১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ খুলনার শেষ আক্রমন শিরোমণি যুদ্ধ
লিঙ্কে পাকিস্তানী ব্রিগেড কম্যান্ডার হায়াতের ভাষ্য
https://defence.pk/…/the-battle-of-khulna-narated-by-pakis…/
ভারতীয় এবং বাংলাদেশ ভাষ্য
১০ তারিখ থেকে ১৬ তারিখের খুলনার যুদ্ধ ব্যাটেল অফ শিরোমণি। মুল যুদ্ধ হয় ১৩ ডিসেম্বর তারিখে। ভারতীয় ৩২/৪২/৩৫০ ব্রিগেড বনাম পাকিস্তানী ১০৭ ব্রিগেড। এ যুদ্ধকে পাকিস্তানের কৃতিত্ব হিসাবেই প্রচার হয়। অনেকেই বলে থাকেন পৃথিবীর অনেক দেশের সামরিক একাডেমীতে এটি পড়ানো হয়। হা তবে ভারতিয় বা বাঙ্গালীর কৃতিত্ব হিসেবে পড়ানো হয় না।
এ যুদ্ধের পাকিস্তানী প্রতিপক্ষ ব্রিগেডিয়ার হায়াত তুলনামুলক অনেক কম সৈন্য ও কম অস্র নিয়ে মুল আত্মসমর্পণের আগে আত্মসমর্পণ না করায় এবং ভারতীয় বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হওয়ায় সিতারাই জুরাত খেতাব লাভ করেন।
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম গুলো খুলনার ভিডিও ক্লিপ সমুহে ১৩ তারিখের যুদ্ধের বিবরন দিয়েছেন। পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার হায়াত বা ভারতীয় বাহিনীর অফিসারদের লেখায় শিরোমণির ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অংশ গ্রহনের কোন বর্ণনা নেই। ১৬ ডিসেম্বরের হামলা ১৩ ডিসেম্বরের হামলার পর্যায়ে ছিল না। সম বাবর আলী লিখেছেন ১৩ তারিখে ভারতীয় বাহিনীর বহর না বুঝেই শিরোমণির পাক বলয়ে ঢুকে পড়ায় পাকিস্তানীদের আক্রমনে ৩০০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।(এ তথ্য অবশ্য সরকারী ভারতীয় যুদ্ধ বিবরনে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে প্রকৃত সংখ্যা ষাটের নীচে)। ১৫ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধের তীব্রতা কমে যায়। ১৬ তারিখে বিমান হামলার পর পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭ তারিখ আত্মসমর্পণের সময় মেজর মঞ্জুর সেখানে ছিলেন।
নিয়াজি লিখেছেন পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাপ্টেন আরজুমান্দ ওয়াই আখন্দ এ যুদ্ধের মহানায়ক। ভারতীয় ১৩ ডগরা মেজর ঠাকুরও আখন্দের প্রশংসা করেছেন। নিয়াজি ঠাকুরের ভাষ্য লিখেছেন, তার মেশিনগানের গুলীতে ভারতীয়রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সে এক সময় গুলিবিদ্ধ হয়। তা সত্ত্বেও সে গুলিবর্ষণ করতে করতে গুলি শেষ হয়ে যায়। এ সময় সে পানি চাচ্ছিল। ভারতীয় সৈনিকরা পানি নিয়ে যেতেই তাকে ভারতীয় সৈন্যদের কেউ গুলি করে মেরে ফেলে।
লেঃ শামশুল আরেফিন স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে বলেছেন মেজর মঞ্জুরের পরিকল্পনায় ১৫ ডিসেম্বর ভোরে খুলনা আক্রমন করে সকালেই খুলনা মুক্ত করি এবং স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করি।
মেজর জলিল স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে বলেছেন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ১৫ তারিখে আক্রমন বন্ধ ছিল।
ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের লেখা বই ও নিবন্ধে শিরোমণির যুদ্ধের মুল ইউনিট ১৩ ডগরা যার অধিনায়ক ছিলেন লেঃকঃ টিজিপিএম নায়ার। ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার এইচএস লাম্বা লিখেছেন ১৩ ডগরার এ এবং সি কোম্পানি যুদ্ধ করে বাকীরা রিজার্ভে ছিল। যুদ্ধের সময় লাম্বা আহত হয়েছিলেন এবং তার সিনিয়র ক্যাপ্টেন কুলকার্নি নিহত হয়। এদিনের যুদ্ধে ১৩ ডগরা পজিশনের পিছনের আর্টিলারি সাপোর্টের গোলাবর্ষণ পাকিস্তানী অবস্থানে না পড়ে পড়ছিল ৪ শিখ লাইটের উপর ফলে যুদ্ধে তাদের সাফল্য বিঘ্নিত হচ্ছিল। আর এমন সময়েই ক্যাপ্টেন টিক্কাম গুরুতর আহত হন। লাম্বা লিখেছেন তার বয়োবৃদ্ধ সুবেদার বুধি সিংহ এবং ক্যাপ্টেন তারা সিংহ এর সাহস ও নৈপুণ্য তাকে মুগ্ধ করেছে। ১৩ ডগরার এ দু কোম্পানি যখন আর পারছিল না তখন বাকী দু কোম্পানিও তাদের সাথে যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানীরা পরাজিত হয় এবং তার রেডিও সিগন্যালে বিজয় সঙ্কেত আসে ফাকিয়ান। ভারতীয় ৯ ডিভিশন জেসিও মেজর জেনারেল দলবির সিংহ যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসেন এবং সৈনিকদের বাহবা দেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেঃ জেঃ পানাং লিখেছেন ১৫-১৬ তারিখের রাতে ৪ শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ১৫ এফএফআর এর পথে রোড ব্লক বসাতে সক্ষম হন আর ১৬ তারিখ সকাল সাড়ে ৯ টায় আক্রমন শুরু হলে ১৩ ডগরা ১৫ এফএফ এর স্থানীয় রাজাকারদের দু কোম্পানি সৈন্য আটক করে।
এ যুদ্ধে ভারতীয় মেজর বিআর ভোলা নিহত হন।যুদ্ধের পর ১৩ ডগরাকে শিরোমণি ব্যাটেল অব অনার দেয়া হয়। ১৩ ডগরার ৪ জনকে বীর চক্র (বীর বিক্রম) খেতাব দেয়া হয়। এদের মধ্যে মেজর জামওয়াল, হাভিলদার সুখদেভ, নায়েব সুবেদার রাজন এবং ভারগেজি অন্যতম। শেষোক্ত দুজন অসীম সাহসিকতার সহিত যুদ্ধ করে যুদ্ধ ক্ষেত্রেই নিহত হন। ১৬ তারিখের যুদ্ধে ৮ মাদ্রাজের ২ জন জেসিও সহ ৭ জন নিহুত হয় আহত হয় ৩৪ জন। ৮ মাদ্রাজের স্থলে পরে ২৬ মাদ্রাজ প্রতিস্থাপিত হয়। ২৬ মাদ্রাজের সাথেই মেজর মঞ্জুর ছিলেন। ২৬ মাদ্রাজের যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ সিদ্ধান্ত হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানী ১৫ এফএফআর এর মেজর উসমান সহ ১৮ জন আত্মসমর্পণ করে।
জেকব লিখেছেন পাকিস্তানিরা দুই কিমি লম্বা প্রতিরক্ষা বেবস্থা গড়ে তুলে। শক্ত বাঙ্কার গড়ে। স্থানটির পূর্ব পাশে ভৈরব নদী পশ্চিমে জলা। ১৬ ডিসেম্বরের সকাল পর্যন্ত তাদের মুল অবস্থানে আমার বাহিনী কিছুই করতে পারেনি। আমি যখন ঢাকার পথে যশোরে হেলিকপ্টার পরিবর্তনের সময় তাদের আর যুদ্ধ না করার জন্য বলেছিলাম। এর আগে নদী পার করে ৪২ ব্রিগেড হামলার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছিল। তখন তাদের আমি না করেছিলাম। (জেকব ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহর দখল নিয়ে উৎসাহী ছিলেন না)
হায়াত লিখেছেন কয়েকগুন শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনীর সাথে আমরা বীরত্ব এর সাথে লড়েছি। আমাদের আরও কয়েক সপ্তাহ লড়বার শক্তি ছিল। আত্মসমর্পণের আগে আমরা রেডিও মাইক্রোওয়েভ স্টেশন ধ্বংস করি। ব্যাঙ্কের ১৪ কোটি টাকা পুড়িয়ে দেই। যানবাহন জোয়ারের সময় নদীতে ডুবিয়ে দেই। অস্র নদী নালায় ফেলে দেই। এক হেলিকপ্টারে প্রচার পত্র ফেলা হচ্ছিল। তার পাইলটকে গুলীতে আহত করা হয় পরে সে মারা যায়।
মেজর রাজা নাদির পারভেজ ছিলেন খুলনার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বীরদের একজন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি পটুয়াখালীর দায়িত্ব পালন করেন তার বিরুদ্ধে বরগুনায় গণহত্যার অভিযোগ আছে। এ লোক তার বীরত্ব দেখিয়ে এমপি হয়েছিলেন। সম্ভবত বাংলাদেশ সফর করে গেছেন কয়েক বছর আগে। ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।