৩০ নভেম্বর ১৯৭১ঃ রাজ্যসভায় ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের রাজ্যসভায় ৩ ঘণ্টা ব্যাপী এক সেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন ইয়াহিয়া খান যদি সত্যি পাক ভারত উপমহাদেশে শান্তি আশা করে তবে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি মনে করেন আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা ছাড়া কোন আপোষ করবে না। তিনি ইয়াহিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন আগামী মাস হবে ভারত এবং বাংলাদেশের জন্য কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস এবং ত্যাগের প্রশংসা করে বলেন তাদের পিছনে তার দেশের সমর্থন এবং শুভেচ্ছা সবসময় থাকবে।
পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাবে ভারতের পক্ষে তা বরদাস্ত করা হবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অবস্থান ভারতের নিরাপত্তার পক্ষেও বিপজ্জনক। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকা পর্যন্ত ভারত পশ্চিম সীমান্ত হতেও সৈন্য প্রত্যাহার করবে না। দু দু বার পাকিস্তানের ভারত আক্রমন থেকে ভারতের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষে প্ররোচনা মুলক ক্রিয়াকলাপ যে কোন সময়েই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে কোন ছলছুতোয় পাকিস্তান যদি কাশ্মীর আক্রমন করে তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন বাংলাদেশে পাকিস্তানী সৈন্যরা বহুদুর থেকে এসেছে তারা বাংলাদেশে অসুবিধায় ভুগছে তাদের এখন দেশে ফিরে পরিবারের সাথে সময় কাটানো উচিত। রাজ্য সভায় সিপিআই এর ভুপেশ দত্ত সহ অনেক সদস্য রাজ্যসভায় তার বিদেশ সফরের উপর বিবৃতির দাবী করেছিলেন। জনসংঘের ডঃ মহাবীর বলেন প্রধানমন্ত্রীর সফর আশাব্যাঞ্জক কিছু নয়। সিপি এম এর এপি চেটার্জি বলেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সফরের সন্তোষজনক ফলাফল আসেনি। ইন্দিরা গান্ধী আবার বলেন শুধু মুক্তিবাহিনী নয় বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের জন্য তার দেশ সম্ভাব্য সবকিছু করে যাবে। তিনি বলেন পাকিস্তান পশ্চিমা সমর্থন সত্ত্বেও ক্ষমতা নিয়ে পাকিস্তানীরা আগের চেয়ে অনেক বিভক্ত। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের রাজনৈতিক এবং কূটনীতিক হুমকি উপেক্ষা করে তার দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিবে। জনাব গুপ্ত বলেন নিক্সন যদি পাকিস্তানের ভালই চান তবে তার উচিত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপর শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করা। কংগ্রেস ও নেতা বাবুভাই চিনাই বলেন এখন দলীয় বিভেদ বৈরিতা সত্ত্বেও দলের বাইরে ঐক্য রক্ষা করতে হবে এবং তিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর সফর ভারত ও বাংলাদেশের অনুকুলেই ফলাফল এসেছে। জনসংঘের ভাই মহাবীর বলেন সফর যৌক্তিক ছিল কিন্তু ফলাফল আশাপ্রদ নয়। তিনি সফর থেকে ফিরে এসে অপেক্ষা কর নীতির দিকে এগুচ্ছেন এবং নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ রক্ষায় ব্যস্ত।