১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• বিমান ছিনতাই ও ধংস ঘটনার পর ভারত সরকার তাদের আকাশ সীমায় ভারতীয় বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এর জেরে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহরে ১৪৪ ধারা জারী। ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ এবং ব্যাটন চার্জ করে। ৬০ জন পুলিশ সহ বহু ছাত্র আহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
• ভারতীয় বিমান ছিনতাই এবং ধ্বংস ঘটনার কারনে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে পাক-ভারত সম্পর্কে যে অবনতি ঘটেছে সে সম্পর্কে অবহিত করার জন্য পাকিস্তান সরকার পররাষ্ট্র দফতরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠান।
• ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে আজাদ কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম লীগের সভাপতি কে. এইচ. খুরশিদ আজাদ কাশ্মীর সরকারকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পূর্বেকার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদাসহ সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। জনাব খুরশিদ গিলগিট ও বালটিস্থানকে আজাদ কাশ্মীরের অন্তুর্ভুক্তির দাবি জানান।
• মুলতানে নব নির্বাচিত এম. এন. এ এবং এমপিদের এক সমাবেশে পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, ৬-দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনন্ত্র প্রণীত হলে তিনি এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করবেন।
• পশ্চিম পাকিস্তান হতে যে সকল অফিস পূর্ব পাকিস্তানে সরানোর কথা ছিল নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে
• মওলানা ভাসানি সকল নিরাপত্তা বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছেন
রাশেদ সোহরাওয়ার্দী (রবার্ট এশবি)।
সোহরাওয়ার্দীর ২য় স্ত্রী Vera Alexandrovna Tiscenko Calder এর ঘরে ১ পুত্র সন্তান ছিল। নাম রাশেদ (রবার্ট এশবি)। ১৯৫১ সালে সোহরাওয়ার্দীর সাথে Vera Alexandrovna এর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। Alexandrovna ছেলে রাশেদ সহ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন। আমরা রাশেদ বলে জানলেও তিনি রবার্ট এশবি নামেই পরিচিত ছিলেন। আমরা তাকে মুসলমান জানলেও তিনি ছিলেন খৃস্টান। সোহরাওয়ার্দী ১৯৬২ সনের ৫ ডিসেম্বর মারা গেলে রাশেদ পিতাকে দেখতে পাকিস্তান এসেছিলেন।
তিনি বাংলা বা উর্দু কোন ভাষাই জানতেন না। পাকিস্তানের কোন অংশে ৫১ সালের পর বসবাস করেননি। তার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি লন্ডনে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন এবং মায়ের মতই অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭১ সনে যুদ্ধের সময় তার সৎ বোনের মত তিনিও কিছুদিন পাকিপন্থি হিসাবে বক্তৃতা বিবৃতি দিতেন। অক্টোবর মাস নাগাদ রাসেদ বাংলাদেশের পক্ষে ভুমিকা নিয়ে একটি বিবৃতি দেন। এ পর্যন্তই এর পর তাকে আর কোন ভুমিকায় দেখা যায় নাই। স্বাধীন বাংলাদেশে কোন দিন এসেছেন কিনা জানা যায় নি বা প্রবাসে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবেও পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে হয় না। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক রবার্ট এশবি নামেই নিজেকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। তার বিবৃতি টি নিচে দেয়া হল
লন্ডন, অক্টো. ৮:- আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মরহুম জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দীর একমাত্র পুত্র জনাব রাশেদ সোহরাওয়ার্দী ৭ অক্টোবর লন্ডন ১১ – এ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আশা করেন যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে পূর্ণ বিজয় ছিনিয়ে আনতে সফল হবে।
জনাব রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর বিবৃতির পূর্ণ ভাষ্য নিম্নরূপ:-
“যখনই আমি পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা কমিটির ব্যাপারে জানতে পারি তখন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আমার সহমর্মিতা ও সম্পূর্ণ সমর্থনছিলো। রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের বিবৃতির প্রয়োজন বোধ করিনি, কিন্তু যেহেতু এটি স্পষ্ট যে, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতি আমার পরিবারের একজন সদস্য তাঁর বিবৃতির মাধ্যমে অলংকৃত করতে চাইছেন, সেহেতু আমার এ ব্যাপারে মুখ খোলা কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।
আমি দৃঢ়কন্ঠে নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, আমি বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বোত্তর সফলতা কামনা করি। বিগত ২৪ বছর যাবত তারা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক অর্থনৈতিক ভাবে নিগৃহীত ও রাজনৈতিকভাবে অবদমিত হয়ে আসছে এবং এখন তারা পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যা ও অন্যান্য ঘৃণ্য অনাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে সফল হবে।
নিকট ভবিষ্যতে আমি একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে যেতে চাই, যেখানে সকল বিশ্বাস ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মানুষ সুখ-সমৃদ্ধিতে বাস করবে।
এছাড়াও আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সম্ভাষণ জানাই, যার সদস্যবৃন্দ আমার পিতার সহকর্মী এবং অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন।”
(রাশেদ সোহরাওয়ার্দী)