You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | জন কেলীর ডায়েরী - সংগ্রামের নোটবুক

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ জন কেলীর ডায়েরী

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এর বিশেষ প্রতিনিধি জন কেলী ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বরের ৩ দিনের এক ডায়েরী লিখেছেন। তিনি লিখেছেন এই দিনে সকালেই তার আবাসস্থল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গভর্নর মালিকের টেলিফোন আসে। টেলিফোনে গভর্নর তার অফিসে তার পরিস্থিতি দেখার জন্য তাকে এবং তার সহকর্মী জনাব পিটার হুইলারকে যেতে অনুরোধ করেন। ঢাকার ঘটনা প্রবাহ তখন ঠিক ১৯৪৫ সনের বার্লিন শহরের মত ছিল। তারা যখন গভর্নর হাউজে পৌঁছেন তখন তিনি সেই শেষ সভাটি করছিলেন। তাদের দেখে গভর্নর সভা থেকে বের হয়ে তাদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং এই পরিস্থিতিতে তার করনীয় কি তা জানতে চান। তারা গভর্নরকে সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নিতে বলেন। আশ্রয় নিতে তাদের পদত্যাগের প্রয়োজন ছিল তাই কেলি তাকে পদত্যাগের অনুরোধও জানান। গভর্নর পদত্যাগে রাজি না হয়ে তার স্ত্রী এবং কন্যাকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ করেন। কেলি তাকে জানান সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিকরা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখবে না। এরই মধ্যে সেখানে বিমান হামলা হয়। কেলী ভবন থেকে বের হয়ে একটি জিপের নীচে আশ্রয় নেন। এর পর পর ভীত চীফ সেক্রেটারি তার কাছে আসেন এবং অন্যান্যরা ২০ গজ দূরে ট্রেঞ্চে আশ্রয়ের জন্য যান কিন্তু সেটা সৈন্য দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। কেলি তখন তার ওয়াকিটকিতে এ সংবাদ সঙ্গে সঙ্গে ইউএন রিলিফ অপারেশনের পল মার্ক হেনরিকে জানান এবং লাইভ ধারাবর্ণনা করতে থাকেন।

এ অবস্থায় তাদের সেখানে থাকা সঠিক নয় বিবেচনায় নিজেদের গাড়িতে করে গভর্নর হাউজ ত্যাগ করেন। জাতিসংঘ অফিসে ফিরে আসার পর সেখানে লন্ডনের অবজারভার পত্রিকার গেভিন ইওং এর সাথে দেখা হয়। তিনি বলেন ভারতীয় বিমান গুলি জ্বালানী ও রসদের জন্য পরবর্তী একঘণ্টা সময় নিবে তাই গভর্নর ভবনে কি ঘটেছে তা এ সময়ে তারা দেখে আসতে পারবেন। তারা সেখানে আবার যান এবং দেখেন রাও ফরমান এবং মন্ত্রীসভা সহ গভর্নর শেল্টারে আছেন। কেলী পুনরায় গভর্নরকে বলেন শুধু ভারতীয় আক্রমন নয় অনিয়মিত বাহিনী দ্বারাও তারা আক্রান্ত হতে পারেন। এ সময়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী আবারো গভর্নর ভবনে আক্রমন করে গেভিন ইওং এর অনুমান মিথ্যা প্রমান করে। এর পরপরই গভর্নর এবং তার মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে এবং গভর্নর কাছেই অপেক্ষমান তার স্ত্রী এবং কন্যা কে নিয়ে ভিতরে যান এবং গোসল এবং নামাজ পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয়ে যান।
নোটঃ অনলাইনে জন কেলীর ছবি পেতে আমার ৬ বছর লেগেছে।