২৯ নভেম্বর ১৯৭১ঃ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির মিছিল ও সমাবেশ।
পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতার সমর্থনে এদিন ঢাকায় কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটির উদ্যোগে হরতাল এবং মিছিল হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সবুর খান, খাজা খয়ের, গোলাম সারওয়ার, শফিকুল্লাহ, সিরাজউদ্দিন, এমএ মতিন, আশরাফ আলী প্রমুখ। মিছিল শেষে চক বাজারে নেতারা মিছিলকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সভায় বক্তারা বলেন ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে প্রদেশের সকল মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ মানুষেরাই ভারতের বিরুদ্ধে দাতভাঙ্গা জবাব দিয়ে পাকিস্তানের অসম্পূর্ণ মানচিত্র সম্পূর্ণ করবে।
খয়ের উদ্দিন বলেন সমগ্র জাতি আজ ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তে মোকাবেলা রত সেনাবাহিনীর পিছনে আছে। তিনি ভারতকে হুশিয়ারি উচ্চারন করে ভলেন অস্র আর সৈন্য সংখ্যা দিয়ে যুদ্ধে জয় পরাজয়ের ফয়সালা করা যায়না। পাকিস্তানের মুসলমানেরা জান দিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আখতারুদ্দিন বলেন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় হামলায় সারা পৃথিবীতে ভারতের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। অনেকেই বলে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ছাড়া পাকিস্তানের কেউ নেই কিন্তু আজকের মিছিল সে কথা মিথ্যা প্রমান করেছে। তিনি বলেন আমরা আগে আসাম পশ্চিমবাংলা এবং কাশ্মীর থেকে বঞ্চিত হয়েছি এবার তা দখল করে মানচিত্র সম্পূর্ণ করব।
এ এস এম সোলায়মান বলেন মুসলমানেরা হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো হিন্দুদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়নি। হামলা বন্ধ না হলে যুদ্ধ হবে ভারতের মাটিতে। তিনি ভারতের কাছে ৪ দফা দাবী পেশ করেন এবং বলেন এ দাবী মানা না হলে পাকিস্তানের ১২ কোটি মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করবে।
জামাতের গোলাম সারওয়ার বলেন ভারত পূর্ব পাকিস্তান নয় এ এলাকার মুসলমানদের ইমানের উপর হামলা করেছে মুসলমানেরা কখনো পরাজিত হয় না হয় শহীদ অথবা গাজী। তিনিও অসম্পূর্ণ মানচিত্র সম্পূর্ণ করার কথা বলেন।
পিডিপি ভাইস প্রেসিডেন্ট জব্বার খদ্দর দেশের ভিতরের মীর জাফরদের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করে বলেন এরা হানাদারদের চাইতেও বেশী ক্ষতিকর।
জামাতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক রেডিওতে জেহাদি অনুষ্ঠান প্রচার না করায় সমালোচনা করেন। তিনি পাকিস্তানকে অস্র দেয়ায় চীন, পঃ জার্মানি, সৌদি আরব এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নেজামে ইসলামী নেতা আশরাফ আলী বলেন ভারতীয় হামলার প্রেক্ষিতে জেহাদ ফরজ হয়ে পড়েছে।
শহর শান্তি কমিটি প্রধান সিরাজুল হক ভারতীয় হামলার তীব্র নিন্দা করেন।
চট্টগ্রামেও শান্তি কমিটির হরতাল ও মিছিল হয়েছে। মিছিলটি স্টেশন রোড, কোর্ট রোড, আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, মোমিন রোড, লাভ লেন, জুবিলী রোড অতিক্রম করে। মিছিল শেষে পোলো গ্রাউন্দে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল কারীরা ভারত বিরোধী স্লোগান দেয়। স্লগগুলি বেশিরভাগই ছিল উর্দু স্লোগান। এখানে বক্তব্য দেন আব্দুল ওয়াহাব, একেএম মাসওয়ালী।