১৯৭০ সনের নির্বাচনে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ থেকে কেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি?
১৯৫৪ সালের নির্বাচন যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলেও গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের শক্ত ঘাটি বিবেচিত ছিল। গোপালগঞ্জ একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল। ১৯৫৪ সনের নির্বাচন ছিল হিন্দু মুসলমান পৃথক ভাবে। একই এলাকায় দুই জন এমপি হতেন। হিন্দুদের আসন গুলি ২ থেকে ৫ গুন বড় হতো। খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, নড়াইল এসব এলাকায় হিন্দু প্রাধান্য থাকায় আসন গুলি ছোট এবং বগুড়া রংপুর এলাকায় হিন্দু কম থাকায় সেখানে আসন গুলি বড় হত। ১৯৫৬ সনে পাকিস্তানে সংবিধান চালু হলে সেখানে যুক্ত নির্বাচন চালু হয়। সেই সংবিধানের আলোকে নতুন জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তারিখ দেয়া হয়েছিল ১৯৫৯ সনের ফেব্রুয়ারীতে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া যখন শেষ পর্যায়ে চলে আসছিল তখনি আইউব খান মার্শাল ল জারী করেন। নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক শক্তিমত্তা বোঝার জন্য যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থায় হওয়া ১১ টি উপ নির্বাচনের ফলাফলকে আমলে নেয়া যায়। এই সকল নির্বাচনে ১ টি বাদে সকল আসনে আওয়ামী লিগ বিজয়ী হয়েছিল। অপর আসনটি পায় কেএসপি-যুক্তফ্রন্ট। ন্যাপ নির্বাচনে কোন আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। আইয়ুবের বিডি গনতন্ত্রের যুগে আইয়ুব বিরোধী সকল দল জোট করেও আইয়ুবের দলকে পরাজিত করতে পারেনি আইয়ুবের ক্ষমতা ও অর্থ বিনিয়োগ জনিত কারনে। প্রতেক্ষ ভোট সিস্টেম না থাকায় রাজনৈতিক দল সমুহের শক্তিমত্তা বোঝার উপায় ছিল না।
১৯৭০ সাল অবধি হিন্দুরা আগের মতই তাদের দল ভিত্তিক রাজনীতি অব্যাহত রাখে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ হিন্দুদের কাছে টানার জন্য জাতীয় পরিষদে ২ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদে ১১ জন হিন্দু প্রার্থী দিয়েছিল। হিন্দুরা তখনও আওয়ামী লীগের অনুরক্ত হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গোপালগঞ্জ ছিল ৩৫% হিন্দু ভোটারের এলাকা। গোপালগঞ্জ জাতীয় পরিষদে ২টি আসন ছিল। একটি কাসিয়ানি-মুকসুদপুর অপরটি সদর কোটালিপাড়া ।তখন টুঙ্গিপারা হয়নি। হিন্দুরা তাদের নিজের দল জাতীয় গন মুক্তি দল থেকে কাসিয়ানি-মুকসুদপুর আসনে কার্ত্তিক ঠাকুর ও সদর-কোটালিপাড়া আসন থেকে বিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস নামে দুই জন প্রার্থী দেয়। উভয় আসনে মুসলিম লীগ কনভেনশন এর প্রার্থী আইয়ুবের সাবেক কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াহিদুজ্জামান কে এই আসনের একটি তে সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থী হিসাবেই গণ্য করা হত অপর আসনে পিডিপি এর পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রাদেশিক মন্ত্রী আব্দুস সালাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাকেও এই আসনে সম্ভাব্য বিজয়ী মনে করা হত ।
শেখ মুজিব ঢাকার একটি আসনে মুসলিম লীগ কাউন্সিল প্রাদেশিক সভাপতি খাজা খয়ের এর সাথে এবং অপর আসনে জাতীয় লীগের আমেনা বেগমের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ওয়াহিদুজ্জামান ঘোষণা দেন শেখ মুজিব তাকে পরাজিত করতে পারলে তিনি শাড়ি চুরি পরিধান করবেন। শেখ মুজিব প্রতিউত্তরে বলেছিলেন ওয়াহিদুজ্জামানকে_পরাজিত_করার_জন্য তার একজন_সাধারন_কর্মীই_যথেষ্ট। সদর-কোটালিপাড়া আসন থেকে মোল্লা জালাল উদ্দিন কে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল এবং তিনি বিশাল ব্যাবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী মন্ত্রী হয়েছিলেন। কাসিয়ানি-মুকসুদপুর আসনে ওয়াহিদুজ্জামান এবং সালাম খানকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করেন আরেক অখ্যাত এম এ খায়ের। সালাম খান নির্বাচনের পর দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ২৫ মার্চের পর তারা কুখ্যাত পাক দোসর হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।