১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ ঢাকার দ্বারপ্রান্তে ভারতীয় বাহিনী
মিরপুর ব্রিজের পশ্চিম প্রান্ত দখলে আসে রাত দুটায়। এর এক ঘণ্টা পরে পূর্বের পাক সৈন্য প্রত্যাহার হয়। পশ্চিম পাশের দখলের সময় ভারতীয় সৈন্যদের হতাহতের কারনে সেখান থেকে তাদের প্রত্যাহার করে এমএমজি কম্যান্ডো দিয়ে অক্ষত অবস্থায় ব্রিজের দখল নেয়া হয়। তারপর ২ প্যারা মোতায়েন করে ব্রিজের দখল পোক্ত করে। এখানে যুদ্ধে ২৬ জন পাক সৈন্য নিহত ১৫ জন আহত হয়। ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে ৪ জন নিহত এক অফিসার ও একজন আহত হয়। তিনটি পাকিস্তানী জীপ তিনটি ২ ইঞ্চি মর্টার ৩টি এমএমজি ধ্বংস করা হয়।(O)
হেলিকপ্টার যোগে মেজর জেনারেল নাগড়া, ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিং, ব্রিগেডিয়ার হরদেভ ক্লের সকাল সাত টায় মিরপুর ব্রিজের কাছে পৌঁছেন। এর মধ্যেই নাগরা খবর পান নিয়াজি আত্মসমর্পণে রাজী হয়েছেন। তিনি ক্লেরকে বলেন তাদের বেতারে নিয়াজির বার্তা ধরা পড়েছে। নিয়াজি আত্মসমর্পণের কথা বলেছে। এই তথ্য এর উপর নাগড়া একটি সাহসী কাজ করলেন। তিনি তার এডিসি ক্যাপ্টেন মেহতাকে এবং ২ প্যারা ব্যাটেলিয়ন এর এডজুটেনটকে সাদা ফ্লাগে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার জন্য নিয়াজির কাছে পাঠালেন। কিছুক্ষন পর মেজর সেথি আরও ২ জন অফিসার ব্রিজের কাছাকাছি যেয়ে দেখেন তাদের এক জন সৈন্য এর লাশ রাস্তার পাশে পরে আছে। গাড়ি দুটি ধ্বংস হয়ে ব্রিজের কাছেই পরে আছে। পাকিস্তানী অগ্রবর্তী সৈন্যরা প্রথম দলটিকে নিয়ে আধা কিমি পিছনে তাদের দলনেতার কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তারা পাকিস্তানী সেই কমান্ডারের কাছে নাগড়ার সেই পত্রটি প্রদান করেন। পাকিস্তানী অধিনায়ক পত্রটি নিয়াজির কাছে পাঠান। পত্রে লিখা ছিল my dear Abdullah I am here. the game is up. I suggest you give yourself up to me and I will look after you –gandarv এক ঘণ্টা পর পাকিস্তানী অধিনায়ক জানান তাদের কাছে মেজর জেনারেল জামশেদ আসছেন। মেজর জেনারেল জামশেদ আসার পর মেজর সেথি, ক্যাপ্টেন মেহতা, ক্যাপ্টেন শর্মা তাদের গাড়ীতে মেজর জেনারেল জামশেদকে নাগড়ার কাছে আসেন। পাকিস্তানী অবস্থানে থাকা কালে সেই গাড়ীর সাদা ফ্লাগ সেখানকার কেউ সরিয়ে ফেলে। ফলে আসার সময় সেই গাড়ীতে ভুলবশত ভারতীয় বাহিনীর তরফ থেকে গুলি বর্ষণ হয়। জামশেদ গাড়ীতে এমন ভাবে বসেছিলেন গুলি তার গায়ে লাগবে না।
নিরাপত্তার জন্য সামনে ড্রাইভার আর সামনের আসনের মাঝে জামশেদ একজন পাকিস্তানী অফিসারকে বসিয়েছিলেন। গুলি লাগে সামনে বসা মেজর সেথির পায়ে। তাকে পাকিস্তানী এম্বুলেন্স করে সিএমএইচ পাঠানো হয়। আহত হয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখালেন। প্রথম ভারতীয় হিসাবে ঢাকায় প্রবেশের। সামনে বসা পাকিস্তানী অফিসারও আহত হন। তিনি আহত হয়ে জামশেদের আহত হওয়া থেকে বাচিয়েছেন। নাগড়া জামশেদ সভা হয় মিরপুর ব্রিজের কাছেই। তাকে সবকিছু বলা হয়। তিনিও জানান পাকিস্তান সরকার তাদের আত্মসমর্পণের জন্য ১৫ তারিখ রাতেই জানিয়েছে। টেলিফোন সংযোগ না থাকায় তাদের এই সিদ্ধান্ত অনেক স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়। গাজিপুরের চান্দনায় বিকেলে লেঃ কঃ সুলতানের(জামালপুরের) বাহিনী ঢাকায় ফিরার পথে ১০ আজাদ কাশ্মীর এর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। চান্দনায় ভারতীয়রা একজন পাকিস্তানী বন্দীকে সাদা পতাকায় সুলতানের বাহিনীর কাছে ঢাকার আত্মসমর্পণের সংবাদ দিতে পাঠালে পাকিস্তানীরা তাকে ভারতীয় মনে করে গুলি করে মেরে ফেলে।
সকাল ১১ টায় নাগড়া ব্রিগঃ ক্লের, ব্রিগঃ সন্ত সিংহ, আরও ২/৩ জন অফিসার সহ নিয়াজির কাছে যান। নাগড়া নিয়াজির কাছে যাওয়ার পর তাকে উদ্দেশ্য করে নিয়াজি ইয়াহিয়া এবং জেনারেল হামিদকে খারাপ গালিগালাজ করেন। নিয়াজি নাগরাকে টঙ্গীর কাছে যুদ্ধ থামাতে অনুরোধ করেন। নাগড়া সেখানে ক্যাপ্টেন মেহতা এবং একজন পাক অফিসারকে সাদা ফ্লাগের গাড়ীতে করে সেখানে পাঠান। তার গিয়ে সেখানে যুদ্ধ থামান। পরে সেখানকার ভারতীয় বাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। মিরপুর ব্রিজের ২ প্যারা সাড়ে ১১ টায় ঢাকা প্রবেশ করে। দুপুরর দেড়টায় ৬ বিহার, ১৩ গার্ড ঢাকায় প্রবেশ করে। সাড়ে ১২ টায় ৪ গার্ড, ৫ আরমার্ড রেজিমেন্ট ঢাকায় প্রবেশ করে। দুপুর একটায় জেকব ঢাকায় পৌঁছেন।