জর্জ হ্যারিসন
বিটলস গায়কদের অন্যতম এবং ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর প্রধান ব্যাবস্থাপক ছিলেন জর্জ হ্যারিসন। আর সেই কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া শেষ গান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ শতবার শোনার পরও এখনো আমাদের হৃদয়ে জেগে ওঠে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সব স্মৃতি। ৭১ এর জুনে রবিশঙ্কর বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি কনসার্ট করতে চান মর্মে হ্যারিসন কে জানান। এই উদ্যোগে জর্জকে পাশে পেতে চান তিনি। জর্জেরও মনে হলো, এ কাজে তার নিযুক্ত হওয়া উচিত। তার ডাকে অনেকে সাড়া দেবে।’
তারপর থেকেই জর্জ কনসার্টের জন্য বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বব ডিলান আর এরিক ক্ল্যাপটন অনুষ্ঠানের এক দিন আগে নিউইয়র্কে এসে উপস্থিত হন। আর ‘ইমাজিন’ গানের অমর শিল্পী জন লেনন অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে তার স্ত্রীর সাথে মামলার বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত থাকবেন বলে তাঁর অপারগতার কথা জানান জর্জকে। কনসার্টে ২ বার অনুষ্ঠানে জর্জ ৮টি গান গেয়েছিলেন। তিনি রবি শঙ্করের কাছে সেতার শিখতেন।
https://www.youtube.com/watch?v=VPRwzB_1YEk
বব ডিলান (জন্মগত নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, মে ২৪, ১৯৪১)
বব ডিলান কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এ গান গেয়েছিলেন। তিনি একাধারে একজন সুবিখ্যাত গায়ক, গীতিকার, সুরকার, ডিস্ক জকি, এবং একই সঙ্গে একজন কবি, লেখক ও চিত্রকর। তিনি অনেক শিল্পীর সাথে একত্রে কাজ করেছেন, যেমন, দ্য ব্যান্ড, টম পেটি, জোয়ান বায়েজ, জর্জ হ্যারিসন, দ্য গ্রেটফুল ডেড, জনি ক্যাশ, উইলি নেলসন, পল সিমন, এরিক ক্ল্যাপটন, প্যাটি স্মিথ, ইউ২, দ্য রোলিং স্টোনস, জনি মিচেল, জ্যাক হোয়াইট, মার্লে হ্যাগার্ড, নেইল ইয়ং, ভ্যান মরিসন, রিঙ্গো স্টার এবং স্টিভি নিকস।
https://www.dailymotion.com/video/x55yz4o
রিঙ্গো স্টার (রিচার্ড স্টার্কি)
রিঙ্গো স্টার ১৯৪০ সালের ৭ জুলাই যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন। একাত্তরে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে আয়োজিত ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী রিঙ্গো স্টার। সেই কনসার্টে রিঙ্গো তাঁর বিখ্যাত গান ‘ইট ডোন্ট কাম ইজি’ পরিবেশন করেন। তিনি দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড দ্য বিটলসের ড্রামার ও শিল্পী। ব্রিটিশ সংগীত তারকা রিঙ্গো স্টারের পুরো নাম রিচার্ড স্টার্কি। বিটলস ভাঙ্গার ১৯৭০ আগ পর্যন্ত তিনি তাদের সাথেই ছিলেন। তিনি গায়ক, মিউজিসিয়ান, গীতিকার এবং অভিনেতা ছিলেন। তিনি ড্রাম, কি বোর্ড, গীটার বাজান।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর দর্শক
মেডিসন স্কয়ার
মেডিসন স্কয়ার নিউইয়র্কের পেনসিলভানিয়া রোডের উপর অবস্থিত। বিশাল আকৃতির এ স্কয়ার মুলত একটি ইনডোর স্টেডিয়াম। স্থায়ী বাস্কেট বল স্টেডিয়াম। এখানে রাজনৈতিক প্রোগ্রামও হয়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৪টি সম্মেলন এখানে হয়েছিল। এখানে কনসার্টও হয়ে থাকে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর পর সেপ্টেম্বরের শেষে এখানে আরেকটি বড় কনসার্ট হয়। এ স্কয়ারে যত বড় বড় অনুষ্ঠান হয়েছে তার ৫ টির মধ্যে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এক নম্বরে আছে। ২য় হল ৮ মার্চ ১৯৭১ সালে আলী ফ্রেজিয়ার মুষ্টিযুদ্ধ। ৩ নম্বরে আছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৪টি সম্মেলন। ৪র্থ প্রেসিডেন্ট কেনেডির জন্মদিন পালন। অপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল এখানে ১৯৩৯ এর ফেব্রুয়ারীতে। অনুষ্ঠানটি ছিল নাজিবাদের সমর্থনে ২০০০০ লোকের সম্মেলন ও রেলি
ক্লজ ভরমেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশ প্রোগ্রামে গীটার বাজিয়েছিলেন। হ্যারিসনের কাছেই তার অবস্থান ছিল। তিনি বাস গিটারিস্ট হিসেবে পরিচিত। জন্ম ১৯৩৮ সালে জার্মানিতে। তিনিও অন্যান্যদের মতই ফ্রি লেন্সার হিসেবে বিভিন্ন ব্যান্ড এবং একক শিল্পীদের সাথে কাজ করেছেন। হ্যারিসন, রিংগো, জন লেননের সাথে কাজ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। রিভলভার নামে এক এ্যালবাম করে জনপ্রিয় হন। বিটলস, রক এন রোল, রিদম, ব্লু নামক ব্যান্ডে কাজ করেছেন।
জিম কেল্টনার কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ড্রাম বাজিয়েছিলেন। তার জন্ম ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি জন লেনন, বিটলস, রিংগো স্টার ও জর্জ হ্যারিসনের সাথে অনেক কাজ করেছেন। জিম কেল্টনার ফ্রি লেন্সার ড্রামার ছিলেন। তিনি কমপক্ষে ৩০ জন বিখ্যাত শিল্পী এবং বেশ কয়েকটি ব্যান্ড এর প্রোগ্রামে ড্রাম বাজাতেন।
জেসি এড ডেভিস কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এ গীটার বাজিয়েছেন এবং নেপথ্য কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি রেড ইন্ডিয়ান। জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় ১৯৪৪ সালে। তিনি তাজমহল নামে একটি ব্যান্ড হ্যারিসন, জন লেন্ এরিক ক্লিপটনের সাথে কাজ করেছেন। মৃত্যুর পর তাকে নেটিভ আমেরিকান হল অব ফেম আখ্যায়িত করা হয়। তিনি সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন। ৭১ সালে লিওন রাসেল ও এরিক ক্লিপ টনের সাথে তার এ্যালবাম প্রকাশ হয়।
এরিক ক্লাপটন (জন্ম ১৯৪৫ ব্রিটেন) কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অনুষ্ঠানের মুল গিটারিস্ট ছিলেন। তার অবস্থান ছিল হ্যারিসনের সাথে একেবারে সামনে। হ্যারিসনের সাথে কোন কোন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন হেরোইন মাদকাসক্ত। তাকে অনুষ্ঠানে পাওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। কয়েকবার তারিখ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩১ জুলাই উপস্থিত হয়েছিলেন। তাকে সর্বকালের ১০০ গিটারিস্ট এর একজন বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তিনি গায়ক এবং গীতিকারও।
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর প্রোগ্রামে নেপথ্য কণ্ঠ যারা দিয়েছিলেন।
নেপথ্য কণ্ঠ এবং কোরাসের জন্য হলিউড খ্যাত কয়েক শিল্পী আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল ডন নিক্স, জো গ্রিন, জেনি গ্রিন, মারলিন গ্রিন, ডলরেস হল, ক্লদিয়া লিনিয়ার।
ব্যাডফিঙ্গার
ব্যাডফিঙ্গার নামের যন্ত্রী দল কনসার্ট ফর বাংলাদেশ হলিউড হর্ন ও অন্যান্যদের সাথে যন্ত্র সঙ্গীত বাজিয়েছিল। ব্যাডফিঙ্গার ব্রিটেনের ওয়েলস এর একটি ব্যান্ড ও যন্ত্রী দল। বিটলস এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আপেল এর সাথে গাঁটছড়া বাধার পর তারা দলের এ নামকরন করেন। এর আগে তাদের নাম ছিল ইভেয়স। প্রতিষ্ঠার সময় এ দলের প্রায় সবাই ছিলেন টিন এজার। ষাটের দশকের মাঝামাঝি গড়ে উঠলেও দলটি জনপ্রিয়তা পায় ৭০ এর দশকে। ৭০ সালে হ্যাঁরিসনের একটি এ্যালবামে কাজ করার পর তার সাথে এ দলের সম্পর্ক গভীর হয়।
লিওন রাসেলঃ দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর গায়ক (এপ্রিল ২, ১৯৪২-নভেম্বর ১৩, ২০১৬) ছিলেন একজন জনপ্রিয় মার্কিন গায়ক ও গীতিকার। ২০১১ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম এ স্থান পান।] ৬০ বছরের কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলো বেস্ট সেলিং পপ গান উপহার দিয়েছেন।
ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মিউজিসিয়ানদের একজন হিসেবে তাকে গন্য করা হয় এবং ভ্রাম্যমাণ মিউজিসিয়ান হিসেবে হল অব ফেমের শিল্পীর সাথে তিনি সাথে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তিনি মোট ৩৩ টি অ্যালবাম ও প্রায় ৪৩০ টি গান রেকর্ড করেন।
বিলি প্রেসটন (জন্ম ১৯৪৬) কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর গায়ক
বিলি প্রেসটন একজন মার্কিন গায়ক, গীতিকার এবং কি বোর্ড পারফর্মার। তিনি ১৬ বছর বয়স থেকেই বিটলস এর সদস্য না হয়েও তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাকে পঞ্চম বিটলস বলা হত। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এ তিনি গান গাওয়ার পাশাপাশি সারা সময় বাজিয়েছেন অর্গান এবং পিয়ানো। বিটলস ভাঙ্গার পর দীর্ঘদিন জর্জ হ্যারিসনের সাথেও কাজ করেন।
সেদিনের আরও কিছু শিল্পী ও এক্সক্লুসিভ ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।