১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ আপডেট – সৈয়দপুর দখলের পথে খরখরিয়া ও দারোয়ানী যুদ্ধ
১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী খানসামা আক্রমন করে। এখানে ছিল পাক ৪৮ পাঞ্জাবের এক কোম্পানি যাতে রেগুলার ছিল ১৫৩ জন রাজাকার ছিল ৭৫ জন। কোম্পানিটি আর্টিলারি সুবিধা প্রাপ্ত ছিল। এর বিপরীতে ছিল ভারতের ৭১ স্বতন্ত্র ব্রিগেডের ২১ রাজপুত ব্যাটেলিয়ন। এই বাহিনী অনেক আগেই পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁও দখল করে বিশ্রামেই ছিল। উত্তর থেকে সৈয়দপুর আসার পথ আগলে রেখেছে ৪৮ পাঞ্জাবের এই অংশ। সৈয়দপুরেই ২৩ ব্রিগেড সদর দপ্তর। খানসামা মুক্ত হয় ১৪ তারিখ। ১৫ তারিখ তারা পৌঁছে যায় সৈয়দপুরের দ্বারপ্রান্তে ইছামতী নদীর(যমুনা নদী) পাড়। সৈয়দপুর যেতে আরও একটি প্রাকৃতিক বাধা তারপর আরেকটি সামরিক বাধা রয়েছে। সৈয়দপুরের উত্তরে খরখরিয়াতে পাক বাহিনীর ৪৮ পাঞ্জাবের আরও দুটি কোম্পানি বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। ১২ রাজপুতানা অস্রের জন্য কিছু বিরতি নেয়। ২১ রাজপুতকে খানসামায় রেখে দেয়া হয়। সৈয়দপুর দখলের জন্য ৫ গ্রেনেডিয়ারসকে পাঠানো হয়। সকাল ১৩ তারিখ ১০টা থেকে বিমান হামলার সাহায্য নেয়া হয়। সাথে চলে মিডিয়াম কামানের গোলা। দুপুরের দিকে পদাতিক বাহিনী অগ্রসর হওয়া শুরু করে। তারা ডাঙ্গাপারা, দারওয়ানি, সৈয়দপুর রুটে অগ্রসর হয়। ১৪ তারিখ মধ্যরাতে তারা ডাঙ্গাপাড়া দখল করে। পাক বাহিনী পিছিয়ে যায়। বিকাল ৪ ঘটিকায় তারা দারওয়ানি রেল স্টেশন দখল করে। গুছানোর পর ১২ রাজপুতানা পশ্চিম থেকে অগ্রসর হয়ে খরখরিয়া পৌঁছে। সামান্য প্রতিরোধ শেষে পাক বাহিনী ১৫ তারিখ মাঝ রাতে খরখরিয়া ত্যাগ করে। ১২ রাজপুতানা ৫ গ্রেনেডিয়ারস যৌথ ভাবে দারওয়ানি রেলস্টেশনের দু মাইল দক্ষিনে রোড ব্লক দিলে পাকিস্তানীদের এ অংশ নীলফামারীর দিকে চলে যায়। প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন শেষে ১৬ ডিসেম্বর সকালে তারা নীলফামারী যেয়ে কোন পাকিস্তানী সৈন্য পায়নি।
১৪ তারিখ খানসামা যুদ্ধে একটি ঘটনা ঘটে একটি পজিশনে এক সেকেন্ড লেঃ তামির আশরাফ আত্মসমর্পণ করার জন্য হাত তোলে।(এ অংশটা একটি আত্মঘাতী হামলার মত) ভারতীয় বাহিনী তার কাছাকাছি আসামাত্র তাদের দিকে ভারী মেশিনগানের নল বেরিয়ে আসে। এ সময় অন্য পজিশনে থাকা ভারতীয় বাহিনী এ দলের উপর অনবরত গুলিবর্ষণ শুরু করে। তামির আশরাফ নিহত হয় যারা তার কাছে গিয়েছিল। কিন্তু পিছনের ভারী মেশিন গানের দলটি নির্মূল হয়। অন্য অবস্থানের দলের গুলী বর্ষণে। সেখানে ৪৮ পাঞ্জাবের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সাইয়িদ নিহত হয় তার গায়ে চাইনিজ গুলী পাওয়া যায়। পরে জানা যায় দখল কৃত চাইনিজ রাইফেল দ্বারা গুলী করেছিল ভারতীয় বাহিনী। মেজর এ এম সাইয়িদকে পরে বীরত্ব পদক দেয়া হয়েছিল।
খরখরিয়া যুদ্ধে আরেক ঘটনা ঘটে সেখানে লেন্স নায়েক সনওয়াত সিংহ আহত হয়েছিল। আহত সত্ত্বেও সে চিকিৎসায় না যেয়ে যুদ্ধেই নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সে ক্রল করে কয়েকটি বাঙ্কারের কাছে যেয়ে সেগুলি ধ্বংস করেন এবং তার গুলিতে বাঙ্কারের সকল সৈন্য নিহত হয়। তার কমান্ডিং অফিসার লেঃ কঃ ধাওয়ান সিংহ তাকে বিশিষ্ট সেবা মেডেল পদকে ভূষিত করেন। তার কারনেই ভারতীয় বাহিনী ইছামতি ও খরখরিয়ায় দ্রুত সাফল্য লাভ করে। দারওয়ানি যুদ্ধে আরেকটি ঘটনা ঘটে পাকিস্তানী বাহিনী যখন একের পর এক পরাজিত হয়ে পশ্চাদপসরণ করছিল তখন সেখানে এক জীপে ৫৭ এমএম রিকয়েলস রাইফেল সেট করা এক জীপ দ্রুত গতিতে মহড়া দিয়ে যাচ্ছিল। জীপটি পরে ধ্বংস করা হয়। ২৩ ব্রিগেড এর অংশ ৪৮ পাঞ্জাবের অধিনায়ক একজন ধোপাকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে ২১ রাজপুতের এ কোম্পানি কম্যান্ডারের কাছে পাঁঠায়। এদিন আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি চলে। (আত্মসমর্পণ ১৭ তারিখ)