You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | পাক ভারত যুদ্ধে চীনের অবস্থান - সংগ্রামের নোটবুক

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ পাক ভারত যুদ্ধে চীনের অবস্থান

চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চী পেং ফেই পাকিস্তানের উপর ভারতীয় হামলার নিন্দা করে পাকিস্তানের জনগনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেবে বলে চীন ওয়াদা করেছে। পিকিং এ মৌরি তানিয়ার রাষ্ট্রদূতের সন্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চী পেং ফেই পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে সমাজবাদী সাম্রাজ্যবাদ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন সমাজবাদী সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন পুষ্ট হয়েই ভারত পাকিস্তানের উপর জঘন্য হামলা চালাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন সীমান্তে ভারতের হামলা অত্যধিক বেড়ে গেছে। তিনি ভারতের আগ্রাসী তৎপরতার কঠোর নিন্দা করেন। পাকিস্তান টাইমসের বরাত দিয়ে চীনা বেতারে বলা হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাক ভারত সমস্যায় ভারতের মত আচরন করছে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পদগরনির কাছে লেখা সর্বশেষ পত্রে ভারতীয় আগ্রাসনের বিষয়ে বলা হলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে পাকিস্তানে হামলার জন্য পাকিস্তানের প্ররোচনাকে দায়ী করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে পাকিস্তানে হামলার জন্য শুধু সমর্থনই দেয়নি তারা ভারতকে আধুনিক এবং মান সম্পন্ন অস্র দিয়ে সাহায্য করছে। অপর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন উপমহাদেশে শান্তি চায়। ক্রেম্লিন শান্তির অর্থ এখন বুঝাচ্ছে machiavellian । সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুত গতিতে ভারতে অস্র পাঠানোর কোন প্রয়োজনই ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন গত আগস্টে ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তির ৯ ধারা অনুযায়ী ভারতে অস্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মিডিয়া এবং প্রেস জঘন্য ভাবে ভারতের পক্ষে অকালতি করছে। প্রাভদা ছাড়াও ইজভেস্তিয়া, ক্রাস্নায়া ভেজদা পত্রিকা দুটি চরম পাকিস্তান বিদ্বেষী প্রচার চালাচ্ছে। কূটনীতিক ক্ষেত্রেও সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে চাপের উপর রাখছে।

এ বিষয়ে বেতার নিকলাই ফিরুবিনের সেপ্টেম্বর সফরে যৌথ বিবৃতির কথা তুলে ধরেন। অক্টোবরের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিমান বাহিনী প্রধান ভারত সফর করে যদি যুদ্ধের প্রয়োজন হয় ভারতের প্রতিরক্ষা চাহিদা নিয়ে নেন। ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরেও ইন্দিরা গান্ধির সন্মানে আয়োজিত ভোজসভায় এক সোভিয়েত নেতা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষদগার করেন। সোভিয়েত মন্ত্রীর কিছুদিন আগে মস্কোতে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করে সামরিক সহযোগিতার খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করেন এর পর পরই শুরু হয় ভারতে সোভিয়েত অস্র সরবরাহ। বিশ্ব মিডিয়াতে ভারতে সোভিয়েত অস্রের এয়ার লিফট নিয়েও অনেক লেখালেখি হয়েছে। চীন এ ছাড়াও অভিযোগ করে গতকাল বিকেলে ভারত পাকিস্তানের উপর বিমান আক্রমনের সাহায্য নিয়ে উরি, চাম্ব, শিয়ালকোট, জাসসার, লাহোর, রাজস্থান, পুচ,রহিম ইয়ার খানে একযোগে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ৪ টার মধ্যে হামলা চালায়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী তাৎক্ষনিক ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা বিমান হামলা চালায়। আজ তারা পূর্ব প্পাকিস্তানে একই ধরনের হামলা চালিয়ে হিলির ৩ মাইল ভিতরে অবস্থান নিয়েছে ঢাকা চাদপুর নারায়ণগঞ্জে বোমা বর্ষণ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমনের কম্যান্ডার অরোরা আজ দাম্ভিকতার সাথে বলেছেন তার লক্ষ্য ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ।

ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব কেবি লাল বলেছেন তার বাহিনী স্থল যুদ্ধে অগ্রসর হতেই থাকবে তার নৌ বাহিনী উভয় সেক্টরে পাক নৌবাহিনীকে আক্রমনের জন্য এগুচ্ছে। নৌবাহিনী দেশের দু অংশের মধ্যে সামুদ্রিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি হুয়াং হুয়া পাকিস্তানে ভারতের আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। আত্মরক্ষার প্রয়জনের কথা বলে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পাঠানোর যে কথা ভারত বলছে তা হল গ্যাংস্টার লজিক। ভারত সরকার সামরিক আক্রমন করছে সেখানে শরণার্থী ফেরত যাওয়ার স্বার্থে তাও কোন যুক্তির কথা নয়।