You dont have javascript enabled! Please enable it!

সুজুকির সেই ভ্যান

তরুণ তাকামাসা সুজুকি ১৯৭১ সালে ছিলেন একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। টোকিয়োতে এক কোম্পানিতে ভালো চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে পত্রিকা পড়ে জানলেন বাংলাদেশের খবর। ইতোমধ্যে অধ্যাপক নারা জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি করেছেন। সমিতির আবেদনের একটি লিফলেট তার হাতে দিলেন তার এক বন্ধু । তিনি লিফলেট পড়ে দেখা করলেন অধ্যাপক নারীর সঙ্গে। সমিতির সদস্য হলেন ৫০০ ইয়েন দিয়ে এবং কিছু অর্থ দানও করলেন সমিতির ফান্ডে। এপ্রিল মে মাস পুরোটা টোকিয়োর রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশের হয়ে প্রচার চালালেন। দান সংগ্রহ করলেন। মানুষজনও সাড়া দিয়েছিল। এর মধ্যে মুজিবনগর সরকার অধ্যাপক নারাকে জানিয়েছে, ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার হবে। নারা যদি জাপানী বুদ্ধিজীবী বা সমিতির কোন সদস্যকে পাঠান তা হলে ভালো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় নারাকে ছুটি দিচ্ছিল না। সুজুকি ভাবলেন, জাপান থেকে যদি কেউ না যায় তবে খুবই লজ্জার বিষয় হবে। সুজুকি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে টাকা পয়সা যোগাড় করে টিকেট কাটলেন। তখন তারা জানালেন, সম্মেলনের স্থানি ও তারিখ বদলেছে। এখন নতুন দিল্লিতে সেপ্টেম্বরে সম্মেলন হবে কিন্তু, তখন দেরি হয়ে গেছে। জানলেন অধ্যাপক সুরুসিমা ও একজন চিত্রগ্রাহক কলকাতা যাচ্ছেন, তিনি তাদের সঙ্গে কলকাতা রওয়ানা হলেন।বাংলাদেশ মিশনের আনওয়ারুল করিম চৌধুরী তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। মত বিনিময়ের পর তারা শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনে যান। সুরুসিমা ঠিক করলেন দিল্লি যাবেন। সুজুকিও গেলেন তাঁর সঙ্গে দিল্লি কিন্তু তারপর ফিরে এলেন। অনেক ছবিও তুলেছিলেন শিবিরের। এ সময় তার ক্যামেরা চুরি হয়ে যায়। তিনি ঠিক করলেন জাপানে ফিরে এসে শরণার্থীদের জন্য আরো কাজ করবেন।জাপানে ফিরে উনি অধ্যাপক নারার সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করলেন শরণার্থীদের জন্য ফান্ড তৈরি করতে হবে, এ জন্য ক্রস কান্ট্রি ফান্ড রেইজিং ক্যাম্পেইন’ করবেন ঠিক করলেন। তাঁর বাড়ি টয়োহাসিতে, নাগোয়ার কাছে। টোকিয়ো থেকে দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের মতো। বাড়ি থেকে গাড়ি আনালেন, ভালো গাড়ি তার চারদিকে প্ল্যাকার্ড লাগালেন, শরণার্থী শিবিরে বসে যে ছবি তুলেছিলেন সেগুলি লিফলেট আকারে ছেপেছিল সমিতি। জুন মাসে এসব নিয়ে সুজুকি বের হলেন। প্রথমে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে মাইক্রোফোন হাতে বক্তৃতা দিতেন। ভ্যানে বাজত জর্জ হ্যারিসনের, বাংলাদেশ’ গানটি, লিফলেট বিলাতেন। টোকিয়ে থেকে কোবে, ইয়োকাহামা, নাগোয়া এবং ওসাকায় গেলেন ভ্যান নিয়ে। বিরাট পথ। ‘হেলপ বাংলাদেশ” প্ল্যাকার্ড নিয়ে একটি ভ্যান ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটি মানুষজনকে আকৃষ্ট করত। টেলিভিশনেও সুজুকির প্রচার দেখান হলো। সুজুকি বলেছেন, ‘মানুষ তখন এগিয়ে এসেছে। আমি যে একাজটি করছি তার জন্য তারা আমাকেও ধন্যবাদ জানাত। সুজুকি এভাবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য প্রচুর অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী যোগাড় করেছিলেন। সব কিছু তারপর অধ্যাপক নারার কাছে জমা দিয়েছিলেন। এ কাজে টোকিয়োতে অবস্থানরত কয়েকজন বাঙালি ছাত্র তাকে সহায়তা করেছিলো। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর নিজের কম্পিউটার কোম্পানী স্থাপন করেছিলেন তিনি তোহাশিতে।

Sheikh Ahmed Jalal, Japanese Contribution in the Independence ofBangladesh, Dhaka, 2002.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!