১৯৭১ সালের ৭ ই জুন রাত্রি প্রায় ভোর চারটার সময় ২০/২৫ জন রাজাকার ও মিলিটারী আমার বাসায় যায়। এবং বাসা ঘেরাও করে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে আমাকে ধরে ফেলে। আমাকে ধরার সাথে সাথে বাঁশের লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে আমার পায়ের তালুতে, ঘারে, হাতের আঙ্গুলীতে এবং শরীরের বিভিন্ন গিড়ায় গিড়ায় প্রহার করতে থাকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে যথাঃ
ই,পি,আর কোথায়?
তোর রাইফেল কোথায়?
তোর ভাই কোথায়?
তার জবাবে আমি বলি যে, আমি কিছুই জানি না। তারপর আমার বাড়ীতে আমাকে ঘন্টাখানেক প্রহার করার পর নড়াইল নিয়ে আসে এবং সেখানে নিয়ে এসে আবার প্রহার করতে থাকে এবং ঐ একই কথা বার বার বলতে থাকে, আমি অস্বীকার করায় প্রায় দু’ঘন্টা আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রহার করার দরুন আমার শরীর হতে রক্ত ঝরতে থাকে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার আধা ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আমি দেখতে পাই আমি ডাকবাংলার একটা কক্ষে এবং সেখানে আরও ১২/১৪ জন লোক আধামরা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। তারপর ৭ দিন উক্ত ডাকবাংলায় রাখার পর আমাকে যশোর মিলিটারীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
যশোর পৌছার পর আমাকে সার্কিট হাউসে নিয়েই ৪/৫ জন মিলিটারী বুট আর বেতের লাঠি দিয়ে এক এক করে লাথি কিল, ঘুষি, আর প্রহার করতে থাকে। একজন মিলিটারী ৪/৫ হাত দূর হতে জাম করে এসে আমার মুখে লাথি মারে উক্ত লাথিতে আমার তিনটা দাঁত পড়ে যায়। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, তার ঘন্টাখানেক পর আমার জ্ঞান ফিরে পেলে আবার প্রহার করতে থাকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে যথাঃ
ই,পি,আর কোথায়?
রাইফেল কোথায়?
তোর ভাই কোথায়?
আমি জবাব দিই আমি কিছুই জানি না। তারপর আবার মারা শুরু করে এই ভাবে সার্কিট হাউসে দু’দিন দু’রাত ছিলাম। প্রায় সব সময়ই আমাকে প্রহার করত। উক্ত দু’দিনে আমাকে একটু পানিও পান করতে দেয় নাই। সেখান হতে আমাকে যশোর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে একমাস সাতদিন থাকার পর আমি জামিন নিয়ে বের হয়ে আসি। কিন্তু প্রতিদিন আমাকে কোর্টে হাজির হতে হত। এই ভাবে ৪/৫ তারিখ কোর্টে হাজির হবার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। আমাকে ধরার প্রধান কারন আমার বড় ভাই আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আর আমার ছেলে ছিল মুক্তিবাহিনীতে। এই দুইটা কারণে আমাকে ধরে এবং প্রহার করে । জেল থেকে বেরিয়ে এসে দু’মাস চিকিৎসা করার পর সুস্থ হয়ে উঠি। এখনও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বালা পোড়া করে।
স্বাক্ষর /-
মোঃ মানিক শিকদার
গ্রাম- চিলগাছা রঘুনাথপুর
ডাকঘর- কমলাপুর
থানা- নড়াইল
জেলা-যশোর
৮/৬/৭৩