You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.18 | অতন্দ্র প্রহরায় আমরা স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখব- মুনাফা শিকারীগণ হুঁশিয়ার, ত্রিপুরার মানুষ তােমাদের ক্ষমা করবে না | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

অতন্দ্র প্রহরায় আমরা স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখব
মুনাফা শিকারীগণ হুঁশিয়ার, ত্রিপুরার মানুষ তােমাদের ক্ষমা করবে না

আগরতলা, ১৬ আগস্ট ॥ স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতিব্ৰতী অমর শহীদগণের উদ্দেশে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করিয়া ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ গতকাল স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বিশ্লেষণ পূর্বক ত্রিপুরাবাসী ভাইবােনদের নিকট বেতার মারফতে দেশের ঐক্য-সংহতি রক্ষার সংকল্প গ্রহণ করিবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বহু শতাব্দীর পরশাসনের পর ভারত কঠোর ও কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জন করয়াছে সেই স্বাধীনতা অমলিন ও অক্ষুন্ন রাখার দায়িত্ব ভারতের প্রতিটি নাগরিকের। অতন্দ্র প্রহরায় আমরা এই স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখব- আজ ১৫ আগস্ট এই শপথ গ্রহণের দিন। ভারতের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি প্রান্ত, প্রতিটি পল্লী ও প্রত্যেক পল্লীবাসীর উন্নতিই সামগ্রিকভাবে ভারতবর্ষের যথার্থ উন্নতি। এই উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যই আমরা গণতান্ত্রিক সমাজবাদের আদর্শ গ্রহণ করিয়াছি। ব্যক্তি-স্বার্থ আর গােষ্ঠীস্বার্থ সমাজবাদ রূপায়ণের পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই অন্তরায় দূর করিবার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী গরিবী হঠাও আন্দোলনের ডাক দিয়াছেন। এই আন্দোলন সার্থক করিয়া তুলিতে হইবে। অতঃপর তিনি ত্রিপুরায় পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দান করেন এবং ভবিষ্যতে করণীয় কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করেন। তিনি তাহার ভাষণে কৃতজ্ঞতার সহিত পরিকল্পনা রূপায়ণে জনসাধারণের সহযােগিতার কথা উল্লেখ করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতেও ত্রিপুরাবাসীর সহযােগিতায় ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছা সহজতর হইবে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শ্রীসিংহ বলেন, বাংলাদেশের ভাইয়েরা গণতন্ত্রের জন্য লক্ষ লক্ষ আত্মদান করিতেছে। আমরা গণতন্ত্রী, ভারতবাসী মাত্রেই বাংলাদেশের এই আন্দোলনের সমর্থক। স্বাধীনতা সম্রামের অতুলনীয় বীর সেনানায়ক শেখ মুজিবরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। শ্রী সিংহ তাহার ভাষণে এই বলিয়া গর্ব প্রকাশ করেন যে, পাক সামরিক শাসকের বর্বরােচিত আক্রমণের শিকার স্বরূপ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন আশ্রয়ের আশায় ত্রিপুরায় প্রবেশ করেন তখন শত অসুবিধা সত্ত্বেও ত্রিপুরাবাসী তাহাদের আশ্রয় দিতে দ্বিধা বা কার্পণ্য করে না। বাংলাদেশে সংগ্রাম চলিতেছে, এখনও কাতারে কাতারে শরণার্থীরা ত্রিপুরায় আসিতেছেন। তাহাদের জন্য চাই আশ্রয়, চাই খাদ্য, চাই সেবার ব্যবস্থা। আমার ভাইবােনেরা! ক্ষুদ্র এই ত্রিপুরা, অর্থনীতিতে অনগ্রসর, নাই তার যথাযথ যােগাযােগ ব্যবস্থা সর্বোপরি রাজ্যের স্থায়ী জনসংখ্যার প্রায় সমপরিমাণ শরণার্থী ইতিমধ্যে আশ্রয় লইয়াছেন। কাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার আমাদের অন্ত নাই। তবু আমি লক্ষ করিতেছি আমার ভাইবােনেরা এতটুকু বিচলিত হয় নাই। রাজ্যের তরুণ ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিক সমাজ সকলেই আগ্রহের সহিত আন্তরিকভাবে বাংলাদেশাগত শরণার্থীদের সেবায় যথাসাধ্য করিতেছে।
রাজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা সঠিক রাখার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের উপর ন্যস্ত গুরু দায়িত্বের কথা উল্লেখ করিয়া বলেন, প্রতিটি ব্যবসায়ীকে আমি অনুরােধ করিব তারা যেন সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেন। যদি কেহ এই সুযােগে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য সক্রিয় হইয়া ওঠেন তবে তাহারাই যেন তাদের ব্যবসায়ী ভাইদের সংযত করেন, নইলে ত্রিপুরার মানুষ তাদের কখনও ক্ষমা করিবে না।
পাক সরকারের যুদ্ধের হুমকি, প্ররােচণামূলক গােলাগুলি বর্ষণ এবং অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করিয়া শ্ৰী সিংহ বলেন, দেশের শত্রুদের সম্পর্কে বিশেষ সতর্ক থাকা আবশ্যক এবং বিশেষ বিবেচনা না করিয়া কিছু করা উচিত নয়। আমরা যেন ভুলিয়া না যাই- অতন্দ্র প্রহরাই স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। উপসংহারে তিনি জনসাধারণকে দেশের সমৃদ্ধির কাজে পূর্বের ন্যায় ভবিষ্যতেও সরকারকে সহযােগিতার আহ্বান জানান।

সূত্র: ত্রিপুরা
১৮ আগস্ট, ১৯৭১
১ ভাদ্র, ১৩৭৮