You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ঃ ভারত

ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতা সফরকালে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানের সভায় বলেন আঘাত আর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমরা এক এক নতুন প্রজন্মের দ্বারে উপনীত হচ্ছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত ,ভয় আমাদের নেই। আদর্শ আমাদের পথ প্রদর্শক, সংহত জনতা আমাদের দুর্জয় শক্তির উৎস। সীমান্তের যুদ্ধের জন্য আমাদের ক্ষেত খামার, কলকারখানা, অফিস আদালতেও কাজকর্মের মাধ্যমে প্রতিরোধের দৃঢ় প্রাচীর রচনা করা হয়েছে। জনগন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করবেই। তিনি বলেন বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষকে এভাবে মরতে দিব না। ভারতের ৫৫ কোটি মানুষের পূর্ণ সাহায্য বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের পিছনে থাকবে। পাকিস্তান নিজের কারনেই ভাংছে। আমাদের এখানে করার কিছুই নেই।

বেতার ভাষণ

পাকিস্তানের হামলা শুরুর পর সভা সংক্ষেপ করে ইন্দিরা দিল্লী রওয়ানা হন। মাঝরাতে জাতির উদ্দেশে ৩ মিনিটের এক বেতার ভাষণে তিনি বলেন, দেশ এখন গভীর সঙ্কটের মুখে একক শক্তিতেই আমরা শত্রুর মোকাবেলা করব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধকে পাকিস্তান এখন ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রসারন করেছে। পাকিস্তান আজ ভারতের বিরুদ্ধে পশ্চিম ফ্রন্টে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে। ভারত এ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে। তিনি বলেন দেশে জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে। তিনি দেশবাসীকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরি হবার আহ্বান জানান।

সরণ সিং

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিং নয়াদিল্লীতে পার্লামেন্টে বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ভারত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনে ও ভারত সীমান্তে পাকিস্তানী গোলাবর্ষণে ভারতের নিরাপত্তা বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে।

স্বীকৃতি

ইউপিআই কতক সরকারী কর্মকর্তার সুত্রে জানিয়েছে ভারত যে কোন সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে। কিছু এলাকা মুক্ত হওয়ার পর মুক্তি বাহিনী নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পরই এ ঘোষণা আসতে পারে।

চীনা বেতার

চীনা বেতারের গ্রিনিচ সময় তিনটার সংবাদে বলা হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লীতে দলীয় এক কর্মীসভায় পাকিস্তানের সাথে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে তার জনগণকে জীবনের ঝুকি নেয়ার ও উৎসর্গ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন জাতির জন্য এটি একটি বৃহৎ পরীক্ষা। একই দিন তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধও ঘোষণা করেন। তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানান। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র সমাধানই হল পাকিস্তানী সৈন্যদের পূর্ব পাকিস্তান খালি করে দেয়া। পশ্চিম সীমান্ত থেকে পাকিস্তানী সৈন্য সরিয়ে নিলেই উপমহাদেশে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি হুশিয়ার উচ্চারন করে বলেন ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। ভারতের সৈন্য সমাধানের আগে প্রত্যাহার হবে না। পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম সুত্রে চীনা বেতার জানায় ইন্দিরা গান্ধী সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার আগে আগের দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামের সাথে পরামর্শ করেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!