শরণার্থীদের মধ্যে ভারতবিরােধী প্রচার
(সংবাদদাতা)
সীমান্তের ওপারে যখন জঙ্গীশাসক ইয়াহিয়ার সঙ্গীন অবস্থা ঠিক সেই সময় এপারে থেকে আগত শরণার্থীদের মধ্যে একটা বিভেদমূলক প্রচার অত্যন্ত জোরদার হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে যেমন নদীয়া, ২৪ পরগণা এবং মুর্শিদাবাদে জোর প্রচার চলছে, শরণার্থীদের কোন খরচই ভারত সরকার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহন করছেন না, করছেন মার্কিন সরকার এবং মার্কিন সাহায্যসেবী সংস্থা। বরং সেই সাহায্যে এপারের লােক ভাগ বসাচ্ছে।
মাসখানেক আগেও শরণার্থীদের সঙ্গে ত্রাণ দফতর বা অন্যান্য দফতরের কর্মী এবং বেসরকারি ত্রাণসংস্থার সেচ্ছাসেবীদের সম্পর্ক খুবই ভালাে ছিল। এখন হঠাৎ শরণার্থীরা সাহায্য পৌঁছতে একবেলা দেরি হলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। বলছেন, মনে রাখবেন আমরা আপনাদের সরকারের পয়সায় খাচ্ছি না। আমেরিকা আমাদের জন্য উদার-হস্তে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।
আসাম এবং মেঘালয়ে সীমান্তেও ঠিক একই রকম প্রচার। সরকার শরণার্থীদের জন্য সেখানে মাথাপিছু একবেলায় খদ্যসামগ্রী বাবদ একটাকা দু আনা মঞ্জুর করে রেখেছেন। এ ছাড়া বিনামূল্যে দুধ, চিকিৎসা বা অন্যান্য সাহায্য আছে। শরণার্থীদের মধ্যে প্রচার হয়েছে, সরকার খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদি সমস্ত কিছু বাদেই নগদ মাথাপিছু এক টাকা দু আনা করে বরাদ্দ করেছেন। সেই বাদ্দের একপয়সাও শরণার্থীরা পায় না, সরকারি কর্মচারীরা মেরেছেন।
সমস্ত সীমান্ত জুড়ে অবাধে এই মার্কিন তাবেদাররা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই সব মার্কিনী তাঁবেদাররা নাকি বড় বড় সরকারি আমলাদের ও আস্কারা পাচ্ছে।
রাজ্যে নবকংগ্রেসের সভাপতি শ্রী আবদুস সত্তার রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রচার সম্পর্কে উব্দেগ প্রকাশ করেন। ওদিকে তিন চারটি ভারতীয় ত্রাণ সাহায্য সংস্থাও মার্কিনী প্রচার সম্পর্কে রাজ্য সরকারকে ওয়াকিবহাল করেছেন।
সূত্র: সপ্তাহ, ৫ নভেম্বর ১৯৭১