শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেবার জন্য পাকিস্তানকে চরমপত্র দিন
রাজ্যসভায় কমিউনিস্ট সদস্যের দাবি
নয়াদিল্লী, ১৫ জুন (ইউএনআই) বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আজ রাজ্য সভায় তিন ঘন্টা আলােচনা চলে। সরকারপক্ষ ক্রমবর্ধমান শরণার্থী চাপে ব্ৰিত বােধ করা সত্ত্বেও এ সমস্যা মােকাবিলার জন্য কোন সুস্পষ্ট নীতি ঘােষণা করেননি। আজও সভায় বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে কঠোর হস্তে উদ্বাস্তু সমস্যা মােকাবিলার জন্য বিরােধী পক্ষের বহু সদস্য দাবি তােলেন। ইন্দিরা কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য এ দাবিতে কণ্ঠ মেলান।
কমিউনিস্ট সদস্য শ্রীকল্যাণ রায় বলেন, সরকার পাকিস্তানকে জানিয়ে দিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শরণার্থীদের ফিরিয়ে না নিলে ভারত সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।
ইন্দিরা কংগ্রেস সদস্য শ্রীমহীতােষ পুরকায়স্ত অভিযােগ করেন সরকার এখনও বাঙলাদেশ সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করেননি। এমন কি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের সদস্যরাও সরকারী নীতি পরিষ্কার বুঝতে পারেন নি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুস্পষ্ট নীতি ঘােষণার এবং বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আবেদন করেন।
অপর ইন্দিরা কংগ্রেস সদস্য শ্রীকৃষ্ণকান্ত অত্যন্ত লজ্জা ও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন বাঙলাদেশ প্রশ্নে সরকার নিজেকে আমলাদের দ্বারা চালিত হতে দিয়েছেন। আর এর ফলে আমাদের অর্থনীতি, স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা এখন বিপন্ন হচ্ছে।
তিনি দেশের রাজনৈতিক কর্ণধারদের কাছে আবেদন করেন, অঘােষিত যুদ্ধের অবস্থা নিয়ে শরণার্থী সমস্যার মােকাবিলা করুন।
আজকের বিতর্ক সরকারের দ্বিধাগ্রস্ত নীতি সবচেয়ে কঠোর সমালােচনা করেন বাঙলা কংগ্রেস নেতা শ্রীপ্রণব মুখাজি। তিনি বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে একটি জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেবার দাবি জানান।
বাঙলাদেশ প্রশ্নে সরকার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযােগ জানিয়ে শ্রীমুখার্জি বলেন, শরণার্থী সমস্যা আর পাকিস্তানের ঘরােয়া সমস্যা নয়। এটি এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যার রূপ নিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ভারতের হস্তক্ষেপে কোন ক্ষতি নেই। ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি নজির রয়েছে।
তিনি বলেন শরণার্থীর চাপে পশ্চিমবাঙলা, ত্রিপুরা ও আসামের প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। শক্ত হাতে তিনি এ সমস্যার মােকাবিলা করতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার ২০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণে শরণার্থী সমস্যা মােকাবিলার জন্য পাকিস্তানকে চরমপত্র দেবেন কিনা, বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন কিনা এসব প্রশ্নের কোন জবাব দেন নি। তিনি বলের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে বিশ্বের দেশগুলিকে দায়িত্ব এড়িয়ে থাকতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত দিন যাচ্ছে বাঙলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আশা সুদূরপরাহত হয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে বিশ্বের শক্তিশালি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে কোন রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব হতাে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, শরণার্থীদের অবশেষে ফিরে যেতেই হবে। কিন্তু এক্ষুণি তাদের ঘাতকের হাতে তুলে দিতে সরকার চায় না।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদেশী দেশগুলির কাছ থেকে যা সাহায্য পেয়েছি তা প্রয়ােজনের তুলনায় সামান্য। যা দরকার তার দশ ভাগের একভাগ মাত্র। তবে সাহায্যের চেয়ে ভারত গণতন্ত্র, স্বাধিকার ও মানবিক মর্যাদার কথাই বেশি ভাবছে।
সূত্র: কালান্তর, ১৬.৬.১৯৭১