You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.26 | পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানি আক্রমণ আসন্ন? | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানি আক্রমণ আসন্ন?
[সংবাদদাতা]

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানি সামরিক কর্তারা পশ্চিম সীমান্তে ভারতের উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য তােড়জোড় শেষ করে ফেলেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে মুচেতগড়ে থেকে পুঞ্চ পর্যন্ত বিস্তৃত ২৪০ কিলােমিটার সীমান্ত জুড়ে আক্রমণ চালাবার প্ল্যান তৈরি করেছে তারা।
একদিকে পাকিস্তানি ফৌজ আক্রমণ শুরু করার জন্য তৈরি হয়ে রয়েছে অন্যদিকে ইসলামাবাদের যুদ্ধ বাজরা তিনজন জেনারেলকে নিয়ে একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি বানিয়েছে। এই কমিটির সর্বাধিনায়ক হয়েছেন প্রথম কোরের কোর কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খান। জম্মুর চাম্বজৌরেয়ান সেকটর থেকে ২৫ মাইল দূরে পাক সীমান্তের ঝিলম মিরপুর এলাকায় মঙ্গলাতে টিক্কা খান তার হেড কোয়াটার স্থাপন করেছেন।
তিন জনের কমিটির মধ্যে রয়েছেন দ্বাদশ ডিভিসনের অধিনায়ক জেনারেল আকবর খান। সি আই এর সঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর যােগযােগের বাহন রূপে এর কুখ্যাতি সুবিদিত। এর দ্বাদশ বাহিনী এখন মােতায়েন আছে যুদ্ধবিরতি সীমারেখা বরাবর উরি কুরগিল সেকটরে।
সংবাদে প্রকাশ, ইসলামাবাদের সঙ্গে কোন পরামর্শ না করেই টিক্কা খান এবং আকবরকে আসলে নিজেদের … ভারতের উপর আক্রমণ শুরু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকায় অনুপ্রবেশ ঘটানর জন্য হাজিপীর এলাকায় এক ব্রিগেড কমান্ডাে পাকিস্তান রেখেছে। এছাড়া উরি সেকটরে এবং পুঞ্চে ১৪ ব্যাটানিয়ন ফৌজ সম্প্রতি মােতায়েন করা হয়েছে।
পাক বিমান বাহিনীও প্রতিদিন সীমান্ত লঙ্ঘন করে হামলা চালাচ্ছে এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সঙ্গে পা এ পা দিয়ে লড়াই বাধাবার চেষ্টা করছে।
এই বিমান হামলার সঙ্গে তাল রেখে পাকিস্তানি স্থল বাহিনীও যুদ্ধ বিরতি সীমা রেখা লঙ্ঘন করে সীমান্তে খোঁচাখোঁচি চালাচ্ছে।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত এই সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে দু’শর বেশি। ব্যাপারটা রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক দলকে জানানাে হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানি হামলা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
পাকিস্তান চেষ্টা করছে উরি সেকটরে যতটা সম্ভব এগিয়ে আসতে। কামানি পয়েন্ট সীমান্ত থেকে ৫০ গজের মধ্যে। এখানে পাকিস্তান প্রায় গােলা বর্ষণ করছে। গত ২ সপ্তাহে এখানকার ঘাটির উপর এগােবার চেষ্টা করলে ভারতের তরফ থেকে মুখের মতাে জবাব দেওয়া হয়। পাকিস্তানি ফৌজের বেশ কিছু লােক মারা পড়বার পর তারা লেজ গুটিয়ে পালায়।
টিক্কা খানের লক্ষ্য হলাে কাঠুয় মাধােপুর অঞ্চলে এগােন যাতে হঠাৎ এই এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে যাতে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে পাঞ্জাবের পাঠানকোটের রেল যােগাযােগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। এই অঞ্চলেই পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি সৈন্য, ট্যাঙ্ক, কামান ইত্যাদি মােতায়েন করেছে। এর অধিকাংশই মার্কিন মুলুক থেকে পাওয়া। | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অনেকগুলাে শেরম্যান ট্যাঙ্ক এবং নতুন ধরনের শক্তিশালী বিমান ধ্বংসী কামান দিয়েছে। শেরম্যান ট্যাঙ্কগুলােতে প্যাটন ট্যাঙ্কের মতাে ৯০ মি. মি. কামান লাগানাে আছে। পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানে ৯০০ ট্যাঙ্ক রয়েছে। এর মধ্যে আছে নতুন ধরনের প্যাটন ট্যাঙ্ক এবং চীনা টি-৫৯ ট্যাঙ্ক। পাঁচ ফুট গভীর জলাশয়ের বাধাও এগুলাে অতিক্রম করতে পারে। এই সব অস্ত্রশস্ত্রের একটা বড় অংশ মােতায়েন রয়েছে কাঠুয়া থেকে চাম্বা-জৌরিয়ান সীমান্ত বরাবর।
পাশেই কারিয়ান ডিম্বার অঞ্চল। সেখানে পাশরুর থেকে শিয়ালকোট বরাবর রয়েছে সেনাবাহিনীর প্রথম কোর। পাশরুর থেকে নবম পাকিস্তানি ডিভিসনকে পূর্ব বাঙলায় চালান করার পর এখানে আনা হয়েছে সপ্তদশ ডিভিসনকে। এছাড়া পেশােয়ার থেকে সপ্তম ডিভিশনকে শিয়ালকোট বরাবর এনে নতুন করে মােতায়েন করেছে পাকিস্তান। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, হঠাৎ ভারত সীমান্তের উপর আক্রমণ শুরু করা।

সূত্র: সপ্তাহ, ২৬ নভেম্বর ১৯৭১