২৯ নভেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি
পচাগর যুদ্ধ / পচাগর শহর মুক্ত দিবস
গতকাল পচাগর দখলের পর আজ পচাগরের দক্ষিনে বোদায় ভারতীয় বাহিনী অগ্রসর হওয়ার সংবাদে পাকবাহিনী গতকালের তুমুল যুদ্ধের পর পূর্ব দিকে সরে যায় যাহাতে তারা সৈয়দপুর পৌছতে পারে। পাকবাহিনী সরে যাওয়ার সাথে সাথে পচাগর শত্রুমুক্ত হয়। পাকিস্তান বাহিনী এ ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে চাচ্ছে না কারন এখানে পাকিস্তানী বাহিনী মিত্র বাহিনীর তুলনায় অসম। ভারতের পক্ষে এখানে কিছু ট্যাঙ্ক আছে যা পাকিস্তানের নেই। তা ছাড়া এখানে ভারতের তিন পূর্ণ ব্যাটেলিয়ন আর পাকিস্তানের একটি খণ্ডিত ব্যাটেলিয়ন।
নোটঃ পঞ্চগড় মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। আগে তা ছিল ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত। ৭১ সালের এদিন পঞ্চগড় মুক্ত হয় বলতে বুঝায় পঞ্চগড় থানা মুক্ত হয়েছে। তেতুলিয়া আগে থেকেই মুক্ত। পঞ্চগড় জেলার বৃহৎ দুটি থানা বোদা এবং দেবীগঞ্জ মুক্ত হতে আরও ২/৩ দিন লেগে যায়। তাই পঞ্চগড় মুক্ত দিবস মানে পঞ্চগড় জেলা মুক্ত দিবস নয়।
হিলি ফ্রন্ট
পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি হিলি শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর লেঃ কঃ শমশের সিং ৮ গার্ড সমন্বয়ে বাহিনী হিলির তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। এই দিন যুদ্ধে উভয় পক্ষ স্থিতিশীল থাকে।
বয়রা ফ্রন্টে (যশোর) যুদ্ধ
চৌগাছা থেকে যশোর আক্রমন অব্যাহত আছে। এখনও যৌথ বাহিনী আফ্রা পর্যন্ত অবস্থান করছে। এই সংঘর্ষে পাক অবস্থানে থাকা কিছু বিদেশি সাংবাদিক যুদ্ধ কভার করছেন। এখানে ১ জে কে রাইফেলস এর কয়েকজন সৈন্য পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরা পরে। যশোরের পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদীর পূর্ব পাড়ে শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি এর দুই কোম্পানির সৈন্য ৭টি ট্যাঙ্ক সহ অবস্থানের কথা পাকিস্তান মুখপাত্র স্বীকার করেছেন। রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তানী মুখপাত্র বলেছেন প্রথম বারের মত দুরপাল্লার কামানের গোলা যশোরে আঘাত করেছে। সাংবাদিকরা মুখপাত্রকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তুলেন জীবননগর পতন নিয়ে। তিনি বলেন জীবন নগর পত চৌগাছার মতই। অর্থাৎ চৌগাছা দখলের পর তারা পরদিন তা পুনর্দখল করে নিয়েছিল। তিনি বলেন জীবন নগর সীমান্তের মাত্র ৫ মাইল ভিতরে তা ছাড়া এলাকাটি রণগত কোন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নয়।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার দেবহাটায় বেসামরিক প্রশাসন চালু হয়। সেখানে তখন তিন থানা মুক্ত। সিএসপি আতাউর রহমান প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি তিনি ৫০০ জনের একটি প্রশিক্ষন শিবির পরিচালনা করছিলেন। ত্রান মন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান এ শিবির পরিদর্শন করেছিলেন।
সাতক্ষীরা দখলের জন্য হাবিলদার আফজালের নেতৃত্ব এ ২০০ মুক্তিযোদ্ধা সাতক্ষীরা অভিমুখে রওয়ানা হয়। এ বাহিনী তাদের লক্ষ্য পূরণে সক্ষম না হওয়ায় লেঃ আহসানের নেতৃত্ব এ ৩০০ জনের আরেকটি মুক্তিযোদ্ধার দল সাতক্ষীরা অভিমুখে অগ্রসর হয়। শাহজাহানের নেতৃত্ব এ ১০০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধার দল সাতক্ষীরা দৌলতপুর রাস্তায় অবস্থান নেয়। ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা ৩ দলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে থাকেন।