১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ঃ যুদ্ধ আপডেট ঢাকা
ভারতীয় ১৩ গার্ড এর একটি কোম্পানি নয়ারহাটে রেখে অবশিষ্ট বাহিনী সাভার রওয়ানা হয়। ১৫ ডিসেম্বর ভোরে সাভার সামরিক এলাকা এবং রেডিও ট্রান্সমিশন টাওয়ার দখল করে। বেলা ১১ টায় সাভারে ১৩ গার্ডের সামনের অংশ পাক বাহিনীর মুখোমুখি হয়। ভারতীয় ব্রিগেড কম্যান্ডারের হাতে পর্যাপ্ত বাহিনী না থাকা সত্ত্বেও মাত্র এক কোম্পানি সৈন্য দিয়েই তিনি আক্রমন করলেন। এখানে পাক বাহিনীর ১৮ জন নিহত ২০ জন আহত হয়। ভারতীয় বাহিনীর ৮ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। এখান থেকে ৫৪টি রাইফেল ১টি রকেট লাঞ্চার ৬টি এলএমজি সহ প্রচুর গোলাবারুদ আটক করে। ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিংহ এর এই সাফল্য লাভে মেজর জেনারেল নাগড়া ২ প্যারার যে টুকু সৈন্য ছিল তা সন্ত সিংহ এর অধীনে দিয়ে দেন। রাত ১০টায় ২ প্যারা সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। রাত দু’টায় মীরপুর ব্রিজের কাছে মিত্রবাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। মিত্রবাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ও পাশ থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মূহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় মিত্রবাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত তুমুল যুদ্ধ চলে।
মিত্রবাহিনী ঢাকার অদূরে টঙ্গীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগের পাড়ে পাকবাহিনীর মুখোমুখি হয়। শত্রুসৈন্যরা এখানে ব্রিগেডিয়ার কাশিমের কম্যান্ডে আর্টিলারি সুবিধা সহ শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা গড়ে তুলেছিল। কয়েকটি ট্যাঙ্ক তাদের সাথে ছিল। এই বাহিনীর বেশীরভাগ এপকাফ এবং সাধারন সেনা। এখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাহায্য নেয়া হয় বিমান বাহিনী পাক অবস্থানে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। এখানে ৬ শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি এবং ১ মারাঠা রাইফেলস এর এক কোম্পানি পাকিস্তানীদের মোকাবেলা করে। ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যার পাড়ে ডেমরায় মিত্রবাহিনী পাক প্রতিরোধ ব্যুহের ওপর আঘাত হানে। যা পরদিন ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সারেন্ডারের আগে ডেমরার যুদ্ধকে শেষ যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করা হয়। আর একটি দল শীতলক্ষ্যা পার হয়ে নাওরায় অবস্থান নেয়। একই সময়ে দুটি বাহিনী ঢাকার দ্বারপ্রান্তে চলে আসায় আক্রমন নিয়ন্ত্রন করার জন্য ১০১ কমুনিকেশন জোনকে (উত্তরের বাহিনী) দুপুরে ৪ কোর এর অধীনে নেস্ত করা হয়। ফলে ঢাকা দখলের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নেন লেঃ জেনারেল সগত সিংহ। ক্যান্টনমেন্ট মিরপুরের কাছে বলেই নাগড়াকে তিনি প্রথম অপশন দিয়ে রাখেন। ভোর রাতের চূড়ান্ত আক্রমনের জন্য নাগড়া প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেন।