ভুট্টো সাহেবের শাসানি
পশ্চিম পাকিস্তানের ৮৩ সুবার অধীশ্বর হয়ে ভূট্টো সাহেব একেবারে ডিক্টেটরী মেজাজে কথা বলতে শুরু করেছেন। রক্তচক্ষু করে তিনি শাসিয়েছেন যে পশ্চিম পাকিস্তানে কেউ যদি ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগদানের জন্য যায়, তবে তিনি দেখে নেবেন। প্রকারান্তরে তিনি পাকিস্তানের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানকেও হুমকি দিয়েছেন। খাকি পােশাক পরিহিত কেউ অর্থাৎ সামরিক মহলের কোনাে কর্তা গেলেও রেহাই পাবেন না। হরধনু-ভঙ্গ পণ তার। আওয়ামী লীগ তাঁর ছয় দফা কর্মসূচী থেকে সরে না দাঁড়ালে ভুট্টোর দল জাতীয় পরিষদ বর্জন করবেই। তার অর্থ গােটা সাধারণ নির্বাচনের ফলই রসাতলে ডুবিয়ে দেবার জন্য ডিক্টেটরী জেদ।
যাদের জোরে ভুট্টো কুদছে তারা যে দেশের স্বার্থের চেয়ে বিদেশের স্বার্থের বেশি বশ একথা না বললেও চলে। নয়া-উপনিবেশবাদীরা পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক শাসনে আসতে দিতে চায় না। ভুট্টো তাদেরই হাতের ক্রীড়নক হয়ে গণতন্ত্রের মাথায় কুড়ােল মারতে উদ্যত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান যতই সংকল্পে অটল হচ্ছেন ভুট্টো সাহেবের মেজাজ ততই চড়ছে। তিনি নাকি পিকিং নেতাদের প্রিয়পাত্র। তাই হয়তাে মাও-ভক্ত নকশাল-পন্থীদের সঙ্গে মেজাজও পন্থার অনেকটা মিল। এদেশেও নকশাল পন্থীরা নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের বিরােধী। ভূট্টো নির্বাচনে দাঁড়ালেও সংসদীয় গণতন্ত্রের পথরােধ করে দাঁড়াতে কৃতসংকল্প। তাই যখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আসন্ন ও সংবিধান রচনার শুভক্ষণ উপস্থিত, তখন ভুট্টো সাহেব স্বরূপে প্রকাশ। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে তিনি কীরূপ ধরবেন তারই প্রতীক্ষায় থাকব আমরা।
সূত্র: কালান্তর, ৯.২.১৯৭১