারফত আলী এবং অন্যান্য এনসিওস এবং জেসিওসদের দেখেছিলেন। তার এসডিএম-এর নির্দেশে তিনি রাত প্রায় ৩:৩০ ঘটিকায় “কটে” (“Kote”) (হালকা অস্ত্রাগার) যান এবং ১৮ রাউন্ড কার্তুজ এবং একটি ম্যাগাজিনসহ একটি জি-৩ রাইফেল নেন। তখন সকাল ৪:৩০ ঘটিকায় তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডে তকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে যান। কিছুক্ষণ পরে, একটি ট্যাঙ্ক আসে এবং পি.ডব্লিউ-১১ সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানকে দেখেন, পরে তিনি মেজর এ কে এম মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচবিএম নূর চৌধুরী এবং মেজর বজলুল হুদা, রিসালদার সারােয়ার, সুবেদার মেজর এবং অন্যান্য কয়েকজনকে দেখেন যারা একসাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের গেইটের সামনে যায়।
৪৫০. পি.ডব্লিউ-১২ প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সারে ছিলেন, যার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান। প্রকৃত সিও হিসেবে মেজর মােমিন ছুটিতে ছিলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান রেজিমেন্টের সিওর দায়িত্বে ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাত ৯:০০টায় তারা প্যারেড গ্রাউন্ডে একত্র হন। প্যারেড গ্রাউন্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর মহিউদ্দীন, মেজর সামছুজ্জামান, ক্যাপ্টেন দেলােয়ার হােসেন, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, লেফটেন্যান্ট নাজমুল হােসেন আনসার, রিসালদার মেজর সৈয়দ আহমেদ, রিসালদার মােসলেম উদ্দিন, রিসালদার মােবারক, আরডিএম মােসাদ্দেক আরশেদ, এমডিএম নায়েব, রিসালদার মালেক, রিসালদার নুরুল ইসলাম, দফাদার জব্বার (পি.ডব্লিউ-১৪), দফাদার হায়দার আলী, ল্যান্স দফাদার লুৎফুর রহমান, এএলডি মােসলেম উদ্দিন, এএলডি মহসিন এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিল। ২০ মিনিটের একটি বিরতিসহ মধ্যরাত ১২:০০টা পর্যন্ত প্যারেড চলেছিল। ক্লাসগুলাে সকাল ৩:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত চলে, সেখানে পুনরায় তারা মিলিত হয়। তখন প্যারেড গ্রাউন্ডের কর্নারে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, লেফটেন্যান্ট নাজমুল হােসেন এবং অন্যান্য জেসিওস কোনাে একটি বিষয় নিয়ে আলােচনা করছিল। পি.ডব্লিউ-১২ তিনজন অপরিচিত কর্মকর্তাকে দেখেন যাদেরকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন হুদা বলে পরিচয় করিয়ে দেন, কিন্তু তিনি অন্য কর্মকর্তার নাম মনে করতে পারেননি। সৈন্যবাহিনীকে ব্রিফ করার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান উল্লেখ করেছিল যে, ১৫ আগস্ট [ঢাকা] বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শেখ মুজিবুর রহমান রাজতন্ত্র ঘােষণা করতে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের রাজতন্ত্র সমর্থন করা উচিত হবে না এবং সে কারণে তার ও তার কর্মকর্তাদের নির্দেশ তাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে। পি.ডব্লিউ-১২ দেখেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তার প্রকৃত অভিসন্ধি প্রকাশ না করে তার নিজস্ব মিশন সফল করতে সৈন্যদলকে প্ররােচিত করছে এবং উস্কানি দিচ্ছে। পি.ডব্লিউ-১২ এবং প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সার এবং সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের অন্য সৈন্যগণ বালুরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের দিকে যাচ্ছিল। তখন পি.ডব্লিউ-১২ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমানকে ট্যাঙ্কে দেখেন। পি.ডব্লিউ-১২ প্রমাণ করেছেন যে, ফারুক ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
৫৯৪
প্রত্যুষে সৈন্যগণকে প্ররােচিত করে, সশস্ত্র করে এবং মােতায়েন করে ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে উপস্থিত ছিল।
৪৫১. পি.ডব্লিউ-১৩ প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সারে ছিলেন। তিনি পি.ডব্লিউ-১২-এর প্রদত্ত বিবৃতির অনুরূপ বিবৃতি প্রদান করেছেন। তিনিও (সাক্ষী) ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত ৮:৩০ ঘটিকায় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন। মধ্যরাতে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের সাথে যেতে দেখেন। কিন্তু কিছু সময় পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ইউনিটে ফিরে আসে। পি.ডব্লিউ-১৩ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী রিসালদার মােসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী এবং এলডি আবদুল হাশেম মৃধাসহ একটি ট্রাকে করে শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় যান এবং সেখান থেকে তারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডে যায়। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন থেকে বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পান। কিছুক্ষণ পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন এবং অন্যদেরসহ ট্যাঙ্ক নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডের বাহিরে আসে। তিনি (সাক্ষী) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিসমত হাশেমকে ট্যাঙ্কের ভেতরে দেখেন। পি.ডব্লিউ-১৩ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন থেকে গুলির শব্দ শােনেন, কিন্তু তিনি বাসভবনের ভিতরে যাননি। তিনি (সাক্ষী) ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী (full command) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের উপস্থিতি প্রমাণ করেছেন। পি.ডব্লিউ-১৩-এর এই সাক্ষ্য পি.ডব্লিউ-১ কর্তৃক বস্তুনিষ্ঠভাবে সমর্থিত। তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের সামনে দিয়ে একটি ট্যাঙ্ক অতিক্রম করে যেতে দেখেন। পি.ডব্লিউ-১৩ প্রদত্ত সাক্ষ্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে।
৪৫২. পি.ডব্লিউ-১৪ প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সার রেজিমেন্টে ছিলেন। তিনি পি.ডব্লিউ ১২ এবং ১৩-এর প্রদত্ত বিবৃতির অনুরূপ বিবৃতি প্রদান করেন। তিনিও ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন। নাইট প্যারেডের পর তিনি প্যারেড গ্রাউন্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, নাজমুল হােসেন আনসার এবং সিভিল পােশাক পরিহিত অন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখেছিলেন। আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান সিভিল পােশাকে থাকা মেজর ডালিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ারকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদেরকে তার আদেশ পালনের নির্দেশ দেয়। তিনি (সাক্ষী) সকাল ৫:৩০ ঘটিকার পরে রেডিও স্টেশন থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খানকে আসতে দেখেন। পি.ডব্লিউ-১৪ রাত ২:৩০ ঘটিকায় বালুরঘাটের নিকট ক্যান্টনমেন্টের প্যারেড গ্রাউন্ডে এবং প্রায় ভাের ৫:৩০ ঘটিকায় রেডিও স্টেশনে আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছেন। পি.ডব্লিউ-২৪-ও তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত প্রায় ৩/৩:১৫টার সময় প্যারেড গ্রাউন্ডে গিয়েছিল, যেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদের সিও, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ এবং অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ব্রিফ করছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক তাদেরকে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মেজর ডালিম, মেজর রশিদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার এবং ক্যাপ্টেন মাজেদের
৫৯৫
সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ তাদেরকে ইউনিট থেকে গােলাবারুদ আনার নির্দেশ দেয়। যখন তারা ল্যান্সার ইউনিট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং একটি রাস্তায় থেমেছিল তখন পি.ডব্লিউ-২৪ সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, ক্যাপ্টেন মাজেদ এবং ক্যাপ্টেন মােস্তফাকেও দেখেছিলেন। তিনি (সাক্ষী) মেজর ডালিম, মেজর নূর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মাজেদ, ক্যাপ্টেন মােস্তফা এবং অন্য কর্মকর্তাদের রেডিও স্টেশনের ভেতরে যেতেও দেখেছিলেন। পি.ডব্লিউ-১৭ এবং পি.ডব্লিউ-১৮ অভিন্ন বিবৃতি প্রদান করেছেন।
৪৫৩. পি.ডব্লিউ-২৩ এই জবানবন্দি প্রদান করেছেন যে, ১৯৭৫ সালের দিবাগত রাতে তাদের নাইট প্যারেড ছিল। তিনিও পি.ডব্লিউ-১৭ এবং পি.ডব্লিউ-১৮-এর সাথে অভিন্ন বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। বি স্কোয়াড্রনের সৈন্যগণ নির্দেশিত হয়ে বেরিয়ে পড়ে এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান বলেছিল যে, ট্যাঙ্ক অনুশীলন আছে এবং ট্যাঙ্কগুলাে বাইরে যাবে। ১২টি ট্যাঙ্কের মধ্যে ৬টি উপযুক্ত পাওয়া গিয়েছিল এবং ৬টি ট্যাঙ্ক সৈন্য ও গােলাবারুদ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। রাত প্রায় ৩:০০/৩:৩০ টার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান পুনরায় সেখানে ফিরে আসে, এবং সে পুনরায় সেই স্থান ত্যাগ করে এবং এরপর রাত প্রায় ৪:০০/৪:৩০টার সময় মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম এবং ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসারদের সাথে নিয়ে ফিরে আসে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান একটি ট্যাঙ্কে আরােহণ করে এবং ট্যাঙ্কটি লাইনের সামনে রাখে। ক্যাপ্টেন মােঃ কিসমত হাশেম অন্য একটি ট্যাঙ্কে আরােহণ করে। মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম এবং অন্যরা বাকি ট্যাঙ্কে আরােহণ করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের নির্দেশে ট্যাঙ্কবহর অগ্রসর হতে শুরু করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষীর সাক্ষ্য থেকে দেখা যায় যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তার ল্যান্সার রেজিমেন্ট সংগঠিত করেছিল এবং নিখুঁত সূক্ষ্মতার সাথে ট্যাঙ্ক ক্রু এবং সাধারণ সৈন্যদের কাছে তার প্রকৃত অভিপ্রায় প্রকাশ না করে অভিযান শুরু করেছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ট্যাঙ্ক অনুশীলনের অজুহাতে অত্যন্ত সফলতার সাথে ট্যাঙ্কগুলাে প্রস্তুত ও নগরীতে মােতায়েন করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের মতে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতির হত্যাকাণ্ডকে সহজ করতে এবং অন্য কোনাে বাহিনী বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিরােধ হলে তা প্রতিহত করতে ট্যাঙ্কগুলাে নির্ধারিত স্থানসমূহে মােতায়েন করা হয়েছিল।
৪৫৪. পি.ডব্লিউ-২৪ ছিলেন দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের একজন সাধারণ সৈন্য। তাদের ১৪ আগস্ট তারিখে নৈশ প্রশিক্ষণ প্রােগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০:০০/১০:৩০টার সময় তাদেরকে নতুন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এবং নাইট প্যারেড চলাকালে রাত প্রায় ৩:০০/৩:৩০টার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ সেখানে উপস্থিত হয়েছিল এবং তাদের একটি জরুরি দায়িত্বের জন্য অন্য জায়গায় যাওয়ায় নির্দেশ দিয়েছিল এবং এরপর তাদেরকে ল্যান্সার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ ও অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাদেরকে ব্রিফ করেছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক তাদেরকে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মেজর ডালিম, মেজর রশিদ চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার এবং ক্যাপ্টেন মাজেদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তারপর লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক
৫৯৬
ডালিম এই বলে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছিল যে, সরকার পরিবারের মেয়ে-ছেলেদের সম্মান রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়েছে এবং মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। এই কারণে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। তারপর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ তাদেরকে ইউনিট থেকে গােলাবারুদ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। যখন তারা ল্যান্সার ইউনিট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং একটি রাস্তায় থেমেছিল তখন পি.ডব্লিউ-২৪ সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, ক্যাপ্টেন মাজেদ এবং ক্যাপ্টেন মােস্তফাকেও দেখেছিলেন। তিনি মেজর ডালিম, মেজর নূর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মাজেদ, ক্যাপ্টেন মােস্তফা এবং অন্য কর্মকর্তাদের রেডিও স্টেশনের ভেতরে যেতেও দেখেছিলেন।
৪৫৫. বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক পর্যবেক্ষণ দিতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের পক্ষে পি.ডব্লিউ-২৪ এর নিম্নবর্ণিত জেরা তুলে ধরেছেন :
“ইহা সত্য নহে যে, সেরনিয়াবাতের বাসায় যাবার কারণে পুলিশ আমাকে এই মামলার আসামি করিবে এই ভয়ে আমি আসামির শ্রেণি হইতে বাদ যাওয়ার জন্য পুলিশের কথামতাে সাক্ষ্য দিলাম”।
৪৫৬. বিজ্ঞ দ্বিতীয় বিচারক এই বলে একটি বিস্তারিত যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সাক্ষী তার জবানবন্দিতে ও প্রথম দিকের জেরায় ৫ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন। ৪৫৭. পি.ডব্লিউ-২৫ও দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারিতে ছিলেন। তিনি পি.ডব্লিউ-১২, পি.ডব্লিউ-১৩ এবং পি.ডব্লিউ-১৪ প্রদত্ত বিবৃতির অনুরূপ বিবৃতি প্রদান করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে তিনি নাইট প্যারেডে উপস্থিত হয়েছিলেন। মেজর রশিদের নির্দেশে তারা বিভিন্ন ভাগে দলবদ্ধ হয়েছিলেন এবং নতুন বিমানবন্দরের দিকে কুচকাওয়াজে অগ্রসর হয়েছিলেন। রাত প্রায় ৩:০০/৩:৩০টার সময় তারা কুচকাওয়াজ করে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং ট্যাঙ্কের জন্য নির্ধারিত উন্মুক্ত স্থানে পৌঁছেছিলেন এবং সৈন্যসহ সেখানে ট্যাঙ্ক দেখেছিলেন। তিনি (সাক্ষী) ল্যান্সার ইউনিটের আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদকে দেখেছিলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মােস্তফা, মেজর ডালিম, ক্যাপ্টেন মাজেদ এবং অন্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে তাদেরকে ব্রিফ করেছিলেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম তাদের উদ্দেশ্যে সৈন্যবাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে বক্তব্য প্রদান করে বলেছিল যে, সরকার পরিবারের নারীদের সম্মান রক্ষা করতে পারেনি এবং মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। এই কারণে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদেরকে ল্যান্সার ইউনিট থেকে গােলাবারুদ নিতে বলেছিল। তারপর তারা ছয়টি শাখায় বিভক্ত হয়েছিল এবং ছয়টি ট্রাকযােগে নগরী অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল। এই সাক্ষীও রেডিও স্টেশনের উত্তর-পূর্ব কোণে দায়িত্বরত ছিলেন। পি.ডব্লিউ-২৫ সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং কিছু অসন্তুষ্ট বরখাস্তকৃত কর্মকর্তার সহযােগিতায় তাদের নিজস্ব মিশনকে সফল করার জন্য সৈন্যদলকে উত্তেজিত করে তুলেছিল।
৪৫৮. পি.ডব্লিউ-৩৫ দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর ছিলেন। তিনিও তার সাক্ষ্যে বর্ণনা করেছেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি) দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের
৫৯৭
কমান্ডার ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে নৈশ প্রশিক্ষণ চলাকালে আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ একত্রে একটি জিপে করে প্রায় রাত ১০:০০ টার সময় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদের কার্যালয়ে আসে। পি.ডব্লিউ-৩৫ সঠিকভাবে আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানকে শনাক্ত করেছিলেন।
পি.ডব্লিউ-৩৯ প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি স্কোয়াড্রনের একজন নিম্ন গাড়িচালক (lower driver) ছিলেন। তাদের ভারপ্রাপ্ত সিও ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান। তিনিও অন্যান্য পি.ডব্লিউ-এর বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা প্রদান করেছেন। তার বক্তব্য অনুসারে, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত প্রায় ৭:৩০ টার সময় প্যারেড শুরু হয়েছিল। রাত প্রায় ২:০০/২:৩০টার সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর শরিফুল ইসলাম, মেজর মহিউদ্দীন (ল্যান্সার), লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, লেফটেন্যান্ট নাজমুল হােসেন আনসার, রিসালদার মােসলেম উদ্দিন এবং অন্যান্য জেসিও ও এনসিওগণসহ উপস্থিত ছিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান তাদের উদ্দেশ্যে বলে যে, দেশের একটি জরুরি অবস্থায় বিশেষ কাজে ট্যাঙ্কগুলাে বাহিরে যাবে এবং তাদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয় এবং সে অনুযায়ী সৈন্যগণ ট্যাঙ্কসহ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালনকালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কিসমত হাশেম, লেফটেন্যান্ট নাজমুল হােসেন। আনসার এবং রিসালদার মােসলেম উদ্দিনকে জিপে করে বঙ্গভবনে ভ্রমণ করতে দেখতেন। পি.ডব্লিউ-৪০ প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সার রেজিমেন্টে সুবেদার মেজর ছিলেন। তিনিও ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে নাইট প্যারেড সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। রাত প্রায় ২:০০/৩:০০টার সময় তাকে জানানাে হয় যে, আর্টিলারি রেজিমেন্টের সৈন্যবাহিনী আসছে। কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন দেলােয়ার কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে পি.ডব্লিউ-৪০ “কটে”-এর (Kote) চাবি হস্তান্তর করেছিলেন। পরে তিনি নিজেই কোয়ার্টার গার্ডে চলে যান, এবং কোয়ার্টার মাস্টার, জেসিও এবং গার্ড কমান্ডার তাকে জানান যে, সৈন্যরা অস্ত্র ও গােলাবারুদ নিয়ে গেছে। তিনি এলএমজি ফিট করা একটি জিপের পাশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান এবং মেজর রশিদকে কথা বলতে দেখেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান তাকে রেজিমেন্ট দেখে রাখতে বলে, এবং তার জিজ্ঞাসায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক বলে যে, তারা স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাতের জন্য যাচ্ছে। শফিউল্লাহ সাহেব এই বিষয়ে জানেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল ফারুক জবাব দেয় যে, এর প্রয়ােজন আছে বলে সে মনে করে না। পি.ডব্লিউ-৪০ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদের মধ্যে অভিযান এবং ট্যাঙ্কগুলাের মােতায়েন সম্পর্কে শেষ সময়ের শলাপরামর্শের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যদিও সেই সময়ে পি.ডব্লিউ-৪০সহ অন্য সাধারণ সৈন্যরা অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানত না।
৪৫৯. পি.ডব্লিউ-৪৪ সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন যে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর সংবাদ শুনে তিনি প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টে দ্রুত ছুটে যান। সেখানে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমানসহ একটি ট্যাঙ্ক আক্রমণাত্মক অবস্থানে দেখতে পান, যিনি ট্যাঙ্ক থেকে তার ভারী মেশিনগান দিয়ে পণ্য সরবরাহ এবং পরিবহণ কোম্পানির লাইন-আপ করা ট্রাকগুলাের উপর গুলিবর্ষণ করেছিলেন।
৪৬০. পি.ডব্লিউ-১ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রােডের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের গেইটের সামনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমানকে মেজর বজলুল হুদাকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলতে দেখেছিলেন এবং এর জবাবে হুদা বলেছিল, “all
৫৯৮
are finished”। পি.ডব্লিউ-১ ঘটনার সময় ও পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর বজলুল হুদাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে দেখেছিলেন।
৪৬১. উপরােল্লিখিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে দেখা যায় যে, পরিবারের সদস্যগণসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সব আসামির অভিন্ন অভিপ্রায় থেকে উদ্ভূত মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্যই অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক এই ষড়যন্ত্রের রূপরেখা রচিত হয়েছিল। অভিযুক্ত আপিলকারীদের সাথে অন্য অভিযুক্তদের মধ্যকার আলােচনা এবং তারপর আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, খােন্দকার আবদুর রশিদ এবং শরিফুল হক ডালিম কর্তৃক সৈন্যবাহিনীকে ব্রিফ করেছিল- এই বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্য বর্ণনা করেছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের ব্রিফিং অনুযায়ী ষড়যন্ত্র করাকালে কয়েকজন বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাসহ ল্যান্সার ও আর্টিলারি উভয় শাখার নিয়ন্ত্রণাধীন সৈন্যগণ তেজগাঁও বিমানবন্দর রােডে গিয়েছিল। তাদের কয়েকজন আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাসার দিকে, কয়েকজন শাহবাগ রেডিও স্টেশনের দিকে গিয়েছিল, কয়েকজন গিয়েছিল বিডিআরকে প্রতিহত করতে, এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদকে (আর্টিলারি) কামানসহ ধানমন্ডি কলাবাগান লেকসাইডের দিকে এবং ৩২ নম্বর রােডে ৬৭৭ নম্বর বাড়ির দিকে পাঠানাে হয়েছিল। মেজর বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার), এসএইচএমবি নূর চৌধুরী এবং মােঃ এ. আজিজ পাশা তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে গিয়েছিল। এই দৃশ্যপট এটি প্রকাশ করে যে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে পরিবারের সদস্যগণ ও আত্মীয়-স্বজনসহ হত্যা করার উদ্দেশ্যে এবং অন্য যে কোনাে বাহিনীকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তাদের পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে উপরােল্লিখিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় সেনাদের মােতায়েন করা হয়েছিল।
৪৬২. পূর্বোক্ত সাক্ষীদের সাক্ষ্য যত্নসহকারে পর্যালােচনায় এটি প্রতীয়মান হয় যে, তারা একে অপরের বক্তব্য সমর্থন করে তকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযােগ-সম্পর্কিত প্রসিকিউশন কেস প্রমাণিত করেছেন এবং এভাবে সম্পর্কিত প্রসিকিউশন মামলাটি প্রমাণিত করেছেন এবং এর মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে মামলাটি প্রমাণিত হয়েছে।
৪৬৩. প্রসিকিউশন সাক্ষীদের সাক্ষ্যের পূর্বোক্ত আলােচনা ও পর্যবেক্ষণ থেকে আমার মতামত হলাে, হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকরা যথার্থ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে ক্যান্টনমেন্টে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রশিদের বাড়িতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়; খােন্দকার মােশতাক আহমেদ ও অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কুমিল্লার বার্ড-এ (BARD), মােশতাক আহমেদের দাউদকান্দির বাড়িতে, ঢাকার আগামসি লেনে, রমনা পার্কে, ক্যান্টনমেন্টের শাহরিয়ার রশিদের বাড়িতে এবং বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডের বিভিন্ন মিটিংয়ে সেটা পরিপক্ক করা হয়েছিল। সমস্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি এই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ১৯৭৫ সালের মার্চ থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরে ১৯৭৫ সালের মার্চ-আগস্ট মাস থেকে অংশ নিয়েছিল এবং তাদের সবাই বালুরঘাট প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত ছিল এবং সৈয়দ ফারুক রহমান ও শরিফুল হক ডালিম কর্তৃক পুরােপুরি অবহিত ও অনুপ্রাণিত হয়েছিল। সেই কারণে অভিযুক্ত-আপিলকারীগণসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যায় অংশ নিয়ে সবাই পেনাল কোডের ১২০বি ধারার অধীনে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী। অতএব, উপরে আলােচিত কেস ল-সমূহ এবং নথিতে থাকা তথ্যাদির উপর নির্ভর করে এই নিরাপদ সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে, আসামি-আপিলকারীগণ অন্য আসামিদের সাথে
৫৯৯
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংঘটিত করেছিল এই মর্মে নথিতে পর্যাপ্ত আইনানুগ সাক্ষ্য রয়েছে। বিদ্রোহ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল এমন কোনাে কেস ছিল না এবং এটি সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে যথার্থভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
৪৬৪. নথিতে থাকা সাক্ষ্য-প্রমাণের যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতে হত্যার অভিযােগ প্রমাণিত হয়েছে কিনা :
সকল আপিলের অভিযুক্ত-আপিলকারী পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট জনাব খান সাইফুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক খান এবং আবদুল্লাহ-আল-মামুন একযােগে এই যুক্তি দেন যে, যথাযথ মূল্যায়ন এবং নথির সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে দোষী আপিলকারীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩৪ ধারার অধীনে হত্যার অভিযােগ প্রমাণিত হয়নি এবং এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়েছে। এর জবাবে বিজ্ঞ অ্যাডভােকেট জনাব আনিসুল হক এবং বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভােকেট জনাব মাহবুবে আলম যুক্তি দেন যে, অভিযুক্ত-আপিলকারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিচারিক আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগ উভয়ই অভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল সাক্ষীদের সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে বলেন যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, উপযুক্ত হত্যা সংঘটনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রােডে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের বাসভবনে মেজর বজলুল হুদা, মেজর মহিউদ্দীন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং সৈয়দ ফারুক রহমানের উপস্থিতি দেখেছিলেন।
৪৬৫. যেহেতু, আমার বিজ্ঞ ভ্রাতা বিচারপতি মােঃ তাফাজ্জুল ইসলাম তার রায়ে পেনাল কোডের ৩০২, ৩৪ ও ১২০বি ধারার অপরাধ সংঘটনে অভিযুক্ত-আপিলকারীদের আগমন, উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণের বিষয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশদভাবে উল্লেখ করেছেন, সেহেতু আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্যের আলােচনা করব।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান।
পি.ডব্লিউ-৪৪ ছিলেন ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার। তিনি সাক্ষ্য দেন যে, অভিযুক্ত-আপিলকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সারের টু-আইসি ছিল। সৈয়দ ফারুক রহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়াই করেনি এবং দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা পায়নি এবং এর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ ছিল। তাঁর মতে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদের শ্যালক।
পি.ডব্লিউ-৪৩ তার জবানবন্দিতে বলেন যে, দাউদকান্দি মাদ্রাসায় এক গােপন মিটিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খােন্দকার আবদুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ এবং আরাে কিছু কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল।
৪৬৬. পি.ডব্লিউ-১১ তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ল্যান্সার ইউনিটের টু-আইসি ছিল এবং ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ দিবাগত রাতের একটি নাইট প্যারেড হয়েছিল, যদিও তিনি নাইট প্যারেডে অংশ নেননি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তিনি স্টোর রুমে গিয়েছিলেন। এরপরে এসডিএম-এর নির্দেশে পি.ডব্লিউ-১১ অস্ত্রের জন্য সরাসরি কোটে গিয়েছিলেন। তদনুসারে, তিনি ভাের ৩.৩০টায় কোটে গিয়ে ১৮ রাউন্ড কার্তুজ এবং ম্যাগাজিনসহ একটি জি-৩ রাইফেল নিয়েছিলেন। পি.ডব্লিউ-১১ গাড়ি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির কাছে আসেন এবং ভাের ৪.৩০ মিনিটে বাড়ি থেকে প্রায় ৮০ ফুট দূরে ছিলেন। তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানকে ৩২ নম্বর
৬০০