You dont have javascript enabled! Please enable it!

২ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ পাক ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে চীন

চীনা বেতারের গ্রিন উইচ সময় ৫৪ মিনিটের সংবাদে বলা হয় ভারত পাকিস্তান কে বিভক্ত করে তথাকথিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে তার দেশের সাথে সংযুক্ত করতে চায়। এ উদ্দেশে তারা পূর্ব পাকিস্তানে সিরিজ হামলা চালাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাম যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা তাদের এ স্কিম বাস্তবায়নের প্রমান মিলে। ২১ তারিখের হামলার পর থেকে রামের ভুমিকা দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে এবং তিনি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মুখপাত্র হিসেবেই অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী জনাব রাম ২৫ নভেম্বর রাওারিতে এক সমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। রয়টারের ২৮ তারিখের ভাষ্য অনুযায়ী জনাব রাম কলকাতায় বলেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মাত্র কয়েকদিনের সময়ের ব্যাপার। ভারতীয় তথ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী রাম ৩০ নভেম্বর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যুদ্ধ পরিহার করা যায় যদি পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নেয়।

একই দিন পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধী বলেন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ইয়াহিয়ার উচিত বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে শান্তির প্রতি ইয়াহিয়ার আন্তরিকতা দেখানো। চীনা বেতার ইন্দিরা গান্ধীর এ মন্তব্যকে গ্যাংস্টার লজিক আখ্যায়িত করেছে। বেতার বলেছে ইয়াহিয়া খান ২৬ মার্চ বিচ্ছিন্নতাবাদিতার অভিযোগে প্রদেশে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমূলে উচ্ছেদ করেছিল। এ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের যে সহযোগী ছিল ভারতের সাম্প্রতিক তৎপরতায় তা প্রমানিত। পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু ভারত এতে নির্লজ্জ ভাবে হস্তক্ষেপ করে মধ্য এপ্রিলে কতক বিচ্ছিন্নতা বাদীদের দিয়ে তার দেশের অভ্যন্তরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। ভারত বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত সীমান্ত গ্রামে তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান করায়। পশ্চিমা সাংবাদিকরা এ ঘটনায় ভারত সরাসরি যুক্ত বলে রিপোর্ট করেছিল।

এ সরকার কেবল কলকাতা, দিল্লী এবং কয়েকটি ভারতীয় শহরেই সক্রিয়। এটি হল ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশ যা পাকিস্তান সব সময় প্রতিবাদ করে আসছে এবং এ দেশ এবং সরকারকে পৃথিবীর কোন দেশই স্বীকৃতি দেয়নি। একই সময়ে ভারত তাদের দেশে অবস্থানকারী শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত যেতে বাধা দেয় এবং এ সমস্যা জিইয়ে রেখে অনবরত সমস্যা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। লন্ডন টাইমসের উদাহরন দিয়ে বেতার বলেছে ২৪ নভেম্বর ব্রিগেড শক্তিতে ভারত যশোর আক্রমন করে প্রচার করে মুক্তিবাহিনী আক্রমন করছে। ডেইলি টেলিগ্রাফের ২৭ তারিখের প্রতিবেদন উল্লেখ করে বেতার বলে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অংশ দখল করে সেখানে ভারত অনুগত বাংলাদেশ সরকার প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। এ কর্মসূচীর প্রথম ধাপ হল যদি যশোর মুক্ত হয় তবে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে।

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!