You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ আপডেট – বিভিন্ন খণ্ড যুদ্ধ

ঢাকায় কারফিউ ছিল কিন্তু জনতা কারফিউ না মেনে ঘরের বাহিরে চলে এসেছে। সারা শহর জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত। রাস্তায় রাস্তায় তৃষ্ণার্ত সৈনিকদের জন্য কলস ভরে পানি ও ফুল নিয়ে জনতা অপেক্ষা করছে। সময়সীমা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে নিয়াজি সারেন্ডারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ১৪ তারিখে ভুলতা ও বরপা পৌঁছে এস ফোর্স। ১৫ তারিখ তারা অবস্থান নেয় পুবগাও। এস ফোর্সের কাছাকাছি অবস্থান নেয় ১০ বিহার এবং ৬৫ পার্বত্য রেজিমেন্ট। পোস্টে ব্যাবহারকৃত ছবি গুলি এই গ্রুপের বাহিনীর। ঘোড়াশাল দিয়ে আসা ৭৩ ব্রিগেডের ১৪ গার্ড ১৯ রাজপুতানা রাইফেলস ১৫ তারিখ ঘোড়াশাল ১৬ তারিখ পুবাইল অবস্থান করার পর স্থির করে দেয়া হয়।
এস ফোর্সের লেঃ আনিস / ডাঃ হাসান এর মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বাড্ডায় এসে ক্যান্টনমেন্ট এর দিকে কিছু ৮১ মিমি মর্টার গোলা নিক্ষেপ করে।
ব্রিগেডিয়ার শাহবেগ সিং একটি জীপে করে মেজর হায়দারকে নিয়ে ডেমরা দিয়ে ঢাকা পৌঁছেন।
৪ গার্ড এবং ৫ আরমার্ড রেজিমেন্ট সারেন্ডার স্বাক্ষরের আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে।
এদলের সাথে ৭ সাংবাদিক আছেন যার একজন বিদেশী শনবার্গ। দলটি ১৬ ডিসেম্বর বরপাতে পৌছার পর এক ঘণ্টা যাবত ঢাকার দিকে ৭৫ মিমি গোলাবর্ষণ করে। পরে তারা ডেমরার পূর্বে নদীর পাড়ে আসে এবং সেখানেও কিছু গোলাবর্ষণ করে। তারপর কয়েকটি ফ্যাক্টরি দিকে তাক করে মেশিন গানের গুলী বর্ষণ করে। পাকিস্তানের দিক থেকে প্রতিউত্তর না পাওয়ায় তারা শীতলক্ষ্যার পার থেকে উপরে উঠে অগ্রসর হতে লাগলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের তরফ থেকে তাদের দিকে গুলী বর্ষণ শুরু হয়। তাদের গুলীতে একটি ছাগল ছানা নিহত হয়। ভারতীয়রা ওয়্যারলেস মেসেজ দিয়ে জানাতে লাগলো পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে তোমরাও তৈরি হও। তাদের সাথে মুল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোন যোগাযোগ না থাকায় তারা কিছুই জানতো না। ১০ মিনিট পর ওপারে সাদা কাপড় উড়ল এ পাড় থেকে মেজর ধিলন এবার পাড়ের উপর উঠলেন। তারপর তিনি চিৎকার করে বললেন সারেন্ডার করুন। ওপারে দেখতে দেখতে ৪ জন হয় পরে ১৫ জন বাকীরা পালিয়ে যায়। একজন ভারতীয় সৈন্য গুলিতে আহত হয়। পরে পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করে। নদী পার হবার পর উৎফুল্ল জনতা ট্যাঙ্ক এর পিছনে আনন্দ মিছিল করতে থাকে। এপারে শনবারগ ব্রিগেডিয়ার মিশ্র এর দেখা পান তিনি তার জীপে করে ঢাকা পৌঁছান। যাওয়ার পথে মিশ্র একটি পাক ব্যারাকে যান এবং সেখানে নির্দেশনা জারী করেন ভারতীয় বাহিনী না আসা পর্যন্ত কেউ যাতে বাইরে না যায়। গাড়ীতে আরোহী এক অফিসার বলেন আমরা যদি পাকিস্তানী সৈন্য এবং তাদের দোসরদের রক্ষা না করি মুক্তি বাহিনী তাদের জবাই করবে। ঢাকার ভিতরে প্রবেশের পথেই দেখা গেল পাকিস্তানী জিপ যার মধ্যে ৫০ ক্যালিবারের মেশিনগান লাগানো তার জীপ অভিমুখে আসা একটি ক্ষুদ্র মিছিলে কয়েক রাউন্দ গুলি করে ফলে সেখানে দুজন নিহত হয়। মিশ্র তাদের আটক করেন তার সাথে নিয়ে যান। তাদের বিচার হবে আশ্বাস দেন। একটু দুরেই পাকিস্তানী সৈন্য বাহী একটি বাস দেখা গেল যার ভিতরে তাদের পরিবারও আছে। দেখতে তাদের শরণার্থীদের মতই লাগছিল। বিমানবন্দরে ১০ টি ভারতীয় হেলিকপ্টার দেখা গেল।

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার অপর পারে নবীগঞ্জে ১৫ তারিখ পৌঁছে ১৪ জাঠ সাথে এক কোম্পানি ১২ কুমাউন, ১/১১ গুর্খা পৌঁছে কুড়িপাড়া সাথে ২৩ পার্বত্য রেজিমেন্ট। ১৬ ডিসেম্বর সকালেই ১৪ জাঠ বন্দর,নবীগঞ্জ, মদনগঞ্জ এলাকা পরিস্কার করে। এখানে ৯ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয় আহত হয় ২৫ জন। পক্ষান্তরে পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয় ৫০ জন। দুপুরে ১/১১ গুর্খা নদী অতিক্রম করে এপারে আসে এবং দুপুর দুটার দিকে তারা আত্মসমর্পণের সংবাদ অবগত হয়। ৫৭ ডিভিশন তাদের ৩০১ ব্রিগেডকে ঢাকায় যেতে বলায় তারা ঢাকা পৌঁছে সন্ধায়। কাছাকাছি বিভিন্ন অবস্থানে থাকে ১৯৭ পার্বত্য রেজিমেন্ট এবং খণ্ডিত ৩ কুমাউন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!