You dont have javascript enabled! Please enable it!

ছেড়া গেঞ্জী ও ভাঙা সুটকেস্

১, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত জিয়ার ‘ছোঁড়া গেঞ্জী ও ভাঙা সুটকেস্’ নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক হয়। বিরােধী জাতীয় সংসদ সদস্যগণ বললেন, ভালাে কথা কিন্তু সাফারী সুটগুলাে কোথায়? জাতীয় সংসদে এক সংসদ সদস্য বললেন, জিয়াউর রহমানের সাফারী সুটের সংখ্যা ছিলাে প্রায় ৪ শতাধিক। এগুলাে প্যারিস থেকে আসতাে। তার বাড়ি এয়ার কন্ডিশনড়। যা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিলনা। লন্ডনে হিথরাে এয়ারপাের্টে জিয়াউর রহমানের ৪০ সেট সাফারী সুট আটক নিয়ে ‘ডিপ্লোম্যাটিক স্ক্যান্ডাল হয়েছিলাে যা বিদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জিয়াউর রহমান ভালাে পােশাক পরতে ভালােবাসতেন। ফিটফাট। সুবেশী জিয়াউর রহমানের ছোঁড়া গেঞ্জী ও ভাঙা সুটকেট’-এর কাহিনী বানিয়ে সুটেট বুটেট সুগন্ধী মাখা জিয়াকে রাতারাতি ‘কাদা মাটির মানুষ’ করে ছাড়লেন। তার সততা কিম্বদন্তিকেও হার মানালাে। যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানের পরিচালক সমকালীন গােপালভাঁড় ফজলে লােহানী বঙ্গভবনে বাবুর্চিকেও টেলিভিশনের পর্দায় এনে হাজির করলেন। তাকে দিয়ে বললেন, ‘সাহেব দু’পদে খাবার খেতেন, কখনাে ৩ পদ পছন্দ করতেন না।

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) প্রশ্নের জবাবে টেলিভেশনেই বললেন, জিয়াউর রহমান ৪ পদের খাবার খেতেন। তাছাড়া চকলেট ও আইসক্রীম ছিল তার প্রিয় খাবার।” এরূপ কেচ্ছা কাহিনী টিভি-বেতার পত্র পত্রিকায় ঢালাওভাবে প্রচার করা হলাে। কিন্তু সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার মেজবােন সেলিনা ইসলাম বিউটি জানিয়েছেন “জিয়া আমার রান্না ঘরে এসে বসতাে। বলত বড় আপা এটা খাব, ওটা খাব। সেমাই রাধছেন- দেন খেতে ভালাে লাগে। মাংস রাধছেন, দেন তাে এক টুকরাে মাংস।২ কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আসলেই কি জিয়াউর রহমান সৎ ছিলেন যদিও বাজারে তার সততা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। বিদেশী ভাষ্যকার বলেছেন তিনি যতটা না সৎ ছিলেন তার চেয়ে ‘সততা’-র ভড়ং ছিলাে বেশী। তিনি ও তার মন্ত্রীবর্গ এবং রাজনৈতিক দলের চাইরা কেউই দুর্নীতিমুক্ত ছিলেন না। দুর্নীতি রাষ্ট্রপতি জিয়া ও পারিষদবর্গের দুর্নীতি খতিয়ে দেখা যাক।

২. পরলােগত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে মন্ত্রীবর্গ ক্ষমতাসীন ২৮, জনের যে হিসেব পাওয়া যাচ্ছে-তাতে একজন ছাড়া আর বাকি সবাই কোটিপতি। এই ২৮ জন বর্তমানে ১ হাজার ১৯ কোটি ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ২২১ টাকার মালিক।। ছেড়া গেঞ্জি ও ভাঙ্গা স্যুটকেস-এর আড়ালে জিয়াসহ ক্ষমতাসীন দলের লােকেরা জাতীয় সম্পদের এক-অষ্টাংশ কুক্ষিগত করেছেন রাষ্ট্রপতি জিয়ার ৬ বছর রাজত্বে বিদেশ থেকে যে ১০ হাজার ৮ শত ১৪ কোটি টাকা ঋণ ও অনুদান আনাহরয়েছে ও যে জাতীয় সম্পদ অর্জিত হয়েছে এসব টাকা ও সম্পদ লুট করেছে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার মন্ত্রীবর্গ। রাষ্ট্রপতি জিয়া গত ৩০শে মে চট্টগ্রাম নিহত হবার পর যে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁর ছেড়া গেঞ্জী আর ভাঙা স্যুটকেসের একটি কল্পিত কাহিনী টেলিভিশনে হাজার হাজার টাকার ফিলা খরচ করে দেখানাে হয়।

কিন্তু আস্তে আস্তে থলের বিড়াল নয়, থলি থেকে এক সর্বগ্রাসী বাঘই বেড়িয়ে পড়েছে আর সেই বাঘ প্রমাণ করলাে রাষ্ট্রপতি জিয়া এবং তার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দলীয় নেতারা কিভাবে কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। তাদের সেই সম্পদের পাহাড় সম্পর্কে একটি হিসেব যা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সূত্রে প্রাপ্ত এবং পূর্বে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়েছে, তবে চিত্ররূপ।৩ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৪. ক্যান্টমেন্ট এলাকায় যে বাড়িতে তিনি থাকতেন সেই বাড়ি সহ মােট ৩ কোটি 0 টাকা। চট্টগ্রাম শহরের ওপর ১০ কাঠা জমির দাম ১০ লাখ টাকা। সাভারে ১০ কাঠা জমির দাম ১ লাখ টাকা। বঙ্গভবনের সােনালী ব্যাংক শাখার ১০ লাখ টাকা। বেগম জিয়া পরে তা ব্যাঙ্ক অব কমার্স এন্ড ক্রেডিট এ জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে পার্লামেনন্টে বির্তক সৃষ্টি হলে সরকার তাড়াহুড়া করে এটি জিয়া পরিবারকে প্রদত্ত সরকারী অনুদান(?) হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলেন। তথাকথিত বীমার ২৫ লাখ টাকা এবং জিয়ার পুত্র তারেক ও আরাফাতকে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে তিন ও পাঁচ বছরে ১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। মােট পরিমাণ ৩ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি ও নগদ অর্থ। অথচ ক্ষমতার আগে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সম্পত্তি ছিলাে মাত্র সাভারের ১০ কাঠা জমি। জিয়ার নিহত হওয়ার আগে ও পরে তার মোেট টাকা ও সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ছিলাে। এরপর জেনারেল এরশাদ বেগম খালেদা জিয়াকে ২ কোটি টাকার একটি বাড়ি মাত্র ১ টাকায় উপহার দিয়েছেন। গত ৬ বছরে বিদেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও অনুদান আনা হয়েছে। এই টাকা শােধ করতে হবে গরীব চাষী-মজুরদের। কিন্তু এসব টাকা লুট করেছে জিয়া ও তার মন্ত্রীরা।

প্রধান মন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান

৫. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ টাকা। চাটার্ড ব্যাংক, ঢাকা ৫৭ লাখ ৫০০ টাক। শ্রীভলেজ ব্যাংক, ঢাকা ২৩ হাজার ৩৫০ টাকা। গ্রীলেজ ব্যাংক, চট্টগ্রাম ৩ কোটি ৬৫লাখ ১৯ হাজার টাকা (বেনামে)। সােনালী ব্যাংক ঢাকা, ২৩ হাজার ৪০০টাকা। গুলশানে একটি বাড়ি, মূল্য ৬০ লাখ টাকা। ২টি গাড়ী (বেনামে) মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্বর্ণ (ঢাকা সােনালী ব্যাংকে রক্ষিত) ১৪০ ভরি, মূল্য ৫লাখ ৬০ হাজার টাকা। সর্বমােট ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

উপ-প্রধান মন্ত্রী জামালউদ্দীন আহমেদ

৬. গ্রীলেজ ব্যাংক, ঢাকা ১১কোটি ৩৬ লাখ ৩ হাজার টাকা (বেনামে)। কমার্স ব্যাংক,ঢাকা ৮৯ লাখ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১০ হাজার ২২৫ টাকা। সােনালী ব্যাংক, চট্টগ্রাম ৫১ হাজার ৮০০ টাকা। জনতা ব্যাংক, চট্টগ্রাম ২লাখ ৭৩ হাজার ৭০৩ টাকা। হাবিব ব্যাংক,ঢাকা ২৭ কোটি ৫৫লাখ ৭০ হাজার টাকা। ধানমণ্ডিতে ২টি বাড়ী, মূল্য ২১ লাখ টাকা। বনানীতে ১টি বাড়ী, (বেনামে), মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। ২টি গাড়ী, ৩টি বাস, মূল্য ২৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে নাসিরাবাদে বেবী টেক্সীর ১টি শিল্প কারখানা, মূল্য ৬৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ফৌজদারহাটে ১টি কার্পেট কারখানা, মূল্য ১৬ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের জামালখানের একটি বাড়ী, মূল্য ১৬ লাখ টাকা। ঢাকায় ২টি বিদেশী শিল্পের অংশীদার, মূল্য ৮ কোটি টাকা। মতিঝিলে ১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিংয়ের মালিক, মূল্য ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। স্বর্ণ (অগ্রণী ব্যাংক চট্টগ্রাম, স্ত্রীর নামে) ১৬৫ ভরি, মূল্য ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মােট ১৯৯ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৮ টাকা।

উপ-প্রধানমন্ত্রী এস,এ, বারী এ,টি

৭. সােনালী ব্যাংক ঢাকা ২৭ হাজার ৩০০ টাকা। জনতা ব্যাংক, ৪ হাজার টাকা। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১ লাখ ২২ হাজার ৫০০ (বেনামে)। গুলশানে ১টি প্লট, মূল্য ১৫ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অংশীদার মূল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ঢাকায় ১টি মুরগীর খামার ও ১টি মৎস্য প্রক্রিয়া কারখানার যৌথ অংশীদার, মূল্য ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মােট ২ কোটি ৫৪লাখ। মত ৩হাজার ৮০০ টাকা।

খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মােমেন

৮. ক্রেডিট এণ্ড কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ৪৩ লাখ ৭ হাজার টাকা বেনামে)। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১২ হাজার ৭৫০ টাকা। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১লাখ ৭১ হাজার ৩০০ টাকা। ১১টি গুদাম ঘরের মালিক, মূল্য ১ কোটি ২২ লাখ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ী, মূল্য ২৬ লাখ টাকা। ১টি লবণ ব্যবসার মালিক, মূল্য ৩লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মােট ১ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা।

সংস্থাপনমন্ত্রী জেনারেল মজিদুল হক

৯. গ্রীণ্ডলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা (বেনামে)। ক্রেডিট এণ্ড কমার্স , ঢাকা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ২১ হাজার ১শত টাকা। ধানমণ্ডিতে ১টি বাড়ী, মূল্য ১৭ লাখ টাকা।বনানীতে ১টি বাড়ী, মূল্য ২০ লাখ টাকা। গুলশানে ২টি বাড়ী, (১টি বেনামে), মূল্য ৬৬ লাখ টাকা।স্বর্ণ ২২০ ভরি (মেয়ে ও জামাইয়ের নামে, সােনালী ব্যাংক, ঢাকা) মূল্য ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি ঔষধের দোকানের মালিক, মূল্য ৩ লাখ টাকা। মােট ১ কোটি ৭২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা।

স্থানীয় সকোর মন্ত্রী ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম

১০. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৫ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। (শ্যালকের নামে)। জনতা ব্যাংক, ঢাকা ২ লাখ ২৭ হাজার ২৮০ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ৪লাখ ১৬ হাজার ৩০২ টাকা। মালিবাগে ১টি বাড়ী, মূল্য ২৮ লাখ টাকা। মতিঝিলে একটি যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা (স্ত্রীর নামে।, মূল্য ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ষ্টেডিয়ামে একটি ঘড়ির দোকানের মালিক, মূল্য ৩ লাখ টাকা। মােট ৬ কোটি ৮১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮২ টাকা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মােস্তাফিজুর রহমান

১১. গ্রীণ্ডলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৪১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৯ কোটি ১লাখ ১১ হাজার ৮৮০ টাকা (স্ত্রীর নামে) । সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ৭ হাজার ৯০ টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ৫৮ হাজার ৩০৭ টাকা। গুলশানে ১টি রাড়ী, মূল্য ৪০ লাখ টাকা। টংগীতে ১টি শিল্প কারখানার যৌথ মালিকানা (ভাইয়ের নামে), মূল্য ২৪ কোটি টাকা। শেরে বাংলা নগরে ২টি বাড়ী, মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। মােহাম্মদপুরে ১টি বাড়ী, ৩টি প্লট, মূল্য ১২ লাখ টাকা। মালিবাগে ১টি বাড়ী, মূল্য ২০ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মূল্য ১১ লাখ টাকা। ৩৮০ ভরি স্বর্ণ (স্ত্রীর নামে) , রূপালী ব্যাংক, ঢাকা, মূল্য ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিউমার্কেটে একটি কাপড়ের দোকান, মূল্য ৭লাখ টাকা। ঢাকায় একটি আধুনিক ছাপাখানার মালিক (শ্যালকের নামে), মূল্য ৩০ লাখ টাকা। মােট ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭৭ টাকা।

অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান

১২. কমা এণ্ড ক্রেডিট ব্যাংক, ঢাকা ২ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা (স্ত্রীর TA) নামে)। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৪ কোটি ৭০ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ৫১ হাজার ৭৩০ টাকা, গ্রীগুলেজ ব্যাংক, ঢাকা ১ লাখ ২১ হাজার ৫১৯ টাকা, রুপালী ব্যাংক, ঢাকা ৬ হাজার ৯৪০ টাকা। ঢাকায় ১টি আধুনিক হােটেলের মালিক, (ভাইয়ের নামে) মূল্য ৫ কোটি টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২টি। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক, মূল্য যথাক্রমে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ৭৫ লাখ টাকা। (স্ত্রীর নামে), গুলশানে একটি বাড়ী, (স্ত্রীর নামে), মূল্য ২৫ লাখ টাকা। ঢাকায় ২টি শিল্প কারখানার অংশীদার, মূল্য তিন কোটি টাকা (ভায়রার নামে), ১টি গাড়ী, ১টি মাইক্রোবাসের মালিক মূল্য ৪ লাখ টাকা। সিলেটে ১১টি মৎস্য ব্যবসা ও ১টি মাছ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের অংশীদার, মূল্য যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। (শ্যালকের নামে) স্বর্ণ ৫৫ ভরি (স্ত্রীর নামে) অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা মূল্য ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। মােট ৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯৯ টাকা

তথ্যমন্ত্রী শামসুল হুদা

১৩. হাবিব ব্যাংক, ৫৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৫০ টাকা, ক্রেডিট এণ্ড কমার্স ব্যাংক, ১লাখ ৩৩ হাজার টাকা ( মেয়ের নামে) গ্রীগুলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬ শত টাকা (স্ত্রীর নামে), অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা, ১১ হাজার ৪ শত টাকা। নিউ ইস্কাটনে ১টি বাড়ী, মূল্য ১২ লাখ টাকা। বনানীতে একটি বাড়ী, মূল্য ২৮ লাখ টাকা। (স্ত্রীর নামে), বায়তুল মােকাররমে ও এজিবির পেছনে ২টি ইলেকট্রনিক্স কেসেট এবং টিভি ও রেডিও দোকানের অংশীদার (স্ত্রীর নামে), মূল্য ২৫ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি ফার্নিচারের দোকান, মূল্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মােট ১৩ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৪০ টাকা।

বন্দর ও জাহাজ মন্ত্রী নুরুল হক

১৪. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৩১ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে) চার্টার্ড ( ব্যাংক, ঢাকা ৩ কোটি ৭২ হাজার টাকা (শ্যালকের নামে), অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৫১ হাজার ৩৯০ টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা, গুলশানে ১টি বাড়ী, মূল্য ৩১লাখ টাকা। বনানীতে ১টি বাড়ী, মূল্য ২৪ লাখ টাকা। ৪টি বার্জের মালিক (বেনামে) মূল্য ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ৫টি লঞ্চের মালিক, মূল্য ৩০ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মূল্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ঢাকার পুরানা পল্টনে ১টি বিল্ডিং-এর মালিক মূল্য ৬০ লাখ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকায় ১০৩ ভরি স্বর্ণ, মূল্য ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা (স্ত্রীর। এ নামে)। মােট ৪০ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯০ টাকা।

বিমানমন্ত্রী ওবায়দুর রহমান

১৫. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা (বেনামে)। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ২৩ হাজার ৫০ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ী মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। বনানীতে ১টি বাড়ী মূল্য ২৫ লাখ টাকা। মতিঝিলে একটি এক্সপাের্ট-ইম্পাের্ট ফার্ম ও একটি এয়ার লাইসেন্সের মালিক মূল্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা (বেনামে)। ২টি গাড়ীর মালিক , মূল্য ৪ লাখ টাকা। স্বর্ণ ৭২৫ ভরি রূপালী ব্যাংক, ঢাকা) মূল্য ২৯ লাখ টাকা। (স্ত্রীর নামে)। মােট ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

রেলমন্ত্রী আবদুল আলিম

১৬. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা (পুত্রের নামে)। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। গ্রীলেজ ব্যাংক, ‘ঢাকা ৩ কোটি ২ লাখ ৪৭ হাজার ২০০ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ৪ লক্ষ ৭ হাজার ৩৩০ টাকা। বনানীতে ২টি বাড়ী মূল্য ৩১ লাখ টাকা। গুলশানে ১টি কনষ্ট্রাকশন ফার্মের মালির (বিল্ডিংসহ) মূল্য ১.কোটি ৫০ লাখ টাকা (পুত্রের নামে)। চট্টগ্রামে ২টি কনষ্ট্রাকশন ফার্মের মালিক মূল্য ৮০ লাখ টাকা। ঢাকার মতিঝিলে ১টি বিদেশী বাণিজ্যিক ফার্মের সাথে অংশীদার মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা (শ্যালকের নামে)। একটি শিল্প কারখানার মালিক মূল্য ২০ কোটি টাকা (ভাইয়ের নামে)। ঢাকায় ১টি বিদেশী ইনডেনটিং ফার্মের সাথে অংশীদার মূল্য ১৫ কোটি টাকা। (শ্যালকের নামে)। ২টি গাড়ী ও ৪টি বাসের এবং ১০টি ট্রাকের মালিক মূল্য ৭৫ লাখ টাকা। মােট ১৩৯ কোটি ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ২৩০ টাকা।

পাটমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ খান

১৭. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ২৮ কোটি ৭৩ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। (স্ত্রীর নামে)। গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক, ঢাকা ২০ কোটি ১১ লাখ টাকা ( ভায়রার নামে)। ক্রেডিট এণ্ড কামার্স ব্যাংক, ঢাকা ৬ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। সােনালী ব্যাংক, ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৭১৫ টাকা। চট্টগ্রামে ২টি বাড়ী মূল্য ৪০ লাখ টাকা। ধানণ্ডিতে ১টি বাড়ী, মূল্য ১৮ লাখ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ী, মূল্য ২৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক (বেনামে), ৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ১টি শিল্প কারখানার মালিক বেনামে মূল্য ১০ কোটি টাকা। ঢাকায় ২টি বিদেশেী ফার্মের সাথে অংশীদার-এর মালিক মূল্য ৭ কোটি টাকা। মতিঝিলে ১টি জুট বিজনেসের মালিক, মূল্য ৮ কোটি টাকা (স্ত্রীর নামে)। ৪টি গাড়ীর মালিক মূল্য ৮ লাখ টাকা। ৫৪০ ভরি স্বর্ণ (হাবিব ব্যাংকে, স্ত্রীর নামে), মূল্য ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গ্রীণ সুপার মার্কেটে ২টি দোকানের মালিক, মূল্য ১০ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট এবং ২টি ইনডেনটিং ফার্মের মালিক, মূল্য ২৫ কোটি টাকা (মামার নামে)। মােট ১০৯ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৭১৫ টাকা। যুব ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ মতিন ১৮. গ্রীগুলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৭ লাখ ২হাজার ৩০০ টাকা। চাটার্ড ব্যাংক, পকা ২ কোটি = ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। হাবিব ব্যাংক ঢাকা ৫৫ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা।

অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৭২ হাজার ১০০ টাকা। গুলশানে একটি বাড়ী, মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক (শ্যালকের নামে) মূল্য ৩ কোটি টাকা। ঢাকায় ২টি ঔষধ কোম্পানীর অংশীদার, মূল্য ১০ কোটি টাকা (ভাইয়ের নামে)। ১টি বিদেশী ঔষধ কোম্পানীর অংশীদার মূল্য ১৬ কোটি টাকা (স্ত্রীর নামে)। ২টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। সাভারে একটি খামারের মালিক, মূল্য ২০ লাখ টাকা। ১৮২ ভরি স্বর্ণ (সােনালী ব্যাংকে স্ত্রীর নামে) মূল্য ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। মােট ৩২ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা।

ত্রাণমন্ত্রী এমরান আলী

১৯. চার্টার্ড ব্যাংক, ঢাকা ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। সােনালী

ব্যাংক, ঢাকা ৬৫ হাজার ৮০০ টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ৫১ হাজার ৫০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। বনানীতে ১টি বাড়ী, মূল্য ২৫ লাখ টাকা। বায়তুল মােকাররমে ১টি কাপড়ের দোকান, মূল্য ১০ লাখ টাকা। ঢাকায় একটি বাণিজ্যি প্রতিষ্ঠানের মালিক (স্ত্রীর নামে), মূল্য ৫০ লাখ টাকা। একটি গাড়ীর মালিক, মূল্য ২ লাখ টাকা। ১টি শস্য সংরক্ষণাগারের মালিক (নারায়ণগঞ্জে), মূল্য ৩০ লাখ টাকা। মােট ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৭৩০ টাকা।

প্রাক্তন বস্ত্রমন্ত্রী মনসুর আলী

২০, হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা (ছেলের নামে)। চার্টার্ড ব্যাংক, ঢাকা ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। অগ্রণী ব্যাংক, = ঢাকা ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ীর মালিক, মূল্য ১৬ লাখ টাকা। ১টি গাড়ীর মালিক মূল্য ২ [ লাখ টাকা। ঢাকায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অংশীদার, মূল্য ১০ লাখ টাকা, ঢাকায় যা ১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, মূল্য ১ কোটি টাকা (স্ত্রীর নামে))। স্বর্ণ ৯৫ ভরি (হাবিব ব্যাংক, ঢাকা), (স্ত্রীর নামে), মূল্য ৩লাখ ৮০ হাজার টাকা মােট ৯ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

টেলিফোনমন্ত্রী মাইদুল ইসলাম

২১. গ্রীওলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা (ভাইয়ের নামে)। চার্টার্ড ব্যাংক, ঢাকা: ২৪ কোটি ৭৫ লাখ ৯ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। হাবিব

ব্যাংক, ঢাকা ৭ কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা (ভাইয়ের নামে)। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৩লাখ ২০ হাজার টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ৯লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৩টি শিল্প কারখানার মালিক (ভাইয়ের নামে), মূল্য ৬০ কোটি টাকা; মতিঝিলে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিানের অংশীদার (স্ত্রীর নামে), মূল্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ীর মালিক, মূল্য ২৫ লাখ টাকা। মীরপুরে জমির মালিক, মূল্য ১৫ লাখ টাকা। স্বর্ণ ৮১০ ভরি ( হাবিব ব্যাংক, ঢাকা স্ত্রীর নামে) মূল্য ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৪টি গাড়ী, ২৮টি ট্রাক, ও অন্যান্য গাড়ীর মূল্য ৮০ লাখ টাকা। মােট ১৫৭ কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা তার

শ্রমমন্ত্রী রিয়াজ উদ্দীন (ভােলা মিয়া)

২২. গ্রীগুলেজ ব্যাংক,ঢাকা ৫২ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। চার্টার্ড ব্যাংক, ঢাকা ১কোটি ৯৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ১লাখ ১ হাজার টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ী, মূল্য ২২ লাখ টাকা। ঢাকার নবাবপুরে একটি যন্ত্রপাতির। দোকান মূল্য ৬০ লাখ টাকা। সাভারে ১টি খামারের মালিক, মূল্য ২১ লাখ টাকা। মতিঝিলে একটি বিদেশী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠারে অংশীদার মূল্য ১ কোটি টাকা (স্ত্রীর। নামে)। ১টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ২ লাখ টাকা। স্বর্ণ ৩২ ভরি সােনালী ব্যাংক, ঢাকা (স্ত্রীর নামে) মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। মােট ৪ কোটি ৬৯ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী মান্নান শিকদারনায়

২৩. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৫ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা(স্ত্রীর নামে)। গ্রীণ্ডলেজ ব্যাংক, ‘ঢাকা ২ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা (ভাইয়ের নামে)। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৭ হাজার ২০০ টাকা। বনানীতে ১টি বাড়ী মূল্য ৪০ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে ১টি শিল্প কারখানার মালিক, মূল্য ৩ কোটি টাকা, ঢাকায় ১টি শিল্পের অংশীদার মূল্য ১২ কোটি টাকা। ঢাকায় ১টি সাইকেলের দোকান মূল্য ৩ লাখ টাকা, একটি গাড়ীর মালিক, মূল্য ২ লাখ টাকা। মােট ২৩ কোটি ৭১ লাখ ৬ হাজার ৩০০ টাকা।

যুবপ্রতিমন্ত্রী আবুল কাশেম

২৪. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা (ভাইয়ের নামে)। চার্টার্ড ব্যাংক,

ঢাকা ১২ কোটি ৬৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ টাকা ভাইয়ের নামে) কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা। ২টি বার্জের মালিক, মূল্য ১কোটি টাকা। ৬টি লঞ্চের মালিক, মূল্য ২০ লাখ ii. টাকা। মতিঝিলে ১টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের ও ১টি চায়নিজ হােটেলের মালিক, মূল্য [P ৮০ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি পেট্রোল পাম্পের মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, ৫ কোটি টাকা (বেনামে)। তেজগাঁও ১টি শিল্প কারখানার অংশীদার, মূল্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা (বেনামে)। ২টি বাড়ীর মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। ১টি সিনেমা হলের মালিক, মূল্য ৭০ লাখ টাকা। মােট ৫০ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫০ টাকা।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী তানভীর আহমদ সিদ্দিকী

২৫. গ্রীগুলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৩৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা (ভাইয়ের নামে)। হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ১০ কোটি ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। কমার্স এও ক্রেডিট ব্যাংক, ঢাকা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টাকা। (ভাইয়ের নামে)। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকা। * সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ১১ হাজার ৫৮০ টাকা। গুলশানে ১টি বাড়ী রমূল্য ৬০ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে ১টি শিপিং ব্যবসার মালিক মূল্য ১৫ কোটি (স্ত্রীর নামে)। ঢাকায় ২টি প্রতিষ্ঠান ও ১টি এক্সপাের্ট- ইম্পাের্ট বিজিনেসের মালিক, মূল্য ৫ কোটি টাকা। ২টি সিনেমা হলের মালিক মূল্য ১ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ৪টি ও ঢাকায় ১টি গুদাম ঘরের মালিক (স্ত্রীর নামে) মূল্য ১ কোটি টাকা। ঢাকায় ১টি স্বর্ণের দোকান, মূল্য ২ কোটি টাকা(ভাইয়ের নামে)। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের (তেজগাঁও) অংশীদার মূল্য ৭ কোটি টাকা (ভাইয়ের নামে)২টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি ইনডেনটিং ফার্মের মালিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। মােট ৯৪ কোটি ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৮০ টাকা।

ভূমি প্রশাসন মন্ত্রী মােহাম্মদ ইসমাইল

২৬. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা (স্ত্রীর নামে)। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ৩টি জলাশয়ের মালিক, মূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা (স্ত্রীর নামে)। {{P (বেনামে) মিশন রােডে একটি বাড়ীর মালিক, মূল্য ১২ লাখ টাকা। মােট ২ কোটি ®® ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ২৫০ টাকা।

পানি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এল কে সিদ্দিকী।

২৭. গ্রীলেজ ব্যাংক, ঢাকা ২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চার্টার্ড ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। গুলশানে ১টি বাড়ী মূল্য ৩০ লাখ টাকা। ঢাকায় ১টি বিদেশী কন্সট্রাকশন কোম্পানীর অংশীদার, মূল্য ৮ কোটি টাকা। ২টি গাড়ীর মালিক, মূল্য ৪ লাখ টাকা। মােট ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

গণপূর্তমন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন

২৮. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা (স্ত্রীর নামে)। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা | ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ৪ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। মীরপুরে ২টি ও মােহাম্মদপুরে ১টি বাড়ীর মালিক, মূল্য ৭০ লাখ টাকা। নিউ ইস্কাটনে ১টি বাড়ীর মালিক, (বেনামে) মূল্য ১৬ লাখ টাকা। মােট ৫কোটি ৫০ লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টাকা।

বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী সিরাজুল হক

২৯. ক্রেডিট এণ্ড কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। ৯ অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ‘ঢাকা ৪ হাজার ২৫০ টাকা। মালিবাগে ১টি বাড়ীর মালিক, মূল্য ৮ লাখ টাকা। এলিফ্যান্ট রােডে ১টি দোকানের মালিক, মূল্য ৩ লাখ টাকা। মােট ১কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টাকা।

মৎস্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ আফতাবুজ্জামান

৩০ গ্রীণ্ডলেজ ব্যাংক, ঢাকা ৮২ লাখ ২৯ হাজার টাকা (স্ত্রীর নামে)। রূপালী ব্যাংক, ঢাকা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। সােনালী ব্যাংক, ঢাকা ৪৩ হাজার ৯০ টাকা। ২টি জলাশয়ের মালিক, মূল্য ৮ লাখ টাকা। মােট ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

কুষি প্রতিমন্ত্রী আমিরুল ইসলাম

৩১. হাবিব ব্যাংক, ঢাকা ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা (ভাইয়ে নামে)। কমার্স এণ্ড ক্রেডিট

ব্যাংক, ঢাকা ৮ কোটি ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ঢাকায় একটি ইনডেনটিং ফার্মের মালিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। মােট ১৮ কোটি ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

ছেড়া গেঞ্জী ও ভাঙা সুটকেস (খ)

কণiজঙ্গী কোরান দিয়ে দুর্নীতি ঠেকানাের প্রতারণা

৩২. জেনারেল জিয়া, প্রেসিডেন্ট জিয়া, চেয়ারম্যান জিয়া, বহুগুণে বিশেষত জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততার কথা বাজারে আজো প্রচলিত আছে। জিয়াউর রহমান ‘ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির উর্ধে এই ইমেজ সৃষ্টির জন্য মাঝে মধ্যেই নানা ফন্দি। ফিকির করতেন। ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধােকা দেয়ার জন্য শাসনতন্ত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযােজন করেছেন, পাশাপাশি মদের দোকান খােলার জন্য দেদার লাইসেন্স দিয়েছেন। তিনি ঘুষ, দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের হাতে কোরান [৪] দিয়ে শপথ পড়ালেন, প্রকাশ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতত জেহাদ ঘােষণাকারী ০৭জেনারেল জিয়া মন্ত্রীদের আচরণ বিধি জারী করে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন।

এবার পবিত্র কোরান দিয়ে দুর্নীতি ঠেকাবেন এই মতলব করলেন। আসলে এসবই ছিলাে জিয়ার ভড়ং। কেননা, কোরান হাতে দিয়ে যাদের তিনি শপথ করালেন তারা কে, তাদের অতীত কি এসব চতুর প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়ার অজানা নয়। সবাইকে দুর্নীতি করার অবাধ সুযােগ দিয়ে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে তিনি বুঝাতে চাইছেল তিনি সৎ আর সবাই অসৎ, দুর্নীতিবাজ। কিন্তু যাদের দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য কোরান শপথ করালেন সেসব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না কেন? এর সহজ উত্তর হলাে, তাহলে জিয়াউর রহমানের সততা সম্পর্কে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে যেতে পারে।

কাশিম বাজার কুঠি

এ সম্পর্কে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ভাষ্যকার লিখেছেন “প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিকভাবে যেমন সকল ক্ষমতা কেন্দ্রবিন্দু, তেমনি দেশের সকল দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু তিনি। মন্ত্রীদের হাতে কোরান দিয়ে শপথ করিয়ে তিনি নিজেকে সাধু প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু সে চেষ্টা সফল হবে না। কারণ দেশবাসী জানে যে, প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক দল করেছেন, দল ভেঙ্গেছেন, ফ্রন্ট গড়েছেন, ফ্রন্ট ভেঙ্গেছেন একটার পর একটা নির্বাচন করেছেন আর এসব করতে গিয়ে অনেষ্টি বলতে কিছু অবশিষ্ট রাখেননি। আজ তাই বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠেছে তার নির্বাচনী ব্যয়ের হিসেব সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশের। ১. আর মন্ত্রীমহােদয়রা ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েই প্রেসিডেন্টকে দলীয় রাজনীতি না করার জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ যুগিয়ে এসেছেন এবং এখনও যুগিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশে লােক পাঠাবার অছিলায় লাখ-লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার কাহিনী শােনা যাচ্ছে, তারও সিংহ ভাগ চাঁদা হিসেবে দিতে হচ্ছে সরকারী দলকে। এ ছাড়া কিছু কিছু বিরােধী রাজনৈতিক দলকে সরকারী রাজনীতির প্রভাব বলয়ে রাখার জন্যও সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। কাশিম বাজার কুঠিতে সরকার এবং কোন-কোন বিরােধী দলের মধ্যে টাকা-পয়সা লেন-দেনের ঘটনাতাে। অনেক আগেই ফাঁস হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় কম লেখালেখি হয়নি।

আজ মন্ত্রীদের কোরান শপথ নিতে হচ্ছে, কিন্তু আগামীতে যখন তাদের লাখ-লাখ টাকা বি,এন,পি’কে চাঁদা দিতে হবে তখন সে অর্থ আসবে কোথা থেকে? মন্ত্রীমহােদয়রা যদি তখন শপথের কথা ভুলে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীনির আশ্রয় নিতে বাধ্য হন, তাহলে কি পবিত্র কোরানের অবমাননা করা হবে না? তাছাড়া কোরান শপথ করেই যদি আজকের যুগে অপরাধীকে, দুর্নীতিবাজ থেকে, অপরাধের পথ থেকে, দুর্নীতির পথ থেকে দুরে সরিয়ে রাখা যেতাে, তাহলে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের কথা উঠতাে না, জনপ্রতিনিধিদের কাছে মন্ত্রীসভার একাউন্টেবল থাকার প্রশ্ন উঠতাে না—কোরান শপথ করিয়েই সব কাজ চালিয়ে নেয়া যেতাে। প্রেসিডেন্ট জিয়া যদি সত্যিই সাধুসজ্জন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে বিভিন্ন নির্বাচনে, একাধিক রাজনৈতিক দল গড়তে এবং চালাতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে স্বপক্ষে রাখতে তাঁর কতাে টাকা ব্যয় হয়েছে এবং সে টাকা কোথা থেকে কিভাবে এসেছে তার একটা হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করুন।” জিয়াউর রহমান যদি এতই সৎ তাহলে দুটি নির্বাচনী প্রচারণায় কোটি কোটি টাকা কোথায় পেলেন? জাতীয় সংসদের তর্কবিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছে বিএনপির তহবিলে জিয়া ৪ কোটি টাকা রেখে গেছেন। বিএনপির অফিসটি কিনেছেন ৬৭ লক্ষ টাকায়। এই টাকার উৎস কোথায়।

কেন্দ্রীয় অফিস নয় ও দুর্নীতি আখড়া

৩৩. প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাফারী যুগের ঘটনাবহুল কর্মকান্ড। সকাল-বিকাল মানুষ দেখছেন। দেখছেন ভাগ্যবান সব ব্যক্তিদের যাদের কথায় ৫৬ হাজার বর্গ মাইল ওঠে। বসে। কাঁপে। হাসে। পল্টনের একটা বাড়ি। এই বাড়িটি বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আলাে ঝলমল। প্রতিটি রেলিং-এ ঝুলছে বড় আকারের সাইন বাের্ড। একতলায় ক্যান্টিন। নাম সেবন ক্যান্টিন। এগারােটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ফ্লাট এখন দামী টেবিল আলমারী-সােফা ইত্যাদি সুন্দর আসবাব পত্রে ঠাসা।। নেতাদের বিশেষভাবে জেনারেল জিয়াউর রহমান-এর আগমনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়। গেটে পাহারা থাকে সব সময়। সাধারণ মানুষের পক্ষে যখন-তখন প্রবেশ অসম্ভব। প্যালেস সমতুল্য বাড়িটি। এক অবাঙালী ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ৬৭ লাখ টাকা টাকায় কেনা হয়েছে। স্থাপিত হয়েছে বি,এন,পি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বি,এন,পি কর্তারা প্রতিবাদ করেননি। জমি ও বাড়ির দাম ও মানের দিক থেকে এর দাম সাতষট্টি লাখ টাকা কমই বলা চলে। এতাে লক্ষ টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় অফিস কেনা নজিরবিহীন ঘটনা। অনেক রাজনৈতিক দলের তিন/চার যুগ পার হয়ে গেলেও নিজস্ব অফিস হয়নি। সেখানে বিএনপি-র তিন বছর না হতেই বাড়ি ক্রয়ের অর্থ অবশ্যই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত। এ টাকা এসেছে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে। প্রথাসিদ্ধ নিয়মেই জনগণের ঘাড় ভেঙে কয়েকগুণ সে অর্থ তারা আদায় করে। নেবেন, বিএনপি কর্তারাই সে সুযােগ করে দিয়েছেন।

এছাড়া ধানমন্ডিস্থ দলীয় সচিবায় (৮হাজার টাকা ভাড়া) ভবনসহ সবগুলাে দলীয় ও অঙ্গ সংগঠন কার্যালয়গুলাে পরিচালনার এত বিশাল অংকের অর্থ চেয়ারম্যান জিয়া কিভাবে পান? ব্রিফকেস ব্যবসায়ী, মুনাফাখখার, মজুতদার ও চোরাকারবারী। রাজনৈতিকভাবে। টাকার খেলা আর বড়-বড় চক্রান্তের জন্য প্রাইভেট বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা। কিভাবে হামলা চালাতে হবে, কিভাবে অন্যের জনসভা মিছিল পণ্ড করা যাবে, অন্য দল ভেঙে নিজেদের দলে লােক ভেড়াতে হবে এসব ষড়যন্ত্র এ অফিসে হয়। এরা প্রতিপক্ষ রাজনেতিক দলের মিছিলের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবােধ করে না।

৩৪. এছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্টের পুরােনাে গণভবন ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপি-এর

সভা-সম্মেলন-সংবর্ধনার কাজে। দলীয় অনুষ্ঠানাদি এখানে লেগেই থাকে। জনগণের দেয়া ট্যাক্সের অর্থে নির্মিত সরকারী একটা ভবন কিভাবে বিএনপি বিনা দ্বিধায় ব্যবহার করছে? তদুপরি নগরীর মহল্লায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায়, জেলা, মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডও গ্রাম-পাড়া পর্যায়ে বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য শাখা। কার্যালয় গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ কার্যালয়গুলােই মাস্তানের আখড়া। অনেক কার্যালয় রয়েছে সরকারী খাস জমিতে, কিংবা অন্যের জায়গায় অবৈধভাবে। অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ বিদ্যুৎ-পানি সংযােগ রয়েছে। এসব কার্যালয়ে পানাহার বিলাস এমন কি মদ্যপান, লাম্পট্যও চলে। বেশিরভাগ শাখা কার্যালয় স্থানীয় নাগরিকদের জন্য ত্রাস সৃষ্টি করছে, চাঁদাবাহিনীর আক্রমণ সামলাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। এদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক এ,কিউ,এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছেন, কাউকে বিএনপির নামে। চাঁদা দেবেন না। ৫

দুনীতি উচ্ছেদের শ্লোগান ঃ জাতীয় ফ্যাশন এ র মত

৩৫. জিয়াউর রহমান প্রায় সকল সমাবেশ, মিটিং, জনসভায় সততই বলে চলেছেন দুর্নীতি রােধ করতে হবে, প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। এই শ্লোগান আজ জাতীয় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মিন্টো রােড, হেয়ার রােড, মন্ত্রী পাড়া হতে শুরু করে নিভৃত পল্লী উলশী যদুনাথপুর, নাম, জিরাবাে, মেহের পঞ্চগ্রাম হয়ে আজ না। নি, ৬৮ হাজার গ্রামে দুর্নীতি ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়েছে। 

প্রেসিডেন্ট নিজেও দুর্নীতি বিষয়ে লােক দেখানাে চমকপ্রদ উদ্যোগ নেন। ঘটা করে মন্ত্রীদের সম্পত্তির হিসেব নেয়া হলাে। ফিরিস্তি প্রকাশ পেলাে। ২৪ লাখ টাকার নগদ জমার তথ্যও বের হলাে। কিন্তু সব চুপচাপ। মন্ত্রীরা আয়কর দেন কিনা তাও জানা গেলাে না। দুর্নীর অভিযােগে ৫০ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত হলাে। রিপাের্ট হলাে। শাস্তি হলােনা। হলাে প্রমােশন। দুর্নীতির দায়ে প্রায় একডজন আমলাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলাে। দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলাে। আমলারা প্রকাশ্যেই বলাবলি করতে লাগলেন সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে থলের বিড়াল প্রকাশ হয়ে পড়বে। জিয়াউর রহমান দেখলেন অবস্থা ভালাে নয়। ৩৭ দিন পর দুর্নীতির দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত অফিসারদ্বয়ের আবার চাকরি হলাে। }} আমলারা জিয়াকে বললেন, দুর্নীতি উচ্ছেদ করবেন। করুন। তারা ২০ পৃষ্টা ব্যাপী রিপাের্ট করলেন ৩জন জাঁদরেল মন্ত্রীর দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের উপর। তাদের শাস্তি তাে দূরের কথা, তাদের আরাে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলাে। ১৯জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপবহার, ঘুষ দুর্নীতির অর্ধশত প্রমাণ, বিদেশী ব্যাংকে টাকা জমানাের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নিকট রিপাের্ট গেলাে। জিয়া তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করলেন। দুর্নীতির কেন্দ্রে বসে জিয়া নিজের সততার ইমেজ ধরে রাখতে লােক দেখানাের জন্য দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে কমিটির রিপাের্ট তাে দূরের কথা একটিও আনুষ্ঠানিক বৈঠকও বসেনি।৬ বলাবাহুল্য দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত এবং দুর্নীতির আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা সাফারী সুট পরিহিত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়ার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোন ক্ষমতাই ছিলােনা।

হ্যাভ ইউ সিন এনি ক্যাট হুইস ডিজলাইক ফিস

৩৬. জিয়ার সততা সম্পর্কে ফার ইস্টার্ন-ইকোননিক রিভিউ-র মূল্যায়নে একথা বলা হয়েছে যে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিলাে রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে।” পত্রিকাটি আরাে লিখেছে যে, “জিয়া রাজনৈতিক দলের জনসভা অনুষ্ঠানের বাধা ‘ দিতেন না। কিন্তু প্রশাসনকে ব্যবহার করে কোন দল পার্লামেন্টে কতটা আসন পাবে সেটার ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করতেন। রাজনৈতিক দলকে ভয় দেখাতেন। তিনি দল ভাঙার কৌশল অবলম্বন করতেন। সরলীকরণ ছিল এই যে, রাজনীতির নামে পৃষ্ঠপােষকতা, এমনকি সরাসরি ঘুষ প্রদান করে সমর্থন বাগানাে এবং সমালােচকদের মুখ বন্ধ করা। রিভিউ সংবাদদাতা সালামত আলীর প্রতিবেদনে আরাে বলা হয় “জিয়া পার্টির লােকদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন অপরাধ ‘ওভার লুক’ করেন, কিন্তু পুলিশের উপর যেন চাপ না দেন। পার্টির কুখ্যাত আইন ভঙ্গকারীদের তিনি বহিস্কার করতে শুরু করেন।” সালামত আলীর মন্তব্য ছিলাে পার্টির বিলুপ্ত ব্যতিরেকে পার্টিকে (বিএনপিকে দুর্নীতিমুক্তকরণের কোন উপায় আর অবশিষ্ট ছিলােনা ৭

দুর্নীতির কালাে বিড়াল কাসী চাই

৩৭. জেনারেল জিয়াউর রহমানের দুর্নীতির আর একটি কৌশল ছিল পুজি প্রত্যাহার নীতি। পুজি প্রত্যাহারের নামে জিয়াউর রহমান কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা দামের ৩২২টি পরিত্যক্ত শিল্প কারখানা মাত্র ৫৭ কোটি টাকা ২৯ লক্ষ টাকা দামে বিএনপির সমর্থক প্রাইভেট পার্টির কাছে বিক্রি করেছে। নগদ দামে নয়া কিস্তিতে। রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ১ম কিস্তি দিয়ে মিল মালিক হয়েছে। মিলের জায়গা জমি বিক্রি করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মিল বন্ধ হয়ে পরে আছে। শ্রমিক ছাঁটাই হযেছে। বকেয়া কিস্তি দেয়ার নাম নেই। এসব বকেয়া কিস্তির মূল্য। ১৩ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু মিল মালিকরা কেটে পড়েছে। এরা জিয়াকে মােটা অংকের টাকা ঘুষ নয়’ ‘চাঁদা’ হিসেবে দিয়েছে। বিবিসির সাম্প্রতিক এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনাদায়ী ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা। এদিকে স্থানীয় একটি ইংরেজী দৈনিক প্রকাশিত হয়েছে ব্যাংগুলাে থেকে যে ঋণ দেয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়ংশ অর্থাৎ কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা একেবারে ‘আটকে গেছে। এ অর্থ ফেরত পাবার কোন আশাই নেই। দুর্নীতির আরেক অধ্যায়ঃ ঋণ গ্রহীতাদের হদিস নেই

৩৮. জিয়ার আমলে রাজনৈতিক স্বার্থে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের কারসাজিতে অনেক ভূয়া ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামেও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ, ওডি ইত্যাদি বরাদ্দ করা হযেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ বা অগ্রিম তুলে নিয়েছে, আদতে যার অস্তিত্ব নেই। এ প্রসঙ্গে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘ঋণ গ্রহীতাদের অনেকের হদীস নেই” শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ ঋণগ্রহীতাদের ঠিকানায় গিয়ে তাদের অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেনা। শুধুমাত্র বগুড়া জেলায় ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ছয় হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিবগঞ্জ থানার টেপাসাড়ী গ্রামে কিসমত উল্লাহর পুত্র বাশার আলী, মামুদ প্রামানিকের পুত্র মিছির প্রামানিক, মল্লিকপুর গ্রামের বছির প্রামানিকের পুত্র তবিবর রহমান, সামাদ আলীর পুত্র আবদুর রহমান ও কাজী প্রামানিকের পুত্র মমিন উদ্দিন নামে কোন লােকই নেই ঐ গ্রামে। কিন্তু এরা ঋণ গ্রহীতা ও এদের বিরুদ্ধে মামলা ঝুলছে। গ্রামের এই অবস্থার পাশাপাশি শহর ও রাজনীতিতে বিভিন্ন ট্রেডিং ফার্ম, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কলকারখানা স্থাপন বা পাট ক্রয়ের জন্য ঋণ গ্রহণের পর তার অধিকাংশই ব্যয়িত হয়েছে অনুৎপাদন শীল খাতে, ট্রেডিং ব্যবসায়ে, নতুন মডেলের গাড়ী ক্রয়ে কিংবা স্রেফ আমােদ মউজ ফুর্তিতে।

দুর্নীতি রূপ ঃ কালাে টাকা সাদা

৩৯. জিয়া সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির খবর পাওয়া যায় ১৯৮২ সালের আয়কর (আয় ঘােষণা) বিধির এম, এল, আর ৫/৮২) অধীনে প্রদত্ত রিপাের্টে। রিপাের্টে জানা। যায়, প্রায় ২৭৩ কোটি টাকার কর অনারােপিত আয় ঘােষিত হয়েছে। ১৯৮২ সালের ৫নং সামরিক আইন বিধির অধীনে অনারােপিত আয় ঘােষণার জন্য সর্বশেষ তারিখ ছিলাে ৩১মে আগষ্ট। দেশের অর্থনীতিবিদগণ মনে করছেন এতে কালােটাকার সামান্য অংশ্যই সাদা হয়েছে। দেশে পূঞ্জীভূত কালাে টাকার পরিমাণ ২৭৩ কোটি টাকার কয়েক গুণ হবে। ১৯৮০ সনের জাতীয় সংসদে জনৈক এম,পি-র তথ্যানুসারে দেশে ১২শত কোটি টাকার কালাে টাকা বিদ্যমান রয়েছে ” বলে দাবী করা হয়েছে। জিয়ার মৃত্যুর আগে এর পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সরকারী তথ্য বিবরণীতে প্রকাশ ২৭৩ কোটি টাকার কর অনারােপিত যে আয় ঘােষিত হয়েছে তার মধ্যে ২৭০ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৪০ টাকা দেশীয় মুদ্রা, ৯লাখ ৮৫ হাজার মার্কিন ডলার এবং ২লাখ ৯৪ হাজার ২৩৯ পাউন্ড টালিং। ঘােষণা প্রদানকারীর সংখ্যা ১২, ৫৩৪জন। পরিশােধকৃত করের পরিমাণ ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৭ টাকা। উল্লেখ্য ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক হত্যার পর ১৯৭৬ সালের ৬নং সামরিক বিধি বলে ঘােষিত কর অনারােপিত আয়ের পরিমাণ ছিলাে ৪৬কোটি ১২লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পরিশােধকৃত করের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৭২ লাখ ৫৫হাজার টাকা।

দুই থেকে শতাধিক কোটিপতি

৪০. জেনারেল জিয়ার আমলে বিএনপি সরকারের লুটপাট ও দুঃশাসনের আমলে জনগণের ভাগােন্নয়নের নামে হাজার হাজার টাকার লুটপাট, নিয়মনীতি বহিভূর্ত বেপরােয়া হরিলুট কিভাবে ৭৫ পরবর্তী ৬ বছরের মধ্যে দেশে কোটিপতির সংখ্যা। দুই থেকে শতাধিক করা হয়েছে এবং জিয়াউর রহমানের অনুগ্রহভাজন বিশেষ ব্যক্তিবর্গ শত শত টাকা গায়েব করে দিয়েছে তার আতঙ্কজনক চিত্র ফাঁস হচ্ছে। বিবিসি প্রকাশিত সংবাদভাষ্যে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকসমূহের $ প্রদত্ত ঋণের টাকা বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে অনাদায়ী পড়ে রয়েছে তার পরিমাণ ৪ হাজার এক শত কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারী খাতে শতকরা ৬০ ভাগ এবং সরকারী খাতে শত করা ৪০ ভাগ। ১০

মাত্র পাঁচ হাতের কবজায়

৪১. সামরিক তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে পত্রিকায় বলা হয়েছে, বহুক্ষেত্রে বৈধ। কাগজপত্র, সিকিউরিটি, এমন কি সমান্যতম নিয়ম কানুনের তােয়াক্কা না করে। জিয়া শাহীর নির্দেশে অনেক শিল্প ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ দ্বারা শিল্পকারখানা গড়ে তােলা হয়নি। ১৯৮১ সনে দৈনিক ইত্তেফাকে মাত্র পাঁচ হাতের কবজায়’ শীর্ষক প্রকাশিত এক রিপোের্ট বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক সুযােগ সুবিধা, ব্যাংক সুবিধাদি এবং সম্পদের প্রায় শতকরা ৪০ভাগই মাত্র ৫টি শিল্প না গােষ্ঠীর পাঁচ হাতের কবজায়।১১

দুনীতির ছিপি ভ্যাট কলির

৪২. জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপােষকতায় সর্বত্রই চলছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। বিএনপি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ও পুজি লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানে বিএনপি নতুন চেয়ারম্যান ও একজন করে ডাইরেকটর নিয়ােগ করার বিধান চালু করেছে। এদের। ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও যােগ্যতা কোনটাই নেই। এদের একটাই যােগ্যতা তারা জিয়ার অনুগত এবং বি এন পি-র নেতা সমর্থক বা পৃষ্ঠাপােষক। এদের ভাতা, গাড়ী ও অন্যান্য সুযােগ সুবিধার জন্য অতি “গে খরচ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মাথাভারী প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসনকে সম্পূর্ণরূপে বিএনপিকরণ করার ব্যবস্থা পাকাপােক্ত ভাবেই চলছে। ব্যাংক সুষ্ঠুভাবে চলে তার জন্য এসব চেয়ারম্যান ও ডাইরেকটরদের বসানাে হয়নি। হযেছে দলীয় স্বার্থ দেখার জন্য; দলীয় নেতা কর্মীরা যাতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সুবিধা পায় তার ব্যবস্থাপত্র দানের জন্য। এসব নিয়ােগ সম্পূর্ণভাবেই জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণােদিত এবং দলীয় দুর্নীতিকে জনসমক্ষে আড়াল করার ‘ছিপি’ হিসেবেই তাদের ব্যাংকসমূহের মাথার উপর বসানাে হয়েছে।

আলাদা করে দেখা লুটেপুটে খাই।

৪৩. নেতাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য দুর্নীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিএনপি দলীয় ব্যাংক কর্মচারীরাও দুর্নীতি করার ও ব্যবস্থার অবাধ সুযােগ নিচ্ছে। এরা সমগ্র ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শ্বেতসন্ত্রাস কায়েম করেছে। ১৯৮১ সনের মে মাসে পৌনে দশটার দিকে ব্যাংকের চিকিৎসা ভাতা-ভাতা হ্রাসের পন্থা বের করার জন্য ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জনাব ইজাদুর রহমানের কক্ষে মিটিং চলছিল। জেনারেল ম্যানেজার শেখ আমিনুল ইসলাম, ম্যানেজার আবুল হােসেন, মেডিক্যাল ম্যানেজার প্রমুখ কর্মকর্তা বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলছিলাে রুদ্ধদ্বার কক্ষে। বিএনপি সমর্থনপুষ্টি ইউনিয়ন নেতৃত্ব এতই শক্তিশালী যে ব্যাংকের চিকিৎসাভাতা নেয়ার নামে হরিলুট বন্ধে তাদের ছিলাে ঘাের আপত্তি। তারা এমডির কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ফেলে। ভেতরে ঢুকে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ইজাদুর রহমান, জেনারেল ম্যানেজার আশরাফুল হক কে মারধাের করে। ইজাদুর রহমানের হাতের আঙ্গুল ও আশরাফুল হকের বা পা ভেংগে গেছে। ‘৭৯ সালে যদিও নিয়মজারী করা হয়েছিলাে কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা হবে বছরে ৮০০ টাকা। কিন্তু ক্ষমতাধর বিএনপি। নেতারা এ বিধি মানেনি। এক বছরে যথেচ্ছহারে চিকিৎসাভাতার নামে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক থেকে তারা লােপাট করেছে প্রায় আট কোটি টাকা। ১২ যে চক্রটি ব্যাংকের সুষ্ঠু পরিবেশ ধ্বংস করছে সেই চক্রটি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন। এ চক্রটির কোনাে । কোনাে সদস্য সিনেমা হলের নামে লাখ লাখ টাকা লােন নিয়েছে। একজন। ড্রাইভার এক মাসে মেডিক্যাল ভাতা নিয়েছে সােয়া আট হাজার টাকা। ব্যাংকের। টাকায় অন্য এক বিএনপি শ্রমিক নেতা বাস ট্রাকের মালিক হয়েছে। সরকারী বিধি। ভংগ করে ব্যাংক-এর জীপ, গাড়ি নিয়ে যখন তখন এরা সদল বলে বেরিয়ে পড়ে। বাধা দেবার কেউ নেই। কারণ এরা বিএনপি নেতা, জিয়ার আদর্শের সৈনিক।

বিএনপি ফান্ড ঃ ওরা আমাদের লােক

৪৪. মহানগরী ঢাকায় প্রকাশ্য ব্যাংক ডাকাতির অভিযােগে অভিযুক্ত ছাত্রদলের ৪ জন আসামীকে ‘বড়কর্তার নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড তাদের গ্রেফতার করেছিলাে। প্রকাশ্য দিবালােকে তারা ১৫ লাখ টাকা ব্যাংক ডাকাতি করে বিএনপি দুর্গ সলিমুল্লাহ ছাত্রবাসে আশ্রয় গ্রহণ করে। পুলিশ সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে। ছাত্রদলের এসব দুষ্কৃতিকারীদের নাম নূরুল কবীর মিন্টু, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আনােয়ার হােসেন খােকন, ইশতেয়ার রহমান ফালু। গত ৯ই জুন, ‘৮০ তেজগাঁও শিল্প এলাকায় টিসিবির গুদামে সােনালী ব্যাংকের বুথ থেকে একদল সশস্ত্র যুবক ১৫ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে। পুলিশ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী জানা যায় ঐদিন পৌনে দুটোর দিকে ৫/৬ জন যুবক একটি চকলেট রঙের জীপে চড়ে (ঢাকা চ-৩২৫) তেজগাঁও টিসিবি গুদামে সােনালী ব্যাংক শাখায় পৌছায়। ব্যাংকের বুথে টাকা গণনার সময় ৩ জন যুবক স্টেনগান, রাইফেল ও পিস্তল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গার্ডদের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের নিরস্ত্র করে। ব্যাংক কর্মচারীদের হাত থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। একই সঙ্গে তারা গার্ডের রাইফেল ও স্টিল আলমারী হতে একটি বন্দুকও সঙ্গে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের হলে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী শুরু করে এবং ১২ই জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ হলে পুলিশ অভিযান চালায় ,৭৯নং কক্ষ হতে চারজনকে আটক করে এবং তাদের নিকট ২৬ রাউন্ড গুলিসহ ৩টি রিভলবার এবং ২৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ও কালাে কাপড়ের তৈরী ৪টি মুখােশ উদ্ধার করে। ৭৯নং কক্ষটি বিএনপি ছাত্রদল নেতার। বিএনপি-র ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট হয় তারজন্য পুরাে ঘটনাটাই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস চলছে। বিএনপি’র ছাত্রনেতারা ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করেছে এদের ছেড়ে দেয়া হবে। তবে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে সিংহভাগ টাকা বিএনপি’র ফান্ডে দিতে হবে। ১৩

বিএনপি ফান্ড ঃ রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প দোহন ঃ হাজার ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা

৪৫. জিয়াউর রহমানের নির্দেশে বিএনপি মন্ত্রীবর্গ দেশের শিল্পপতি ব্যবসায়ী ধনিক বণিক গােষ্ঠীকে অবৈধ ও অন্যায় সুযােগ দিয়েছে তাদের নিকট হতে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করার জন্য মন্ত্রীদের মধ্যে প্রতিযােগিতা চলছে। বিএনপি ফান্ড গঠন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় কর্তাব্যক্তিদের প্রতি একটি নির্দেশ ও নিয়মিত পদ্ধতি। শিল্পমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রামে ডাঃ আনােয়ার নামক এক ব্যক্তিকে ৩০ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জনের সুযােগ করে দিয়েছে। ১৪ মুসলিম লীগ নেতা এম. এ. মতিনের সুপারিশে এক বিশেষ ব্রীফকেসধারী ব্যবসায়ী চক্রকে সুবিধাদানের ফলে চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানাকে সােয়া কোটি টাকা আয় হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। ১৫

জনাব আনােয়ারের তেজগাঁওস্থ টাইগার ওয়ার প্রােডাক্টস কারখানায় ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট রডের সাহায্যে পেরেক, সরু তার উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু তাকে তিন হাজার টন বিলেট আমদানীর মঞ্জুরী দেয়া হয়েছে। দেশে বিলেটের তীব্র সংকট চলছিলাে। খােলা বাজারে বিলেট পাওয়া যাচ্ছিলাে না। চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানায় এই বিলেট উৎপাদিত হয় এবং বিদেশ থেকে বিলেট আমদানীর বৈধ প্রতিষ্ঠান হলাে টিসিবি। টিসিবির বিলেট আমদানীর ফাইল আটকে রাখা হয় এবং দাম পুনর্মূল্যায়নের জন্য চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানায় উৎপাদিত বিলেট বাজারে ছাড়া বন্ধ করে রাখা হয়। দেশের রি-রােলিং মেশিনগুলাে বিলেট পাচ্ছিলাে না। এমনি। অবস্থায় জনাব আনােয়ারকে গত ৭৮ সালের ১২ই আগস্ট বি.এস.ইসিসিও এম (এস)/৩৪ ১/৭৮/২৫২ নং পত্র মােতাবেক তাকে বিলেট আমদানীর অনুমতি দেয়া হয়। আমদানীকৃত বিলেট তার কারখানায় ছিলাে অপ্রয়ােজনীয়। তিনি আমদানী করে সরাসরি সমুদয় বিলেট রি-বােলিং মালিকদের নিকট বিক্রি করে দেন এবং ৩০ লক্ষ টাকা হাতড়িয়ে নেন-যার সিংহভাগ যায় বিএনপি ফান্ডে। অথচ সময়মত টিসিবিকে বিলেট আমদানীর অনুমতি কিংবা চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা উৎপাদিত বিলেট বাজারজাতকরণের অনুমতি দিলে রাষ্ট্রের লােকসান হতাে না।

দুর্নীতির জাতীয়করণ বিদেশীদের রিপাের্ট

৪৬. বিএনপি আমলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য-কর্মসূচী ছিলাে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের জন্য উপঢৌকন স্বরূপ। জেনারেল আইয়ুব মৌলিক গণতন্ত্রীদের মাধ্যমে ক্ষমতার ভিতকে মজবুত করার লক্ষ্যে গ্রামীণ মেম্বার, চেয়ারম্যানদের গম চুরির উপঢৌকন প্রথা চালু করেন। বরাদ্দকৃত টাকা বা গম সবই ছিল অডিটের বাইরে। জেনারেল জিয়াউর রহমানও অনুরূপভাবে গ্রামে পাওয়ার বেজ’ গড়ে তােলার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের গম চুরির ব্যবস্থা করে দেন। কাজের বিনিময়ে খাদ্য-কর্মসূচীর উপর অক্সফামের সাবেক ডিরেক্টর এন্ডু জেনকিনস বাংলাদেশ। সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা ভূমিহীন সংস্থাগুলির মধ্যে ব্যাপক তথ্যানুসন্ধান চালিয়ে (১৯৭৯ সালে) দেখতে পাই যে, একটি এলাকার দশটি গ্রামে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর অধীনে বরাদ্দকৃত গমের শতকরা ৭৬ ভাগই স্থানীয় রাজনীতিক ও সরকারী কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকে গায়েব হয়ে গেছে। অবশিষ্টাংশেরও বেশীর ভাগই তাদের ট্যান্ডেল এবং আত্মীয় পরিজন আত্মসাৎ করেছে। যে সকল স্থানীয় হর্তাকর্তা ১৯৭৯ সালে প্রেরিত জরুরী খাদ্য সরবরাহের শতকরা ৭৬ ভাগ লােপাট করেন, তারা অতপর ঐ লাভের টাকা পুলিশকে ঘুষ প্রদান ও গুণ্ডা ভাড়ার কাজে ব্যয় করেন। সেই সব লােকজনের।

জমিজমা কুক্ষিগত করার জন্য, যারা দুর্ভিক্ষে সবচাইতে বেশী দুঃখ দুর্ভোগ সহ্য করেছেন।” নিবন্ধটিতে আরাে বলা হয় যে, অক্সফামের সাবেক খাদ্য সাহায্য বিষয়ক পরামর্শদাতা টনী জ্যাকসন সম্প্রতি লিখেছেন “এমনকি যেখানে খাদ্য সাহায্য খাদ্য কর্মসূচীর অধীনে রাস্তাঘাট ও সেচ খালের দ্বারা সাধারণত স্থানীয় ভূস্বামীরাই লাভবান হয়েছেন। খাদ্য সাহায্য উন্নয়নশীল দেশগুলির জুলুমবাজ সরকারী মহলের পেশী শক্তিশালী করার কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, বৃটিশ সরকার ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে যে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্যশস্য সাহায্য হিসাবে দিয়েছেন তার মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার টন সরাসরি চলে গেছে সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সিভিল সার্ভিসের লােকজনের হাতে। ১ লাখ ৭ হাজার টন পেয়েছে ক্ষুদ্র শহর এলাকার প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণী আর এই খাদ্য সাহায্যের বড় জোর শতকরা ১৭ ভাগ মাত্র সত্যিকার গরীবদের হাতে পৌঁছেছে। ইতিপূর্বে গত ৯ই মার্চ ‘৭৯ পত্রান্তরে অক্সফামের সাবেক ফিল্ড ডিরেক্টর মিঃ ডেভিট ক্যামবেল কর্তৃক একটি বিদেশী সাময়িকীতে লিখিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে “বাংলাদেশ কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর বরাদ্দকৃত গমের শতকরা ৭৫ ভাগই আত্মসাৎ হচ্ছে।

বাংলাদেশে সাড়ে চার বছর চাকুরি করার পর অবসর গ্রহণ শেষে ক্যাম্পবেল উক্ত প্রতিবেদন লেখেন। “খাদ্য সাহায্য ও অন্যান্য সাহায্য সরাসরি ধনীদের হাতে গিয়ে পৌছে” এই শিরােনামে লিখিত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি দেখেছেন ঢাকার বস্তিতে বাস করে, দিনে একবারও হয়তাে খেতে পায় না এ রকমের পরিবারও রেশনের খাদ্য থেকে বঞ্চিত। তার ভাষায় “বালাদেশে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী বহুলাংশে ব্যর্থ। হয়েছে। বরং এতে গরীব আরাে নিঃস্ব হচ্ছে ক্রমশঃ। জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান কেয়ার বাংলাদেশে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে খাল খনন, সড়ক নির্মাণের কাজ করছে। কিন্তু এর দ্বারা বালাদেশের অনাহারী মানুষ উপকৃত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুব বিরল।” মিঃ ক্যাম্পবেল আরাে বলেন, “বলাদেশ পল্লী প্রগতি কমিটি (ব্র্যাক) কর্তৃক দেশের প্রত্যন্ত দশটি গ্রামে পরিচালিত এক জরীপে দেখা গেছে, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দকৃত গমের শতকরা ৭৫ ভাগ স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা আত্মসাৎ করছে। অবশিষ্ট ২৫ ভাগেরও একটি অংশ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের আত্মীয় স্বজন খেয়ে ফেলছে। কাজেই প্রান্তিক গ্রুপ কি পাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। এমনকি, এই কর্মসূচীর অধীনে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও তা গ্রামের অনাহারী লােকদের বিশেষ কোন উপকারে আসে না। ভূমিহীন কৃষকরাও বলেছে, “এই কর্মসূচীতে তাদের কোন উন্নতি হয়নি। সেখানে তাদের পাওয়ার কথা দৈনিক ৩ সের গম, সেখানে তারা দেড় সেরের বেশী গম পাচ্ছে না।”১৬।

নির্বাচনী খরচা ও খাদ্য দুর্নীতি

৪৭. জিয়া সরকারের আমলে নিত্যনতুন দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হচ্ছে। খাদ্যশস্য নিয়ে দুর্নীতিবাজ জিয়াশাহীর সরকারের নজিরবিহীন ঘাপলাবাজি, পাইকারী চুরিচামারি ও লুটপাট এবং অবাধে কোটি কোটি টাকার খাদ্য পাচারের ফলে উত্তরাঞ্চল ও খুলনায় অনাহারে প্রাণহানি শুরু হয়ে গিয়েছিলাে। দেশে খাদ্যশস্য নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও কারচুপি যে কি সর্বগ্রাসী ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল ৮২ সনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার রেশন দোকান, দুই লক্ষ রেশন কার্ড, সাড়ে চার হাজার খাদ্য শস্যের লাইসেন্স এবং ৫ হাজার রেশন পারমিট বাতিলের খবরটি থেকে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। গম আত্মসাতের অভিযােগে সাবেক এমপির বিরদ্ধে মামলা দায়ের এবং খাদ্য বিভাগীয়। কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের খবর থেকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে খাদ্য কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত ছিলাে অপরাধী চক্র। রাজনৈতিক স্বার্থে ‘৭৮-এ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কর্মসূচী ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গে ভরা বর্ষায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর নামে ২০ কোটি টাকা দামের ২০ লক্ষ মণ গম বরাদ্দ করে গ্রামে গ্রামে টাউট বাটপাড়দের জন্য নির্বাচনী খরচা দেয়া হয়েছিল, বিনষ্ট উপক্রম ঘঘাষিত বলে নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির কর্মীদের কাছে সস্তা দরে ১ লক্ষ ২০ হাজার টন সম্পূর্ণ ভাল চাল বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। খাদ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মহল শতকরা সাড়ে ৩ ভাগ। “স্বীকৃত অপচয়ের সুযােগ নিয়ে সাড়ে তিন শত কোটি টাকার খাদ্যশস্য লােপাট করে নিয়েছে। উল্লেখযােগ্য যে ভারত বা পাকিস্তান কোথাও এখন আর “স্বীকৃত অপচয়ের” নামে এই ধরনের পুকুর চুরির সুযােগ বহাল নেই।১৭ ‘৮২ সনে এক তথ্য বিবরণীতে জানা যায়, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর গম আত্মসাৎ ও সরকারী অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযােগে ৩ শতাধিক ইউপি চেয়অরম্যানকে সাসপেন্ড করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ধান কেনার জন্য প্রদত্ত অগ্রিম টাকার হিসাব এবং আত্মসাৎকৃত বা অব্যহৃত অর্থ ফেরত দেবার শেষ তারিখ ‘৮২-এর ৩০শে এপ্রিল উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু অনেকের কাছ থেকেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পক্ষকাল সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, খাদ্যশস্য নিয়ে কারচুপি ও দুর্নীতির অভিযােগে বেশ কিছু মামলা দায়ের ও গ্রেফতারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ যে, ময়মনসিংহের ইটনা অষ্টগ্রাম এলাকার বিএনপি সমর্থক সাবেক এমপি ফরহাদ আহমদ কাঞ্চন ও তার এক অনুচরের বিরুদ্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর দেড় হাজার মণ গম আত্মসাতের অভিযােগে অষ্টগ্রামের সার্কেল অফিসার সামরিক আইনবিধি বলে মামলা দায়ের করেছেন। বগুড়ার সুবিল খাল খননের সঙ্গে সদর থানার ৫ জন ইউপি সদস্যকে ৬ই মে ‘৮২ গ্রেফতার করা হয়েছে। একই দিনে গম ও হাট তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযােগে মানিকগঞ্জে তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সামরিক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গম আত্মসাতের অভিযােগে স্বরূপকাঠিতে ৫ জন, ভেড়ামারার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং রায়পুরা থানার চান্দেরগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযােগে ৫ই মে কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান আবদুল জলিলকে এবং ৪ঠা মে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩রা মের খবরে প্রকাশ, সরকারী গম ও ধান আত্মসাতের অভিযােগে ফরিদপুরের ডিক্রিরচর, চরজিসুরদি ও হামিরদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে গ্রেফতার করেছে। অপর এক খবরে প্রকাশ গম আত্মসাতের অভিযােগে ২৮শে এপ্রিল জামালপুরের গােরদগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরদিন সেখানকার দু’জন রেশন ডিলারকেও আটক করা হয়েছে। এছাড়া গম আত্মসাতের। অভিযােগে যশােরের বাঘারপাড়া থানার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লার হাজিগঞ্জের বরফুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক ইতিমধ্যে নওগাঁ মহকুমা খাদ্য দফতর ১৮টি চালকলের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৭ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৩৮ টাকা মূল্যের ধান চাল আত্মসাতের অভিযােগে মামলা দায়ের করেছে। প্রায় একই সময়ে দিনাজপুর জেলায় ২৪ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের | ধান চাল আত্মসাতের অভিযােগে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৪ জন মিল মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়েছে যে, গােডাউনে মাল ঘাটতির অভিযােগে খুলনায় ১৪ জন খাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী খাদ্য পরিদর্শককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং খাদ্য শস্য বন্টনে দুর্নীতির অভিযােগে নড়াইলের খাদ্য পরিদর্শক ও প্রধান সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া, কুড়িগ্রামে পক্ষকালের মধ্যে শুধু মাত্র এই মহকুমাতেই ১৩৬টি সংশােধিত রেশন ডিলার লাইসেন্স এবং ১০০টি খাদ্যশস্য লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জেলা বা মহকুমা ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দেশের প্রায় সব জায়গায় থেকেই খাদ্য কেলেংকারীর অভিযােগে ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া গেছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, খাদ্যশস্য দিয়ে বিভিন্ন রকম কারচুপি ও দুর্নীতি, খাদ্যশস্য নিয়ে সর্বব্যাপী যে দুর্নীতি, ও কেলেংকারি চলেছে তা অত্যন্ত। প্রকটভাবে ধরা পড়ছে।

প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছিল

৪৮, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেঃ হুসাইন মােহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সনের ৬ই মে সরকারী অর্থ, ত্রাণ সামগ্রী ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর অধীনে প্রদত্ত খাদ্যশস্য আত্মসাতের দায়ে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি সম্বলিত ৪ নং সামরিক আইন বিধি জারির করার পর এ পর্যন্ত সারাদেশে সামরিক আদালতে বেশ কিছু অভিযােগ সংক্রান্ত মামলার বিচার হয়েছে। তন্মধ্যে সব চাইতে উল্লেখযােগ্য সাড়ে এগারাে কোটি টাকার সাড়ে ৯ লাখ মণ খয়রাতি গম। আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর মামলাটির রায় গত ২৯শে আগস্ট ঘােষিত হয়েছে। লেঃ কর্ণেল এম আমিরুল ইসলাম ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে গঠিত ‘ক’ অঞ্চলের ২নং সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন আদালতে ৯ লাখ ৬২ হাজার মণ খয়রাতি গম আত্মলাভের এই চাঞ্চল্যকর মামলার শুনানী গত ৬ই জুলাই শুরু হয় এবং ২৯ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদী কারাদণ্ড প্রদান ও জরিমানা করে ২১শে । আগস্ট রায় ঘােষিত হয়। আদালত প্রধান অভিযুক্ত ঢাকার এডিসি (রিলিফ) এবিএম আবদুল লতিফকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জরিমানা, অনাদায়ে আরাে ২ বছর ৯ মাস সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। উল্লেখ্য, প্রতিটি জেলায় ও থানায় বিএনপি পান্ডারা সরকারী কর্মকর্তাদের সহায়তায় এরকম হাজার হাজার দুর্নীতি করেছে।

জিয়ার সততা লন্ডনের পত্রিকাকে ১৮ লক্ষ টাকা ঘুষ

৪৯. জিয়াউর রহমানের একটি সুচতুর কৌশল ছিলাে বিদেশী পত্রিকায় টাকা দিয়ে নিজের প্রচারের জন্য ক্রোড়পত্র বের করা। এবং সেই ক্রোড়পত্রের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায়, রেডিও টিভিতে সুখ্যাতি প্রচার করতাে। এসব ক্রোড়পত্র বের করার জন্য ঘুষ পর্যন্ত দেয়া হতাে। জেনারেল জিয়ারউর রহমান ‘৮০ সনের জুন মাসে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। সরকারী সফর উপলক্ষ্যে ১৬ই জুন জিয়া লন্ডন পৌছায়। ফিনানসিয়াল টাইমসের সাবেক সংবাদদাতা বর্তমান সৈনিক রাষ্ট্রপতির তথ্য উপদেষ্টা জনাব দাউদ খান মজলিশ জিয়ার লন্ডন সফর উপলক্ষে ১৬ই জুন ৪০/৫০ হাজার পাউন্ড বিজ্ঞানী ঘুষ দিয়ে ‘দি গার্ডিয়ান’ ও ‘দি টাইমস’- এ দুটি পত্রিকায় “বাংলাদেশ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। ১৯ এ ক্রোড়পত্র ১/ জিয়া ও সামরিক আইন প্রশাসনের নির্লজ্জ প্রশংসার লিফলেট বৈ অন্য কিছু নয়। দি টাইমস জেনারেল আইয়ুব খান সম্পর্কেও এরূপ মন্তব্য করেছিলাে। জিয়ার কড়া সামরিক শাসনে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাপক চুরি ও অনিয়মের খবরাদি প্রকাশ করা সম্ভব ছিলাে না। সেজন্যে জনগণের নিকট তার দুর্নীতির এসব বিবরণ প্রকাশ হয়নি—ফলে জনগণের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে জিয়া সৎ।

সূত্র : জেনারেল জিয়ার  রাজত্ব  – অধ্যাপক আবু সাইদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!