০৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ গভর্নরের জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণ
গভর্নর মালিক জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে বলেন প্রদেশের সাত কোটি জনগনের কণ্ঠস্বরের প্রতি প্রতিধ্বনি করে ভারতের প্রতি এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন পাকিস্তানের ধৈর্য ও সংযম কে দুর্বলতা বলে যেন ভুল করা না হয়। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জনগন যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। গভর্নর দেশের এই সঙ্কটজনক অবস্থায় বিভ্রান্ত বা হতাশ না হয়ে সকল বিদ্বেষ ঘৃণা অবিশ্বাস এবং তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে একতা বদ্ধ হওয়ার এবং বহিঃ শক্তির আক্রমনের সমুচিত জবাব দানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ভাষণের শুরুতে তিনি তার ক্ষমতা গ্রহনের প্রেক্ষাপট এবং ক্ষমতা গ্রহনের পর তার কিছু উদ্যোগের ব্যাখ্যা দেন। এর পর তিনি বিদ্রোহীদের বিভিন্ন তৎপরতার বিবরন দেন। তিনি এসময় বিদ্রোহীদের হাতে নিহত দেশপ্রেমিক নাগরিকদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বলেন ভারত বিদ্বেষমূলক প্রচারনার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে তাদের সংগঠিত করিয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে এবং পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় খাদ্য প্রশিক্ষন অস্র দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ভারত কোন রকম ঘোষণা ছাড়াই ২১ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। তারা পাকিস্তানের কিছু এলাকাও দখল করে নিয়েছে। বিদ্রোহীদের দিয়ে রাস্তা ব্রিজ অবকাঠামো যানবাহন ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতি ধংশ করছে।
এর পর তিনি ভারতে আশ্রিত এবং ফিরে আশা শরণার্থীদের উপর ভাষণ দেন এবং বলেন ভারতে যারা রয়ে গেছেন তারা আমাদের ভাই আপনারা দ্রুত ফিরে আসুন যতই দেরী হবে ততই সমস্যা প্রকট হবে। তিনি বলেন সেখানে তাদের দুঃখ দুর্দশা সমন্ধে তারা সচেতন। ভারত যে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যাবহার করছে তা এখন বিশ্ববাসীর কাছেও স্পষ্ট হয়ে গেছে তাই ভারত বলছে বাংলাদেশ কায়েম হলেই তারা দেশে ফিরে যাবে। ভারতের হীন উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ হওয়ার জন্য তিনি শরণার্থীদের প্রতি আহবান জানান। ভারত ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান কে পরাজিত করতে না পেরে পাকিস্তানকে টুকরা টুকরা করে দুর্বল পাকিস্তান গড়ার দিকে মনোযোগ দেয়। সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা প্রথমেই পূর্ব পাকিস্তানে হাত দেয়।