১১ ডিসেম্বর ১৯৭১:ঃ মুক্ত যশোরে বাংলাদেশ সরকারের আগমন ও জনসভা
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ মুক্ত যশোর শহরে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে শহরে বিজয় মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে আসেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম একটি প্রাইভেট কার যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের কড়া পাহারায় সমাবেশ স্থলে আসেন। সীমান্ত থেকে যশোরের দূরত্ব ৪২ কিমি। বংলাদেশ সরকারের কলকাতা থেকে যশোর আগমন উপলক্ষে যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় সমাবেশ। মুক্ত বাংলার প্রথম এই জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, “আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হল যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।” তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ যশোরে বলেছেন মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনী এবং জনগনকে শেখ মুজিবের মুক্তি ও পাকিস্তানে থাকা ৪ লাখ বাঙ্গালীর দেশে ফিরে আসার সুবিধার জন্য পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের জিম্মি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যশোর হল বাংলাদেশের মুক্ত ৪ জেলার একটি। তাজউদ্দীন বলেন ঢাকায় কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের পতাকা উড়বে।
যশোরে বিদেশী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন জনগনের খুব কম অংশই এ কথা শুনবে। তারা জেনেছেন এ পর্যন্ত ১৫০০ দালাল আটক হয়েছে এবং এদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে।অস্থায়ী রাষ্টপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণীভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোস্তফা সারোয়ার, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এমআর আখতার মুকুল ও জহির রায়হান। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইন শৃঙ্খলায় যেন অবনতি না ঘটে।তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, স্বাধীন এই দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ সকল গ্রুপ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এসএইচ শনবার্গ, বালটিমোর সান পত্রিকার প্রতিনিধি, ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।