৩০ নভেম্বর ১৯৭১ঃ ইয়াহিয়ার সাথে ভূট্টো, নুরুল আমিন, গোলাম আজমের বৈঠক
গতরাতে পাকিস্তান টেলিভিশন এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন ইন্দিরা গান্ধী তার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় শেখ মুজিবের কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করছেন। তিবি বলেন ইন্দিরার শেখ মুজিবের মুক্তি ও সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন এবং সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিজয়ের দুটির একটি বেছে নেয়া উচিত। শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার সমাধান করার ইন্দিরা গান্ধীর প্রস্তাব ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন পশ্চিমা দেশ সমুহের শেখ মুজিবের ব্যাপারে আগ্রহ নেই তবে আমরা নিজেরাই আলাপ আলোচনায় তা করতে পারি। তিনি বলেন তিনি মনে করেন না বেশীরভাগ পূর্ব পাকিস্তানী স্বাধীনতা চান। তিনি বলেন দেশরক্ষা, মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য ছাড়া বাকী বিষয় পূর্ব পাকিস্তানের হাতে দেয়া যায়। এক পাকিস্তানের ভিতর পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন তিনিও কামনা করেন। নুরুল আমিনও একই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন প্রদেশে পাকিস্তানী কৌশল পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন নেই।
এই দিনে জুলফিকার আলি ভূট্টো ও নুরুল আমীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। নুরুল আমীন সভা শেষে বেরিয়ে আসার পরেও ভূট্টো ইয়াহিয়ার সাথে আরও কিছুক্ষন আলাপ করেন।
এর আগে সকালে জামাত নে তা গোলাম আজমও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
পরে জুলফিকার আলী ভূট্টো সাংবাদিকদের জানান তিনি পাকিস্তান রক্ষা করতে হলে জনগনের প্রকৃত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। তিনি দক্ষিন পন্থী সাতদলের জাতীয় সরকারে তার দলের যোগদানের বিষয় নাকচ করে দেন। তিনি সাত দলের জোটকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি আখ্যায়িত করেন। সরকারে বাইরে থেকেও জাতির সেবা করা যায় তিনি এ প্রসঙ্গে তার চীন সফরের উদাহরন দেন। তিনি বলেন সঙ্কট এখন কাটিয়ে উঠা সম্ভব এজন্য আমাদের দিতে হবে নিরাপত্তা এবং অবাধ ক্ষমতা। তিনি সত্যিকার অর্থের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। লাহোরে পিপিপির কেন্দ্রীয় পরিষদের বৈঠকে ঘোষণা করা হয় জনাব ভূট্টো আগামী ৩ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা দিবেন। দলের এ বৈঠক ২৫ মার্চের পর যে কোন বৈঠক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বলে দলের মুখপাত্র কাওসার নিয়াজি বলেন। বৈঠকে ইয়াহিয়ার সাথে ভূট্টোর আলাপ আলোচনার উপর আলোচনা হয়।
সাক্ষাতের পরে নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত সময় সূচী সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত আছে এবং ২৭ ডিসেম্বরই জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন বসবে এবং তখনি সরকার গঠিত হবে। তিনি আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন, শাসনতন্ত্র, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এর সাথে আলাপ করেছেন। তিনি বলেন বর্তমানে ভারতীয় আক্রমনের মোকাবিলায় স্ব স্ব মত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল আমীন বলেন বৈঠক চলাকালীন জনাব ভূট্টো তার সাথে কোন অশোভন আচরন করেননি।