স্মৃতি চিরন্তন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ” শুধু একটা নাম নয়, একটা প্রতিষ্ঠান নয়, `৫২, `৬৯, `৭১ থেকে শুরু করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনের পতন তথা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক আর সংস্কৃতিক পট পরিবর্তনের শুরুটা ঘটেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর নেতৃত্বে, এই বিশ্ববিদ্যালয় তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেড়িয়ে হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অস্তিত্বের আঁতুরঘর, চেতনার এক মূর্ত প্রতীক।
বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রধান ফটক “মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ” দিয়ে প্রবেশ করে কিছুদূর সামনে এগোলে ভিসির বাসভবনের সামনে চোখে পড়বে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আত্মত্যাগ-তারই নিদর্শনস্বরূপ গ্রানাইট পাথরের ছোট বড় ১৪ টি দেয়াল। বেদিতে ওঠার সময় কালো সিঁড়ির উভয় পাশে বাংলা ও ইংরেজীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে “স্মৃতি চিরন্তন” শিরোনামে নাম ফলক।
“মরণসাগর পারে তোমরা অমর, তোমাদের স্মরি, নিখিলে রচিয়ে গেলে আপনারি ঘর, তোমাদের স্মরি।” স্মৃতি চিরন্তনে পা রাখতেই চোখে পড়বে সমান দূরত্বে অবস্থিত সম আকৃতির দু`টি স্তম্ভ, যার একটিতে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমর চরণদ্বয়। অপর স্তম্ভে রয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে উদ্ধৃত : “শহীদ ভাইদের মুখ মনে কর, আর গভীর বেদনায় মূক স্তব্ধ হইয়া যাও, মনে কর, তোমাকে মুক্তি দিতেই সে এমন করিয়া বিদায় লইয়াছে।”
ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, প্রায় দেড়শ বছরের বিশাল এক রেইনট্রি (কড়ই) গাছ মায়ের মমতায় ডাল পালা মেলে ছায়া দিয়ে বুকে করে আগলে রেখেছে স্মৃতি চিরন্তনকে। রক্ত দিয়ে কেনা বাংলার প্রাণ বলিদানের ইতিহাসের অনেকগুলো পাতা জুড়ে রয়েছে ২৫ মার্চ কালো রাতের কাপুরুষোচিত অতর্কিত আক্রমন ও পুরো মুক্তিযুদ্ধ জুড়ে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নৃশংস লাশ এ পরিণত হবার স্মৃতি। দীর্ঘদিন ধরে সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছে স্মৃতি চিরন্তন বা মেমোরি ইটারনাল।