You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | ডেইলি মিরর, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্ত! - সংগ্রামের নোটবুক

ডেইলি মিরর, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১
মুক্ত!

এই শহরে (যশোর)আমরা জানি আট মাস আগে কিছুই ছিলোনা। এটাকে সম্পুর্ন ধ্বংস করা হয়েছিল। আমি অনুমান করছি, এখানে জীবিত কেউ থাকতে পারেনি।

আজ এটা মুক্ত হল এবং ১৯৪৪ সালের প্যারিসে পরিণত হয়েছে।

এই তুলনা বাড়াবাড়ি নয়।

মার্চে পাকিস্তান আর্মি দখলের পড় থেকে এই প্রথম আজ সন্ধ্যার পরপর আর্মি ট্র্যাক, জিপ আর রিকশায় করে বিদেশীরা শহরে প্রবেশ করল। সাথে সাথে প্রচুর মানুষ হর্ষধ্বনিতে আমাদের ঘিরে ধরল।

মেইন রাস্তা, সিটি স্কয়ার সহ সকল বাড়ির দরজায় জানালায় মানুষের হাস্যোজ্জল মুখ দেখা যাচ্ছিল। তারা আনন্দের সাথে স্বাগত জানাচ্ছিল।

আক্রমণ

গত রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী যশোরে আক্রমণ শুরু করে। এটা ছিল রাজধানী ঢাকার পরে বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্তপূর্ন শহর।

যশোর ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ম্যাগিনট লাইন। এখানে ছিল বাংকারের নেটওয়ার্ক এবং আমরা আগে বলেছিলাম এখানে ছিল এশিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্রের মজুদ। তথাপি তারা পালিয়ে গেল।

গতকাল পর্যন্ত যশোর ছিল পাক বাহিনীর ৯ম ডিভিশনের হেডকোয়ার্টার। ছয় হাজার বন্দি অপেক্ষা করছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণের জন্য।

শক্ত কাজ

এবং তারপর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিজস্ব নবম ডিভিশন শহরে প্রবেশ করল। প্রশিক্ষিত পাকসেনারা এবং শক্ত সৈনিকরা চল্লিশ মাইল দূরে নদী দিয়ে পালিয়ে যায়।
শহরের পথে ভারতীয়রা সাড়েচার পাকিস্তানি ব্যাটালিয়নকে পরাজিত করে এবং তারপর উপকণ্ঠে স্থগিত অন্য আড়াই ব্যাটালিয়নের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ ২০০০ জনের মত মানুষ ফিরে আসে এবং বাস , লরি এবং রিকশা চলাচল শুরু করে।

আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন তাদের স্ত্রী এবং পরিবারের সাথে ছিল। তাদের অনেকে ১২ মাইল দূর থেকে শহরে পৌঁছেছেন। আজ রাতে তাদের ঘিরে রাখা হয়েছে।

ভারতীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল দালবীর সিং বলেন, “আমরা জানিনা তাদের সঙ্গে কি করতে হবে।’

“আমরা তাদের হাত উঁচু করে বেরিয়ে আসতে বলি। আমরা বলি যদি তোমরা বেরিয়ে না আসো তাহলে তোমাদের শেষ করে দেয়া হবে।’

যশোর সড়কের দু’পাশে গ্রামগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঝলসিয়ে দিয়েছে যা তাদের পোড়ামাটি নীতির অংশ।

এভাবে কয়েক মাইল হাঁটার পর আমরা দেখলাম মানুষ তাদের স্বর্বস্ব মাথায় পিঠে করে নিয়ে আমাদের সাথে হাঁটছে। তারা ছিল ভারতে থাকা ১১ মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের মধ্যে ফিরে আসাদের দলের অগ্রপথিক।