সবই আগে তার ঠিক করা ছিল – আ স ম আবদুর রব
সত্তর-একাত্তরে ডাকসুর সহসভাপতি ও স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা আসম আবদুর রব। স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা ছিল তাঁর। স্বাধীনতাত্তোরকালে জাসদের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে (৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আমলে) মন্ত্রী ছিলেন। আসম আবদুর রব মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পটভূমি সম্পর্কে বলেন, ‘সেভাবে বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের সময় থেকেই ছাত্রলীগের মধ্যে স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবি জোরদার হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ছয় দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এদেশে যে গণআন্দোলন সৃষ্টি হয় দেখতে দেখতে তা বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে রূপ লাভ করে। ছয় দফার আন্দোলনকে উনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে এবং একাত্তরে সে আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপদান করার পেছনে আমিসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক কর্মী ও নেতার গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা রয়েছে।
২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বাঙালির পক্ষ থেকে যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তা ছিল ১৯৬২ থেকে ক্রমাগত দানা বেঁধে ওঠা মুক্তিসংগ্রামের চূড়ান্ত ও সশস্ত্র বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের আগে সশস্ত্র প্রস্তুতি বিষয়ে আ স ম রব বলেন, ‘অবশ্যই প্রস্তুতি ছিলাে। যুদ্ধ শুরু হবার অনেক আগে থেকেই ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের বিপ্লবী কর্মীদের আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গােপনে সংগঠিত করার মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করি। এ ব্যাপারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন দলত্যাগী বাঙালি সদস্য আমাদের সহযােগিতা করেন। এদের অধিকাংশই ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর বাহিনীর সদস্য।’ মুক্তিযুদ্ধের কোনাে প্রস্তুতি ছিলাে না এবং যুদ্ধ হঠাৎ করেই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়’-বলে যারা প্রচার করেন তারা এটি করেন হয় সে সময়ের ঘটনাবলীর সবটুকু জানেন বলে কিংবা কোনাে অসদুদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আসম রব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমি (লেখক) শুনেছি তার বক্তব্য। তিনি বলেন, “অনেক ব্যাপার আছে যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ার কারণে মূল নেতৃত্ব সরাসরি বলতে পারেন না বা প্রকাশ করতে পারেন না, অন্য কোনাে মাধ্যম তথা নিম্নস্তরের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সেসব কথা বা কাজ করাতে হয়। পতাকা উত্তোলন (স্বাধীন বাংলাদেশের), জয় বাংলা বাহিনী গঠন, স্বাধীনতার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও সশস্ত্র প্রস্তুতি এবং কুচকাওয়াজ ও গােপন প্রশিক্ষণসহ আমাদের প্রায় কর্মকাণ্ড বঙ্গবন্ধু জানতেন এবং তাঁর নির্দেশ-সম্মতিতেই সব কিছু করা হতাে। এমনকি ভারতে গিয়ে কোথায় কার সাথে যােগাযােগ করতে হবে, কোথায় প্রশিক্ষণ হবে, অস্ত্র কোথেকে আসবে এসবই আগে থেকে তাঁর ঠিক করা ছিল।’
সূত্র : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দী – মুহাম্মদ শামসুল হক