You dont have javascript enabled! Please enable it!

রঙিন চশমা ঃ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি

১. জনৈক বুদ্ধিজীবি এক সেমিনারে বলেছিলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দু’জনই চোখে রঙিন চশমা ব্যবহার করেন। তাই তাদের কাছে। দেশের সবকিছু রঙিন আর উজ্জ্বল মনে হয়। রঙিন চশমার আড়ালে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লুটার চেষ্টা করেছেন জিয়াউর রহমান ও তার সরকার।

ছিনতাই রাহাজানির স্বাধীনতা

রাহাজানির ভয়ে পথচারী সন্ত্রস্ত, ডাকাতির ভয়ে গ্রামবাসী ভীত, যান-পরিবহনে হামলা, হাট-বাজার লুট, হত্যা-গুম-অপহরণ-ধর্ষণ এসব জিয়ার রাজত্বে। প্রতিদিনের ঘটনা। জিয়াউর রহমান রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোপলিটন সিটি হিসেবে ঘােষণা দিয়ে। বলেছেন, ঢাকা হবে অপরাধমুক্ত এলাকা। কিন্তু অপরাধ কমেনি-মুক্ত হওয়া তাে। দূরের কথা। ছিনতাই রাহাজানি অস্বাভাবিভাবে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ড, দুস্যতা, অপহরণ, ধর্ষণ, অন্যান্য অপরাধ বাড়ছে। পুলিশের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ঢাকা শহরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে বেড়ে গেছে যা ১৯৭৫ সালের চেয়েও বেশি। তথ্যে জানা যায়, রাজধানীতে ১৯৮০ সালে ৬৮টি হত্যাকাণ্ড, ১৪টি ডাকাতি, ৪৭টি দস্যুতা, রাহাজানি ও ছিনতাই, ৪৯৫টি সিধেল চুরি, ৩, ১০২টি চুরি, ৮৩৭টি দাঙ্গ-হাঙ্গামা, ২১৬টি অপহরণ, ৬৩টি বে-আইনী অস্ত্র আইনের। অপরাধ ও ৪,৯০১টি বিভিন্ন ধরণের অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরগুলােয় রাজধানীতে শুধুমাত্র ছিনতাই -রাহাজানি সংখ্যা হচ্ছে ১৯৭৯ সালে। ৩৮টি, ১৯৭৮ সালে ৫৫টি , ১৯৭৭ সালে ৬০টি, ১৯৭৬ সালে ১৯৮টি।

পুলিশের পরিসংখ্যানে ছিনতাই রাহাজানি সহ অপরাধের যেসব চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তা প্রকৃত ঘটনার ভগ্নাংশ মাত্র বর্তমানে ছিনতাই-রাহাজানিসহ বিভিন্ন রকম অপরাধের শতকরা ৭৫ভাগ ঘটনাই থানায় রেকর্ড হয় না।

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

৪. ৭ই মে সন্ধ্যা ১৯১৮ রাতে প্রকাশ্যে ঘাতকদের শাণিত অস্ত্রের নিমর্ম আঘাতে প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আবদুর রহমান ও প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক ফেরদৌস আলম রক্তে মহানগরীর রাজপথ রঞ্জিত হলাে। ৮ই মে স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত পুলিশের বক্তব্য অনুসারে দেখা গেছে, যেহেতু ঘােড়াশাল শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক নেতা আবদুর রহমানের নিজস্ব এলাকা সেহেতু তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনাে পক্ষ এ-হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। ঘােড়াশাল, কাঞ্চন, পলাশ শ্রমিক বেল্টের নাড়ীনক্ষত্র যাদের নখদর্পণে তারাও বলবেন, পুলিশ অমূলক সন্দেহ পােষণ করেনি। গত ১লা মে ঘােড়াশালে অনুষ্ঠিত বিএনপি সমর্থিত একটি জনসভায় রহমানের আয়ুকে সাতদিনের সময় দিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হয়েছিলাে। ৬ই মে, বুধবার। বিকেলে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে বাংলাদেশ একা মােহরার (নকলনবীশ) এসােসিয়েসেনের ৪৭ দিন ধর্মঘটজনিত পরিস্থিতিতে সভা। ১৭টি জেলা প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। ঐ সভায় জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি জনাব আবদুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এবং তিনি একা মােহরারদের ন্যায়সঙ্গত দাবী-দাওয়া মেনে নেওয়ার সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। সভা চলাকালীন বিএনপি সমর্থিত একট্টা মােহরার এসােসিয়েসসেরন কর্মকর্তা দাবিদার জনৈক আবুল হােসেন কয়েকজন সমর্থকসহ সভাস্থলে আগমন করেন। তারা অনেক যুক্তিহীন প্রস্তাব দেন। বিএনপি সমর্থিত একট্টা মােহরার এসােসিয়েশন রেজিষ্ট্রীকৃত নয়।। এবং অবৈধ। ঐ দিন রাতে জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একা মােহরারদের আলােচনা সভার দ্বিতীয় পর্যায়ে আবুল হােসেন গমন করলে তাকে বলা হয় আপনারা এ আলােচনায় থাকতে পারে না। এরই প্রেক্ষিতে আবুল হােসেন এবং তার সহযােগীরা উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, “ এ-অপমান আমরা সহ্য করবাে । প্রতিশােধ আমরা নেবােই।”

৫. গুপ্ত হত্যা হয়েছে কয়েক হাজার কিনারা হয়নি। বিচার হয়নি। আসামী ধরা পড়েনি। দুলাল-রহমানকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতা মুনিরকে হত্যা করা হয়েছিলাে। প্রকাশ্য দিবালােকে হত্যা করা হয়েছিলাে কলীগঞ্জের জাসদ নেতা আলী হােসেনকে। ক’দিন আগে হত্যা করা হয়েছে রাজশাহীর সাম্যবাদী দলের আবুল কাশেমকে। মনে হচ্ছে গােটা দেশে যেন মানুষ হত্যার পারমিট দেয়া হয়েছে। এদের বিচার হবে না। এরা ধরা পড়বেনা। কেননা এরা ক্ষমতাসীন আশ্রয়ে লালিত এবং আশ্রিত।

জিয়ার রাজত্বে সন্ত্রাস

৬. অস্ত্র (সংশােধনী) আইন বেআইনী অন্ত্র উদ্ধারের চাইতে নিরীহ জনগণের উপর নির্যাতন বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং সরকার এ আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। জাতীয় সংসদে বিরােধী সদস্যদের প্রতিবাদের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শাহ-আজিজুর রহমান বিলটির সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। হত্যা লুণ্ঠন নারীধর্ষণ একেবারেই শেষ হয়েছে। এমন দাবী করিনা। যা আছে তা দূর করাই এ আইনের উদ্দেশ্য। এ আইনের বিরােধীতা করতে গিয়ে সাম্যবাদী দলের জনাব তােয়াহা উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন ‘রাষ্ট্রপতি জিয়া বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন।’ গণফ্রন্টের জানাব এ, এস, এম, সােলায়মান বলেছেন, ‘দেশে এখন ত্রাসের রাজত্ব চলছে, গ্রামাঞ্চল ছাড়াও খােদ রাজধানীতেই ডাকাতি রাহাজানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম লীগের জনাব আলমাস হােসেন বলেছেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে আইন প্রয়ােগ করতে পারবেন। কেননা পায়ের নীচে মাটি নেই তাই সরকার যুব কমান্ড গঠন করে। অস্ত্র সরবরাহ করেছেন।’ মুসলিম লীগের জনাব এম,এ, মতিন বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের খােলায় বহু মূল্যবান জীবন নষ্ট হয়েছে। একথা সরকারও জানেন কিন্তু কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কেউ তা জানে না। আইডিএল-এর জনাব মােজাম্মেল বলেছেন, ‘এক শ্রেণীর দুস্কৃতকারী বিশেষ রাজনৈতিক দলের লেলিয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেননা অস্ত্রধারকারী লােকেরা তাদের বন্ধু।

পুলিশের রিপাের্ট

৭. ১৯৭৯ সালে সারা দেশে এক হাজার ৬শ ৫০টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৭৮ সালের তুলনায় হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ শতকরা ১৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭৯ সালে থানায় এজাহারকৃত মােট অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৪’শ; এর মধ্যে অপহরণ ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ ২৫ হাজার থেকে বেড়ে ২৮ হাজার দাড়িয়েছে। ১৯৭৮ সনে দেশে এক হাজার ১শ ৪১ টি ডাকাতি, এক হাজার ৬টি রাহাজানি, ৮ হাজার ৭শ ২১টি সিঁদেল চুরি, ১হাজার ৪শ ৫৮টি চুরি, এক হাজার ৬শ’ ৬৮টি হত্যা, ৭ হাজার ৮শ’ ২১টি সংঘর্ষ, ২৮ হাজার ৬শ’ ৩৬টি বিভিন্ন ধরনের অপরাধ । সংঘটিত হয়েছে। গত বছর গুপ্ত হত্যার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। ৭৮ সালে থানার এজাহারেকৃত গুপ্ত হত্যার সংখ্যা ছিল ৫০টি, ৭৯ সালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৭টিতি দাঁড়ায়। এছাড়া গত বছরের আরাে উলেখযােগ্য বিষয় হলাে গুপ্ত সংগঠনগুলাের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়ােজিত লােকদের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ।

প্রিন্সেস সংস্কৃতি ও যুব সমাজকে ধ্বংসের ব্লু-প্রিন্ট

৬. ছিনতাই, রাহাজানির জন্য অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি অপসংস্কৃতির একটা মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। জিয়াশাহীর বাংলাদেশী সংস্কৃতির প্রায় পুরােটা অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির চর্চা ও পৃষ্টপােষকতা নব্য লুটেরা ধনিক শেণী এদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের একটা বড় অংশ বিদেশী সংস্কৃতি নামে দেশীয় সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন করছে। বাইরে থেকে সংগৃহীত টাকা দেশে আসছে, টাকা উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা-হতাশা সামাজিক অবক্ষয়। নব্য গড়ে ওঠা ধনীরা তাদের অর্থ উৎপাদন-ব্যবস্থা, উৎপাদনের সম্পর্ক পাল্টে দেবার জন্য ব্যবহার করছে না। তারা প্রাত্যহি • জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মের মধ্যে দিয়ে শুধু তাদের হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠার অবস্থানকে দৃঢ় করতে চাচ্ছে। এর সঙ্গে টিভি আর চলচ্চিত্রের ভূমিকা যুক্ত। চলচ্চিত্র আর টিভির অধিনে যা দেখানাে হয় তার ক্ষতিকর দিকটাই বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। জনজীবনের এদুটোরই ভূমিকা অপরিসমি। চলচ্চিত্র এবং টিভির প্রধান উপজীব্য হিশেবে ইদানীং খুন খারাপি, দুর্ধর্ষতা, ভয়াবহতা ইত্যাদি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এতে তরুণ আর যুব সমাজ আয়ত্ত করছে অপরাধমূলক কাজকর্মের নিত্য নতুন নব কৌশল। নয় অশালিন পত্রিকা, অশ্লীল ছবি সহ বিভিন্নরকম আপত্তিকর এ্যালবাম-ভিউকার্ড এদেরকে ভীষণ উৎসাহিত করে। র’ ফিল্ম দেখার ব্যাপারেও এরা বেশ উৎসাহিত।

ব্লু ফিল্ম আকর্ষিত দর্শক

১০, এ সম্পর্কে ২১ শে এপ্রিল ‘৮১ রােববার এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে | রফিল দর্শক আকর্ষণ করে বেশি। একটা সাধারণ ছবি দেখার জন্যে যে পরিমাণ দিবালােকে হত্যা করা হয়েছিলাে কলীগঞ্জের জাসদ নেতা আলী হােসেনকে। ক’দিন আগে হত্যা করা হয়েছে রাজশাহীর সাম্যবাদী দলের আবুল কাশেমকে। মনে হচ্ছে গােটা দেশে যেন মানুষ হত্যার পারমিট দেয়া হয়েছে। এদের বিচার হবে না। এরা ধরা পড়বেনা। কেননা এরা ক্ষমতাসীন আশ্রয়ে লালিত এবং আশ্রিত।

জিয়ার রাজত্বে সন্ত্রাস

অস্ত্র (সংশােধনী) আইন বেআইনী অন্ত্র উদ্ধারের চাইতে নিরীহ জনগণের উপর নির্যাতন বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং সরকার এ আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। জাতীয় সংসদে বিরােধী সদস্যদের প্রতিবাদের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শাহ-আজিজুর রহমান বিলটির সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। হত্যা লুণ্ঠন নারীধর্ষণ একেবারেই শেষ হয়েছে। এমন দাবী করিনা। যা আছে তা দূর করাই এ আইনের উদ্দেশ্য। এ আইনের বিরােধীতা করতে গিয়ে সাম্যবাদী দলের জনাব তােয়াহা উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন।’ গণফ্রন্টের জানাব এ, এস, এম, সােলায়মান বলেছেন, ‘দেশে এখন ত্রাসের রাজত্ব চলছে, গ্রামাঞ্চল ছাড়াও খােদ রাজধানীতেই ডাকাতি রাহাজানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম লীগের জনাব আলমাস হােসেন বলেছেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে আইন প্রয়ােগ করতে পারবেন। কেননা পায়ের নীচে মাটি নেই তাই সরকার যুব কমান্ড গঠন করে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন।’ মুসলিম লীগের জনাব এম,এ, মতিন বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের খােলায় বহু মূল্যবান জীবন নষ্ট হয়েছে। একথা সরকারও জানেন। কিন্তু কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কেউ তা জানে না। আইডিএল-এর জনাব মােজাম্মেল বলেছেন, ‘এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারী বিশেষ রাজনৈতিক দলের লেলিয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেননা অস্ত্রধারকারী লােকেরা তাদের বন্ধু।

পুলিশের রিপাের্ট

৭. ১৯৭৯ সালে সারা দেশে এক হাজার ৬শ ৫০টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ৭৮ সালের তুলনায় হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ শতকরা ১৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭৯ সালে থানায় এজাহারকৃত মােট অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৪’শ; এর মধ্যে অপহরণ ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধ ২৫ হাজার থেকে বেড়ে ২৮ হাজার দাড়িয়েছে। ১৯৭৮ সনে দেশে এক হাজার ১শ ৪১ টি ডাকাতি, এক হাজার ৬টি রাহাজানি, ৮ হাজার ৭শ ২১টি সিঁদেল চুরি, ১হাজার ৪শ ৫৮টি চুরি, এক হাজার ৬শ’ ৬৮টি হত্যা, ৭ হাজার ৮শ’ ২১টি সংঘর্ষ, ২৮ হাজার ৬শ’ ৩৬টি বিভিন্ন ধরনের অপরাধ । সংঘটিত হয়েছে। গত বছর গুপ্ত হত্যার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। ৭৮ সালে থানার এজাহারেকৃত গুপ্ত হত্যার সংখ্যা ছিল ৫০টি, ৭৯ সালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৭টিতি দাঁড়ায়। এছাড়া গত বছরের আরাে উলেখযােগ্য বিষয় হলাে গুপ্ত সংগঠনগুলাের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়ােজিত লােকদের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ।

প্রিন্সেস সংস্কৃতি ও যুব সমাজকে ধ্বংসের ব্লু-প্রিন্ট

৬. ছিনতাই, রাহাজানির জন্য অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি অপসংস্কৃতির একটা মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। জিয়াশাহীর বাংলাদেশী সংস্কৃতির প্রায় পুরােটা অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির চর্চা ও পৃষ্টপােষকতা নব্য লুটেরা ধনিক শেণী এদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের একটা বড় অংশ বিদেশী সংস্কৃতি নামে দেশীয় সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন করছে। বাইরে থেকে সংগৃহীত টাকা দেশে আসছে, টাকা উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা-হতাশা সামাজিক অবক্ষয়। নব্য গড়ে ওঠা ধনীরা তাদের অর্থ উৎপাদন-ব্যবস্থা, উৎপাদনের সম্পর্ক পাল্টে দেবার জন্য ব্যবহার করছে না। তারা প্রাত্যহি , জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে। প্রতিটি কর্মের মধ্যে দিয়ে শুধু তাদের হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠার অবস্থানকে দৃঢ় করতে চাচ্ছে। এর সঙ্গে টিভি আর চলচ্চিত্রের ভূমিকা যুক্ত। চলচ্চিত্র আর টিভির অধিনে যা দেখানাে হয় তার ক্ষতিকর দিকটাই বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। জনজীবনের এ । দুটোরই ভূমিকা অপরিসমি। চলচ্চিত্র এবং টিভির প্রধান উপজীব্য হিশেবে ইদানীং খুন খারাপি, দুর্ধর্ষতা, ভয়াবহতা ইত্যাদি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এতে তরুণ আর যুব সমাজ আয়ত্ত করছে অপরাধমূলক কাজকর্মের নিত্য নতুন নব কৌশল। নয় অশালিন পত্রিকা, অশ্লীল ছবি সহ বিভিন্নরকম আপত্তিকর এ্যালবাম- ভিউকার্ড এদেরকে ভীষণ উৎসাহিত করে। বু ফিল্ম দেখার ব্যাপারেও এরা বেশ উৎসাহিত। ফিল্ম আকর্ষিত দর্শক ১০. এ সম্পর্কে ২১ শে এপ্রিল ‘৮১ রােববার এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে

র-ফিলা দর্শক আকর্ষণ করে বেশি। একটা সাধারণ ছবি দেখার জন্যে যে পরিমাণ

দর্শক সমাগম হয় ব্লু ফিল্ম দেখার জন্য হয় দ্বিগুণ, তিন গুণ বেশি। হলিউড, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন ডেনমার্ক থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুর, গ্রীস, ইতালি ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লু ফিল্ম দেশে আসছে। বিদেশী ছবি যেমন বায়ােনিক ওম্যান-খ্যাত লিণ্ডসে ভাগনার এবং চলচ্চিত্রের কল্যাণে সােফিয়া লরেন, ব্রিজিত বার্দোত-এর রূপ যৌবন তারা দেখতে পাচ্ছে। ভিসিআর ব্লু ফিল্ম এ নগ্ন নরনারীর যৌনফেলী দেখার জন্য দর্শকদের বেশির ভাগই থাকে তরুণ ও কিশাের। বলাবাহুল্য সংস্কৃতি চর্চার নামে এসব অপসংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তৈরি করে প্রকারান্তরে দেশের ভবিষ্যৎ বলে খ্যাত তরুণ সমাজকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে অন্ধকারে। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকরা এসব চলচ্চিত্র টিভি ভিসিআর এর মাধ্যমে খুন-খারাপি দুর্ধর্ষতা ভয়বহতা নগ্নতা প্রত্যক্ষ করেই প্রভাবিত হয়। অনেকক্ষেত্রে তাদেরই কেউ কেউ ছিনতাই রাহাজানিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে। এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য। এসব ছাড়াও সংস্কৃতিচর্চা নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে খেলা, ক্রিয়াকর্ম চালানাে হচ্ছে। বিশেষ করে নগ্ননৃত্য, জুয়া হাউজি ইত্যাদি সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে কলুষিত করছে সন্দেহ নেই।”

১১. ‘৮১ ফেব্রুয়ারী মাসের ৪ তারিখে বগুড়া প্রদর্শনীতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

প্রদর্শনীর যাত্রামঞ্চের চতুর্দিকে লােক উপচাননা। দর্শকদের আসনে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বেশ ক’জন উপস্থিত। সাধারণ দর্শকদের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিলাে গ্রাম থেকে আসা। অল্প বয়সী তরুণ। রাত ১২টায় যাত্রাগান শুরু হলাে । প্রথমে যন্ত্রসঙ্গীত বেজে উঠলাে তালও ক্রমে ক্রমে দ্রুত হয়ে উঠছে। এ অবস্থায়। খুবই সামান্য পােশাক, বলতে গেলে অর্থ নগ্ন অবস্থায় রূপসী তরুণী লাকী খান মঞ্চে উঠে এলাে। শুরু হলাে নাচ। দ্রুত থেকে আরও দ্রুত হয়ে উঠছে তার পদচালনা, বাহু সঞ্চালন। তার অঙ্গ-ভঙিমার মধ্যে দিয়ে অবশেষে বেরিয়ে এলাে অশ্লীল ইঙ্গিত; নিতম্ব, স্তন ইত্যাদির ঢেউ খেলানাে নৃত্য ইতিমধ্যে দর্শকদের মধ্য উত্তেজনা আর চিৎকার। একই সঙ্গে নর্তকীর দিকে টাকা পয়সা ছুঁড়ে মারার দৃশ্য। এক রকম জমজমাট প্রতিযােগিতা। কেউ কেউ তাে বাঁশের বেড়া ডিঙিয়ে নর্তকীর দিকে এগুতেও লাগলাে। ঠিক এ সময় হঠাৎ পুলিশের ধ্যান ভাঙলাে। শুরু হলাে লাঠিচার্জ।

১২. মার্চের ৩রা তারিখে ইত্তেফাকে প্রকাশিত অন্য এক খবরে জানা যায়, ভৈরবেও অনুরূপ অর্থাৎ প্রদর্শনীতে নগ্ন নৃত্য-জুয়া ইত্যাদি নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারে তাে পর্যটন মেলায় নগ্ন নৃত্যকে কেন্দ্র করে অবশেষে আগুন ধরিয়ে স্টল। চেঁচ সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

১৩. জিয়াশাহীর ছত্রছায়ায় সংস্কৃতি চর্চার নামে দেশে অসামাজিক কার্যকলাপ যেভাবে বিস্তার লাভ করছে তাকে একমাত্র সন্ত্রাসের সঙ্গেই তুলনা করা যায় সংস্কৃতির। খােলসে মােড়া অপসংস্কৃতির দৌরাত্ম্য বলতে গেলে দেশব্যাপী ছেয়ে আছে। পহেলা বৈশাখ পালন করা নিয়েও ঘটেছে দু’টি অপ্রীতিকর ঘটনা। এই দু’টি ঘটনার জের অবশেষে অনেকেই চমকিয়ে দিয়েছে। কমবেশি ভাবিয়েছে। ঘটনা দু’টি ঘটেছে ঢাকা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পহেলা বৈশাখ পালন করা নিয়ে ছেরাে মেয়েদের হলে চড়াও হয়েছে। অভিভাবকরাও সন্ত্রস্ত।

১৪. এগুলাে কোনাে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-এই মতামত ব্যক্ত করে সমাজের শীর্ষস্থানীয় এক জন ব্যক্তি বলেছেন, বগুড়া, ভৈরব, কক্সবাজার কিংবা ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাগুলাে জাতির সম্মান আর মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে হেয় করেছে। তারা মনে করেছেন, এসব অবশ্যই গুরুত্বের সংগে বিবেচিত হওয়া উচিত। কিন্তু তবুও সরকার নীরব-নির্বিকার। জিয়াউর রহমান মুখে বলছেন শােষণ আর অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার কথা। কিন্তু কাজে তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে।

পুলিশ ভাড়ায় পাওয়া যাবে

১৫. ১৯৮০ সালের সরকারী দৈনিকে ‘আর্মস গার্ড এভেইলএবল অন পেমেন্ট শিরােনামে একটা খবর প্রকাশ হয়েছিল। শিরােনামটি বাংলা অর্থ গিয়ে দাড়ায় ভাড়ায় পুলিশ পাওয়া যায়। নিরপত্তা বিধানের জন্যেই এই ব্যবস্থা। অর্থাৎ দেশে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলেই টাকা খাটিয়ে পুলিশ ভাড়া নেয়ার একটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দেশে ছিনতাই রাহাজানিসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে তাই নিরাপত্তা বিধানের জন্য ভাড়ায় পুলিশী ব্যবস্থা। কিন্তু জিয়াশাহী বলছে সব ঠিক আছে। আজ চতুর্দিকে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, নিরাপত্তার ভীষণ অভাব, ছিনতাই-রাহাজানি লেগেই আছে। সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে পুলিশ ছিনতাই রাহাজানি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন মহল থেকেও অভিযােগ ওঠেছে যে, কিছু কিছু পুলিশকর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। দিনরাত বলতে কিছু নেই, যখন তখন আসামী ধরার নাম করে পুলিশ নিরীহ জনগণের ওপর চড়াও হয়। গত ৮১ সনের ৮ই ফেব্রুয়ারী দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত একটা খবরেও স্বরাষ্টমন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই উদ্বেগের কারণ আর কিছুই নয়, পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।

১৬. বরগুনার হতভাগ্য নকুল চন্দ্রের কথা। নকুল চন্দ্রকে একদিন মর্মান্তিক এবং পৈশাচিক বর্বরতার মধ্যে চোখের পানি ভাসাতে হয়েছে। গভীর রাতে পুলিশ তার বাড়িতে হানা দেয়। নকুল চন্দ্রের অপরাধ সে গরীব এবং অসহায়। তাই তার সামনেই পুলিশের লােকেরা স্ত্রী এবং কন্যাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ এবং নির্যাতন করে। স্বামী এবং পিতা হয়ে নকুল চন্দ্র সেদিন স্ত্রী এবং কন্যার ধর্ষিত হওয়ার করুণচিত্র। চোখের পানিতে আড়াল করতে চেয়েছিলাে, কিন্তু পারেনি।

১৭. ৮১ সনের পহেলা মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশিত অন্য এক খবরেও অনুরূপ এক ঘটনার কথা জানা যায়। গভীর রাতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় একটি আবাসিক হােটেলে কর্তব্যরত পুলিশের কক্ষ থেকে একজন গৃহবধুকে উদ্ধার করা হয়। গৃহবধূকে উদ্ধার করার পর ঐ মহিলা জানায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ পুরুষ বেশে। পুরুষের পােশাক পরে একটা ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে আসছে। ঘটনার দিন রাত এগারােটায় বাসা ফেরার পথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পৌঁছলে কনস্টেকল হঠাৎ এসে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে সঙ্গে করে হােটেলের গার্ড রুমে নিয়ে আসে। এবং ধর্ষণ করে। কিছুদিন আগে মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে একটি কিশােরীকে ফঁাড়িতে ধরে এনে ধর্ষণ করা হয়।

১৮, ৮১ সনের ১০ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর। খবরটি হচ্ছে ছিনতাইয়ের অভিযােগে পুলিশ নায়েক গ্রেফতার। ছিনতাই করার সময় মেট্রোপলিটান পুলিশের আর্মড ফোর্সের একজন নায়েক গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করছে। একই দিনে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযােগে একজন ট্রাফিক কনস্টবলকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রথম ঘটনাটি ফুলবাড়িয়া সেন্ট্রাল বাসডিপাের কাছে ঘটে। শহীদুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি কুমিল্লা যাওয়ার জন্য। রাতে ফুলবাড়িয়া বাস ডিপােয় আসে। নায়েক ইদ্রিস চৌধুরী (৭২১) হঠাৎ এসে। তাকে তল্লাশী করার নাম করে রিক্সায় তােলে। এবং পরে ভদ্রলােকের টাকা পয়সা এবং ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শহীদুল ইসলাম এই সময় চিৎকার। শুরু করলে আশেপাশের লােকজন ছুটে আসে। ইদ্রিস আলী গ্রেফতার হয়। দ্বিতীয়। ঘটনাটি হচ্ছে, প্রমােদবালাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরাফেরা করায় রমনা পুলিশ আহমদ। আলী নামক একজন ট্রাফিক পুলিশকে গ্রেফতার করে।

অপরাধ ’৭৫ সনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী

১৯. জিয়াউর রহমান ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা শহরে ছিনাতই রাহাজানিসহ অন্যান্য অপরাধ রােধ করার জন্য ১৯৭৬ সালে ১লা ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটান পুলিশবাহিনী। গঠন করে। তবু দেখা যায় ছিনতাই-রাহাজানির সংখ্যা বাড়ছেই এবং তা এখন। ১৯৭৫ সালের কয়েক গুণ বেশি। বর্তমানে মেট্রোপলিটান পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারসহ ৯ হাজার পুলিশ রয়েছে। পুলিশের দেয়া এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ঢাকা শহরে অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিনতাই রাহাজানিসহ নানারকম অপরাধ বেড়েছে। অপরাধের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বাংলাদেশ সংসদে দেশের চিত্র

২০. ৪ মাসে ১৩৫টি নারী হত্যু ও ১৩৪টি নারী অপহরণ ।। ৩ মাসে ৪৩২টি খুন ।

মদের দোকান বাড়ছে। হিজবুল বহরের জন্য প্রতিদিন ৭৫ হাজার টাকা গচ্চা। জাতীয় সংসদে জুন ১৯৮০ সনে সংসদ সদস্যদের উথাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীরা যেসব তথ্য প্রকাশ করছেন, তাতে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির এক নাজুক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দেওয়া কতগুলাে তথ্য এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলাে :

১৯৭৫ সালের পর থেকে দেশে মদের দোকানের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধুমাত্র রংপুর জেলায় যেখানে ১৯৭৫ সালে নদের দোকান ছিল ৬টি, ১৯৮০ সালে তা এসে দাড়িয়েছে ১৭টিতে।

জাহাজ চলাচল মন্ত্রী জানিয়েছেন যে, হজ্ব যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত “হিজবুল বহর” জাহাজটির জন্য ৭৮-৭৯ সালে ১ কোটি ২০লাখ ৭০ হাজার টাকা লােকসান দিতে হয়েছে এবং জাহাজটি পােষার জন্য প্রতিদিন ৭৫,০০ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে বর্তমানে কর্মরত ৭৪ জন বিদেশীর জন্য ৭৮-৭৯ সালে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, গত পাঁচ বছরে ’৭৬ সন থেকে ‘৮০ সন পর্যন্ত ৪শ’ ২৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ২৭ জন কয়েদী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জামালপুর কারাগারে বর্তমানে ২২৬ জন কয়েদী রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র ৭৯ সনে ঢাকা শহরে ৪৫টি হত্যা, ৭টি ধর্ষণ, ২৯টি ডাকাতি, ৩৪টি ছিনতাই এবং ১৯৫টি অপহরণ সংঘটিত হয়েছে। ‘৮০ সালের মাত্র সাড়ে ৪ মাসে ঢাকা শহরে ৯৯টি হত্যা, ১১টি ছিনতাই ও ৩৩ জন অপহৃত হয়েছে। ১৯৮০ সনে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মােট ১৩৫টি নারী হত্যা ও ১৩৪টি নারী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরে ১২টি লঞ্চ ডাকাতি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে মােট ৪৩২টি খুন হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। গত বছরের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় এ বছরের খুনের সংখ্যা ৬১টি বেশী।।

সূত্র : জেনারেল জিয়ার  রাজত্ব  – অধ্যাপক আবু সাইদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!