You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.14 | ভারত-বাঙলাদেশ মৈত্রীর নতুন অধ্যায় | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

ভারত-বাঙলাদেশ মৈত্রীর নতুন অধ্যায়

বাঙলাদেশের মুক্তির পর এবার স্বভাবতই পুনর্গঠনের প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বাঙলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী আবদুস সামাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সরকারি মহলের এ ব্যাপারে আলােচনার পর যে মুক্ত বিবৃতি প্রচারিত হয়েছে তাতে এই কথাটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙলাদেশ যে সহযােগিতা ভারতের কাছ থেকে পেয়েছিল, পাক অত্যাচারে বিধ্বস্ত বাঙলাদেশকে নতুন করে গড়ে তােলার ব্যাপারেও তেমনি অকৃত্রিম ও অকুণ্ঠ সহযােগিতা পাবে। পরিষ্কারভাবেই ঘােষণা করা হয়েছে বাঙলাদেশের অর্থনীতিক পুনর্গঠনে ভারত সর্বাত্মক সাহায্য বাংলাদেশকে দিতে কোনােরকম কার্পণ্য করবে।
বলা বাহুল্য, বাঙলাদেশের পুনর্গঠনে বিপুল আর্থিক সাহায্য দরকার এবং শ্রী সামাদ নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, বিদেশের সাহায্য বাংলাদেশ নিশ্চয়ই নেবে—কিন্তু সাহায্য গ্রহণের বেলার বাঙলাদেশ বাছাই করে নেবে। বিদেশি সাহায্য গ্রহণের ব্যাপারে বাঙলাদেশের স্বাধীন সরকার যে যথেষ্ট সতর্ক তা এই উক্তি থেকেই বােঝা যায়।
বিদেশি সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতার যে বিশেষ দরকার আছে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে সাম্রাজ্যবাদী মহল সাহায্য দানের ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিকে এমনভাবে নাগপাশে বেঁধে ফেলে যে তা থেকে নিস্তার পাওয়াই হয়ে পড়ে কঠিন। শুধু তাই নয়, এই সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক শিকল শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় রাজনৈতিক শিকলে। বাঙলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গােড়া থেকেই এ ব্যাপারে সচেতনতা দেখিয়েছেন এটা খুবই আনন্দের কথা। তিনি বলেছেন যারা ভিখারী তারাই শুধু বেছে সাহায্য নিতে পারে না। আমরা ভিখারী নই। সাহায্য করার জন্য আমরা বন্ধু পাবাে।’ বন্ধু হিসাবে ভারতই শুধু যে বাংলাদেশকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । সমাজতান্ত্রিক দেশগুলােও সাহায্য দিতে বিশেষ আগ্রহী। সােভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধুত্বপূর্ণ আগ্রহ তাে বাঙলাদেশের ব্যাপারে সুবিদিত। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদী মহলের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণের প্রয়ােজন। বাঙলাদেশে দেখা দেবে না বলেই আশা করা যায়।
যৌথ ইস্তাহারে ভারত ও বাঙলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যােগাযােগ ব্যবস্থা পুনঃসংস্থানে এবং অর্থনৈতিক সহযােগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশে অবিলম্বে ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রতিশ্রুতি ছাড়াও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলাে বক্তব্য রয়েছে। বাংলাদেশ যাতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্যপদ পায় তার জন্য সমস্ত র ভারত সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে। সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং পরস্পরের আভ্যন্তরিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে দু-দেশের গভর্নমেন্টই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছেন। স্তুতপক্ষে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দু-দেশের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই একথা সহজেই বলা যায়। সুতরাং ভারত ও বাঙলাদেশের মৈত্রী এবং সহযােগিতা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, এশিয়ায় সামগ্রিক শান্তি বজায় রাখার দিক থেকেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে তাতে ভুল নেই। এই মৈত্রী ভারতের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে এশিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য এলাকার সদ্যস্বাধীন দেশগুলােকে সাহায্য করবে একথা বললে মােটেই অত্যুক্তি করা হবে না।
সূত্র: সপ্তাহ, ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২