You dont have javascript enabled! Please enable it!

১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ আপডেট – টাঙ্গাইল

https://www.youtube.com/watch?v=58p5BBwX1gY

জামালপুর ৩১ বালুচের খণ্ডিত খণ্ডিত দলগুলি যে দলগুলি অবরোধ ভেঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন তারা মধুপুরের দিকে আসতে থাকেন তাদের অপেক্ষায় ময়মনসিংহ থেকে আগত ৯৩ ব্রিগেড অপেক্ষা না করে বড় অংশ টাঙ্গাইলের দিকে পশ্চাদপসরণ করতে থাকে। মধুপুরে ৩১ বালুচকে স্বাগত জানানোর জন্য মেজর সারওয়ার এর একটি বাহিনী এবং মেজর ই জি শাহ এর একটি মর্টার ব্যাটারি অবস্থান করতে থাকে। ব্রিঃ কাদিরের অগ্রবর্তী দল সকালে টাঙ্গাইল পৌঁছে। সেখান থেকে ময়মনসিংহ এপকাফের সিও লেঃকঃ আকবর তার বাহিনী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। কিছুদুর যেতেই তিনি দেখেন মাইন বিস্ফোরণে একটি জীপ রাস্তায় উল্টিয়ে আছে সে জীপের ড্রাইভার আহত হয়ে কাতরাচ্ছে। সে গাড়িতে ছিল জামালপুরের কথিত বীর ৩১ বালুচের লেঃকঃ সুলতান যিনি ভয়ে কাপছিলেন। ঘটনাক্রমে তার পাশ দিয়ে তার একটি ক্ষুদ্র দল অতিক্রম করছিল। তারা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল নিয়ে যায়। লেঃকঃ সুলতান ব্রিঃ কাদিরের আগেই মধুপুর পৌঁছেছিলেন এবং তিনি তার অধিনায়কের জন্য অপেক্ষা না করেই মধুপুর ও টাঙ্গাইল ত্যাগ করেছিলেন। ব্রিঃ কাদিরের দল টাঙ্গাইলে বিশ্রাম নেয়।

যখন তারা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে রাস্তার মাইন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন তখন তারা ৯ কিমি উত্তরে ভারতীয় প্যারা ট্রুপ নামতে দেখেন। তারা দেখে পরিতেক্ত এয়ার স্ট্রিপে পরিবহন বিমান অবতরন করছে এবং অস্র নামাচ্ছে। তারা প্যারাসুটেও অস্র নামাতে দেখে। এ ঘটনা ব্রিঃ কাদিরকে উত্তেজিত করে তিনি এলোপাথাড়ি আকাশে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। তিনি মেজর সারওয়ারকে এক কোম্পানি মাইনাস সৈন্য নিয়ে তাদের আক্রমন করতে বলেন। মেজর সারওয়ার যথারীতি সেখানে তার বাহিনী নিয়ে গেলেন। সেখানকার অধিবাসীরা তাকে জানায় আগত সৈন্যরা চীনা তাই কনফিউজড হয়ে সারওয়ার ফিরে আসেন। স্থানীয়রা আসলে গুর্খাদের চীনা বলেছিল। ব্রিঃ কাদিরের শেষের দিকের দলটি যখন পুংলি অতিক্রম করছিল তারা সেখানে প্যারা ট্রুপার নামতে দেখে। এখানে তাদের সাথে এক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৬ জন প্যারা ট্রুপার নিহত হয় ১০-১২ জন আহত হয়। সেখানে কিছুক্ষন পরে এফজে সেক্টর বাহিনী পৌঁছে এবং পাক বাহিনীর সে গ্রুপটা প্রায় ৩০০ জন ভারতীয় এফ জে বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর পর ভারতীয় সেনারা পরিবহন বিমানে নামা শুরু করে। ব্রিঃ কাদির টাঙ্গাইল অবস্থানকালে অধীনস্তদের বললেন টাঙ্গাইল প্রতিরক্ষা তার দায়িত্ব নয় তার দায়িত্ব কালিয়াকৈরে অবস্থান নেয়া। পরে তিনি সকলকে নিয়ে টাঙ্গাইল ত্যাগ করেন। ব্রিঃ কাদির টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময় মাইন সঙ্কুল পথ বিবেচনায় বিচার বিশ্লেষণ করে মেঠো পথে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন। তারা ৩ ভাগে কালিয়াকৈর রওয়ানা হন। (সিদ্দিক সালিক)

জামালপুর পতনের সাথে সাথেই সেখানকার বাহিনী টাঙ্গাইলের দিকে আসতে শুরু করে। রাস্তা দিয়ে না এসে তারা মাঠ দিয়ে আসছিল ফলে ভারতীয় প্যারা বাহিনী তাদের আসার খবর জানতে পারেনি। টাঙ্গাইলের কাছাকাছি আসার পর তারা প্যারা দের নামতে দেখে তারা তাদের চীনা মিত্র ভেবেছিল। যখন প্যারা বাহিনীরা তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে তখন তাদের বোধোদয় হয়। এর মধ্যেই সন্ত সিং বাবাজীর বাহিনী চলে আসার পর পাক বাহিনীর এ অংশটা আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্যে প্যারা বাহিনী ক্ষুদ্র বিমান ক্ষেত্র দখল করে নিল এবং এর পরে বিমানযোগেই সৈন্য আসা শুরু হয়। এলাকাটি কাদেরিয়া বাহিনীর এলাকা জেকবকে ধারনা দেয়া হয়েছিল এ এলাকায় অবতরন করলে কাদেরিয়া বাহিনী প্যারা বাহিনীকে সমর্থন দিবে। প্যারা বাহিনী নামার পর একটি খণ্ড যুদ্ধ এবং ৩০০ জন পাক সৈন্য আত্মসমর্পণ হয়ে গেল কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর তারা সাক্ষাৎ পায়নি। পরে তারা টাঙ্গাইল হয়ে মির্জাপুর যাত্রা করে।

জেকব লিখেছেন ভারতীয় বাহিনীর সাথে কাদেরিয়া বাহিনীর দেখা বা মিলন হয় সাভার নবীনগর এ। কাদের সিদ্দিকি তার বইয়ে ১১ তারিখে তার নিজের এবং প্যারা বাহিনীর সাথে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে কিছু লিখেননি। কাদের সিদ্দিকি লিখেছেন ছত্রী বাহিনী যখন নামে তখন তার বাহিনী টাঙ্গাইল জামালপুর রাস্তায় পাকিস্তানী অবস্থানের উপর মর্টার আক্রমন করছিল এবং ছত্রীসেনা নামার সময় তারা মর্টার আক্রমন বন্ধ করে দেয়। যুদ্ধ বিষয়ক পাকিস্তানীদের বইয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর এ যুদ্ধের বিবরন নেই। কাদের সিদ্দিকি আর লিখেছেন ছত্রীসেনা কোথায় কোথায় নেমেছে তা তিনি বা তারা জানতেন না। কাদের সিদ্দিকি লিখেছেন তার বাহিনী পরে শোলাকুরা থেকে পুংলি পর্যন্ত রাস্তার উপর পাকিস্তানীদের উপর আক্রমন করে যাচ্ছিলেন। জেকব, পালিত, সুখওয়ান্ত সিং, সরকারী প্রকাশনা এবং র কর্মকর্তার লেখা বইয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর এখানে উপস্থিতি পাওয়া যায়না। ছত্রী বাহিনীর সাথে পাকিস্তানীদের সারা রাত ব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের ঘটনা ভারতীয় বা পাকিস্তানী লেখকদের বইয়ে সমর্থন মেলে না। টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকির বর্ণনা অনুযায়ী সাড়ে তিনশত পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হওয়ার বিষয় পাকিস্তানী বা ভারতীয় বইয়ে সমর্থন মিলে না। দিনশেষে ভারতীয় তিনটি পৃথক বাহিনীর উপস্থিতি এবং পাকিস্তানীদের কালিয়াকৈরের দিকে সড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইল মুক্ত হয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!