জিয়ার বিদেশ নীতি ঃ এক্কা দোক্কা চালক
১. জিয়াউর রহমান তার পররাষ্ট্রনীতিকে বলেছেন ‘একা দোক্কা চাল’। তিনি বলেন, “ফরেন পলিসিটি কি? পররাষ্ট্র নীতি কি জিনিষ? আপনারা লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই। যে, গ্রামে ও শহরের অলিতে গলিতে ছােট ছােট ছেলেমেয়েরা একটা খেলা করে যার নাম হলাে একা দোক্কা খেলা। অর্থাৎ একটা রেকটেঙ্গুলারের মধ্যে ছােট বেশ কিছু ঘর থাকে। একবার দাঁড়িয়ে একজন একটা পাথর পাথর ছুড়ে মারে। (চালমারে) অর্থাৎ এক্কা দোক্কা চাল। তারপর এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘরের। মধ্যে যায়। এ ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়ম-কানুন থাকে। তা হলাে সব ঘরেই এক সঙ্গে যাওয়া যাবে না। একটায় গেলে অপরটায় যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। ফরেন। পলিসিটাও তাই। ফরেন পলিসি অনেকটা এক্কা দোক্কা খেলা।” তিনি আরাে বলেন, “পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে আভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটা একসটেনশন। কথাটি সত্যি। কারণ ঘরের মধ্যে দুর্বল থেকে বাইরে গিয়ে কিছু করা যায় না।”
২. জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির ‘এক্কা দোক্কা খেলাটি খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে অত্যন্ত স্বার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন স্বীয় স্বার্থে, দেশ ও জাতির জন্য নয়। ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং বিদেশে তার নিজের ইমেজ গড়ে তােলার কাজেই জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হয়েছে। জিয়ার রহমান-এর ক্ষমতা দখলের নেপথ্যে দেশী ও বিদেশী পরাজিত ছ, শক্তি পাকিস্তান, চীন এবং এর অন্তরালে সৌদি সমর্থন বিদ্যমান। পাকিস্তান-সৌদি রাজনৈতিক বলয়ে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পেয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা সংহত করার এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭৬ সনে মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ৪২টি মুসলিম দেশসমূহের দ্বারা গঠিত ইসলামিক কনফারেন্স সংস্থার অধিবেশনে যােগদান করে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রবর্তনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে। আসেন।
৩. ১৯৭৪ সনে সৌদি বাদশা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে বাংলাদেশকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘােষণার কথা বললে বঙ্গবন্ধু তার বিপরীতে বাদশাকে বলে পাঠান যে, ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এখানে সব সম্প্রদায়ের ধর্মকর্ম পালনের অধিকার থাকবে। শুধু তাই নয়, তিনি সৌদি বাদশাকে একথা বলেও অভিযুক্ত করেন যে, বাংলাদেশে মুসলমান নর-নারীর উপর যখন পাকস্তিানী সামরিক বাহিনীকে অত্যাচার, গণহত্যা ও ধর্ষণ করছিলাে তখন পবিত্র মক্কা শরীফের হেফাজতকারী হিসেবে কেন তিনি তার। প্রতিবাদ করেন নি। এরপর স্বাভাবিক কারণেই সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ‘
৪. বাংলাদেশে বেতার নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানী ভাবধারায় রেডিও বাংলাদেশ’ থেকে খুনী মেজর (অবঃ) ডালিম ১৫ই আগস্ট ‘৭৫ সনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাল্লাদেশ-এর স্থলে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ ঘােষণা প্রদান করে। এই ঘােষণার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সৌদি বাদশাকে এ ঘােষণার কথা অবগত করালে সৌদি বাদশা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করেনি।
৫. কিন্তু ধূর্ত খন্দকার মােশতাক বাস্তব অবস্থা এবং জিয়াে-পলিটিক্যাল অবস্থান। বিবেচনা করে ঐ ঘােষণা কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে ঐ সময়ের জন্য সমীচীন। মনে করেনি। ফলে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ’ নামে ঘােষিত না। হলেও কার্যতঃ পাকিস্তানী ধারায় রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত হতে থাকে।
৬. জিয়াউর রহমানের ১৯৭৬ সনের তুরস্ক এবং তুরস্ক হতে পাকিস্তানে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেন। জেনারেল জিয়ার সফরের পূর্বেই ১৯৭৬ সনের ৮ই মার্চে মঙ্গলবার ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো দাবি করেছেন যে, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন এটাই স্বাভাবিক এবং বিশ্বের কোন দেশের এটাকে ভুল বােঝা উচিৎ নয়।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ৮ই মার্চ ইসলামাবাদে বাংলাদেশের সাথে বিশেষ সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিকতার মনােভাবের ওপর বিবৃতি দিচ্ছিলেন। বিবৃতিতে জনাব ভুট্টো বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রশ্নে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন এবং বলেন, কোন দেশ আমাদের ভুল বুঝলে সেটা খুবই অন্যায় হবে।’ জনাব ভুট্টো বলেন, অতীতে আমরা পরস্পরকে যেভাবে জেনেছি ভবিষ্যতেও আমরা পরস্পরকে অনুরূপভাবে উপলব্ধি করব। আমরা সুসময়ে ও দুঃসময়ে মিত্র হিসেবে একযােগে কাজ করে যাবাে।’ তিনি ঘােষণা করেন, প্রতিটি সংকটে ও প্রতি মুহূর্তে আমরা পরস্পরের পাশে এসে দাঁড়াবাে।
৭. জনাব ভুট্টো যখন এই বিবৃতি দিচ্ছেলেন, তখন তার পাশে ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আলহাজ্ব মােহাম্মদ জহির উদ্দিন। তার দিকে ফিরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বললেনঃ “এই মুহূর্তে আমার পাশে একজন রাষ্ট্রদূত আছেন যাকে আমি রাষ্ট্রদূত বলতে পারি না। তবু তিনি একজন রাষ্ট্রদূত। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। তাঁকে আমি রাষ্ট্রদূত বলি কি করে? তিনি আমাদের ভাই। তিনি ও আমরা একত্রে কাজ করেছি। তিনি ও আমরা একই পরিষদের সদস্য ছিলাম। তিনি ও আমরা একই। পার্টি কংগ্রেসে যােগ দিয়েছি। তিনি ও আমরা এক সঙ্গে দাঁড়িয়েছি এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে বলেছি। তিনি ও আমরা পল্টন ময়দান, মােচিগেট ও অন্যান্য বহুস্থান থেকে বক্তৃতা করেছি। তা সত্ত্বেও তিনি একজন রাষ্ট্রদূত। কারণ বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।” জনাব ভুট্টো বলেন, “অবশ্যি একই সময়ে তাদের ও আমাদের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্কও রয়েছে এবং এটা স্বাভাবিক এবং বিশ্বের কোন দেশেরই এটাকে ভুল বােঝা উচিৎ নয়। বিশ্বের কোন দেশ যদি ভুল বুঝে সেটা খুবই অন্যায় হবে। কারণ অতীতে আমরা পরস্পরকে যেভাবে জেনেছি ভবিষ্যতেও আমরা পরস্পরকে অনুরূপভাবে উপলব্ধি করবাে এবং সুসময়ে ও দুঃসময়ে মিত্র হিসাবে আমরা একযােগে কাজ করে যাবাে। প্রতিটি সংকটে ও প্রতি মুহূর্তে আমরা পরস্পরের পাশে দাঁড়াবাে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে আমি এই আশ্বাস দিচ্ছি। তাদেরকে জানিয়ে দিন যে, তাদের বিপদে-আপদে আমরা তাঁদের পাশেই রয়েছি এবং আমরা তাদের পার্শ্বে দাঁড়াবাে যেমন করে আমাদের গৌরবােজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা পরস্পর পাশে দাঁড়িয়েছি। ভুট্টোর বিবৃতি প্রকাশের পর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে বেপরােয়া ও লাগামহীন আক্রমণ শুরু করেন।
৮. প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো তার দেশের শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের নিকট অস্ত্র প্রেরণ করেন’- এই মর্মে ভারতীয় প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানী মুখপাত্রের জবাব ছিলাে আত্মরক্ষামূলক। বাংলাদেশে পাকিস্তানী অস্ত্র পাঠাননার অভিযােগ ভিত্তিহীন। বালাদেশের পাকিস্তান সমর্থক লােকজনের কাছে পাকিস্তান গােপনে জাহাজযােগে অস্ত্র পাঠিয়েছেন বলে ভারত যে অভিযােগ করেছে ইসলামাবাদে পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র তাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেছেন, পাকিস্তানী। সরকারী সূত্রের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি উল্লেখ করে এনার সংবাদদাতা এ খবর দিয়েছে। পাকিস্তানীদের সাহায্য করার জন্য পাকিস্তান গােপনে বাংলাদেশে জাহাজযােগে অস্ত্র পাঠাচ্ছে-এই ভারতীয় অভিযােগ খন্ডন করে গত ১৮ই মার্চ ‘৭৬ ইসলামাবাদে পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র উক্ত বিবৃতি দেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে পাকিস্তানের সদিচ্ছার ওপর প্রশ্ন তুলে ভারত যে অভিযােগ করেছে পাকস্তিানী পররাষ্ট্র দফতরের উক্ত মুখপাত্র তা দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করে বলেন, ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তির অধীনে পাকিস্তান যে কোন একটি অথবা অমীমাংসিত তিনটি প্রশ্ন নিয়েই নয়াদিল্লীর সঙ্গে আলােচনা করতে প্রস্তুত।
৯. পাকিস্তানী মুখপাত্র ভারতের সংঙ্গে পাকিস্তানের যে তিনটি অমীমাংসিত সমস্যার উল্লেখ করেন সেগুলাে হচ্ছে- দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, একে অন্যের আকাশসীমা দিয়ে বিমান চলাচলের পারস্পরিক অধিকার এবং কাশ্মীর সমস্যা। পাকিস্তানী মুখপাত্র তার বিবৃতিতে উক্ত ভারতীয় অভিযােগকে সম্পূর্ণ। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন।৬ এই প্রেক্ষাপটে সামরিক প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের পাকিস্তান গমন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি তাকে দেশের স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের সহযােগিতা পেতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
১০. সৌদি আরব, তুরস্ক বিশেষ করে পাকিস্তান হতে আশ্বস্ত হয়ে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিচারপতি আবু সাদাত মােহাম্মদ সায়েমের হাত থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদটি কেড়ে নিতে বিলম্ব করেন নি। এর পূর্বে তিনি বালাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের যারা সক্রিয়ভাবে বিরােধিতা করে হত্যা, খুন লুঠ অগ্নিসংযােগের মত গুরুতর অভিযােগে দালাল আইনে অভিযুক্ত ছিলাে সেই দালাল আইন সম্পূর্ণ বাতিল করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার প্রদান করেন।
১১. একই সাথে বাঙালী জাতীয়তাবাদ পরিবর্তন করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ঘােষণা দিয়ে পাকস্তিানী শিল্পপতিদের শিল্প কারখানা ফেরৎ দেবার ব্যবস্থা করেন। জিয়াউর রহমান দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে গােপন চুক্তি করে পাকিস্তানীদের ব্যবসা বাণিজ্যে অবাধ সুযােগ প্রদান ও পাকিস্তানীদের শিল্প কলকারখানা ফেরৎ দেন যা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় স্বার্থে এসব শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে জনগণের সম্পতিতে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭৬ সনে ঢাকায় বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ ছাপা হয়। যােগ করতে হবে।
১২. পাকিস্তান ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহায়তায় জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক প্রশাসকের করায়ত্ত করার পর প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবু সাদাৎ মােহাম্মদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট পদ হতে বিতাড়িত করে স্বয়ং পদটি দখল করার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমর্থন আদায় করেন। জিয়াউর রহমান ইতিপূর্বেও বালাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিশেষ করে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরাজমান বিশৃংখলা নিরসনে বিশেষ বগুড়া ও ঢাকায় সেনাবিদ্রোহ দমনে কোটি উইলিয়াম কর্তৃপক্ষের সাহায্য জামনা করেন। জিয়ার সমর্থনে সেদিন ভারতীয় ট্যাংক ও বিমান বহর সজ্জিত ছিল।
১৩. জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সনে জানুয়ারিতে চীন সফর করে তাদের আশীর্বাদ লাভ করেন। চীনের সঙ্গে আর্থিক বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তি বিষয়ে চুক্তি করেন। এই যুক্তির ফলে চীন বাংলাদেশকে ‘৭৫ থেকে ৮১-৮২ পর্যন্ত ৮ কোটি ডলার ঋণ। দেয়। বালাদেশ চীন থেকে পণ্য আমদানী করে ২৮৪.৫২ মিলিয়ন ডলার। চীনে রপ্তানী করে মাত্র ৬৫.৯৮ মিলিয়ন ডলার এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য | ঘাটতি দাঁড়ায় ২১৮.৫৪ মিলিয়ন ডলার। চীন বাংলাদেশের সামরিক অফিসারদের ০ প্রশিক্ষণ দেয় এবং সামরিক সরঞ্জামাদি প্রদান করে। চীনের রাষ্ট্র পরিচালনায় সামরিক নেতৃত্বের অধিষ্ঠান ও কর্তৃত্ব জিয়ার মনে এই প্রতীতি আরাে দৃঢ় করে যে তাকেই রাষ্ট্রপরিচালনার সর্বময় ব্যক্তি হতে হবে।
১৪. জিয়ারপ্রেসিডেন্ট পদক দখলে ভারতের সম্মতি ছিলাে অপরিহার্য। জিয়াউর রহমান এ জন্য ভারতকে ছাড় দেন। ভারতের বিরুদ্ধে বাহ্যতঃ প্রচার করলেও ভারতের | সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আমলের সকল চুক্তি বহাল রাখেন, এমন কি পানি সমস্যা ও বাণিজ্য বিষয়ে আরাে বেশী ছাড় দেন।
১৫. জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণের পূর্বে ১৯৭৭ সনের ১৬-১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় মন্ত্রী জগজীবন রাম ঢাকায় অবস্থান করেন এবং কয়েক দফা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শ্রী মােবারজী দেশাই ক্যাবিনেটের মন্ত্রী হিসেবে শ্রী জগজীবন রাম পানি বন্টন সম্পর্কে আলােচনার জন্য আসেন। কিন্তু পানি বন্টন সম্পর্কে আলােচনার কোন অগ্রগতি দেশবাসী জানতে পারেনি। জগজীবন রাম ভারতে প্রত্যাগনের ৭২ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ ২১শে এপ্রিল ১৯৭৭ সনে বিচারপতি সায়েমের নিকট হতে গভীর রাতে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট পদ কেড়ে নেন। জিয়ার বিলাসী বিদেশ সফর
১৬. জেনারেল জিয়ার বিদেশ সফর নিয়ে বহু চমকপ্রদ কথা বাজারে চালু রয়েছে। গরীব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে জিয়ার বিদেশ সফর ছিলাে রাজকীয়। যেন গােটা দেশটাই ছিলাে জিয়াউর রহমানের জমিদারী এবং তালুক। সে হিসেবেই জিয়াউর রহমান তার রাজত্ব পরিচালনা করেন। জিয়াউর রহমানের আমলে সর্বদিকে অপব্যয় সীমা ছাড়িয়ে যায়। জিয়াউর রহমান বিদেশ সফরকালে ভাড়া করা বিমান ভর্তি করে তােক নিয়ে যেতেন। তার প্রতিনিধি দলে দলীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ছাত্র, ব্যবসায়ী, সিনেমা শিল্পী ও আত্মীয় স্বজনও থাকতেন। কোন কোন সময় চিত্রনায়ক, চিত্র নায়িকা এবং টেলিভিশনের সুন্দরী রমনীরা আঁর সফরসঙ্গী থাকতেন।
বাহারী খরচ
১৭. ‘৭৮ সাল থেকে ৮১ সালের মে মাসে নিহত হবার পূর্ব পর্যন্ত জেনারেল জিয়া অন্ততঃ ৫০টি দেশ সফর করেন। কোন কোন দেশ সফর করেন ২/৩ বার। জিয়ার বিদেশ সফরে কম করে হলেও ২০ কোটি টাকার বেশী খরচ হয়েছে। জিয়ার সফরের পূর্বে একটা অগ্রগামী দল বিদেশ যেতাে। তাদের কাজ ছিলাে সেদেশের পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের ছবি ও গুণকীর্তন প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা। ১৯৮০ সালের জুন মাসে জিয়ার লন্ডন সফরকালে গার্ডিয়ান ও টাইমস পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের করার জন্য খরচ হয় ৩০ হাজার পাউণ্ড। ‘৮১ সালের গােড়ার দিকে পশ্চিম জার্মানী সফরকালে পত্রিকা ও টিভিতে ছবি প্রদর্শনের জন্য ব্যয় হয় ৫০ হাজার পাউণ্ড। ‘৮০ সালে নয়াদিল্লী সফরের সময় টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্থান টাইমস কাগজে বিশেষ সংখ্যা বের করার জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার পাউণ্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর কালে প্রায় ২০ লক্ষ ডলার ব্যয় হয়। বিদেশ সফর শেষে জিয়ার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে দ্রব্যসামগ্রী কিনে আসতেন। ‘৭৯ সালে ভিসিআর আনার দায়ে প্রেসিডেন্টের মুখ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা হাতে নাতে ধরা পরে। তাছাড়া বিদেশে তাদের কারাে কারাে হােটেলে থাকাকালীন কেলেংকারীর কথাও প্রকাশ হয়ে পড়ে রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক খােলা হলাে
১৮. প্রতিবার যখনই প্রেসিডেন্ট জিয়া বিদেশে সফরে গেছেন তখন একটি না একটি চমকপ্রদ ঘটনার অবতারণা ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট-এর বিদেশে সফরের একদিকের চিত্রই শুধু দৈনিক সংবাদপত্রসমূহকে স্থান পায়। চিত্রের অপর দিক সব সময় অপ্রকাশিত ও অকথিতই থেকে যায়। এমন দুটি ব্যাপার ঘটেছে, প্রেসিডেন্ট-এর বিগত দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও । ডাঃ রুমানিয়া সফরের সময়। উত্তর কোরিয়ার বিগত জাতীয় দিবসে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য বিশ্বের বিশেষ করে এশিয়ার প্রায় ৫০টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে দাওয়াত করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এসব দেশ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি। তখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে ঐ দাওয়াত সানন্দে কবুল করেন। প্রেসিডেন্ট প্রায় একশত জন সদস্যর একটি বিরাট বাহিনী নিয়ে যান। এই বিরাট বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন সমাজের নামগােত্রহীন ব্যক্তি, যারা দেশে কোন গুরুত্বের অধিকারী নন। আর বিদেশে তাে তাদের কোন প্রয়ােজনই ছিলােনা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুবক, ছাত্র ও তরুণী। এই সমস্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের শুধুমাত্র বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আগের ঘটনাও চমকপ্রদ। ঐ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারীদের ধর্মঘট চলছিলাে। ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রায় বন্ধ ছিলাে। তৎসত্ত্বেও বিশেষ ব্যবস্থাহীন বিকেল এবং রাতে ব্যাংক খুলে মুদ্রার ব্যবস্থা করা হয়। প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গীদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তিও রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা এখনও বিচারাধীন ছিল। ১০
সফরসঙ্গী রুমানা আহমদ, নাশিদ কামালসহ
১৯. প্রেসিডেন্টর রুমানিয়া ও তুরস্ক সফরের কাহিনীও মুখরােচক। প্রেসিডেন্ট রুমানিয়া যাওয়ার দু’দিন পূর্বে জাপানী অনুদানে সংগৃহীত ‘সিটি অব টোকিও’ নামক বােয়িং বিমানটি ঢাকায় আসে। আর ঐ বিমানটিতে তিনি নিয়ে যান প্রায় ৭০ জন সদস্যের দলবল। প্রেসিডেন্টকে বিদেশে সফরে শাহান শাহ্, বাদশাহর মত চলাফেরা করার অধিকার জনগণ দেয়নি। অখ্যাত অজ্ঞাত লােকের বাদশা সুলভ ভ্রমণে শােভাবর্ধন করতে পারে, কিন্তু এই দরিদ্র দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় জনগণ কেন মেনে নেবে। রুমানা আহমদে আর নাশিদ কামালের মত ২০/২২ বৎসরের তরুণীরা প্রেসিডেন্টের সফরের অঙ্গসৌষ্ঠর বর্ধন ছাড়া আর কি কাজে এসেছে?১১
সফর কি রাজনৈতিক ঘুষ?
২০. প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরের সময় যে সমস্ত বেসরকারী ব্যক্তি তার সঙ্গী হচ্ছেন পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট এর জাতীয়তাবাদী দলে তাদের নাম শােভা পাচ্ছে। বিএনপি করার জন্য এ ধরনের রাজনৈতিক ঘুষ দিয়ে বিদেশী মুদ্রার অপচয় আর বিচারাধীন আসামীরা প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরে সহগামী হয় কি করে? উত্তর কোরিয়া, রুমানিয়া ও তুরস্ক সফরের সময় প্রতিনিধি দলের প্রতিটি সদস্যের নামধাম প্রকাশ করলে এসব সত্য উদঘাটিত হবে।১২
জিয়ার সফর সঙ্গী রােজি সামাদ ঃ ঘর ভাঙলাে রােজী ও সামাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর পত্র পত্রিকায় কেউই প্রকাশ্য বিবৃতি দেননি। অভিনেত্রী রােজী ও চিত্র গ্রাহক পরিচালক কাজী আবদুস সামাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের দু’জনের একান্ত বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ ক্ষীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন এমনটি হলাে? এই বিশ্লেষণে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা লিখেছে “প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার আগে জার্মানী সফর করেছিলেন। রােজী সম্মানিতা রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে জিয়াউর রহমানের সফরসঙ্গী ছিলেন। আর সে খবর জার্মানীর পত্র-পত্রিকায় ছবি সহকারে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিলাে। মনস্তাত্তিক দিক থেকে রােজীর জার্মানী সফর রােজী-সামাদের সম্পর্কের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রভাব ফেলে। রােজী ঐ সফরের পর হতেই নাকি নিজেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের একজন ব্যক্তি হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। তার সঙ্গে নাকি যােগাযোেগ গড়ে ওঠে প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের। একটা ডােন্ট কেয়ার ভাব গড়ে ওঠে রােজীর মধ্যে। সামাদ যেন তার কাছে গৌণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। এই অভিযােগ অনেকের।”১৩ জার্মানী পত্র-পত্রিকায় নানারূপ কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। একটি পত্রিকায় একটি বিরাটাকৃতি বেমানান ওভারকোট পরিহিত জিয়াউর রহমানের ছবি ছাপিয়ে ক্যাপশন বলা হয়, “বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শীতকালীন সময়ে জার্মানী সফরে ওভারকোট ও আনতে ভুলে গেছেন, কিন্তু সাথে করে সুন্দরী রমণী আনতে ভুলেননি।”
ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট কোণঠাসা হয়
২২. জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছাচারী কায়দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঠামাে ও নিয়মনীতি ভেঙে ফেলতে দ্বিধা করেনি। বিদেশের মাটিতে জিয়াউর রহমান ও তার সরকারের প্রশংসা তুলে ধরার লক্ষ্যে তিনি ইচ্ছেমত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটদের’ কোণঠাসা করে রাখেন। পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তার নীতি ছিলাে স্পষ্ট। তার নিকট যা ভালাে মনে হতাে তার উপর ভিত্তি করেই পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করতেন। এই লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাটদের’ কোণঠাসা করে বিদেশী মিশন সমূহে ৩২ জন সামরিক অফিসারদের নিয়োেগ করেন। ১৪ সামরিক অফিসারদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদেরও বিদেশ মিশনে কূটনৈতিক দায়িত্ব প্রদান করেন। এমনকি খুনী ফারুক-রসিদকেও কটনৈতিক পদ গ্রহণের প্রস্তাব দেন।
পররাষ্ট্রনীতির আরেক দোক্কা ঃ দূতপুল .
২৩. জেনারেল জিয়ার নিকট পররাষ্ট্রনীতি কোন নীতিই ছিলােনা। যখন যেমন তেমনভাবে তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে পরিচালিত করেছেন। উদাহরণ দূতপুল গঠন। জিয়াউর রহমান দূতপুল সদস্যদের কর্তব্য নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেন, “বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য ও সহযােগিতা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে দূতপুল সদস্যগণ অবদান রাখবেন। জাতীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৩ জনকে নিয়ে দূতপুল গঠন করা হয়। এদের মর্যদা প্রতিমন্ত্রীর সমতুল্য। বলাবাহুল্য, বিএনপির জাতীয় সংসদ সদস্যগণের মধ্য হতেই দূতপুলের সদস্যদের নিয়োেগ করা হয়। মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী ও তাদের পদমর্যাদা সম্পন্ন জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে দূতপুল গঠনের ফলে এর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩০জন। দূতপুল গঠনের নেপথ্যে ছিলাে বিভিন্ন দল থেকে আগত এবং পরস্পর কোন্দলরত দলীয় সদস্যদের সন্তুষ্ট রাখার কৌশল। বিদেশে গিয়ে সেদেশের সরকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আচরণের ও কথাবার্তার রাজনীতি, যাকে বলে কূটনৈতিক আচার-আচরণ সে সম্পর্কে এসব সদস্যদের আদৌ কোন অভিজ্ঞতা নেই। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন শুধুমাত্র দু/চার ঘন্টা ক্লাস করে অর্জন সম্ভব নয়। অথচ জিয়াইর রহমান সেই প্রশিক্ষণের কাজটিই শুধু করেছেন।” ফরেন সার্ভিসের কাজ করার নীতিসিদ্ধ প্রথা আছে। সেক্ষেত্রে যাদের নিয়ােগ করা হয়েছে তাদের শিক্ষাগত যােগ্যতা যাই থাকুক না তাদের অবস্থা দাঁড়াবে পেয়ার আলীদের মতাে ‘ইয়েসে’, ‘নাে’ ‘ভেরি গুড়’ জাতীয় কথাবার্তায়। দূতপুল গঠন। করে জিয়াইর রহমান দলীয়করণ নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনৈতিক রাজনীতিকে কলুষিত আবর্তে ঠেলে দিয়েছেন।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঃ জিয়ার পদক্ষেপ ফারাক্কা ইস্যু
২৪. ১৯৬০ সনের এপ্রিলে ভারত সরকার গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারাজ করার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রধানতঃ কলকাতা বন্দরের ন্যব্যতা বজায় রাখাই ছিলাে এর মূখ্য উদ্দেশ্য এবং নদীর উপর সেতু হিসেবে যােগাযােগ ব্যবস্থাও গড়ে তােলে। ১৯৭০ সনে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ শেষ হলেও। সংযােগ খাল সম্পূর্ণ হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত নদী কমিশন গঠিত। হয়। ১৯৭৪ সনে ১৩ই মে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়। বঙ্গবন্ধুর সময়ে একটি চুক্তির ভিত্তিতে কমপক্ষে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশ পাবে এবং ফারাক্কায় প্রাপ্ত পানির ৮০% ভাগ বাংলাদেশ পাবার অধিকারী হবে শুষ্ক মৌসমে বিশেষ করে ২১ এপ্রিল হতে ৩১শে মে পর্যন্ত, ৪১ দিন। ৭৫ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান ভারত বিদ্বেষ উস্কে দেয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে স্বাধীনতা বিরােধী চক্রকে রাজনীতি করার অনুমতি প্রদান করে। এবং ফারাক্কা চুক্তি করে বঙ্গবন্ধু ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়েছে এই মর্মে ব্যাপক প্রচার, অপ্রচার চালানাে হয়। জিয়াউর রহমান অত্যন্ত ধূর্তার সঙ্গে চীনপন্থী নেতৃবৃন্দকে ভারত বিরােধী প্রচারণায় নামাতে সমর্থ হন। মওলানা ভাসানীকে সামনে রেখে স্বাধীনতা বিরােধী চক্র ও চৈনিক পন্থী ফারাক্কা ইস্যুকে নিয়ে তােলপাড় শুরু করে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বলয়ে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় যে সমস্ত দেশ বিরােধীতা করেছিল তাদের সমর্থন লাভে জাতিসংঘে ফারাক্কা ইস্যু উথাপন করে। কিন্তু জাতিসংঘ হতে বলে দেয়া হয় দু দেশ বসে এর ফয়সালা করুন। ১৯৭৭ সনের নভেম্বর মাসে জিয়াউর রহমান সরকার ভারতের সঙ্গে একটি । চুক্তিতে আবদ্ধ হন। চুক্তি মােতাবেক বাংলাদেশ কমপক্ষে ৩৪ হাজার কিউসেক। পানি শুকনাে মৌসমে পাবে এবং তা এপ্রিল মাসের শেষ দশ দিনে। তিন বছরের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির এই অন্তবর্তীকালীন সময়ে শুকনাে মওসুমে গঙ্গার প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন জরীপ চালাবে। বাংলাদেশের আর্থ। পরিবেশগত ক্ষেত্রে গঙ্গার পানি প্রাপ্যতা জীবন মরণ সমস্যা। জিয়াউর রহমান মুখে যাই বলুন না কেন- ফারাক্কার ন্যায্য পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সমুন্ন রাখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। দেশাইয়ের সফর ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পবিত্র কোরানের আয়াত লেখা সাইনবোের্ড সরিয়ে ফেলা হলাে।
২৫. ১৯৭৯ সনে জাতীয় সংসদে নির্বাচনের পরপরই গঠিত মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করে স্বাধীনতা বিরােধীতাকারী কুখ্যাত শাহ আজিজুর রহমান। নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের একদিন পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মােরারজী দেশাই। তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অটল বিহারী রাজপেয়ী পররাষ্ট্র সচিব মিঃ মেহেতা, প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব শ্রী শংকর, সেচ সচিব মিঃ প্যাটেলসহ ৫৪ সদস্যের একটি স্কুল প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী ছিলেন। ‘৭৬ সনে জিয়াউর রহমান ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ও মােড়ে প্রায় অর্ধশত বড় বড় সাইনবোের্ড টানিয়ে কোরানের আয়াত লিখে দিয়েছিলেন। কোরানের আয়াতের পাশপাশি বাংলায় তার অনুবাদ ছিলাে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মােরারজী দেশাই এর আগমনের আগের রাতে সম’ ঢাকা শহরে স্থাপিত অর্ধশত কোরানের আয়াত সম্বলিত সাইনবাের্ড রাতের অন্ধকারে সরিয়ে ফেলা হলাে। ‘৭৮ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ৭৯ সনের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করার লক্ষ্যেই কোরানের আয়াত সম্বলিত সাইনবাের্ড টানানাে হয়েছিলাে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মােরারজী দেশাই এর আগমনে ভারতের নিকট বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ চেহারা তুলে ধরার জন্য জিয়াউর রহমান কোরানের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেন। ১৫
২৫ বছরের চুক্তি সম্পর্কে
২৬. ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হতে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচারের এক বিরাট হাতিয়ার হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি সম্পর্কে কুৎসা রটনা করতে থাকে। জিয়াউর রহমান ২৫ বছরের চুক্তি সম্পর্কে প্রকাশ্য না বললেও আকারে ইংগিতে এই চুক্তিকে গােপনীয় চুক্তি, ভারতের নিকট দাসত্ব বলতেন। ক্ষমতাসীন হয়ে রাষ্ট্রপতি সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান থেকে তারই মন্ত্রীদের দ্বারা এ ধরনের প্রচারণা চালানাে তা শুধু কূটনৈতিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ নয় বরং তা দেশের ভবমূর্তিকেও ক্ষুন্ন করেছে। কোন চুক্তি দেশের স্বার্থ বিরােধী হলে সরকারের উচিত দেশবাসীকে তা জানানাে। ২৫ বছর চুক্তি কোন গােপন চুক্তি নয়। এই চুক্তির বিবরণ প্রচার করা হয়েছে। এই চুক্তির মধ্যে জাতীয় স্বার্থ বিরােধী কোন অনুচ্ছেদ থাকে তবে চুক্তির শর্ত মােতাবেক আলােচনার ভিত্তিতে তা স্থগিত কিংবা বাতিলযােগ্য। চুক্তিটির জিয়াউর রহমানের সাফারীর পকেটেই আছে। চুক্তিটি সাধারণের প্রকাশ করে বলা হােক কোন্ কোন্ অনুচ্ছেদ ধারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করেছে? জিয়াউর রহমান নিজেই জানেন এবং ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত এই চুক্তির কোন ধারা বা অনুচ্ছেদই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব পরিপী কোন কিছু নেই। জেনে শুনও তিনি ও তার মন্ত্রীবর্গ ২৫ বছরের চুক্তিকে গােলামীর চুক্তি হিসেবে আকার ইংগিতে বা প্রকাশ্যে আখ্যা দিচ্ছেন। পার্লামেন্টে (‘৯৩ সনে) একজন সংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন মন্ত্রী মহােদয় মনে করেন কিনা ২৫ বছর চুক্তি গােলামীর চুক্তি? তার উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব দিয়েছেন-চুক্তির শিরােনামই হলাে এর উত্তর। চুক্তি শিরােনাম হলাে“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভরতীয় সাধারণতন্ত্রের মধ্যে মৈত্রী, সহযােগিতা ও শান্তিচুক্তি”। [পরিশিষ্ট-১০] সীমান্ত তিন বিঘা, বাণিজ্য, চোরাচালান, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা কোন সমস্যাই সমাধান জিয়াউর রহমান করতে পারে নি।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক
২৮, ৫ লাখ অবাঙালী যারা পাকিস্তানকে তাদের মাতৃভূমি ও পাকিস্তানে ফিরে যাবার জন্য ৭২-৭৩ সনে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সােসাইটির নিকট অ’ শন দিয়েছিলাে ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগষ্টের মধ্যে তাদের ১ লক্ষ ৭০ হাজার অবাঙালী প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭৫-এর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ঐ অবাঙালীদের পাকিস্তানে প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হন। মূলতঃ জিয়া এসময় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ১৯৭৭ সনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্তানে সফরে গেলে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তন কর্মসূচীতে রাজী হন। ১৯৭৮ সনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পাকিস্তানে গেলে মাত্র ১৬ হাজার অবাঙালী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৯৮০ সনে পাকিস্তানী পররাষ্ট্র সচীব বাংলাদেশে এলে কৌশলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। জিয়া একজন অবাঙালীকেও পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠাতে পারেননি। এটি ছিলাে বিরাট কূটনৈতিক পরাজয়। পাকিস্তানের নিকট পাওনা সম্পদ
২৯. জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার পাকিস্তানের নিকট ১৯৭১ সনের মূল্যবান অনুসারে ২৪৪৬ কোটি টাকা এবং যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩২৪১ কোটি সর্বমােট ৫,৬৮৭ কোটি টাকা বাংলাদেশকে পরিশােধের জন্য চাপ দেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই চাপ তীব্রতর হয়েছিল। এই ন্যয্য পাওনা টাকা আদায়ের চাপ প্রদানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করেন নি। মােশতাক-জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে প্রথমেই কূটনৈতিক মিশন ও রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করেন। জিয়াউর রহমান ৭৭ সনে পাকিস্তানে গিয়ে এ সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন তুলেননি। জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দেবার এমন নজির বিশ্বে খুবই কম আছে। বর্তমান হিসেবে এই টাকার পরিমাণ ৩০ হাজ৭ কোটি টাকা।
তালপট্টি দ্বীপ
২৭. দক্ষিণ তালপট্টি হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মােহনায় জেগে ওঠা একটি নতুন দ্বীপ। ১৯৭৮ সনের এর আয়তন দু’বর্গ মাইল। ১৯৭০ সনে দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭৮ সনে ভারত দ্বীপটিতে সৈনা নামায়। এ প্রেক্ষিতে ২৭শে মে জাতীয় সংসদে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপে ভরতীয় সামরিক হস্তক্ষেপেরে বিষয়ে উথাপিত মূলতবী প্রস্তাবে অংশ নেয়ার সময় বিরােধী দলীয় সংসদগণ যে কোন মূল্যে বাংলাদেশের ন্যায় সঙ্গত ভূখন্ড রক্ষার সংকল্প ঘােষণা করেন। তারা আরাে বলেন জিয়া সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির জন্যই আজ দক্ষিণ তালপট্টিত্বে ভারতীয় পতাকা উড়ছে।
রাষ্ট্রপতি দুর্বল কণ্ঠ
দক্ষিণ তালপট্টি সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- এ-কথাটা রাষ্ট্রপতি এমন এক মুহুর্তে বলেছেন যখন দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানার প্রশ্ন নিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মতবিরােধ চলছে। বিশেষ করে যে মুহূর্তে ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপে সৈন্য নামিয়েছে সে মুহূর্তে দেশের সার্বভৌম স্বার্থের প্রশ্নে। রাষ্ট্রপতির দেয়া ঐ প্রতিশ্রুিতি নানা কারণেই অর্থবহ। দেশবাসীও স্বাভাবিকভাবে আশা করেছিল রাষ্টপতি যা বলেছেন কা কাজের মধ্যমে বাস্তবে রূপ লাভ করুক।
শ্বেতপত্র নয়ঃ শােকপত্র
এদিকে গত ২৬শে মে ‘৮১ সরকার দক্ষিণ তালপট্টি প্রশ্নে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। শ্বেতপত্রটি অসম্পূর্ণ। তাদের মতে সরকার তার দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য শ্বেতপত্রটি রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ করেছেন। শ্বেতপত্রটি যেহেতু সরকারী দলের রাজনৈতিক স্বার্থে প্রকাশিত হয়েছে, সেহেতু ১৯৭৮ সালের আগে দক্ষিণ তালপট্টি সম্পর্কে কোন তথ্যই শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। বিরােধী রাজনৈতিকদলগুলাে থেকে অভিযােগ তােলা হয়েছে যে, ভারত কর্তৃক দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি দখলের সুযােগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন সরকারই। অভিযােগে আরও বলা হয়, সরকারের ব্যর্থ আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির জন্যই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের ওপরে বাংলাদেশ তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার হারিয়েছে। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপে যেহেতু ভারতীয় পতাকা উড়ছে সেহেতু এই দ্বীপটিকে ঘিরেই ভারত কিছু বাড়তি আর এই সময়ের সুযােগ নিয়ে যদি দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা একমাত্র ভারতই ভােগ করে-তাহলে একবার যা দখল হয়ে যায় তা আর ফেরত পাওয়া যায় না, এই রূঢ় সত্যটি সামনে রেখে বলতেই হয়, দক্ষিণ তালপট্টির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ভাষাটি নিতান্তই দুর্বল!’ জনৈক পার্লামেন্টারিয়ানের ঠাট্টা অনুযায়ী সরকারের শ্বেতপত্রটি শােকপত্র মাত্র। ১৯শে মে এবং ২৬শে মে এ-দুদিন দৈনিক পত্রিকাগুলােয় প্রকাশিত দক্ষিণ তালপট্টির মানচিত্র দু’ রকম দেখানাে হয়েছে। ফলে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোতসহ আন্তর্জাতিক সীমানা এবং অন্যান্য অবৃস্থান চিহ্নিতকরণে আকাশপাতাল ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। ১৯শে মে দৈনিক পত্রিকাগুলােয় প্রকাশিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মানচিত্রে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোত এবং আন্তর্জাতিক সীমানা এ-দুই-ই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মধ্য-অঞ্চল বরাবর দেখানাে হয়েছে। সীমানা। পরিমাপের জন্য স্কেল সংকেতও ঐ মানচিত্রে দেখানাে হয়নি। দ্বীপটির ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের কাছে আগেই নতজানু হয়ে আছে। ২৬শে মে সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত দক্ষিণ তালপট্টির আরও একটি মানচিত্র দৈনিক পত্রিকাগুলােয় প্রকাশিত হয়। এই মানচিত্রের সঙ্গে প্রথমবার প্রকাশিত মানচিত্রের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। দ্বিতীয়বার প্রকাশিত মানচিত্রে হাড়িয়াডাঙ্গা L6 নদীর সদ্যস্রোত এবং আন্তর্জাতিক সীমানা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপেরও কয়েক মাইল। . পশ্চিম দিয়ে দেখানাে হয়েছে। এছাড়া সীমানা পরিমাপের জন্য এই মানচিত্রে এক ইঞ্চিকে চার মাইল পর্যন্ত ধরা হয়েছে। ২৬শে মে প্রকাশিত এই মানচিত্রে স্পষ্টতই প্রমাণ করে ভৌগােলিক অবস্থানগত দিক থেকে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি বাংলাদেশের।
দক্ষিণ তালপট্টির এই ঘটনা রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছিলাে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কন্যা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দেশের মানুষের মধ্যে যে জাগরণ জিয়াউর রহমান লক্ষ্য করেছিলেন তা ভিন্ন খাকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যই তালপট্টি প্রশ্নটি জাতির সামনে তােলা হয়েছিলাে। এটা প্রমাণিত তালপট্টি দ্বীপে বহু পূর্বেই ভারতের পতাকা উডডীন হয়েছিলাে- জিয়া তখন টু শব্দ করেনি। এখনাে কেউ করছেনা। শুধু তাই নয় জিয়া সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধুর সময়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির যে পরিমাণ ছিলাে জিয়ার আমলে তা প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
সূত্র : জেনারেল জিয়ার রাজত্ব – অধ্যাপক আবু সাইদ