You dont have javascript enabled! Please enable it! 1962| ষাটের দশকের বিপ্লবী অধ্যায় ও শেখ মুজিব - সংগ্রামের নোটবুক

ষাটের দশকের বিপ্লবী অধ্যায় ও শেখ মুজিব

জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভৌগােলিক অবস্থান, সরকার এবং নিজস্ব ভূমিতে সার্বভৌম অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠিত। হয়। আইনের চোখে রাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্থায়ী সংস্থা। রাষ্ট্রের ভেতর সরকার, প্রশাসনসহ নানা সম্প্রদায়, সমাজ-সংগঠন, আইন, রীতিসহ অনেকগুলাে সাংগঠনিক অস্তিত্ব থাকে। এসব কিছু এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ােজিত সরকারও প্রয়ােজন বিবেচনায় পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে রাষ্ট্র একটি স্থায়ী। ধারণা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও প্রতিজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্র ছাড়া স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণও আত্মতৃপ্তি নিয়ে থাকতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের ওপর অন্যের দখল বা রাষ্ট্রের কোনাে একটি জনগােষ্ঠী চাইলেই রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন বা বিভক্ত করতে পারে না।

কেউ তা চাইলেও এ ব্যাপারে সহজে মেলে না আন্তর্জাতিক তথা বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি বা সমর্থন। রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় ও অঞ্চল নির্বিশেষে সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, সর্বক্ষেত্রে সমান মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং জনগণের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে সুষম পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ােজিত সরকার রাষ্ট্রের সব অঞ্চলের জনগােষ্ঠীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন এটাই প্রত্যাশিত ও স্বীকৃত নিয়ম। পৃথিবীতে সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন আফগানিস্তানের মতাে এক জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি ভারত, আমেরিকা, রাশিয়ার মতাে বহু জাতি ও সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠিত রাষ্ট্রও আছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আইনের চোখে যাই থাকুক না কেন, কোনাে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নির্ভর করে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়ােজিত সরকার বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের জাতীয়তাবাদী চেতনা, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় কতটুকু ন্যায়ানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তার ওপর। রাষ্ট্র তার জনগােষ্ঠীর সব সম্প্রদায় এবং অঙ্গ কিংবা জাতিসমূহের প্রতি ন্যায়ভিত্তিক সমান আচরণ, সমান উন্নয়ন ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম নেয়। এই ক্ষোভ ও হতাশা থেকে এক পর্যায়ে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আর রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা এই প্রতিবাদের কারণ নির্ণয় ও সমাধানে ব্যর্থ হলে মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক নানা আন্দোলনে নামে। কিন্তু সরকারের নির্যাতন, অত্যাচার, দমননীতির ফলে প্রতিবাদ বা সরকার পরিবর্তনের সুযােগ না থাকলে 

নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত জনগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। সরকারের আচরণে বিশেষ করে জাতি ও সম্প্রদায়গত বৈষম্যের মনােভাব স্পষ্ট হয়ে উঠলে এবং নিয়মতান্ত্রিক পথে এর সমাধান দুঃসাধ্য হয়ে উঠলে সংশ্লিষ্ট জাতি তথা জনগােষ্ঠী অনিয়মতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। আর এ পথে একবার অগ্রসর হলে শেষ সমাধান হয় পৃথক রাষ্ট্র তথা স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। যদিও প্রতিষ্ঠিত কোনাে ভূখণ্ডের অধিবাসীদের স্বাধীনতা ঘােষণা বা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আন্তর্জাতিক আইন সমর্থন করে না, তবুও শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগােষ্ঠীর আকাক্ষার জয় হয়। তার প্রমাণ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের কাছ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। পৃথিবীর কোনাে ভূখণ্ডে একটি রাষ্ট্রের ভেতর বসবাসরত জনগােষ্ঠী নানা দ্বন্দ্ব সংঘাতের এক পর্যায়ে এসে যদি দেখে যে, পরস্পর একই রাষ্ট্রের কাঠামাের ভেতর বেশিদিন টিকে থাকা আর সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠীর মধ্যে আলাপ-আলােচনা ও সমঝােতার ভিত্তিতে পৃথক স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের উদাহরণও বিরল নয়। যেমন ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তির জন্য বহু বছর ধরে নানা আন্দোলনের এক পর্যায়ে আলােচনার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে ১৯৪৭ সালে। ৮০-৯০ এর দশকে পরাক্রমশালী সােভিয়েত রাশিয়া থেকে সমঝােতার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, লাটভিয়াসহ সাতটি সােভিয়েত অঙ্গরাজ্য।

তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাজারাে বৈপরীত্য সত্ত্বেও শাসকগােষ্ঠী স্বাধীনতার মন্ত্রে উদীপ্ত জনগােষ্ঠীর অধিকারকে নানা কলা কৌশলে অস্বীকার করতে চায়। অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে অস্ত্রের মাধ্যমে ঠেকিয়ে রাখতে চায়। এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠীকে একই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে, একই কাতারে সামিল হয়ে, বিনা প্রশ্নে, নিঃস্বার্থভাবে জানমাল সমর্পণ করার প্রস্তুতি নিতে হয়। আর এরকম প্রস্তুতির জন্য জনগণকে মানসিক ও সাংগঠনিকভাবে উপযুক্ত করতে প্রয়ােজন কৌশলী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন যােগ্য নেতার। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রক্রিয়া যেমন দীর্ঘ, যুদ্ধের ফলাফলও তেমন অনিশ্চিত। উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে। আরব ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি জাতি জননন্দিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাবার পরও পূর্ণ স্বাধীনতা পায়নি। বাংলাদেশের জনগণ পরােক্ষ ও প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের সেই সুকঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছে অসামান্য ত্যাগ তিতীক্ষা ও সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে। আর এ লড়াইয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এক কাতারে সামিল করে এগিয়ে নেওয়ার দুঃসাধ্য কঠিন কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিব প্রসঙ্গটি নানা কারণে অনন্য ও ব্যতিক্রম। ধর্মীয় জাতিসত্ত্বাবিশিষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের আওতায় শাসিত হবার প্রাথমিক অবস্থা থেকে বাঙালি জাতির অনেকেই তাদের অন্ধকারময় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেছিলেন।

যতই দিন যায় ততই তাদের উপলব্ধি তীব্র হতে থাকে। রাজনীতিক, ছাত্রসমাজ, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে শ্রেণী-পেশার লােকজনের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে স্বাধীনতার আকাক্ষা দানা বাঁধতে থাকে। এই আকাঙ্ক্ষাকে নিজের আকাক্ষা ও চেতনার সাথে মিশিয়ে এমনভাবে স্বাধীনতার সােপান তৈরি করেন শেখ মুজিব, যা সমসাময়িক অনেক বয়ােজ্যষ্ঠ নেতার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। এ কারণেই বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম ও শেখ মুজিব প্রসঙ্গটি একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সশস্ত্র উভয় প্রক্রিয়ায়ই এগিয়েছে। চূড়ান্ত মুক্তি এসেছে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে। স্বাধীনতার প্রয়ােজনের কথা অনেকেই আকারে ইঙ্গিতে বিভিন্ন সময় বলেছেন। কিন্তু এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে শেখ মুজিব যেভাবে জেল জুলুম সহ্য করে এক একটি বাধা ধাপে ধাপে অতিক্রম করে এগিয়ে গেছেন তা আর কারও সাহসে কুলােয়নি। সে রকম দূরদর্শিতাও আর কারও মধ্যে দেখা যায়নি। পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ আমলে মাস্টারদা সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুসহ অনেকেই।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করলেও অসময়ােচিত, অপরিকল্পিত ও সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারায় ওইসব সংগ্রাম চূড়ান্তভাবে সফল হয়নি। বাংলাদেশে ১৯৬২ সাল থেকে ‘অপূর্ব সংসদ’ নামে একটি সংগঠন ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে ছাত্র জনতাকে স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করার প্রয়াস পেয়েছিল। অপূর্ব সংসদের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন আবদুল আজিজ বাগমার। তিনি ছিলেন ৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোের্ট বাতিলের দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। অপূর্ব সংসদের আসল ব্যাখ্যা হলাে ‘অঅস্থায়ী, পূ’ পূর্ব, ব’ বঙ্গ এবং স’ সরকার। অর্থাৎ অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ সরকার। সংগঠনের প্রথম সভাপতি ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক অবনী বর্মণ। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্রচারপত্র, ইশতেহার ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালির শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পাশাপাশি স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনের কথা তুলে ধরেন। আইউব খানের সামরিক শাসনের ভীতিকর পরিবেশে সংগঠনের উদ্যোক্তা ও অন্য সংগঠকরা গােপনীয় সভায় মিলিত হতেন। পর্যায়ক্রমে এই সংগঠনের কাজের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন ছাত্র ফোরাম ইডেন কলেজ শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদিকা নাজমা রহমান, ড. আহমদ শরীফ, অধ্যাপক মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুল হাই, শওকত ওসমান প্রমুখ। তবে সীমিত সাংগঠনিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপােষকতার অভাবে তা ব্যাপক জনগােষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। পূর্ব বাংলার মেহনতি জনগণের মজলুম জননেতা হিসেবে খ্যাত মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলেছিলেন। অনেকে একে স্বায়ত্বশাসনের দাবি হিসেবে দেখেন।

কেউ কেউ একে পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলাকে পৃথক করার হুঁশিয়ারি হিসেবেও ভাবেন। কিন্তু সর্বস্তরের জনগণের কাছে তা বােধগম্য হয়নি। বামপন্থী সংগ্রামী সংগঠন কম্যুনিস্ট পার্টি পূর্ব বাংলার জনগণের শশাষণমুক্তি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও স্বাধীনতার কথাটি তখনও স্পষ্ট করেনি যেমনটি ষাটের দশকের শুরুতে কম্যুনিস্ট পার্টির সভায় করেছিলেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামের নানা দিক নিয়ে নানাজনে নানাভাবে গবেষণা করেছেন, নানা লেখা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু দেশকে স্বাধীন করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়ােজন হতে পারে এবং এজন্য প্রগতিশীল ছাত্র যুব সমাজকে তৈরির পাশাপাশি স্বাধীনতাকামী বাঙালি সৈনিকদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তার বিপ্লবী ভূমিকার বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে। তার সেই ভূমিকার কথা স্পষ্ট হলে বােঝা যাবে স্বাধীনতার জন্য তিনি ষাটের দশকের আগে থেকেই কতটুকু আন্তরিক ছিলেন এবং প্রয়ােজনে যে কোনাে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন। একথা অনস্বীকার্য যে, শেখ মুজিব ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতাে সংগ্রামী ও হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মতাে গণতান্ত্রিক নেতার ভাবশিষ্য। তাদের হাত ধরেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। কিন্তু তারুণ্য-যৌবনের জয়যাত্রায় তার চিন্তা-চেতনা ছিল ওই দুই নেতার তুলনায় অগ্রসর, আধুনিক এবং স্পষ্ট। তবে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার আগে তার চিন্তাগুলাের বহিঃপ্রকাশ তিনি ওই নেতাদের সামনে করতেন না। চীনের সাথে সম্পর্কের কারণে পাকিস্তানের অখণ্ডতার ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী ছিলেন দোদুল্যমান। আর সােহরাওয়ার্দী ছিলেন আন্তরিক। বিষয়টির প্রতি খেয়াল রেখেই তিনি কৌশলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বিকশিত করার কাজটি সুকৌশলে এগিয়ে নেন।

প্রথমে তিনি উদ্যোগ নেন আওয়ামী মুসলিম লীগকে অসাম্প্রদায়িক গণপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার। ১৯৫৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম’ শব্দটি তুলে দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখনকার বাস্তব প্রয়ােজন অনুযায়ী আমাদের সংগঠনকে একটি সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আজ অবসান ঘটেছে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল পাকিস্তানবাসীর নিজস্ব রাজনৈতিক জোট হিসেবে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করার দায়িত্ব আজ আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে।

আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে ঘােষণা করতে পারি যে, দেশের সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সকল ভাষাভাষী মানুষকে একটি গণপ্রতিষ্ঠানে সমবেত করা প্রয়ােজন। বস্তুত আওয়ামী লীগ দলকে সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য অবারিত করার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের প্রগতিশীল ভূমিকাকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হব। ১৯৫৬ সালেই পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করার প্রস্তাবের বিরােধিতা করেন শেখ মুজিব । সে সময় গণপরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি তাঁর মনােভাব স্পষ্ট করে বলেন, মাননীয় স্পীকার, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন যে, ওরা পূর্ব বাংলা নামটা পাল্টিয়ে পূর্ব পাকিস্তান করতে চাচ্ছে। অথচ আমরা বারবার এই দাবি করছি যে, এখন এর নাম শুধু ‘বেঙ্গল’ (বাংলা) করা হােক। বেঙ্গল’ (বাংলা) শব্দের একটা ইতিহাস রয়েছে, এর নিজস্ব ঐতিহ্য বিদ্যমান। আপনারা নাম বদলাতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে জনসাধারণের মতামত নিতেই হবে। যদি আপনারা এই নাম বদলাতে চান, তাহলে আমাদের বাংলায় ফিরে যেয়ে জনগণকে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা এ ধরণের পরিবর্তন মেনে নেবে কি না।” ওই অধিবেশনেই তিনি বাঙালিদের ওপর জুলুম-শােষণ বন্ধ না হলে জনগণ ‘অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে পাকিস্তানি শাসক গােষ্ঠীকে হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেন, ‘জুলুম মাত করাে ভাই (অত্যাচার করাে না ভাই)। যদি এসব কিছু আপনারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে আমাদের বাধ্য হয়েই সংবিধান বিরােধী পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

সংবিধানের বিধি মােতাবেক আপনাদের এগুতে হবে। আপনারা যদি জনসাধারণকে শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণের সুযােগ থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তারা অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহণে বাধ্য হবে। এটাই বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে এবং তা বিশ্বের ইতিহাস থেকে অনুধাবন করা সম্ভব। ষাটের দশকের শুরুতে (১৯৬১ সালে) আওয়ামী লীগ ও কম্যুনিস্ট পার্টির এক গােপন সভায় আন্দোলনের নানা বিষয় নিয়ে আলােচনা হয়। ওই সভায় শেখ মুজিব খােলাখুলিভাবে স্বাধীনতার দাবিকে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাখার আহ্বান জানান কমরেড মনি সিংকে। এ সম্পর্কে পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক খােকা রায় তার সংগ্রামের তিন দশক গ্রন্থে লিখেছেন, “শেখ মুজিব তুললেন এক মৌলিক প্রশ্ন। তিনি বললেন, এসব দাবীদাওয়া কর্মসূচিতে রাখুন, কোন আপত্তি নেই।

কিন্তু একটা কথা আমি ভােলাখুলি বলতে চাই, আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্র, স্বায়ত্বশাসন এসব কোন দাবীই পাঞ্জাবিরা মানবে না। কাজেই স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালীদের মুক্তি নেই। স্বাধীনতার দাবীটা আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাখা দরকার।’ পাকিস্তানিদের অন্যায় শাসন-শােষণ, জুলুম কিন্তু থেমে ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি বেসরকারি সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরও শশাষণ নিপীড়ন চলতে থাকে সমানতালে। সেখানে তারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঁচার উপায় এবং এজন্য যােগ্য নেতৃত্বের সন্ধান করছিলেন। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ তাঁদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে প্রতিকারের জন্য তৎকালীন জ্যেষ্ঠ নেতা যেমন, মাওলানা ভাসানী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, সবুর খান, ইউসুফ আলী, ফরিদ আহমদসহ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু কেউ তাদের সুস্পষ্ট কোনাে আশ্বাস বা দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। শেখ মুজিব ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতেই একদিন পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত এমপি হােস্টেল সামাকো হাউসে বসেই তিনি কয়েকজন বাঙালি প্রতিবাদকারীকে বললেন, এদের সঙ্গে (পাকিস্তানিদের সঙ্গে) আর থাকা চলবে না। ঢাকায় গিয়ে আলাদা হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নেব।’ এ ঘটনার সাক্ষী তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি (পরবর্তীতে ন্যাপ ও গণফোরামের সঙ্গে যুক্ত) মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী। তিনি ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নন কমিশন অর্ডিনারি রিক্রুট’ হিসেবে যােগ দেন। পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটায় একবছর প্রশিক্ষণ শেষে পাকিস্তানিদের অবিচার ও স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে প্রতিবাদ করায় সেনাবাহিনীর চাকরি করার সুযােগ হারান।

পরবর্তীতে মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশকে স্বাধীন করার গােপন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন এবং আগরতলা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতন ভােগ করেন। শেখ মুজিব যে স্বাধীনতার জন্য ষাটের দশকের শুরু থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার সত্যতা ১৯৬২ সালেই পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি এক গােয়েন্দা প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান লিবারেল পার্টির নামে যারা প্রচারপত্র বিলি করেন, তাদের একজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি কলকাতায় গিয়ে | সেখানে কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তার কথায় প্রকাশ হয় যে, পােস্টারগুলাে (প্রচারপত্র) আওয়ামী লীগের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী, একজন অধ্যাপক ও অন্যান্য স্থানীয় লােকজনের অনুরােধে প্রস্তুত করা হয়। সে প্রচারপত্রে নিজস্ব সেনা ও নৌবাহিনী সমেত স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রস্তাব করা হয় এবং তাতে কোন্ কোন্ ব্যক্তি শীর্ষস্থানীয় পদে আসীন হবেন তার তালিকাসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সােভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানাে হয়। তা পেশােয়ারে নিয়ােজিত একজন বিক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট, পূর্ব পাকিস্তানী এয়ারম্যানের কাজ বলে প্রতীয়মান হয়।’ তকালীন ছাত্রনেতা ‘বিদুর রাজ্জাক (সাবেক মন্ত্রী ও এমপি) আমাকে (লেখক) দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ রকম একটি প্রচারপত্র তিনিসহ কয়েকজন ছাত্র বিলি করেছেন। (দেখুন তার সাক্ষাতকার অংশে)। ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (২০০৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রচারিত) বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ষাটের দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার একটা প্রস্তুতি বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। যে কোনাে কারণে হােক সেটা সফল হয়নি।

৯৪ সালের ১০ আগস্ট লেখা ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন। “তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগের সব নেতা এবভাে’ ছিলেন অর্থাৎ সক্রিয় রাজনীতিতে কেউ অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তাই ছাত্রদের সংগঠিত করে আইয়ুব বিরােধী আন্দোলন শুরু করা হয়। আব্বা অবশ্য আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি বেড়াতে যেতেন বিভিন্ন জেলায়। সেখানে দলকে সংগঠিত করার কাজ ও আইয়ুব বিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য প্রতি জেলা, মহকুমা, থানায় গােপন সেল গঠন করেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য দলকে সুসংগঠিত করার কাজ গােপনে চলতে থাকে। ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। ‘৬২তে বহু ছাত্র গ্রেপ্তার হয়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের বহু নেতা এ বাড়িতে এসেছেন গােপনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ নিতে ও আলােচনা করতে।” দেশকে স্বাধীন করার গােপন প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে জড়িত সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য, সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেও পৃথক সাক্ষাৎকারে সশস্ত্র প্রস্তুতির বিষয় আমার কাছে স্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মধ্যে যারা এখনাে জীবিত আছেন তাঁদের মধ্যে খান শামসুর রহমান সিএসপি, ব্রিগেডিয়ার (অব.) খুরশিদ উদ্দিন, কর্নেল (অব.) শওকত আলী, কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ, নূর মােহাম্মদ বাবুল, (ক্যাপ্টেন বাবুল), করপােরাল এবিএম সামাদ, ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল জলিল, মাহফুজুল বারী, রাজসাক্ষী ডা. ছৈয়দুর রহমান, বিধান কৃষ্ণ সেন, লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেম হােসেনের স্ত্রী কোহিনুর বেগম, রুহুল কুদুসের ছেলে এহসান উল-আমিন, প্রয়াত মানিক চৌধুরীর স্ত্রী সবিতা চৌধুরী ও ছেলে দীপংকর চৌধুরী, সুবেদার আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী রিজিয়া বেগম ও ছেলে এসএম তরিকুল ইসলামের সাক্ষাতকার নিয়েছি।

ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কিন্তু চার্জশিটভুক্ত হননি এমন ব্যক্তি সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. মাহবুবুর রহমান, আলী রেজার ভাই আলী নওয়াজ, বৈরী সাক্ষী মাে. আবুল হােসেন, জয়নাল আবেদীন খান, সুলতান উদ্দিনের ভাই কামালউদ্দিন, প্রয়াত জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, অধ্যাপক সৈয়দ ইলিয়াছ ধামী প্রমুখের সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে পশ্চিম পাকিস্তানে তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত, কথায় কথায় চাকরিচ্যুতি, ছুটি ছাঁটা বা পদোন্নতিতে বৈষম্য ইত্যাদির শিকার হচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কিছু স্বাধীনচেতা, প্রতিবাদীমনষ্ক বাঙালি পাকিস্তানিদের অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বিক্ষিপ্তভাবে চিশ করতে থাকেন কীভাবে পাকিস্তানিদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কেউ কেউ এমনও ভাবেন যে এই অত্যাচার ও বৈষম্যের হাত থেকে বাঁচতে হলে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিমাদের শাসনের কবল থেকে মুক্ত অর্থাৎ স্বাধীন করতে হবে। প্রয়ােজনে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে হবে। কিন্তু অল্প কয়েকজন সৈনিক চাইলেই তাে আর স্বাধীনতা এসে যাবে না। এজন্য প্রয়ােজন সাংগঠনিক শক্তি, রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন ও সহযােগিতা এবং আর্থিক পৃষ্ঠপােষকতা। এ পর্যায়ে তারা প্রাথমিকভাবে পাঁচ-সাতজন আলাপ আলােচনার মাধ্যমে তৎকালীন বাঙালিদের মধ্য থেকে এমন সাহসী ও যােগ্য নেতার খোঁজ করতে থাকেন যিনি গােপন তৎপরতায় প্রয়ােজনীয় সাহায্য সহযােগিতা দিতে পারবেন এবং একই সঙ্গে এই সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন যােগাতে পারবেন। নানা সূত্রের মাধ্যমে তারা বেশ কজন জ্যেষ্ঠ নেতার সমর্থন চেয়ে ব্যর্থ হন।

এক পর্যায়ে নিশ্চিত হন যে, শেখ মুজিবই। হতে পারেন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সাহসী, প্রতিবাদী, উপযুক্ত সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিব ইতিমধ্যে অর্থাৎ ‘৬১ সালেই পূর্ব বাংলা মুক্তিফ্রন্ট’ নামে একটি গােপন সংগঠনের জন্ম দেন। পাশাপাশি চলে ছাত্রদের মধ্যে সশস্ত্র ক্যাডার সৃষ্টির প্রক্রিয়া। এর অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুর তত্ত্বাবধানে ছাত্রলীগের স্বাধীনতাপন্থী প্রগতিশীল বিশ্বস্ত বাছাই। করা কর্মীদের নিয়ে ‘৬২ সালে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ।’ ১৯৬৪ সালে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস’। শুরুতে এসব সংগঠনের নেতৃত্বে যুক্ত ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমদ। এ সম্পর্কে প্রয়াত জাসদ নেতা বিধান কৃষ্ণ সেন, কাজী আরেফ আহমদ ও আবদুর রাজ্জাকের পৃথক সাক্ষাঙ্কারে মােটামুটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। ষাটের দশকের গােড়ার দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত নৌবাহিনীর বিক্ষুব্ধ লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেমের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরােক্ষ যােগাযােগ শুরু হয়। ৬২ সালের শেষের দিকে করাচিতে নৌবাহিনীর কামাল উদ্দিনের টিচার্স হাউজিং সােসাইটির বাসায় এক গােপন বৈঠকে নৌবাহিনীর সদস্যেরা তাদের মনােভাবের কথা শেখ মুজিবকে খুলে বলেন। এবং তার নেতৃত্ব ও পরামর্শসহ সার্বিক সাহায্য সহযােগিতা চান। ওই বৈঠকে বিক্ষুব্ধ সৈনিকদের পক্ষে তাদের গ্রুপ নেতা মােয়াজ্জেম হােসেন, মােজাম্মেল হােসেন, সুলতান উদ্দিন, স্টুয়ার্ড মুজিব, নূর মােহাম্মদ বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শেখ মুজিব তাদের মনােভাব জেনে নিজেরও একই মনােভাব ও পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিতে রাজি আছি।

আপনাদের যখন যে রকম সাহায্য সহযােগিতা প্রয়ােজন তা আমি দেব।’ এ ছাড়া স্বাধীনতার আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে ছাত্রদের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি দেশপ্রেমিক সৈনিকদের সুসংগঠিত হওয়ার পরামর্শ দেন। তার আগে অর্থাৎ কমান্ডার মােয়াজ্জেমের প্রস্তাব পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু রুহুল কুদ্সসহ কয়েকজন অতি বিশ্বস্ত লােক নিয়ে বিষয়টি পর্যালােচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। সমস্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ গােপনীয়তা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে নৌ, বিমান ও সেনা সদস্যেরা তাদের বিশ্বস্ত লােকজন নিয়ে ধীরে ধীরে পৃথক পৃথক গ্রুপ সৃষ্টির মাধ্যমে সংগঠিত হতে থাকেন। ১৯৬৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপের নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে সােহরাওয়ার্দীর বাসভবন, করাচিতে লে. কমান্ডার মােয়াজ্জেমের করাচির বাসা, কামাল। উদ্দিনের বাসা, ঢাকায় তাজউদ্দিন আহমদের বাসা, চট্টগ্রামে ভূপতিভূতিভূষণ চৌধুরী, (মানিক চৌধুরী), ডা. ছৈয়দুর রহমান, বিধান সেনের বাসা, হােটেল মিসকা, হােটেল শাহজাহানসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নিরাপত্তা, গােপনীয়তা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু কেবল নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতেন। এমনকি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের তৎকালীন নেতৃত্বকে পর্যন্ত এই গােপন প্রক্রিয়ার আসল রহস্য জানানাে বারণ ছিল।

কারণ কোনাে কারণে ঘটনা ফাঁস হলে সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে এবং বাঙালিদের মুক্তি তথা স্বাধীনতার আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। বিপ্লবী সংগঠনের সূচনাকালীন ও গােপন বিপ্লবী কাউন্সিলের একমাত্র জীবিত সদস্য নূর মােহাম্মদ বাবুল জানিয়েছেন ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘােষণার পর করাচিতে শহীদ সােহরাওয়ার্দীর বাসভবনের সামনে টেকসি দুর্ঘটনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু তাঁর পক্ষে সৈনিকদের সঙ্গে পরােক্ষভাবে যােগাযােগের জন্য চট্টগ্রামের মানিক চৌধুরীকে মনােনীত করেন। পরে ডা. ছৈয়দুর রহমান ও বিধান কৃষ্ণ সেনকেও নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু তার বিশ্বস্ত বেশ কয়েক জন সিএসপি কর্মকর্তা যেমন রুহুল কুদুস, আহমদ ফজলুর রহমান, খান শামসুর রহমান প্রমুখের সঙ্গেও স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়ােজন এবং সৈনিকদের সহযােগিতার ব্যাপারে আলােচনা করতেন। মানিক চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে অনেক সময় খবরাখবর জানাতেন বেগম মুজিবকে। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী কমান্ডার মােয়াজ্জেম হােসেনের নেতৃত্বাধীন সৈনিক গ্রুপের সঙ্গে সিএসপি কর্মকর্তাদেরও একাধিক বৈঠক হয় করাচি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে। সিএসপি কর্মকর্তাসহ আগরতলা মামলার সব আসামি স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা জানলেও এর বাস্ত বায়নের প্রকৃত কৌশল সম্পর্কে সবাই পুরােপুরি জানতেন না।

সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথাবার্তা ও তাঁর কার্যক্রমে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর মূল (বঙ্গবন্ধুর) লক্ষ্য ছিল, সকল প্রগতিশীল স্বাধীনচেতা শক্তির সম্মিলন ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করা। তবে এ পর্যায়ে সরকারের দিক থেকে সশস্ত্রভাবে বাধাবিঘ্ন এলে সশস্ত্র উপায়েই তা মােকাবেলার মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এজন্য প্রয়ােজন হলে ভারতের সহযােগিতা নেওয়া এবং এ ব্যাপারে উপায় বের করার জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলােচনার প্রক্রিয়াও চলে। এমনকি বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে আলােচনার জন্য ৬৩-৬৪ সালে বিলােনিয়া সীমান্ত দিয়ে গােপনে ভারতে গিয়েছেন তাও নিশ্চিত করেছেন তার সফরসঙ্গী বৈরী সাক্ষী আবুল হােসেন। কিন্তু চারদিকে প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি শেষ হওয়ার আগেই নানা কারণে পাকিস্তানি গােয়েন্দা সংস্থার কাছে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। মামলা চূড়ান্ত করার আগেই শেখ মুজিবকে জেলে আটক রাখা হয়। পরে একে একে গােপন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে যুক্ত তিন হাজারের (কারাে মতে ৪ থেকে ৫ হাজার) বেশি লােককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত ৩৫ জনকে চার্জশিটভুক্ত আসামি এবং ১১ জনকে রাজসাক্ষী করে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ শিরােনামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয় যা আগরতলা মামলা নামে পরিচিতি পায়। মামলায় মােট ২০০ সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে দেখানাে হয়।

চার জন সাক্ষী মামলার জেরাকালে অভিযােগ অস্বীকার করলে বৈরী ঘােষণা করা হয় তাদের। মামলার প্রধান অর্থাৎ এক নম্বর আসামি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং দু নম্বর আসামি ছিলেন লে. ক. মােয়াজ্জেম হােসেন। আগরতলা মামলায় মাত্র ৩৫ জনকে আসামি করা হলেও এতে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত, তাদের নানাভাবে সহযােগী হিসেবে জড়িত সদস্য সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারের ওপরে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। মূল আসামি ছাড়াও মামলা শুরুর দিক থেকে পরবর্তীতে তিন হাজারের বেশি লােককে, কারাে কারাে ধারণা, আরাে বেশি সংখ্যক লােককে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের অনেকে বিনা বিচারে এক থেকে দেড় বছর জেল খেটেছেন, নির্যাতন ভােগ করেছেন। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত করার মতাে পর্যাপ্ত সাক্ষী প্রমাণের অভাবে তাদেরকে আসামি হিসেবে দেখানাে হয়নি এবং অভিযােগপত্রও সেভাবে দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করা হলে সংশ্লিষ্ট সবাই জেল থেকে মুক্তি পান। এরকম বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পরে সার্জেন্ট (অব.) আবদুল জলিল ও অন্য কয়েকজন আসামির পরিচয় হয়, কথা হয়। আসামির তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ওইসব দেশপ্রেমিকদের তখন যেমন, পরবর্তীতেও তেমন কোনাে রকম খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি বা লেখালেখি হয়নি। কত লােক বিপ্লবীদের দলভুক্ত হয়েছিলেন তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া না গেলেও আবদুল জলিলকে গ্রেপ্তারকারী পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা ওসমানীর কয়েকটি কথায় এ সংখ্যা সম্পর্কে মােটামুটি ধারণা করা যায়। ওসমানীর কথাটুকু শােনা যাক আবদুল জলিলের ভাষায়, “আমাকে গ্রেপ্তারকারী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ওসমানী পুলিশ প্রহরায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে সামান্য কথা হয়। আমাদের গ্রেপ্তারের কারণ, কতজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এরকম ছােটখাটো কথা। তিনি (ওসমানী) আমাকে বলেছিলেন, “তােমাদের আন্দোলনের কারণ হয়তাে জেনুইন। কিন্তু তােমরা আন্দোলনকে যে পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছিলে তা ঠিক ছিল না।

তােমরা এরই মধ্যে যেভাবে অগ্রসর হয়েছ তাতে আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্সে বাঙালি যাঁরা আছেন তাদের সকলকেই গ্রেপ্তার করতে হয়। কিন্তু সবাইকে গ্রেপ্তার করতে গেলে বিষয়টি একদিকে জটিল, অন্যদিকে হাস্যস্পদ খাবে, আদালতে প্রমাণ করাও কঠিন হবে। কাজেই আমরা শুধু তােমাদের নেতৃস্থানীয় কিছু লােককে ধরে এমন সাজা দেব, যাতে এই সাজা দেখে বাকিরা আপনাআপনি চুপ হয়ে যাবে।” আসামি বিধান কৃষ্ণ সেন, নূর মােহাম্মদ বাবুল, কমান্ডার আবদুর রউফসহ অন্য অনেকের কাছেও জানা গেছে, প্রথম দিকে চার পাঁচজন করে এক একটা গ্রুপ বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় যাত্রা শুরু করলেও ঘটনা ফাঁস হওয়ার আগে পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের সংস্পর্শে এসে পাঁচ হাজারের বেশি সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি অলিখিতভাবে তাঁদের সদস্য হয়েছিলেন। এর প্রমাণ হিসেবে প্রাক্তন সেনাপ্রধান লে.জে. মাহবুবুর রহমান, আসামি আলী রেজার ভাই আলী  নওয়াজ এবং আসামির তালিকাভুক্ত না হয়েও ১৪ মাস জেল খাটা জয়নাল আবেদীন খানের কথা উল্লেখ করা যায়। তাঁদের পৃথক সাক্ষাঙ্কার এই গ্রন্থে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযােগপত্র পর্যালােচনায়ও দেখা যায়, অভিযুক্তদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে এমন অনেকেই উপস্থিত ছিলেন যাদের নাম পরিচয় তদন্তকারীরা উদ্ধার করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভারতের সহযােগিতায় সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন তথা স্বাধীন করতে চায় এমন স্বীকারােক্তি আদায়ের জন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা আসামিদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালায়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্রের কথা শুনে পূর্ব বাংলার মানুষ শেখ মুজিবসহ স্বাধীনতাকামীদের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠবে এবং এতে শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝােলানাের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলন চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে এই ধারণা থেকে সরকার মামলাটিকে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা  হিসেবে প্রচার করে। কিন্তু বাঙালিরা সরকারের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন শেখ মুজিবসহ আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ব্যাপক গণআন্দোলনের মাধ্যমে।

অবশেষে গণবিস্ফোরণের মুখে উপায়ান্তর না দেখে সরকার মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হন এবং বঙ্গবন্ধুসহ সব বন্দী জেল থেকে মুক্তি পান। মামলা থেকে মুক্তির পর ‘৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আহূত সমাবেশেই শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কার্যক্রমের জন্য যে টাকা পয়সার দরকার তা নানা উৎস থেকে পাওয়া যেত। এসব উৎস মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগ্রহেই সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম উৎস ছিলেন চট্টগ্রামের মানিক চৌধুরী। আসামি সুলতান উদ্দিন ১৯৯২ সালে তা জানিয়েছিলেন তার ভাই কামাল উদ্দিনকে। বিধানকৃষ্ণ সেনও বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সূত্র থেকে টাকা সংগ্রহ করে আন্দোলনের কাজে খরচ করতেন। তিনি চাইলেই টাকা পেতেন। বেগম মুজিবের মাধ্যমেও টাকা পয়সা কিছু পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নিউ এজেন্সি নামে যে কাস্টমস ক্লিয়ারিং, ফরওয়ার্ডিং অ্যান্ড ইভেন্টিং ফার্ম ছিল তার আয়ের বড় একটা অংশ গােপন আন্দোলনের পেছনে খরচ করা হতাে। এ ছাড়া, রুহুল কুদুসের মতাে প্রভাবশালী পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সমমনা শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও কিছু অর্থের সংস্থান হতাে বলে সংশ্লিষ্টরা। ধারণা দিয়েছেন।

সূত্র : আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দী – মুহাম্মদ শামসুল হক