You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি

পাকিস্তান বেতার./ চীনা বেতার জানিয়েছে ভারত পশ্চিমে সাতটি বড় প্রচণ্ড আক্রমন চালিয়েছে। তারা উত্তর পশ্চিম এবং পূর্ব দিক হতে সাতটি ফ্রন্টে বিমান আক্রমনের সহায়তা নিয়ে আরমার্ড, আর্টিলারি বাহিনী সহ সাত ডিভিশন সৈন্য বাহিনীর সমন্বয়ে আক্রমন চালিয়েছে। একজন ভারতীয় মুখপাত্র জানিয়েছে তাদের সেনাবাহিনী হিলির কাছে রেললাইন অতিক্রম করে ৫ মাইল ভিতরে প্রবেশ করেছে।

আখাউরা ফ্রন্ট

আখাউরারর উত্তরে পাকবাহিনীর সাথে যৌথ বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। অপারেশন নাট ক্রেকারস নামে এই অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী। এর অংশ হিসাবে তিতাস রেল সেতুর দিকে অগ্রসর হয় যৌথ বাহিনী। ভারতীয় ৪ গার্ডের সাথে ২ বেঙ্গলের ২ টি কোম্পানি এখানে লড়াই করছে। আখাউরার দক্ষিন দিক থেকেও আক্রমন জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ২০ জন সাংবাদিক এই যুদ্ধ কভার করতে ব্রাহ্মতবাড়িয়া আছেন কিন্তু প্রবল গোলাবর্ষণের মুখে তারা আখাউরা বা তিতাস সেতু এলাকার কাছে ভিড়তে পারেনি। আজমপুর রেলস্টেশন পুনর্দখল করতে যেয়ে লেঃ ইবনে জামান বদিউজ্জামান পাকবাহিনীর গোলাবর্ষণে নিহত হন।
পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র বলেছেন ভারতীয় বাহিনীর আখাউরা দখল ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। ৫৭ ডিভিশনের ৩১১ ব্রিগেড এ যুদ্ধে অংশ নেয় তারা আখাউরার কাছে তিতাস নদীর একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। ৩১১ ব্রিগেডের ৪ গার্ডের ৭ সৈনিককে আটক করা হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর অপারেশন মেনুয়েলের এক কপি পাক বাহিনীর হস্তগত হয় যা অপারেশন নাট ক্রেকারস নামে পরিচিত। আখাউরায় ভারতীয় বাহিনী সোভিয়েত ১৩০ মিমি কামানের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে। ভারতীয় বাহিনী চিনাইরে স্থির হয়ে আছে। গতকালের হামলায় পিটি ৭৬ ট্যাঙ্ক থাকলেও আজ তা ব্যাবহার হয়নি।

সিলেট সেক্টর

গোয়াইন ঘাট যুদ্ধে লেঃ খালেদের বাহিনী কাট অব এর দায়িত্ব পালন করে। লেঃ নুরুন্নবী ও লেঃ মঞ্জুরের ৩ বেঙ্গল যুদ্ধে পাক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে গোয়াইন ঘাট দখল করে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন আহত হয়। ৪ নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন রবের বাহিনী ভোর রাত থেকে যুদ্ধ করে কানাইঘাট মুক্ত করে। এখানে মুক্তি বাহিনীর ১১ জন নিহত হয় আহত হয় ২০ জন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

হিলি
ডেইলি টেলিগ্রাফের ডেভিড লুসাক টাইমসের ডেভিড হাউজিগো বিবিসির জন অসমান নিউইয়র্ক টাইমসের সিডনী শনবারগ, বালটিমোর সান এবং রেডিও অস্ট্রেলিয়া তাদের রিপোর্টে নিশ্চিত করেছেন হিলিতে ভারতীয় বাহিনী ট্যাঙ্ক যুদ্ধে নিয়োজিত আছে।

মুক্তাঞ্চল

২ তারিখ সমগ্র উত্তর ঠাকুরগাঁও (পঞ্চগড়) দখলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় ৭১ ব্রিগেডের সহায়তায় সারারাত প্রচণ্ড গোলা বর্ষণের পর পাক বাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে সৈয়দপুর চলে যায় কিছু অংশ দিনাজপুরের খানসামায় অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। তখন মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ মিছিলসহ ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়।

বরগুনা

এই দিনে বরগুনা জেলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধারা। সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এখানে অবস্থানরত সামান্য আধাসামরিক বাহিনী সমুহ প্রত্যাহার করে নিলে মাত্র ২১ জনের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বরগুনা মুক্ত ঘোষণা করে। পরে এসডিও কে দিয়ে স্বাধীন দেশের আনুগত্য প্রদর্শন করায়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!