You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.12 | আগে কে বা প্রাণ করিবেন দান | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

আগে কে বা প্রাণ করিবেন দান

পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সশস্ত্র মােকাবিলার জন্য পূর্ব বাংলার ছেলেরা তা দলে দলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছেনই, মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। এক শ্রীহট্রেই ২ হাজার মেয়ে মুক্তিফৌজে যােগ দিয়েছেন। তাঁদের আগ্রহ ও আন্তরিকতার কাছে মুক্তিফৌজের কতৃপক্ষ নতি স্বীকার না করে পারেন নি। বলা নিষ্প্রয়ােজন যে খবরটি শুধু উৎসাহ- ব্যঞ্জক নয়, গৌরবজনকও। স্বদেশের সম্রম ও স্বাধীনতার জন্যে দেশের মেয়েরাও নির্ভয়ে তাদের ভাইদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, এ থেকেই বােঝা যাচ্ছে সঙ্কট যত বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তার সঙ্গে বুঝবার জন্যে ওদের প্রস্তুতিও হয়েছে ঠিক তত বড়। এতাে ছেলে ফৌজে যযাগদানের প্রার্থী হচ্ছেন যে কাকে ছেড়ে কাকে নেবেন তা ঠিক করতে নাকি অধিনায়কদের লটারি করতে হচ্ছে।
বলা নিষ্প্রয়ােজন যে সারা পৃথিবীতেই নারীরা কোমলা অবলা বলে কথিত এবং যুদ্ধবিগ্রহ ও হানাহানির দুনিয়ার তাঁদের মানাও তারা ঐ মুলুকে ঢুকে ভাল সামলাতেও পারেন না, এই হল। বেশীরভাগ মানুষের বক্তব্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে পৃথিবীর কোন দেশেই সাহসিকতার প্রতিযােগিতায় নারীরা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকেন নি। আমাদের দেশেও রাজিয়া, চাঁদ সুলতানা, দূর্গাবর্ত, লছমী বাঈদের কীর্তি কাহিনী চিরস্মরণীয় হয়েছে, যেমন হয়েছে রাণী বােডেসিয়া, সাম্রাজ্ঞী থেরেসা বা জোযান দ্য থেকে একালে এলেও দৃষ্টান্ত কম মিলবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রুশ ও ফরাসী মেয়েদের ভূমিকা অগণনীয় ছিল না। আমরা কোনদিন রক্তাক্ত যুদ্ধের মুখােমুখি হই নি। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়েছি আমরাও এবং বােমা বিক্ষোভের এবং অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ইতিহাসে ছেলেদের পাশে আমাদের মেয়েদেরও একটা ভূমিকা ছিল, যার বরণীয়াদের যােগ্য উত্তরাধিকারিণী পূর্ব বাংলার মেয়েরা আজ রণসজ্জায় এগিয়েছেন। পরাজয় ও অপমানের চেয়ে মৃত্যুকে শ্ৰেয় জেনে তারা যুযুধান মুক্তিফৌজে নাম লিখিয়েছেন। এতে বাঙালী মাত্রেই তৃপ্ত ও গৌরবান্বিত বােধ করবেন। সেই সঙ্গে আশা করবেন এমন সার্বিক জাগরণ বৃথা হবে না।।
অল্পদিন আগেই ঢাকা মহিলা কলেজের ছাত্রী রােশেনারা মাইন বুকে বেধে শত্ৰু ট্যাঙ্কের সামনে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মদানের মূল্যে ট্যাঙ্কটি ধ্বংস করে অমর হয়েছেন। আর একটি ছাত্রী নিবাসের অর্ধশতাধিক তরুণী মাত্র সেদিন কোন পথ না দেখে ছাদ থেকে নীচের তলায় লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু বরণের দ্বারা জহরব্রতী রাজপূত ললনাদের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। পূর্ব বাংলার বীরাঙ্গণাদের নামে তাই সত্য ও মনুষ্যত্বের পূজারি মাত্রেই জয়ধ্বনি দেবেন। প্রাণের চেয়ে মান বড় সবচেয়ে বড় দেশ ও জাতি, সকলকে এই চিরপুরান কথাটি তাঁরাই মনে করিয়ে দিলেন নূতন করে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১২ এপ্রিল ১৯৭১