You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969 | মুজিবের নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ শুরু করি - নূর মােহাম্মদ বাবুল - সংগ্রামের নোটবুক

মুজিবের নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ শুরু করি – নূর মােহাম্মদ বাবুল

ষাটের দশকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে গঠিত বিপ্লবী সংগঠনের প্রথম সংগঠকদের অন্যতম নূর মােহাম্মদ বাবুল। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ক্যাপ্টেন বাবুল নামে পরিচিত। তিনি নয় সদস্য বিশিষ্ট বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিলের একমাত্র জীবিত সদস্য, ছদ্মনাম ‘সবুজ’। আগরতলা মামলার ৫ নং আসামি। ষাটের দশকের বিপ্লবী আন্দোলন প্রক্রিয়া ছাড়াও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুরে পাক সেনারা I তিনি এবং ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার বরেন্দ্র নাথের কাছে যৌথভাবে আত্মসমর্পণ করে। নূর মােহাম্মদ বাবুলের আদি বাড়ি ঢাকা জেলার লৌহজং থানার কুমারবাগ এলাকায়। ছােটবেলায় ব্যবসায়ী বাবা তমিজ উদ্দিন আখন্দের সঙ্গে ফরিদপুর সদরে এসে পড়ালেখা করেন। ১৯৫৩ সালে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই নৌবাহিনীর ভয়েস মেরিনে যােগ দিয়ে। করাচি যান এবং ৫৪ সালে করাচি বাের্ডের অধীনে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে সিডিআই (পরিদর্শক) হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে চাকরি হারানাের পর তিনি ফরিদপুর সদরের গােয়াল চামট এলাকায় একখণ্ড জমি কিনে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ অপরাহ্নে তাঁর বাড়িতে বসে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এতে বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি সেনা সদস্যদের বিদ্রোহী হয়ে ওঠার পেছনের নানা অজানা তথ্য-কাহিনী। নূর মােহাম্মদ বাবুল জানান, চাকরি জীবনের শুরুতে তিনি এবং অন্য অনেক সহকর্মী। পাকিস্তানিদের বিমাতাসূলভ আচরণের শিকার হন এবং তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন। এক সময় তারা আবিস্কার করেন পাকিস্তানের মােট বাজেটের ৭৫ ভাগ। খরচ হয় প্রতিরক্ষা খাতে। এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের জন্য খরচ হতাে ১০০ টাকায় মাত্র ৩৭ পয়সা। আর পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যদের জন্য খরচ হতাে ৭৪.৬৩ টাকা।

এ ছাড়া, নিয়ােগ পদোন্নতি, ছুটিছাটাসহ নানা দিক থেকে বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। এসব নিয়ে লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেম, স্টুয়ার্ড মুজিব, সুলতান উদ্দিনসহ বিভিন্ন সময় আলাপ-আলােচনার এক পর্যায়ে ৬২ সালের পথম দিকে মােয়াজ্জেম সাহেবের বাসায় বৈঠকের আয়ােজন করা হয়। এতে প্রস্তাব আসে বাংলাদেশকে কোনােভাবে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় কী না। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা নৌবাহিনীর কিছু লোেক গােপনে সংগঠিত হতে থাকেন এবং সময়ে সময়ে ঘরােয়া বৈঠক করে উপায় বের করার চেষ্টা করেন। নূর মােহাম্মদ বাবুল বলেন, “আমরা পর্যালােচনা করে দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকা কু ঘটায়। কাজেই আমাদের দেশে একাজের জন্য আমেরিকার কোনাে লােক ধরা যায় কি না? বিমান বাহিনীর স্টাফ করপােরাল আমির হােসেন মিয়ার সঙ্গে কাচির তৎকালীন ম্যাগাজিন প্যানােরামার সম্পাদকের ভালাে সম্পর্ক ছিল। তারা দুজনই করাচিতে একই বাসায় থাকতেন। তাঁর মাধ্যমে প্যানােরােমা সম্পাদককে প্রস্তাব দিয়ে আমেরিকার কোনাে সূত্রের সঙ্গে যােগাযােগের চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।’ শেখ মুজিবের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ৬২ সালে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে বৈঠক এবং এ প্রক্রিয়ায় তাঁর জড়িত হওয়া সম্পর্কে নূর মােহাম্মদ বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে আলােচনা করি যে, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে যেসব রাজনৈতিক নেতা আছেন তাদের মধ্যে কারা পূর্ব বাংলার স্বার্থের কথা বলেন। আলােচনায় শেখ মুজিবুর রহমান, সবুর খান, ফজলুল কাদের চৌধুরী, মাওলানা ভাসানী প্রমুখের নাম আসে। তবে সবচাইতে গুরুত্ব পায় শেখ সাহেবের নাম। কারণ বয়সে নবীন হলেও আমাদের জানামতে তিনিই বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্য, শশাষণ বঞ্চনা ইত্যাদির ব্যাপারে সবচেয়ে সসাচ্চার ছিলেন।

তাই তাকেই নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানাের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা জানতে পারি যে, করাচিতে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর বাসভবন লাকামাে হাউসে সােহরাওয়ার্দী সাহেবের মেয়ে আকতার সােলায়মান থাকতেন। বঙ্গবন্ধু করাচি গেলে সেখানে থাকতেন প্রায় সময় । ৬২ সালের শেষ দিকে আমরা পত্রিকার খবরে জানতে পারি তিনি করাচি আসছেন। আমাদের মধ্য থেকে সুলতান উদ্দিনকে (৪ নং আসামি) দায়িত্ব দেওয়া হয়, শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আমাদের সঙ্গে একটা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি আসবেন কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী সুলতান লাকামাে হাউসে গিয়ে শেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সম্মত হন এবং পরদিনই বিকেল প্রায় চারটায় ট্যাকসিতে করে সুলতানের সঙ্গে করাচির টিচার্স হাউজিং সােসাইটিতে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংকের তদানীন্তন কর্মকর্তা কেজি আহমদের বাসায় আসেন। ওই বাসায় সুলতানের ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিন থাকতেন। সুলতান শেখ সাহেবের কাছে যাওয়ার সময় কৌশলগত কারণে পাঞ্জাবি টাইপের সালােয়ার কামিজ পরেন এবং কিছু ফলমূল নিয়ে যান। আমার জানা মতে, কামাল উদ্দিনের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটিই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের প্রথম বৈঠক। বৈঠকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছাড়াও লে. কমাণ্ডার মােয়াজ্জেম, লে. মােজাম্মেল,সুলতান, স্টুয়ার্ড মুজিব এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। ওই বৈঠকেই আমরা শেখ সাহেবকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহের কথা জানাই এবং তাঁর সহযােগিতা চাই। তিনি সম্মতি দিয়ে বলেন, হ্যা, আমিও তাই চাই। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিতেও প্রস্তুত।

আপনাদের টাকা পয়সাসহ যা যা সাহায্য প্রয়ােজন সবরকম সাহায্য আমি করব।’ তিনি ছাত্রদের দিয়েও একটা গ্রুপ তৈরি করে দেবেন বলেও আমাদের জানান। এরপর তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সাংগঠনিক কাজ শুরু করি এবং মাঝে মাঝে আমাদের অগ্রগতি তাকে অবহিত করি। তিনি বিভিন্ন সময় মােয়াজ্জেম সাহেবের কাছে মানি অর্ডার বা ভিপি করে টাকা পয়সা পাঠাতেন।” সার্জেন্ট জহুরুল হক, ক্যাপ্টেন খুরশিদ উদ্দিনসহ (পরে ব্রিগেডিয়ার) অন্যদের সাথে সমসাময়িক সময়ে বঙ্গবন্ধুর যােগাযােগ প্রসঙ্গে নূর মােহাম্মদ বাবুল বলেন, ‘অন্য কোথাও আরও কেউ কেউ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন কী না বা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁদের পৃথক আলােচনা হয়েছে কী না সেটা তখন পর্যন্ত আমার জানা ছিল না। তবে পরে শুনেছি বিভিন্ন জন ভিন্ন। ভিন্ন গ্রুপে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করতেন। আমি শুধু নিজে যেটুকু দেখেছি, জড়িত ছিলাম এবং শুনেছি সেটুকুই বলতে পারি। আমাদের গ্রুপে লে. কমাণ্ডার মােয়াজ্জেম, সুলতান উদ্দিন, আমির হােসেন, স্টুয়ার্ড মুজিব, লে. মােজাম্মেল এবং আমি এই কজন এক সাথে বসতাম, শেখ সাহেবের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ করতাম এবং আমাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁকে জানাতাম।

আমাদের গ্রুপের সবাই আমাদের নয় সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলাম।’ সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিল নূর মােহাম্মদ বাবুল জানান, তাদের সাংগঠনিক কাজ সম্প্রসারিত হওয়ার এক পর্যায়ে (৬৬ সালের দিকে) বিভিন্ন গ্রুপের কাজের সমন্বয়, অগ্রগতি পর্যালােচনা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদির জন্য ন সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় সুপ্রিম কমাণ্ড কাউন্সিল গঠন করা হয়। কাউন্সিলের প্রত্যেক সদস্যের একটা সাংকেতিক বা ছদ্মনাম ছিল। নিজেরা কোথাও কারও (সংশ্লিষ্ট সদস্য) সম্পর্কে কথাবার্তা বলার সময় ওই ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। কাউন্সিলের ছয় জন সামরিক এবং তিনজন বেসামরিক সদস্য ছিলেন। তারা হলেন লে. কমাণ্ডার মােয়াজ্জেম হােসেন (আলাে), মাে. আমির হােসেন মিয়া (উল্কা), লে. মােজাম্মেল হােসেন (তুহিন), সুলতান উদ্দিন আহমদ (কামাল), স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান (মুরাদ), শেখ মুজিবুর রহমান (পরশ), আহমদ ফজলুর রহমান সিএসপি (তুষার), নূর মােহাম্মদ (সবুজ) এবং রুহুল কুদ্স সিএসপি (শেখর)। করাচিতে মুজিব হত্যার চেষ্টা ১৯৬৬ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি লাহােরে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘােষণার পর থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র আঁটে পাকিস্তানিরা। ছয় দফা ঘােষণার মাত্র দুদিনের মধ্যে ট্যাকসি চাপা দিয়ে তাকে হত্যার একটি চক্রান্ত ভাগ্যক্রমে ব্যর্থ হয়ে যায়। সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিবরণ দেন নূর মােহাম্মদ বাবুল এভাবে“লাহােরে ছয় দফা ঘােষণার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি আমরা খবর পাই, শেখ সাহেব করাচির লাকামাে হাউসে অবস্থান করছেন। মােয়াজ্জেম সাহেবের প্রস্তাবক্রমে ২৪ ফেব্রুয়ারি তার বাসায় একটি বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানে বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানাের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দায়িত্ব পেয়ে আমি তাকে আনতে যাই কামাে হাউসে। লাকামাে হাউস থেকে অন্ত ত দশ মাইল দূরে প্রথম ট্যাকসি বিদায় করে সেখান থেকে আর একটি ট্যাকসি নিয়ে আমি কামাে হাউসে পৌছি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একই ট্যাকসিতে করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করাচির কারসাযে মােয়াজ্জেমের বাসার দিকে রওনা দিই। সেখানে আমাদের জন্য লে, মােজাম্মেলও অপেক্ষা করছিলেন। যাওয়ার সময়ও কৌশলগত কারণে মরুভূমির কিছুটা নির্জন এলাকায় দ্বিতীয় ট্যাকসিটি ছেড়ে দিয়ে আর একটি রানিং ট্যাকসি নিয়ে আমরা মােয়াজ্জেমের বাসায় পৌছি। সেখানে প্রয়ােজনীয় আলাপ সেরে যখন লাকামাে হাউসে ফিরি তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা।

এসেই দেখি সােহরাওয়ার্দী সাহেবের মেয়ে আকতার সােলায়মান হাউমাউ করে কাঁদ কাদ স্বরে বঙ্গবন্ধুকে বলছেন, ‘শেখ মুজিব তােম জিন্দা হ্যায়?’ একথা শুনে আমরা হতবাক। তিনি বললেন, “তােমকো পাত্তা নেহি কেয়া হুয়া, হামতাে থানামে টেলিফোন কেয়া হে, হােটেলমে টেলিফোন কেয়া, তােম গিয়া কেদারছে?’ শেখ সাহেব আমাকে দেখিয়ে বললেন, ‘আমি তাে ওনার (আমাকে দেখিয়ে) সঙ্গে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।’ আকতার সােলায়মান বললেন, ‘তােমকো মারলেনে লিয়ে ট্যাকসিকো মারা হ্যায়, ট্যাকসিওয়ালা এধার খুব হুল্লা হুয়া হ্যায়।’ (তােমাকে মারার জন্য ট্যাকসি দিয়ে আর একজনকে মারার চেষ্টা হয়েছে। এদিকে তােমার খবর পাচি, না, তুমি কোথায় যাও, কখন যাও।) শেখ সাহেব আশ্চর্য হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ট্যাকসিটি কোথা থেকে নিয়েছ?’ বললাম এমপ্রেস মার্কেট থেকে (প্রায় ১০ মাইল দূরে) এরপর জানতে পারলাম, সন্ধ্যায় সােহরাওয়ার্দীর বাসা থেকে যখন আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম, পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা তখনাে সেখানে ছিলেন। তারা একটু পরে বের হয়ে গিয়ে সামনে একটি ট্যাকসি দেখে সেটিতে ওঠেন। তাঁরা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চালক ট্যাকসিটাকে বাড়ির দেওয়ালের সঙ্গে জোরে ধাক্কা মারে। এতে পশ্চিমা নেতারা চিৎকার করে ওঠেন, ‘আরে কেয়া করতাহে’। ভাষা বুঝে ট্যাকসিচালক বিস্মিত হয়ে বললাে, “তােম কোন হ্যায়, শেখ মুজিব নেহি। হ্যায়? ওই নেতারা বললেন, “আম তাে শেখ মুজিব নেহি হ্যায়’ ট্যাকসিওয়ালাও আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘তাে শেখ মুজিব কি ধার গেয়া? ওনারা বললেন, ‘ওতাে আগর চলা গিয়া’। এ ঘটনায় বুঝা যায়, আমি এবং শেখ সাহেব যাওয়ার পর ওই ট্যাকসিওয়ালা ঘটনাস্থলে এসে দাঁড়ায় এবং সুযােগমত ট্যাকসির ধাক্কায় শেখ মুজিবকে মারার একটা চক্রান্ত ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে উনি-আমি দুজনেই রক্ষা পাই।”

হয় দফা নিয়ে আলােচনা বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবি নামা ঘােষণার পর আইউব খান তা নিয়ে কড়া ভাষায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তিনি প্রয়ােজনে অস্ত্রের ভাষায় এর জবাব দেওয়ার ঘােষণা দেন। এতে স্বাধীনতাকামী বাঙালি সৈনিকদের মনেও উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা মনে করেন শেখ সাহেব যে কোনাে সময় গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন। তখন তাঁর সঙ্গে যােগাযােগ ও অন্যান্য সাহায্য সহযােগিতার জন্য বিকল্প হিসেবে কী করা যায় এ নিয়ে তারা ভাবছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেমের বাসায় বৈঠকে এসব বিষয়েই মূলত আলােচনা হয়। নূর মােহাম্মদ বলেন, “আমাদের পক্ষে তাকে বলা হয়, আপনি যে ছয় দফা দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে আইউব খান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, এতে আমাদের মনে হয় আপনি শিগগিরই গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন। তা যদি হয় আপনার সঙ্গে আমাদের যােগাযােগের উপায় কি?’ তিনি বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আপনাদের কোনাে চিন্তা করতে হবে না। আমি গিয়েই সব ব্যবস্থা করে যাব।” ‘আমি গভর্নর হওয়ার জন্য লালায়িত নই ৬৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নূর মােহাম্মদ বাবুল যখন বঙ্গবন্ধুকে লে. মােয়াজ্জেমের বাসায় নেওয়ার জন্য লাকামাে হাউস যান তখন সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপরত পশ্চিম পাকিশনি নেতারা বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। নূর মােহাম্মদ বলেন, “আমি সেদিন লাকামাে হাউসে গিয়ে দেখি পশ্চিম পাকিস্তানি কয়েকজন নেতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আলাপ করছিলেন। আমি তাদের থেকে একটু দূরে বসলেও তাদের আলাপের কিছু কিছু কথা আমার কানে আসছিল। একজন উর্দুতে যা বলছিলেন তা হচ্ছে, আপনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরশিপটা নিয়ে নেন।’ শেখ সাহেবের জবাব ছিল না আমি গভর্ণর হওয়ার জন্য লালায়িত না। পূর্বপাকিস্ত েিনর মানুষ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে যে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে তাদের জন্য কিছু করা যায় কী না তা নিয়ে আমি ভাবছি।’ এক পর্যায়ে কোনাে একজনের কী একটা কথার রেশ ধরে গলা ছাড়িয়ে তিনি বলে উঠলেন, ‘কেয়া তােম কাশ্মীর কাশ্মীর করতাহে, বাঙাল কি বাত করাে, যাে হামারা কাম হ্যায়।’

একথা বলেই তিনি আমার সঙ্গে বের হওয়ার জন্য উঠে এলেন। তার সেদিনের বলিষ্ঠ কণ্ঠের কথাগুলাে শুনে মনে হলাে তিনি শুধু আমাদের সঙ্গে গােপনে নয়, প্রকাশ্যেই এমনকি পশ্চিমা নেতাদের কাছেও আলাপের সময় বাঙালিদের স্বার্থেই কথা বলতেন।” আওয়ামী লীগের কোনাে নেতার সঙ্গে আলােচনা নিষেধ। নূর মােহাম্মদ বাবুল জানান, তিনি মূলত করাচিতে আয়ােজিত বেশ কটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ৬৬ সালে ঢাকায় এবং ৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিপার ইন্সট্রাক্টর আলী রেজার বাসায় একটি বৈঠকে তিনি ছিলেন। একটি বৈঠক তাজউদ্দিন আহমদের বাসায় হয়েছিল সেটিতেও তিনি ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় আয়ােজিত বৈঠকগুলােতে লে, কমাণ্ডার মােয়াজ্জেম, লে. মােজাম্মেল হে”ন, লে. এমএম রহমান কিংবা অন্য গ্রুপে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাঁদের কেউ কেউ ছিলেন। আর তাজউদ্দিন আহমদের বাসায় যে বৈঠক হয় তাতে তাজউদ্দিন নিজে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখনও এই গােপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আদৌ জানতেন বলেও নূর মােহাম্মদ মনে করেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম খুবই গােপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের কোনাে নেতার সঙ্গেও এসব বিষয়ে আলােচনা না করার জন্য।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছিল। তবে তার অনুপস্থিতিতে বা তিনি জেলে থাকলে তিন ব্যক্তির সঙ্গে যােগাযােগের কথা তিনি বলেছিলেন। তারা হচ্ছেন, চট্টগ্রামের ভূপতিভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী, ডা. সৈয়দুর রহমান ও বিধান কৃষ্ণ সেন। আমার জানামতে, শেখ সাহেব এই গােপন প্রক্রিয়ায় এই তিন জনকেই নিয়ােজিত করেছিলেন। এমনকি যে সােহরাওয়ার্দী সাহেবের মেয়ের বাসায় বঙ্গবন্ধু থাকতেন, সেই সােহরাওয়ার্দীর মেয়ে আকতার সােলায়মান বা নাতনী মুন্নীকেও বিষয়টি জানানাে হয়নি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, হােসেন শহীদ সােহরায়ার্দী যে বৈরুতে মারা গেছেন সেটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অনেকে মনে করেন বা বিশ্বাস করেন। আকতার সােলায়মান এবং মুন্নীকে তিনি ধারণা দেন, সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর জন্য দায়ী আইউব খানের বিরুদ্ধে একটা শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা কখনাে আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরাও যাতে সেই ধারণা দিই সেভাবে আমাদের ব্রিফিং করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জেলের বাইরে থাকা অবস্থায় আমাদের পরিকল্পনার অগ্রগতি সম্পর্কে সময় সময় তাকে জানানাে হতাে। তিনি বিভিন্ন সময় জেলে যাওয়ার পর বিধান সেন, মানিক চৌধুরী ও ডা. সৈয়দুর রহমানের মাধ্যমে খবর পৌছানাে হতাে। আগরতলার বদলে কাঠমুণ্ডু যাওয়ার প্রস্তাব ঢাকায় আলী রেজার বাসার বৈঠকটি নূর মােহাম্মদ বাবুলের জন্য শেষ বৈঠক। বললেন, “৬৭ সালের জুন-জুলাই মাসে সুলতান চট্টগ্রাম নেভাল বেইসে আমাকে ফোনে জানান, জরুরি বৈঠক আছে ঢাকা যেতে হবে। আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকা আসি। ওই বৈঠকে করাচি থেকে এসে যােগ দিয়েছিলেন, লে. এমএম রহমান।

এ ছাড়া ছিলেন লে. মােয়াজ্জেম, সুলতান, হাবিলদার দলিল উদ্দিন, ইশতিয়াক মজিদ, এবিএম সামাদ, আলী। রেজা প্রমুখ। ওই বৈঠকে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে আলােচনার জন্য আলী রেজা ও স্টুয়ার্ড মুজিব আগরতলা যাবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে আগরতলা যাতায়াতে সীমান্তসহ অন্যান্য জায়গায় সম্ভাব্য সমস্যার কথা ভেবে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে আলােচনাটা কাঠমুণ্ডুতে আয়ােজনের ব্যাপারে প্রস্তাব করা হয়। কারণ তখন কাঠমুণ্ডু যেতে পাসপাের্ট দরকার হতাে না। কিন্তু মােয়াজ্জেম সাহেব বললেন, এ ব্যাপারে যেহেতু ভারতের দূতাবাসের কর্মকর্তা পিএন ওঝার সঙ্গে তিনবার দিন তারিখ ঠিক করে সময় পেছানাে হয়েছে, তাই আর তারিখ ও স্থান পরিবর্তন করা ঠিক হবে না।’ শুনেছি, ওঝার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে মানিক চৌধুরী ও এবিএম সামাদ ভূমিকা রেখেছেন। ভারতীয় দূতাবাসের লােকজন আহমদ ফজলুর রহমানের পেট্রোল পাম্প গ্রিণ ভিউ থেকে তেল নিতেন। তাঁদের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপনের জন্য সামাদকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে মানিক চৌধুরীও ভূমিকা রেখেছেন বলে জেনেছি।” ঘটনা ফাঁস সম্পর্কে এত রাখঢাক-গােপনীয়তার পরও ঘটনাবলী ফস কীভাবে হলাে এ বিষয়ে নূর মােহাম্মদের ভাষ্য : আমাদের সঙ্গে যুক্ত বিমান বাহিনীর স্টাফ করপােরাল আমির হােসেন মােয়াজ্জেম সাহেবসহ সবার বিশ্বাসভাজন ছিলেন। আমাদের অনেকের মধ্যে তিনি যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন এবং সে হিসেবে আমাদের ভেতর বাইরে অনেক কথা তার জানা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে টাকা পয়সার আদান-প্রদান, সে সংক্রান্ত হিসাব এবং কারাে কাছে পাঠাননা চিঠিপত্র তাঁর কাছে থাকার কথা। ৬৭ সালেই শুনেছিলাম যে কোনাে বিষয়ে মােয়াজ্জেম সাহেবের সঙ্গে তার মনােমানিল্য হয়েছে এবং তিনি দল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এনিয়ে মােয়াজ্জেম সাহেবসহ আমরা বৈঠকে বসে আলােচনা করি এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। আমি, সুলতান উদ্দিন ও স্টুয়ার্ড মুজিবের পরামর্শ ছিল, তাঁকে তাড়াতাড়ি স্যুট (হত্যা) করার ব্যবস্থা করা হােক। নইলে তিনি বড় ধরনের বিপদ ঘটাতে পারেন। কর্ণেল শওকত প্রশ্ন তুলেছিলেন-একটা লােককে মেরে ফেলা ঠিক হবে কী না! আমরা বলেছিলাম, এটা এমন একটা পথ যেখানে কাউকে ক্ষমা করা হলেই পরে বিপদ হতে পারে।

পরে আর তাকে মারার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি। মামলার আগে আমি আমির হােসেনের কাছে দুহাজার টাকা পেতাম। তিনি আরজু হােটেলে আছেন জানতে পেরে আমি তার কাছে গেলে তার কথাবার্তার ধরণে বুঝতে পারি তিনি আর আমাদের কাজের সাথে একমত নন। আমি কথা না বাড়িয়ে পাওনা টাকা নিয়ে চলে আসি। পরে মামলা চলাকালে জানতে পারি শামসুল হক বা শামসুর রহমান নামে একজন বাঙালি স্কোয়াড্রন লিডার বাঙালিদের স্বাধীনতার জন্য কিছু একটা করার মনােভাব দেখিয়ে আমির হােসেনের সঙ্গে যােগাযোেগ করে তার কাছ থেকে পুরাে ঘটনা জেনে নেন। তিনি ছিলেন ইন্টেলিজেন্সের লােক। হােটেল আরজুতে বসেই তারা কথাবার্তা বলতেন। সমস্ত ঘটনা জানার পর সেই লােক আমির হােসেনকে আটক করেন। এ ছাড়া, ক্যাপ্টেন নুরুজ্জমান (স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনীর প্রধান) সাহেবের কাছ থেকে জানা যায়, বরিশালের সুবেদার আশরাফ আলী এবং ইন্টেলিজেন্সের মােস্তাফিজুর রহমান (তৎকালীন মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তা, পরে কর্ণেল ও বিএনপি নেতা) আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুটা জানতেন। কুমিল্লায় যে গ্রুপটা গােপন আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল তাতে ক্যাপ্টেন নূরুজ্জমান, ক্যাপ্টেন শওকত আলী, মেজর আবদুল মােতালেব, মেজর মাে. শামসুল আলম প্রমুখ ছিলেন। সে সময় মােস্তাফিজুর রহমান ছিলেন কুমিল্লায় ফিল্ড ইন্টেলিজেন্সে।

তিনি আমাদের কার্যক্রম প্রথমদিকে চেপে গেলেও পরবর্তীতে তিনি এবং আশরাফের মাধ্যমে কিছুকথা ফাস হয় বলে ধারণা করা হয়। আমাদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় মােস্তাফিজ সাহেবও আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক কথা জানতে চেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নূর মােহাম্মদ নূর মােহাম্মদ বাবুল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন এবং সম্মুখযুদ্ধে বহু খান। সেনা হতাহত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আমি নতুন আর একটি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমি তখন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানা এলাকায় অবস্থান করছিলাম। প্রথমেই সহযােগ আগ্রহী যুবকদের নিয়ে লৌহজং থানা। থেকে রাইফেল নিয়ে এসে কয়েকদিন ধরে প্রায় সাড়ে তিনশত ছাত্র যুবককে গুলি চালানাের প্রশিক্ষণ দিই। মে মাসের প্রথম দিকে ফরিদপুর হয়ে আগরতলা গিয়ে ২ নং সেক্টরের কমাণ্ডার মেজর খালেদ মােশাররফের সঙ্গে দেখা করি তার ক্যাম্পে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ছােট ভাই শেখ নাসের আমাকে এনে দেন ৯ নং সেক্টরে মেজর জলিলের ক্যাম্পে। সেখানে অল্প কয়েকদিন থাকার পর জুন-জুলাইয়ের দিকে সাব সেক্টর কমাণ্ডার হিসেবে বৃহত্তর। ফরিদপুরের মুক্তিযােদ্ধাদের অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে আমাকে ফরিদপুর পাঠানাে হয়। এরপর আমি ফরিদপুরের কাশিয়া থানার ওড়াকান্দি বিদ্যালয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করি। ইতিমধ্যে বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুলিশসহ মুক্তিযােদ্ধার বিরাট বহর নিয়ে ফরিদপুর আসেন ডা. এসএ মালেক। সাথে ছিলেন দুই ব্রিটিশ সাংবাদিক মি. পল এবং মি. ফ্রেয়ার।’ নূর মােহাম্মদ জানান, সে সময় বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রশাসনিক প্রধান ও মুজিব বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন ডা. এসএ মালেক। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে নূর মােহাম্মদ তার দলবল নিয়ে ভাটিপাড়ায় অবস্থানরত পাক বাহিনীর ক্যাম্পে পরপর তিনবার আক্রমণ চালান।

এতে একবার ১১ জন, একবার সাত জন ও একবার তিন জন পাক সেনা নিহত হয়। ১০ অক্টোবর ভেদরগঞ্জ থানা আক্রমণ করেন। সে সময় তার সহযােদ্ধাদের মধ্যে হাবিলদার মহিউদ্দিন সরদার শহীদ হন। ১৪ অক্টোবর গােসাইরহাট থানার ডামুড্যা এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এক সম্মুখযুদ্ধে নূর মােহাম্মদের বাহিনীর নয় জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ ও পাঁচ জন আহত হন। অপরদিকে খান সেনাদের পক্ষে মারা যায় এক জন মেজর, একজন ক্যাপ্টেনসহ দুশতাধিক। নূর মােহাম্মদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ১৭ ডিসেম্বর। ভারতীয় বাহিনীর সহকারী কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্র নাথসহ নূর মােহাম্মদ তার দল নিয়ে ওই দিন ফরিদপুর শহরে পৌছেন। ডা. এসএ মালেকের উপস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মিত্র বাহিনীর ফাইভ লাইফ মারাঠা কমান্ডিং অফিসার কর্নেল টর্পি, কর্নেল বারেক, মেজর করমবাইয়া, মেজর চ্যাটার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে আত্মসমর্পণ করেন নবম ডিভিশনের প্রধান ব্রিগেডিয়ার ইউসুফ আলী।

সূত্র : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দী – মুহাম্মদ শামসুল হক