You dont have javascript enabled! Please enable it!

৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ আন্তজার্তিক

চীন
চীন বঙ্গোপসাগরে বিদেশী বাণিজ্য জাহাজকে হয়রানী করার জন্য ভারতীয় নৌ বাহিনীর নিন্দা করেছে তারা গত কয়েক দিনে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য জাতিসংঘ কর্মচারী ও খাদ্যবাহী ৬ টি কোস্টার আটক করেছে যার কয়েকটি মাদ্রাজ বন্দরে অবস্থান করছে। এ ছাড়াও ভারতীয় নৌ বাহিনী দুটি তেল ট্যাংকার আটক করে কলকাতা বন্দরে নিয়ে গেছে।ভারতের এরুপ কার্যকলাপ জলদস্যুতার পর্যায়ে পরে এবং ইহা জাতিসঙ্ঘ সনদ এবং জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন। এরূপ কার্যকলাপ খাদ্য যুদ্ধের সামিল।
পাকিস্তানের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা বলেন পাকিস্তানের উপর ভারতের সর্বাত্মক যুদ্ধ এমন এক সময়ে শুরু হল যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গোপন আলোচনায় সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। সিদ্ধান্তটি ছিল ইয়াহিয়াকে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন এ কথা তারা অস্বীকার করে বলেন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে স্বায়ত্তশাসন প্রদান সমর্থন করে। তারা বলেন পাকিস্তান প্রবাসী সরকার বা শেখ মুজিবের মনোনীত প্রতিনিধির সাথে এ ব্যাপারে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বিবদমান পক্ষদ্বয়ের সময়ের প্রয়োজন। এর আগে মার্কিন প্রশাসন নিজেদের নিরপেক্ষ বলার পর সিনেটর কেনেডি ও সিনেটর মাস্কি প্রতিবাদ করার পর তারা এ বিবৃতি প্রদান করেছেন। তারা পাকিস্তানের উপর ভারতের হামলা অযৌক্তিক। ইহা দ্বারা আন্তর্জাতিক অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে এবং একটি রাষ্ট্রকে খণ্ড বিখণ্ড করতে পারে।
জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ বলেছেন পাক ভারত যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব সাধারন পরিষদে গৃহীত হওয়ায় তিনি যুদ্ধ বিরতি কার্যকরে আশাবাদী
ন্যাটো
ন্যাটোর গতকালের বৈঠকে পাক ভারত যুদ্ধ এবং ভারতে সোভিয়েত অস্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ব্রিটিশ লেবার পার্টি শেখ মুজিবের মুক্তি দাবী
ব্রিটিশ লেবার পার্টি আন্তজার্তিক শাখা অবিলম্বে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে আহবান করেছেন। তাদের এক সম্মেলনে গৃহীত কার্যবিবরণীতে তারা বলেন জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকারের সাথে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর উপর পাকিস্তানের সমস্যা সমাধান নির্ভর করছে।
সাধারন পরিষদে সমর সেন আগা শাহী বিতর্ক
সাধারণ পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি শ্রী সমর সেন বলেন, পাকিস্তানের অবশ্যই বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিতে হবে। উপমহাদেশে শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে জাতিসংঘের কোন প্রস্তাবই বাস্তবায়ন করা যাবে না। তিনি বলেন বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সৈন্য অপসারন করতে হবে।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার এবং শেখ মুজিবকে মুক্তিদানের ভারতীয় দাবির জবাবে আগা শাহী এদিন বলেন, এসবই হচ্ছে পাকিস্তানকে বিভক্ত করে অনুগত তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করার হীন চক্রান্ত। তিনি আরও বলেন সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট হয়ে বেয়নেটের মুখে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের উপর বাংলাদেশ চাপিয়ে দেওয়াই ভারতের আসল অভিসন্ধি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির এবং সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১০৪-১১ ভোটে প্রস্তাব টি পাশ হয়। সাধারন পরিষদের সিদ্ধান্ত মানতে সদস্য রাষ্ট্র গুলি বাধ্য নয়। সাধারন পরিষদের প্রস্তাব এক ধরনের পরামর্শ মাত্র। এই প্রস্তাবে নেপাল ও আফগানিস্তান ভোট দানে বিরত ছিল। মুসলিম রাষ্ট্র সেনেগাল এবং ওমান (সদ্য সদস্য হয়েছে ) ভোট দানে বিরত ছিল। সাধারন পরিষদে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি ৩ দফা প্রস্তাব সুপারিশ করেছেন যুদ্ধ বিরতি, সৈন্য প্রত্যাহার ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে বৈঠক করে একটি ঐকমতে পৌঁছানো এবং তাদের বিচ্চিন্নতা আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে এনে শরণার্থী ফেরত নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। শ্রীলংকা মুল প্রস্তাবে পক্ষে ভোট দেয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!