You dont have javascript enabled! Please enable it!

সরকার পক্ষের অভিযােগপত্র (রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য)

১৯৬৮ সালের সংশােধিত ফৌজদারি আইন অধ্যাদেশের ইউ/এস-৫ ধারামতে কেন্দ্রীয় । সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলার ভাষ্য আদালতে উপস্থাপন করা হলাে। যথাযথ সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা যাচ্ছে যে: ১. গােপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের অনুসরণে এমন একটি ষড়যন্ত্র উদঘাটন করা হয় যার মাধ্যমে ভারত কর্তৃক প্রদত্ত অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও অর্থ ব্যবহার করে পাকিস্তানের একাংশে সামরিক বিদ্রোহের দ্বারা ভারতের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি স্বাধীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কতিপয় ব্যক্তিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা আইনের আওতায় এবং কতিপয় ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়। ২. ওইসব ব্যক্তির কয়েকজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা তথ্য প্রমাণাদিতে দেখা যায় যে, তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এবং কিছু নির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের ছদ্মনাম ব্যবহার করছে এবং একটি ‘ডি ডে’-তে করণীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা অনুরূপ ছদ্ম শব্দাবলী ব্যবহার করছে। ৩. তাদের প্রধান কর্মপরিকল্পনা ছিল সামরিক ইউনিটগুলাের অস্ত্রশস্ত্র দখল করে তাদেরকে অচল করে দেওয়া। কমান্ডাে স্টাইলে অভিযান চালিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হয়। ক. সামরিক বাহিনী থেকে আসা লােকদের এবং প্রাক্তন সৈনিক ও বেসামরিক চাকরিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করা, যাঁরা কার্যকরভাবে একটি অগ্রবাহিনীর ভূমিকা। পালন করে প্রচলিত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। খ, ভারত থেকে প্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ ছাড়াও স্থানীয় উৎসসমূহ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ নিরাপদে রাখা। গ. মিথ্যা প্রচারণার সাহায্যে সর্বসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক আনুগত্যহীনতা সৃষ্টি করা। এবং ঘ, জোরপূর্বক সামরিক কৌশলগত স্থানসমূহ দখল করার উদ্দেশ্যে ‘ডি ডে’-এর মত একটি সুযােগের মুহূর্ত নির্ধারণ করা। ৪. এই ষড়যন্ত্র কার্যকর করার জন্য একটি সভার আয়ােজন করা হয়। সেই সভায় পাকিস্তানের যাঁরা ওই অভিযান কার্যকরী করার দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের প্রতিনিধিরা এবং ভারতীয় পক্ষের যারা অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এই ষড়যন্ত্রকে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাঁদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৭ সালের ১২ জুলাই ভারতের আগরতলায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৫. এই ষড়যন্ত্র এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এবং বিশেষ উল্লেখযােগ্য বিষয়গুলাে নিচের অধ্যায়সমূহে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে, যখন অভিযুক্ত। ষড়যন্ত্রকারীদের কোনাে সভার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তখন ষড়যন্ত্রের সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের পুনরাবৃত্তি পরিহার করা হয়েছে। যদিও তারা তাদের প্রায় প্রতিটি সভায়ই ওই বিষয় নিয়ে আলাপ-আলােচনা করতাে। এই অভিযােগনামার সঙ্গে পাঁচটি তালিকা। সংযুক্ত করা হয়েছে। এগুলাের শিরােনাম যথাক্রমে- ‘তালিকা-এ’, অভিযুক্তদের তালিকা, ‘সাক্ষীর তালিকা’, ‘তথ্য-প্রমাণের তালিকা’ ও ‘জিনিসপত্রের তালিকা- সংযােজনী-১ এ! এগুলাে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংযােজনী-২ এ অভিযুক্তদের ছদ্মনাম সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। কোনাে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম যখন প্রথমবার উল্লেখ করা হয়েছে। তখনই তার সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে বলা হয়েছে এবং পরবর্তীতে যখন ওই নামটি পুনরায় ব্যবহার করার প্রয়ােজন পড়েছে তখন শুধুমাত্র যাতে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বুঝায় সে। রকমভাবেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। উপরােক্ত তালিকাসমূহের যেকোনােটির অন্তর্ভুক্ত কোনাে ব্যক্তির সম্পূর্ণ পরিচয় দেওয়ার বেলায় ওই ব্যক্তি যে তালিকার অন্তর্ভুক্ত সেই তালিকার নাম এবং ওই তালিকার কত নম্বর ক্রমিকে তার অবস্থান সেই নম্বরটি উল্লেখ করা হয়েছে।

একইভাবে, যখন প্রথমবারের মত কোনাে স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে | তখন ওই স্থানের অবস্থান প্রভৃতি বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে এবং পরে যখন আবার ওই স্থানটির নাম উল্লেখ করার প্রয়ােজন পড়েছে তখন অন্যান্য স্থান থেকে ওই স্থানটিকে আলাদা করে বুঝানাের জন্য যেটুকু উল্লেখ করা দরকার তা-ই করা হয়েছে। ৬. ১৯৬৪ সালের ১৫ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এই মামলার ১ নম্বর আসামি শেখ মুজিবুর রহমান করাচি সফর করছিলেন। এই সফরকালে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট। মােয়াজ্জেম হােসেন (বর্তমান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মােয়াজ্জেম হােসেন), আসামি নম্বর২ কর্তৃক আহুত একটি সভায় যােগদানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এই লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মােয়াজ্জেম হােসেন ১৯৬৪ সালের শুরুতে তার নিজ বাসভবন- বাংলাে নং-ডি/৭৭, কেডিএ স্কিম নং-১, করাচিতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় এই অভিযােগনামার ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান, ৪ নং আসামি প্রাক্তন বিশিষ্ট নাবিক সুলতান উদ্দিন আহমদ, ৫নং আসামি বিশিষ্ট নাবিক নূর মােহাম্মদ এবং ১নং সাক্ষী লেফটেন্যান্ট মােজাম্মেল হােসেনের সঙ্গে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য একটি বিপ্লবী সংগঠন সংগঠিত করার বিষয়ে তারা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলােচনা করবেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয় এই মামলার ২নং সাক্ষী মি. কামাল উদ্দিন আহমদের বাসায়, যার ঠিকানা-৩/৪৮, এমএসপিপি স্কুল টিচারস কো-অপারেটিভ সােসাইটি (মালামা আবাদ নামে বহুল পরিচিত), করাচি। এই সভায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন: ১. শেখ মুজিবুর রহমান, আসামি নং-১ ২. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ৩. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৪. সুলতান, আসামি নং-৪ ৫. নূর মােহাম্মদ, আসামি নং-৫ ৬. মি. আহমদ ফজলুর রহমান, সিএসপি, আসামি নং-৬ এবং ৭. মােজাম্মেল, সাক্ষী নং-১। এই সভায় ২নং আসামি মােয়াজ্জেম বলেছেন যে, নৌ-বাহিনীতে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি জঙ্গী বাহিনী সংগঠিত করেছে এবং সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানি কর্মকর্তারাও এই বাহিনীতে যােগদান করবেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সিভিল সার্ভিসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সমর্থন ও সহযােগিতা অত্যাবশ্যক। তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ওই বাহিনীকে পরিচালনা করার জন্য তহবিল দরকার।

১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান এর সঙ্গে শুধুমাত্র একমতই পােষণ করেননি, উপরন্তু তিনি বলেছেন যে, তাঁর নিজের ধারণা এবং পরিকল্পনাও এরকমই। তিনি ওই পরিকল্পনার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন ঘােষণা করেন এবং প্রয়ােজনীয় তহবিল সংগ্রহ করে দেবার আশ্বাস দেন। ৬নং আসামি এএফ রহমান যখন ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত হন যে, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে যে বঞ্চনা ও বৈষম্য বিদ্যমান তার বিরুদ্ধে একমাত্র জবাব হচ্ছে সামরিক বিদ্রোহ। তখন তিনি একথাও উল্লেখ করেন যে, এ ধরনের সামরিক বিদ্রোহ সংঘটিত হলে ভারতের কী প্রতিক্রিয়া হবে তা তিনি বলতে পারেন না। এই পর্যায়ে ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, এ বিষয়টি তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) দেখবেন। তিনি আরও বলেন যে, তারা যেন পরিকল্পনাটি কিছুদিনের জন্য ধীর গতিতে পরিচালনা করেন। কারণ, যদি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরােধীদলীয় প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে তাহলে এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়ােজন না-ও হতে পারে। ৭. ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পুনরায় করাচি সফর করেন এবং ১৯৬৫ সালের ১৫ থেকে ২১ জানুয়ারি সেখানে অবস্থান করেন। এ সময়কালের মধ্যে একদিন ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের পূর্বোক্ত বাসভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

১. শেখ মুজিবুর রহমান, আসামি নং-১ ২. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ৩. নূর মােহাম্মদ, আসামি নং-৫ ৪. এএফ রহমান, আসামি নং-৬ ৫. ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ এবং ৬. লেফটেন্যান্ট মােজাম্মেল হােসেন, সাক্ষী নং-১। এ ছাড়া আরও কয়েজন উপস্থিতের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। এই সভায় ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, একমাত্র একটি উপায়েই পূর্ব পাকিস্তানিরা আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলাে- পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়া। তিনি ওই পরিকল্পনার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন ঘােষণা করেন ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন এবং ২নং আসামি মােয়াজ্জেমকে তাঁর কার্যক্রমের সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করে বিপ্লবী গ্রুপগুলাের তৎপরতা সম্প্রসারিত করতে বলেন। ৮. এই মামলার ৩নং সাক্ষী, করাচির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসে কর্মরত মি. মােহাম্মদ। আমীর হােসেন মিয়া ছিলেন মামলার ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব, ৪নং আসামি সুলতান এবং ৮নং আসামি প্রাক্তন করপোেরাল আবুল বাশার মােহাম্মদ আবদুস সামাদের ঘনিষ্ঠ পরিচিত জন। ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসের কোনাে একদিন ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এতে ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন খুবই অভিভূত হন এবং ওই গ্রুপের কার্যকরী সদস্য হয়ে ওঠেন। ৯. ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের বাসভবনে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যে সভাগুলােতে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা সাধারণভাবে উপস্থিত থাকতেন। ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২। ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. নূর মােহাম্মদ, আসামি নং-৫ ৫. হাবিলদার দলিল উদ্দীন, আসামি নং-৯ এবং ৬. আমীর হােসেন, সাক্ষী নং-৩। এরা ছিলেন সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। এই সভাগুলােতে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং সাফল্য লাভের জন্য অনুসৃত পদ্ধতিসমূহ নিয়ে আলােচনা হতাে। ১০. পূর্ব পাকিস্তানে কাজকর্মের উদ্যোগ নেবার জন্য সংগঠনের কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের স্থায়ীভাবে পূর্ব পাকিস্তানে থাকা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের অনুরােধে একে একে ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ও ৪নং আসামি সুলতান ছুটি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। তাদের স্থায়ীভাবে পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করে দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম, ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ও ৪নং আসামি সুলতানের মাধ্যমে ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যােগাযােগের মাধ্যমে একটি গ্রুপসভার আয়ােজন করেন। এই সভায় গ্রুপ সদস্যদের করাচি থেকে ঢাকায় আসার জন্য যাতায়াত খরচ বাবদ ৪নং আসামি সুলতান ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের ঠিকানায় একটি রেজিস্টার্ড খামে করে ১৫০০ টাকা এবং টেলিগ্রাফ মানিঅর্ডারযােগে ৫নং আসামি নূর মােহাম্মদের কাছে ৫০০ টাকা পাঠায় এবং তাদের উভয়কেই ওই টাকা ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে পৌছানাের জন্য বলে। এই টাকা যথাসময়ে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ১১. পূর্বোক্ত সভা ১৯৬৫ সালের ২৯ আগস্ট তারিখে নির্ধারিত ছিল। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ওই সভায় যােগ দেওয়ার জন্য পিআইএ বিমানযােগে ঢাকার উদ্দেশ্যে করাচি ত্যাগ করেন। ১২. পূর্বোক্ত সভা নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট স্থানে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন: ১. শেখ মুজিবুর রহমান, আসামি নং-১ ২. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ৩. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৪. সুলতান, আসামি নং-৪ ৫. রুহুল কুদ্স, সিএসপি, আসামি নং-১০ এবং ৬. আমীর হােসেন, সাক্ষী নং-৩ ২নং আসামি মােয়াজ্জেম কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালােচনা করেন এবং বলেন যে, ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের দক্ষ পরিচালনা ও সহায়তায় তিনি সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছেন যারা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কাজ করবেন।

সভায় উপস্থিত সকলেই কার্যক্রমের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম অর্থ, অস্ত্র এবং গোলাবারুদের প্রয়ােজনীয়তার ওপর জোর দেন। ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের কাছ থেকে যাবতীয় সাহায্য সংগ্রহের আশ্বাস দেন। সাময়িকভাবে তিনি ২নং আসামি মােয়াজ্জেমকে ১ লাখ রুপী দেবার কথা বলেন যা ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ও ৪নং আসামি সুলতানের কাছ থেকে কিস্তিতে ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নিতে বলেন। ১৩. ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থ ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে তার কাছ থেকে ৭০০ টাকা পান এবং তা মামলার ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে পাঠান। ১৪. ১৯৬৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থ ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়ে তার কাছ থেকে ৪০০০ টাকা পান এবং তা মামলার ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে পাঠান । আমীর হােসেন আবার ওই টাকা থেকে ৩০০ টাকা মামলার ৩ ও ৪নং আসামি যথাক্রমে স্টুয়ার্ড মুজিব ও সুলতানের ব্যক্তিগত খরচের জন্য পাঠান এবং বাকি টাকা ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে পৌঁছানাের জন্য নিজের কাছে রাখেন। ১৫. ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় যে সমস্ত প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ছুটিতে কিংবা অস্থায়ী কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের নির্ধারিত কর্মস্থলে যেতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় তাদেরকে পূর্ব পাকিস্তানেই কাজে যােগ দিতে বলা হয়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ও ৪নং আসামি সুলতান চট্টগ্রাম নৌঘাটিতে কাজে যােগ দেন। আসামিদ্বয় চট্টগ্রামে কর্মরত থাকা।

অবস্থায়ও তাদের ষড়যন্ত্রমূলক সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। ১৬. ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ৬নং আসামি এএফ রহমানের বাসা-ফ্লাট নং-২১, ইলাকো হাউস, ভিক্টোরিয়া রােড, করাচিতে ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. নূর মােহাম্মদ, আসামি নং-৬ ৩. এএফ রহমান, আসামি নং-৬ ৪. সামাদ, আসামি নং-৮ এবং ৫. আমীর হােসেন, সাক্ষী নং-৩ এই সভায় কাজকর্মের অগ্রগতি পর্যালােচনা করা হয় এবং ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। ৬নং আসামি এএফ রহমান যুক্তরাজ্য থেকে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ২নং আসামি মােয়াজ্জেমকে পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করার জন্য চেষ্টা করা হবে। সংগঠনের যাবতীয় কাজের জন্য ওই সময় ৬নং আসামি এএফ রহমানের অতিথি হিসেবে অবস্থানরত মামলার ৪নং সাক্ষী মি. কে জি আহমদের অফিসটি ব্যবহারের বিষয়টিও সভায় স্থির করা হয় । ১৭. ওই একই মাসে (ডিসেম্বর, ১৯৬৫) অন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয় মামলার ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের বাসা অফিসার্স কোয়ার্টার, কারসায, করাচি এই ঠিকানায়। এতে উপস্থিত ছিলেন পূর্বোক্ত ১৬ নং অধ্যায়ে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব এবং ৪ নং আসামি সুলতান পূর্ব পাকিস্তানে কাজ করে চলেছেন এবং খুব শিগগিরই ৮নং আসামি সামাদ এবং ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে গ্রুপের কাজকর্মের পরিধি বাড়ানাের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানাে হবে। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম আরও বলেন যে, গ্রুপের কাজের সাফল্যের জন্য ৩০০০ স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহ করা দরকার এবং তাদের সবাইকে অস্ত্র সজ্জিত করে যদি প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা করা যায় তাহলে অবিলম্বে তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বিতাড়িত করতে পারবেন। পূর্বোক্ত ১৬ নং অধ্যায়ে বর্ণিত বিষয়গুলােও এই সভায় আলােচনা করা হয়।

১৮. একই মাসে ডিসেম্বর, ১৯৬৫) ৭নং আসামি মফিজ উল্লাহর আহ্বানে তার বাসা৩২৯/২, কেরাঙ্গী ক্রিক, করাচিতে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় নিম্নোক্তরা। উপস্থিত ছিলেন: সুলতান, আসামি নং-৪ মফিজ উল্লাহ, আসামি নং-৭। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মুহাম্মদ ফজলুল হক, আসামি নং-১১ ওয়ারেন্ট অফিসার মুশারফ এইচ, শেখ, সাক্ষী নং-৫ সার্জেন্ট শামসুদ্দিন আহমেদ, সাক্ষী নং-৬ এবং আরও কয়েকজন যাদেরকে চিহ্নিত করা যায়নি। এই সভায় ৭ নং আসামি মফিজ উল্লাহ এবং ৪ নং আসামি সুলতান বারবার বলছিলেন। যে, পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ওই অঞ্চলকে আলাদা করে ফেলা এবং একটি সফল সামরিক বিদ্রোহ ছাড়া তা কিছুতেই সম্ভব নয়। সভায় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের নেতৃত্বে কাজকর্মের অগ্রগতির পর্যালােচনা করে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ১৯, ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের করাচি থেকে বিদায় উপলক্ষে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম তাকে তিনটি টেবিল ডায়রি প্রদান করেন। ডায়রিগুলাের কয়েকটি পৃষ্ঠায় তিনি আমীর হােসেনকে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে তাঁর কিছু নির্দেশাবলী এবং সব সময় মনে রাখার মতাে কিছু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখে দিয়েছিলেন। ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম তাঁকে বলেছিলেন যে, কথাগুলাে তিনি তাঁর নােট বুক থেকে ওখানে লিখে দিয়েছেন। এই নােট বুকটি যে ডায়রিগুলাে দেখে আসামিদের ছদ্মনামগুলাে সংযােজনী-২ এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলাের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে। তিনি ১ নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের চাহিদা অনুযায়ী তাকে পৌছে দেবার জন্য তার কাছে (আমীর হােসেনের কাছে) একটি মানচিত্র এবং অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের দুটি তালিকাও দেন। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বলেন এবং গ্রুপ পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার অধিকার দেন। তিনি তাঁকে। আরও বলেন যে, সংগৃহীত অর্থ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়ােজনীয় খরচ চালিয়ে বাকি অর্থ যেন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে করাচিতে তার কাছে পাঠানাে হয়। ২০. ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন ঢাকায় পৌছে চট্টগ্রাম যান গ্রুপের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে। সেখানে ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব এবং ৪নং আসামি সুলতান বিদ্রোহ সংগঠনে তাদের নির্ধারিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ ফ্রেব্রুয়ারি তিনি (৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন) চট্টগ্রামস্থ মিসকা হােটেলে তার কক্ষে একটি সভা আহ্বান করেন যেখানে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

১. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ২. সুলতান, আসামি নং-৪ ৩. মি. ভূপতি ভূষণ চৌধুরী (মানিক চৌধুরী নামে খ্যাত) আসামি নং-১২ ৪. মি. বিধান কৃষ্ণ সেন, আসামি নং-১৩। ৫. সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, ই.পি.আর, আসামি নং-১৪ ৬. ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী, সাক্ষী নং-৭ এবং ৭. প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুহাম্মদ শহীদুল হক (পি.এন.ভি.আর) সাক্ষী নং-৮।  ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী এবং ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমান সেখানে ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে বলেন যে, ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান গ্রুপের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দেবার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা এই গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন। ১২নং আসামি মানিক চৌধুরী গ্রুপের কাজে সহায়তার জন্য ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা দেন। ২১. ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গ্রুপের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ৮নং আসামি সামাদকে ঢাকায় পাঠান। তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তার জীবনধারণের জন্য ঢাকায় আসা তার একান্তই প্রয়ােজন ছিল। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম একই সঙ্গে ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে এই মর্মে একটি চিঠি লিখে দেন যে, যতদিন তার (৮নং আসামি সামাদের কোনাে চাকরির ব্যবস্থা হয় ততদিন যেন তিনি তাকে মাসে ৩০০ টাকা করে দেন। ১৯৬৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লেখা এই চিঠিতে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম আরও উল্লেখ করেন যে, তিনি সবকিছুই পরশের সঙ্গে (পরশ ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের ছদ্মনাম) আলােচনা করেছেন এবং ভয় করার কোনাে কিছু নেই। ২২. এই মাসে ৮ নং আসামি সামাদ চারজন নতুন সদস্য সংগ্রহ করেন। এরা হচ্ছেন:

১. মুজিবুর রহমান, কেরানী, ই.পি.আর.পি.সি আসামি নং-১৫ ২. প্রাক্তন ফ্লাইট সার্জেন্ট মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, আসামি নং-২৬ ৩. প্রাক্তন নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান, আসামি নং-৯ এবং ৪. প্রাক্তন লেন্স নায়েক এ.বি.এম. ইউসুফ, সাক্ষী নং-১০।

এই নতুন সদস্যদেরকে গ্রুপের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে দীক্ষিত করেন ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন। ২৩, ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ১ নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম সফর করেন এবং লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ভাষণ দেন। এই জনসভার পরে তিনি ৭ নং সাক্ষী ছৈয়দুর রহমানের বাসা-১২, রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী বাইলেন, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম ঠিকানায় গ্রুপের একটি সভা ডাকেন। এই সভায় উপস্থিতরা হচ্ছেন:

১, শেখ মুজিবুর রহমান, আসামি নং-১ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. মানিক চৌধুরী, আসামি নং ১২ এবং

৪. সাইদুর রহমান, সাক্ষী নং-৭। এই সভায় ১ নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে গ্রুপের | সভার জন্য একটি জায়গার ব্যবস্থা করতে বলেন। ২৪. ওই একই মাসে (ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬) ১ নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান গ্রুপের জন্য আর্থিক সহায়তা লাভের আরেকটি উৎস বের করেন। ১১নং সাক্ষী মুহাম্মদ মােহসিন যিনি ছিলেন ১০ নং আসামি রহুল কুদুসের খালাত ভাই, ১ নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান গ্রুপের সাহায্যে অর্থ দান করার জন্য তাকে বলেন। এইরূপ কথাবার্তার পরে ১১নং সাক্ষী মােহসিন যখন ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের বসার ঘর থেকে বের হয়ে আসছিলেন তখন ৪নং আসামি সুলতান তাকে বলেন যে, ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা মােতাবেক তিনি যেন মুরাদ’-এর (মুরাদ স্টুয়ার্ড মুজিবের ছদ্মনাম) কাছে টাকা দেন। ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১১নং সাক্ষী মােহসিনের কাছ থেকে দুই কিস্তিতে ৭০০ টাকা গ্রহণ করেন। ২৫. ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের পরামর্শানুযায়ী ৬নং আসামি। এ.এফ. রহমান তার স্ত্রীর মালিকানাধীন পেট্রল পাম্পে ৮ নং আসামি সামাদকে ম্যানেজার পদে চাকরি দেন। এই পেট্রল পাম্পের নাম ‘গ্রীনভিউ পেট্রল পাম্প’ । ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের ব্যবস্থা অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৬নং আসামি এ.এফ. রহমানের মাধ্যমে গ্রুপের সদস্যদের লিয়াজো রাখা হতাে। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা পেট্রল নেবার অজুহাতে ওই পাম্পে সব সময় যাতায়াত করতেন। ২৬. ১৯৬৬ সালের ৪ মার্চ ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে একটি চিঠি লিখে জানান যে, তিনি যেন ৪ নং সাক্ষী কে.জি-এর কাছে ঢাকাস্থ অভ্যন্তরীণ | জল পরিবহন সংস্থার কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার কথা বলেন। তিনি চিঠিতে। ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে আরও নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন চারদিকে আঙ্গিনাসহ । একটি বাড়ি ভাড়া করে রাখেন যেখানে ভারত থেকে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্র রাখা হবে। ২৭. একই মাসে (মার্চের প্রথম দিকে, ১৯৬৬) ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন ঢাকার মহাখালীতে একটি সভা আহ্বান করেন, যেখানে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন:

১. সামাদ, আসামি নং-৮ ২. মুজিব, কেরানী, আসামি নং-১৫ ৩. এম.এ. রাজ্জাক, আসামি নং-১৬ ৪. সার্জেন্ট জহুরুল হক, আসামি নং-১৭ ৫. আশরাফ আলী, সাক্ষী নং-৯ এবং ৬. ইউসুফ, সাক্ষী নং-১০।

ওই সভায় উপস্থিত আরও কতিপয় ব্যক্তির নাম নিম্নলিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

১. এল.এ.সি.এম.এ নওয়াজ। ২. এল.এ.সি.জেড.এ চৌধুরী এবং

৩. সার্জেন্ট মিয়া, পি.এ.এফ। (তদন্ত চলাকালীন সময়ে এই সকল ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি) সভায় এ বিষয়ে খুবই জোর দেয়া হয়েছে যে, তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির একমাত্র পথ হচ্ছে সামরিক বিদ্রোহ। এ বিষয়টিও ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, ভারত সরকার তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করবে। ২৮, ১৯৬৬ সালের ১২ মার্চ ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের একটি সভা আহ্বান করেন। দিনটি ছিল শনিবার। ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের জন্য এই দিনটিই সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ চাকরিস্থল থেকে ছুটি না নিয়েই তিনি সপ্তাহান্তে ঢাকায় গিয়ে সভায় যােগ দিতে পারেন প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ। মি, তাজউদ্দিন ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযােগী। তিনি এই সভার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভালােভাবেই জানতেন। কিন্তু তিনি নিজে এই সভায় উপস্থিত থাকেননি। সভায় অংশগ্রহণকারীদের ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে পূর্বোক্ত বাড়িতে যান। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন:

১. শেখ মুজিবুর রহমান, আসামি নং-১ ২. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ৩. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৪. রহুল কুদুস, আসামি নং-১০ এবং ৫. আমীর হােসেন, সাক্ষী নং-৩।

এই সভায় ২নং আসামি মােয়াজ্জেম আশা প্রকাশ করে বলেন যে, ‘ডি’ দিবসে পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনগণ তাদের সঙ্গে থাকবে। সভায় অংশগ্রহণকারী সকলেই এ বিষয়ে একমত পােষণ করেন যে, ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের প্রতিটি সদস্য যেদিন অস্ত্রসজ্জিত হবে এবং প্রশিক্ষণ পাবে সেদিনেই চূড়ান্ত সময় উপস্থিত হবে। এই সভায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র প্রদান সংক্রান্ত আলােচনা করার জন্য তাদের একটি প্রতিনিধিদল ভারতে পাঠানাের আয়ােজন করা হয়। ২৯, এর অল্প কয়েক দিন পরে ৯ নং সাক্ষী আশরাফ আলী পূর্ব পাকিস্তানের একটি সেনানিবাসের একটি স্কেচ ৩নং আসামি আমীর হােসেনের কাছে দেন। ৩০. ১৯৬৬ সালের ১৯ মার্চ ২নং আসামি মােয়াজ্জেম চিঠির মারফত ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে জানান যে, তিনি যেন ৬নং আসামি এ.এফ. রহমানকে টেলিফোনে জানিয়ে দেন যে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের ঢাকায় স্থানান্তরের আয়ােজন করা হয়েছে। তিনি ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে আরও জানান যে, ৫নং আসামি নূর মােহাম্মদ কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা যাচ্ছেন এবং তিনি তাকে (আমীর হােসেনকে) পশ্চিমাঞ্চলের কাজকর্ম সম্পর্কে খবরাখবর জানাবেন। একই চিঠিতে তিনি ছদ্ম ভাষায় লিখেছেন যে, তিনি তার চাকর শফির (আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি) মাধ্যমে তার (আমীর হােসেনের) কাছে একটি ছােট্ট অস্ত্র পাঠাবেন এবং ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন যেন অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে অর্থের সংস্থানে মনােনিবেশ করেন। ৩১. এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম, ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের কাছে আরেকটি চিঠি লিখে ৬ নং আসামি এ.এফ. রহমানের কাছ থেকে নগদ ৫,৫০০ টাকা গ্রহণ করেন। এ থেকে ৫০০০ টাকা ১৯৬৬ সালের ৩১ মার্চ ব্যাংক ড্রাফট করে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে পাঠান এবং বাকি ৫০০ টাকা আমীর হােসেন তাঁর নিজের কাছে খরচের জন্য রাখেন। ৩২. ১৯৬৬ সালের ৩ এপ্রিল ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব এবং ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থ ধানমন্ডির বাড়িতে যান এবং ছােট ছােট অস্ত্র কেনার জন্য আরও টাকার প্রয়ােজনীয়তার কথা বলেন। ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ২নং আসামি মােয়াজ্জেম কর্তৃক মনােনীত হয়েছিল ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে গ্রুপের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে। ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান তখন ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবের কাছে নগদ ৪০০০ টাকা দেন এবং ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব আবার ওই টাকা ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে দেন।

৩৩, এর পরের দিন ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছ থেকে একটি চিঠি পান যাতে ছদ্ম ভাষায় আরও বেশি পরিমাণ টাকার জরুরি প্রয়ােজনের কথা লেখা ছিল। ফলে ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবকে ১০নং আসামি রহুল কুদুসের কাছে পাঠান আরও টাকার জন্য। ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১০ নং আসামি রহুল কুদুসের কাছ থেকে ২০০০ টাকা সংগ্রহ করেন এবং তা ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে দেন। এরপর ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবকে ৬০০০ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম পাঠান এবং চট্টগ্রাম থেকে ওই টাকা ব্যবসায়ীদের জাহাজের মাধ্যমে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে পাঠানাের ব্যবস্থা করতে বলেন। ৩৪, প্রায় একই দিনে ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন গ্রুপের জন্য ১০৭, দীননাথ সেন রােড, ঢাকা এই ঠিকানায় একটি বাড়িভাড়া করেন। এই বাড়িতে যে টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয় তার নম্বর ৮২৪৫২। ৩৫. ১৯৬৬ সালের ৬ এপ্রিল ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ৩নং সাক্ষী আমীর হোেসনের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠির সঙ্গে কয়েক দিন আগে তাঁর কাছে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পাঠানোে টাকার একনলেজমেন্ট রিসিটও ছিল। এই চিঠিতে তিনি ছদ্ম ভাষায় তাদের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ও অন্যান্য জিনিসপত্র প্রয়ােজন তার কথা লেখেন এবং ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে একটি বাজেট তৈরি করতে বলেন। কিন্তু ৩ নং সাক্ষী আমীর হােসেন অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত না থাকার কারণে তিনি স্থির করলেন যে, যতিদন পর্যন্ত ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান বাজেট না চান ততদিন তিনি কোনাে বাজেট করবেন না। ৩৬. এরপরই ১৯৬৬ সালের ৮ এপ্রিল ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছ থেকে আরেকটি চিঠি পান যাতে তুষারকে (৬নং আসামি এ.এফ. রহমানের ছদ্মনাম) জানাতে বলেন যে, তিনি ১৯৬৬ সালের ২২ এপ্রিল স্থানান্তরিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসছেন।

৩৭. ওই একই মাসে (এপ্রিল, ১৯৬৬) ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডির বাড়িতে ১২নং আসামি মানিক চৌধুরীকে ডেকে পাঠান। মানিক চৌধুরী সেখানে গিয়ে দেখেন যে, ৪নং আসামি সুলতান সেখানে আগেই উপস্থিত হয়েছে। ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরীকে ৪নং আসামি সুলতানের কাছে টাকা দিতে বলেন। এর তিন/চারদিন পরে ১২নং আসামি মানিক চৌধুরী ৪১, রামজয় মহাজন লেন, চট্টগ্রাম ঠিকানায় তার বাসায় ৪নং আসামি সুলতানকে ডেকে পাঠান এবং ষড়যন্ত্রকে সফল করার জন্য তাঁকে ১৫০০ টাকা দেন। ৩৮. একই মাসে (এপ্রিল, ১৯৬৬) ১১ নং সাক্ষী মােহসিনকে ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান তার ঢাকাস্থ ধানমন্ডির বাসভবনে ডেকে পাঠান এবং অত্যন্ত সতর্কতা ও গােপনীয়তার সঙ্গে বলেন যে, তিনি বর্তমান ও প্রাক্তন সৈনিকদের সহ একটি বিপ্লবী গ্রুপ গঠন করছেন, তিনি যেন তাঁর এ গ্রুপ পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। ৩৯, ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসের শেষ কিংবা মে মাসের শুরুর দিকে কোনাে এক সময় চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হবার পর ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের সঙ্গে ঢাকাস্থ গেন্ডারিয়ার ১০৭, দীননাথ সেন রােডে তার বাসায় দেখা করেন।

দুজনের মধ্যে সেখানে গ্রুপের পক্ষ থেকে টাকা পয়সা সংগ্রহ এবং গ্রুপের কাজকর্মের খরচ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা হয়। এতে গ্রুপের নামে যে বিরাট অঙ্কের অর্থ খরচের হিসাব দেখা যায় তা ২নং আসামি মােয়াজ্জেম সঠিক বলে মেনে নিতে পারেন না। ফলে ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন এবং ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন। ওই দিন সন্ধ্যায়ই ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন ড. খালেকের বাড়িতে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছে নগদ ৮০০০ টাকা, দুটি ক্যাশ বই এবং হিসাবের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য কাগজপত্র হস্তান্তর করেন। ড. খালেকের এই বাড়ির ঠিকানা: রােড নং-২, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা এবং এই বাড়িতেই তখন ২নং আসামি মােয়াজ্জেম অবস্থান করছিলেন। ওই বাড়টির নাম ‘আলেয়া’। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম তখন ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনকে তার দীননাথ সেনের বাসা ভাড়া মিটাবার জন্য ১৫০০ টাকা দেন। এরপর ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেন এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ৪০. ১৯৬৬ সালের ১০ মে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম চট্টগ্রামের নৌঘাটিতে নিয়ােগপ্রাপ্ত হন। সেখানে নিয়ােগ পাবার পরই তিনি গ্রুপের একটি সভা আহ্বান করেন। এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমানের ‘আউটার হাউস’-এ। সাইদুর রহমান এইবাড়িটিগ্রুপের সভাস্থল হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। এই ‘আউটার হাউস’ চট্টগ্রামের এনায়েত হােসেন মার্কেট এলাকায় অবস্থিত। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন:

১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. মানিক চৌধুরী, আসামি নং-১২ ৫. মুহাম্মদ খুরশীদ, আসামি নং-১৮ এবং ৬. সাইদুর রহমান, সাক্ষী নং-৭।

১২নং আসামি মানিক চৌধুরী এবং ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমান এই সভার কার্যবিবরণীর বহির্ভূত ছিলেন। ৪১. ১৯৬৬ সালের ৬ মে, ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু সুনির্দিষ্ট কার্যকলাপের দায়ে পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পরই তাকে ডিটেনশন দেওয়া হয় এবং এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকার কারণে তাঁকে জেলে পাঠানাে হয়। পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে ডিটেনশন খাটার সময়ও অন্যান্য কতিপয় মামলায় তার বিচার হয়। ৪২. ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বোক্ত গ্রেপ্তার বরণের পরে তিনি যে রাজনৈতিক দলের সদস্য সেই দল তার বাসভবনে ১৯৬৬ সালের ২০ মে একটি জরুরি সভায় আয়ােজন। করে। ১২নং আসামি মানিক চৌধুরী এই সভায় যােগদান করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যান। সভায় যােগদান করার পূর্বে ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে নিয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মি. পি.এন, ওঝার কার্যালয়ে যান। মি. পি.এন, ওঝা সাইদুর রহমানের পরিচয় ইত্যাদি লিখে রাখেন এবং পরে আবার মাঝে মাঝে ওখানে যাবার জন্য বলেন। ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমান সেখান থেকে বের হয়ে আসার পরও ১২নং আসামি মানিক চৌধুরী অনেকক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন। ৪৩. ১৯৬৬ সালের ২০ ও ২১ মের মধ্যবর্তী রাতে ১২নং আসামি মানিক চৌধুরী এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কতিপয় কার্যকলাপের দায়ে পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন। ৪৪. ওই একই মাসে (মে, ১৯৬৬) ১২নং আসামি মানিক চৌধুরীর গ্রেপ্তারের পর ২নং আসামি মােয়াজ্জেম পূর্বোক্ত ‘আউটার হাউস’-এর ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের আরও দুটি সভা। আহ্বান করেন। এই সভা দুটোতে উপস্থিত ছিলেন:

১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. স্টুয়ার্ড-মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. খুরশীদ, আসামি নং-১৮ এবং ৫. সাইদুর রহমান, সাক্ষী নং-৭। এই সভাসমূহে গ্রুপের বিভিন্ন সদস্যের কাজ ভাগ করে দেওয়া হয় এবং কোন পদ্ধতিতে কাজ করলে সাফল্য নিশ্চিত সে সম্পর্কে আলােচনা করা হয়। ঢাকা, কুমিল্লা, যশাের ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং চট্টগ্রাম নৌঘাটির ম্যাপ মূল্যায়ন করা হয় এবং আরও বেশি অর্থ। ও অস্ত্র সংগ্রহের প্রয়ােজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। ৪৫. ওই একই মাসে (মে, ১৯৬৬) চট্টগ্রামে পি.আই.এ-র জেলা ম্যানেজার ১২নং সাক্ষী মি, এম,এম, রমিজ ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের সংস্পর্শে আসেন এবং ষড়যন্ত্রে যােগ দেন। ৪৬. ১২নং সাক্ষী রমিজের পরই ষড়যন্ত্রকারীদের দলে যােগ দেন ১৯নং আসামি মি, কে.এম. শামসুর রহমান সি.এস.পি। তিনি তখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৪৭. ওই একই মাসে (মে, ১৯৬৬) ৯নং সাক্ষী আশরাফ আলী এবং ৮ নং আসামি সামাদ ১০০/৩, আজিমপুর রােড, ঢাকা ঠিকানায় গ্রুপের খরচে ‘সিটি’ নামে একটি বাড়ি ভাড়া করেন। এরপর ওই দুই ব্যক্তি তাদের পূর্ববর্তী আবাসস্থল ৩নং সাক্ষী আমীর হােসেনের বাড়ি থেকে এই নতুন ভাড়া নেওয়া বাড়িতে স্থানান্তরিত হন। ৪৮. ১৯৬৬ সালের জুন মাসে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হাউজিং সােসাইটির তার বাসায় ১২ নং সাক্ষী রমিজকে একটি ডায়রি, একটি নােট বুক এবং একটি ফোল্ডার দিয়ে সেগুলাে পড়তে বলেন। এই সমস্ত প্রমাণপত্রে প্রস্তাবিত স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের রূপ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা ছিল। এতে বলা হয় যে, সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে নেয়া হবে। শিল্প-কলকারখানা জাতীয়করণ করা হবে এবং মুদ্রার পরিবর্তে কুপন পদ্ধতি চালু করা হবে। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম তাকে নতুন রাষ্ট্রের সবুজ ও গােলাপী রংয়ের পতাকাও দেখিয়েছেন। ৪৯. এরপর ওই মাসেই (জুন, ১৯৬৬) ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২নং সাক্ষী রমিজের বাসায় পি.আই.এ হাউস-৬০, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম ঠিকানায় একটি সভা আহ্বান করেন। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন:

১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২। ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. খুরশীদ, আসামি নং-৩৪ ৪. রিসালদার শামসুল হক, এ.সি, আসামি নং-২০ ৫. হাবিলদার আজিজুল হক, এসএসজি, আসামি নং-২১ এবং ৬. রমিজ, সাক্ষী নং-১২।

এ সভার উদ্দেশ্য ছিল গ্রুপের প্রথম সারির কর্মীদের সঙ্গে রমিজকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। ওপরে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা ছাড়াও ওই সভায় আরও অনেক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি।

৫০. ওই মাসেরই শেষ দিকে (জুন, ১৯৬৬) ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম তার বাসা নাসিরাবাদ হাউজিং সােসাইটি, চট্টগ্রামে একটি সভা আহ্বান করেন। নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন:

১. মােয়াজ্জেম, আসামি-২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. সুবেদার রাজ্জাক, আসামি নং-১৪ ৫. জহুরুল হক, আসামি নং-১৭ ৬. খুরশীদ, আসামি নং-১৮ ৭. রিসালদার শামসুল হক, আসামি নং-২০ ৮. আশরাফ আলী, সাক্ষী নং-৯ এবং ৯. ইউসুফ, সাক্ষী নং-১০।

(এই সভায় আরও একজন উপস্থিত ছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল সার্জেন্ট শফি। কিন্তু তার পরিচয় উদ্ঘাটন করা যায়নি। এই সভায় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম সবাইকে তার ডায়রি এবং নােট বুক দেখান যাতে বাংলাদেশ নামে প্রস্তাবিত নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধান দিকগুলাে লিপিবদ্ধ ছিল। প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকাও সেখানে দেখানাে হয়। ৫১. ১৯৬৬ সালের জুন/জুলাই মাসে ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যকার ষড়যন্ত্রকারীদের একটি সভা আহ্বান করেন। তার বাসা-কোয়ার্টার নং ২৫/৩, আবিসিনিয়া লাইন, করাচি ঠিকানায় আহূত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. নূর মােহাম্মদ, আসামি নং-৫ ২. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ ৩. এসএসসি মাহফুজুল বারী, আসামি নং-২২ ৪. মােশারফ, সাক্ষী নং-৫ ৫. করপােরাল জামাল উদ্দিন আহমেদ, সাক্ষী নং-১৪ এবং ৬. করপোেরাল সিরাজুল ইসলাম, সাক্ষী নং-১৫ এই সভায়ও অন্যান্য কয়েকজন উপস্থিত ছিল যাদের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। এ সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ৫ নং আসামি নূর মােহাম্মদের উপস্থিতি। কারণ তিনি এসেছিলেন নৌবাহিনী থেকে। ৭নং আসামি মফিজউল্লাহর অনুরােধে ঢাকা থেকে সদ্য প্রত্যাগত ১৪ নং সাক্ষী করপােরাল জামাল এই সভায় উপস্থিত সদস্যদের সামনে। পূর্ব পাকিস্তানে ষড়যন্ত্রকারীদের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন এবং উল্লেখ করেন যে, ১নং আসামি শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য কয়েকজন উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা তাদের ভূমিকা আরও সক্রিয় করে তুলেছেন। ১৫ নং সাক্ষী সিরাজ তখন ছুটিতে যাচ্ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। ৭নং আসামি মফিজউল্লাহ তাকে বলেন যে, তিনি যেন পূর্ব

পাকিস্তানে অবস্থানরত ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যােগাযােগ করার জন্য প্রথমে ঢাকাস্থ পিএএফ স্টেশনে ১১ নং আসামি ফজলুল হক এবং ২৩নং আসামি সার্জেন্ট শামসুল হক পিএএফএর সঙ্গে যােগাযােগ করেন। ৫২. ১৯৬৬ সালের জুন/জুলাই মাসের কোনাে এক সময় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং ১২ নং সাক্ষী রমিজ কুমিল্লা সফর করার আয়ােজন করেন। তাই ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবকে প্রায়ই কুমিল্লা পাঠানাে হয় এই খবরটি মেজর (তল্কালীন ক্যাপটেন) ২৪ নং আসামি শামসুল আলম এএমসি-কে পৌছাবার জন্য। ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং ১২ নং সাক্ষী রমিজ মােয়াজ্জেমের গাড়িতে, হিলম্যান আইএম পি নং ৯৫৯১, করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। তারা ২৪ নং আসামি শামসুল আলমের কুমিল্লা শহরস্থ বাসভবনে যান এবং সেখানে বালুচ রেজিমেন্টের ক্যাপটেন মােহাম্মদ আবদুল মােতালিবের সাক্ষাৎ পান। ২৪ নং আসামি শামসুল আলম কুমিল্লার সেক্টর কমাণ্ডারের দায়িত্ব পালনের কথা বলেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝাচ্ছিলেন যে, পরিকল্পনা কার্যকরী করার সময় সামরিক ইউনিটসমূহের অস্ত্র ভাণ্ডারগুলাে দখল করে ফেলে তাদের যুদ্ধ করার সামর্থকে অচল করে দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি দক্ষ জনশক্তির অভাব অনুভব করেন। তিনি শামসুল আলমকে চাকরিরত ও প্রাক্তন সৈনিকদের সঙ্গে তার যােগাযোেগ বৃদ্ধি করতে বলেন। ২৫ নং আসামি মােতালিব বলেন যে, তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এর একজন সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। পরে তাদের পাঁচজনকে একটি গাড়িতে করে কুমিল্লা সেনানিবাসে ২৬ নং আসামি মােহাম্মদ শওকত আলী মিয়া এওসি-এর বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তাদের সঙ্গে ৩ নং আসামি স্টয়ার্ড মুজিবও যােগ দেন। ২৬ নং আসামি শওকত ২নং আসামি মােয়াজ্জেমকে জানান যে, তিনি ঢাকাতে ১৩ নং সাক্ষী ক্যাপটেন মােহাম্মদ আবদুল আলীম ভূঁইয়া এওসি এবং ২৭ নং আসামি ক্যাপটেন খন্দকার নাজমুল হুদা এওসি-এর সঙ্গে যােগাযােগ করেছেন এবং ওই দুজন অফিসারই সংগঠন সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে চেয়েছেন। এমতাবস্থায় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম কথা দেন যে, অবিলম্বে ঢাকাতে একটি সভা আহ্বান করা হবে। ৫৩, একই মাসে (জুলাই ১৯৬৬) ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের এক বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায়। সেখানে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানের কাছে প্রকাশ করেন যে, ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী গ্রেপ্তারের আগেই অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের জন্য ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনারের ফার্স্ট সেক্রেটারির কাছে প্রয়ােজনীয় অস্ত্রশস্ত্রের একটি তালিকা পৌছে দেবার কথা। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম এরপর ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি মি.পি.এন ওঝাকে চিনেন কিনা। ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমান এ প্রশ্নের হা-সূচক জবাব দেন। ফলে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম তাকে অনুরােধ করেন, মি. পি। এন, ওঝার কাছে অস্ত্রশস্ত্রের একটি তালিকা পৌছে দেবার জন্য। ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমান সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তার ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে ওই কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

৫৪. অল্প কয়েকদিন পরে একদিন সকালবেলা মিমি.পিএন ওঝা ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানের চট্টগ্রামের বাসভবনে এসে হাজির হন এবং অনুযােগের ভাষায় তাকে বলেন যে, তার অনুরােধ সত্ত্বেও তিনি (৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমান) তাঁর ঢাকাস্থ অফিসে দেখা করেন নি। তখন সেইখানে বসেই ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমান মি. পি.এ ওঝাকে অস্ত্রশস্ত্রের তালিকা সংক্রান্ত ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের দেওয়া সংবাদটি জ্ঞাপন করান। ৫৫. পরের দিন মি. পিএন ওঝার নির্দেশমত ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমান ২নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছ থেকে পূর্বোক্ত অস্ত্রশস্ত্রের তালিকাটি সংগ্রহ করেন এবং তা চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে মি. পিএন ওঝার কাছে হস্তান্তর করেন। সেই সময় মি. পি.এন ওঝা ঢাকাতে তার সঙ্গে যােগাযােগ করার জন্য ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে একটি কোড শব্দ প্রদান করেন এবং ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করতে বলার জন্য ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে বলেন। ৫৬. এর কয়েকদিন পরে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকার ধানমন্ডিস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনারের বাসভবনে মি.পি.এন ওঝার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার আয়ােজন করেন। সেখানে পিএন ওঝা ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে আশ্বাস দেন যে, তিনি তাঁর (২নং আসামি মােয়াজ্জেমের) প্রদত্ত অন্ত্রের তালিকা ভারত সরকারের অনুমােদনের জন্য পাঠাবেন এবং তিনি সাময়িকভাবে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে অর্থ। সরবরাহ করতে অপারগ বলে জানান। ৫৭. ১৯৬৬ সালের আগস্ট মাসের কোনাে এক সময় ২৬ নং আসামি শওকত ঢাকা সফর করেন এবং ১৩ নং সাক্ষী আলীমের সঙ্গে অর্ডিন্যান্স মেসে অবস্থান করেন। ওই সন্ধ্যায়ই ২নং আসামি মােয়াজ্জেম পূর্বোক্ত মেসে ১৩ নং সাক্ষী আলীম এবং ২৬ নং আসামি শওকতের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ঘোেষণা করেন যে, আগামীকাল সকালে ১২ নং সাক্ষী রমিজের মােহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের বাসায় তিনি। একটি সভা আহ্বান করেছেন। এই সভায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. নাজমুল হুদা, আসামি নং-২৭ ৫. শওকত, আসামি নং-২৬ এবং ৬. আলীম, সাক্ষী নং-১৩। এই সভায় ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ষড়যন্ত্রকারীদেরকে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত একটি ডায়েরি এবং একটি নােটবুক দেখান। ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এতে দাবি করেন যে, তিনি ষড়যন্ত্রের জন্য প্রয়ােজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের জন্য ইতিমধ্যেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যােগাযােগ করেছেন। সভায় তিনি এ আশা ব্যক্ত করেন যে, উপস্থিত সদস্যরা যশাের এবং রংপুর অঞ্চলে কাজ পরিচালনার জন্য গ্রুপে আরও কিছু সামরিক

অফিসার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবেন। তিনি দাবি করেন যে, চট্টগ্রামের কাজ সমাধা করার জন্য ২৮ নং আসামি ক্যাপ্টেন এ.এন.এম নুরুজ্জামান এবং তাঁর নিজস্ব নৌবাহিনী যথেষ্ট। ২৫ নং আসামি মােতালেব এবং ২৪ নং আসামি শামসুল আলম কুমিল্লায় যেভাবে কাজ করেছেন ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এই সভায় তার প্রশংসা করেন। ৫৮, ওই একই মাসে (আগস্ট, ১৯৬৬) ২৭ নং আসামি নাজমুল হুদা, ২৪ নং আসামি শামসুল আলম, ১৩ নং সাক্ষী আলীম এবং ২৬ নং আসামি শওকত দাউদকান্দি রেস্ট হাউসে মিলিত হন। তারা উপলব্ধি করেন যে, ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্ব কয়েকজন প্রবীণ (সিনিয়র) সামরিক অফিসারের ওপর অর্পিত হওয়া উচিত। তারা স্থির করলেন যে, তারা ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছ থেকে গ্রুপের সংগঠনের সংখ্যা ও পরিচয় জেনে নিবেন। ৫৯, ওই একই মাসে (আগস্ট, ১৯৬৬) ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম গ্রুপের তহবিল থেকে গ্রুপের কাজের সুবিধার্থে একটি গাড়ি কিনতে সাহায্য করার জন্য ১২ নং সাক্ষী রমিজকে ৫০০০ টাকা প্রদান করেন। ৬০. ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোনাে এক সময় ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২ নং সাক্ষী রমিজের মােহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের ১২-৮/৮ নং ফ্লাটে একটি সভা আহ্বান করেন। নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৮ ৪. শামসুর রহমান, আসামি নং-২৯ ৫. শামসুল আলম, আসামি নং -২৪ ৬. মােতালেব, আসামি নং-২৫ ৭. নাজমুল হুদা, আসামি নং-২৭ ৮. রমিজ, সাক্ষী নং-১২ এবং ৯. আলীম, সাক্ষী নং-১৩। এই সভায় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে প্রকাশ করেন যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তিনি ২৫ নং আসামি মােতালেবকে বিস্তৃতভাবে বুঝিয়ে বলেন যে, প্রাক্তন সৈনিকদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে সংগঠিত করতে হবে এবং তাদেরকে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম বিভিন্ন সেক্টরের সেক্টর কমাণ্ডারদের আর্থিক প্রয়ােজনের বিষয়টি নােট করে নেন। ২৭ নং আসামি নাজমুল হুদা, ২৪ নং আসামি। শামসুল আলম এবং ২৩ নং সাক্ষী আলীম সভার কার্যবিবরণীতে হস্তক্ষেপ করে প্রস্তাব করেন যে, নেতৃত্ব কয়েকজন প্রবীণ (সিনিয়র) সামরিক অফিসারের ওপর ন্যস্ত হওয়া প্রয়ােজন। ১৯ নং আসামি শামসুর রহমান এ বিষয়ক আলােচনা সংক্ষিপ্ত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এমএজি ওসমানীর সঙ্গে যােগাযােগ করার কথা বলেন। ২ নং আসামি

মােয়াজ্জেম ঘােষণা করেন যে, স্বাধীনতা লাভের পরই দেশে সামরিক আইন জারি করা। হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১২ নং সাক্ষী রমিজ মত প্রকাশ করে বলেন যে, সামরিক অভ্যুত্থান চলাকালীন যােগাযােগ ব্যবস্থা চালু রাখা হবে পিআইএ এবং পিএএফ এর বিমান এবং রেডিওর মাধ্যমে। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একজন এই মত ব্যক্ত করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানে যে সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানি রয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় যে সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানি বন্দী হবে তাদেরকে বিনিময় করা হবে। ৬১. ওই একই মাসে (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬) ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমান দ্বিতীয়বারের মত ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মি. পিএন ওঝার মধ্যে পূর্বোক্ত বাড়িতে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। মি. পিএন, ওঝা ২ নং আসামি। মােয়াজ্জেমকে বলেন যে, ভারত সরকার ষড়যন্ত্রকারীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে এবং তিনি ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহের তারিখ যথাসময়ে জানানাে হবে বলে আশ্বাস দেন। ৬২. ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে ১৯ নং আসামি শামসুর রহমানের পরামর্শে গ্রুপের প্রতি। প্রবীণ সামরিক অফিসারদের সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য ২নং আসামি মােয়াজ্জেম চট্টগ্রামে তার বাসা ‘এ্যাংকরেজ;-এ এক সভা আহ্বান করেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এমএ জি ওসমানী এই সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন। নিম্মােক্ত ব্যক্তিবর্গ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং ২ ২. শামসুর রহমান, আসামি নং ১৯ ৩. রমিজ, সাক্ষী নং ১২। সভায় ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ষড়যন্ত্রের প্রধান প্রধান দিক উল্লেখ করেন। এখানে তিনি একথাও প্রকাশ করেন যে, ভারতের সঙ্গে তিনি একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন। (ধ। মবহঃষবসবহ’ং ধমত্মবসবহঃ’) যার শর্ত অনুযায়ী তারা স্বাধীনতা ঘােষণার পর পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সীমা অতিক্রম করবে না এবং পশ্চিম পাকিস্তানের যে কোনাে বাধা বা হস্তক্ষেপকে তারা সমুদ্র ও আকাশপথে বাধা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বিদ্রোহকে সমর্থন করবে। কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানী কথাবার্তাগুলাে কেবল শুনেছিলেনই। ৬৩, ১৯৬৬ সালের অক্টোবর মাসে ৭নং সাক্ষী সাইদুর রহমান ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং মি. পিএন ওঝার মধ্যে ঢাকাস্থ ধানমন্ডির পূর্বোক্ত বাড়িতে তৃতীয়বারের মত একটি সভার আয়ােজন করেন। এই সভায় মি. পি.এন ওঝা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের কারণে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করার তারিখ নির্ধারণ করা যায়নি। মি. ওঝা ষড়যন্ত্রকারীদেরকে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের জন্য ভারতের সাধারণ নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার উপদেশ দেন।

৬৪. ওই একই মাসে (অক্টোবর, ১৯৬৬) ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১১ নং সাক্ষী | মােহসিনের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য বলেন। ১১ নং সাক্ষী মােহসিন তাকে ২০০০ টাকা দেন। ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব বলেন যে, অস্ত্রশস্ত্র এবং গােলাবারুদ সংগ্রহের জন্য তিন/চার লাখ টাকা প্রয়ােজন। এতে ১১ নং সাক্ষী ভয় পেয়ে ক্ষেপে যান এবং ৩ নং | আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবকে তক্ষুণি তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। ৬৫. ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি কিংবা তার দু’একদিন আগে-পরে ১২ নং আসামি | মানিক চৌধুরী ডিটেকশন আদেশ থেকে মুক্তি পান। ৬৬. ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ ঢাকা আসেন এবং |

পভুক্ত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকাস্থ আওলাদ হােসেন মার্কেটে ১৬ নং আসামি এমএ রাজ্জাকের দোকানে। নিম্মােক্তরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭। ২. এমএ রাজ্জাক, আসামি নং-১৬ ৩. সার্জেন্ট শামসুল হক, আসামি নং ২৩ এবং ৪. সিরাজ, সাক্ষী নং ১৫। এই সভায় আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন যাদের পরিচয় উদ্ধার করা যায় নি। ষড়যন্ত্রকারীদের সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এই সভার আলােচ্য বিষয়। ৬৭. ১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের চাকরি পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ | জল পরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে স্থানান্তর করা হয় এবং তাকে বরিশাল পােস্টিং দেওয়া হয়। ৬৮, ১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে ১৫ নং সাক্ষী সিরাজ এবং ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ। উভয়েই করাচিতে ফিরে আসেন। ৬৯, ওই একই মাসে (মার্চ, ১৯৬৭) ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২ নং আসামি মানিক। চৌধুরীর মাধ্যমে মি. পিএন ওঝার ঢাকাস্থ বাসভবনে তাঁর সঙ্গে চতুর্থ বৈঠকের আয়ােজন | করেন। তিনি তাদেরকে জানান যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহের তারিখ নির্ধারিত হবে না। মি. ওঝা তাদের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। সভা শেষে পি.এন ওঝা তাদেরকে নগদ ৫০০০ টাকা দেন। | ৭০. ১৯৬৭ সালের ৩১ মার্চ ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম, ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী ও | ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পিএন ওঝার সঙ্গে তাঁর ঢাকাস্থ বাসভবনে | পঞ্চমবারের মত সাক্ষাৎ করেন। এই সভায় মি. পিএন ওঝা বলেন যে, ভারত সরকার | মনে করে যে, অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করার আগে ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তার একটি বৈঠক হওয়া প্রয়ােজন। মি. পিএন ওঝা ওই | বৈঠকের স্থান হিসেবে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে অনতিদূরে ভারতের আগরতলার কথা | বলেন। তিনি ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের তিনজন প্রতিনিধির নাম | প্রস্তাব করতে বলেন। এই সভার পর মি. ওঝা তাঁদেরকে ১০,০০০ টাকা দেন।

৭১. ওই একই মাসে (মার্চ, ১৯৬৭) ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম, ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব এবং ১২ নং সাক্ষী রমিজ ঢাকার মােহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের ১২ নং সাক্ষী রমিজের বাসভবনে মিলিত হন। সেখানে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২ নং সাক্ষী রমিজকে বলেন যে, তার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ টাকা রয়েছে যা পিএন ওঝার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, তারা ১০ নং আসামি রুহুল কুদ্স এবং ৬ নং আসামি এএফ রহমানের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেছেন। এই সভায় ষড়যন্ত্রকারীরা সভা অনুষ্ঠান এবং সার্বক্ষণিক কর্মীদের থাকার জন্য আরেকটি বাড়ি ভাড়া করার কথা স্থির করেন। ষড়যন্ত্রকারীদের কার্যকলাপ গােপন রাখার জন্য একটি লােক দেখানাে ব্যবসা ভােলার বিষয়ও এখানে স্থির করা হয়। ১২ নং সাক্ষী রমিজ এ ধরনের একটি ব্যবসা চালু করতে সাহায্য করার জন্য ১৬ নং আসামি, তার বন্ধু, আবু শামস লুৎফুল হুদার নাম প্রস্তাব করেন। ৭২. ওই একই মাসে (মার্চ, ১৯৬৭) আরেকটি গ্রুপ সভা অনুষ্ঠিত হয় পূর্বোক্ত ফ্লাটেই। নিম্নোক্তরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং ২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং ৩ ৩. সামাদ, আসামি নং ৮ ৪. শামসুর রহমান, আসামি নং ১৯ ৫. মােতালেব, আসামি নং ২৫ ৬. রমিজ, সাক্ষী নং ১২ এবং ৭. লুৎফুল হুদা, সাক্ষী নং ১৬। এই সভায় একটি ট্রান্সমিটার সেট সগ্রহ করা এবং ট্রান্সমিটার অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলাে আলােচনা করা হয়। এখানে আরও একটি বিষয় স্থির করা হয় যে, গ্রুপের কার্যকলাপ ঢাকা দেবার জন্য যে ব্যবসা চালু করা হচ্ছে সে বাবদ ১২ নং সাক্ষী রমিজের নিয়ন্ত্রণাধীনে একটি বড় অঙ্কের টাকা আলাদা করে রাখা হবে। ৭৩. অল্প কয়েকদিন পরেই (মার্চ, ১৯৬৭) ১২ নং সাক্ষী রমিজ ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের কাছ থেকে ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবের মাধ্যমে ২৫,০০০ টাকা গ্রহণ করেন। এই টাকা থেকে ১২ নং সাক্ষী রমিজ ব্যবসায়ে খাটানাের জন্য ১৬ নং সাক্ষী লুৎফুল হুদাকে ৫০০০ টাকা দেন। বাকি ২০,০০০ টাকার মধ্যে ১৮,৬৮৯ টাকা ১২ নং সাক্ষী রমিজ ষড়যন্ত্রকারীদের বিবিধ পর্যায়ের কাজে খরচ হিসেবে দেখান। ৭৪. ১৯৬৭ সালের ১৪ মার্চ ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব সার্বক্ষণিকভাবে ষড়যন্ত্রমূলক কাজে নিয়ােজিত থাকার দায়ে পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পরিত্যক্ত হন। ৭৫. এর প্রায় পনের দিন পরে (মার্চ, ১৯৬৭) ১৯ নং আসামি শামসুর রহমান ফরিদপুরের ডেপুটি কমিশনার মি. সিদ্দিকুর রহমানের কাছে তাঁর বন্ধু মি. মুজিবুর রহমানকে সাহায্য করার জন্য একটি চিঠি লেখেন। ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব ১৬ নং সাক্ষী লুৎফুল

হুদাসহ ফরিদপুরে যান এবং মি. সিদ্দিকুর রহমানের কাছে ওই চিঠি হস্তান্তর করেন। ৭৬, ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকাস্থ গ্রিন স্কোয়ারের ১৩ নং বাড়িটি গ্রুপের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালের ১ মে এই বাড়িতে ওঠা হয়। নিম্নোক্ত সার্বক্ষণিক কর্মিগণ সেই বাড়িতে থাকতেন। ১. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ২. সামাদ, আসামি নং-৮ ৩. দলিল উদ্দিন, আসামি নং-৯ ৪. প্রাক্তন সুবেদার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সাক্ষী নং-১৭ এবং ৫. মােহাম্মদ গােলাম আহমেদ, সাক্ষী নং-১৮। ২নং আসামি মােয়াজ্জেম তার হিলম্যান গাড়িটিও গ্রুপের কাজে ব্যবহারের জন্য ৩নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবের নিয়ন্ত্রণাধীনে ওই বাড়িতে রাখেন। এই গাড়ির নম্বর ‘হিলম্যান নং-ইবিএ-৯৫৯১। ৭৭. ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসের কোনাে এক সময় ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ ১৯ নং সাক্ষী করপােরাল হাই একেএমএ-এর সঙ্গে তার কোয়ার্টার ডমেস্টিক এরিয়া পিএএফ. কোরাঙ্গী ক্রিক করাচিতে সাক্ষাৎ করেন। ৭নং আসামি মফিজউল্লাহ সেখানে ডেকোরেশন পিস হিসেবে একটি নকল হ্যান্ড গ্রেনেড দেখতে পান এবং ১৯ নং সাক্ষী হাই সাহেবের কাছ থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ৭৮, ১৯৬৭ সালের মে মাসে ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ ২৯ নং আসামি সার্জেন্ট জলিলের বাসায় একটি সভা আহ্বান করেন। এই বাসার ঠিকানা হচ্ছে-১৪/৪ জি, ক্লেটন কোয়ার্টার্স, করাচি। নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ ২. বারী, আসামি নং-২২ ৩. সার্জেন্ট সামসুল হক, আসামি নং-২৩ ৪. সার্জেন্ট আবদুল জলিল, আসামি নং-২৯ ৫. মােহাম্মদ মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, আসামি নং-৩০ ৬. শামসুদ্দিন, সাক্ষী নং-৬ ৭. করপােরাল জামাল, সাক্ষী নং-১৪ এবং ৮. সিরাজ, সাক্ষী নং-১৫ ওই সভায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত এবং সেখানে গ্রুপের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ২৩ নং আসামি সার্জেন্ট শামসুল হক উপস্থিত সবাইকে জানান যে, ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে সফল হয়েছেন। তিনি ওই সভায় উপস্থিত ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেন, যে ‘ডি’ দিবসে পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনগণ সামরিক অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকবে। সভা শেষে ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ তাঁর পকেট থেকে একটি নকল হ্যান্ড গ্রেনেড বের করেন এবং সবার সামনে সেটি নিক্ষেপ করার নিয়ম পদ্ধতি প্রদর্শন করেন। তিনি গ্রুপের সকল সদস্যকেও অনুরূপভাবে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অনুশীলন করতে বলেন। পরে এটি ২৯ নং আসামি জলিলের বাসায় রেখে যান। তিনি বলেন যে, তিনি হ্যান্ড গ্রেনেডটি যেভাবে সংগ্রহ করেছেন সেভাবে আরও ছােট ছােট অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে সেগুলাের ব্যবহারের প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। ৭৯, ১৯৬৭ সালের মে মাসের কোনাে এক সময় ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ ১৫ নং সাক্ষী সিরাজের কাছে প্রকাশ করেন যে, ৬ নং সাক্ষী শামসুদ্দিনও তাদের গ্রুপের একজন সদস্য ছিল এবং বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা ৩১ নং আসামি লেফটেন্যান্ট এসএম এম রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। ৭ নং আসামি মফিজউল্লাহ করাচিস্থ কারসায অফিসার্স কোয়ার্টার্সে ৩১ নং আসামি লেফটেন্যান্ট রহমানের বাসায় অনুষ্ঠিতব্য সভায় ৬নং সাক্ষী সামসুদ্দিন এবং ৩০ নং আসামি মাহবুব উদ্দিনকে হাজির করানাের জন্য ১৫ নং সাক্ষী সিরাজকে নির্দেশ দেন। ৮০. একই মাসের (মে, ১৯৬৭) নির্ধারিত দিনে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ ৩১ নং আসামি লেফটেন্যান্ট রহমানের বাসায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ ২. লে. রহমান, আসামি নং-৩১ ৩. মাহবুব উদ্দিন, আসামি নং-৩০ ৪. সামসুদ্দিন, সাক্ষী নং-৬ এবং ৫. সিরাজ, সাক্ষী নং-১৫ এ ছাড়া, কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন যাদের পরিচয় উদঘাটন করা যায়নি। সভায় গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাধারণ আলােচনা হবার পরও ৩১ নং আসামি লে, রহমান উপস্থিতদের উদ্দেশে বলেন যে, আরও বেশিসংখ্যক বাঙালি চাকরিরত কিংবা প্রাক্তন সৈনিককে গ্রুপে সংগঠিত করতে হবে এবং তাদেরকে পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করার পথ। ও পদ্ধতি বের করতে হবে। ১৮, ১৯৬৭ সালের জুন মাসের শেষদিকে কোনাে একদিন ২নং আসামি মােয়াজ্জেম গ্রুপের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৭ নং সাক্ষী জালাল এবং ৮ নং আসামি সামাদকে এক সফরে পাঠান। এই সূত্রে ওই দুই ব্যক্তি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং যশাের সফর করেন। তারা খুলনায় প্রাক্তন সুবেদার ৩২ নং আসামি একেএম তাজুল। ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সে অঞ্চলে গ্রুপের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। ৩২ নং আসামি তাজুল ইসলাম তাঁর সংগৃহীত ষড়যন্ত্রকারীদেরকে ওই সফরকারী দলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ৮১. ১৯৬৭ সালের জুন মাসের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে ৩১ নং আসামি লে. রহমান পূর্বোক্ত গ্রুপের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, তাঁর বাসা-বাংলাে নং-ই/১৬, অফিসার্স কোয়ার্টার, কারসায, করাচিতে এক সভা অনুষ্ঠান করেন। নিম্নোক্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ওই

সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. মফিজউল্লাহ, আসামি নং ৭

২. বারী, আসামি নং ২২ ৩. মাহবুব উদ্দিন, আসামি নং ৩০ ৪. লে. রহমান, আসামি নং ৩১ ৫. সার্জেন্ট সামসুদ্দিন, সাক্ষী নং ৬ এবং ৬. সিরাজ, সাক্ষী নং ১৫। আরও অল্প কয়েকজন এই সভায় উপস্থিত ছিলেন যাদেরকে চিহ্নিত করা যায়নি। সভায়। ৩১ নং আসামি লে. রহমান অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন যে, ২নং আসামি মােয়াজ্জেম গ্রুপে নতুন অন্তর্ভুক্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ পাঠিয়েছেন। ৩০ নং আসামী মাহবুব উদ্দিন এবং ২২ নং আসামি বারীর পরামর্শক্রমে৩১ নং আসামি লে. রহমান ৬নং সাক্ষী সামসুদ্দিনকে (তিনি তখন ঢাকায় স্থানান্তর হয়ে যাচ্ছিলেন) নির্দেশ দেন যে, তিনি যেনাে ঢাকায় গিয়ে। ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের সঙ্গে যােগাযােগ করেন এবং জেনে নেন যে তিনি (২নং আসামি মােয়াজ্জেম) ঢাকাতে তার (৩১ নং আসামি লে. রহমানের) উপস্থিতি কামনা করে কি না। যদি তা করেন তাহলে ৬ নং সাক্ষী সামসুদ্দিন যেন তাঁকে এই মর্মে একটি টেলিগ্রাম পাঠান যে, বজলু গুরুতর অসুস্থ, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে।’ ২২ নং আসামি বারী এবং ৩০ নং আসামি মাহবুব উদ্দিনের অনুসরণে গ্রুপের সদস্যরা সাময়িকভাবে করাচিন্থ গ্রুপের জন্য কেবল তহবিল সংগ্রহ করবে বলেও সভায় স্থির করা হয়। ৮৩, ১৯৬৭ সালের জুন মাসে ২নং আসামি মােয়াজ্জেম ১৩, গ্রিন স্কোয়ার, ঢাকাতে কয়েকটি সভা আহ্বান করেন। এই সভাগুলােতে নিম্নোক্তরা উপস্থিত ছিলেন: ১. মােয়াজ্জেম, আসামি নং-২ ২. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং-৩ ৩. সুলতান, আসামি নং-৪ ৪. দলিল উদ্দিন, আসামি নং-৯ ৫. রিসালদার শামসুল হক, আসামি নং-২০ ৬. এম. আলী রেজা, আসামি নং-৩৩ ৭. ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দিন আহমদ, এএমসি আসামি নং-৩৪ ৮. রমিজ, সাক্ষী নং-১২ ৯. জালাল উদ্দিন, সাক্ষী নং-১৯ এবং ১০. আনােয়ার হােসাইন, সাক্ষী নং-২০। এই সভাগুলাের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতে যাবার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করা। এই সূত্রে ১৯ নং আসামি শামসুর রহমানকে জার্কাতায় এবং ২৫ নং আসামি মােতালেবকে পেশওয়ারে টেলিগ্রাম করা হয়। কিন্তু তারা আসেননি।

৩৪নং আসামি খুরশীদ সদ্য করাচি থেকে ঢাকা পৌঁছেছেন। তিনি ভারতের আগরতলায় প্রতিনিধি পাঠানাের পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে আলােচনা করেন। পূর্বোক্ত সভাসমূহে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়: ক. সীমান্তের ওপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ৩৩ নং আসামি রেজা এবং তার সঙ্গে ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব প্রতিনিধিত্ব করবেন। খ. প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন ৩৩ নং আসামি রেজা। গ. ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের সদস্যদেরকে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদের যে তালিকা দেখিয়ে ৩৩ নং আসামি রেজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সেই তালিকাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ঘ. আগরতলার সভায় অস্ত্র চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে এবং বর্ধিত আর্থিক সাহায্যের কথা বলা হবে। ঙ, প্রতিনিধিরা ফেনী সীমান্ত দিয়ে গােপনে আগরতলা যাবেন, এবং চ. ১৭ নং আসামি জালাল উদ্দিন প্রতিনিধিদের সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়টি তদারক করবেন এবং এ ব্যাপারে তার প্রভাব খাটাবেন, এমনকি প্রয়ােজন হলে সীমান্তে কর্তব্যরত ইপিআর কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দেবেন যাতে প্রতিনিধিদের সীমান্ত অতিক্রম নিশ্চিত ও নিরাপদ করা যায়। ৮৪. ১৯৬৭ সালের জুন মাসের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরীকে ঢাকায় ডেকে এনে তার হাতে একটি খাম দিয়ে সেটি মি, পিএন ওঝাকে পৌছাতে বলেন। ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী ওইদিন সন্ধ্যায়ই তা করেন। এই খামের মধ্যে ছিল কতগুলাে কোড শব্দ, প্রতিনিধিরা যে স্থান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করবেন তার নাম এবং উপরােল্লেখিত প্রতিনিধিদের নাম। ৮৫. পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৬৭ সালের ১১ জুলাই কথা অনুযায়ী-৩৩ নং আসামি রেজা এবং ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবসহ নিম্নোক্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ফেনী পৌছেন (জেলা নােয়াখালী)। প্রতিনিধিরা যাতে নিরাপদে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের আগরতলা পৌছতে পারেন সেজন্যই অন্যরা তাদের সঙ্গে সীমান্ত পর্যন্ত যান: ১. স্টুয়ার্ড মুজিব, আসামি নং ৩ ২. সামাদ, আসামি নং ৮ ৩. দলিল উদ্দিন, আসামি নং ৯ ৪. রেজা, আসামি নং ৩৩ এবং ৫. জালাল, সাক্ষী নং ১৭। উপরােল্লেখিত ষড়যন্ত্রকারীরা ফেনী রেল স্টেশনের কাছে হােটেল ডিনােফায় অবস্থান করেন। ওই দিন সন্ধ্যায়ই ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব টেলিফোন করে ১২ নং সাক্ষী রমিজকে ফেনী আসতে বলেন। ফলে, ১২ নং সাক্ষী রমিজ ২০ নং সাক্ষী আনােয়ার হােসেনকে সঙ্গে নিয়ে পিআই এর একটি স্টাফ গাড়িতে করে ওইদিন রাতেই ফেনী পেীছেন।

৮৬, ১৯৬৭ সালের ১২ জুলাই রাত দুটা ৩০ মিনিট থেকে চারটা ৩০ মিনিটের মধ্যে ১২ নং সাক্ষী রমিজ, ২০ নং সাক্ষী আনােয়ার হােসেন এবং ৯ নং আসামি দলিল উদ্দিন ছাড়া সবাইকে পিআই এর স্টাফ গাড়িতে করে নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি বড় রাস্তায় নামিয়ে দেন। এরপর ১২ নং সাক্ষী রমিজ এবং ২০ নং সাক্ষী আনােয়ার হােসেন ওই রাতেই চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। ১৭ নং সাক্ষী জালাল উদ্দিন প্রতিনিধিদ্বয়ের ভারতীয় স্থলভাগে প্রবেশ তদারক করেন। ৮৭. ১৯৬৭ সালের ১৩ জুলাই রাতে কোনাে এক সময় ওই প্রতিনিধিদ্বয় ৩৩ নং আসামি রেজা এবং ৩ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিব আগরতলা থেকে একটি ট্রাকে করে ফেনীতে হােটেল ডিনােফায় ফিরে আসেন। ৮৮, ১৯৬৭ সালের ১৫ জুলাই ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে ওই সভার ফলাফল জানানাের জন্য তারা বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। ৮৯, ১৯৬৭ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরী ও ৭ নং সাক্ষী সাইদুর রহমানসহ মি. পিএন ওঝার সঙ্গে তাঁর ঢাকাস্থ ধানমন্ডির পূর্বোক্ত বাড়িতে ষষ্ঠবারের মতাে দেখা করেন। পিএন ওঝা ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমকে জানান যে, তিনি তখনও তার সরকারের পক্ষ থেকে আগরতলা বৈঠকের কোনাে ফলাফল জানেন না। কিন্তু তিনি চুপিসারে ১২ নং আসামি মানিক চৌধুরীকে জানিয়ে দেন যে, ভারতীয় কর্মকর্তারা এখানকার প্রতিনিধিদের যােগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তায় আস্থাবান নন। ৯০. ওই একই মাসে (জুলাই, ১৯৬৭) ৪ নং আসামি সুলতান করাচি সফর করেন। সেখানে ৩০ নং আসামি মাহবুব উদ্দিনের বাসায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বাসায় ঠিকানা-১৪/৪ জি, মার্টিন কোয়ার্টার্স, করাচি। নিম্নোক্তরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. সুলতান, আসামি নং ৪ ২. মফিজউল্লাহ, আসামি নং ৭ ৩. জহুরুল হক, আসামি নং ১৭ ৪. সার্জেন্ট শামসুল হক, আসামি নং ১২ ৫. লে. রহমান, আসামি নং ৩১ এবং ৬. সিরাজ, সাক্ষী নং ১৫। এ ছাড়া আরও তিন ব্যক্তি ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন যাদের নাম দেখা যায় পাইলট অফিসার মীর্জা, এসএম আলী এবং জয়নুল আবেদীন।

এর মধ্যে শেষের দুজনের পরিচয় উদঘাটন করা যায়নি এবং প্রথমজন অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। ৪ নং আসামি সুলতান ওই সভায় বলেন যে, তিনি কিউবার বিপ্লব স্বচক্ষে দেখেছেন এবং ওই ধরনের একটি বিপ্লবে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্যেই তিনি বেঁচে আছেন। তিনি প্রধান প্রধান কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার ঘাটতি দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি এই বলে তার বক্তব্যে শেষ করেন যে, এই সভায় উপস্থিত সকলে গ্রুপের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য, উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য নিজ নিজ জীবন উৎসর্গ করার শপথ করুক। ৯১. এর সপ্তাহ দুয়েক পরে, ১৯৬৭ সালের জুলাই/আগস্ট মাসে ৩১ নং আসামি লে, রহমান ৩০ নং আসামি মাহবুব উদ্দিনের পূর্বোক্ত বাসায় আরেকটি সভা আহ্বান করেন। নিম্নোক্তরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন: ১. লে. রহমান, আসামি নং ৩১ ২. লে, আবদুর রউফ, আসামি নং ৩৫ ৩. জহুরুল হক, আসামি নং-১৭ ৪. সুলতান, আসামি নং-৭ ৫. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ ৬. বারী, আসামি নং-২২ ৭. সিরাজ, সাক্ষী নং-১৫ এ ছাড়াও উপস্থিতদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে-জয়নুল আবেদীন ও এমএস আলী বলে এবং আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে অস্পষ্টভাবে লেখা। এদের কারাের পরিচয়ই উদঘাটন করা যায় নি। ওই সভায় ৩১ নং আসামি লে, রহমান সদস্যদেরকে এই নির্দেশ দেন যে, ২ নং আসামি মােয়াজ্জেমের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠনের যে মূল অংশ কাজ করছে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযােগী হয়ে সবাই যেনাে কাজ করেন। এরপর ৩৫ নং আসামি লে. আবদুর রউফ উপস্থিত সদস্যদেরকে বাংলায় শপথ বাক্য পাঠ করান। ওই সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহও নেওয়া হয়: ক. ১৫ নং সাক্ষী সিরাজুল ইসলাম মৌরিপুর এলাকা থেকে চাঁদা তুলবেন এবং সদস্য তালিকাভুক্তি করবেন। খ. ৭নং আসামি মফিজউল্লাহ ড্রিগ রােড থেকে চাঁদা ও সদস্য সংগ্রহ করবেন। গ. ১৭ নং আসামি জহুরুল হক কোরাঙ্গী এলাকা থেকে চাঁদা ও সদস্য সংগ্রহ করবেন এবং ওই একই উদ্দেশ্যে তিনি চাকলালা, পেশােয়ার, কোহাট সারগােদা সফর করবেন। ৯২. ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে ১২ নং আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই তাদেরকে বলা হয় যে, তিনি (স্টুয়ার্ড মুজিব) এবং ৩৩ নং আসামি রেজা আগরতলা গিয়েছিলেন। ৯৩. ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে ৩৫ নং আসামি লে, আবদুর রউফ ২৯ নং আসামি জলিলের ক্লেটন কোয়ার্টার্সের বাসায় একটি জরুরি সভা আহ্বান করেন। নিম্নোক্তারা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১. মফিজউল্লাহ, আসামি নং-৭ ২. বারী, আসামি নং ২২ ৩. জলিল, আসামি নং ২৯

৪. লে, রহমান, আসামি নং ৩১ ৫. লে. রউফ, আসামি নং ৩৫ ৬. শামসুদ্দিন, সাক্ষী নং ৬ এবং ৭. সিরাজ, সাক্ষী নং ১৫। এই সভায় উপস্থিতদের মধ্যে আরও তিনজনের নাম দেখা যায়-ক্যাপ্টেন আফতাব চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন এবং সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু এদের পরিচয় উদঘাটন করা যায়নি। এই সভায় ৩৫ নং আসামি লে, রউফ এবং ৩১ নং আসামি লে, রহমান কতগুলাে আশঙ্কাজনক প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তাদের সন্দেহ যে, তারা সন্দেহভাজন হিসেবে কড়া নজরের মধ্যে আছেন। ৩৫ নং আসামি লে রউফ সভায় অংশগ্রহণকারীদেরকে আর কোনাে নতুন সদস্য সগ্রহ না করার নির্দেশ দেন। তিনি গ্রুপের সদস্যদেরকে ছুটি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাবার উদ্যোগ নিতে বলেন। ফলে, গ্রুপের সদস্যরা ছুটি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের নিজস্ব শহরগুলােতে চলে যেতে থাকেন। ৯৪. ৩ নং আসামি সার্জেন্ট শামসুল হকের পরামর্শে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোনাে এক সময় ১৭ নং আসামি জহুরুল হক চাকলালা পিএএফ স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং সেখানে তিনি ২১ নং সাক্ষী সার্জেন্ট রজব হােসেনের সাক্ষাৎ পান। ১৭ নং আসামি জহুরুল হক ২১ নং সাক্ষী রজব হােসেনকে জানান যে, সামরিক বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি গ্রুপ গঠিত হয়েছে। তিনি ২১ নং সাক্ষী রজব হােসেনকে সেই গ্রুপে যােগদানের আহ্বান জানান। কিন্তু ২১ নং সাক্ষী রজব। হােসেন এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করতে অস্বীকার করেন। ৯৫. ১৯৬৭ সালের অক্টোবর মাসে ৩৩ নং আসামি রেজা ১২ নং সাক্ষী রমিজের কাছ । থেকে পিআইএর একটি ক্রেডিট টিকিট পান এবং এর মাধ্যমে ১০ নং সাক্ষী আসামি রুহুল কুদুস ও ২৫ নং আসামি ক্যাপ্টেন মােতালেবকে একথা জানাতে লাহাের ও পেশােয়ার যাত্রা করেন যে, তাঁর মনে হয় ২নং আসামি মােয়াজ্জেম সংগঠনের তহবিল ব্যবহারে অনিয়ম করছেন। উল্লেখ্য ইতিমধ্যে ১০নং আসামি রুহুল কুদ্স এবং ২৫ নং আসামি। ক্যাপ্টেন মােতালেব যথাক্রমে লাহাের ও পেশােয়ারে পােস্টিং পেয়ে চলে গিয়েছেন। ৯৬. ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে ১৫ নং সাক্ষী সিরাজ প্রিভিলেজ লিভ’-এ ঢাকা যান। ঠিক ওই সময়ই ৩০ নং আসামি মাহবুব উদ্দিন, ৩৫ নং আসামি লে. রউফ এবং ৩১ নং আসামি লে, রহমানও ছুটিতে ঢাকা পৌঁছেন। ৯৭. ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে নিম্নোক্ত ষড়যন্ত্রকারীরা ২৪ নং সাক্ষী প্রাক্তন স্কোয়াড্রন। লিডার মােয়াজ্জেম হােসেন চৌধুরীর বাসায় একটি সভায় মিলিত হন: ১. ফজলুল হক, আসামি নং ১১ ২. এমএ রাজ্জাক, আসামি নং ১৬ ৩, করপােরাল জামাল, সাক্ষী নং ১৪ ৪. জাকির আহমদ, সাক্ষী নং ২২ ৫. সার্জেন্ট এম আবদুল হালিম, সাক্ষী নং ২৩ এবং ৬. চৌধুরী, সাক্ষী নং ২৪। এই সভায় আলােচনা হয় যে, ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং তাঁর অনুসারী ব্যক্তিবর্গের স্বার্থপরতার কারণে গ্রুপের যে দুরবস্থা হয়েছে সেখান থেকে গ্রুপকে উদ্ধার করে এর কাজকর্ম পুনরুজ্জীবিত করা দরকার।

৯৮, ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে ২২ নং সাক্ষী জাকির ২৫ নং সাক্ষী উইং কমাণ্ডার আশফাক। মিয়াকে জানান যে, কয়েকদিন আগে ২৩ নং সাক্ষী হালিম তাকে ২৪ নং সাক্ষী চৌধুরীর। বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি নিম্নোক্ত ব্যক্তিদেরকে সমবেত দেখেছেন: ১. ফজলুল হক, আসামি নং ১১ ২. এমএ রাজ্জাক, আসামি নং ১৬ ৩. চৌধুরী, সাক্ষী নং ২৪ ৪. করপােরাল জামাল, সাক্ষী নং ১৪ এবং ৫. হালিম, সাক্ষী নং ২৩। ২২ নং সাক্ষী জাকির ২৫ নং সাক্ষী আশফাক খানের কাছে অভিযােগ করেন যে, এসব ব্যক্তি কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করার বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। ৯৯, ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ১৫ নং সাক্ষী সিরাজের বন্ধু জনৈক মি, মালিকের ঢাকাস্থ শুক্রবাদের বাসায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ একটি সভায় মিলিত হন। ১. লে. রউফ, আসামি নং ৩৫, ২. মাহবুব উদ্দিন, আসামি নং ৩০, ৩. সিরাজ, সাক্ষী নং ১৫ এবং আরাে কয়েকজন যাদেরকে চিহ্নিত করা যায়নি। এই সভায় গ্রুপের কর্মকাণ্ডকে আড়াল করে রাখার জন্য ঢাকায় একটি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি আলােচনা হয়। ৩৫ নং আসামি লে, রউফ গ্রুপের কাজকর্ম পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ২ নং আসামি মােয়াজ্জেম এবং কর্নেল এমএজি ওসমানীর সঙ্গে যােগাযােগ করার উদ্যোগ নেন। ১০০, এর অল্প কয়েকদিন পরেই ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা আরম্ভ হয় এবং এইভাবে তাদের কর্মকাণ্ড সমাপ্ত হয়। এখন যথাবিহিত সম্মানপূর্বক প্রার্থনা এই যে, আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযােগ গঠন করা হয়েছে এবং এখানে তা সন্নিবেশিত হয়েছে, তার ভিত্তিতে আসামিদের যেনাে বিচার করা হয়।

সূত্র : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দী – মুহাম্মদ শামসুল হক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!