You dont have javascript enabled! Please enable it! Draft - সংগ্রামের নোটবুক

This is a temporary post for collecting data. Not for posting and not for publishing. Saved only as readable for the editors. Not clickable and not downloadable.

ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র
রতন লাল চক্রবর্তী

ভূমিকা
বাঙালি জাতিসত্তার উদ্ভব ও বিকাশে ভাষা আন্দোলন একটি অতুলনীয় উপাদান। জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব সর্বাধিক। নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা ভিত্তিক জাতিসত্তার উদ্ভব এবং উন্নয়নে ভাষা আন্দোলন যে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত নেই বললে অত্যুক্তি হবে না। এক কথায় বলা যেতে পারে যে ভাষা আন্দোলন সমকালীন জনমনে প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং এই প্রভাব যে চৈতন্যের সৃষ্টি করে তাই শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল স্বাধিকার আন্দোলনে। ভাষা আন্দোলনের অনেক অজানা দলিলপত্র এই গ্রন্থে সংযােজন করা হয়েছে। এই প্রামাণ্য গ্রন্থ ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নয় বরং একে মূল্যবান দলিলপত্রের সংকলন বলা যায়। এখানে একটা কথা বলা প্রয়ােজন যে এই গ্রন্থে ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিত্ব ও নেতৃবৃন্দের নাম পাওয়া যাবে না, কেননা দলিলপত্রের অধিকাংশই সরকারি নথিপত্র। এজন্য এই গ্রন্থকে পক্ষপাতিত্বের অনুশীলন হিসাবে অভিহিত করা সমীচীন হবে না। দলিলপত্রের সীমাবদ্ধতাই এর মূল কারণ।
পৃষ্ঠা: বাঙালির জাতীয় ইতিহাস রচনার এক অমূল্য সম্পদ। এখানে লুক্কায়িত আছে বাঙালি জাতির গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামী চেতনার সাক্ষ্য। এই গ্রন্থে সংকলিত সকল দলিলপত্র মৌলিক উপাত্ত ও আকর। এসব দলিলপত্রের প্রাপ্তিস্থান মূলত চারটি, যেমন—বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেকর্ড রুম, ময়মনসিংহ জেলা কালেক্টরেট রেকর্ড রুম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। সঙ্গত কারণেই দলিলপত্রের উৎসস্থল এবং দলিলপত্রের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা প্রয়ােজন। বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভসে ১৭৬০ সালের ৩০ ডিসেম্বর হতে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানি আমলের বহুপ্রকার সরকারি নথিপত্রের এক বিশাল সমাবেশ রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এসব দলিলপত্রের খােজ খবর হাতে গােনা কয়েকজন ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউই জানেন না ; জানার আগ্রহও নেই এবং জানানাের ব্যবস্থাও নেই। এসব দলিলপত্রের প্রকৃতি বিবিধ এবং আকার, আকৃতিও বিবিধ। ঔপনিবেশিক আমলে প্রবর্তিত রেকর্ড সংরক্ষণ বিধি অনুযায়ী দলিলপত্রসমূহ বিনষ্ট করার সময়সীমার উপর নির্ভর করে এদের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। বাংলার সচিবালয়ের বিকাশের সাথে সাথে দলিলপত্রসমূহ বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়। এসব দলিলপত্র ১৯৮৭ সালের পূর্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ছিল এবং সৌভাগ্যের কথা পর্যাপ্ত জনবল কম থাকার জন্য সচিবালয় রেকর্ডরুম কর্তৃপক্ষ নিয়মানুযায়ী সব দলিলপত্র বিনষ্ট করতে পারেন নি। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আরকাইভস্ অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হয় এবং সচিবালয়ের প্রায় সকল দলিলপত্র বাংলাদেশ আরকাইভসে স্থানান্তর ও সংরক্ষণ করা হয়। যে-সব বিভাগের নথিপত্র হতে এসব দলিলপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে তা হলাে রাজনৈতিক, স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক), পুলিশ, রাজনৈতিক (প্রচার), স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক গােপনীয় প্রতিবেদন), আইন, শিক্ষা ও পরিকল্পনা। এসব দলিলপত্র টাইপকৃত ও হাতের লেখা যা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বোধ্য। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত সরকারি দলিলপত্রের সন্ধান শুরু করি ১৯৮৫ সালে। পূর্বে উল্লেখিত বিভাগসমূহে ‘এ’ এবং ‘বি’ প্রসিডিং শিরােনামে কয়েকশত বান্ডিল রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এসব দলিলপত্রের কোনাে নির্ঘণ্ট নেই। বিভিন্ন সময়ে দলিলপত্র ধ্বংস করার ফলে প্রাপ্ত নির্ঘন্ট অকার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম অক্ষুন্ন রেখে এত বিশাল পরিমাণ নথিপত্র দেখতে এক যুগেরও বেশি সময় লেগেছে। অধিকাংশ সময় কয়েকশ বান্ডিল দেখেছি কিন্তু এক লাইন তথ্য খুঁজে পাইনি। ক্লান্ত হয়েছি তবুও তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা রেখেছি অব্যাহত।
অনুরূপ কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডরুমে কাজ করা। একথা বলা প্রয়ােজন যে তথ্যের দিক হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেকর্ডরুম খুবই সমৃদ্ধ, কিন্তু সকল নথিপত্র একপ্রকার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। অপ্রশস্ত জায়গা, অপর্যাপ্ত জনবল এবং রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লােকের অভাব এখানে রয়েছে। মৃত, শহীদ, পেনশনপ্রাপ্ত সকল শিক্ষকের ব্যক্তিগত নথিপত্র ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ড, প্রতিটি বিভাগের নিয়ােগ ও পদোন্নতি, সাধারণভাবে রেজিস্ট্রারের দপ্তরের রেকর্ড, ফলাফল, ও পাঠক্রম ইত্যাদি বিষয়ের তথ্যাদি এখানে পাওয়া যায়। ডি রেজিস্ট্রার শিরােনামে কয়েকশ বান্ডিল রেকর্ড রয়েছে যা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেই। এই গ্রন্থে সংকলিত নথিপত্রের উল্লেখযােগ্য অংশ ‘ডি রেজিস্ট্রার হতে সংগৃহীত। কিন্তু এসব দলিলপত্রের উৎস উল্লেখ লক্ষ্য করে যদি কেউ মনে করেন যে ইচ্ছা করলেই তিনি তার প্রার্থিত দলিলপত্র সহসাই হাতে পাবেন, তা হলে খুবই ভুল হবে। কেননা উৎস উল্লেখ করা হয়েছে নথি (File) অনুযায়ী এবং নথিগুলাে এলােমেলােভাবে বান্ডিল করে বাঁধা আছে। নথিপত্রের একটি তালিকা থাকলেও তা কার্যত ব্যবহার অনুপযােগী। একই কথা প্রযােজ্য হতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস্ হতে সংগৃহীত নথিপত্রের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সময় এসব নথিপত্র ধ্বংসের ফলে নথিপত্রের কালানুক্রমিকতা বিনষ্ট হয়ে গেছে।
ময়মনসিংহ জেলা কালেক্টরেট রেকর্ডরুম হতে সংগ্রহ করা হয়েছে শহীদ পরিবারদের ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত কিছু দলিলপত্র এবং ভাষা শহীদ আবদুল জববারের পারিবারিক নথিপত্র। বাংলাদেশের সকল জেলাতেই রেকর্ডরুম রয়েছে, তবে ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্ট জেলা কালেক্টরেট রেকর্ডরুমগুলাে সঙ্গত কারণেই পুরানাে এবং মূল্যবান দলিলপত্রও সেখানে পাওয়া যায়। কিন্তু সর্বত্রই দলিলপত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দুরবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এর ফলেই প্রার্থিত তথ্য সংগ্রহ অতীব কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। তথ্য সংগ্রহের আর একটি স্থান হলাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে ‘ঢাকা প্রকাশ শীর্ষক সাপ্তাহিক পত্রিকার অধিকাংশ কপি। উল্লেখ্য যে ১৮৬৪ সালে ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। তবে ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ‘ঢাকা প্রকাশের অবস্থাও করুণ। আশার কথা এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা প্রকাশের প্রাপ্ত সকল কপি মাইক্রোফিক্সের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। তবে ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা দিনগুলিতে‘ঢাকা প্রকাশের কোনাে সংখ্যা নেই। এও জানা যায় নি যে এ সময় ঢাকা প্রকাশ প্রকাশিত হয়েছিল কিনা? পাঠক অবশ্যই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন যে এই গ্রন্থে সংকলিত পত্রিকার মধ্যে কেবল ‘ঢাকা প্রকাশের আধিক্য কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে যে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে ইতঃপূর্বে উল্লেখিত সকল গ্রন্থে স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকাটির কোনাে ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না বলেই এই গ্রন্থের একটি অংশে ‘ঢাকা প্রকাশ হতে প্রাপ্ত তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। একইসাথে ইতঃপূর্বে অনুল্লেখিত ইংরেজি, বাংলা পত্রিকা ও পুস্তিকার তথ্য এই গ্রন্থে সংযােজন করা হয়েছে ভবিষ্যতে গবেষণার স্বার্থে। পঞ্চাশের দশকে বিশেষ করে ১৯৫২ সালে ভারত ও পাকিস্তানের কিছু কিছু দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় পাকিস্তান সরকারের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতাে। এসব পত্রিকার মধ্যে ইংরেজিতে প্রকাশিত ‘মর্নিং নিউজ’ (ঢাকা), ‘ডন’ (করাচী), সিন্ধ অবজারভার’ (করাচী), ‘পাকিস্তান টাইমস্ (লাহাের), দি স্টেটসম্যান’ (কলিকাতা ও দিল্লী), ‘পাকিস্তান পােস্ট’ (ঢাকা), বাংলা ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক আজাদ’, ‘ইনসাফ’, ‘সংবাদ (ঢাকা) ও ‘আজান (চট্টগ্রাম) ; উর্দু ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক পাসবন’ (ঢাকা) ; ইংরেজিতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘দি ইস্টার্ন হেরাল্ড’ (সিলেট), দি মেইল’ (ঢাকা) এবং বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নকীব’ (বরিশাল) ছিল উল্লেখযােগ্য। সিলেট হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘নও বেলাল’ ছিল সরকারিভাবে কালাে তালিকাভুক্ত পত্রিকা। (Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archaives. Political Department, Branch-Home, Bundle-63, September, 1952, Proceedings Nos. 51-53.)
উল্লেখ্য যে এসব পত্রিকার উল্লেখযােগ্য অংশ ইতঃপূর্বে উল্লেখিত গ্রন্থে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকা প্রকাশ ব্যতীত অন্যান্য কিছু বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য এই সংকলনে পাওয়া যাবে। পাঠক হয়তাে বিস্মিত হবেন যে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার তথ্য ইংরেজিতে মুদ্রিত দেখে। এখানে সংকলকের কিছুই করণীয় নেই। কেননা সরকারি ভাষা তখন ছিল ইংরেজি এবং কোনাে বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত আপত্তিকর (?) তথ্য সরকারের উর্ধ্বতন মহলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাতে হলে পত্রিকার সেই অংশটুকু ইংরেজিতে অনুবাদ করে নােট দেয়া হতাে। এসব তথ্য আরকাইভস্ এ ইংরেজিতেই পাওয়া গেছে—যদিও উল্লেখিত পত্রিকাটি প্রকাশিত হতাে বাংলা ভাষায়। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণ সম্পর্কে প্রণীত বিচারপতি এলিসের কমিশন বিবরণীটি পুস্তিকা আকারে সরকারি কাজে ব্যহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই বিবরণীটি ‘ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত হবার কথা। কিন্তু ‘ঢাকা গেজেট’ এর এই সংখ্যা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। সিলেটের The Eastern Herald পত্রিকা পাওয়া গেছে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগারে। তবে উল্লেখ্য যে এখানেও এই পত্রিকার সামান্য কয়েকটি কপি রয়েছে। কিছু কিছু পুস্তিকা লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি ও রেকর্ড হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে গবেষণা কর্ম ও তথ্য সংকলনের কাজ হয়েছে বেশ কিছু, তবে এখনাে এ বিষয়টি নিয়ে বহুমাত্রিক গবেষণা ও তথ্য সংকলনের সুযােগ রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে অধ্যাপক আবুল কাশেম সম্পাদিত ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উরদু’, ফেরদৌস খানের ‘A Comparative Study of Three Scripts'(১৯৪৮) এবং বাংলা হরফের সংস্কার’ (১৯৪৯) শীর্ষক সাহিত্যকর্ম ভাষা আন্দোলনের পক্ষে বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র-জনতাকে উদ্দীপিত করে। সরকারিভাবে নিপীড়ন ও অত্যাচারের যুগে এ বিষয় নিয়ে সর্বপ্রথম উল্লেখযােগ্য গবেষণা সম্পাদন করেন অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর। পূর্ব-বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ শীর্ষক দুটি সুবিশাল গবেষণা গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে (মাওলা ব্রাদার্স, ১৯৭০ ও ১৯৭৫)। বদরুদ্দীন উমর এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যে নবদিগন্ত উন্মােচন করেছেন তা উত্তরসূরিদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।

‘ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল’ শীর্ষক দু’খানা গ্রন্থ সংকলন করে (বাংলা একাডেমী, ১৯৮৪-৮৫) তিনি এ বিষয়ে বহু দুষ্প্রাপ্য আকর উপাত্ত জনসমক্ষে তুলে ধরেন। বস্তুত, এই প্রামাণিক গ্রন্থদ্বয়ে যেসব মৌলিক দলিলপত্র প্রকাশ করা হয়েছে তা হয়তাে অন্য কোথাও একত্রে পাওয়া যাবে না। বশীর আলহেলাল এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ (বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫) গ্রন্থে অনেক নতুন তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। নতুন আঙ্গিকে বশীর আলহেলাল ভাষা আন্দোলন ও সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কিত ইতিহাস রচনা করেছেন দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকা, পুস্তিকা ও লিফলেট ইত্যদি তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে। উল্লেখ্য যে বদরুদ্দীন উমর ও বশীর আলহেলাল উভয়েই তাদের রচনায় অন্যান্য উৎসের সাথে সমকালীন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাসমূহ ব্যবহার করেছেন। এসব পত্রিকার মধ্যে দৈনিক আজাদ, নওবেলাল, মনিং নিউজ, সাপ্তাহিক সৈনিক, পূর্ববাংলা প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। ড. সুকুমার বিশ্বাস এর কষ্টসাধ্য সংকলন ‘বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন : কলকাতার সংবাদ পত্র (বাংলা একাডেমী, ১৯৯৫) এ বিষয়ে একটি নতুন সংযােজন। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘মতামত’ ও দৈনিক ‘Statesman’-এ প্রকাশিত সংবাদ ও তথ্যাদি এই গন্থের উল্লেখযােগ্য বিষয়। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আরাে বেশ কিছু গ্রন্থ স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে, তবে এসব গ্রন্থে পূর্বে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশিত তথ্যের পুনরাবৃত্তি লক্ষণীয়। বাংলা একাডেমী হতে প্রকাশিতব্য আবু মােহাম্মদ দেলােয়ার হােসেন সম্পাদিত ‘ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস’ এ সময়ের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস বলা যায়। বর্তমান সংকলনটি ইতঃপূর্ব প্রকাশিত সকল গ্রন্থ হতে অনেকাংশে স্বতন্ত্র, কেননা এই প্রামাণিক গ্রন্থে সংযােজিত দলিলপত্রের অধিকাংশই সরকারি নথিপত্র যা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস্ েসংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত এ-সব দলিলপত্রের ব্যবহার ছিল সাধারণভাবে নিষিদ্ধ, ফলে সঙ্গত কারণেই এসব দলিলপত্রে প্রাপ্ত তথ্য গবেষণার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয় নি। ১৯৯১ সালে ভাষা আন্দোলন : দলিলপত্র’ শিরােনামে আমার একখানা ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সে পুস্তিকায় প্রকাশিত তথ্য এখানেও সংযােজন করা হয়েছে। তবে পূর্বের পুস্তিকার তুলনায় বর্তমান প্রামাণ্য গ্রন্থে সংকলিত তথ্য মান ও পরিসরের ক্ষেত্রে অনেক উন্নত পর্যায়ের।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকারি নথিপত্র পাওয়া গেছে ইংরেজি ভাষায় টাইপ ও হস্তাক্ষরে লিখিত অবস্থায়। প্রতিবেদন সমূহের বেশ কিছু অংশ টাইপকৃত অবস্থায় পাওয়া গেলেও বিভাগীয় মন্তব্য যা ‘অফিস নােট হিসেবে অভিহিত তা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতের লেখা। এসব হাতের লেখা একপ্রকার পাণ্ডুলিপি যা পাঠোদ্ধার ছিল অতীব কষ্টের ব্যাপার। অন্যদিকে নথিপত্রে উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা নিজস্ব মতামত জানিয়ে অস্পষ্টভাবে স্বাক্ষর করেছেন মাত্র, খুব কমক্ষেত্রেই তাদের পদমর্যাদা জানা গেছে। ফলে ‘অফিস নােটস’ এর বিভিন্ন স্থানে এসকল কর্মকর্তার নাম ও পদ-মর্যাদা উল্লেখ করা সম্ভব হয় নি।
এই তথ্য গ্রন্থে কিছু পুস্তিকা ও পাণ্ডুলিপির উল্লেখ রয়েছে, যা ভাষা বিতর্ককে কেন্দ্র করে রচিত ও প্রকাশিত—যেমন, ‘World Language of India and Pakistan, ‘Pakistan Language formula’। বহু অনুসন্ধান করেও এসব প্রকাশিত পুস্তিকা বা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কোনাে খোঁজ পাওয়া যায় নি। সমকালীন জনমানসের প্রকৃতি জানার ক্ষেত্রে এসব পুস্তিকা খুবই সহায়ক হতাে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র বিভাগ ভাযা বিতর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে প্রকাশিত পুস্তিকা বা গ্রন্থ পরীক্ষা করতাে এবং আপত্তিকর মনে হলে বাজেয়াপ্তও করতাে। সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কোনাে পুস্তিকা বা গ্রন্থ প্রকাশের পূর্বে পাণ্ডুলিপি স্বরাষ্ট্র বিভাগে জমা দিয়ে অনুমতি নিতে হতাে। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণের পর যে-সব প্রতিবাদলিপি এই গ্রন্থে সংযােজন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। পূর্ববঙ্গ সরকার। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট যে-সব প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়েছে, সে সবই এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। প্রতিবাদলিপির একটা বড় অংশ এসেছে সমকালীন আইনজীবী সমিতির পক্ষ হতে।
এই প্রামাণিক গ্রন্থের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক। বর্তমান প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন বলতে ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাই বােঝে। প্রকৃতপক্ষে ভাষা আন্দোলন দু’টি পর্যায়ে পরিচালিত হয়েছিল। প্রথম পর্যায় হলাে ১৯৪৭ হতে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৫২ সাল হতে। ইতঃপূর্বে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রকাশিত প্রায় সকল গ্রন্থ মূলত বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থাৎ সমকালীন পত্র-পত্রিকা, প্রচারপত্র ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে রচিত। অবশ্য বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পূর্বে সরকারি নথিপত্র ব্যবহারের অধিকার সাধারণভাবে ছিল না। ফলে অনেক তথ্য অগােচরে রয়ে গেছে এবং এসব তথ্যের অভাবে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। বর্তমান উৎস গ্রন্থ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপ্তিতে ভাষা আন্দোলনের বহুমাত্রিক বিষয়সমূহের উপর আলােকপাত করেছে যা ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নতুন সুযােগ সৃষ্টি করবে। বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবি কেবল ভাষা আন্দোলনের কারণ নয়; ঠিক তেমনি ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘঠিত ঘটনাবলীও ভাষা আন্দোলনের সার্বিক রূপ নয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির অধিকার ছিল একটি মৌলিক প্রশ্ন—যা রাষ্ট্রভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে উখিত হয় এবং এর ফলে যে জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয় তার অনিবার্য পরিণতি ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। তবে বাঙালি জাতির আত্মোপলব্ধি, ঘাত-প্রতিঘাত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘকালে সৃষ্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা এবং তার বিকাশের ধারা সম্পর্কে আলােকপাত করা এই প্রামাণিক গ্রন্থের মুখ্য বিষয় নয়। কেবল ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত ঘটনাবলী, সরকারি-নীতি, বাংলা ভাষার প্রচলন, ভাষা-শহীদদের ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি বিষয়ে সরকারি নথিপত্র ও সমকালীন পত্র-পত্রিকা হতে মৌলিক তথ্য উপস্থাপনই এই গ্রন্থের প্রধান উদ্দেশ্য।
দলিলপত্রের ভাষা বাংলা ও ইংরেজি হলেও এখানে ইংরেজি দলিলপত্রের পরিমাণই বেশি। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত দলিলপত্র সবই ইংরেজি ভাষায় রচিত; এমনকি বাংলা ভাষার প্রচলন সম্পর্কিত দলিলপত্রের ভাষাও ইংরেজি। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান আমলে সরকারি তথা, অফিস-আদালতের ভাষা ছিল ইংরেজি। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলা ও উর্দু উভয়কেই রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও বিশ (২০) বছরের জন্য ইংরেজিকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসাবে ব্যবহারের শর্ত থাকে। একই সাথে রাষ্ট্রভাষাসমূহ নিজ নিজ প্রদেশে চালু করার সুযােগ থাকলেও বাংলার ব্যবহার ও প্রচলন হতে বিলম্ব হয়। পাকিস্তান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ছিলেন অবাঙালি, অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম, প্রশিক্ষণ সবই ছিল ইংরেজিতে। ফলে দীর্ঘকাল ইংরেজি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা হােক, দলিলপত্র দুটি ভাষায় থাকার জন্য একটি গ্রন্থে এদের আয়ােজন ও বিন্যাসে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পৃষ্ঠা: ‘ শীর্ষক প্রামাণিক গ্রন্থে ইংরেজির ব্যাপক ব্যবহার উৎসাহী পাঠকের মনে জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংকলকের করার কিছুই ছিল না। বাংলা ও ইংরেজি ভাষা নির্বিশেষে দলিলপত্রের কালানুক্রমিক বা বিষয়ানুক্রমিক আয়ােজন বা বিন্যাস মুদ্রণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করবে এবং কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে পাঠককে বিভ্রান্ত করবে। দলিলপত্রের সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিষয়ভিত্তিক আয়ােজন করা হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থে আয়ােজিত অধ্যায়সমূহের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলা দলিলপত্র নেই বিধায় বাংলা দলিলপত্র কালানুক্রমিকভাবে দেয়া হয়েছে। তবে বাংলা ও ইংরেজি নির্বিশেষে সকল দলিলপত্রের একটানা নম্বর দেয়া হয়েছে। একই সাথে এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় তথা দলিলপত্রের আলােচ্য বিষয়’ শীর্ষক রচনার দলিলপত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে। আলােচনার সময় প্রতিটি ক্ষেত্রে দলিলপত্রের যে নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তা পাঠক ও গবেষককে প্রার্থিত তথ্য দ্রুত পেতে সাহায্য করবে।
‘দলিলপত্রের আলােচ্য বিষয়’ শীর্ষক অধ্যায়ে বাংলা ও ইংরেজি উভয় প্রকার দলিলপত্রের অতি সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হয়েছে। অধ্যায়সমূহের উপর ভিত্তি করে এই আলােচনায় প্রাসঙ্গিক তথ্যাদিও উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে এই আলােচনা অতীব সংক্ষিপ্ত ; বিস্তারিত তথ্যের জন্য উৎসাহী পাঠক ও গবেষককে উল্লেখিত নম্বর অনুযায়ী মূল দলিলপত্র দেখতে হবে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে সংযােজন করা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি সম্পর্কিত মূল দলিলপত্র, যেখানে দেখা যাবে সুযােগ-সুবিধা হতে বাঙালির বঞ্চনার অভিযােগ কিভাবে ভাষা আন্দোলনের সাথে একীভূত হয়েছিল। সরকারি কর্মচারীগণ ছাত্র-জনতার সাথে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। তৃতীয় অধ্যায়ে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের পর বিভিন্ন স্তরের জনগণের প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, ছাত্র ও জনতা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার গৃহীত ব্যবস্থা, ভাষা আন্দোলনের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, ভাষা আন্দোলনের সংবাদ প্রচারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারত সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এই অধ্যায়ের প্রধান বিষয়।
ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণের ফলে সৃষ্ট গণদাবি উপেক্ষা না করতে পেরে মাসাধিককাল পর গঠিত হাইকোর্টের বিচারপতি টি এইচ, এলিস কর্তৃক প্রণীত তদন্ত কমিশনের মূল বিবরণী চতুর্থ অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য কোনাে ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দল–যারা এই আন্দোলনের শক্তি, তারা এই তদন্ত কমিশন বর্জন করে। একদেশদর্শী উদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে কিভাবে টি.এইচ. এলিস হাইকোর্টের একজন বিচারপতি হয়েও ২১ ফেব্রুয়ারির পুলিশের গুলিবর্ষণকে যথার্থ বলে প্রমাণ করলেন তা জনসমক্ষে আনয়নের জন্যই তদন্ত কমিশনের মূল বিবরণীটি এই অধ্যায়ে সংযােজন করা হয়েছে।
পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলা ভাষা প্রচলনের বিষয়টির উপর প্রামাণিক তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে, পাশাপাশি উর্দু প্রচলনের জন্য সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ধারা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রচলন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে তাও এই অধ্যায়ের একটি উপজীব্য। ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভাষাশহীদদের ক্ষতিপূরণ দানের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এর বাস্তবায়ন সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। শহীদ শফিউর রহমান হাইকোর্টের একজন কর্মচারী ছিলেন বলে ঘটনার চার বছর পর তার পরিবার মাসিক পেনশন পান। অন্যদিকে শহীদ আবদুল জব্বারের পরিবার ১৯৫৬ সালের গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পান। ভাষাশহীদের মধ্যে আর কারাে সম্পর্কে এ বিষয়ে কোনাে তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে জানা যায় যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার শহীদ আবদুল জব্বারের মাতা সাফাতুন্নেছা বেগমকে ঢাকার তেজকুনী পাড়ায় একখণ্ড জমি একটি ছােট ঘরসহ বরাদ্দ করেছিলেন। শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। প্রামাণিক বাংলা দলিলপত্র, বিষয়-ভিত্তিক নয়; বরং পূর্বোক্ত অধ্যায়গুলাের সমর্থনে প্রামাণিক ও সমসাময়িক বাংলা পত্রিকায় প্রাপ্ত তথ্য। পাঠক ও গবেষক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করবেন যে তৃতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়ে কিছু ইংরেজি পত্রিকার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে—একটি হলাে প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্যটি হলাে মুদ্রণের ক্ষেত্রে সমরূপতা।
এরূপ একটি প্রামাণিক গ্রন্থ প্রণয়ন মেধার চেয়ে কায়িক পরিশ্রম সাপেক্ষ। এক যুগেরও বেশি সময় লেগেছে এসব তথ্যাদি খুঁজে পেতে। বাংলাদেশ সচিবালয় রেকর্ডরুম, জাতীয় আরকাইভস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেকর্ডরুম, ময়মনসিংহ কালেক্টরেট রেকর্ডরুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করেছি। উল্লেখ্য এসব প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত নথিপত্রের বিভাগ অনুযায়ী তালিকা থাকলেও তথ্যাদির কোনাে প্রকার শ্রেণীবদ্ধ বর্ণনামূলক তালিকা (Classified Inventory) নেই। ফলে এসকল প্রামাণিক তথ্য সংগ্রহে সময় লেগেছে প্রচুর। এক্ষেত্রে প্রচেষ্টা আমার একক হলেও সাহায্য ও সহযােগিতা পেয়েছি বহুজনের। ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকা হতে তথ্যাদি কপি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ আরকাইভস্ হতে তথ্য সংগ্রহের জন্য সহযােগিতা করেছেন প্রশান্ত কুমার মিত্র, রতন কুমার বনিক। পাণ্ডুলিপি সুষ্ঠুভাবে তৈরি করার ক্ষেত্রে সহযােগিতা করেছেন আমার সহধর্মিনী কল্যাণী চক্রবর্তী ও আত্মজা লােপামুদ্রা চক্রবর্তী। ইংরেজি তথ্যাদি কম্পিউটারে তােলার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন উত্তম কুমার সমদ্দার। আমার প্রিয় ছাত্র আবদুল মালেক (বিপ্লব) এই পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের সকল ক্ষেত্রে পরামর্শ, মেধাগত ও কায়িক শ্রম দিয়েছেন। আমার ছাত্রী ফাতেমা বেগম, ও নাজনীন আক্তার প্রুফ দেখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। এদের সকলের নিকট আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। একইসাথে আমি বাংলাদেশ সচিবালয় রেকর্ডরুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি ও রেকর্ডস্ এবং ময়মনসিংহ জেলা কালেক্টরেট রেকর্ডরুমের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি সমানভাবে ঋণী, যাদের পূর্ণ সহযােগিতা ব্যতীত এসব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হতাে না। আমার পরিশ্রম সফল হবে যদি গবেষক ও পাঠকবৃন্দ এসব তথ্যের আলােকে ভাষা আন্দোলনের বিষয়কে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। আমি তাদের দিকেই তাকিয়ে আছি।
রতন লাল চক্রবর্ত্তী
ইতিহাস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথম অধ্যায়
দলিলপত্রের আলােচ্য বিষয়
১. ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টি উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করে। ১৯৪৭ সালে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে এদেশবাসীর আন্দোলনের অবসান হয় বটে, কিন্তু নতুন রাজনৈতিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। ভৌগলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈপরীত্য থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ধর্মীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বারােশত মাইল দূরে অবস্থিত দুটি প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র মুসলিম লীগের একক অবদান বলে মনে করা হয় এবং ক্ষমতা ও নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের মাত্রাতিরিক্ত প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। পূর্ববাংলার সুদীর্ঘ লালিত ধর্ম নিরপেক্ষ ঐতিহ্য ও শক্তি নতুন রাজনীতির জটিল ও কুটিল আবর্তে পতিত হয়ে ক্ষণকালের জন্য অতলে তলিয়ে যায়। পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বেই রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর নাম প্রস্তাব করেন। প্রতিবাদ জানান ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কলকাতা হতে প্রকাশিত দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই একটি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে অভিমত জ্ঞাপন করেন। একইসাথে ড. শহীদুল্লাহ উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের প্রস্তাব করেন। প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন উত্থাপন না করলেও যে সময়ে সিলেট কলেজের অধ্যক্ষ আই.এইচ. জুবেরী (পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শর্তসাপেক্ষে পাকিস্তান মেনে নেবার পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। (ডন, ১৩ জুন, ১৯৪৭) বিষয়টি উল্লেখের প্রাসঙ্গিকতা এখানেই নিহিত যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন ছিল না, মূলত এই আন্দোলন ছিল স্বাধিকার আদায়ের দাবি। এই প্রামাণিক গ্রন্থে সংযােজিত বিভিন্ন দলিলপত্রে এর প্রমাণ রয়েছে। যাই হােক, পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাঙালিদের নিকট যে প্রশ্নটি সর্বাগ্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয় তা হলাে রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘােষণা করা না হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে মর্যাদা দেবার পক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। (৪০) রাষ্ট্রক্ষমতায় সত্যিকার অর্থে বাঙালির প্রাধান্য না থাকলেও পূর্ব-বাংলার জনমত ছিল বাংলা ভাষার পক্ষে। (৭০) ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর হতে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় করাচীতে। এই সম্মেলনে পূর্ববাংলা হতে বেশ কয়েকজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদ যােগদান করেছিলেন। তাদের মধ্যে পূর্ববাংলার শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার, শিক্ষা সচিব ফজলে করিম, জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক কুদরত-ই-খুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ হাসান, আহসানউল্লা, প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাকিম আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পি. মাহেশ্বরী ও সিলেট কলেজের অধ্যক্ষ আই.এইচ. জুবেরীর নাম উল্লেখযােগ্য।

পৃষ্ঠা: ২
এই সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও তথ্যমন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের পক্ষে অভিমত জ্ঞাপন করেন। (৪) এখানেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ১৯৪৭ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কমিটির বিবরণী ও যৌথ কমিটির সিদ্ধান্তসমূহ পাশ করা হয় যেখানে সমর্থন ছিল উর্দু ভাষার পক্ষে। এ বিষয়ে পূর্ববাংলার সদস্যদের একাংশ ভিন্নমত পােষণ করেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সমমর্যাদা দানের দাবি উত্থাপিত হয়।
২. বাংলা ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত উল্লেখযােগ্য ঘটনাবলীর মধ্যে সর্বাগ্রে পলাশী ব্যারাক ও সচিবালয়ের ঘটনার উল্লেখ করতে হয়। এই ঘটনার উৎস ছিল উর্দু ভাষার পক্ষে প্রচার ও জনসভার আহ্বান। ঢাকার চকবাজারের উর্দুভাষীগণ ১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর চকবাজার মসজিদের সামনে এক জনসভার আয়ােজন করে। জনসভার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল উর্দুকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা। মুকুল’ নামের একখানা বাসে কতিপয় উর্দুভাষী মাইকযােগে জনসভার ঘােষণা তথা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। (৭২) একইসাথে তারা একটি প্রচারপত্র জনসাধারণের নিকট বিতরণ করে। সমকালীন পুলিশ রিপাের্টে জানা যায় যে ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল দশটায় চকবাজার হতে এই প্রচার কার্য শুরু হয় এবং দুপুর নাগাদ বাসটি পলাশী ব্যারাকের সামনে পৌছে। পলাশী ব্যারাক তখন ঢাকাবাসীর সাথে সরকারি কর্মচারী ও ছাত্রদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতাে। পলাশী ব্যারাকের সন্নিকটেই ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। উর্দুভাষী প্রচারণাকারীরা পলাশী ব্যারাকের জনগণ প্রচারণাকারীদের উর্দুর পক্ষে প্রচারণা ও আপত্তিকর বক্তব্য পেশ হতে বিরত থাকতে বলে। জনগণ বিশেষভাবে প্রচারপত্রে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র বিরােধিতা করে, কেননা এই বক্তব্য ছিল খুবই আপত্তিকর। এই প্রচারপত্রের সারমর্ম হলাে : “উর্দু মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। এই ভাষার বিরুদ্ধে যে কথা বলিবে সে কাফের। এই ধরণের কাফের বা বিধর্মীদিগকে শায়েস্তা করিতে হইবে এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।” (ঢাকা প্রকাশ, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৭, পৃ. ২) ক্রমে এই উর্দুভাষীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাক-বিতণ্ডা শুরু হয় এবং শেষে তা সংঘর্যের রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে পলাশী ব্যারাকে বসবাসরত সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ জনগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উর্দুভাষী বাস আরােহীগণ পরাস্ত হয়ে স্থান ত্যাগ করে। কিন্তু প্রায় আধঘণ্টা পরে কয়েকটি বাসে বহুসংখ্যক উর্দুভাষী লাঠিসােটা নিয়ে পুনরায় পলাশী ব্যারাকে ফিরে আসে এবং পলাশী ব্যারাকে আক্রমণ চালায়। তারা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাস আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। তাদের আক্রমণে বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র ও জনতা আহত হয়।
এই ঘটনার পর ছাত্র এবং সরকারি কর্মচারীগণ পলাশী ব্যারাকের অভ্যন্তরে এক প্রতিবাদ সভা করে। সভা শেষে তারা মিছিল করে সচিবালয় অভিমুখে অগ্রসর হয়। পুলিশ রিপাের্ট অনুযায়ী মিছিলকারীরা তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল হামিদের বাসভবনে পেঁৗছে এবং তাকে নিশ্চয়তা প্রদানে বাধ্য করে যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। মন্ত্রী আবদুল হামিদকে সাথে নিয়ে মিছিলকারীরা সচিবালয়ের সমীপবতী হয় এবং সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। এখানে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা সচিবালয় এবং সেখানে পাহারায় নিয়ােজিত পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে সরকারিভাবে অভিযােগ উত্থাপিত হয়। (১)

পৃষ্ঠা: ৩
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের দাবি অব্যাহত থাকে, যদিও ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানে আগ্রহী ছিল। কিন্তু বাঙালির দাবি ছিল বাংলা ভাষাকে উর্দু ভাষার সাথে সমানভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দান। এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। তিনি রমনা রেসকোর্সের জনসভায় উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। (৭৩) একই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ভাষণ দান করেন। মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার দাবি উদ্দেশ্যপ্রণােদিত এবং বিদেশী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি ভারতীয় কার্যকলাপের প্রতি ইঙ্গিত করে এবং তাদের সাথে পূর্ববাংলার কতিপয় স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদদের অভিযােগ এনে এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ ও সক্রিয় থাকার পরামর্শ দেন। সরকারের পূর্ববর্তী নীতি অনুযায়ী বাংলাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে কোনাে বাধা নেই বলে তিনি জানান। উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার যৌক্তিকতা প্রদর্শন করে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ভাষণে বলেন যে রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। (৬) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমবেত ছাত্রগণ তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ করে। উল্লেখ্য যে ১৯৫৬ সালে প্রবর্তিত পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে একটি রাষ্ট্রেই দুটি রাষ্ট্রভাষা তথা বাংলা ও উর্দুর স্বীকৃতি ছিল।
পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি না দেবার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তমুদ্দিন মজলিস ও পূর্ববঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ এক সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। এই সাধারণ ধর্মঘটে ছাত্ররা সেক্রেটারিয়েট ও হাইকোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের সামনে পিকেটিং করে। ছাত্রদের পিকেটিং ছিল শান্তিপূর্ণ, এতদসত্ত্বেও পুলিশ ছাত্রদের উপর অত্যাচার করে। ছাত্রদের অভিযােগ যে এই পুলিশী জুলুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন। পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদে তথা আইন সভায় পুলিশী জুলুমের বিষয়টি আলােচনার জন্য সাথে সাথেই উত্থাপন করা হয়। (৭) অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব ঘােষিত নীতি অনুযায়ী ১৯৪৮ সালের ৬ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে বাংলা ভাষার প্রশ্নটি আলােচিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দিনের পূর্বে উত্থাপিত প্রস্তাব অনুযায়ী ৮ এপ্রিল বাংলাভাষাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। খাজা নাজিম উদ্দিনের প্রস্তাব ছিল যে ইংরেজিকে পরিহার করে বাংলা হবে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলা অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা। এই প্রস্তাবের কিছু সংশােধনী সুপারিশ করেন মিঃ আহমদ আলী মৃধা—যিনি প্রস্তাবটির দ্রুত বাস্তবায়নেরও সুপারিশ করেন। (৮) এখানে একটা বিষয় আলােচনা প্রয়ােজন যে ‘সরকারি ভাষা’ (Official Language) এবং রাষ্ট্রভাষা (State Language)-এর মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। বাংলাভাষা পূর্ববঙ্গের সরকারি বা প্রাদেশিক ভাষা হলেও রাষ্ট্রভাষা নয়। রাষ্ট্রভাষার ধারণা তখনাে উর্দুরই পক্ষে। উল্লেখ্য যে পূর্ববঙ্গের আইন পরিষদে গৃহীত এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় নি।
১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের গভর্নর লিয়াকত আলী খান কুমিল্লায় আগমন করেন। এ সময় কুমিল্লা জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ লিয়াকত আলী খানের নিকট একখানা স্মারকলিপি প্রদান করেন। (১০) এই স্মারকলিপিতে পাকিস্তানের সর্বত্র শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্ব-স্ব প্রদেশের ভাষা ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম হলে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য যথার্থভাবে

পৃষ্ঠা: ৪
বাস্তবায়িত হবে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত পলাশী ব্যারাকের ঘটনার পর পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজ ভাষা আন্দোলনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে এবং ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দিলে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের বিষয় ছাত্রদের একমাত্র দাবি হিসেবে উত্থাপিত হয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৪৯ সালে প্রণীত পুলিশ বিভাগের বার্ষিক গােপন প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র সংগঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। পুলিশ বিভাগের এই বিবরণ অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে সক্রিয় সংগঠন এবং বহু সংখ্যক মুসলমান ছাত্র এই সংগঠনের সাথে জড়িত। (১১১) ছাত্র ফেডারেশন ১৯৪৯ সালে বাংলা ভাষার প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলন শুরু করে এবং এ সময়ে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ধর্মঘটে নেতৃত্ব প্রদান করে বেশ কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে সংগঠনটি সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দের উৎসাহে পরিচালিত। উল্লেখ্য যে ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ধর্মঘটে ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন। তিনি তখন ছিলেন আইন বিভাগের ছাত্র। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ টাকা জরিমানা করেন। উল্লেখ্য যে পরবর্তীকালে তথা ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের উপর হতে দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও তিনি আর শিক্ষার্থী হিসেবে সেই প্রতিষ্ঠানে যােগদান করেন নি। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী ছাত্রনেতা ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র অলি আহাদ ‘গণশিক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে ১৯৫০ সালের ১৫-১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনের আয়ােজন করেন। এই সম্মেলনে গৃহীত অধিকাংশ প্রস্তাবই ছিল রাষ্ট্রভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা গ্রহণের পক্ষে। সম্মেলনে গৃহীত দাবিনামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট প্রেরণ করা হলে কর্তৃপক্ষ অলি আহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (১২) ফলে অলি আহাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রাষ্ট্রীয় সুযােগ-সুবিধার বণ্টন এবং এক্ষেত্রে বঞ্চনার বিষয়টিও ছিল। এ বিষয়টি সর্বপ্রথম অনুভূত হয় নিমবেতনভােগী কর্মচরীদের নিকট যারা ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে বহু সংখ্যক বাঙালি মুসলমান ভারত হতে পূর্ববাংলায় অভিবাসন করে। যাদের সরকারি চাকুরি ছিল তারা সকলেই অনুরূপ পদে পূর্ববঙ্গের কর্ম প্রতিষ্ঠানসমূহে যােগদান করার সুযােগ পায়। একইসাথে ভারত হতে বহু সংখ্যক উর্দুভাষী মােহাযির পূর্ববাংলায় আগমন করে। উল্লেখ্য যে সরকারি চাকুরি ও সুযােগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে তখন মােহাযির ও উর্দুভাষীদের প্রাধান্য বেশি ছিল বলে মনে হয়। (৭০) মােহাযিরদের অধিক প্রাধান্য পাবার প্রধান কারণ ছিল পাকিস্তানের নীতি ও আদর্শ, মুসলিম লীগ ও উর্দুভাষার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন। সরকারি কর্মচারীদের বিশেভাবে বাঙালিদের বড় একটি অংশ নীলক্ষেত ও পলাশীর ব্যারাকে অবস্থান করতেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবি উত্থাপিত হলে নীলক্ষেত ও পলাশী ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি কর্মচারীবৃন্দ তা সমর্থন করেন এবং বিভিন্ন সভা সমাবেশে যােগদান করেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গােচরীভূত হলে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বিভিন্ন

পৃষ্ঠা: ৫
নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সরকারি কর্মচারীগণ রাজনীতিতে যােগদান, সরকারের সমালোচনা, তথ্য প্রকাশ, বিদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবে না বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাদেরকে লাহােরের মাওলানা মওদুদী প্রতিষ্ঠিত ‘জামাত-ই-ইসলামী’তে যােগদান করতে নিষেধ করা হয়, কেননা সরকার একে রাজনৈতিক দল হিসেবে মনে করে। একইভাবে প্রগতিশীল লেখক সংঘকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে সেখানেও সরকারি কর্মচারীদের যােগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়। এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের ঘােষণা দেয়া হয় এবং এই লক্ষ্যে ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি সংশােধন করা হয়। (৩) কিন্তু এসব করেও শেষ রক্ষা হয় নি। পলাশী ব্যারাক ও নীলক্ষেতের ঘটনার পর ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি কর্মচারীরা যােগদান করেন।
সুযােগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ক্রমবঞ্চনা লক্ষ্য করে ১৯৪৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ হতে আগত সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশ পুনরায় পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাগমনের দাবি জানায়। তাদের দাবির পেছনে যুক্তি ছিল যে পশ্চিমবঙ্গ হতে অভিবাসন করার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি তাদের পূর্ণ আনুগত্য সম্পর্কে সরকারি সন্দেহ। সরকার তাদের দাবি অগ্রাহ্য করলে তারা মিছিল বের করে এবং অনুরূপ দাবি উত্থাপন করে। আজাদ’ এবং জিন্দেগী’ পত্রিকায় তাদের এসব অভিযােগ প্রতিকারার্থে কয়েকটি চিঠিও প্রকাশিত হয়। সরকার কর্মচারীদের এসব দাবি মেনে নিতে রাজি ছিল না, বরং দাবি উত্থাপনকারীদের রাষ্ট্রীয় আনুগত্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে চাকুরিচ্যুত করার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় সরকারিভাবে। বাঙালি সরকারি কর্মচারীগণ তখন সুসংগঠিত ছিল না। পরবর্তীকালে তথা ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গের চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতি বিভিন্ন সময় নিজেদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে এবং এসব দাবি-দাওয়ার মধ্যে তাদের বেতন, বাসস্থান ও সন্তানদের শিক্ষা সুবিধার বিষয় ছিল উল্লেখযােগ্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তারা সুযােগ-সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যকে প্রাধান্য দেয়। ১৯৫৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দিনের নিকট লিখিত চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমিতির চিঠিতে এই বৈষম্য এবং তাদের ক্ষোভ এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ভাষা ও রাজনীতির বিষয়গুলাে সমানভাবে জড়িত ছিল। (১১৬)।
নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ভাষা আন্দোলনকেই কেন্দ্র করে বাঙালি ও অবাঙালি বিভেদ ব্যাপকতর রূপ লাভ করে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, বিশেষভাবে বিহার হতে আগত এসব অবাঙালি পূর্ববঙ্গের ক্ষয়িষ্ণ মুসলীম লীগের প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অবাঙালি তথা বিহারিদের মুসলীম লীগ সমর্থন ছিল তাদের জীবন ও জীবিকার সাথে। সম্পর্কিত। কিন্তু বাঙালিরা অবাঙালির মাত্রাতিরিক্ত আধিপত্য ও প্রাধান্য সহজেই মেনে নেয়। নি। ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের কোনাে কোনাে এলাকায় বাঙালি ও অবাঙালির সংঘাত দেখা দেয়। যশােরে সংঘটিত এরূপ একটি ঘটনার সূত্রপাতকে মুসলিম লীগের জেলা সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল খালেক ব্যাখ্যা করেছেন সােহরাওয়ার্দী সমর্থকদের সংঘঠিত ঘটনা হিসেবে–যা ‘উর্দু-বিরােধী আন্দোলনে একটা সময় পর্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। (১৪) উল্লেখ্য যে পরবর্তীকালে সােহরাওয়াদী রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে স্ব-বিরােধী মনােভাব ব্যক্ত করেছিলেন। অবশ্য সবই ছিল রাজনীতি।

পৃষ্ঠা: ৫
৩. ১৯৫১ সালে আগা খান আরবিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। বিষয়টি বিতর্ক সৃষ্টিতে সহায়ক হয় এবং পূর্ববঙ্গ হতে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহ আরবিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনার পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করে। (১৩) ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় যেমন ‘হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড’ ও ‘যুগান্তর’ এ আগা খানের প্রস্তাব অবাস্তবতার বিষয় হিসেবে আলােচিত হয়। প্রায় একই সময় পূর্ববাংলার সচেতন বুদ্ধিজীবীগণের একাংশ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের নিকট এক স্মারকলিপি প্রদান করে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে ১৯৪৮ সালে সরকার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণের দাবি জানান। বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের এই উদ্যোগ নতুন করে ভাষার প্রশ্নে বাঙালি জনগণকে উদ্দীপিত করে। সমকালীন পত্রিকা ‘আজাদ’, ‘ইনসাফ’ ও ‘আজান’ এ বিষয়ে অভিন্ন মত প্রকাশ করে যে বাংলাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া উচিত। ভারতের পত্রিকা হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড ও ‘অমৃত বাজার পত্রিকা’ও এ বিষয়ে অভিন্ন মতামত প্রদান করে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের সাধারণ দাবি উপেক্ষিত হলে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল আহ্বান করে এবং জনসমাবেশের ঘােষণা দেয়, কেননা ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ববাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশন আরম্ভ হবার দিন ধার্য হয়েছিল। উল্লেখ্য যে প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলিম লীগও এদিকে এক জনসভা আহ্বান করে। আইনগতভাবে প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন সামনে রেখে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি হতে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে পূর্ব অনুমতি ব্যতীত সঁচজন এবং এর অধিক সংখ্যক ব্যক্তির প্রকাশ্য সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘােষণা করেন। কিন্তু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ সমবেতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল হতেই ছাত্ররা পিকেটিং শুরু করে এবং সকাল ১০ টার মধ্যে বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। ছাত্ররা এখানে সভা করে এবং দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের বাহিরে আসে। এখানে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে বহু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বপ্রথম গ্রেপ্তার হন হাবিবুর রহমান (শেলী)। এই নির্বিচার গ্রেপ্তারে সমবেত ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হয় এবং এ পর্যায়ে পুলিশ তাদের প্রতি গুলিবর্ষণ করে। ফলে কয়েকজন নিহত এবং বহু সংখ্যক আহত হয়। পুলিশের এই গুলিবর্ষণে দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষ এবং তীব্র প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় জনতার উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২১-২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংঘটিত ঘটনাবলি ও ছাত্র-জনতার ভূমিকা নিয়ে বহু সংখ্যক গবেষণা ও প্রামাণিক গ্রন্থ রয়েছে। একইসাথে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত একুশের সংকলন’ শীর্ষক গ্রন্থে ভাষা• সৈনিকদের সাক্ষাৎকালে এ বিষয়ে বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকা হতে প্রকাশিত সমকালীন পত্রিকাগুলােতেও এ বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত আলােকপাত করে। তবে পাকিস্তানের মতাদর্শ অনুরাগী পত্রিকাসমূহ এ ঘটনাকে শত্রুর যড়যন্ত্র হিসেবে ইঙ্গিত দেয়। করাচী হতে প্রকাশিত ‘ডন’ পত্রিকা পুলিশের গুলিবর্ষণের নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত মতভেদের অবসান কামনা করে। (১৩) তবে পাকিস্তান সরকার মনে করে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণে বাধ্য হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা হাইকোর্ট বার এ্যাসােসিয়েশনের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয় আবুল কাশেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে। এই সভা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের প্রবেশ ও গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানায় এবং নিহত ও আহত ছাত্র

পৃষ্ঠাঃ ৭
জনতার প্রতি শােক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করে। ঢাকা হাইকোর্ট বার এ্যাসােসিয়েশনের এই সভা ১৪৪ ধারা জারিকে অপ্রয়ােজনীয় মনে করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এই ঘটনার সাথে জড়িত সকল অফিসার ও পুলিশকে তাদের বর্তমান অবস্থান হতে স্থানান্তর করে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির মাধ্যমে তদন্ত অনুষ্ঠান করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের দাবিও এ সভায় করা হয়। ঢাকা হাইকোর্ট বার অ্যাসােসিয়েশনের এই সভা ছাত্রদের রাষ্ট্রভাষার দাবিকে সমর্থন করে এবং বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবিও জানায়। (১৫) এছাড়া এই সভা এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত আরাে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সবশেষে ঢাকা হাইকোর্ট বার এ্যাসােসিয়েশন গুলিবর্ষণের ফলে নিহতদের আত্মার শান্তির জন্য ২৯ ফেব্রুয়ারি এই এ্যাসােসিয়েশনের সদস্যগণ অনশন ও প্রার্থনা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। খুলনার দৌলতপুর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট এক তারবার্তা প্রেরণ করে। (১৬) তারা ব্রিটিশ শাসনামলের মতাে পরিচালিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং নিহত ও আহতদের জন্য শােক প্রকাশ করে।
বাঙালি জাতির সকল সংকটকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী এবং সংগঠন ও পরিষদসমূহ ভাষা আন্দোলনে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে, বাঙালি জাতির নিকট সে ইতিহাস অজানা না হলেও সম্পূর্ণরূপে বিশ্লেষিত নয়। ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর পলাশী ব্যারাক, নীলক্ষেত ও সচিবালয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ। অবাঙালিদের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার দাবিকে প্রথম প্রতিবাদ জানায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রবৃন্দ। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দিলে এই মহান প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাই প্রথম প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ (Excutive Council) তথা বর্তমান সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক (তৎকালীন ইন্টারমেডিয়েট) ও স্নাতক কোর্সসমূহে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দানের দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সমানভাবে উত্থাপন করতে থাকেন—যা ভাষার প্রশ্নে দেশব্যাপী সচেতনতা ও ঐক্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ স্বতন্ত্রভাবে জরুরি সভা আহ্বান করে এবং এই সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন আই এইচ, জুবেরী এবং সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী। অবশ্য মুজাফফর চৌধুরী এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রােক্টরও ছিলেন। শিক্ষক সমিতির এই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের প্রবেশ, গুলিবর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। (১৭) বাংলা ভাষাকে একটি রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা, হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন ; ২১-২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য দায়ী কর্মচারীদের সাসপেন্ড, ঢাকা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হতে পুলিশ এবং মিলিটারি প্রত্যাহার, এই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দান, পত্রিকার উপর হতে সকল নিষেধাজ্ঞার অবসান এবং গ্রেপ্তারকৃত সকলের নিঃশর্ত মুক্তি ইত্যাদি দাবি জানানাে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সভায়

পৃষ্ঠা: ৮
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরােধ জানান হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ (বর্তমানে সিন্ডিকেট) ২৪ ফেব্রুয়ারি এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণ ও ছাত্র নিহত হবার জন্য তীব্র শােক প্রকাশ করে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের প্রবেশকে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা বলে এই সভায় মতামত প্রকাশ করা হয়। নিহত ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহত ছাত্রদের ও তাদের সকলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপনের জন্য এবং শিক্ষাঙ্গনে পুলিশের প্রবেশের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদের এই সভার সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। কার্যকরী পরিষদ তৎকালীন পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক পরিষদকে অনুরােধ জানায় যে বাংলা যেন একটি রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় এবং কার্যকরী পরিষদের এই বক্তব্য শাসনতান্ত্রিক পরিষদের সকল সদস্যকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। (১৮)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির প্রতিবাদ সভা ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তসমূহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রায় অনুরূপ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী প্রস্তাব ছিল যে ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য সরকারের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি। (১০৭) উল্লেখ্য যে এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীগণ ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করে।
২৪ ফেব্রুয়ারি বারহাল এহিয়া হাইস্কুলের ছাত্রগণ পূর্ণ হরতাল পালন করে। হরতাল শেষে আলহাজ হাফিজ সৈয়দ মাহবুব আহমদের সভাপতিত্বে স্কুলের মাঠে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। (১০৮) জনসভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা, ঢাকায় ছাত্র-জনতার উপর বর্বরােচিত অত্যাচারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ, নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শােক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই সভার কার্যবিবরণী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করা হয়।
বিভিন্ন ছাত্র ও জনতার উপর পুলিশের বর্বরােচিত গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে যশােরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যাপকমণ্ডলী ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সভায় মিলিত হন। (১৯) এই সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক ২৪ ফেব্রুয়ারি গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট লিখিত মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষের পত্রে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা। জ্ঞাপন করা হয়। চট্টগ্রাম বার এ্যাসােসিয়েশন তাদের ২৫ ফেব্রুয়ারির সভায় এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে এবং শােক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে। (২০) অনুরূপভাবে বগুড়া মােক্তার বার এ্যাসােসিয়েশন এই ঘটনার নিন্দা করে এবং বাংলা ভাষাকে উর্দুর সাথে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবি জানায়। (২১)
যশােরের ঝিনাইদহ বার এ্যাসােসিয়েশন ২৬ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য সংগঠনের মতাে অনুরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে এই সংগঠন রাজবন্দীদের মুক্তি অথবা উপযুক্ত আদালতে তাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানায়। (22) রংপুর মােক্তার বার অ্যাসােসিয়েশন ২৬ ফেবয়ারি জরুরি সভা আয়ােজন করে। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দান, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ, গুলিবর্ষণ ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের মুক্ত আদালতে বিচার

পৃষ্ঠা: ৯
ইত্যাদি দাবি করে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করার প্রস্তাবও করা হয়। তবে রংপুর মােক্তার বার এ্যাসােসিয়েশন যে উল্লেখযােগ্য সিদ্ধান্ত নেয় আইনসভার সদস্যদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা সম্পর্কে। ঘটনাস্থলের অত্যন্ত নিকটে অবস্থান করেও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যগণ এই ঘটনা সম্পর্কে ছিলেন উদাসী! রংপুর মােক্তার বার এ্যাসােসিয়েশন মনে করে যে এই ভূমিকার জন্য তারা জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং তাদের পদত্যাগ করা উচিত। (২৩) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার এ্যাসোসিয়েশনের ২৬ ফেব্রুয়ারির সভায় শােক প্রকাশ করে অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। (২৪) কুমিল্লা (ত্রিপুরা) জেলা বার এ্যাসােসিয়েশন ২৬ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ সভার আয়ােজন করে সেখানে এই ঘটনার প্রতি তীব্র ভাষায় নিন্দা জ্ঞাপন করে অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের বিচারকদের নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানায়। (২৫) এই সভায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দান, বাংলাকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান ইত্যাদি দাবিও উত্থাপন করা হয়। এই ঘটনার পর নির্বিচারে ছাত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে গ্রেপ্তারের জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। কুমিল্লা বার এ্যাসােসিয়েশন তাদের এই সভায় দুটি বিশেষ বিষয় উত্থাপন করে। প্রথমত, সরকার কর্তৃক ‘পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করাকে অযৌক্তিক বলে মনে করে এবং অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। দ্বিতীয়ত, ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকা বর্জনের সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়ানাের অপরাধে এই পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উত্থাপন করে। বরিশাল জেলা বাের্ড ৫ মার্চের সাধারণ সভায় এই ঘটনার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে ও অন্যান্য সংগঠনের মতাে অনুরূপ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। (২৬)
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণ এবং এর ফলে ছাত্র ও জনতা নিহত ও আহত হবার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জ্ঞাপন করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মাধ্যমে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী সভার এই সিদ্ধান্তের কপি শাসনতন্ত্র পরিষদের (Constituent Assembly) সকল সদস্যদের নিকট পৌছে দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই অনুযায়ী শাসনতন্ত্র পরিষদের সকল সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রেরণ করা হয়। তরে এসব নথিপত্র সব পাওয়া যায় নি। করাচীতে বেগম শায়েস্তা সােহরাওয়ার্দী ইকরামুল্লাহ এর নিকট প্রেরিত চিঠির কপি পাওয়া গেছে। এতে মনে হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদের দাবি ছিল খুবই শক্তিশালী। অন্যদিকে শাসনতন্ত্র পরিষদের সদস্য অক্ষয়কুমার দাস সিলেটের সুনামগঞ্জ হতে রেজিস্টারের এই চিঠির উত্তর প্রদান করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি তার সমর্থন জ্ঞাপন করেন। (২৭)
২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ঘটনা পূর্ববাংলার বাঙালি অধিবাসীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই ঘটনার তথ্যাদি বিভিন্নভাবে বিভিন্নরূপে প্রকাশ পায়। অবজারভার পত্রিকা নিষিদ্ধকরণ ও অন্যান্য পত্রিকার উপর গােপন সরকারি সেন্সর জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। ঘটনার বথাপকতা অঞ্চলভেদে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। বিভিন্নভাবে অসন্তোষ প্রকাশ পেতে থাকে। অবস্থা এমন দাড়ায় যে মার্চ মাসে ঢাকার বিশেষ বিশেষ এলাকায় পুনরায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় যা কমপক্ষে দু’মাস বলবৎ ছিল। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি কতজন

পৃষ্ঠা: ১০
নিহত, আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে তার সংখ্যা নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও সংশয় দেখা দেয়। অবশ্য এ সন্দেহ ও সংশয় যে অমূলক তা খুব জোর দিয়ে বলা যায় না। এ পর্যায়ে একমাসের চেয়েও বেশি সময় পর অর্থাৎ ২৪ মার্চ (১৯৫২) সরকার ২১ ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণ সম্পর্কে প্রেস রিলিজ বা প্রেস নােট প্রকাশ করে। লক্ষণীয় যে সরকারিভাবে ২১ ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণ সম্পর্কে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে সেখানে ২২ ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের নাম উল্লেখ রয়েছে। পূর্ববঙ্গ প্রচার বিভাগের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রদত্ত তথ্যের সাথে প্রায় একই সময় প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত “মিথ্যাগুজবে বিশ্বাস করিবেন না” শীর্ষক প্রচারপত্রের তথ্যের মিল নেই। (১১৩)। ইংরেজিতে প্রদত্ত প্রেসনােটে ২১-২২ ফেব্রুয়ারি নিহতদের (শহীদের) সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৪ জন, অন্যদিকে “মিথ্যা গুজবে বিশ্বাস করিবেন না” শীর্ষক সরকারি প্রচারপত্রে নিহতদের সংখ্যা বলা হয়েছে ৫ জন। ইংরেজিতে প্রদত্ত সরকারি প্রেসনােটে নিহতদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১ জন বলা হয়েছে। অন্যদিকে পূর্বে উল্লেখিত সরকারি প্রচারপত্রে নিহতদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা বলা হয়েছে ৫ জন। ইংরেজিতে প্রদত্ত সরকারি প্রেসনােটে নিহতদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১ জন বলা হয়েছে। অন্যদিকে পূর্বে উল্লেখিত সরকারি প্রচারপত্রে নিহতদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা বলা হয়েছে ৩ জন। ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিহতদের (শহীদদের) নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা, বয়স ও পেশা, মৃত্যুর কারণ, দাফনকার্যে অংশগ্রহণকারী আত্মীয়দের, জানাজা পাঠকারীর এবং ব্যবস্থা গ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তার নাম ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা হয়েছে।২৯ উল্লেখ্য যে, ২১ ফেব্রুয়ারি ৩জন শহীদ হলে হাইকোর্টের বিচারক এলিসের তদন্ত বিবরণীতে মাত্র ১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি পরবর্তী পর্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হবে। এই সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির যৌক্তিকতা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা ও পরিণতি সম্পর্কে সাধারণভাবে জনমনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করা। সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে প্রায় ১৫০ ছাত্র-ছাত্রীর ও জনতার মৃত্যু সম্পর্কে গুজব এবং তাদের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় ধর্মীয় বিধি লংঘনের গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমত সৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে। এসব গুজবের অবসানের জন্যই সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রয়ােজন রয়েছে। উল্লেখ্য এখানে শহীদ আবদুস ছালামের নামােল্লেখ নেই। বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ভারতীয় চক্রান্ত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কাযক্রম হিসেবে অভিহিত করার সরকারি নীতির যৌক্তিকতা ছিল সম্ভবত এ যে, ভারতীয় চক্রান্তের তথ্য সহজেই পূর্ববঙ্গের জনগণের মনে এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদন করতে পারবে। মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্বয়ং ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে উল্লেখ করেছেন যে রাষ্ট্রভাষার দাবি ভারত কর্তৃক উৎসাহিত। বাংলা ভাষার উৎস হিসেবে দেখানাে হয়েছে সংস্কৃতকে যা আর্যদের ভাষা ছিল এবং বাংলা ভাষার উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা ছিল হিন্দুদের। সুতরাং সকল দিক হতে একে ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করার যৌক্তিকতা ছিল। বিষয়টি অনুধাবন করে পলাশী ব্যারাকের ঘটনার পর পরই পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে হিন্দুদের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেন যে এই ‘আন্দোলনে হিন্দুরা নাই। (৭৪) প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান এবং মূল বিষয় হতে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া। আনসার বাহিনী গঠন করে তাদের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণের মাধ্যমে এ ব্যাপারে অধিক প্রচারণা সম্ভব হয়। (১১১) ঢাকা হতে প্রকাশিত উর্দু

পৃষ্ঠা: ১১
পত্রিকা ‘পাসবন’ এবং ইংরেজি পত্রিকা “মর্নিং নিউজ’ ভাষা আন্দোলনকে ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে। এ পত্রিকা দুটিতে লক্ষ্য করা যায় সরকারি নীতি ও মনােভাবের প্রতিফলন।
সঙ্গত কারণেই ভাষা আন্দোলনে ছাত্র ও শিক্ষকের অংশ গ্রহণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনার ব্যাপকতা, বহু সংখ্যক গ্রেপ্তার ও সরকারি নীতি সাধারণভাবে ভয়ের সৃষ্টি করে। মায়ের ভাষার পক্ষে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার প্রশ্নে দুর্বলতা প্রদর্শনের প্রধান কারণ ছিল রাজরােষ ও সম্ভাব্য নিপীড়ন। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং এই সভায় ঘটনার প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁরা হলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী এবং ইতিহাস বিভাগের রিডার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও ঢাকা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী। এঁদের মধ্যে মুনীর চৌধুরী ও মুজাফফর আহমদ চৌধুরী দীর্ঘদিন কারাদণ্ড ভােগ করেন। মুনীর চৌধুরী ও পৃথীশচন্দ্র চক্রবর্তী চাকরিচ্যুত হন। পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী পরবর্তী পর্যায়ে ভারতে অভিবাসন করেন।
এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রতিপালিত প্রশাসনিক নীতি অনুযায়ী সরকারি অফিস ও সংস্থাপনে নিয়ােজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত হতে পারতেন না। ১৯৪৭ সালের পর নতুন পরিস্থিতিতে এই নীতি অব্যাহত থাকে এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে বিজ্ঞপ্তিদানের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণ সচেতন বাঙালিকে বিক্ষুব্ধ করে তােলে এবং বিভিন্ন মহল হতে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। প্রতিবাদী বাঙালি জনতাকে ভয় প্রদানের মাধ্যমে স্তব্ধ করা সম্ভব ছিল না, কেননা তাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসরকারি কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত যেমন, বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সমিতি-যা সরকারের তাৎক্ষণিক গৃহীত ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত ছিল। কিন্তু খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সভা ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের কোনাে নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি ছিল না বলে ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতি মতামত প্রকাশ করে। তারিখবিহীন এই সভার সিদ্ধান্তসমূহ পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ‘আজাদ’ ও কোলকাতার ‘সত্যযুগ’ পত্রিকার সম্পাদকদের নিকট প্রেরণ করা হয়। (৩০) সরকারের নিকট অধ্যাপক সমিতির সভার সিদ্ধান্তসমূহ পৌছে ১৯৫২ সালের ২০ মার্চ। শিক্ষা বিভাগের উপসচিব বিষয়টিকে চূড়ান্ত আপত্তিকর ও অপ্রত্যাশিত বলে মনে করেন। ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতির কার্যবিবরণী সরকার সমর্থন করে না একথা অধ্যাপক সমিতিকে জানিয়ে দেবার পক্ষে উপসচিব মত প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখ্যসচিব এ প্রসঙ্গে আরাে কঠোর মনােভাব ব্যক্ত করে ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদান বলবৎ রাখার বিষয়টি বিবেচনার প্রয়ােজন মনে করেন। সম্ভবত এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখ্য সচিবের মতামতই কার্যকরী হয়েছিল। খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই বুজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ এনামুল হক বিষয়টি অবগত হন এবং সরকারের

পৃষ্ঠা: ১২
রুদ্ররােষ হতে অব্যাহতির জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে অধ্যাপকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ঢাকায় গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতির সভা ও আপত্তিকর মন্তব্য সম্পর্কে তদন্ত করা হয়। অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ এনামুল হক সরকার ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেন যে এরূপ সভার কোনাে কার্যবিবরণী অধ্যাপক সভার কার্যবিবরণী খাতায় নেই এবং অধ্যাপক দের কেউই এই সভা সম্পর্কে আদৌ জ্ঞাত নন। অধ্যক্ষ মনে করেন এরূপ সভা কখনও এখানে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং এরূপ কার্যবিবরণী সঠিক নয়। একই সাথে মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ হতে সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয় যে কথিত ঐ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি সরকারের আপত্তির সাথে ব্রজলাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সভা একমত পােষণ করে।
বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রশ্নে সমকালীন বাঙালিদের মধ্যেও ভিন্নমত ছিল। এই ভিন্নমত বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের মধ্যে যাদের নব-প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের মােহ আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এবং যারা সরকারি নীতির সমর্থক হয়ে সুযােগ-সুবিধা আদায়ে প্রত্যাশী ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় ছাত্র ও জনতা নিহত এবং আহত হলে প্রতিবাদ আসে পূর্ববাংলার সকল মহল হতে। এই প্রতিবাদের সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের দাবিও উত্থাপিত হয়। কিন্তু তখনাে ভিন্নমত লক্ষ্য করা গেছে। যশােরের আমডাঙ্গা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ আবদুস সালাম শিকদার ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিত এক পত্রে ভাষা আন্দোলনের প্রতি তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। আবদুস সালাম শিকদার ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তার মতে বাংলা একটি প্রাদেশিক ভাষা হতে পারে এবং মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উদুই রাষ্ট্রভাষা হওয়া দরকার। আবদুস সালাম শিকদার মনে করেন যে এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যে অতীতে সােহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলার স্বপ্নের বীজ লুক্কায়িত আছে। বাংলা ভাষার শিক্ষক হয়ে ভুল ইংরেজিতে চিঠি লিখে সরকারের কার্যকলাপের প্রতি যে সমর্থন আবদুস সালাম শিকদার ব্যক্ত করেছেন তা তিনি মফস্বলের জনমত বলে দাবি করেন। (৩১)
২১-২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলিতে বাঙালি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যাবলী সম্পর্কে সন্ধিগ্ধ হয়। পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলা শহরে এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ক্ষমতাসীন সরকার হয়ে পড়ে দিশেহারা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। সরকারিভাবে গৃহীত হয় বিভিন্ন প্রচারণামূলক ব্যবস্থা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাবমূর্তি সুরক্ষা নাগরিকদের প্রধান দায়িত্ব, ভাষা আন্দোলন দুষমনদের যড়যন্ত্রমূলক কাজের অংশ ইত্যাদি সম্পর্কে তিনখানা পােস্টার বড় আকারে বহুসংখ্যক ছাপিয়ে তা জনসংযােগ বিভাগের মাধ্যম পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হয়। (২৬) রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সরকারিভাবে নাশকতামূলক বিদেশী চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিশেষভাবে এই আন্দোলনকে কমিউনিস্ট, হিন্দু ও ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হবার সম্ভাবনাময় ভীতি সরকার এবং সরকার সমর্থক অংগ সংগঠনগুলাে প্রদর্শন করে। সরকারিভাবে প্রকাশিত ‘ঢাকার গােলযােগের কারণ কি? শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিতে ছিল ১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের বক্তৃতা। এই বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন যে “অনেক তথ্য সরকারের নিকট আছে, যাতে দৃঢ়ভাবে বলা যেতে পারে যে, আপাত

পৃষ্ঠা: ১৩
দৃষ্টিতে বাইরে থেকে যা দেখা যাচ্ছে প্রকৃত পরিকল্পনা তারচেয়ে অনেকাংশে ও বহুগুণে মারাত্মক। এই মারাত্মক পরিকল্পনার যারা প্রণেতা, তারা পাকিস্তানের বাইরে থেকে সহায়তা এবং অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। এরূপ অবস্থায় পাকিস্তানের স্থায়িত্ব নষ্ট করার এই সকল মারাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে সরকারকে সময় সময় যথাবিহীত কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।” (১১২) প্রায় একই সময় পূর্ববাংলা সরকারের প্রেস হতে প্রকাশিত ‘ঢাকার গােলযােগ সম্পর্কে মুসলিম লীগ’ শীর্ষক প্রচারপত্রে মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের বিবৃতি, মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ও পার্লামেন্টারি পার্টির প্রস্তাব প্রচার করা হয়। মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে :
দুঃখের বিষয়, আমাদের সরলপ্রাণ ছাত্রবৃন্দের এই আন্দোলনকে অবলম্বন করিয়া রাষ্ট্রের দুষমন ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিগণ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি এবং আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করিবার প্রয়াস পাইতেছে। এই আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বহু সন্ত্রাসবাদী ও কমিউনিষ্টকর্মী এবং পাকিস্তানের শত্রুর গুপ্তচর অলক্ষ্যে পাকিস্তানে প্রবেশ করিয়া ভিত্তিহীন, উত্তেজনামূলক, অতিরঞ্জিত প্রচারণা ও গুজব রটাইয়া এবং অজস্র অর্থব্যয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিতেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতা লােলুপ কতিপয় ব্যক্তি ইহাকে সুবর্ণ সুযােগ মনে করিয়া ইন্ধন যােগাইতেছে। পুলিশ তদন্তে বহু বেআইনী, ধ্বংসাত্মক ও প্রচারণামূলক কাগজপত্র, কমুনিষ্ট নীতিপূর্ণ পুথিপুস্তক এবং কিছু অস্ত্রশস্ত্রও ধরা পড়িয়াছে। তাছাড়া কয়েকজন কমুনিষ্ট, সন্ত্রাসবাদী ও শত্রুপক্ষের চরকেও ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। দুর্ঘটনার তদন্তকার্য সমাপ্ত হওয়ার এবং লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ও সরকার কর্তৃক অশ্লীকৃত বিচার হওয়ার অপেক্ষা না করিয়া দেশে এইভাবে বেপরােয়া উত্তেজনামূলক আন্দোলন চালাইতে থাকিলে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ভঙ্গ হইয়া পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রহিয়াছে। আজ এইরূপ সংকটপূর্ণ সময়ে যখন পাকিস্তানের সীমান্তে হাজার হাজার শত্রুসৈন্য পাকিস্তানের প্রতি কামান উচাইয়া সুয়ােগের অপেক্ষায় ওৎ পাতিয়া রহিয়াছে, তখন দেশের ভিতরে এমন শােচণীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়া যে কতটুকু মারাত্মক তাহা প্রত্যেক পাকিস্তান দরদীকে আন্তরিকভাবে অনুভব করিতে হইবে। যে মুসলীম লীগের আপ্রাণ চেষ্টায় এবং ত্যাগের ফলে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে তাহার মূলােৎপাটন করতঃ কম্যুনিজমের বীজ রােপন করিয়া পাকিস্তানের ধ্বংস সাধনই আমাদের দুষমনদের মূখ্য উদ্দেশ্য। (১১৪)
অনুরূপভাবে মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির ভাষ্য ছিল :
ওয়ার্কিং কমিটি অতীব দুঃখের সহিত লক্ষ্য করিয়াছেন যে, কম্যুনিষ্ট ও বিদেশী চরেরা যথেষ্ট প্রস্তুতি সহকারে পূর্ববঙ্গে প্রবেশ করিতেছে এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও হতাশ রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের সহযােগিতায় এই আন্দোলনকে তাহাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনে নিয়ােজিত করিবার চেষ্টা করিতেছে। তাহারা রেলগাড়ি থামাইয়া, রেললাইন তুলিয়া ফেলিয়া, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট করিয়া এবং জনসাধারণকে হত্যা ও মারপিটের ভয় দেখাইয়া সরকারকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র। করিতেছে। দেশে অরাজকতা ও উশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করিয়া পাকিস্তান ধ্বংস করার জন্য তাহারা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অভিযান শুরু করিয়াছে।

পৃষ্ঠা: ১৪
বিরাট আত্মত্যাগ, বহু রক্তক্ষয় ও কষ্টের বিনিময়ে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে এই কথা উপলব্ধি করিবার জন্য ওয়ার্কিং কমিটি এতদ্বারা দেশপ্রাণ ছাত্র ও জনসাধারণের নিকট আবেদন করিতেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হইতেই পাকিস্তানকে গড়িয়া তােলার জন্য আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা শত্রুরা ব্যর্থ করার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু পাকিস্তানের জনসাধারণ বরাবরই সাফল্যের সহিত তাহাদের ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিয়াছে। যে ছাত্র ও জনসাধারণের আত্মত্যাগের ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, ওয়ার্কিং কমিটি তাহাদের নিকট আবেদন করিতেছেন যেন এই মহান রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তঁাহারা নিজ দায়িত্ব উপলব্ধি করিয়া স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরাইয়া আনার জন্য পাকিস্তানের মর্যাদা ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য একতাবদ্ধ থাকেন। ওয়ার্কিং কমিটি উপলব্ধি করিতেছেন যে, আমাদের নিজেদের মধ্যে একতা ও দৃঢ়তা বজায় রাখার আবশ্যকতা আজ যেরূপভাবে দেখা দিয়াছে পাকিস্তানের ইতিহাসে ইতিপূর্বে আর কখনও সেরূপ দেখা দেয় নাই। (১১৪)
সঙ্গত কারণেই সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গী সরকারি কর্মকর্তা ও সরকার সমর্থক পত্রপত্রিকায় প্রতিফলিত হয় এবং বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে। এই অবস্থা প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে পাকিস্তান সরকারের দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। ঢাকা হতে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা ‘মর্নিং নিউজ’ এবং উর্দু পত্রিকা ‘পাশবন’ বিভিন্ন সংবাদ এমনভাবে উপস্থাপন করে যা উভয় সরকারের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ অনিবার্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ভারতীয় পত্রিকা ‘হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডার্ড’, ‘স্টেটসম্যান’, হায়দারাবাদ হতে প্রকাশিত ‘তেজ’ এবং দিল্লী হতে প্রকাশিত ‘মিলাপ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যাদির প্রতি পাকিস্তান সরকারের অভিযােগও লক্ষণীয়। ১৯৫২ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা হতে প্রকাশিত উর্দু দৈনিক পাশবন’ পত্রিকায় ‘Who has a hand behind this show’ এবং ৬ মার্চ ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘Calcutta Students Want Bengali as State Language of Pakistan’ শীর্ষক প্রতিবেদন দুটি ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি করে। পাশবন’ পত্রিকায় তথ্য প্রদান করা হয় যে দিল্লী রেডিও ফেব্রুয়ারির এই ঘটনাকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। “ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন একটি প্রতিবেশী দেশের চক্রান্ত যারা পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়”ও “ঢাকার ঘটনা কোনাে দুর্ঘটনা হয় এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে এই ঘটনার কোনাে সম্পর্ক নেই” ইত্যাদি বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে প্রমাণ করতে উর্দু পত্রিকা ‘পাশবন’ চেষ্টা করে। পত্রিকার এসব তথ্য নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ শুরু হয়। পাকিস্তান সরকারের যুক্তি ছিল হায়দারাবাদের ‘মিলাপ ও দিল্লীর ‘তেজ’ পত্রিকায় যথাক্রমে ২২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঘটনাবলি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্টতই মনে হয় এসব পত্রিকা এসব ঘটনাবলি সংঘঠিত হবার খবর পূর্বেই অবগত ছিল। উভয় সরকার মনে করেন যে এর ফলে পূর্বে সম্পাদিত চুক্তি, যৌথ পত্রিকা আচরণবিধি এবং সুষ্ঠু সাংবাদিকতার নিয়মাবলি লঙ্ঘিত হয়েছে।
‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘Calcutta Students Want Bengali as State Language of Pakistan’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপসচিব। ঘটনাবলি ব্যাখ্যা করে উপসচিব জানান যে ১৯৫২ সালের ৩ মার্চ কোলকাতায় পাকিস্তানি হাই কমিশনে ২০ জন ছাত্রের একটি প্রতিনিধি দল ডেপুটি হাই কমিশনারের সাথে

পৃষ্ঠা: ১৫
সাক্ষাৎ করে একখানা স্মারকলিপি প্রদান করেন। এই প্রতিনিধি দলে একজন মুসলমান ছাত্রীও ছিলেন। পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখিত এই স্মারকলিপিতে চার দফা দাবি ছিল এবং তা হলাে (১) গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দান (২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া (৩) তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দান এবং (৪) বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান। (৩২) কিন্তু মর্নিং নিউজ’ যে তথ্য প্রদান করেছে যে ছাত্ররা অশােভন আচরণ করেছে তা উপসচিব সঠিক নয় বলে মনে করেন। কেননা কোলকাতার ডেপুটি হাই কমিশনারও এরূপ কোনাে অভিযােগ উত্থাপন করেন নি। মর্নিং নিউজ পত্রিকায় এই ঘটনা প্রসঙ্গে ভারত ও কলিকাতার হিন্দু সম্প্রদায় সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপসচিব তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন।
অন্য যে বিষয়গুলাে উভয় সরকারের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে তা হলাে ভাষা আন্দোলনে ভারত ও পূর্ববঙ্গ হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পর্ক। পূর্ববঙ্গ সরকারের উপসচিব ১৯৫২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপসচিবকে একপত্রে জানিয়ে দেন যে তাঁর সরকার বিশ্বাস করে যে ভাষাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কের আড়ালে একদল অমুসলিম অখণ্ড ভারতের ধারণায় কাজ করছে এবং পূর্ববাংলার রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের মাধ্যমে পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টের চেষ্টায় রত। তিনি আরাে জানান যে কমিউনিস্ট ও বিদেশী এজেন্ট এই কার্যকলাপের সাথে সরাসরি জড়িত। পূর্ববঙ্গের আনসার পরিচালক মিঃ। এ.এইচ.এম.এস. দোহার মধ্যে পাকিস্তান সরকারের মনােভাবের পূর্ণ প্রতিফলন ছিল। ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে ‘আনসারদের বর্তমান মাসের চিন্তাধারা ও কর্তব্য’ শীর্ষক প্রচারপত্র সরকারিভাবে মুদ্রিত ও প্রচারিত হয় :
“গতমাসে ঢাকায় যে গণ্ডগােলের সৃষ্টি হইয়াছিল তাহা হইতে বেশ স্পষ্টই বুঝা যায় যে, আমাদের দুষমনেরা এবং তাহাদের চরেরা পাকিস্তান ধ্বংস করিবার উদ্দেশ্যেই দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করিতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ঘটাইতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছে।” (১১১)
আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক এ.এইচ.এম.এস. দোহা নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে আনসার সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের রীডার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান, এবং ঢাকা ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. পৃথীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরে ভাষা আন্দোলনকে হিন্দু সম্প্রদায় ও ভারতীয় চক্রান্তের সাথে জড়িত করেন। উল্লেখ্য যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তিনজন শিক্ষককে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন তাদের একজন। এখানে সবাগ্রে পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তীর ঘটনাটি বিস্তৃতভাবে উল্লেখ না করলে বিষয়টি যথাযথভাবে অনুধাবন : করা যাবে না।
১৯৫০ সালে ইউনেস্কো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের রেকর্ড হতে সামরিক ইতিহাস প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এ কাজের দায়িত্ব প্রদান করা হয় ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর। ভারত, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান হতে বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তীর পি. এইচ. ডি, অভিসন্দর্ভ ছিল প্রাচীন ভারতের যুদ্ধ বিষয়ে। এ সময়ে যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত অন্য কোনাে বিশেষজ্ঞ না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ড. পৃথীশচন্দ্র চক্রবর্তীকে পূর্ববঙ্গের সদস্য হিসেবে এই কমিটিতে মনােনয়ন দান করে। তিনি এই কাজে যােগদান করলেও বার বার স্বীয় কর্মস্থল ও পরিবার পরিজনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ঢাকা

পৃষ্ঠা: ১৬
আসেন। ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে ড. পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী কাজ শেষ করে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময়ে বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানের উভয় সীমান্তে ভারতীয় সৈন্যের সমাবেশ ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বার্থান্বেষী মহল পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এ সময় নিয়ােগদানে অনিয়ম, ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে অবৈধ যােগাযােগ ও দেশদ্রোহিতার অভিযােগ উত্থাপন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই তদন্ত কমিশন ড, পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযােগ ভিত্তিহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণােদিত হিসেবে আখ্যায়িত করে। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন সরকার পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তীকে অন্যান্যদের সাথে গ্রেপ্তার করে ভাষা আন্দোলনের প্রকৃতি সম্পর্কে জনমনে ভিন্ন ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।
আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক দোহার বক্তব্য পূর্ববঙ্গ সরকারের উপসচিব যথার্থ বলে মনে করেছেন। এমনকি তিনি তথ্য প্রদান করেছেন যে নারায়ণগঞ্জে হিন্দুরা মুসলমানদের পােষাক পরিধান করে ভাষা আন্দোলনে যােগদান করেছে এবং নারায়ণগঞ্জে আনসার ও পুলিশ বাহিনীর উপর পরিচালিত আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল হিন্দুরাই। পরিস্থিতির চাপে পরবর্তীকালে মিঃ দোহা তার বক্তব্যের একই ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বিশেষভাবে তিনি ড. পৃথীশচন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে যে সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন তার কিছুটা অস্বীকার করেন। তবে মিঃ দোহা এও বলেছেন ড. পৃথ্বীশচন্দ্র চক্রবর্তী জন্মগতভাবে পাকিস্তানি হলে পশ্চিমবঙ্গের দুষ্কৃতিকারীরাও জন্মগতভাবে পাকিস্তানি হতে পারে।
রাষ্ট্রভাষা ও বাংলা ভাষার প্রশ্নটি পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম অধিবেশন হতেই গুরুত্ব সহকারে উত্থাপিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যখন ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে তখন প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন চলছিল। এ সময় বাংলা ভাষার পক্ষে এবং পুলিশের গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হােসেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, আনােয়ারা খাতুন, শামসুদ্দিন আহমদ, মনােরঞ্জন ধর, আলী আহমদ খান, প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী, বিনােদচন্দ্র চক্রবর্তী ও বসন্ত কুমার দাস প্রমুখ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ। ১৯৫২ সাল হতে বিভিন্ন সময় পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ভাষা শহীদের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন প্রাদেশিক পরিষদে উত্থাপিত হয়। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে খয়রাত হােসেন কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর পুলিশ বিভাগ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। (৩৪) ২১ ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণে সালাহউদ্দিন নামে জনৈক ব্যক্তির শহীদ হবার বিষয়টি প্রাদেশিক পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন মিসেস আনােয়ারা খাতুন। (Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Police Department, Home Branch, Bundle-124, November, 1952, Proceeding Nos. 272-73.)
কিন্তু সরকার পক্ষ হতে উত্তর ছিল নেতিবাচক। কোনাে কোনাে গ্রন্থে শহীদ হিসেবে সালাহউদ্দিনের ছবি পর্যন্ত প্রকাশিত হলেও বশীর আলহেলাল বিভিন্ন তথ্য দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে ভাষা আন্দোলনে সালাহউদ্দিন নামে কোনাে ব্যক্তি শহীদ হন নি। (বশীর আলহেলাল, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫, পৃ. ৩৬১-৬৩) কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রােডে পুলিশের গুলিতে আহত ও পরবর্তী পর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত মাত্র ১৪ বছর বয়সের কিশাের আসমত আলীর ঘটনা ছিল সত্যই হৃদয়স্পর্শী। (৩৬)

পৃষ্ঠা: ১৭
বরিশালের কিশাের আসমত আলী প্রথমে গুলিবিদ্ধ হয় ২২ ফেব্রুয়ারি এবং হাসপাতালে চিকিৎসার পর ১৯৫৩ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকে। এই সময়ের মধ্যে আসমত আলীকে ১১ বার বিচারকের নিকট উপস্থিত করা হলেও তাকে জামিন দেয়া হয় নি, কেননা তার জন্য নিশ্চয়তা দিতে কাউকে পাওয়া যায় নি। আনােয়ারা খাতুন এ বিষয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নুরুল আমীনের নিকট আইন পরিষদে প্রশ্ন করেন। ইতােমধ্যে আসমত আলীকে মুক্তিদান করে আনােয়ারা খাতুনকে নেতিবাচক উত্তর দেয়া হয়। তবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিব প্রশ্ন রাখেন যে বিচারক বা পুলিশ কেউই আসমত আলীর নাবালকত্বের বিষয়টি কেন বিবেচনা করেন নি?
ক্ষমতাসীন সরকার ভাষা আন্দোলনকে নাশকতামূলক মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছে রাজনৈতিক নীতি ও অবস্থানের কারণে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর সরকারের সবচেয়ে বড় সমর্থক হয় ভারত হতে আগত উর্দুভাষী মােহাজিরগণ। মােহাজিরদের নেতা রাগীব আহসান ভাষা আন্দোলনকে মুসলিম লীগের ব্যর্থতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার অভ্যুদয়, ভারতের চক্রান্ত, কমিউনিস্ট, হিন্দু ও ধর্ম নিরপেক্ষদের কর্মতৎপরতার ফলাফল হিসেবে লক্ষ্য করেছেন। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘাের সমর্থক রাগীব আহসান বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষকে খুবই পরিকল্পিত বলে মনে করেন। বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবি পূর্ববাংলায় উর্দুভাষী মােহাজিরদের সাথে বাঙ্গালির সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানীর নিকট ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাগীব আহসান যে পত্র লেখেন সেখানে তাকে পাক বাংলা’ কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবি উত্থাপন করতে অনুরােধ জানিয়েছেন। রাগীব আহসানের মতে উর্দু বিদেশী ভাষা নয়, বরং বাংলা ভাষা সংস্কৃত প্রভাবিত এবং পূর্ববঙ্গে বিদেশী ভাষা। পরবর্তী পর্যায়ে পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের পরাজয়কে ভাষা আন্দোলনের পরিণতির জন্য তিনি দায়ী মনে করেছেন। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়ে রাগীব আহসান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বহু প্রকার উপাদানের সমন্বয় লক্ষ্য করেছেন যেমন, বাংলা ভাষার সমর্থক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, ক্ষমতাসীন মন্ত্রিসভার বিরােধীদল, ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যক্তি, ভারতীয় স্বার্থান্বেষী চক্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা, কমিউনিস্টগণ, পাকিস্তান বিরােধী ব্যক্তি, হিন্দু অধ্যাপকগণ, মাড়ােয়ারী এবং হিন্দু পুঁজিবাদী ইত্যাদি। (৩৩)
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণ করার অন্তর্নিহিত যুক্তি ছিল ধর্মীয়। ১৯৪৮ সালে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করলে ঢাকায় ছাত্র-জনতা তার প্রতিবাদ জানায়। এরপর শুরু হয় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার পক্ষে যুক্তি এবং এই যুক্তি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। এমন একটা অভিমত গড়ে তােলার চেষ্টা করা হয় যে বাংলা হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দু মুসলমানদের ভাষা। বাংলা ভাষার উপাদান সংস্কৃত যা মূর্তি পূজারীদের মন্ত্র। সুতরাং বাংলা পাকিস্তানে অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেউ কেউ বাংলাকে প্রাদেশিক ভাষার মর্যাদা দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা গ্রহণের পক্ষে পাকিস্তানের মূলনীতি, আদর্শ এবং পাকিস্তানি জাতির জনক মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তব্যকে সমর্থনের প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার মাত্র ৫ দিন আগে সিলেটের ইংরেজি পত্রিকা ‘দি ইস্টার্ন হেরাল্ড’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয় যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা একটিই মাত্র হওয়া উচিত এবং তা হলাে উর্দু। (৩৫) একইসাথে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মােহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তব্যের উপর একটি

পৃষ্ঠা: ১৮
সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গে উর্দু পত্রিকা ‘পাশবন’ ও ইংরেজি পত্রিকা ‘মর্নিং নিউজ’ হয়ে দাড়ায় উর্দু ভাষার পক্ষের পত্রিকা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির মর্ম’দ ঘটনার পরও এই প্রবণতা চলতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে ঢাকা হতে ‘আল কায়েদ’ নামে একখানা ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতাে। এই পত্রিকা সুকৌশলে উর্দুর পক্ষে প্রচারণা চালাত। ১৯৫৫ সালের ২৪ জানুয়ারি এই পত্রিকায় স্বামী কলিযুগানন্দ কবিরপন্থি ছদ্মনামে একটি বড় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছে যে উর্দুর জন্মস্থান বাংলায় এবং উর্দু হলাে সর্বজনীন ভাষা। প্রবন্ধটিতে তথ্য প্রকাশ করা হয় যে দয়ানন্দ অবধূত, রাজা রামমােহন রায়, মােহন চঁাদ করম চাঁদ গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু উর্দুভাষা ব্যবহার করতেন। পাকিস্তানের প্রশাসনিক সুবিধার জন্য উর্দুভাষার বিকল্প নেই এবং উর্দুভাষার প্রচলন অনেক বেশি। বাংলায় মুসলমান মুজাহিদগণের প্রচেষ্টায় উর্দুর আবির্ভাব এবং প্রথম উর্দু কবি হলেন একজন বাঙালি মুসলমান। এসব তথ্য অধিকাংশই স্বকপােলকল্পিত এবং এসবের মাধ্যমে বাঙালিদের প্রভাবিত করা সম্ভব হয় নি।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবি ছিল বাঙালির আত্মসত্ত্বার অস্তিত্বের প্রশ্নের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কেননা, এই দাবি ছিল নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির অবস্থান ও অধিকারের মূল বিষয়। পূর্ববাংলায় বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান গঠনের প্রতি সমর্থন দান করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের চোখে বাঙালির একটা দুর্বলতা ছিল। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ গঠিত হলেও দীর্ঘদিন পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ এর জনপ্রিয়তা ছিল না। চল্লিশের দশকে পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগ প্রাধান্য লাভ করে সমকালীন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাবে। পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী মনে করতাে পাকিস্তান সৃষ্টি তাদেরই অমর কীর্তি এবং এজন্য পূর্ববাংলাকে ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন করার বৈধ অধিকার তাদের রয়েছে। অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বাঙালি কেবল বাংলা ভাষাকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি করে নি, বরং উর্দুর সাথে বাংলাকেও সমানভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবি উত্থাপন করেছে। শুরু হতেই বাংলা ভাষার দাবি ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনসমূহের সমর্থন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন, মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমুদ্দিন ছাত্র মজলিস প্রভৃতি ছাত্র সংগঠন এই আন্দোলনের পুরােধা হিসেবে ছিল। শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীগণ বাঙালি মাত্রই এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাহিত্য সম্মেলনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রচলনের দাবি উত্থাপন করা হয়। (৮২) ১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষক সম্মেলনে পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি ইব্রাহীম খা বাংলা ভাষার পক্ষে যে জোরালাে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা তথ্য, যুক্তি ও স্বদেশ প্রেমের এক অনন্য উদাহরণ। ঢাকা কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস মিয়া তার ‘মাতৃভাষা’ প্রবন্ধে লিখেছেন যে “আরও একটা জিনিস দেখা যায়; লক্ষ্য করলে মাতৃভাষাই সর্বাগ্রে মানুষকে আত্মপরিচয় করিয়ে দেয় বলেই যুগে যুগে অবতীর্ণ ধর্মগ্রন্থগুলি ধর্ম প্রচারক ও তার দেশের লােকের ভাষাতেই অবতীর্ণ হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ কোরআন ও বাইবেলের কথা উল্লেখ করা যায়। সমস্ত ভাষাই যদি খােদার সৃষ্টি, সুতরাং তার নিকট সকল ভাষা সমান হইলেও তিনি ধর্মগ্রন্থ নাজেল করার সময় ‘অহি’ পাঠাবার সময় নবীর মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করেন নি বরং মাতৃভাষাকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন বলে আমার মনে হয়।” (১০১) পঞ্চাশের দশকে বহু ভাষাবিদ বিদগ্ধ পণ্ডিত অধ্যাপক মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল উর্দু

পৃষ্ঠা: ১৯
হরফে বাংলা লিখলে কেমন হয়? উত্তরে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেছিলেন যে তিনি বাংলা হরফে উর্দু লিখতে চান।
বাংলা ভাষার প্রশ্নে পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সব সময় সমর্থন দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সততই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ছিল অনুগত। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলা ভাষাকে প্রাদেশিক আইন পরিষদে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রস্তাব পাশ করে, যদিও এর কার্যকারিতা ছিল না। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রজনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ও পার্লামেন্টারি পার্টি নতুন করে বাংলা ভাষার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। (১১৫) কিন্তু পরবর্তীকালে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরূপ মনােভাব পােষণ করে।
ভাষা আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের পাশাপাশি দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও সংশয় সমানভাবে লক্ষ্য করা যায়। ভাষার প্রশ্নে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর ভূমিকা সমকালীন পত্রিকায় সমালােচনা করা হয়েছিল। (১০৯) ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনার পর সােহরাওয়ার্দী যখন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সমর্থন করেন, তখন ‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকা একে তার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করে।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর উর্দুকে এককভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা যে অসম্ভব তা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে অনুধাবন করেছিলেন। ফলে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পূর্ব অবস্থান হতে আস্তে আস্তে সরে পড়ে এবং বিকল্প ব্যবস্থাকে সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
১৯৫২ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলােচনার দিন ধার্য করা হয়। (১১৯) গণ পরিষদে পীরজাদা আবদুস সাত্তার এক মুলতবী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর ভাষার প্রশ্নটি নাজিম উদ্দিন মন্ত্রিসভার জন্য এক বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় পীরজাদার মূলতবী প্রস্তাব ছিল এক রাজনৈতিক চাল। (১২৫) এই মূলতবী প্রস্তাবে বলা হয় যে উর্দু পাকিস্তানের স্বীকৃত রাষ্ট্রভাষা নয় এবং রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে হঠাৎ কোনাে সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়ােজন নেই। ইংরেজিই যেহেতু এক প্রকার সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত, সেজন্য ভাষার প্রশ্নটি মীমাংসার পূর্ব পর্যন্ত ইংরেজি ভাষাতেই সরকারি কাজকর্ম চলতে পারে।
আবুল কাশেম ফজলুল হক রাষ্ট্রভাষা আলােচনা মূলতবী রাখার প্রস্তাব সমর্থন করলেও রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন :“আমি আমার দৈনন্দিন কাজের মধ্যেও পূর্ববঙ্গের জনগণের সহিত মিশিয়াছি এবং ভাষা সম্পর্কে তাদের মনােভাব সম্পূর্ণরূপে জানিয়াছি। আমি নিশ্চিত বলিতে পারি যে, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়ার পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের কেহই ভােট দিবে না।” (১১৬) অবশ্য ফজলুল হক সন্দেহ পােষণ করেন যে ইংরেজি অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উল্লেখ্য যে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে ইংরেজিকে বিশ বছরের জন্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং প্রাদেশিক ভাষার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারসমূহের উপর অর্পিত ছিল। ৪. দেশব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনার তদন্ত দাবি শেষ পর্যন্ত সরকারকে একটি তদন্ত কমিশন গঠনে বাধ্য করে। শেষ পর্যন্ত ১৩ মার্চ (১৯৫২) কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে পূর্ববঙ্গ সরকার হাইকোর্টের বিচারক ইংরেজ নাগরিক টি. এস.এলিসকে নিয়ে একব্যক্তি

পৃষ্ঠা: ২০
কমিশন গঠিত হয়। (১২১) কিন্তু এটি ছিল একটা প্রহসনমূলক তদন্ত অনুষ্ঠান। তদন্ত কমিশন গঠন, তদন্তের ক্ষেত্র নির্ধারণ, সাক্ষী নির্বাচন ও তদন্ত রিপাের্ট প্রণয়ন ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই ছিল প্রহসন, কেননা এটি ছিল প্রায় চুক্তিভিত্তিক কমিশন। এরূপ একটি ঘটনায়। এরূপ একটি তদন্ত অনুষ্ঠান এবং এরূপ তদন্ত রিপাের্ট জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার প্রায় সমরূপ বলে মনে হয়। জালিয়াওয়ালাবাগে নির্বিচারে নিরস্ত্র ভারতীয়দের হত্যাকাণ্ডের নায়ক মাইকেল ড, ডায়ারের কার্যাবলী তদন্তকর্মে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। ডায়ারের পদোন্নতিও হয় এর জন্য। টি.এইচ. এলিসের ক্ষেত্রেও এর সমরূপতা লক্ষণীয়। এই তদন্ত কমিশনের নিকট যে বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা হলাে :
ক. পুলিশের গুলিবর্ষণ প্রয়ােজনীয় ছিল কিনা?
খ. যে পরিস্থিতিতে পুলিশ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তা যথার্থ ছিল কিনা?
তদন্ত কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে টি, এইচ, এলিস ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষ্যদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। এই বিজ্ঞপ্তি পূর্ববাংলার পত্র-পত্রিকায় এবং রেডিও এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়। (১১৭) বিচারপতি এলিস ২৮টি প্রতিবেদন গ্রহণ করেন, তবে এর মধ্যে একটি ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা সম্পর্কিত বলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি। কেননা বিচারপতি এলিসের দায়িত্ব ছিল শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘঠিত ঘটনার তদন্ত অনুষ্ঠান। ১৩ মার্চ তদন্ত কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বিচারপতি এলিস ২০ মার্চ প্রতিবেদন বা বক্তব্য প্রেরণের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন এবং প্রতিবেদন বা বক্তব্য প্রেরণের শেষদিন ধার্য করেন ৩০ মার্চ। বিচারপতি এলিসের তদন্তকার্য নিরপেক্ষ ছিল না, তিনি তদন্ত কার্য সম্পাদন করেছেন সরকারের পক্ষে। সম্ভবত পূর্বেই সবকিছু নির্ধারিত ছিল। পুলিশের গুলিবর্ষণ যথার্থ ছিল কিনা এ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে বিচারপতি এলিস এমন সব তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা করেছেন যা ভাষা আন্দোলনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। এলিস তার বিবরণীতে ‘. লিখেছেন যে ১৬ জন সাক্ষী অভিযােগ করেছে যে তারা ছাত্রদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে। এবং তাদের অধিকাংশই বাস ও রিকসা চালক যারা ধারণা করেছে যে এই তদন্ত কমিশনের একটা দায়িত্ব হলাে ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিপূরণ দান।
বিচারপতি এলিসের তদন্ত কমিশনে পাঁচ ধরনের সাক্ষী ছিলেন। প্রথম শ্রেণীর সাক্ষী ছিলেন ২১ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, একজন চিকিৎসক এবং একজন ফটোগ্রাফার। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সংখ্যাই ছিল বেশি। দ্বিতীয় শ্রেণীর সাক্ষী ছিলেন ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা যারা হলেন উপাচার্য এস. এম. হােসেন, কলা অনুষদের ডীন ও ইংরেজি বিভাগের প্রধান আই এইচ, জুবেরী এবং সলিমুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ। তৃতীয় শ্রেণীর সাক্ষী ছিলেন ১০ জন ছাত্র এবং এদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। চতুর্থ শ্রেণীর সাক্ষী ছিলেন ৪ জন চিকিৎসক, ৩ জন নার্স ও ৫ জন ওয়ার্ডবয় ও এম্বুলেন্স সার্ভিসের সাথে জড়িত ব্যক্তি, ১ জন মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক এবং ১ জন মেডিকেল কলেজের নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত। পঞ্চম শ্রেণীর সাক্ষী ছিলেন ১৫ জন যারা হলেন বাস ও রিক্সাচালক, যাত্রী, সরকারি কর্মচারী, ডাক্তার প্রমুখ ব্যক্তি। সর্বমােট ৬৪ জন সাক্ষী এলিস কমিশনের নিকট সাক্ষ্য দান করেন। অন্যদিকে ২৮টি লিখিত প্রতিবেদনের মধ্যে ১১টি প্রতিবেদনে পুলিশের গুলিবর্ষণ যথার্থ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের পক্ষ হতে এবং পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের পক্ষ হতে দুটি প্রতিবেদন পেশ

পৃষ্ঠা: ২১
করা হয় যেখানে ছিল এই তদন্ত কমিশন সম্পর্কে এই সংগঠনদ্বয়ের সিদ্ধান্তসমূহ। তদন্ত কমিশনের বিবেচনাধীন বিষয়ের সীমাবদ্ধতার জন্য এই সংগঠনদ্বয় সাক্ষ্যদান হতে বিরত থাকে। বেনামি একখানা প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণ করা হয় যেখানে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটকে রেখে এই তদন্ত কমিশন পরিচালনা অর্থহীন বলে উল্লেখ করা হয়। কেননা কারাগারে আটক এই নেতৃবৃন্দই ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
বিচারপতি এলিসের প্রতিবেদনে ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার বিবরণ রয়েছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল আহ্বান করে এবং বিশাল জনসমাবেশের ঘােষণা দেয়, কেননা এদিন আইন পরিষদের অধিবেশন আরম্ভ হবে। প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলিম লীগও এইদিন এক জনসভা আহ্বান করে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে পূর্ব অনুমতি ব্যতীত ৫ জন এবং এর অধিক ব্যক্তি প্রকাশ্য সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘােষণা করেন। কিন্তু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ সমবেতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল হতেই ছাত্ররা পিকেটিং শুরু করে এবং ১০ টার মধ্যে বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। ছাত্ররা সভা করার সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জুবেরী ও ড. গনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। ছাত্ররা উপাচার্যকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে নেতৃত্ব দেবার প্রস্তাব করে। উপাচার্য ছাত্রদের কেবলমাত্র একটি সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থান ত্যাগের অনুরােধ জানায়। উপাচার্যের প্রস্তাবে ছাত্ররা রাজি হয় এবং শর্ত আরােপ করে যে এই সভায় উপাচার্য সভাপতি থাকবেন। কি’ ছাত্রদের এই প্রস্তাবে উপাচার্য রাজি হন নি। কিন্তু উপাচার্য ছাত্রদের আশ্বাস প্রদান করেন যে, ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে সভা করে স্থান ত্যাগ করলে তিনি ছাত্রদের সাথে থাকবেন। অন্যদিকে ছাত্ররা দাবি জানায় যে উপাচার্য এই সভার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। এই দাবিও উপাচার্য মেনে নেন নি। ছাত্ররা ১১ টার মধ্যে তাদের সভা শেষ করে এবং ৫, ৭ ও ১০ জন একত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে আসে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে পুলিশ প্রথম ৯১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে এবং পুলিশ ভ্যানে তােলার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ ভ্যানের সংখ্যা প্রয়ােজনের তুলনায় কম হওয়ায় পুলিশ বিপাকে পড়ে, এ অবস্থায় ছাত্ররা উত্তেজিত হয় এবং “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”, ‘পুলিশ জুলুম চলবে না ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কঁাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং এক পর্যায়ে দুপুর ৩-৩০ মিনিটে গুলিবর্ষণ করে। এলিস কমিশনের বিবরণ অনুযায়ী পুলিশ ২৭ রাউণ্ড গুলিবর্ষণ করে এবং এতে ১ (এক) জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়। পরে হাসপাতালে আরাে ৩ জন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। টি.এইচ.এলিস বিভিন্ন সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে পুলিশের পর্যাপ্ত হেলমেট বা মস্তক আবরণ নেই। সবশেষে এলিস তার তদন্তে পুলিশের গুলিবর্ষণকে যথার্থ বলে প্রমাণ করেছেন। (৩৮) উল্লেখ্য যে সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এলিস কমিশনকে বর্জন করেছিল। উল্লেখ্য যে ই.এইচ.এলিস তার বিবরণী ৫২টি অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং খুব সম্ভবত জ্ঞাতসারেই তিনি এটি করেছেন স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য। কিন্তু তিনি বােধহয় জানতেন না যে তার তদন্ত বিবরণী ভাষা শহীদদের রক্তঋণ পরিশােধ করতে পারবে না। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নিজস্ব। নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে ঔপনিবেশিক আইনের ধারায় যে হত্যাকাণ্ডকে এলিস যথার্থ প্রমাণ

পৃষ্ঠা: ২২
করেছেন বাঙালি আরাে রক্ত ঢেলে দিয়ে একুশের ইঙ্গিত বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। ৫. রাষ্ট্রভাষা, শিক্ষার মাধ্যম এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করার দাবি অনেক পুরানাে হলেও এই দাবির বাস্তবায়ন ছিল সমকালীন রজনীতির সাথে জড়িত। বাংলা ভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে উখিত আন্দোলনের পরিধি ব্যাপকরূপ ও নব আয়তন লাভ করলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। মুহম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের ইঙ্গিত দিলে উর্দুভাষা প্রচারের পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এ পর্যায়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সংগঠন বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণে উৎসাহী হয়। কিন্তু পূর্ববাংলার জনগণ এই উদ্যোগে সাড়া দেয় নি। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুর পক্ষে বক্তব্যের পর পরই ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী পরিষদ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোর্সসমূহে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। (৭৯) প্রকৃতপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত ছিল প্রকারান্তরে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সমর্থন। যদিও পরবর্তীকালে এ বিষয়ে নীতি ও কর্মপন্থা সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, ক্রমশ শিক্ষানীতি সরকারি শাসন নীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাকে পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে আইন পরিষদে বিল পাস হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এ বিষয়ে কার্যকরী কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। (৪১ ও ৪৯)
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘােষণা করার পর পূর্ব বাংলার ছাত্র ও জনতা প্রকাশ্যে বিরােধিতা করে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বাংলায় উর্দুভাষা চালুকরার বিষয়টি অনেকাংশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংস্কৃতির জন্য পূর্ববাংলায় উর্দুর ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে অবাঙালিগণ প্রগাঢ় আগ্রহ ব্যক্ত করেন। বিভাগপূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে তারিখ-ই উর্দু এর সম্পাদক আবদুল হক এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পূর্ববঙ্গে এই সংগঠনের সম্পাদক মিজানুর রহমান এজন্য সরকারি সহযােগিতার জন্য গােপনে চেষ্টা করেন। (৩৯) মাশরেখি পাকিস্তান সাহিত্য মজলিস নামে অপর একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন উর্দু প্রচার এবং আরবি ও উর্দু হরফে বাংলার প্রচলনের কাজে নিয়ােজিত হতে আগ্রহী হয়। (৪৫) পাকিস্তানের আদর্শের সাথে সংহতিপূর্ণ পাঠক্রম প্রবর্তনে তাদের সুপারিশ ছিল। এই প্রতিষ্ঠান সরকারের মুখ্যসচিবের নিকট স্বীকৃতি দাবি করে। অবশ্য এর পেছনে নিশ্চিতভাবেই আর্থিক লাভালাভের প্রশ্ন জড়িত ছিল। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণ এবং উর্দুভাষার প্রচলন সম্পর্কে উর্দু ডিপ্লোমা পরীক্ষা বাের্ডের প্রাক্তন সচিব বদরুদ্দীন আহমদ পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে স্বীয় অভিমত ব্যক্ত করেন। (৫৭) ১৯৪৮ সালের ৭-৯ জুন তিনদিনব্যাপী পাকিস্তানের শিক্ষা উপদেষ্টা বাের্ডের প্রথম সভা ছিল প্রায় সম্পূর্ণভাবে সরকারি পর্যায়ের যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্যদের সংখ্যাধিক্য লক্ষণীয়। সভায় পূর্ববাংলা হতে যােগদানকারী সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ হাসান, প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদ, জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. কুদরত-হ -খুদা, আইন সভার সদস্য রাজকুমার চক্রবর্তী ও জনশিক্ষা বিভাগের প্রাক্তন সহকারী খান বাহাদুর আবদুর রহমান খান। উল্লেখ্য এই শিক্ষা উপদেষ্টা সভার সভাপতি ছিলেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান যিনি পরবর্তীকালে আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এই শিক্ষা উপদেষ্টা বাের্ডের সভার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

পৃষ্ঠা: ২৩
পরবর্তী সভার আলােচনা সূচিতে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে সমান মর্যাদা দানের প্রশ্ন উত্থাপন করে। (৪২)
১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ববাংলার মাধ্যমিক শিক্ষাবাের্ড এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উচ্চবিদ্যালয়ে তথা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ধ্রুপদী ভাষা বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ঘােষণা করে। এজন্য প্রস্তাবিত ধ্রুপদী ভাষাসমূহ ছিল আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত, পালি ও ল্যাটিন এবং এ নির্দেশ ১৯৫৩ সাল হতে কার্যকরী করার শর্ত থাকে। পূর্ববাংলার মাধ্যমিক শিক্ষাবাের্ড কর্তৃক প্রচারিত এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রাদেশিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি করে। কেননা শিক্ষা বিভাগ মনে করে যে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নীতি-নির্ধারক মহলের মনােভাবের সাথে সম্পর্কিত। প্রকৃতপক্ষে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অভিহিত করে জিন্নাহর বক্তৃতার পর পূর্ববাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে বিষয় হিসেবে উর্দুর অনুপস্থিতিই ছিল শিক্ষা বিভাগের ক্ষোভের একমাত্র কারণ। শিক্ষা বিভাগের মতামত হলাে যে জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সরকারি উচ্চমহলের পূর্বানুমতি প্রয়ােজন। (৪০) শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের উপর চাপ প্রয়ােগের মাধ্যমে উর্দুকে ‘ধ্রুপদী ভাষার’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি এতদুর জটিল হয়েছিল যে ১৯৪৯ সালের পূর্ববাংলার মাধ্যমিক শিক্ষা বাের্ডের সদস্যদের সাথে মত বিনিময়কালে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ সম্পর্কে অভিযােগ উত্থাপন করেন এবং শিক্ষা বাের্ডের কার্যক্রম বিভিন্নভাবে সমালােচনা করেন। (Government of Past Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Education Department, Education Branch, October, 1949, Bundle-62, Proceeding Nos. 105-105.)
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে বুদ্ধিবৃত্তিক সহযােগিতা করেছিলেন সমকালীন বাঙালি বুদ্ধিজীবীগণ। এঁদের মধ্যে অধ্যাপক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল কাসেম, কাজী মােতাহার হােসেন, ফেরদাউস খান, সৈয়দ মুজতবা আলীর নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযােগ্য। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ড. কাজী মােতাহার হােসেন ছিলেন। অত্যন্ত সচেতন এবং তারা সততই প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন—বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষার্থে পালন করেছেন স্ব-আরােপিত দায়িত্ব। ১৯৪৮ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শিরােনামে একটি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করেন যেখানে ঐতিহাসিক তথ্য, যুক্তি ও বাস্তব জ্ঞানের গভীর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। (৮১) পরবর্তীকালে ইব্রাহীম খাঁ (৯০), সুকদেব উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রুস্তুম আলী (৯৩), ঢাকা কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস মিয়া (১০১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহিত্যুদ-দীন (১০২) এবং ঢাকার জয়মণ্ডপ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কুমুদিনীকান্ত ঘােষাল (১৪০) প্রমুখ লেখকবৃন্দ বিভিন্নভাবে বাংলা ভাষার পক্ষে যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করে ভাষার দাবিকে সমর্থন করেন। ২১-২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলির পর পরই সরকারি উদ্যোগে পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা ভাষা এবং পূর্ববাংলায় উর্দুভাষা প্রচলনের প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। শিক্ষা বিভাগ পূর্ববাংলায় অবস্থানরত অবাঙালিদের বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে চতুর্থ শ্রেণী হতে অবাঙালিদের জন্য বাংলা ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘােষণা এবং পাঠক্রম তৈরির জন্য তিনজন সদস্যের একটি কমিটি গঠন ইত্যাদি ব্যবস্থা ত্বরিতভাবে গ্রহণ করা হয়। (৪৪) ভাষার প্রশ্নে পূর্ববাংলার জনগণ অনড় ও অপরিবর্তনীয় মনােভাব প্রকাশ করলে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপিত হতে থাকে। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে উদ্ভট প্রশ্ন পর্যন্ত

পৃষ্ঠা: ২৪
করা হয়, যেমন ‘আরবী হরফে বাংলা লেখা’, রােমান হরফে বাংলা লেখা’, উর্দু হরফে বাংলা লেখা ইত্যাদি। (৮৪) এ সকল বিষয়ে অবাঙালি মােহাজেরদের আগ্রহ ও ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। আঞ্জুমান মােহাজারিন মাশরেখ-ই পাকিস্তানের ঢাকা শাখার অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গােলাম মােহাম্মদ এর নিকট এক স্মারকলিপি পেশ করেন। এই স্মারকলিপিতে উর্দুকে কেন্দ্রীয় ভাষা এবং পাক-বাংলাকে আঞ্চলিক ভাষা ঘােষণার দাবি জানান। অবশ্য এখানে ‘পাক-বাংলা’ কে আঞ্চলিক ভাষা ঘােষণার দাবি জানান। অবশ্য এখানে ‘পাক-বাংলা’ বলতে উর্দু এবং আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রচলনকে বুঝানাে হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয় উর্দু হলাে পাকিস্তানের প্রাণ এবং পাকিস্তান হলাে উর্দুর দেহ। উর্দুকে জনপ্রিয় করে তােলা এবং পাক-বাংলার মাধ্যমে অর্থাৎ উর্দু ও আরবি হরফে বাংলা লেখার মাধ্যমে গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, দিবা ও নৈশ বিদ্যালয় প্রতষ্ঠা এবং এ বিষয়ে গণশিক্ষার জন্য এককোটি টাকার বার্ষিক বরাদ্দ নির্দিষ্ট করণের দাবি উত্থাপন করা হয়। (৪৬)।
ভাষার প্রশ্ন শুরু হতেই সমগ্র সমাজকে প্রভাবান্বিত করেছিল। সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ছাত্র, মােহাজির, শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব, বিদগ্ধ পণ্ডিত, রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদ বাঙালি ও অবাঙালি নির্বিশেষে সকলেই এই বিষয়ের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সম্পর্কিত হন। এরা তিনটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একদল ছিলেন সম্পূর্ণরূপে বাংলা ভাষার পক্ষে, অপরদল ছিলেন সম্পূর্ণরূপে উর্দু ভাষার পক্ষে এবং অন্য দলটি ছিল বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে। বাংলা ভাষায় বিকল্প হিসেবে উর্দু, রােমান ও আরবি হরফে বাংলা লেখা ছাড়াও অন্য কিছু বিকল্প প্রস্তাব লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য এসব প্রস্তাব ২১ ফেব্রুয়ারির পরের ঘটনা। ১৯৪৯ সালে জনৈক ব্যক্তি ‘Pakistan Language Formula’ শীর্ষক একখানা পুস্তিকা প্রকাশ করে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত বিতর্কের অবসানের জন্য চেষ্টিত হন। বিকল্পবাদী এই ব্যক্তি আরবি ভাষাকে মুসলিম বিশ্বের আন্তর্জাতিক ভাষা, উর্দুকে পাকিস্তানের আন্ত প্রাদেশিক ভাষা এবং আরবি হরফে বাংলাকে পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক সরকারের অফিস, আদালত এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রাদেশিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব করেন। লেখক ১৯৪১ সালের আদমশুমারির কিছু সাংখ্যিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করেন যে পাকিস্তানে বাংলাভাষী মুসলমান সংখ্যা লঘিষ্ট। উল্লেখ্য লেখকের প্রদত্ত সাংখ্যিক তথ্য ছিল সম্পূর্ণ ভুল। স্বরাষ্ট্র বিভাগ এই পুস্তকটি মূল্যায়ন করে মন্তব্য প্রদান করে যে লেখকের প্রদত্ত সাংখ্যিক তথ্য বিভ্রান্তিকর এবং লেখক তার মূল্যায়ন হতে পূর্ববঙ্গের বাংলাভাষী হিন্দুদের সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছেন। লেখক মন্তব্য করেছেন যে পাকিস্তান উর্দুকে সাধারণ ভাষা হিসেবে পেয়ে সৌভাগ্যবান, কেননা চট্টগ্রাম, হাটহাজারী, সর্ষিনা, সিলেট হতে লাহাের পর্যন্ত উর্দুর ব্যবহার অব্যাহত। স্বরাষ্ট্র বিভাগ লেখকের বক্তব্য সত্য বলে মনে করে না। (৪৭) ফলে ১৯৪৮-৪৯ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য পূর্ববাংলার জনগণের উল্লেখযােগ্য অংশকে আহত করবে বলে স্বরাষ্ট্র বিভাগ মনে করে এবং এর ফলে লেখকের পুস্তিকা রচনার উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গােলাম ফজলুর রহমান ‘World Language of India and Pakistan’ শীর্ষক গ্রন্থের একখানা পাণ্ডুলিপি স্বরাষ্ট্র বিভাগে জমা দেন। এই পাণ্ডুলিপিতে ইংরেজিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলাসহ অন্যান্য ভাষাকে প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের

পৃষ্ঠা: ২৪
পক্ষে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র বিভাগ এই পাণ্ডুলিপি ও তার রচয়িতাকে ভালােভাবে গ্রহণ করে নি। স্বরাষ্ট্র বিভাগ এই পাণ্ডুলিপির অংশ বিশেষকে ‘আপত্তিকর’ বলে মনে করে, কেননা তা সরকার ও জনগণের মধ্যে বিব্রতকর সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। স্বরাষ্ট্র বিভাগ মত প্রকাশ করে যে এই ব্যক্তি সরকারি কর্মচারী হয়েও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং প্রচলিত চাকুরিবিধি অনুযায়ী এই পাণ্ডুলিপি এর রচয়িতাকে বিবেচনা করা দরকার। এভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগ এই পাণ্ডুলিপি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার জন্য প্রয়ােজনীয় দান হতে বিরত থাকেন। (৪৮)
১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ দিবস’ পালন করা হয়। এদিন ঢাকায় সকল যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট বন্ধ থাকে। সকালে নগ্নপদে শােভাযাত্রা হয় এবং আজিমপুরে শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। বিকেল ৩ টায় আর্মেনিটোলা ময়দানে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এক বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন অস্থায়ী সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের কাজী গােলাম মাহবুব, গণতন্ত্রী দলের মাহমুদ আলী, মােসাম্মৎ হালিমা খাতুন, তােলাবায়ে আরাবিয়ার শহীদুল হক, রিকসালীগের সেলিম সিভিল লিবার্টি লীগের সৈয়দ আবদুর রহিম, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের আখতার উদ্দীন ও এ. ওয়াদুর এবং ইসলামি ভ্রাতৃসংঘের ইব্রাহীমসহ বহু ব্যক্তি বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় কারবালা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন : “গত বছর ঠিক এমনি দিনে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে চার কোটি অধিবাসীর ভাষা বাংলাকে আজাদ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবিতে ঢাকা শহরের ছাত্র ও জনসাধারণ নির্ভীকভাবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। তাহারা সেইদিন যে নতুন ইতিহাস রচনা করিয়াছে সমগ্র জাতি তাহা চিরদিন শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবে—আজ পাকিস্তান সরকারের সম্মুখে শুধুমাত্র দু’টি পথ খােলা রহিয়াছে। হয় তাহারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে মানিয়া লইবেন, নতুবা গদি ছাড়িবেন।” (১৩২) সভাপতির ভাষণে আতাউর রহমান পাকিস্তান সরকারের নীতিকে “ভেদনীতি” হিসেবে অভিহিত করে এর প্রতি পূর্ববঙ্গের জনগণের বিরােধিতার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সংসদ ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে স্মৃতিসভার আয়ােজন করে। (১৩৩)
১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রথম শহীদ দিবস’ পালন করা হয়। শহীদ দিবস পালনের বিষয়টি ক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তােলে। কেননা সরকার অনুধাবন করতে সমর্থ হয় যে ‘শহীদ দিবস উদযাপনের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্ত্বার প্রকাশ ঘটছে যা পাকিস্তান রাষ্ট্রের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী এবং রাষ্ট্রীয় সংহতির জন্য ক্ষতিকর। ফলে শহীদমিনার নির্মাণ ও শহীদ দিবস পালনের প্রয়াস সরকার নিপীড়নের মাধ্যমে ব্যর্থ করার নীতি গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার, হুলিয়া এবং নির্মিত শহীদমিনার ধ্বংসকরণ। ইত্যাদি ছিল সরকারি পন্থা। ১৯৫৫ সালে শহীদ দিবস উদ্যাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঁাচ (৫) জন ছাত্র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা এর তীব্র প্রতিবাদ করে এবং শহীদ দিবস পালনের উপর আরােপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। (৫০) ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তফ্রন্ট সরকার ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘােষণা করে। একইসাথে ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দিলে শহীদ দিবস পূর্ণভাবে সরকারি মর্যাদা লাভ করে। ১৯৫৬ সালে বাংলাকে উর্দুর সাথে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়া হলে ‘শহীদ দিবস’ পালনের প্রতি কর্তৃপক্ষের নমনীয় মনােভাব লক্ষ্য

পৃষ্ঠাঃ ২৬
করা যায়। কিন্তু ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র বাতিল করে সামরিক আইন জারি করা হলে শহীদ দিবস উদ্যাপনের বিষয়টি পুনরায় জটিল হয়ে পড়ে। সামরিক আইনের আওতায় জনসমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘােষিত হয়। ১৯৫৯ সালের পূর্বে ‘শহীদ দিবস’ সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘােষিত ছিল। কিন্তু সামরিক আইন ঘােষণার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কোনাে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ হন। তবে পূর্বের বছরসমূহের মতােই শহীদের মাজারে প্রার্থনা, শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ-মাহফিল.ও সিম্পােজিয়াম তথা আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে অনুষ্ঠানসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সতর্কতা লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬০ সালে ‘দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় এই মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘শহীদ দিবস’কে অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘােষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সংবাদের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন যে সে দিবসটি ‘রবিবার’ হবার জন্য ছুটি ঘােষণার কোনাে প্রয়ােজন নেই। যা হােক শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলা ও উর্দুকে পুনরায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। এ সময়ই সরকারিভাবে শহীদ দিবস’ পালনের উপর পূর্বে আরােপিত সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং সরকারি উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়। (৫১)
পাকিস্তান সরকার এক পর্যায়ে বাংলাকে পূর্ববাংলার দেশীয় ভাষার মর্যাদা দান করে। বিষয়টি বাঙালিদের আহত করে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও ধ্বনিত হয়। চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং এ প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মেরিনার্স এ্যাসােসিয়েশনের প্রধান কার্যালয় হতে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানাে হয়। বাঙালির মাতৃভাষাকে (mother tongue) দেশীয় ভাষা (vernacular) হিসেবে আখ্যায়িত করাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানাে হয়। (৫২)
উর্দুকে এককভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করা যে অসম্ভব তা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেছিলেন। অন্যদিকে বাংলার একক প্রাধান্য অব্যাহত রাখাও ঝুকিপূর্ণ। বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উর্দুকে চালু করার চেষ্টা করা হয়। পূর্ববাংলার নাম পরিবর্তনের চেষ্টা ১৯৫০ সালেই শুরু হয়। (৯৫) পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাভাষীদের সাথে উর্দুভাষীদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। (৮৪) পশ্চিম পাকিস্তানের বিদ্যালয়সমূহে বাংলা ভাষা আবশ্যিক বিষয় হিসেবে চালু করার প্রস্তাব করা হয়। (১২৮) কিন্তু অফিস আদালতে ইংরেজি ভাষা অব্যাহত থাকে। (১৩৪) উর্দুকেই, কেবলমাত্র পাকিস্তানের রষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও সরকার সম্পূর্ণরূপে হাল ছেড়ে দেন নি। বাংলার পাশাপাশি উর্দু এবং ইংরেজি ভাষা চর্চার উপদেশ এবং নির্দেশ সমানভাবে সরকারিভাবে দেয়া হতাে বিভিন্ন সুযােগে। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলা একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের সুযােগ থাকে উর্দুর সাথে। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভাষা শিক্ষা সম্মেলন’ তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী এ সুযােগে এক বাণী প্রদান করে বাংলা ভাষার সাথে সাথে উর্দু ও ইংরেজি ভাষার উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। সম্ভবত সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের ধারণা ছিল কেবলমাত্র বাংলা ভাষা চর্চা প্রাদেশিকতার চেতনাকে ক্রমশ বেগবান করবে। (৫৩)
১৯৫৬ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের ২১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলা। ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের যথেষ্ট সুযােগ থাকলেও পূর্ববাংলার প্রাদেশিক সরকার বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন। ১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব

পৃষ্ঠাঃ ২৭
পাকিস্তান আইন পরিষদের সভায় সদস্য মুজাফফর আহমদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দানের জন্য কোনাে ব্যবস্থা করা হয়েছে কি? প্রশ্নটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আলােড়নের সৃষ্টি করে। স্বরাষ্ট্র বিভাগ ঃসরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার প্রচলন’ শীর্ষক যে নথি তৈরি করেছিল, তা শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র হতে জানা যায় যে অনুরূপ একটি প্রস্তাব আইন পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন মুহাম্মদ আবুল কাশেম। কিন্তু এ সম্পর্কে সরকারি কোনাে সিদ্ধান্ত হয় নি। শিক্ষা বিভাগ শাসনতন্ত্রের ২১৪(৩) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি কেদ্রীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এ সম্পর্কে কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। তবে বিদেশী ভাষার অনুবাদ করার জন্য একটি পরিভাষা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে শিক্ষা বিভাগ জানায়। তবে শিক্ষা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন যে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার যথেষ্ট আইনগত ভিত্তি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র বিভাগ এ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের আওতাধীন মনে করেন এবং সেভাবেই মােজাফফর আহমদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় যে, বাংলা ভাষাকে একটি রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দানের বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। (৫৪)
১৯৫৩ সালে উর্দু ভাষা বাধ্যতামূলক করার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। এ পর্যায়ে তৎকালীন শিক্ষা বিভাগের পরিচালক কুদরত-ই-খুদার মতামতের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যােগাযােগ করে। কুদরত-ই-খুদা দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দেন পাকিস্তান এডুকেশন এ্যাডভাইজারি বাের্ডের সিদ্ধান্ত হলাে শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা এবং পূর্ববঙ্গে মাতৃভাষাই বাংলা হবে শিক্ষার মাধ্যম। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী হতে ইংরেজি শিক্ষা এবং সপ্তম শ্রেণী হতে অন্যান্য ভাষার। সাথে উর্দু শিক্ষা দেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। অর্থাৎ উর্দু, ফার্সি, আরবি, সংস্কৃত, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও অন্যান্য ভাষার মধ্য হতে শিক্ষার্থীগণ দু’টি ভাষা মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রহণ করে। অবশ্য শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা থাকবে শিক্ষার মাধ্যম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কুদরত-ই-খুদার এই মন্তব্যের বিরােধিতা করে। কেননা তাদের মতে শিক্ষাবাের্ড যষ্ঠ শ্রেণী হতে উর্দু ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য সুপারিশ করেছে। উর্দু সম্পর্কে কুদরত-ই-খুদার মন্তব্যকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পক্ষপাত বলে মনে করে। এই মন্ত্রণালয়ের মতে উর্দু রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হবার পর উর্দুকে অনেকগুলাে ভাষার সাথে যুক্ত করে ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা যুক্তিহীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবও মনে করেন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে শিক্ষার্থীদের দ্রুত উর্দু শিক্ষা গ্রহণ প্রয়ােজন। তিনি এও উল্লেখ করে বলেন যে কুদরত-ইখুদার শিক্ষা বাের্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত। কেননা এ সিদ্ধান্তে তার অংশ গ্রহণ ছিল।(৫৫) শেষ পর্যন্ত সরকার পূর্ববাংলার বিদ্যালয়সমূহে উর্দুকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে প্রচলনের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে “সরকার যদি পূর্ববঙ্গের স্কুলসমূহে উর্দুকে বাধ্যতামূলক করার নীতি পরিহার না করেন তাহা হইলে সমগ্র প্রদেশে উর্দু বর্জন আন্দোলন শুরু করা হইবে।” (১৪০)
‘উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’—মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই ঘােষণার পর পরই রাষ্ট্রীয়ভাবে উর্দু প্রচলনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। উর্দু প্রচলন কমিটি গঠন করে ব্যাপক কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়। এমনকি যেসব বিষয় কেবলমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত ছিল সেসব বিষয় সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

পৃষ্ঠা: ২৮
মতামত নেয়ার চেষ্টা করা হয়। আসলে ভাষা আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের তৎকালীন নীতি নির্ধারক মহল তা ভালােভাবেই অবগত ছিলেন। উর্দু প্রচলন কার্যক্রমের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত করার প্রয়াস ছিল রাজনৈতিক লাভ অর্জন। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির ক্ষেত্রে উর্দুকে গ্রহণ করা যায় কিনা—বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মতামত গ্রহণের জন্য ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একটা প্রস্তাব পেশ করে। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলেও বাঙালিদের মতামত প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দর প্রচলন সম্পর্কে তারা ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন এবং উর্দু ও ফাসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাদানী বিষয়টিকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের স্বার্থেই খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তার মতে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু অবশ্যই শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হওয়া উচিত, তবে কিভাবে এবং কোন পর্যায়ে তা বাস্তবায়িত হবে সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পূর্ববঙ্গে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দুর প্রচলন কার্যকর হবে। কেবলমাত্র বাঙালি জনগণের বাধাই প্রধান নয়, উর্দু চালু করার জন্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষকের অভাবও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। উল্লেখ্য অধ্যাপক সাদানী ছিলেন .. উর্দুভাষী। বিজ্ঞান অনুষদের জনৈক শিক্ষক উর্দু ও বাংলা উভয়ই রােমান হরফে পরিবর্তন করার সুপারিশ করেন। ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আই এইচ, জুবেরী ইংরেজির বিকল্প হিসেবে উর্দু প্রবর্তনের ব্যাপারটি পূর্ববঙ্গের জন্য প্রযােজ্য মনে করেন না এবং তার মতে ঠিক এ কারণেই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনাে প্রতিনিধি নেই। অধ্যাপক জুবেরী সম্পূর্ণ নেতিবাচক উত্তর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন।
তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান ও বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন থেকে। অধ্যাপক জুবেরী শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দু ভাষার প্রচলনকে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য প্রযােজ্য বলে মনে করেন। উল্লেখ্য অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন একে একটা চূড়ান্ত কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রস্তাব বলে মনে করেন যে বাংলাদেশে উর্দুভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চলবে। বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার জন্য তিনি একটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেন, কেননা তার মতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমে পদার্থ, গণিত ও পরিসংখ্যান পাঠদান সম্পূর্ণভাবে সম্ভব। (৫৮)
ভাষা আন্দোলনের পর পরই বাংলাদেশের মহাবিদ্যালয়সমূহে বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান গ্রহণ ও কার্যক্রম ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। অধ্যাপকগণ স্ব-প্রণােদিতভাবে বাংলা ভাষায় শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করতে আরম্ভ করেন। কিন্তু তখনও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার স্বীকৃত মাধ্যম ছিল ইংরেজি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গােচরে এলে এ বিষয়ে ইংরেজির পক্ষেই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাবিদ্যালয়সমূহে অধ্যাপকগণের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বিষয়টি আলােচিত হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে সরকারিভাবে শিক্ষার স্বীকৃত মাধ্যম ইংরেজি, কোনাে কোনাে বিষয় বিশেষভাবে অনুধাবনের বাংলা ভাষা ব্যবহার করা গেলেও উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিই প্রচলিত থাকবে। এই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও কার্যকরী পরিষদও অনুমােদন করে। উপাচার্যকে বিষয়টি সকলকে অবহিত করার জন্যও অনুরােধ জানানাে হয়। (৫০)

পৃষ্ঠা: ২৯
১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে ইংরেজি ভাষাকে বিশ বছর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচলন রাখার নিয়ম রাখা হয়। তবে এখানে শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যে পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারসমূহ নিজ নিজ প্রদেশের ভাষাসমূহ ব্যবহার করতে পারবে। এতে প্রকারান্তরে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তথা পূর্ববাংলায় কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যায় পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন করতে আরাে অনেক বিলম্ব হয়। ১৯৫৭ সালের ২৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (সিনেটের সভা ফজলুল হক হলের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (সিনেটের সদস্য মিঃ শফিকুর রহমান মাধ্যমিক ও অন্যান্য পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে রাংলার প্রচলন করার পন্থা ও উপায় উদ্ভাবনের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। কমিটির গঠন সম্পর্কে প্রস্তাবের মধ্যেই তিনি উল্লেখ করেন যে এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে কোর্টের মাত্র একজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কোটের অপর একজন সদস্য মিঃ এ. কে. এম বােরহানউদ্দীন এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। প্রস্তাব উত্থাপনকালে মিঃ শফিকুর রহমান এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার প্রচলন করার জন্য এই মহতী উদ্যোগ যথার্থ বলে বিবেচনা করবে। এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়? (৬০)
১৯৪৯ সালের ৯ মার্চ সরকারি উদ্যোগে পূর্ববঙ্গ ভাষা কমিটি গঠিত হয়। মুহাম্মদ আক্রাম খাঁ ছিলেন এই কমিটির সভাপতি। এই কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ চৌধুরী ও ড. আদম মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মােয়াজ্জেম হােসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও গণেশ চন্দ্র বসু, দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মােহিনী মােহন দাস প্রমুখ ১৬ জন সদস্য। পরবর্তী পর্যায়ে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. মুহম্মদ এনামুল হক, আবদুল মজিদ, হরনাথ পাল ও অজিত কুমার গুহকে এই কমিটিতে গ্রহণ করা হয়। গণেশ চন্দ্র বসু ও হরনাথ পাল এই কমিটিতে অংশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। যাই হােক, ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ ভাষা কমিটি চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করে যা পরবর্তীকালে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টির সহায়ক হয়। ভাষা কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বিবেচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মােতাহার হােসেনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে এই কমিটি পূর্ববাংলার ভাষা কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে অভিমত জ্ঞাপন করে। বাংলা ব্যাকরণ, বর্ণমালা, উচ্চারণ, বানান, নতুন শব্দ চয়ন, বর্ণান্তরকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ভাষা কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহের সাথে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি অভিন্ন মতামত পােষণ করলেও মূল বাংলা ভাষা সংস্কারের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পােষণ করে। কাজী মােতাহার হােসেন স্বাক্ষরিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কোনাে জনগােষ্ঠীর ভাষা কোনাে কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে ভাষা পর্যায়ে এই কমিটির প্রতিবেদন ছিল প্রকারান্তরে প্রবল প্রতিবাদ। (৬১)
যাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাদানের জন্য পর্যায়ক্রমে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। গঠিত হয়েছিল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে এই কমিটি বাতিল করে দেয়া হয়। (৬৬) অনেকেই সিণ্ডিকেটের সদস্য ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে এই কমিটিতে ছিলেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য নতুন কমিটি গঠন করে,

পৃষ্ঠা: ৩০
(৬৭) কিন্তু এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশের শিল্প ও সরকারি কাজকর্মের সর্বত্র বাংলার প্রচলন সম্ভব হয় নি। ফলে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদান করেন। এখানে নির্দেশ অমান্যকারীকে শাস্তিদানের ব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়। (১৪২)
৬. ১৯৫৬ সালে ভাষা শহীদদের পরিবারকে পূর্ব পাকিস্তান সরকার ক্ষতিপূরণ দান করেন। শহীদ শফিউর রহমান ছিলেন হাইকোর্টের কর্মচারী। ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর রহমান নবাবপুর রােডে পুলিশের গুলিতে শহীদ এই তথ্য শফিউর রহমানের পিতা মাহবুবুর রহমান ২৩ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে জানিয়ে দেন। শহীদ শফিউর রহমানের স্ত্রী আকিলা খাতুন ২১ মার্চ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নিকট সাহায্যের আবেদন জানান এবং এরই ফলে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার স্বরাষ্ট্র বিভাগকে বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করার জন্য অনুরােধ জানান, শহীদ শফিউর রহমান সিভিল সাপ্লাই বিভাগের অস্থায়ী সহকারী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি হাইকোর্টের ফরমস ও স্টেশনারি বিভাগে শিক্ষানবিস হিসেবে যােগদান করেন। কিন্তু তার চাকুরি স্থায়ীকরণ করা হয় নি। রাজনৈতিক কারণে শহীদ শফিউর রহমান সরকারি কর্মচারী হয়েও ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন কিনা এ নিয়ে সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের রাজনৈতিক শাখা, বিচার, অর্থ ও অডিট ইত্যাদি বিভাগের মধ্যে সন্দেহ বিদ্যমান ছিল। প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল যে ২২ ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলি ঘটনার কোনাে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয় নি-ফলে গুলিবর্ষণের যৌক্তিকতা ছিল কিনা তা জানা যায় নি। অন্যদিকে শফিউর রহমান প্রত্যক্ষভাবে এই আন্দোলনে জড়িত ছিল কিনা তাও জানা যায় নি। এছাড়া গুলি লাগার সময় সে কর্মরত ছিল না, সেজন্য কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের নিয়ম শফিউর রহমানের বেলায় প্রযােজ্য হবে কিনা তা নিয়েও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। শহীদ শফিউর রহমানের স্ত্রী ১৯ বছর বয়স্ক আকিলা খাতুন ছিলেন এক কন্যা সন্তানের জননী এবং এ ঘটনার সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। পরে ১৮ মে তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল এই পরিবারের অবস্থা ছিল করুণ ও হৃদয়বিদারক, শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র বিভাগ যুক্তি খুঁজে পায় যে পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী শফিউর রহমান আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না, কেননা তার হাতে ছিল সাইকেল ও একটা ব্যাগে দুপুরের খাবার। অন্যদিকে অফিসে আসার সময় এই ঘটনা ঘটে যাকে কর্তব্যকালীন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। যাই হােক শেষ পর্যন্ত ১৯৫৫ সালে বিচার বিভাগ শহীদ শফিউর রহমানের পরিবারকে বিশেষ পেনশন হিসেবে ৪৮.৫০ টাকা দেবার ব্যবস্থা করে।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৫৬ সালে স্বরাষ্ট্র বিভাগ ভাষা-শহীদদের ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেয়। শহীদ মুহম্মদ রফিক, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম প্রমুখ শহীদ পরিবারকে এককালীন ২০০০ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রত্যেক শহীদ এর উত্তরাধিকার সম্পর্কে যথাযথভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে এই অর্থ সঠিক উত্তরাধিকারীকে প্রদানের শর্ত থাকে। উল্লেখ্য যে শহীদ শফিউর রহমানের নাম এই তালিকায় ছিল না, কেননা তার পরিবার বিচার বিভাগ হতে স্বতন্ত্রভাবে পেনশন পেতেন।
জানা গেছে যে ভাষা-শহীদ আবদুল জব্বারের পরিবারকে এই অর্থ পেতে কিছুটা কষ্ট পেতে হয়েছিল, কেননা এই অর্থ পেতে যথেষ্ট দীর্ঘসূত্রিতা ঘটেছিল। সরকারের নিকট লিখিত শহীদ আবদুল জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুন এক পত্রে জানিয়েছিলেন যে তিনি সম্বলহীনা

পৃষ্ঠাঃ ৩১
এবং জীবনধারণে অক্ষম হয়ে শহীদ জব্বারের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সরকারি নথিপত্র হতে জান যায় যে এরূপ পরিস্থিতিতে একমাত্র সন্তান নুরুল ইসলামকে (বাদল) সঠিকপথে পরিচালিত করার জন্য আমেনা খাতুন পুনর্বিবাহ করেছিলেন শহীদ আবদুল জব্বারের ছােটভাই আবদুল কাদেরকে। (১৪১) অবশ্য যথাযথ পুলিশি তদন্তের পর শহীদ আবদুল জব্বারের মা সাফাতুনেছা বেগমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় একখণ্ড জমি দান করেছিলেন। উল্লেখ্য যে ভাষা-শহীদ শফিউর রহমান ও আবদুল জব্বার ব্যতীত অন্য কারাে সম্পর্কে এ বিষয়ে কোনাে তথ্য পাওয়া যায় নি।

দ্বিতীয় অধ্যায়
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

দলিলপত্র সংখ্যা :১
পলাশী ব্যারাক ও সচিবালয়ে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের বিবরণ
Report on the Plassy Barrack and Secretariat Incident on 12.12.1947
On 12.12.47 Urdu speaking Muslims of Chowk area organised a meeting to be held on 13.12.47 at 4 p.m. in front of the Chowk Mosque to discuss the subject of Urdu to be made the State Language for Eastern Pakistan. To give publicity to this proposed meeting hand bills were printed and a lorry fitted with loud speaker was sent out for announcing the date and time of the meeting and also shouting slogans in support of Urdu language. This lorry started from Chowk at about 10 O’clock and passed through different areas of the town. About mid-day the lorry reached the University Buildings where the men who were in the bus. With a view to making propaganda in the connection, started shouting slogans in support of Urdu language. Some University students intervened and asked these people not to shout slogans in support of Urdu language and extorted to support Bengali language. This led to the dispute between them and it is reported that one of the University students. was roughly handled by the people of the bus. The propaganda bus then proceeded towards the Plassy Barrack and as it was passing along the road in front of the eastern gate of the Plassy Barrack shouting in support of the Urdu Language. Some inmates of the Plassy Barrack mostly students came out and stationed the bus and started arguing with the occupants of the bus that they should support Bengali and not Urdu to be the state language. This created a confusion and some of the Plassy Barrack people wanted to drag down some of the occupants of the bus and there was sort of howling and pulling in which some of the occupants of the bus were roughly handled by the Plassy Barrack people. The bus with its occupants then left the place and it is reported that after about half an hour the same bus carrying a large number of people followed by another big crowd came in front of the Plassy Barrack and all attacked the

পৃষ্ঠাঃ ৩৩
inmate of the Barrack from the eastern side. It is reported that free inter-change of brick-bating and other continued for sometime when the attacking party from outside retreated. Information about this mcident did not reach the Police before 13.30 hrs. When a message was received at the Lalbag, reporting about some troubles in Plassy Barrack. A Police force in a lorry in-charge of an inspector and a sergeant were sent there at once but on arrival at the sport the l’olice party did not see any fight but found a crowd of Plassy Barrack inmates in a very excited mood on the road in front of the castern gate of the Barrack. A group of students of the Engineering College was also found standing along side the Railway Lines in front of the Engineering College Hostel. The Engineering College Hostel boys alleged that their hostel also attacked by a crowd coming from the town side who caused some damage to the dining hall that some crockeries and other utensils were taken away by the attackers that some of the inmates of the Engineering hostel including the wife of the Hostel Superintendent received minor injuries due to the brickbats thrown by the miscreants. It will also alleged by the inmates of the Plassy Barrack that the invaders took away some of their articles from their Barrack as well.
I received information about the trouble at about 2 p.m. from S.P. I rushed to the scene forthwith and on reaching there noticed an excited crowed, all of whom were inmate of the Plassy Barrack, in front of the eastern gate of the Barrack. I also found a crowed of Engineering students of the Railway Lines in front of their hostel and persuaded the crowd in front of the Plassy Barrack as well in front of the Engineering College Hostel to go inside their respective places. I also removed crowds which were to the south side of the maidan. On enquiry from inmates of the Plassy Barrack and the Engineering Hostel and from Medical College it was found that about 13 people received minor injuries except a Darwan of Plassy Barrack who had a broken nose. 2 students of Engineering College also received minor injuries..
The student and clerks of the Plassy Barrack held a meeting immediately after this incident inside the compound of the Plassy Barrack and started to proceed to the Secretariat Buildings in procession to protest against the attack on the Plassy Barrack by the town goondas. The procession started at about 4 p. m. from the

পৃষ্ঠাঃ ৩৪
Plassy Barrack and proceeded towards Secretariat Buildings. The students from the Salimullah Muslim Hall, Engineering Hostel, University Buildings and other places also joined the procession. Between 4.30 to 5 p. m. the procession reached in front of the Hon’ble Minister Mr. A. Hamid and the Hon’ble Minister was forced to come down and give assurance to the demonstration that he would resign if Bengali was not made the State Language of Eastern Pakistan. With this assurances the demonstrators proceeded towards the Secretariat Buildings with the Hon’ble Minister in their midst. The processionists by now were becoming rather disorderly. The gates of the Secretariat Buildings were, in the meantime, closed to prevent the demonstrators getting in to create troubles inside the Secretariat compound. The processionists reached the northern central gate of the Secretariat Buildings and began to push against the door. There was shouting of slogans and shower of abuses against the present Ministry and the Police force. The demonstrators finding that the gate could not be forced open they all climbed over the compound of the Secretariat Buildings and got in. They surrounded the Hon’ble Minister Mr. Afzal and dragged him by force one place to another in the compound in the Varenda of the Secretariat Buildings, it appeared that the demonstrators were determined to roughly handle the Minister and the Police intervention was absolutely necessary but as the Hon’ble Minister did not like Police intervention, Police party simply had to stand by as minute spectators. The demonstrators then started throwing brick-bats and other missiles on the Police officers and men who where inside the Secretariat compound. The brick hits some of the officers and men and caused minor injuries. The demonstrators also assaulted the darwan of the Secretariat Building and caused injuries on his person. By these acts the processionists committed offences of rioting and wrongfully restraint to Ministers and assaulting public servants in the execution of their duties as they should therefore be prosecuted for these offenses committed within the precinct of the Secretariat Buildings
I may mention here that the brick-bats thrown by the demonstrators inside the Secretariat compound that evening hit me twice. Mr. L. Rahman, Addi. S. P. (Crime) was also hit on the back of his head as well as on his hand. The latter caused bleeding injury. Md. Sabir Khan my guard constable was hit on the back by a

পৃষ্ঠা: ৩৫
brick-bat Some other constables were also hit but were not hurt. Mr. MacPherson, Dy. H. P. Wireless just escaped from being hit on his face by a brick aimed at him. A case has been started against the people responsible for the attack on the Plassy Barrack and the Engineering College Hostel, at Lalbagh P. S. and the investigation is proceeding.
Sd. A. Ghaffer
Addl. Superintendent of Police
Dacca City
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Honie Departnient, Police Branch, Bundle-75m May, 1949, Proceedings No. 19-20

দলিলপত্র সংখ্যা : ২
পলাশী ব্যারাকে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে তথাকার কল্যাণ সমিতির বিবরণী
Plassey Barrack Welfare Committee
(Recognised by the Govt. of East Bengal)
On Friday the 12th December at about 11.30 A.M. nearly 40 men came by a Bus named ‘Mukul’ which was fitted with two microphones from the direction of the Muslim Hall towards the Plassey Barracks. It stopped before the eastern gate of the barracks and shouted the slogans mentioned below :
‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাই
উর্দু ভাষার বিরােধীরা কাফের
এই কাফেরদের শায়েস্তা করতে হবে।’
As a result of the shouting of these slogans a number of inmates of the barracks collected near the gate. One unknown voice from the barrack side shouted ‘রাষ্ট্র-ভাষা বাংলা হবে’.
There upon the goondas came out of the bus with hocky stick, daggers and iron rods and began to attack the members of the barracks who had collected there. This resulted in the injury of several persons. After this the goondas retired to a little distance for a while. They then made a renewed attack with brickbats for sometime and went away. In the meantime the Lalbag Police were rang up from the Engineering Hostel and requested to send help.

পৃষ্ঠা: ৩৬
At about 1.30 P.M. goondas came back reinforced from the Dutta Bagan side. This time they came by the bus named Mukul and followed by a Track. They now launched a simultaneous attack on the Plassey Barracks and the main hostel of the Engineering College. A list of persons injured during the attacks in enclosed. During the couse of the attack they looted the barracks and the main Engineering hostel carrying away some cloths from the barracks and utensils and crockeries from the Engineering hostel. During this attack the wife of the Vice-Principal of the Engineering College received serious brick-bat injuries.
Among the goondas there were a number of persons in the uniform of National Guards and also two men who keep stalls in front of the Plassey Barracks on the side of the City Road (Eastern Gate of the Barracks). These two men have now closed their stalls but it should be possible to trace them by making enquries from the neighbouring stall keeper.
This last attack went on for more than an hour. The goondas left a little after 2.30 P.M. on receiving warning from one of their men who came by a Truck. Immediately after their dispersal about 3 or 4 Policemen accompanied by a European Officer came and made some enquiries. One of the goondas who was stealthily lingering at that time in the crowed were detected and shown to the Police officer who seemed to take him into custody. After the party of Policemen had left Mr. Gofur, the City Police Superintendent who came with a number of armed policemen and began to assult and chase the inmates of the barracks. He went away without making any enquiries whatsoever. At the time of going away he took into custody 13 member of barracks without any reason.
The goondaism went on unchecked even after this. In the evening at about 6.30 P.M. while returning from Chowk Bazar Maulvi Qazi Barkhundar Ali as Assistant of the Office of the Controller of Printing and Stationary residing in the Salimullah Muslim Orphanage was challenged by a number of ruffians armed with daggers and dangerous weapons near the Maternity House on the Urdu Road and was dragged into a nearby lane and finally let off after having convinced them that he was not a resident of the Plassey Baracks. On the morning of the 13th many Government employees were molested near the vicinity of Chawk. Maulvi Moinuddin Chaudhury an Assistant of the D.A.G.P.T. residing in the Plassey Barracks was caught by some ruffians near the central jail. He managed to escape by giving false address.

পৃষ্ঠাঃ ৩৭
P.S. One of the goondas who attacked the barracks on the 12th has been detected. His name is Ekbal Hussain, Fitter Tejgaon Workshop. He now lives in Plassey Baracks No. 16, Room-8. His movements are still suspicious. He should be immediately apprehended.
Submitted to Chief Secretary through D.S. Home Department for immediate necessary action.
Signed/Md. Sirajul Huq
President, Plassey Baracks Welfare Committee
13.12.47.
K. Halimuzzaman
General Secretary, East Bengal Secretariat Association
Inmates of the Plassey Barrack assulted on 12.12.17 by the gundas.
1. Md. Ali, an employee of A.G.E.B., age 28, injured on the knee by a Brick-bat during the second attack while starting for office.
2. Md. Nurul Islam, an employee of Finance Department, age 20, hit and cut on his check-bone by a brick-bat while going for Junina prayer.
3. Badiul Alam – cook attached to Block – 8, age 15, hit on the toes by brick-bat during second attack while going to market.
4. Ishak Khan – A.G.E.B., age 27, hit on the fore-head by hockey stick during first attack while returning from market.
5. Lutfar Rahman – age 23, cook attached to Block 7, Room -8, hit on the left arm by brick-bat while going to Bazar. 6. Sk. Jane Alam, Finance (Accounts), Block –
6. received brick-bat on the (illegible).
7. Sikandar Ali, C.T.O. hit on the fore-head by a lathi while returning from office.
8. Khondakar Abul Hussain, P.M.G’s office, cut on the pate by brick-bat while coming from office.
9. A.F.M. Nurul Islam, P.M.S. – received brick-bat injury on the skin while coming from office.
10. Abdul Mannaf-cook attached to Block 11, received brick-bat injury on the head while going to market.
11. Ali Ahmed – cook attached to Block 10, received brick-bat injury on the elbow while returning from the market.
12. Noab Ali – cook attached to Block No. 5, received brick-bat injury on the left leg.
13. Fazlur Rahman – an employee of High Court received brick-bat injury on the leg.

পৃষ্ঠা: ৩৮
14. Md. Muzaffar – P.S.C. – received lathi injury on the middle finger of the right hand.
Engineering Hostel
1. Md. Nowab Ali, Gate Keeper, Plassey Barrack (Engineering Hostel)
2. Syed Ahmed, Ist Year Student, Enginnering School.
3. Mesbahuddin Ahmed, Student, Ist Year Engineering School and many others.
Office Notes :
This was shown to C.S. and D.M. and S.P. A copy has also been sent to S.P. through I.G.P. with the request to take necessary action at once. D.S. 1 may see.
Signed. A. ali
14.12.47.
Seen
Signed/Illegible
15.12.47.
Government of East Bengal, Home, l’olice, B-l’roceedings, Bangladesh National Archives, Bundle-75, May, 1949, Proceedings No. 19-20

দলিলপত্র সংখ্যা : ৩
সরকারি কর্মচারীদের পেশাগত বিধি সম্পর্কে সতর্কবাণী
Government of East Bengal
Home Department
General Administration and Appointment
Circular
From: W. B. Kadri, Esqr. I.C.S.
Deputy Secretary to the Government of East Bengal
To
The Director of Publicity, Dacca.
Memo. No. 416 G.A. dated Dacca, the 20th September, 1947
Subject : Conduct of Government Servants.

পৃষ্ঠাঃ ৩৯
Instances have come to the notice of Government in which Government servants in particular from the Nilkhet and Palassey Barracks, Dacca have organised and attended public meetings in order to ventilate alleged grievances, and have sometimes taken matters into their hands to redress these grievances. Government are fully aware of the inconveniences with which Government servants have had to put up on transfer to Dacca. They have already removed most of them and are prepared always to remove any of the legitimate grievances brought to their notice. They will not however to break in discipline among their servants. Government therefore desire that it should be impressed upon every Government servant that their grievances should be submitted for redress to the proper authorities in a regular manner, and the organisation of public meetings and agitations and the taking of other actions to coerce Government offend against the provisions of the Government Servant’s Conduct Rules to which every Government servant is subject. Government would be reluctant to take drastic disciplinary action against its servants and trust that they will realise that such agitation is against their own interest.
It is their intention however to take firm disciplinary action to deal with any contravention of the Government Servant’s Conduct Rules.
It is requested that this circular be communicated to all staff under your control.
Sd/W. B. Kadri,
Deputy Secretary to the
Government of East Bengal

Government of East Bengal
Home Department
General Administration and Appointment
From:
A. Ahmed
Chief Secretary to the Government of East Bengal.
То
The Department of Planning and Public Relations
Government of East Bengal, Dacca
Memorandum No. 1139 G. A., dated, Dacca, the 24th December, 1947.

পৃষ্ঠা: ৪০
Subject: Conduct of Government Servants : Taking part in Political Controversies.
Instances have come to the notice of Government, of Government Servants taking part in public demonstrations or public meetings or issuing press statements for or against the adoption of Bengali as the State Language of this Province. This controversy has assumed a political complexion. It is, therefore, no longer permissible for any Government Servant to take part in this or any other political controversy publicly. Government Servants doing so, will render themselves liable to disciplinary action for offending against the provisions of the Government Servants’ Conduct Rules.
Sd/A. Ali
for Chief Secretary to the Government of East Bengal.
Government Servants’ Conduct Rules
1. “17. Communication of official documents or information :
A Government servant may not, unless generally or specially empowered by Government in this behalf, communicate directly or indirectly to Government servants belonging to other Departments, or to non-official persons, or to the Press, any document or information which has come into his possession in the course of his public duties, or has been prepared or collected by him in the course of those duties, whether from official sources or otherwise.”
2. “18 Connection with Press :
A Government servant may not, without the previous sanction of Government, become the proprietor in whole or in part, or conduct or participate in the editing or management of any
newspaper or other periodical publication.
3. “20. Criticism of Government and publication of information or opinion upon matters relating to foreign countries : (i) No Government servant shall, in any document published under his own name or in any public utterance delivered by him, make any statement of fact or opinion which is capable of embarrassing :
(a) The relations between Government and the people of
Pakistan or any section thereof, or

পৃষ্ঠাঃ ৪১
(b) The relations between Governor General in Council and any foreign country or the ruler of any state in Pakistan.
(ii) A Government servant who intends to publish any document under his own name or to deliver any public utterance containing statements in respect of which any doubt as to the application of the restrictions imposed by sub rule (1) may arise shall submit to the Government under which he is serving a copy of document which he intends to publish or of the utterance to deliver, and shall not publish the document or … save with the sanction of the Government under which … with such alteration, if any as the Government made.
4. “23 Taking part in politics and elections :
(i) No Government servant shall take part in, subscribe or assist in any way, any political movement in Pakistan, or to Pakistan affairs. Explanation : The expression ‘political movement includes any movement or activities tending directly or indirectly to excite disaffection against, or to embarrass, the Government as by law established, or to promote feelings of hatred or · enmity between different classes of Pakistan subject or to disturb public peace.
(ii) No Government servant shall permit any person dependent on him for maintenance or under his care or control to take part in, or in any way assist, any movement or activity which is, or tends directly or indirectly to be subversive of Government as by law established in Pakistan. Explanation : A Government servant shall be deemed to have permitted a person to take part in or assist a movement or activity within the meaning of clause (ii), if he has not taken every possible precaution and done everything in his power to prevent such person so acting or if, when he knows or has reason to suspect that such person is so acting he does not at once inform Government or the officer to whom he is subordinate.” Explanation : “The expression “political movement” includes any inovement or activities tending directly or indirectly to excite disaffection against, or to embarrass, the Government as by law established, or to promote feelings hatred or enmity between different classes o Pakistan subject or to disturb the public peace.”

পৃষ্ঠা: ৪২
10 November, 1948
The question has been raised whether Government Servants should be allowed to participate in the activities of the Jamat-i-Islami sponsored by Maulana Abul Ala Moududi of Lahore. I am to say that as the Jamat-i-Islami, is a political movement, Government servants should not, in view of the provision of rule 23 of the Government Servant Conduct Rules, participate in its activities. I am to request that this may be brought to the notice of your officers and staff.
Assistant Secretary to the Government of East Bengal, Establishment Division.
3 September, 1949
In June, 1949, a number of subordinate employees (Junior Assistants, Orderlies, etc.) hailing from West Bengal applied to Government requesting that they should be allowed to re-opt for services in West Bengal in view of difficulties of looking after their properties and families in West Bengal and of the fact that in the eyes of some of their colleagues failing from East Bengal their loyalty to Pakistan was suspected. They were informed that Government was unable to accept their request. Subsequently, some of these misguided employees took out a procession in Dacca demanding that they should be allowed to re-opt for services in West Bengal. A few days later a letter appeared in Azad and Zindigi purporting to have been written by ‘sufferers’, inviting the attention of the Premier and Chief Secretaries of East Bengal and West Bengal to permit re-option to employees who wanted to serve in the other Province
Government strongly disapprove public agitation or representation by employees hailing from West Bengal for being allowed to re-opt to serve in West Bengal. Such representation or agitation would not alter the position as regards options but would merely provide material to enemies of Pakistan to decry it. Government desire that these facts be made widely known among such employees and they should be warned that such agitation or representation shall in future be taken as indicative of disloyalty to Pakistan and render such employees liable to dismissal from service.

পৃষ্ঠাঃ ৪৩
Home Department Political Memorandum, Aziz Ahmed, Chief Secretary to the Government of East Bengal.
19 January, 1950
The Government have for sometime been watching the activities of the Progressive Writers’ Association in Pakistan and are now satisfied that it is definitely a political organisation. It has, therefore, been decided that the Government servants should not, in view of the provisions of Rule 23 of the Government Servant Conduct Rules, become members of the Association or participate in its activities. I am to request that this may be brought to the notice of your officers and staffs. Chief Secretary, Ministry of the Interior Home Division, Karachi. Government of East Bengal, B-Proceedings, Department of Planning, Bundle No. 3, December, Proceedings No. 37-47; and Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Public Relations Departmient, Branch-Publicity, Bundle 19, May 1949, Proceeding Nos. 42-55.

দলিলপত্র সংখ্যা : ৪
পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্বোধনী ভাষণ ও বিভিন্ন কমিটির সুপারিশসমূহ
Extract from the Inaugural Address of Fazlur Rahman, Minister for Interior, Information & Broadcasting and Education, Government of Pakistan delivered to the Pakistan Educational Conference held at Karachi from 27th November to 1st December, 1947
The language problem has long buffled our educationists for with the exception of Russia it is more complex in India than in any other country. In seeking a practical solution we will do well to study the Russian experimentation in this as in many other fields of education. With as many as 2000 groups of distinct nationality ranging from the highly civilised to tribes still in the primitive stage of devil-worship and with 200 languages and dialects some of which did not even have a written alphabet, to deal with, Russian statesmen and educationists had certainly a Herculean task to perform, but it is a tribute to their political sagacity that instead

পৃষ্ঠা: ৪৪
of forcing different national groups into narrow Russian cultural mould they have all such languages the medium of instruction as have showed some evidence of culture, of capacity to grow into a creative tool and to express thought processes.. Today education in Soviet Russia is carried on in no less than ninety languages. I commend the Russian example to you because it shows how diversity has been encouraged without endangering the fundamental unity of a common culture which has been ensured by the making of Russian as the first compulsory foreign language in all non-Russian school. We may not subscribe to the Russian ideology but we can certainly benefit from their handling of the linguistic problem. We in Pakistan must provide the maximum scope for growth to our provincial languages not merely as media of instruction but also as instruments for the dissemination of the culture they embody without at the same time sacrificing the unity of our common culture. To ensure this unity, we need a language for interprovincial communication and in this counexion the claims of Urdu call for special consideration. It is the special creation of Muslims in India and during the comparatively brief period of its existence it has shown an extraordinary vitality and sensitivity both as an instrument of communication and as a vehicle for the expression of the subtlest shades of thought and the most ethereal flights of fancy. The facility with which it can borrow and assimilate words from foreign language, its historic affiliations with Persian, Arabic, Sanskrit and English and its high creative output in prose and poetry constitute to my mind unassailable grounds for its establishment as the ‘lingua franca’ of Pakistan.
Report of the Primary and Secondary Education Committee, 1947
Medium of Instruction : The Committee felt that the institution of a common language was essential to the maintenance of the new nation of Pakistan. The Committee agreed that the common language should be Urdu. Some members of the Committee suggested that Urdu should not only be the common language for Pakistan but it should also be the medium of instruction in each Province. Other members of the Committee, however, felt that the question of medium of instruction should be left to each Province to decide according to its requirements but that Urdu should be the

পৃষ্ঠা: ৪৫
second compulsory language in schools. The Committee were inclined to support the second view. The D. P. I., East Bengal, however, felt that Urdu should not be the compulsory second language and should be one of the option.
Resolutions on Joint Committee Recommendations
(ii) The conference discussed the implications of the problem and the recommendations of the committees in this behalf at great length. The delegates were unanimously of opinion that Urdu should be recognised as the lingua franca of Pakistan and that steps should be taken to ensure adequate facilities for its teaching and learning in the educational institutions of the country. It was pointed out that the introduction of Urdu as a compulsory language would be a natural corollary to its acceptance as the national language of Pakistan.
While some delegates maintained that it should be taught right from the beginning of the school stage so as to increasingly and progressively adopt it as the medium of instruction in the educational system, others maintained that it would be educationally unsound, particularly when the mother-tongues were sufficiently developed. They held that the mother tongues could flourish and develop side by side with the lingua franca and one need not throttle the growth of the other. Ultimately, the conference unanimously adopted the following resolutions :
This conference recommends to the Constitutent Assembly that Urdu should be recognised as the lingua franca of Pakistan. Resolved that Urdu must be taught as a compulsory language in schools, the stage of its introduction in the Primary Schools being left to the decision of the Provincial and States Governments. The Provincial and States Governments concerned will determine the medium or media of instruction at the school stage.
Proceedings of fhe Pakistan Educational Conference held at Karachi from 27th November to 1st December, 1947. Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Education Department, Bundle No. 92, April, 1953, Proceedings No. 769-94.

পৃষ্ঠা: ৪৬
দলিলপত্র সংখ্যা : ৫
শাসনতন্ত্র পরিষদে ভাষার ব্যবহার সম্পর্কিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি
IMMEDIATE
Government of East Bengal
Home Department
Political
From : D.L. Power, Esc., P.A.S.,
To : Deputy Sec. to the Govt. of East Bengal
No. 745-P., dated Dacca, the 3rd March, 1948.
I am desired to request you to bring the enclosed Press Note to the notice of your staff.
Deputy Sec. to the Govt. of East Bengal 3/P.M.3.3
Press Note
Some misunderstanding appears to have arised over the implications of the recent decision of the Constituent Assmebly that all proceedings in that house shall be conduced in Urdu or English. Government, therefore, consider it necessary to clarify the implications of this decision. The rule in question as passed by the Constituent Assmebly reads as follows:
“All proceedings in the Constituent Assembly shall be conducted in the Urdu or English language, provided that the President may allow any person unacquinted or not sufficiently acquinted with Urdu or English to use another language”.
It would be clear, that this decision is merely a matter of procedural convenience; it does not ban the use of Bengalee or Sindhi or Punjabi or Pushtu by a Member of the Constituent Assembly in that house, nor indeed does this decision in any way prejudice the issue of whether Bengalee should be the State language of this province. That issue can be decided at the appropriate time solely in accordance with the wishes of the people of this province alone as ascertained through their accredited representatives. Government wish to warn the people of this province that the enemies of this State are already busy trying

পৃষ্ঠাঃ ৪৭
to exploit this decision with a view to creating a split among the Muslims of this province on whose solidarity the strength of fastern Pakistan primarily depends and that they have decided to deal firmly, as under the circumstances they must, with any attempt on the part of political saboteurs to create trouble.
B. Progs. Home Judicial Bundle -107, January, 1952 Progs, 55-57

দলিলপত্র সংখ্যা : ৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষণের অংশ
Extract from the Convocation Guest’s Speech Given at the Dhaka University by M. A. Jinnah, March, 1948.
“There followed in rapid succession of other difficulties such as withholding by India of our cash balances, of our share of military equipment and latterly, the institution of an almost complete economic blockade of you Province. I have no doubt that all rightthinking men in the Indian Dominion deplore these happenings and I am sure the attitude of the mind that has been responsible for them will change, but it is essential that you should take a note of these developments. They stress the importance of continued vigilance on our part. Of late, the attack on your Province, particularly, has taken a subtle form. Our enemies, among whom I regret to say, there are still some Muslims, have set about actively encouraging provincialism in the hope of weakening Pakistan and thereby facilitating the faliciting the reabsorption of this Province in to the Indian Dominion. Those who are playing this game are living in a Fool’s Paradise, but this does not prevent them trying. A flood of false propaganda is being daily put forth with the object of undermining the solidarity of the Mussalmans of this State and inciting the people to commit acts of lawlessness. The recent language controversy, in which I am sorry to make note, some of you allowed yourselves to get involved even after your Prime Minister had clarified the position, only one of the many subtle ways whereby the poison of provincialism is being sedulously injected into this province. Does it not strike you rather odd that certain sections of the Indian press to whom the very name Pakistan is

পৃষ্ঠা: ৪৮
anathema, should in the matter of language controversy, set themselves up as the champion of what they call your “just rights”? Is it not significant that the very persons who in the past have betrayed the Mussalmans or fought against Pakistan which is after all merely the embodiment of your fundamental right of selfdetermination, should now suddenly pose as the saviours of your just rights and incite you to defy the Government on the question of language? I must warn you to beware of these fifth columnists. Let me restate my views on the question of a State language for Pakistan. For official use in this Province, the people of the Province can choose any language they wish. The question will be decided solely in accordance with the wishes of the people of this Province alone, as freely expressed through their accredited representatives at the appropriate time and after full and dispassionate consideration. There can, however, be only one lingua franca, that is, the language for inter-communication between the various Provinces of the State, and that language should be Urdu and cannot by any other. The State language therefore must obviously be Urdu, a language that has been nurtured by a hundred millions of this sub-continent, a language understood throughout the length and breadth of Pakistan and above all, a language which, more than any other provincial language, embodies the best that is in Islamic culture and Muslimtradition and is nearest to the languages used in other Islamic countries. It is not without significance that Urdu has been driven out of the Indian Union and that even the official use of the Urdu script has been disallowed. These facts are fully known to the people who are trying to exploit the language controversy in order to stir up trouble. There was no justification for agitation but it did not suit their purpose to admit this. Their sole object is exploiting this controversy is to create a split among the Muslims of this State, as indeed they have made no secret of their efforts to incite hatred against non-Bengali Mussalmans. Realising, however, that the statement that your Prime Minister made on the language controversy on return from Karachi, left no room for agitation, in so far as it conceded the right of the people of this Province to choose Bengali as their official language if they so wished, these persons changed their tactics. They started demanding that Bengali should be the State language

পৃষ্ঠা: ৪৯
of the Pakistan centre and since they could not overlook the obvious claims of Urdu as the official language of a Muslim State, they proceeded to demand that both Bengali and Urdu should be the State languages of Pakistan. Make no mistake about it. There can be only one State language, if the component parts of this State are to march forward in unison and that language, in my opinion, can only be Urdu. I have spoken at some length on this subject so as to warn you of the kind of tactics adopted by the enemies of Pakistan and certain opportunist politicians to try to disrupt this State or to discredit the Government. Those of you who are about to enter life, be on your guard against these people. Those of you who are about to enter life, be on your guard against these people. Those of you who have still to continue your studies for some time, do not allow yourselves to be exploited by any political party or self-seeking politicians. As I said the other day, your main occupation should be in fairness to yourselves, in fairness your parents and indeed, in fairness to the State, to devote your attention solely to your studies. It is only thus that you can equip yourselves for the battle of life that lies ahead of you. Only thus will be an asset and a source of strength and of pride to your State. Only thus you can assist it in solving the great social and economic problems that confront it and able it to reach its destined goal among the most progressive and strongest nations of the world.”
Dhaka University, The Convocation Speeches, Vol. 2, 1948-1970, (Dhaka : Dhaka University, 1995), pp. 22-24.

দলিলপত্র সংখ্যা : ৭
পূর্ববঙ্গের আইন পরিষদে ছাত্রদের উপর ‘পুলিশী জুলুম’ সম্পর্কে আলােচনা প্রস্তাব
Legislative Motion
Statement
On the 11th March, a general strike was called by the Tamuddin Majlis and East Bengal Muslim Student League as a protest against the decision of the Pakistan Constituent Assembly not to recognise Bengali as a State Language. In response to the call some of the Moslem students went to picket the gates of the Secretariat, High

পৃষ্ঠা: ৫০
Court and other Government offices. The picketters were absolutely peaceful and the Police appeared and began to want only assault the peaceful picketters which resulted in injuries to about 100 persons. This Police Zooloon is declared by Mr. Nazimuddin Ahmed as complained by the East Bengal Muslim Students League. This motion is sought to be moved to discuss the vital “Police Zooloom”.
Yours truly,
Sd/Protap Chandra Guha Roy
15.3.1948
Government of East Bengal, B-Proceedings, Legislative Departnent, Bangladesh National Archives, April-May, 1950, Bundle No. 13, Proceedings No. 698-705.

দলিলপত্র সংখ্যা : ৮
বাংলাকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গৃহীত সরকারি প্রস্তাব
Government of East Bengal
Legislative Assembly Department
Mo. 190 L. A.
From : S. A. F. Hussain Esq.
Secretary to the East Bengal Legislative Assembly
To
The Secretary to the Government of East Bengal Home (Political) Department Dacca, the 21st April, 1948.
Subject : Decision on Resolution
Sir,
I am directed to state that the Government resolution which stood in the name of the Hon’ble Mr. K. Nazimuddin, M. L. A., Prime Minister was moved by him at the meeting of the East Bengal Legislative Assembly held on the 6th April, 1948. It was discussed at the meeting of the East Bengal Legislative Assembly held on the 8th April, 1948 and was carried by the Assembly without division as slightly amended. The verbal amendment

পৃষ্ঠা: ৫১
moved by the original mover for replacing the word “scholars” by the word “students” was also accepted. Copies enclosed.
A copy of the printed debate will be forwarded in due course.
I have the honour to be
Sir
Your most obedient servant
Sd/S. A. E. Hussain
Secretary to the East Bengal Legislative Assembly
Government Resolution As Moved in the House
V. The Hon’ble Mr. K. Nazimuddin to move that this Assembly is of opinion that (a)k Bengali shall be adopted as official language for replacing English in the Province of East Bengal ; and (b) the medium of instruction in educational institutions in East Bengal shall, as far as possible, be Bengali, or the mother tongue of the majority of students in the institutions.
Amendment Carried
16. Mr. Ahmed Ali Mirdha to move that at the end of the text in clause (a) of the resolution the following be added at the end “and it will be implemented as soon as the practical difficulties are removed”.
The resolution as amended and finally agreed to by the Assembly:
The Hon’ble Mr. K. Nazimuddin :
This Assembly is of opinion that –
(a) Bengali shall be adopted as official language for replacing English in Province of East Bengal and it will be implemented as soon as the practical difficulties are removed ; and
(b) the medium of instruction in educational institutions in East Bengal shall, as far as possible, be Bengali, or the mother tongue of the majority of students in the institutions.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Honie Department, Political Branch, Bundle-48, July, 1949, Proceedings No. 11-12.

পৃষ্ঠা: ৫২
দলিলপত্র সংখ্যা : ৯
ময়মনসিংহ হতে প্রকাশিত চাষী পত্রিকায় রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত অভিমত
Enemies of Independence
Bengal has lost more than what she has gained by independence. There is no reason for compelling the Bengali speaking people to live in a different Province and learn foreign languages and civilization, even after partition. It is true that Urdu or Hindi cannot contribute much to the natural development of Bengali. None has defeated the Bengalis : whereas the Bengalis have freed India. Therefore, the Bengalis shall never tolerate that others should dominate them.
We can (not) understand what harm do the Bengalis do, section of them thinks of sovereign Bengal and either part of uniting it under either dominion.
Chashi, edited by Majibur Rahman and published from Mymensingh, 16 July, 1948. Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Departnient, Home Branch, Bundle 47, April, 1949, Proceedings No. 288-91.

দলিলপত্র সংখ্যা : ১০
ত্রিপুরা (কুমিল্লা) জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ কর্তৃক লিয়াকত আলী খানের নিকট প্রদত্ত স্মারকলিপি
Tippera District Muslim Student’s League
Respected Sir,
We beg most respectfully to place before you for your kind and sympathetic consideration certain facts which bear a relation to welfare of the student community as well as to the interests of our state. In the first place, without ranking up the much vexed UrduBengali controversy we beg to suggest that education in Pakistan in all its stage-primary, secondary and university should be imparted . through the medium of our native tongue – for we believe that the best interest of education can be served in this way alone.
Tippera District Muslim Student’s League, Comilla, 27 November, 1948. Government of East Bengal, B-Proceedings

পৃষ্ঠা: ৫৩
Bangladesh National Archives, Home Department, Political Branch, Bundle – 57, April, 1951, Proceedings No. 279-343.

দলিলপত্র সংখ্যা :১১
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের কার্যাবলি সম্পর্কে পুলিশের বিবরণী
Police Report on the Activities of Leftist Student Front, 1949.
On the Student Front, the East Pakistan Student’s Federation is an active organisation amongst the younger section. It was successful in drawing to its fold quite a large number of Muslim students. The Student’s Federation took up the cause of the language controversy in March, 1949, and tried to work in cooperation with the Muslim Student’s groups and was successful to a certain extent in acting in collaboration temporarily with the E.P.M.S.L. Just like its parent body, it also seized all popular causes to exploit the situation. The Students’ Federation took up the cause of the University Menials’ strike and was partially successful in creating some amount of disturbances. Like most other Hindu political organisations, the Communist Party of Pakistan also has been maintaining its link with the parent body of India and has been drawing its inspiration from the All India leaders.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Home Departnient, Police Branch, August, 1950, Bundle NO. 153, Proceedings No. 646.

দলিলপত্র সংখ্যা : ১২
গণশিক্ষা পরিষদের স্মারকলিপি
The Vice Chancellor
Dacca University, Dacca,
Date : 20.10.1950.
Dear Sir,
With due respect we beg to state that you are certainly aware of the All East Pakistan Educational Conference held on the 15th & 16th September, 1950, on which the two esteemed Dailies ‘Insaf’ and Pakistan Observer’ wrote editorials on 17.9.50 & 16.9.50

পৃষ্ঠা: ৫৪
respectively. In the conference a ‘Charter of Demands’ on Education has been formulated to save it from collapse. For your kind consideration we enclose herewith a copy of the ‘Charter of Demands’.
May we expect that you would kindly intimate us with steps that you are going to take up for its implementation within thirty days with effect from the date you receive it.
Yours faithfully,
Sd/Oli Ahad
for Secretariat, Gana Siksha Parishad
94, Nawabpur, Dacca
Copy to
1. The Hon’ble Minister of Education, Pakistan, Karachi.
2. The Hon’ble Prime Minister of East Bengal, Dacca.
3. The Hon’ble Minister of Education, East Bengal, Dacca.
4. The Vice-Chancellor, Dacca University, Dacca.
Extract from the Charter of Demands
4(c) The short-sighted scheme of teaching four languages in the school, the unscientific and thoughtless curriculum and the syllabus should be reformed. Urdu must never be made a compulsory language for the students of schools.
10.(a) Bengali should be recognised as one of the state languages of Pakistan.
(b) the promises given by the then Prime Minister of East Bengal to the people under pressure of the state language movement should be executed and there should also be an explanation why they have not been yet given effect into.
(c) Bengali should be recognised and enacted into law as the medium of instruction up to the highest standard of education.
(d) The seventeen centres where the Arabic script for Bengali has been experimented should be closed down and such a Government effort should never be planned in future.
(e) The distorted Bengali mixed with Urdu, served by Radio Pakistan should be immediately stopped. Bengali programme should cover 75% of the total programme of Dacca station of Pakistan Radio.

পৃষ্ঠা: ৫৫
(f) the renowned Bengali writers who have been dismissed from the Dacca Station of Pakistan Radio should be immediately taken back with proper explanation. .
10.(a) The victimisation orders served on the students for taking part in the democratic movements, from time to time, should be withdrawn unconditionally and immediately.
(b) There should be recognition of freedom of meeting and other democratic rights within educational institutions. Under no circumstances shall we support the police interference in the affairs of any educational institutions.
11. All student prisoners detained in jails should either be immediately released or produced in open trial.
15. The conference condemns the secret circular issued by the Chief Secretary, East Bengal Government, suggesting repressive measures against the teachers and the students of educational institutions. The conference further demands its immediate withdrawal.
16. According to the most considered opinion of this conference, the imperialist sectarian policy pursued by the Pakistan Government with regard to foreign education, is detrimental to the interest of higher education of the country. After reviewing this policy, the conference is convinced that the government has been doing gross injustice to East Pakistanis in particular. This conference, therefore, resolves that the majority of the scholarships for foreign education should be offered to East Pakistanis.
17. This conference after giving due consideration to the national characteristics, culture & literature, hereby resolves that this part of Pakistan be named ‘Bengal’ instead of ‘East Bengal’ or ‘East Pakistan’.
Sd/A. Samad
President
16.9.1950.
Extract from Proceedings of the meeting of the Board of Residence, Health and Discipline held at 3 P. M. on 23.11.50 in the Office of the Vice-Chancellor, Dacca University. Present:
1. Vice-Chancellor, Dacca University
2. Provost, S. Muslim Hall
3. Provost, F. H. Hall
4. Provost, Dacca & J. N. Hall
Controller of Examinations, on special request.

পৃষ্ঠা: ৫৫
1. Proceedings of the last meeting held on 19.4.50 were read and confirmed.
3. Considered an ‘ultimatum-like’ letter to the Vice-Chancellor from Oli Ahad, and also reviewed his past activities, namely,
I. His participation in the menials’ strike and expulsion from the University because of this,
II. His undertaking to the Provost of good conduct in future, and also his unqualified apology for taking part in the menials’ strike.
III. His re-admission to the University on the basis of II above,
IV. His subsequent conduct, in complete disregard of his undertaking, and in violation of the rules and regulations of the University, in :
a. Associating himself with almost all unauthorised meetings held in the University compound,
b. Taking a leading part in the no-fee campaign, and picketing at the Accounts counter,
C. Behaving indecently to an Assistant Proctor when he prevented him from participating in an unauthorised meetings.
d. Holding sessions of the so-called Educational Conference in the Assembly Hall of the F. H. Muslim Hall without the permission of the authorities.
Recommended that, in view of all these activities, against his undertaking and the rules and regulations of the University, Oli Ahad’s application for admission to the I Year M. Com. class be not accepted. The Board rose at 4.30 P. M.
Secretary
24.11.50

দলিলপত্র সংখ্যা :১৩
দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও ভাষা-আন্দোলন সম্পর্কিত তথ্য
His Highness the Aga Khan has been eulogised for harping on the language controversy. Pakistan Observer (13 February, 1951) states : “We are glad that the Aga Khan has done some plain speaking, at the risk of being misunderstood, regarding the language contro

পৃষ্ঠা: ৫৭
versy. Though we do not think that making Arabic the State Language of Pakistan is a feasible proposition still he has done a service by boldly attacking some false notions about Urdu. The powers that be in Karachi will do well to ponder over his words. The only wise course under the circumstances is to adopt both Bengali and Urdu as the State Language of Pakistan. Morning News (14.2.51) writes : “All the three reasons that the Aga Khan has advanced for Arabic and against Urdu appear to be on the face of them fallacious. In fact, these arguments, each one of them, can well be used, with equal force against Arabic being the state language of Pakistan! We mean no disrespect to the Aga Khan when we respectfully differ from him. Arabic has not been able to unite the Arabs Themselves. How can it unite pakistan with the Arab world? Unity in the world of Islam will work out of other solid factors than language.” Azad (13.2.1951) says, “His Highness the Aga Khan has made a significant proposal. He has suggested that Arabic be made the State Language of Pakistan. His proposal is not new. It has got many supporters both in Eastern and Western Pakistan. At a meeting of the Eastern Pakistan Muslim League Council a resolution in favour of Arabic has already been passed. It therefore appears that the movement in support of Arabic is gaining ground. The leaders of the country and the thoughtful section of the people should therefore go deeply into this matter.”
Hindusthan Standard (14.2.1951) refers to His Highness the Aga Khan’s suggestion of Arabic as State Language and comments : “Bengali Muslims who have been resisting even the adoption of · Urdu, are likely not even to consider the suggestion seriously in spite of its emergence from so exalted a religious leader. It is strange indeed that such impractical suggestions are sometimes made by people who are expected to know better. Possibly they so with an eye of the gallary alone.” jugantar (13.2.1951) remarks : “More than half of the population of Pakistan speaks Bengali. Learning of Arabic will be difficult for them, and learning of both Arabic and Urdu will be all the more difficult for the minorities. Let us see what is in store for them.”
The memorial presented to the Hon’ble Minister of East Bengal by a group of prominent people for making Bengali as official language in East Bengal has received ample support. Azad

পৃষ্ঠা: ৫৮
(25.2.1951) states, “As Chief Minister of East Bengal four years back, His Excellency Khwaja Nazimuddin, himself held out the hope in the floor of the Assembly that Bengali would be made the official language in East Bengal. His successor has not yet made any attempt to materialise that promise into action. Now and then we have reminded Government about their promise but to no effect. As His …. Khwaja Saheb’s successor Janab Nurul Amin did not say anything about it many people were led to believe that it was the intention of Government that this demand might be kept in abeyance. In view of the memorial that has now been presented to the Hon’ble Chief Minister of East Bengal, is it not up to him to take up this matter in right earnest?” Insaf (25.2.1951) says “The hopes extended by the Hon’ble Mr. Nurul Amin seem to be as eluding as those of his predecessor the Hon’ble Khwaja Nazimuddin. Without pinning our faith in such assurances it will be well for us to take up this work ourselves,” Azan (27.2.1951) comments : “To do justice to the Bengali language it should be made not only the official language in East Bengal but it should also be made the official language of the whole of Pakistan. It is the fundamental principle of Democracy that the language which is spoken of by the majority of the people of a state be made its official language.”
The recent deputation to Hon’ble Prime Minister of East Bengal led by some prominent citizens to advocate the cause of Bengali as the State Language of the Province has whipped up once again the language controversy. Hindusthan Standard (26.2.1951) remarks : “The very idea of making Bengali the official language of East Bengal is likely to encounter some opposition from the non-Bengali officials in the Secretariat but such opposition should not be allowed to stand in the way of the realisation of an idea which every patriotic person cherishes at heart.” Ananda Bazar Patrika (26.2.1951) comments : “Five crores of Pakistanis speak the Bengali language. This language can not be made an official one automatically. For doing it memorials and agitations have to taken resort to. It clearly show that the prospect of recognition of Bengali in East Bengal is not a very rosy one.”
The supporters of Urdu as being the only State Language in Pakistan comes in for adverse criticism. Pakistan Observer

পৃষ্ঠা: ৫৯
(18.4.1951) writes : Maulana Akram Khan is reported to have said at the Urdu Conference that those who oppose Urdu in East Bengal are the enemies of Islam. Presumably he includes among these ‘enemies’ those who like Doctor Mohd. Sahidullah have been advocating Arabic as our State Language in preference to Urdu. Those who want to see Urdu and Urdu alone installed as our National Language are bad psychologists. They have started their work in the wrong way. Instead of trying to force the language on us they should have left natural forces to take their own course. After all, we repeat, the National Language is not such as can be imposed on a majority by a minority.” Insaf (20.4.1951) says : “Against the wishes of the East Pakistanis who are ardently in favour of Bengali those who carry on propaganda in favour of Urdu must suffer the consequence for it. In selecting the National Language those who will not display wisdom must at one for their sins.” Panchajanya (21.4.1951) comments : We hope the awakened public opinion in East Bengal will not like to see the Bengali language to be either dwarfed or extirpated. Urdu and Arabic may be introduced in the country but not at the cost of Bengali which is spoken by 4 crores of East Pakistanis.” .
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Public Relation Department (P&D), Bundle-2, January, 1952, Proceedings No. 788-854.
Nurul Amin says : Police tear-gassed Students in Self-defence ; East Pakistan Assembly Adjourned
The Police party guarding the Dacca University resorted to a Lathi-charge and used tear-gas against a crowd to students. surrounding the University yesterday morning, according to the Chief Minister of East Pakistan, Mr. Nurul Amin. But Police opened fire on the students, said D. N. Dutta, Deputy Leader of the Opposition in the East Pakistan Assembly in the afternoon. Presenting a motion for adjournment for the House, Mr. Dutta demanded an inquiry into the situation arising out of the Police firing on the students n Dacca yesterday.
Mr. Monoranjan Dhar, another Congress Member, told the House that students injured by the police firing were lying in Dacca Medical College Hospital.

পৃষ্ঠা: ৬০
Mr. Abdur Rasheed, a member of the Muslim League Party, asked the Chief Minister to visit the hospital himself and make a statement on the floor of the House. The Chief Minister, Mr. Nurul Amin, said that according to his information the police party guarding the university was surrounded by the students and in selfdefence it had to resort to a lathi-charge and use tear-gas. Police and passcrs-by were brick-bated and several officers were injured. Private cars were also attacked.
The Chief Minister told the Assembly that in spite of the promulgation of Section 144 in Dacca, students, and some other young men tried to break the police cordon and to come out of the University compound. He expressed his fullest sympathy with those who had been injured and said a thorough enquiry would be made. If any official had committed excesses he would be suitably dealt with, he added.
Adjournment Demand : the demand for adjournment, moved by Mr. D. N. Dutta, was supported by the Leader of the Opposition, two independent members and a Muslim League member. The Chief Minister, Mr. Nurul Amin, opposed the demand for adjournment of the House. Later, the members of the Congress Party, some independent members, one Muslim League member and two Scheduled Caste members left the House.
After the question time, the Speaker adjourned the House till this afternoon.
Dawni, 22 February, 1952, p. 8.
Police Firing in Dacca Again :43 injured, 2 killed Dacca, February 22 : Police again open fire at several places in the morning to bring the deteriorating situation under control. According to a Press note issued in the evening ‘in all 45 injured persons were admitted to the hospital. Two persons died.’
Morning News Office Burnt: A report said that a mob set fire to the officer and the premises of the Morning News of Dacca. The management was reported to be making arrangements to produce the paper tomorrow morning from another press.
The mob also smashed a distribution van of the newspaper. Curfew has been clamped on the city from 10 p. m. till 5 a. m.

পৃষ্ঠাঃ ৬১
(Saturday). Military had to be called out today the police in fringing the situation under control. Another report stated that the students lowered to half-mast the National Flag on all educational institutions. After two days’ firing the Police rounded up a number of persons who were described as ‘non-students’ participating in todays’ demonstrations held at several places, it is reliably learned. The Press note added : ‘On the Nawabpur Road another unruly crowed overpowered the police officers in-charge of the forces and tried to surround it. Since it would not disperse firing was resorted to in order to disperse it. A lathi charge was also made in the university area.
Officials of the Government in evening described the situation as ‘under control’. An earlier message says : ‘Three persons died and several received injuries when the police opened fire in Dacca on Monday afternoon on student demonstrators who, according to a l’ress note, were committing a breach of Section of 144 Cr. P. C. The students yesterday observed a general strike in response to a l’rovince-wide call made by the State Language Committee of Action. Section 144 Cr. P. C. was promulgated here on Wednesday. Several arrests are reported to have been made following the demonstration by the students today.
The Government Press note issued late last night said that the crowd ‘became violent’ and a lathi-charge was ordered which had only a temporary effect. The note added that the crowd threw brickbats at the Police and vehicular traffic. Mr. Hasan Ali, Minister for Communications, was among those who received injuries. In spite of warnings the crowd ‘tried to advance towards the Police party marching attitude’ the note said. The Police thereupon fired a few rounds as the crowd ‘rushed forward to attack the Police force’.
Dawn, 23 February, 1952, p. 1.
Dacca Tragedy
All Pakistan will grieve and our enemies will derive comfort and cheer from the tragic happenings at Dacca. First and foremost we offer homage to those who have paid the forfeit of their lives in the conflict between their convictions on the one hand, and the principle that law and order shall be maintained, on the other

পৃষ্ঠা: ৬২
hand. There is no doubt that they have sacrificed their young lives for a cause they passionately believed in, whatever course of action that belief might have led them to.
Their memory deserves respect and will endure. We also grieve that so many others should have received physical hurt, and extend sympathy to them.
This tragedy becomes doubly so because while there is no doubt that the vast majority of the students and others who staged the demonstrations were actuated by sincere conviction and acted in their own light as true Pakistanis, there must have elements mingled with them and no doubt adding fuel to their honest favour, who were agents of our enemies. Such elements infiltrated into many walks of Pakistani life and chosen East Pakistan as the first target because they believe that if they can disrupt that part of Pakistan first, then half their nefarious battle will be won. In their understandable zeal for a language they cherish and in their larger love for Pakistan as a whole, many an honest East Pakistan enthusiast repeatedly misses this fact and is unable to guard against this danger. This is the deeper tragedy that underlies the tragedy of the present Dacca incidents.
But every dark cloud has a silver lining and out of these grievous happenings has emerged the final knowledge of how deeply our people and our kith and kin in East Pakistan feel on the language issue. This knowledge had been growing for quite some time and now the Chief Minister of East Pakistan himself has got the Provincial Legislature to pass a resolution that Bengali should also share with Urdu the honour of being adopted as one of our common motherlands’ state languages. The issue is thus settled and the constituent Assembly, we are confident, will accept this position and act accordingly when the appropriate time comes. We can assure the people of East Pakistan that the people of West Pakistan will not grudge them the equality with Urdu which Bengali has at last own…
Let by common consent the curtain be rung down on the sad and tragic episode except that the promised enquiry should be held to determine whether firing was necessary. No Government can permit lawlessness accompanied by violence to subvert the tranquillity of the State, specially when enemy agents are ever on

পৃষ্ঠা: ৬৩
the alert to turn such disorders to their even own nefarious purposes. In Bharat, too, ugly incidents necessitating recourse to use of force against citizens and students have happened many times. But the question of questions is – would damage to life and property have been caused had not the Police opened fire? This question must be answered by competent reliable authorities.
Editorial, Dawn, 23 February, 1952.
Dacca Incidents : Government Clarifies Situation
Dacca, February 22 : The East Pakistan Government issued a Press note last night stating that one person died on the spot and two succumbed to injuries later out of a total of 18 wounded by a lathi-charge and bullets from those who were admitted in the hospital. Spokesman of the students, however, gave higher figures for the wounded. The following Press note was issued by the East Pakistan Government last night.
“Apprehending a serious breach of the peace, as a result of an attempt planned to bring the normal life of Dacca City to a standstill on February 21, 1952, the District Magistrate promulgated on February 22 an order under Section 144 Cr. P. C. prohibiting the assembly of more than five persons, the holding of meetings and the taking out of processions without his permission. The order was announced widely throughout Dacca.
“On the morning of February 21, the students held a meeting in the compound of the Dacca University. The Vice-Chancellor, the Provost, the Dean and some of the professors of the University tried to persuade them not to defy the law but the students did not listen to them and decided to defy the order under Section 144 Cr. P. C. promulgated by the District Magistrate and came out in batches of more than five to violate the order.
Brickbats : “The abused the policemen on duty in the most filthy language and continued to do so throughout the day. At several places, people going about in the town were molested, vehicles were attacked and put out of action and shopkeepers who wanted to keep their shops open were intimidated into closing them. At about mid day a large body of students came out on the road, formed into a procession and threw brickbats which injured some constables and others and also damaged the police car. They

পৃষ্ঠা: ৬৪
rushed towards the police and were asked by the District Magistrate not to defy the law. They refused to listen to him and continued to throw brickbats at the police party. Finding the situation dangerous the District Magistrate asked the crowd to disperse and warned the people that if they did not do so force will have to be used to disperse them.
“This warning went unheeded and brickbats were thrown at the police party. On the order of the District Magistrate tear gas was used to disperse the crowd. After a short while, the crowed reassembled, came out on the road and rushed towards the Medical College and Assembly House.
“Brickbats continued to be thrown, as a result of which most of the officers present were injured, including the D. I. G. of Police, the District Magistrate, the Superintendent of Police Special Superintendent of police, the Additional Superintendent of Police, the A. D. S. P. two sergeants of Police, one Inspector and number of constables.
Lathi-Charge : “The crowd obstructed the traffic on the road and pelted brickbats at the police party. When the crowd became very violent and refused to listen to the dispersal warning given by the District Magistrate. This had only a temporary effect and,
after a little while, that crowed re-assembled and rushed towards · the police.
“A shower of brickbats was thrown at the police party and the crowd came from several sides, determined to surround and overpower the police force. All vehicular traffic on the road was stopped. Cars of Mr. Hasan Ali and the Director of Land Records who were proceeding to the Assembly House were attacked and they were injured as well. At this stage it was clear that the situation was getting out of control and finding that the police party was likely to be over-powered by the crowd, the District Magistrate gave a warning that if the people forming this unlawful assembly did not disperse he will be compelled to open fire to disperse them
Warning: “This warning was received with another shower of brickbats and filthy abuses. Since the warning went unheeded and the crowd tried to advance towards the police party in a menacing attitude, under the orders of the District Magistrate a few rounds were fired. The firing was then stopped. But instead of dispersing

পৃষ্ঠাঃ ৬৫
the crowd again rushed forward to attack the police force whereupon some more rounds were ordered which brought the ituation under control.
“The government regret to state”, the Press note said “that one person died on the spot and out of the nine other persons with bullet injuries who were admitted into the Medical College Hospital, to others succumbed later to their injuries at about 8 p. m. Persons in injuries as a result of the lathi-charge and the use of tear gas received medical attention in the hospital and nine such cases have been admitted into the hospital. The condition of none of the persons now in hospital is serious and all cases are progressing satisfactorily. Information in possession of the Government so far shows that a number of persons unconnected with the University or any of the educational institutions have been the chief instigators of this lawlessness, resulting in the most unfortunate incident of today. This matter is under the close investigation.
Dawn,.23 February, 1952, p. 6.
The Real Danger
Of the Dacca tragedy we have already once written in a vein in sincere sorrow. Sympathy for the victims of the police firing has been genuine and universal. The fact that the five precious lives lost in the incidence of last week were those of promising students flower of youth will make that sense of tragėdy more poignant. There will be homage for their martyrdom. praise for their sacrifice and respect for their courage of conviction. But we should not shut our eyes to the real implications of the situation. Their patriotism will not be questioned, but their rashness will be deplored. Even under the stress of such a painful tragedy and poignant sorrow we should not loss our sense of reality. The excitable youth had faced the bullet in a frenzied attempt to demonstrate their love for their language had all the same regrettably violated law and order, obviously under the wicked instigation of people who have no love for Pakistan and what it stands for. This enemies of our country exploited their youthful emotion to create a situation subversive of law and order and to throw East Pakistan into a turmoil in which our enemies outside would find an opportunity they have been waiting for. That these subversive elements had chosen East Pakistan as the base of their

পৃষ্ঠা: ৬৬
nefarious activities must have been clear even to these young men. They should have realised how dangerous it was to play with the emotionally inflammable question of language in such an inherently explosive situation. However, much one might regret the firing during the incidents, it must be clear even to the blindest that it would have been suicidal folly for the Government to have allowed these subversive elements to go unchecked with their defiance of law and order.
The tragedy has occurred. All that can now be done is to make a judicial inquiry into the whole incident. That has already been promised. So far as the East Pakistan Government are concerned, the language question itself has been settled in a manner satisfactory to the protagonists of Bengali. It is time now for all patriots, young and old, to join hands and to wipe out the bitterness that the incidents of the past few days had engendered. Patriotism commands them to stand together and thus isolate the enemy agents who have been extraordinarily active during the past few days. It is no longer a secret that only one community had staged a so-called hartal after the first day’s incidents. It was they who were foremost in the defiance of the order under Section 144. It was they who had instigated the local Muslim youth against the Muslim refugees from Bharat. Fortunately their instigation did not fully succeed. A number of non Muslim foreigners have been arrested while distributing inflammatory pamphlets at different places in the Province. All this shows that there was a deep seated and well laid out plan behind all these incidents, meant to serve the interests of Pakistan’s enemies. It is not the language question, but this concerted operation by an enemy network that is the real danger. The language question, we have not the least doubt, will be satisfactorily solved. The immediate attention of the Provincial and Central Governments should turn to the existence of this secret network of enemy agents who are actively assisted by their local supporters. The language issue is only one of the weapons in their armory. Their real objective is a much bigger and more ambitious one. Therein lies the real danger to East Pakistan. Before that danger, the tragedy of police firing pales into comparative insignificance. :
Dawn, 26 February, 1952, p. 5.

পৃষ্ঠা: ৬৭
দলিলপত্র সংখ্যা :১৪
ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি-অবাঙালি সংঘর্ষ
To
Prime Minister,
Government of East Bengal
Dated, Jessore, the 11 June, 1951
Dear Sir,
It is not unknown to your goodself that a large number of refugees have come and settled down in this district. But unfortunately they have been eyesores to the two followers of Mr. H. S. Suhrawardy, Maulvi Mashiur Rahman and Maulvi Shamsur Rahman who have been hostile to, these refugees from the very beginning and are trying to create division among the refugees into Bengali and non-Bengali groups. These two gentlemen also took active part in the anti-Urdu language movement and the former was a security prisoner for some time. Due to their propaganda, things have come to such a pass that a few days ago there was a clash among the Bengali and non-Bengali refugees who are still in Jessore Sadar Hospital.
Yours Faithfully,
Mr. M. A. Khaleque,
Secretary,
District Muslim League, Jessore, East Bengal
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Home Branch, Bundle No. 80, July, 1953, Proceedings No. 508-514.

তৃতীয় অধ্যায়
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতিক্রিয়া

দলিলপত্র সংখ্যা : ১৫
ঢাকা হাইকোর্ট বার অ্যাসােসিয়েশনের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত
Bar Association, High Court, Dacca.
To
The Private Secretary to the
H. E. the Government of East Pakistan, Dacca
22.2.1952
Dear Sir,
I have been directed to forward herewith a copy of resolution passed at the meeting of the Dacca High Court Bar Association for your kindly placing the same before his Excellency.
Sd. Illegible
Joint Secretary
for High Court Bar Association
Resolutions passed at the emergent meeting of the members of the Dacca High Court Bar Association held on 22.2.52. with Mr. A. K. Fazlul Haque in the chair.
This emergent meeting of the members of the High Court Bar Association view with great concern the situation arising out of the Police firing made yesterday (21.2.52) on the unarmed and peaceful students with the University compound causing several deaths, innumerable injuries and other casualties.
This Association strongly condemns the action of the Police in opening fire upon the student while within their Hostel compound within the University area and elsewhere causing deaths of several students and injuries to innumerable persons-student and members of the public.
This Association condemns the action of the authorities in promulgating order U/S 144 Cr. P. C. and those Police officers who led the Police force should at once be removed from their present

পৃষ্ঠা: ৬৮
position and that an impartial committee be set up with a Hish Court Judge as the Chairman and the other political non-official persons as member to enquire into the acts of firing, lathi charging and other unjustifiable acts done by the Police. That the persons found responsible for the action be brought to book.
This Association with hearts ful of grief condoles the deaths of these students who lost their lives by the Police bullets and extends its sympathy to the bereaved families.
This Association express its deep sympathy to those who have sustained injuries at the hand of the Police.
This Association highly appreciate the attitude of the students in making their demands for the mother language of 4.5 cores of people forming majority of Pakistan, the status of the state language and expresses its unmistakable view that Bengali must be one of the State languages of Pakistan and demands for the same.
This Association calls upon the members of the Provincial Legislative Assembly and those of the Constituent Assembly representing the Province to take immediate steps for the implementation of the just demand of the Bengali language to be recognised as one of the state languages of Pakistan.
This Association condemns the uncalled for entry into High Court compound of the Police and some Army men and attempting to open fire within the High Court compound, which they did to-day, and in obstructing members of the Bar and legitimate public coming to the High Court.
This Association demands that the military occupying a portion of the High Court Buildings must be immediately removed therefrom and the premises place at the disposal of the High Court.
The next Friday, the 29th February, 1952, be observed as a day for fasting and offering prayer for the departed souls by the members of this Association.
Sd. Illegible
Joint Secretaries
for High Court Bar Association
Government of East Bengal, B-Proceedings, Political Depart-ment, Political Branch, Bangladesh National Archives, October, 1952, Bundle No. 65, Proceedings No. 821.

পৃষ্ঠা: ৭০
দলিলপত্র সংখ্যা :১৬
খুলনার দৌলতপুর কলেজের ছাত্রদের প্রেরিত তারবার্তা
Pakistan Posts and Telegraphs Department
Daulatpur 23 Feb. 1952, 15 Hour Six adds. 39 words.
To
Vice-Chancellor University,
Resented British like murder students condemned Govt. attitude drastic measures demanded condole doomed.
Students
Daulatpur College
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Room), Bundle No. 54, 1952, File No. 188.

দলিলপত্র সংখ্যা :১৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত
Proceedings of the Emergent Meeting of the Dacca University Teacher’s Association held in the Teacher’s Common Room, University Buildings, on the 24th February, 1952 at 9 P.M.
Prof. I. H. Zuberi (in the chair)
Members of the Association
The Following resolutions were passed unanimously:
1. That this meeting requests the Government of Pakistani to declare immediately that Bengali is accepted as one of the State languages of Pakistan.
2. That this meeting requests the University of Dacca to take steps to introduce Bengali as a medium of instruction as far as practicable.
3. That this meeting of the Association condemns the outrageous murders and assaults of the students on the 21st of February and subsequent days by the Police and the military and condemns the violation of the sanctity of University premises and requests the Executive Council to close the University as a protest for one day.

পৃষ্ঠাঃ ৭১
4. That this meeting records the protest against the entry of the l’olice into the University premises and the tear-gassing of and oissault on students and members of the staff of the University.
5. That this meeting demands that a judicial Enquiry (‘ommittee presided over by a High Court Judge be constituted immediately to enquire into the happenings of the 21st February and subsequent days.
6. That this meeting demands immediate suspension of officers who were responsible for the happenings of the 21st and subsequent days.
7. That this meeting demands immediate withdrawal of Sec. 144 from the city.
8. That this meeting demands immediate withdrawal of Police pickets and the military from the city and to banning of the entry of the Police and the military into the premises of educational institutions without the previous written permission of the Heads of the institutions.
9. That this meeting demands the removal of all restrictions on press immediately.
10. That this meeting demands that adequate compensation be given to the families of the killed and to the injured.
11. That the meeting demands that the arrested persons be immediately and unconditionally released and pending their release facilities be given to the authorities of educational institutions, friends and relations of arrested persons to visit them in Jails.
12. That copies of these resolutions be sent to the Government, the Vice-Chancellor and the press.
Sd. Illegible
Muzaffar Ahmed Chowdhury
Secretary
Dacca University Teacher’s Association
24.2.52.
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Room), Bundle No. 54, 1952, File No. 190.

পৃষ্ঠা: ৭২
দলিলপত্র সংখ্যা : ১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত
University of Dacca
Executive Council
Immediate meeting held on Saturday, the 24th February, 1952, at 10 a. m. in the Vice-Chancellor’s House. (Council Room).
Present:
1. The Vice-Chancellor,
2. the Dean of the Faculty of Arts.
3. The Dean of the Faculty of Science.
4. The Dean of the Faculty of Law.
5. The Dean of the Faculty of Engineering.
6. The Provost of S. M. Hall.
7. The Provost of F. H. M. Hall.
8. The Provost of Dacca Hall.
9. The Treasurer.
10. President, East Bengal Secondary Education Board.
11. The Principal, Eden Girl’s College, Dacca.
12. The Principal, Rangpur College.
13. The Principal, B. M. College, Barisal.
14. Syed A. B. M. Hossain.
15. A. H. Talukdar.
Resolved : That this Council has heard with great sorrow of the sudden death of Mr. Fazlur Rahman, Director of Public Instruction, East Bengal, and conveys its deep sympathy to the members of the bereaved family. Considered : The situation arising out of the happenings on the 21st February, 1952, and subsequent days. Resolved Unanimously : 1. That this Council places on record its deep sense of grief and sorrow at the tragic death of, and injuries to, a number of students which took place on the 21st of February, 1952, and afterwards.
2. That this Council takes serious exception to the entry of the Police within the premises of the University and other educational institutions.
3. That the University be closed on Monday, the 25th February, 1952, as a mark of respect to the students who lost their lives and in sympathy with their bereaved families and with the injured

পৃষ্ঠা: ৭৩
students, and in protest against the Police excesses resulting in death and injuries.
Further resolved : That the Executive Council urges upon the Constituent Assembly of Pakistan to adopt Bengali as one of the States languages of Pakistan and thať a copy of this resolution be sent to all members of the Constituent Assembly.
Sd. Illegible
Registrar
University of Dacca
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Rooni), Bundle No. 54, 1952, File No. 190.

দলিলপত্র সংখ্যা :১৯
যশােরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষকদের সভার সিদ্ধান্ত
Michael Madhusudan College, Jessore.
To
The Vice-Chancellor,
Dacca University,
Dacca.
Sir,
At a staff meeting to-day we reiterated the resolutions adapted by the Executive Council, Dacca University on the 24th February demanding Bengali as one of the state languages, criticising unwarranted Police atrocities on students and expressing profound sorrow and condolences to the bereaved families.
Yours faithfully,
Sd. Illegible
Principal 25.2.1952.
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Room), Bundle No. 54, 1952, File No. 190.

পৃষ্ঠা: ৭৪
দলিলপত্র সংখ্যা : ২০
চট্টগ্রাম বার অ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
District Bar Association, Chittagong
To
The Chief Secretary to the Government of East Bengal,
Dacca.
Sir,
I beg to forward herewith the copy of the resolution of the meeting held on 25th February, 1952 for your kind information and necessary action.
Yours faithfully
Abdul Latif
Secretary,
District Bar Association
Chittagong
True Copy of Resolution
Dated, 25.2.52
The Chittagong District Bar Association strongly condemns the unwise and impolitic act of firing by the Police of the students who assembled to demonstrate their desire to have Bengali as one of the state languages and urges that an immediate enquiry be made into this outrageous act, by a responsible tribunal with a view to take a proper steps against those who are responsible for this act and to award adequate compensation to the families of those killed or injured.
The Committee further conveys their sincere condolence to the sufferers and sympathises with the cause for which they suffered.
Sd. Haris Chandra Sen
President
Bangladesh National Archives,
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Political Branch, October, 1952, Proceedings No. 548.

দলিলপত্র সংখ্যা : ২১
বগুড়া মােক্তার বার অ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
From the Secretary, Mukhtar Bar Association, Bogra
To
The Chief Secretary,
East Bengal Government, Dacca.
Dated, Bogra the 26th February, 1952
Sir,
I beg to forward herewith a copy of the resolutions, adopted in an emergent general meeting of the members of the Mukhtars’ Bar Association Bogra, for favour of your information and kindly taking necessary steps as prayed for in the resolutions.
Yours faithfully
Rashiduddin Ahmed
Secretary
Copy of the resolutions passed in the emergent General Meeting of the members of the Mukhtar’s Bar Association, Bogra, held on 25th February, 1952 at 1 P. M.
1. That this meeting of the members of the Mukhtars Bar Association, Bogra, strongly condemns the action of the Police at Dacca on the 21st and 22nd February, 1952 for committing brutal murder of the students and the public and other uncalled for atrocities and urges upon the East Bengal Government to hold an early and through enquiry in to the matter and to bring the culprits to book.
2. That this meeting condemns the death of the students and others and conveyed its hear-felt sympathy to the relations of the deceased and also to the injured persons.
3. That this meeting emphatically demands that besides Urdu Bengali should be the State Language of Pakistan.
S/d A. Hossain
President
Mukhtars Bar Association, Bogra
25.2.52
Government of East Bengal, B-Proceedings Bangladesh National Archives, Political Department October, 1952, Bundle No. 65, Proceedings No. 307

পৃষ্ঠাঃ ৭৬
দলিলপত্র সংখ্যা : ২২
ঝিনাইদহ বার এ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
Jhenaida Bar Association
Jhenaida
Jessore, East Pakistan
President: Maulvi Toazuddin Ahmed, B.L.
Secretary : Sri Nani Gopal Bose
No. 16
To the Chief Secretary, Government of East Bengal, Dacca.
Sir,
I have the honour respectfully to forward herewith a copy of resolution passed in an emergent meeting of this Association on 26.2.52.
I have the honour to be,
Sir,
Your most obedient servant
Nani Gopal Bose
Secretary
At an emergent meeting of the members of the Civil, Criminal Bar Associations, Jhenaidah, held to-day, the 26th February, 1952, at the Pleaders Association Hall the following resolutions are unanimously adopted :
1. This meeting records its emphatic protest against the dastardly action of the Dacca Police is.opening fire on unarmed and peaceful procession of students on 21st and 22nd February, resulting in loss of several precious lives demands a Judicial enquiry in to the incidents by a Judge of the Dacca High Court.
2. This meeting expresses its sincere condolences for the family and the relations of the deceased students and demands that adequate compensation is paid by the Government to their relations without delay.
3. This meeting is strongly of opinion that imposition of order under section 144 Cr. P.C. in Dacca thoroughly unjustified and uncalled for, and it demands immediate withdrawal of the same.
4. Resolved further that Bengali be immediately declared as a State Language of Pakistan and that all previous declarations to

পৃষ্ঠাঃ ৭৭
the contrary be immediately withdrawn to pacify the growing Viscontent in East Bengal.
5. Resolved that those Bengali nationals that are being detained in prison without trial be immediately set free, or brought 10 trial before competent court without delay.
Sd. T. Ahmed
President
26.2.52.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Departnient, Political Branch, October, 1952, Bundle No. 65, Proceedings No. 305.

দলিলপত্র সংখ্যা : ২৩
রংপুর মােক্তার বার এ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
Copy of the Emergent Meeting of the ‘Rangpur Mukhtars Bar Association held on 26.2.52
1. Resolved unanimously that the Association urges upon the acceptance of Bengali as one of the State Language of Pakistan.
2. Resolved unanimously that the Association recent the dastardly murder of the students and the unwarranted firing at Dacca resulting in death and injuries of a large number of innocent people.
3. Resolved unanimously, that the meeting urges upon the Government to set up a non-official enquiry Commission at once to find out the persons responsible for the dastardly actions and to try them in open Court.
4. Resolved that for the ends of a fair inquiry the District Magistrate, S.P., and Executive heads of Dacca be immediately transferred to some other stations.
5. Resolved unanimously that the Government be called upon the give adequate compensation to the families of the person killed at Dacca in the recent Police firing.
6. Resolved unanimously that the meeting condemns the apathy of the M.L. As present at Dacca in the close neighbourhood of the place of firing and who did not judge an inch to protect so many precious lives. By their conduct these M.L.As have forfeited

পৃষ্ঠা: ৭৮
the confidence of the people and they are called upon to resign at once.
Sd. K.M. Elias
President
Mukhter Bar Association
Rangpur
26.2.52.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Political Branch, October, 1952, Bundle No. 65, Proceedings No. 669.

দলিলপত্র সংখ্যা: ২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার এ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
From
The Secretary, Bar Association
Brahmanbaria
To
The Chief Secretary, Government of East Bengal Dated, Brahmanbaria, 26.2.52.
The members of the Brahmanbaria Bar Association in a meeting place on record their deep sense of sorrow and grief at the tragic deaths and injuries to the students and the public at Dacca and condemns the Police firing.
Resolved further that the Government of East Bengal be urged to order an enquiry by the High Court Judges and to make arrangement for compensation to their families of the deceased.
It is also resolved that the Constituent Assembly be urged to adopt Bengali as one of the State Languages of Pakistan
Prafulla Chandra Datta
President
পৃষ্ঠা:

দলিলপত্র সংখ্যা : ২৫
ত্রিপুরা (কুমিল্লা) বার এ্যাসােসিয়েশন সভার সিদ্ধান্ত
Tippera District Bar Association, Comilla
Ref. No. 15/52
Dated, the 26.2.52.
To The Chief Secretary to the Government of East Pakistan.
Dacca.
Dear Sir,
Herewith please find a copy of the resolutions passed unanimously in an extraordinary general meeting of the Tipperah District Bar Association held in the Association Hall on 26.2.52.
Yours faithfully
B. Dasgupta
Secretary
District Bar Association
Resolutions :
1. Resolved that the members of the Tipperah District Bar . Association assembled in an Extraordinary General meeting held at.
2 P.M. on 26.2.52. strongly condemn the action and conduct of those, who are responsible for indiscriminate and inhuman firing on and causing deaths to students and the public at Dacca on 21st and 22nd February, 1952 over the language question and urge upon the inn Government to set up an Enquiry Commission of High Court Judges to and non-officials for holding an enquiry in to the matter for the purpose of bringing the offenders to book.
Resolved further that the members of the Bar Association express their deep sense of sorrow at the most unfortunate and horrible killings of the unarmed innocent students and the public. and convey their heart-felt condolences and sympathies to the members of the Bereaved families.

পৃষ্ঠা: ৮০
3. Resolved that the members of the Bar disapprove the action of the Government in banning the publication of the Pakistan Observer and urge upon the Government to lift the ban immediately.
4. Resolved that members of the Association condemn the action of the Government in arresting the students and the public at Dacca including some members of the Legislative Assembly.
5. Resolved that the daily paper Morning News be boycotted and the Hon’ble Minister be requested to take action against the editor for spreading disaffection amongst the two communities in Pakistan.
All the resolutions are carried unanimously.
Sd. Bhudhar Das
President
26.2.52.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Political Branch, October, 1952, Proceedings No. 306.

দলিলপত্র সংখ্যা : ২৬
বরিশাল জেলা বাের্ড সভার সিদ্ধান্ত
Barisal District Board Meeting
Memo. No. 1176-BIG
Before the business of the meeting was taken up there was an informal discussion among the members present about the recent Police firing in Dacca city and the drafting of a resolution, and then the following resolution as agreed to was formerly put from the chair and carried on.
Resolution :
This meeting of the Bakerganj District Board condemns the actions of the authorities responsible for the recent firing in Dacca city and express its deepest sorrow at the sad deaths of and injuries to some students and members of the public and conveys its heartfelt sympathy to the bereaved families, and demands the immediate setting up of a high power inquiry committee with a High court Judge as chairman for finding out and inflict punishment on the really guilty persons and also urges upon the Government for awarding suitable compensation to the families affected, and at the

পৃষ্ঠা: ৮১
same time earnestly appeals to the people to see that peace and tranquillity is maintained at all costs in the greater interests of Pakistan and its citizens.
Copy forwarded to his Excellency the governor of East Bengal, Dacca for information. District Board Office, Barisal.
A.W. Khan
The 5.3.1952
Chairman
Government of East Bengal, Bangladesh National Archives, B-Proceedings, Political Department, Political Branch, October, 1952, Bundle No. 56; Proceedings No. 307.

দলিলপত্র সংখ্যা : ২৭
শাসনতান্ত্রিক পরিষদের সদস্যদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যােগাযােগ
Office of the Registrar,
University of Dacca.
Ramna, Dacca, the 3rd March, 1952.
No.12711-C
To
Begum Shaista Suhrawardy Ikramullah,
Member of the Constituent Assembly of Pakistan,
56, Clifton, Karachi. Dear Sir/Madam,
I am directed to communicate to you for information and for favour of necessary action the following resolution of the Executive Council of the University adopted unanimously at its meeting held on Sunday, 24th February, 1952:
“That the Executive Council urges on the Constituent Assembly of Pakistan to adopt Bengali as one of the State languages of Pakistan and that a copy of this resolution be sent to all members of the Constituent Assembly”.
Yours faithfully,
Sd. Illegible
Registrar
University of Dacca
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Rooni), Bundle No. 54, 1952, File No. 190.

পৃষ্ঠা: ৮২
From : Akshay Kumar Das
Member of Constituent Assembly
Post Office – Sunamganj
District – Sylhet
To
The Registrar
Dacca University
Dacca
7.3.52
Dear Sir,
I am $1.8 in receipt of your letter No. 12711 Dt. 3/3/52 with the resolution of the Executive Council of the University adopted on the 24th February 1952..
I assure you my support for the resolution.
Yours faithfully, Akshay Kumar Das
Member Constituent Assembly of Pakistan
University of Dhaka, D-Register, (Dhaka University Record Room), Bundle No.54, 1952, File No. 190.

দলিলপত্র সংখ্যা : ২৮
২১-২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে সরকারি প্রচারপত্র
পােস্টার-১
একতা বিশ্বাস শৃঙ্খলা
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম কায়েদে আজমের এই এই অমূল্য নির্দেশ জাতির রক্ষা কবচ ও জাতীয় দৃঢ়তার শ্রেষ্ঠ সহায়।
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা গােলযােগ বাহিরের প্রকাশ্য শত্রুর চেয়ে বহুগুণে বেশী মারাত্মক।
পােস্টার-২
মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত প্রচারণা দ্বারা যারা দেশের জনমত বিক্ষুব্ধ করে তারা দেশের দুষমন।
হুঁশিয়ার! হুঁশিয়ার !! হুঁশিয়ার !!!

পৃষ্ঠা: ৮৩
পাকিস্তানের দুষমনদের চর ছদ্মবেশে এই এদেশের অনিষ্ট করতে ব্যস্ত।
তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হউন।

পােস্টার-৩
গুজব না গজব?
দুষ্কৃতিকারীরা আজগুবি কথা
রটিয়ে পাকিস্তানের ভিত্তিমূলে
কুঠারাঘাত করেছে
গুজবে বিশ্বাস করলে
বা
গুজব রটালে
নিজেরাই অনিষ্ট হবে সবচেয়ে বেশী।
Manuscripts for three different kinds of posters are placed below. The H.M., now in-charge of Publicity, desires that the posters should be produced and distributed all over the Province as quickly as possible. All the three posters should be of the size 30″ X 30″. I think 20,000 of each kind will be required for distribution throughout the Province. Mr. Sadequr Rahman, A.P.O: Showed the manuscript to the H.M. who has kindly approved the contents and has also added the caption ” ” in the third poster. P.D. branch may now take action quickly.
Sd/Illegible
29 February, 1952
Number of Posters allotted for distribution : – Dacca 20.000
Mymensingh 20,000
Bogra 4,000
Rangpur 10,000
Dinajpur 10,000
Pabna 6,000
Rajshahi 10,000
Faridpur 10,000
Kustia 5,000
Jessore 10,000
Khulna 10,000
Tippera 10.000

পৃষ্ঠা: ৮৪
Noakhali 6,000
Chittagong 10,000
Barisal 10,000
Sylhet 10,000 + 4000 (2)
The undersigned is directed to send forthwith, per special messenger … copies of a poster (s) prepared in connection with the recent disturbances and to request that immediate arrangements may kindly be made for their display in all conspicuous places in the district and sub-divisional towns as well as big bazars of his district with the help of publicity staff of his district.
Assistant Commissioner
1 March, 1952.
Printing and Distribution of Posters on Recent Disturbances in Dacca in February, 1952. Government of East Bengal, B-Proceedings, Public Relation Department (P & D), Bundle No. 3, January, 1953, Proceedings No. 605-610.

দলিলপত্র সংখ্যা : ৩০
খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজের অধ্যাপকদের সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরকারি প্রতিক্রিয়া
Proceedings of the Meeting of the Professor’s Board, Brajalal College, Daulatpur, Khulna.
This meeting of the Professor’s Board of Brajalal College, Daulatupr, Khulna, is of opinion that Bengali should be one of the State Language of Pakistan. This status is rightly demands owing to the fact that it is the Mother tongue of the majority of the population of Pakistan and is one of the richest languages of the world. .
Further this meeting strongly condemns the cowardly atrocities committed by the Police on students without any moral and legal ground. This meeting also holds that the Professor, students and members of the public who have been arrested in this connection should be immediately be released.
This meeting expresses the deepest anxieties for the injured and wishes their speedy recovery. It also expresses its heartiest sympathy for the relatives of the victims of the brutal Police firing and most fervently prays for the peace of the departed souls.

পৃষ্ঠা: ৮৯
Copy to:
1. The Chief Minister, East Bengal, Dacca.
2. Vice-Chancellor, Dacca University, Dacca.
3. Editor, The Azad Patrika, Dacca.
4. Editor, Satyajug, Calcutta.
(The Government received the memoranda on 20 March, 1952.)
Deputy Secretary wrote on 20 March, 1952 that : “I am directed to say that Government take a serious view of the resolution passed under para 2 thereof. The remark as made in the first sentence of the resolution is highly objectionable and unwarranted. It is requested that Government’s disapproval of such remark may please be conveyed to Professors’ Board.
1.5.1952
C.S. (Chief Secretary) may see the resolutions passed at the meeting of the Professors’ Board of Brajalal College, Daulatpur. The second resolution “Cowardly atrocities committed by the Police on students without any moral and legal ground” condemning the Police firing is unwarranted. As regards the action to be taken, I consider that the D.M. should be asked to convey the Government’s disapproval of such unwarranted remark, as suggested by the Education Department. In addition to that I consider that the question of withdrawing the Government grant should be examined and an enquiry into loyalties of leading instigators among the Professor be made by the District Magistrate, Khulna.
14.9.1952
In an Emergent meeting of the Professors’ Board, held on 14.9.1952 under the Presidency of the Principal Dr. M. E. Huq, M.A. Ph.D., E.P.C.S., the Confidential Memo. No. 1643/C, dated 9.9.1952 of the District Magistrate Khulna, with the enclosure, containing the proceedings of a previous meeting of the Professors’ Board, Brajalal College, Daulatpur, Khulna, was discussed and an enquiry into the said proceedings was made. neither the proceedings of that meeting were traceable in the Proceedings Book of the Professor’s Board, nor any of the members of the staff present in to-day’s (14.9.1952) meeting could say anything definite about the meeting in question or its proceedings. It seemed that if any meeting of that

পৃষ্ঠা: ৯০
nature was ever held, it was spurious and its proceedings too were not genuine.
In the circumstances, the Professors’ Board of this College resolves that the so-called resolution forwarded by the District Magistrate, Khulna, to the Principal, be disavowed and that he be informed that the Board is entirely one with the Government in its disapproval of the unrecorded resolution of the spurious meeting, which did not reflect the opinion of the present Board.
It is further resolved that a copy of this resolution over the signature of the President and Secretary of the Professors’ Board be sent to the District Magistrate, Khulna, for favour of his information.
No. 232, dated 15.9.1952
Copy forwarded to District Magistrate, Khulna, in reference to his the Confidential Memo. No. 1643/C, dated 9.9.1952 for favour of his information.
Sd. M. E. Huq
Principal, Brajalal College
15.9.1952
Memo NO. 1691, dated 17.9.1952
Copy forwarded to the Deputy Secretary to the Government of East Bengal, Education & Registration, Department, Education Branch for information with reference to his No. 2741/Edn. dated 5.9.1952.
A.Q. Ansari
District Magistrate, Khulna
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Honie Branch, Bundle No. 74, April, 1952, Bundle No. 92, Proceedings No. 1472.

Answer (A) Will the Hon’ble Minister-in- (A) Police used tear gases charge of the Home (Police) and opened fire but not on Department be pleased to answer people inside the that on the 21.2.52, Police threw tear compound. gases and opened fire on people assembled in the Medical College compound and Medical College Hostel, Dacca? (B) If the reply to the above is in the (B) (i). 27 rounds affirmative, will the Hon’ble (ii) 3 died, 31 injured Minister be also pleased to state :
persons were admitted into
Hospital. (i) the number of rounds of shorts that were fired;
and
(ii) the number of deaths and injured? Approved Sd/ N Amin 28.10.52
Office Note: Memo No. 480-e., dated 14.3.52 from D.M. Dacca.
The District Magistrate, Dacca, reports that it is not a fact that on 21.2.52 Police threw tear gases and opened fire on people assembled in Medical College compound and Medical College Hostel, Dacca. Submitted. D.S. (Deputy Secretary) may see.
Sd/Illegible
19.3.52 We may avail of the receipt of report of Mr. justice Ellis.
Sd/Illegible
20.3.52. Since no practical information has been given. I have had a talk with D.M. and S.P. They are preparing their materials and report to be placed before the Commission and it would not be desirable for Government to commit themselves at this stage. The reply should be as follows:

দলিলপত্র সংখ্যা: ৩৫
পত্র-পত্রিকায় ভাষা-আন্দোলনের বিরােধিতা
Lingua-Franca
Editorial
With the approach of General election in East Pakistan interested quarters with a view to capture the imagination of the masses with the ultimate object at vote catching have been, of late. They mean to. win over the people by pandering to their parochial sentiment. Propaganda is afoot that Bengali is going to be banished yielding place to Urdu which is designedly alleged to be a language foreign to this Province. This is a distortion of facts and cuts at the very root of the conception of Pakistan. They fail to realise that by indulging in the propaganda they are knowingly or unknowingly playing into the hands of our enemies who will lose no chance of fishing in the troubled waters should the exponents of Bengali succeed in making any mark. In every state of the world there is only one state language. Of course, there might be Provincial languages or local dialects which thrive within their own spheres unhampered with. The fact that the state language is a language other than the Provincial one does not conflict with the existence of the latter.

পৃষ্ঠা: ১২৮
Pakistan is an Islamic State where the Muslims as such are to be thrive according to their own genius. The word ‘Islam’ is inseparable from the concept of Pakistan. Hence the choice of the state language we have to guard ourselves against the influences emanating from sources other than Islam.
The Provincial language in East Pakistan is Bengali. The choice of Urdu as Lingua franca does in no way conflict with the existence of Bengali as the Provincial language. Bengali does not owe its origin to Islam or Muslims but to sanskrit. Though it may be contended that Urdu also does not owe its to Islam, but it does in a sense to Muslims is Persian. The present vocabulary of Urdu, being mainly an admixture of Persian and Arabic, and developed mainly by the Muslim scholars has attained an Islamic status. Urdu in definitely richer in Islamic literature than any of the regional language of Pakistan.
The father of the nation, the Quaid-e-Azam, in his life time had to face this question. He gave his opinion. He emphatically asserted that there can be only one state language and that shall be Urdu. The propagandists for Bengali should bear in mind that they are attempting to unsettle the settled fact in contravention and disregard of the decision given by the father of the nation on the score.
It is time that we should cry (try?) a halt to this dangerous and nefarious game. No further latitude should be given. Urdu should be state language of Pakistan as already decided by the father of Nation.
The Eastern Herald, Sylhet, 16 February, 1952.
Quid-e-Azam on Our State Language
The Pakistan Prime Minister referred in his speech in Dacca on Sunday to the Quid-e-Azam’s speech in Dacca on March 21, 1948 about Urdu being the State Language of Pakistan.
The late Quid-e-Azam had said, “Let me tell you in the clearest language that there is no truth that your normal life is going to be touched or disturbed so far as Bengali language is concerned. But ultimately is for you, the people of this. Province, do decide what shall be language of your Province.
But let me make it very clear to you that the State Language of Pakistan is going to be Urdu and no other language. Without a State

পৃষ্ঠা: ১২৯
Language no nation can remain tied up solidly together and function. Look at the history of other countries. Therefore so far as the State Language is concerned, Pakistan’s language shall be Urdu..But as I have said, it will come in time.”
The Eastern Herald, Sylhet, 16 February, 1952.
Pashban (a Urdu daily published from Dacca) of 28th March publishes a letter from a correspondent containing the following:
“The active step which the Government of East Bengal have taken for the dissemination of our national language, Urdu, deserves praise. By fulfilling this greatest need of the hour the Government have furnished evidence of their true dutifulness and of being the true Government. It implementation of the resolution that “in the regions where Urdu is not generally spoken and understood, the instruction of Urdu should be made compulsory” arrangements for instructions in Urdu have been made and a programme for its further expansion is in view. In this connection there is one thing that deserves special attention and it is this — what should be the standard of Urdu education of the children whose mothertongue and a secondary language…. The standard of Urdu and the syllabus maintained in this province so far has been prescribed keeping in view the children whose mother tongue is Urdu. No regard has been paid for its aspect as a secondary language. To adopt the same syllabus as a secondary language will be to impede the progress of Urdu. The height of standard and difficulty of syllabus will lower the spirit of the students and make them hate the language. Inspite of its attractiveness Urdu will become a difficult problem for them. The current Urdu syllabus with which Urdu speaking boys start in class I cannot be adopted for Bengali speaking boys before class IV or V…. It is therefore necessary that a special syllabus should be adopted for the Bengali speaking boys who may adopt Urdu as a secondary language. Its standard should be easy and it should be useful for the boys. The Education Department has not issued any special.instruction in regard to the standard or Urdu in Bengali schools. The authorities should at once devise a scheme so that the work may proceed in a satisfactory and organised manner.”
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Department of Education, Bundle 92, AprilMay, 1953, Proceedings No. 698-705.

পৃষ্ঠা: ১৩০
Urdu is Universal
Bengal its Birth Place
Swami Kalijuganand Kabirpanthi
The state of “Azad Pakistan” was achieved through the medium of Urdu. In the same way Bharat became independent under the congress through the medium of Urdu. Our late Quaid-i-Azam learnt Urdu in his old age, and so did Gandhiji, Subhash Bose sang his songs of independence in Japan. His songs also in Urdu.
The Arya Samajists sprang from the Hindus to fight the evils of idol worship. They publish their propaganda tracts and Journals on a wide scale in Urdu. Raja Ram Mohon Roy has done a great work in Bengal for liquidating idolatry. He knew Urdu, Persian and Arabic well and through these language he became a famous reformer. Urdu was born in Bengal. The Muslims in Bengal owe their birth to Urdu. The script of Urdu has similarity with those of the languages throughout the Muslim world. Therefore, Urdu alone can be helpful in becoming familiar and friendly with other Muslim lands. Urdu is a Turkish word which means army. Thus Urdu alone can make once a soldier. In the world of democracy, the people of Bengal are the natural masters of Pakistan. Administrative facilities from the Jungle of Sylhet to the hills of Kohat, can be derived from Urdu alone. For this it will be essential to cry a slogan of “Speak Urdu” and “Write Urdu”. In this lies Bengal’s political, commercial and religious well-being. Among the refugees and Bharati merchants in Pakistan, who speak Urdu, there is no doubt some undesirable elements. These people have their one leg in Pakistan and one leg in Bharat. It lies in the hands of the Pakistanis to frame effective laws to prevent such hands of the happenings. But an indifference to Urdu would mean a tremendous loss to Pakistan itself. Urdu is universal language. The Beluchis, the Punjabis, the Paktoons and Shindhis have admitted this fact. Bengal is the master of Urdu in much the same way as it is the master of Pakistan.
The Hindus of Bengal used their all abilities and wealth and • made violent efforts for over fifty years to raise the standard of Bengali so high as to reach it to areas outside Bengal. But there were a complete failure. It remained a provincial language in the same way as Pushto, Punjabi, Shindhi and Baluchi. No provincial

পৃষ্ঠাঃ ১৩১
language has the strength to cross its frontiers. Urdu is not the language of one province or area. It is universal.
Lacs of Prophets, Rishis and Munis, Saints and Sadhus Sants and Mahatmas have appeared in the world. They wrote their scripts from right to left, and when there was weakness among them, they started writing from the wrong side i.e. from left to right. When the Congress Government wanted to force Hindi upon Madrais, the Adibasis (Achhuts and non-Brahmins) started a strong Boycott of Hindi and Sanskrit. They organised picketing and in this struggle about fourteen thousand Adibasi men and women courted arrests and went to jail.
Before the arrival of the Aryans in India when the people used utensils of gold and silver, the language of the Adibasis was written from right to left. They had their forts and castles of iron and marble. They all believed in one God. Real democracy (Panchayet) existed then. Remarriage of windows was permitted. Men and women were used to work and labour. In that age of writing from the right side, there was no trace of idol worship.
In fact, Urdu sprang up from the Muslim Mujahids of Bengal. The first Urdu Newspaper, translation and commentaries of the Quran in Urdu were published by the Bengali Muslims. The first poet of Urdu was also a Muslim of Bengal. The people of Laknow and Delhi got Urdu from Bengal and made it their own.
Today, Mr. Muhammad Ayyub Khan is taking a leading part in the conversion of West Pakistan into one unit. He has accepted Urdu as the language of the whole West Pakistan. According to the wish of the late Quaid-i-Azam Urdu alone can be language of Pakistan. West Pakistan has already succeeded in it.
It the people of Bengal, who are the real masters of Pakistan in this democratic world think sagaciously, they will find that Urdu is the only language which can help them in every sphere of their lives. The ignorance of this language is increasing idolatry and superstition. On the occasion of the last Dewali, 40 images of Kali were taken out in Dacca which is the important city of the masters of Pakistan. These images were on the shoulders of the poor Muslims. After all the poor also have their religion. But these poor fellows were illiterate and ignorant. This is due to lack of weakness of knowledge. This is what happened in a city like Dacca where

পৃষ্ঠা: ১৩২
there are about 700 mosques and a Government Arabic College in which there are learned professors drawing salaries from Rs. 200 to 1200 a month.
Urdu has played a great part in removing idol worship from our society. Quaid-i-Azam, as said before, learnt Urdu in his old age. He came over to Dacca to impress upon us the importance of Urdu and he did so as the Governor-General of Pakistan. Quaid-i-Azam was a great friend of the weak. He could never see the people of begging, lagging behind in the race of progress and prosperity. Quaid-i-Azam’s visit Bengal has a historical significance. His visit should be immortalised by erection a memorial and that should be a University, the Urdu University of Pakistan.
The well-wishers of Bengal would do well to take a lead in this matter. Urdu must attain perfection in Bengal. People in the habit of dinning and dressing in English fashion, generally think in terms of English they advocate adoption of Arabic. Their mentality is that if they themselves cannot remain as rulers, the people of Arabia and Egypt should take their place or beg other countries to lend the services of their officers to carry on Pakistani administration. Such a step will only embarrass the Pakistanis as a whole because the Arabic speaking population in this land is sadly negligible. People do not like even to think of Urdu in the larger interests of Pakistan. Now is the time for Bengal to think of its future carefully and cool-mindedly.
Al-Quaid, English Weekly
Dacca, January 24, 1955.

দলিলপত্র সংখ্যা : ৩৭
ভাষাপ্রশ্নে শাসনতন্ত্র পরিষদের নিকট রাগীব আহসানের আহ্বান
The Islamic Republic of Pakistan is an ideological democratic State based on the dynamic ideology of Islam and progressive social democracy propounded by Islam. Pakistan is the unique and only state in the comity of states of world, which is grounded on the one and only foundation of the spiritual unity given and granted to its people as free gift by Islam and the Lingua Franca of URDU. Minus Islam and Urdu there is no other basis of the unity of Pakistan, because Pakistan, with its two regions of East and West separated by one ihousand miles from each other, lacks even the territorial unity which is regarded as the last and irreducible minimum basis

পৃষ্ঠা: ১৩৭
of unity of the territorial, material, ethnic, secular nation-states of the world. Pakistan is essentially a brotherhood of Faith and the Faithful. Islam and Urdu are the two bonds of the unity of Pakistan which integrate, unify and bind together the diverse regions and peoples of Pakistan in the one indivisible whole of a MILLET and a polity grounded on the sovereignty of Allah-Rabbul Alemeen. l’akistan in a very real sense is the State of spirit and mind of the people. Pakistan is pre-eminently the Commonwealth of the soul.
A Few Submission to Members of Pakistan Constituent Assembly by Raghib Ahsan, Ex-M.P. (India), Dacca, July, 1954.
Government of East Bengal, B-Proceedings, Bangladesh National Archives, Political Department, Bundle No. 139, February, 1956, Proceedings No. 19-20.

Next