পাকিস্তানে ডলারের কালাে বাজার গড়তে আমেরিকা, জাপানের মদত
রাওয়ালপিণ্ডি, ২১ মার্চ (এ.পি) – পাকিস্তানে গবেষণারত মার্কিন অর্থনীতিবিদ গর্ডন উইনস্টন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরােপ ও জাপানের ডলার পাকিস্তানী ব্যবসায়ীরা কালােবাজারের টাকায় খাটিয়ে অপ্রত্যাশিত লাভ করছে।
ভারতীয় মুদ্রায় ১৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা খাটিয়ে একজন শিল্পপতি পাকিস্তানে একটি ফ্যাক্টরি গড়বার জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি করছেন। কিন্তু উক্ত ব্যবসায়ী ঐ ফ্যাক্টরি গড়ে তােলা বা চালু করার আগেই ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শশা টাকা আয় করতে পারেন বলে উক্ত মার্কিন অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেন।
পাকিস্তান উন্নয়ন পর্যালােচনা মূলক পত্রিকা স্কলারলি কোয়াটারলি’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধে শ্রী উইনস্টন দাবি করেছেন, গতবছর কালাে টাকায় যে পরিমাণ ডলার লেনদেন হয়েছে তা গত চার বছরের চেয়ে বেশি। পাকিস্তানের জনৈক সরকারী মুখপাত্র অসহায়তা স্বীকার করে বলেন যে, “আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু করার নেই।”
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অফিসাররা বলেছেন, লাভের অংক ফুলিয়ে তােলার জন্য মার্কিন সংস্থা একটি জটিল পরীক্ষা পদ্ধতি গড়ে তুলেছে। পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের জনৈক সদস্য বলেছেন, আমদানিকৃত মাল-মশলার ভিত্তিতে গড়ে ওঠো নতুন শিল্পগুলিতে এই অপ্রত্যাশিত লাভের অংশ বেশি।
কালাে-বাজারে টাকা লাভের একটি উপায় চালানে বেশি টাকার অংক দেখান। শ্রী উইনস্টন ব্যাখ্যা করে বলেন ঃ সরকারী অনুমােদনে পেট্রোকেমিক্যাল, সূতিবস্ত্র বা কাগজ প্রভৃতি শিল্প নির্মাণ করার জন্য একজন ব্যবসায়ী একটি বিদেশী কোম্পানিকে যন্ত্রপাতির জন্য অর্ডার দিলেন সরবরাহকারী উক্ত ব্যবসায়ীকে এমন চালান দিলেন যাতে ক্রয়মূল্য বাঁচিয়ে লেখা হল। শিল্পপতি স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে দুর্মুলা বিদেশী মুদ্রা সরকারী বিনিময় হারে (১ ডলার সমান ৪.৭৬ টাকা) লাভ করলেন। কিন্তু কালাে বাজারে ১ ডলার প্রায় ১১ টাকায় বিক্রী হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিময় হার ১ ডলার সমান ১৩ বা ১৫ টাকা। বিদেশী শিল্পপতিকে যন্ত্রপাতি বাবদ দাম দেবার পর যে বিদেশী মুদ্রা পাকিস্তানী ব্যবসায়ীর হাতে থেকে যায় তিনি তা কালাে বাজারে খাটিয়ে প্রচুর মুনাফা লােটেন।
মার্কিন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, এই বিদেশী মুদ্রার কালােবাজারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপান যুক্ত কারণ পাকিস্তানী ব্যবসায়ীরা এই দেশগুলির কাছ থেকেই প্রধানতঃ ভারি শিল্প আমদানি করে থাকেন।
সূত্র: কালান্তর, ২২.৩.১৯৭১