২৮ নভেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি
ঢাকা
ঢাকায় বিদেশী সাংবাদিকরা চলাফেরার স্বাধীনতা অর্জন করায় পাক বাহিনী দ্বারা সংগঠিত নির্মম কিছু ঘটনার ভিডিও ধারন করতে সক্ষম হয়। সাংবাদিকদের একটি দল নৌকা করে দুদিন আগে দূর থেকে দেখা আগুনে প্রজ্জলিত গ্রামটি সফর করেন। তারা সেখানে অগ্নিদগ্ধ এবং অন্যভাবে নিহত কয়েকজনের প্রায় পচে যাওয়া লাশ দেখেন। সাংবাদিকরা স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন সেখানে কেউ বিদ্রোহী দেখেননি। আকার ইংগিতে তারা এটি পাক বাহিনীর কাজ বলে জানায়।
রাওয়ালপিন্ডি
রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের জন্য এক সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাপ্ত ভারতীয় অস্র, পোশাক, ব্যাজ, ছবি, সরঞ্জামের এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যশোরে প্রাপ্ত জিনিষের মধ্যে আছে এক নিহত সৈন্য এর ১৭০০ টাকার একটি ডিপোজিট স্লিপ, এক মৃত সৈন্য এর স্ত্রীর পত্র, একটি ডায়েরী, জৈন্তাপুরে প্রাপ্ত এক সৈনিকের কাছে প্রাপ্ত সেখানকার একটি ম্যাপ, ৫/৫ গুর্খা সৈন্যদের কয়েকটি পোশাক, বেজ, ছবি।
ফেনী
ফেনীর গুলবানিয়ায় অগ্রসরমান ভারতীয় সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে ১০ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
সিলেট
সিলেটের জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, তামাবিল, কেরামত নগর ও ফুলতলায় অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এ এলাকায় ৩ দিক দিয়ে ভারতের ৮ ডিভিশন যুদ্ধে লিপ্ত আছে। মিত্র বাহিনীর দখল করা ছোট খেল পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুনর্দখল করে। এখানে অনেক ৫/৫ গুর্খা সৈন্য হতাহত হয়। খবর পেয়ে ভারতের ১০১ কমুনিকেশন জোন ডিভিশনের জেসিও মেজর জেনারেল আইএস গিল ৫/৫ গুর্খা সদর পরিদর্শন করেন। তিনি মেজর সাফায়েত জামিলের সাথে কথাবার্তা বলেন এবং মুক্তি বাহিনী পুনর্গঠন করে ছোটখেল এবং রাধানগর দখলের নির্দেশ দিয়ে চলে যান। মেজর সাফায়েত জামিল আক্রমনের প্রস্তুতির জন্য আশে পাশে অবস্থান নেয়া ৩ বেঙ্গল এর অবস্থান গুলোকে নির্দেশ দিতে চলে যান।
৮ ডিভিশন প্রধান মেজর জেমারেল কৃষ্ণা রাও কৈলাস শহর সফর করেন সেখানে তিনি জওয়ানদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান করেন এবং অগ্রবর্তী স্থান ঘুরে দেখেন। তিনি এ ব্যাটেলিয়নকে ব্যাটেলিয়ন ট্রফি অর্জন করার প্রচেষ্টা নিতে বলেন যেমনটি পেয়েছিল নাগাল্যান্ড এ ৮ ডিভিশনের ২২ ব্যাটেলিয়ন। তিনি অবিলম্বে শমশের নগর দখল করে নিহত হাবিলদার শমসের সিং এর প্রতি সন্মান দেয়ার আহবান জানান। সেদিনই এ ব্যাটেলিয়ন পূর্ণ আক্রমনের জন্য রাত পোহাবার সময় গুনছিল।
(পরদিন তারা শমশের নগর তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলে)
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ সেক্টরে ( বড়মারী, আকিপুর, কামালপুর) নতুন একটি হামলা প্রতিরোধ করে পাক বাহিনী। সেখানে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।
কুড়িগ্রাম
ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে ৬নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী নাগেশ্বরী দখল করে। মুক্তি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন নওাজেশ। পাক সরকারের মুখপাত্র জানান নাগেশ্বরীতে ভারতীয় ৯ মাউনটেইন ব্রিগেড এর ৪ রাজপুত ব্যাটেলিয়ন তাদের চর সমেত এই হামলা করে। তবে নাগেশ্বরী পতন হয়েছে কিনা তা স্বীকার করেননি। ধরলা নদীর সমগ্র উত্তর পাড় মুক্ত হয়েছে এদিন।
পচাগর
পচাগরে ভারতীয় গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও অবস্থা স্থিতিশীল আছে। এখানে তারা দুই ব্রিগেড শক্তিতে হামলা চালায়।
হিলি
যৌথ বাহিনীর এবং পাকবাহিনীর মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে শেলিং হচ্ছে। যৌথ বাহিনী দুটি অক্ষে স্থির আছে। পাক বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। জেনারেল নিয়াজি এলাকা সফর করে গেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।