You dont have javascript enabled! Please enable it!

আইয়ুবের সাথে ৫ বছর ভাসানীর দালালী

আইয়ুবের সাথে দালালী করতে মওলানা ভাসানীর দুজন এজেন্ট ছিল। একজন পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর আমীর মোহাম্মদ খান। তিনি কালাবাগের নবাব নামে পরিচিত। আরেকজন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রী দেওয়ান আব্দুল বাসিত ইনি সিলেটের। পূর্ব পাকিস্তানের এজেন্ট কেন মোনায়েম খান হল না। শুরুতে মোনায়েম খানের সাথে ভাসানীর সম্পর্ক হয়নি ৬৩ এর চীন সফরের পর থেকে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ৬৪ সালের শুরুতে মোনায়েম খান পয়গাম নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তাতে মুসলিম লীগের বাহিরে অন্য দলের সংবাদ থাকতো না। থাকলেও খুব বড় প্রোগ্রাম হলে ক্ষুদ্রাকারে থাকতো। ৬৫ সালের মাঝামাঝি থেকে এ পত্রিকা ভাসানীর মুখপাত্রে পরিনত হয়। আইয়ুবের পতনের পর এ পত্রিকা পড়লে মনে হবে এটি ভাসানীর মালিকানাধীন পত্রিকা। এবার দেওয়ান বাসিত সম্পর্কে বলি। মওলানা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ছিলেন আসামে আদম স্থানান্তরকারী। তিনি সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ থেকে আসামে মুসলমান পুনর্বাসন করতেন। আগের যাওয়া মুসলমান এবং মওলানার দ্বারা যাওয়া মুসলমানেরা একসময় আদি আসামীয় (অহমিয়) মুসলমানের সমান হয়ে যায়। ভাসানী ছিলেন অভিবাসিত মুসলমানদের নেতা। ১৯৪৬ নির্বাচনের আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন স্যার সাদুল্লাহ। ভাসানীর নেতৃত্বগুন সাদ উল্লাহ্‌র পছন্দ হয়। তিনি ১৯৪৩ সনের মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সাদুল্লাহর প্রভাবে একেবারে তৃনমূল থেকে সভাপতি হয়ে যান। আস্তে আস্তে ভাসানী সকল লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। এদের মধ্যে ছিলেন তখনকার এমএলএ দেওয়ান বাসিত আলী মাহমুদ আলী প্রমুখ।

সিলেট পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার পর বাসিত নাজিম উদ্দিনের সমর্থক হয়ে রাজনীতি করতে থাকেন। নাজিম উদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা অর্জনে ব্যার্থ হয়ে ভাসানী মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। দু জন দু দলে থাকলেও তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। আইউব ক্ষমতা গ্রহনের পর ভাসানি গ্রেফতার হন কিছুদিন পর আইউব ধানমণ্ডির একটি বাড়ীতে অন্তরীন হন। সরকার উক্ত বাড়ীর ভাড়া এবং তার পরিবারের সকল খরচ বহন করে। সরকার এ মর্মে নির্দেশনা দেয় ভাসানী ইচ্ছা করলেই মুক্ত হতে পারবে কিন্তু ভাসানী স্বেচ্ছা মুক্তি নিতে এক বছরের অধিক সময় নেন। মুক্তি পয়ে তিনি সরকারী প্রতিনিধিদলের নেতা হয়ে চীন সফর করেন। এ সফরে তার মাইন্ড পরিবর্তন হয় তিনি প্রো সোভিয়েত থেকে প্রো চীনে পরিনত হন। ফিরে এসে মওলানার জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আসে পূর্ব বাংলায় তিনি ফকিরা স্টাইলে চলাফেরা খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতেন কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে তিনি অভিজাত জীবন যাপন করতেন। তিনি বিমান, ট্রেনে প্রথম শীতাতপ সেলুন ব্যাবহার করতেন অভিজাত হোটেলে থাকতেন। এসব খরচ সরকার থেকে কালাবাগের মাধ্যমেই তার পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের কাছেই আসতো। এসকল সুবিধাবাদী নেতারা পরে ভাসানীকে ত্যাগ করে ছিলেন যেমন লারি, মাহমুদ আলী কাসুরি, গারদেজি।

শেখ মুজিব গোলটেবিল বৈঠকের আগে সহ নেতাদের বাসার পরিবর্তে কয়েকদিন লাহোরের এম্বাসেডর হোটেলে অবস্থান করেছিলেন তার সাথে ডাক নেতাদের বৈঠকের সুবিধার্থে তা নিয়ে জামাতের জাহানে নও পত্রিকা অনেক সমালোচনা শুরু করেছিল। ৬৫ এর যুদ্ধের সময় ভাসানি খাঁটি ইমানদার পাকিস্তানী হিসেবে মোনায়েম আইয়ুবের দালালী করতে থাকেন। ৬ দফার উত্তাল দিন গুলিতে তিনি মোনায়েম খানের কণ্ঠ হুবুহু ব্যাবহার করতেন। ৬৮ সালে গন অভ্যুত্থানের আন্দোলন শুরু করে পরে তিনি ঘোষণা ছাড়াই পিছ টান দিয়ে মফস্বল সফর শুরু করেন। আন্দোলন চলে যায় ডাক নেতাদের হাতে। ডাকের ছাত্র শাখা সাক SAC আন্দোলনকে গন অভ্যুত্থানে পরিনিত করার পর তিনি ঢাকায় আসেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরেই আইউবের পক্ষে দালালী করতে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। সেখানে একের পর এক সভা করে আইউব বিরোধী নেতাদের বিপর্যস্ত করে তুলেন। জামাত কর্মীদের হাতে মার খাওয়ার পরও তার দালালী কমে নাই। আইউবের পতনের পর মওলানাকে ১০ মাস আর রাজনীতির মাঠে খুজে পাওয়া যায়নি নীরবে সন্তোষে সময় কাটিয়েছেন।

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!