নানা কৌশলের মধ্যে এটিও একটি – ডা. ছৈয়দুর রহমান (রাজসাক্ষী)
চট্টগ্রামের যে তিন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু ও সৈনিকদের মাঝে যােগাযােগের মাধ্যম এবং বেসামরিক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ। প্রক্রিয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের একজন ডা. ছৈয়দুর রহমান চৌধুরী (তৎকালীন চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি)। গােপন সশস্ত্র তৎপরতার খবর ফাঁস হওয়ার পর অন্যদের মতাে ডা. ছৈয়দুর রহমান চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয় এবং ঘটনার ব্যাপারে স্বীকারােক্তি আদায়ের জন্য ১৮ দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালানাে হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ডা. সৈয়দুর রহমান রাজসাক্ষী হন। সেই নির্যাতনের স্মৃতি এখনাে তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। এখনাে মাঝে মধ্যে হাত-পা কোমরের যন্ত্রণা বেড়ে উঠলে হাঁটতে পারেন না স্বাভাবিকভাবে। মন বসে না কোনাে কাজে। সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের সহকর্মী হিসেবে আগরতলা মামলার নানা দিক জানার। জন্য তার চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি ২০০৬ সালের নভেম্বরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতির কথা স্বীকার করে জনাব চৌধুরী বলেন, “আমাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নানা কৌশলের মধ্যে এটিও একটি কৌশল হিসেবে আমরা গণ্য করতাম। ডা. ছৈয়দুর রহমান জানান, তিনি ১৯৪৮-৫৯ সালে আইএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথম জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৫০-৫১ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। তখনকার। দিনে আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর যােগাযােগ হয়। বিশেষ করে দেবেন সিকদারের সঙ্গে তার একটা আস্থার সম্পর্ক স্থাপিত হয় সে সময়েই। দেবেন সিকদারকে। তিনি নানা বলেই ডাকতেন। কমিউনিস্ট পার্টির যেসব কাজ ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে করতে হতাে সেগুলাে বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। বেগম মুজিব সব জানতেন ডা. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হওয়ার পর ১৯৪৯-৫০ সালে পার্টি থেকে। (কমিউনিস্ট পার্টি) সিদ্ধান্ত হলাে আমি যাতে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হই। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগার হয়ে যাই। তখন থেকে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। অল্পদিনের মধ্যে তাঁর স্নেহ ভালবাসায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁর একান্ত আপনজনে পরিণত হই। তিনি রাজনৈতিকভাবে আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছেন। তার কথাবার্তায় স্বচ্ছতা, ভঙ্গিমা, চালচলন সবকিছুই আমার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। তার সব কাজ আমি মনােযােগ দিয়ে দেখতাম এবং অন্তরে গেঁথে রাখতাম। তিনি যেভাবে যা বলতেন সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করতাম। তখনকার দিনে পাকিস্তানিদের আচার-আচরণে বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এখানে স্বায়ত্বশাসনের প্রয়ােজন আছে। আমরাও মনে করতাম এত দূরত্বের মধ্যে একটি দেশ স্বায়ত্ত্বশাসন ছাড়া একত্রে থাকতে পারে না। তাই সেই সময় আওয়ামী লীগ স্বায়ত্ত্বশাসনের লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে। আমরাও স্বায়ত্ত্বশাসনের চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করতাম। সশস্ত্র প্রস্তুতি কিংবা বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আরও পরের ঘটনা।
৬০ সালের দিকে আমরা বঙ্গবন্ধুর একটা চিন্তাধারার কথা জানতে পারলাম। সেটা হলাে, তিনি ভাবলেন, এদেশে এমনি এমনি স্বায়ত্ত্বশাসন আসবে না। আমরা দুশ বছর শােষিত হয়েছি, ব্রিটিশরা গেছে। এখন তারা (পাকিস্তানিরা) এখান থেকে যা পাবে সব লুটপাট করে নিয়ে যাবে। কাজেই এদেশ স্বাধীনই করতে হবে। তার বিভিন্ন কথা ও কাজে আমি সেটা অনুভব করতাম এবং একমত পােষণ করতাম। তবে এ পর্যায়ে বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রথম দিকের যােগাযােগ সম্পর্কে আমি জানতাম না। পরে ধীরে ধীরে বিষয়টি জানতে পারি যখন সশস্ত্র বাহিনীর কিছু লােক আমাদের সঙ্গে যােগাযােগ শুরু করেন। তাঁদের একজন দল প্রধান লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেমই নিয়মিত যােগাযােগটা রাখতেন। আমার বাড়ির কাছেই যে নেভাল কোয়ার্টার আছে সেখানেই তিনি থাকতেন। তার কথায় বুঝতে পারলাম যে, তারাও এদেশের স্বাধীনতা চান। এটাও জানতে পারলাম যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের যােগাযােগ হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখান থেকে প্রক্রিয়াটি আস্তে আস্তে এখানে আসে। পরবর্তীতে রিলেশনারি কাউন্সিলের মতাে একটা কিছু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন আমি এবং মানিক চৌধুরী (ভূপতিভূষণ চৌধুরী) যেন এই কাউন্সিলে থাকি। আমাদের চিন্তাধারার সাথে সম্পৃক্ত এসব সৈনিকের প্রায় ধীরে ধীরে পােস্টিং হচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। তাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের সবসময় প্রয়ােজনীয় যােগাযােগ সম্ভব হতাে না। তিনি তাদের বলে দিয়েছিলেন এখানে আমাদের সঙ্গে যােগাযােগের জন্য। তিনি আমাদেরকে এ কাজের জন্য সবচেয়ে বিশ্বাসযােগ্য মনে করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের আর কারা এতে যুদ্ধ ছিলেন জানতে চাইলে ডা. ছৈয়দুর রহমান বলেন, ‘আসলে এটি ছিল একটি গােপনীয় বিষয়। তাই কে কোথায় কিভাবে যুক্ত ছিলেন কিংবা ছিলেন না তা খুব একটা আলােচনা হতাে না এবং সেভাবে জানা যেত না এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাজউদ্দিন সাহেব এবং বেগম মুজিব ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কেউ জড়িত ছিল কিনা আমি জানি না। তবে পরবর্তীতে রিভ্যুলেশনারি কাউন্সিল যেটা হয়েছিল তাতে আর্মির (বাঙালি সৈনিক) ৫-৬ জন ছাড়াও আরও কয়েকজন লােক ছিলেনএতদিন পর তাদের নাম স্মরণ করতে পারছি না। তবে প্রথম দিকে সেখানে আমি এবং মানিক চৌধুরী ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কোনাে লােক ছিল না। পরবর্তীতে মানিক চৌধুরীর মাধ্যমে বিধান কৃষ্ণ সেনও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। বেগম মুজিব সবকিছু জানতেন এবং বিপ্লবী কাউন্সিলের জন্য যে অর্থ ব্যয় হতাে সেগুলাে মূলত তার মাধ্যমেই পাওয়া যেত। যে কারণে আওয়ামীলীগ নেতারা জানতেন না বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এতবড় একটা ঘটনা ঘটছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা তা জানেন এমন কেন হলাে এ প্রশ্নে ডা. ছৈয়দুর রহমান বলেন, আগেই বলেছি বিষয়টি ছিল গােপন এবং স্পর্শকাতর। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন আওয়ামী লীগের তখনকার বয়স্ক নেতাকর্মীদের অনেকেই হয়তাে এরকম একটা প্রক্রিয়ার বিরােধিতা করবেন। তরুণরাও আবেগের বশে এ নিয়ে বেশি মাতামাতি করতাে। তখন বিষয়টি কোনােভাবে ফাঁস হয়ে গেলে বড় ধরনের বিপদ দেখা দিত। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে এরকম বিপদে আমরা অবশ্য পড়েছিলামও। আমাদেরকে বলা হয়েছিল স্বায়ত্বশাসনের পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জনগণকে বিভিন্ন উপায়ে উদ্বুদ্ধ এবং বিপ্লবী গ্রুপ তৈরি করার জন্য।
ছাত্রদের মধ্য থেকে বাছাই করা নেতাদের নিয়ে কমিটিও করা হয় (যেটা নিউক্লিয়াস বডি হিসেবে পরিচিতি পায়)। ক্রমে এ রকম কাজ এমনভাবে বিস্তৃত হয় যে, বঙ্গবন্ধু যে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবির পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তা অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং সবাই এটাকে সমর্থনও করতে থাকে। তবে বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক বিষয়গুলাে সম্পূর্ণ গােপন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলতে থাকায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ বা অন্যান্য দলের মধ্যে এরকম উদ্যোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা-অস্পষ্টতা থেকে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এর প্রকাশ্য বিরােধিতা দেখা যায়নি। এ ছাড়া পাকিস্তানিরা গােপন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়ানােতে এটিকে একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হিসেবেই সবাই বিবেচনা করে এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলে। এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বপ্নকেই বেশি করে জাগিয়ে দিয়েছিল।
স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর দুই রকম চিন্তা দেশকে স্বাধীন করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা সম্পর্কে ডা. ছৈয়দ বলেন, আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু দু রকম উপায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি চিন্তা করতেন। প্রথমটা হলাে- একটা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে নির্বাচনের মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসন অর্জন। পরে প্রয়ােজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুতির মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। দ্বিতীয়টা হলাে- বাধা আসলে সৈনিক জনতার সমন্বয়ে বিপ্লবী গ্রুপের সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জন। সেই সময়ে তিনি ভাবতেন কেবল অন্দোলন কিংবা পুরােপুরি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করা সম্ভব হবে না। আন্দোলন প্রক্রিয়াকে সহায়তা কিংবা তেমন কোনাে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সহায়ক শক্তি হিসেবে একটি বিপ্লবী গ্রুপ তৈরি করার প্রয়ােজন বলে তিনি মনে করতেন। অর্থাৎ দেশকে স্বাধীন করার জন্য যা যা কৌশল নেওয়া প্রয়ােজন সে রকম কৌশলগত সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এগােচ্ছিলেন। এরমধ্যে সশস্ত্র প্রস্তুতিও একটি। তার একটা মনের জোর ছিল যে, তিনি ডাক দিলে বাঙালিরা সাড়া দেবে। তিনি প্রায় বলতেন, ‘তােমরা চিন্তা করাে না, আমি ডাক দেব, সবাই শুনবে। সবাই থাকবে। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। ৬৬ সাল থেকে বিপ্লবী কাউন্সিলের কাজটা ছিল মূলত চিটাগাং বেইজড। যেহেতু বাঙালি সৈনিকদের একটা উল্লেখযােগ্য অংশের অবস্থান ছিল চট্টগ্রামে। এর সামরিক দিকটা দেখতেন লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেম। আর চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সৈনিকদের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষার দায়িত্ব ছিল আমি এবং আমার বন্ধু মানিক চৌধুরীর ওপর। লে. মােয়াজ্জেম কিংবা বঙ্গবন্ধু এখন আমি যে জায়গায় বসেছি (ডা. ছৈয়দুর রহমানের এনায়েত বাজারের বাড়ি, যেখানে এই সাক্ষাৎকার গ্রহীতার কথা হয়) এখানে বসেই আমাদের কথা হতাে। দলীয় অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া আমাদের বিপ্লবী কর্মকান্ড সম্পর্কে আলােচনায় আমি এবং মানিক চৌধুরী ছাড়া আর কেউ সঙ্গে থাকতাে না। মানিক চৌধুরীর খাতুনগঞ্জ রামজয় মহাজন লেনের বাসায়ও বৈঠক হতাে অনেক সময়। এক পর্যায়ে মানিক চৌধুরীর মাধ্যমে বিধান কৃষ্ণ সেনও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।
তবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমি ও মানিক চৌধুরী যখন কথা বলতাম কিংবা তার কাছে যেতাম তখন সেখানে বিধান সেন বা অন্য কেউ থাকতেন না। ঢাকায় আমাদের সঙ্গে যােগাযােগের বিষয়টি জানতেন তাজউদ্দিন সাহেব এবং বেগম মুজিব। সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের কাজে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরাে অনেকের হয়তাে যােগাযােগ ছিল যা পরবর্তীতে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আমরা এখানকার দায়িত্বে ছিলাম। আসলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সবার কথা ছিল যে, যাকে যেখানে যে কাজ দেওয়া হবে সে সেই কাজই করবে। আমরা সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। তার বাইরে জানার চেষ্টা করিনি। আমার জানামতে ভারতের সাথেও বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি মনে করতেন পার্শ্ববর্তী অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা যদি ভাল থাকে তাহলে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলুন কিংবা রিলেশনারি কাউন্সিলের কাজ বলুন সব কিছুতে সহযােগিতা পাওয়া যাবে। সেই হিসেবে তিনি সেখানে কারাে কারাে। সঙ্গে যােগাযােগ রাখতেন বলে শুনেছি। একটা সাহায্যকারী গ্রুপ ছিল সেটা সরকারিভাবে। স্বীকৃত ছিল কিনা আমি জানতাম না। অর্থের উৎস সম্পর্কে ডা. ছৈয়দুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে শেখ সাহেবই জানতেন। টাকা পয়সার যখন যা দরকার তিনি ব্যবস্থা করতেন। তাঁর অসম্ভব রকম প্রভাব প্রতিপত্তি। ছিল। কারাে কাছে চাইলেই সাহায্য পেতেন তিনি। এটি কোনাে ষড়যন্ত্র ছিল না ডা. ছৈয়দুর রহমানের মতে, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন কোনাে ষড়যন্ত্র ছিল না। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন রকমের আন্দোলন প্রস্তুতিই।
একটি অংশ ছিল এই সশস্ত্র প্রস্তুতি। আমার দেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের প্রস্তুতি। আমাদের দৃষ্টিতে ষড়যন্ত্র না হলেও অন্যদের চোখে বিশেষ করে পাকিস্তানিদের চোখে। ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হতে পারে। তাই তখনকার পাকিস্তানি রাষ্ট্র কাঠামােতে থেকে এ ধরণের কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করলে বাঙালিদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির বিরাট ক্ষতি হয়ে। যেত এবং বাঙালি নেতৃত্বের অপমৃত্যু হবার আশঙ্কা ছিল। পাকিস্তানিরা এই ঘটনাকে। ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে ফাঁসি। দিতে চেয়েছিল। তবে অনেক নির্যাতন সইতে না পেরে অবচেতন মনে অনেক কিছু। স্বীকার করেছি আমিও। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কি বলতে কি বলেছি, সেটা তখন মনে ছিল না। রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল।’
সূত্র : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দী – মুহাম্মদ শামসুল হক