‘প্রয়ােজন হলে দেবাে এক নদী রক্ত’
(বিশেষ প্রতিনিধি)
রাজশাহী শহরের মুক্তিসংগ্রাম
কথা হচ্ছিল রাজশাহী থেকে আগত জনৈক ছাত্রনেতা প্রসঙ্গে। ১৪ এপ্রিল রাজশাহী শহর ইয়াহিয়া বাহিনীর দখলে যাবার পর থেকে ওখানে যে বীভৎস গণহত্যা চলছে তা ব্যক্ত করে হঠাৎ মাতা চাপড়ে বললেন“আমার কাছে কোন ক্যামেরা ছিল না সেটাই দুঃখ । থাকলে কত যে ফটো তুলতে পারতাম। রাজপথের চারপাশে কত অজস্র শবদেহ পড়ে আছে এখনও।”
ওঁর কাছেই শুনলাম রাজশাহী শহরের মুক্তি সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। বিবরণ দিতে যেয়ে ককন যে চোখ দুটো ভিজে গেছে তা উনি টের ও পাননি। শুধূ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করলাম পেছনে ফেলে আসা সাথির অন্তরঙ্গ উত্তাপ।
সংগ্রামের পটভূমি
৩ মার্চ তারিখে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনটিকে ইয়াহিয়াি ১ মার্চের ঘােষণাবলে স্থগিত করে দিলে সমগ্র বাঙলাদেশে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। সেদিনই দেশব্যাপী স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন কেবলমাত্র ঢাকায় সাধারণ হরতালের ডাক দেওয়া হলেও তা শেষাবধি প্রতিটি জেলাতেই ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতেও দোকানপাট বাজারহাট স্তব্ধ হয়ে যায়।
৩ মার্চ সকালে ছাত্ররা রাজশাহী শহরে একটি বিরাট মিছিল বের করে ইয়াহিয়ার ঘােষণার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানান। মিছিলিটি যখন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন অকস্মাৎ মিলিটারি গুলি চালালে বাচ্চু নামক একটি কিশাের এবং জনৈক রিক্সাচালক বিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন বিকেলে শহরে জনসভা আয়ােজিত হয়েছিল। এই সভার শেষে মিলিটারি বড় মসজিদ ও বাজারের আশপাশে আবার ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করলে জাফরুল্লা নামক জনৈক কাপড়ের দোকানের মালিক মারা যান এবং প্রায় দেড়শ ব্যক্তি আহত হন।
সেদিনই সমগ্র দেশে সান্ধ্য আইন বা কাফু জারী করা হলাে। ঐ রাত্রেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. সামসুজ্জোহা হলটি ইয়াহিয়া বাহিনী আক্রমণ করে। | ৪ তারিখ সকালে আবার গুলি চলে, এবার সােনাদিঘির মােড়ে। ফলে বেশ কয়েকজন মৃত্যুমুখে পতিত হন। দখলদার ইয়াহিয়া বাহিনী ৯ মার্চ পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবৎ রাখে। এই সান্ধ্য আইন চলাকালিন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে খানাতল্লাসী চালানাে হয়। শুদু তাই নয়- ঐ খানাতল্লাসির সময়েই ইয়াহিয়া ফৌজের বর্বর রূপ বেরিয়ে পড়ে। বহু নারীর উপর বলাকার চালায় তারা। অনেক রমণী এই অপমান সহ্য করতে না পেরে পদ্মার জলে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
১০ মার্চ শহরে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়ন সম্ভাব্য ফৌজি হামলা রুখবার তাগিদে গণবাহিনী গঠনের ডাক দেয়। এরই পটভূমিতে শুরু হয় নকল রাইফেল সহ ব্যাপক ট্রেনিং। ২৪ মার্চ পর্যন্ত এই ট্রেনিং অব্যাহত থাকে। সমগ্র জেলায় ছাত্র ইউনিয়নের মােট ২,০০০ সক্রিয় কর্মী ট্রেনিং গ্রহণ করেন।
ছাত্র বন্ধুটি ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় কর্মী। উনি এবার রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরলেন। “স্বাধীনতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু মতপার্থক্য ছিল এবং আছে, যদিও এই মুহূর্তে আমরা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছি। স্বাধীনতা বলতে ওরা যে সাধারণ অর্থে শব্দটিকে বিশ্লেষণ করেন, আমরা কিন্তু তা কোনদিন করিনি। আমরা চেয়েছি একচেটিয়া পুঁজি ও সামন্তবাদ উৎখাত করে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খল ছিড়ে ফেলে শােষণ মুক্ত স্বাধীন বাঙলাদেশ’ গড়ে তুলব। আর ১ মার্চের পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা এই রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যাপকভাবে প্রচার করতে শুরু করি” ৩ মার্চ সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানেই গুলি চলেছিল নিরস্ত্র জনতার উপর সামরিক কর্তৃপক্ষের এই সশস্ত্র আক্রমণ দেশব্যাপী গণমনে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অস্ত্রের ভাষার জবাব অস্ত্রেই দেওয়া হােক’-এই চিন্তা ধূমায়িত বিক্ষোভের আকার নিতে থাকে। ইয়াহিয়া মুজিব আলােচনা সেই চিন্তাধারা নিমূর্ল করতে পারেনি। ২৫ মার্চের রাত্রে ।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী শহরের ডুবমােহন পার্কে চলছিল গণনাট্য ও সঙ্গিতের আসর। এই আসরে অংশগ্রহণ করেছিলেন শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিকেরা। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি এল। হঠাৎ জনৈক সাংবাদিক এসে আমাদের ছাত্র বন্ধুটিকে জানালেন— “রাজশাহী হাসপাতালে একবার যেতে হবে, রংপুর জেলার সৈয়দপুর থেকে প্রচুর সংখ্যক লাশ আসছে।” এই কথা শােনা মাত্র আসরের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হলাে। পাছে জনসাধারণ ভীতি বিহ্বল হয়ে পড়েন, তাই কোনাে ঘােষণা করা হয়নি; কিন্তু সাধারণ কর্মিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়-রাত্রেই ফৌজি আক্রমণ শুরু হবে।
এবার শুনুন ছাত্রবন্ধুটির ভাষাতেই। “সেদিন রাত্রি ১১ টা নাগাদ আমরা রাজশাহী হাসপাতাল থেকে ঢাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। আমরা সবাই আত্মগােপন করলাম সেই রাত্রে। পরদিন ভােরে আমার ভাই এসে খবর দিল—আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের পােড় যাওয়া পুরাতন কর্মী আফজল ও তার ভগ্নীপতিকে সামরিক কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করেছে। খবরটা শুনে বিস্মিত হয়ে গেলাম। আপজল পুরাতন কর্মী শেষ পর্যন্ত সেও গ্রেফতার হল। ভাইকে পাঠালাম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য। ও এসে বলল-রাত্রি থেকেই সকল যােগাযােগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সেদিনই আমরা ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, জান থাকতে কেউ শহর ছাড়ব না।”
পুলিশ লাইনে যুদ্ধ
২৬ মার্চ ভাের থেকে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা রাজশাহী শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে মেশিনগান সহ বেপরােয়া গুলিবর্ষণ চালাতে থাকে। সেদিনই জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষর দপ্তরে কার্যরত জনৈক ড্রাইভার গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ঐ একই দিনে রাজশাহী পুলিশের ডি আই জির কাছে সামরিক কর্তৃপক্ষ সমন পাঠায় আত্মসমর্পণ করুন। কিন্তু ডি আই জি তা করতে অস্বীকৃত হন। ফলত ঐ রাত্রেই ইয়াহিয়া ফৌজ পুলিশ লাইনের বাইরে নিজেদের স্থান বেছে নিতে থাকে।
২৭ মার্চ দুপুরে বেলদারপাড়ায় বিনা কারণে দুজন যুবক হালিম ও বাদলকে ইয়াহিয়া ফৌজ গুলি করে হত্যা করল। এদের মধ্যে বাদল খ্যাতনামা ফুটবল খেলােয়াড়-উয়ারী ক্লাবে খেলতেন। সেদিন সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশমত মজুত অস্ত্রশস্ত্র ইয়াহিয়া বাহিনীর হাতে জমা দেবার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের হাত থকে অস্ত্রসমূহ ছিনিয়ে নিলেন সাধারণ মানুষ। তারপরেই ইয়াহিয়া ফৌজ আক্রমণ করল পুলিশ লাইন।
এই আক্রমণ শুরু হওয়া মাত্র পুলিশের পাশে সংগ্রামে এগিয়ে এলেন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীবৃন্দ। ২৭ তারিখ সারাদিন উভয়পক্ষ অবিশ্রান্ত ধারায় গােলাগুলি বর্ষণ করল, ২৮ মার্চ সকালেও যুদ্ধ চলল।
২৮ তারিখ মধ্যাহ্ন থেকে ইয়াহিয়া বাহিনী যুগপৎ মর্টার ও মেশিন গানসহ শুরু করলেও ওরা পুলিশ লাইন দখল করতে সক্ষম হয়নি।
যুদ্ধ চলল পরদিনও। অবশেষে ৩০ মার্চ তারিখে পুলিশ লাইনের পেছনে অবস্থিত ইস্ট পাকিস্তান
পাকিস্তান রাইফেলস
(ই পি আর) এর শিবিরে ই পি আর বাহিনী বিদ্রোহ ঘােষণা করে এগিয়ে এল পুলিশের পাশে। পশ্চাদপসরণে বাধ্য হলাে ইয়াহিয়ার সৈন্যগণ।
ক্যান্টনমেন্টের লড়াই । এবার রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বা সৈন্য ছাউনী ঘিরে সৈন্যদের অবরুদ্ধ পর্যদস্ত করে শহর মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হলাে।
‘মােজাহেদ’ বা উদ্বাস্তু কলােনীর পশ্চাদভাগে অবস্থিত এই ক্যান্টনমেন্ট অবরােধ শুরু হলাে ৩ এপ্রিল থেকে। মহকুমা থেকে পাক হানাদারদের বিতাড়িত করে মুক্তিফৌজ ই পি আর বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের কাছে এসে পৌছাল।
তারপর ৭ তারিখের মধ্যে, একে একে নওগাঁ মহকুমা থেকে ক্যান্টনমেন্ট পার্শ্বস্থ নওদাপাড়া নওহাটা গ্রাম, নাটোর মহকুমা এবং চারঘাট ও সারদহ গ্রাম থেকে বুথপাড়া গ্রামে এসে জমায়েত হয় অপরাপর ই পি আর সৈন্য। ৭ এপ্রিল চারপাশ দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট অবরােধ করে চরম আঘাত হানা হলাে সৈন্য ছাউনীর উপর।
সৈন্য ছাউনীতে ছিল ৫০০ জন পাকি সৈন্য। ৭ তারিখ উভয়পক্ষে সারাদিন ধরে চলল মেশিনগানের গুলিবৃষ্টি। ক্ষয়ক্ষতি অধিক হলাে অবরুদ্ধ ইয়াহিয়া ফৌজেরই।
৮ এপ্রিল রাজশাহী শহরতলীর গ্রামগুলাের উপর বিমান থেকে আগুনে বােমা নিক্ষেপ করে ইয়াহিয়া বাহিনী গ্রামবাসীদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করল। তারপর দুপুর নাগাদ রাজশাহী শহরের উপরেও বিমান থেকে বােমা বর্ষিত হলাে।
এ সময় ছাত্রবন্ধুটি বন্দুক হাতে “বর্ণালী সিনেমা হলের কাছাকাছি কাদিরগঞ্জে ছিলেন। উনি জানালেন ৯ তারিখ সকালেও বিমান হানা হলাে; কিন্তু সেদিনই প্রথম মেশিনগান থেকে বিমান লক্ষ্য করে আকাশ লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল মুক্তিফৌজ। ইয়াহিয়ার বিমান-সেনারা বাধ্য হলাে পালিয়ে যেতে।
তারপর ১৪ তারিখ পর্যন্ত আর কোন বিমান হানা হয়নি। অবরুদ্ধ পাকি সৈন্যরা মাঝে মাঝে গুলি চালিয়েছে বটে, কিন্তু মুক্তিফৌজের প্রত্যুত্তরে কোণঠাসা হয়ে আর এগিয়ে আসার চেষ্টা করেনি। আর এই সময়টুকু -৭ থেকে ১৪ এপ্রিল সৈন্য ছাউনী অবরােধের দিনগুলােতে- সমগ্র রাজশাহী শহর মুক্তি ঘােষণা করল, নাগরিক জীবনযাত্রা হয়ে এল স্বাভাবিক।
রাজশাহীর পতন ও ধ্বংসলীলা:
ঐ এক হপ্তার ক্ষণস্থায়ী মুক্তির সময় রাজশাহীর নাগরিকরা ভাবতে পারেননি পরবর্তীকালের পরিস্থিতি কী হিংস্র আকৃতি নিতে পারে। ১৪ এপ্রিল দুপুর আড়াইটে নাগাদ ইয়াহিয়া বাহিনীর ৯০০ জন সর্বাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত সৈন্য নগরবাড়ী ঘাট, পাবনা শহর এবং নাটোর হয়ে সারদহ গ্রামে এসে সেখানকার পুলিশ থানা অতর্কিতে দখল করে নিয়ে সারদহের গঞ্জ, হাটবাজার ভস্মিভূত করে ফেলে ৯০০ জন নরনারীকে নির্বিচারে নৃশংস পদ্ধতিতে হত্যা করে। তারপর পা বাড়ায় রাজশাহী শহরের দিকে। পথে বানেশ্বরহাট গ্রামটি সম্পূর্ণ জ্বালীয়ে দেয়।
অগ্রসরমান ইয়াহিয়া বাহিনীর নৃশংসতার খবর পেয়েই মুক্তিফৌজের পক্ষ থেকে ৩৫ জন সেনানীর এক কম্যান্ডাে বাহিনী বাহিনী পাঠানাে হয় পাকিফৌজকে রােধ করার জন্য। কাটাখালি গ্রামে গ্রামে উভয়পক্ষের তুমুল যুদ্ধের পর উচ্চস্তরের অস্ত্রের কাছে কম্যান্ডাে বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়, ৩৫ জন মুক্তি সংগ্রামীই রণাঙ্গনে প্রাণ বিসর্জন দেন।
এর পরই রাজশাহীতে মুক্তিফৌজের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন গিয়াস ক্যন্টনমেন্টের অবরােধ তুলে নিয়ে সৈন্যদের শহর থেকে প্রত্যাহার করে নেন। অনতিবিলম্বে রাজশাহীর পতন হয়।
পতনের প্রাক মুহূর্তে শহরের সকল প্রান্তে মুক্তিফৌজ মাইকযােগে জানিয়ে দেয় শহরের অবস্থা সংকটজনক, অবিলম্বে শহর ত্যাগ করুন। অনেকে এই আহবানে সাড়া দিয়ে শহর ছেড়ে চলে যান, কিন্তু তৎসত্ত্বেও বহু নাগরিক ইয়াহিয়া বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হন।
হাত গ্রেনেড়, মর্টার প্রভতি নিক্ষেপ করতে করতে পেট্রল ছড়িয়ে আগুন ধরাতে ধরাতে ইয়াহিয়া বাহিনী। শেষ পর্যন্ত রাজশাহী শহরে প্রবেশ করে। আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পশু শক্তির তাণ্ডবলীলা। আবালবৃদ্ধবণিতার রক্তে রাজশাহীর রাজপত লাল হয়ে যায়। মাত্র এক দিনেই, অর্থাৎ ঐ ১৪ তারিখেই, শহরের প্রায় সহস্রাধীক নরনারী নিহত হন। যারা পদ্মার চর ধরে পালাচ্ছিলেন তাঁদেরও নৃশংসভাবে খুন করতে ওরা কার্পন্যবােধ করেনি।
“ইয়াহিয়ার সৈন্যরা বহু বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি দালানবাড়ি। আর শহরের বাজারের পুরােটাই অগ্নিদগ্ধ। পদ্মার এ চর থেকে ১৫ তারিখেও লেলিহান অগ্নিশিখা আকাশে উঠতে দেখেছি।” বলা বাহুল্য ১৫ এপ্রিল বিকেলে উনি রাজশাহী ত্যাগ করেছেন।
এবার চোখ মুছলেন তরুণ বন্ধুটি। তারপর সুতিক্ষ দৃষ্টি মেলে বলে উঠলেন- “রাজশাহীতে ফিরে যাবই। বাঙলাদেশ’ এর শােষণমুক্ত স্বাধীনতা অর্জন করতে হবেই। প্রয়ােজন হলে দেবাে এক নদী রক্ত/ হােক না পথের বাঁধা প্রস্তর শক্ত,/অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে একদিন সে পাহাড় টলবেই।”
সূত্র: সপ্তাহ, ৩০ এপ্রিল ১৯৭১