স্বাধীনতা লাভের দিন নিকটে
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে বলেন, “অশ্রু ও রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়ছি, সে স্বাধীনতা লাভের দিনটি অতি নিকটে।” স্বাধীন বাঙলা বেতারকেন্দ্র থেকে ২৩ নভেম্বর রাতে এই ভাষণ প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ধারণা অশেষ অর্থবহ। স্বাধীনতার তাৎপর্য নির্ভর করে যুদ্ধাবস্থায় এর জন্য আমরা কী মূল্য দেই এবং শান্তির সময়ে এর কী ব্যবহার করি তার উপর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে তরুণেরা যে যুদ্ধে লিপ্ত, তা বিদেশি দখলদারকে বিতাড়িত করার সংগ্রাম এবং অসাম্য ও সুবিধাভােগের অবসান ঘটানাের সংগ্রাম। তিনি জানান, আমাদের আজকের সংগ্রাম সেদিন সার্থক হবে। যেদিন আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। সমাজের যে ভবিষ্যৎ রূপ আজ বাঙলাদেশের জনসাধারণ প্রত্যক্ষ করেছেন সেখানে সকলের সমানাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন গঠিত হবে এবং উন্নয়ন ও পরিপূর্ণতার সাধারণ লক্ষ্যে উপনীত হবার প্রয়াসে সকলে অংশ গ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বেতার ভাষণে বলেন, যে সামরিক শাসকচক্র আত্মহত্যার যে ব্যবস্থাই করে থাকুক না কেন, আর এই উপমহাদেশের জন্য যে ব্যবস্থাই বিশেষ বিশেষ রাষ্ট্রের মনঃপূত হােক না কেন বাঙলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযােগ্য ব্যবস্থা একটিই—আর তা হলাে পূর্ণ স্বাধীনতা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঠিক এই সময়ে এই উপমহাদেশে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে প্রেসিডেন্ট নিকসন কী উদ্দেশ্য সাধন করতে চান? তার দেশের কূটনীতিবিদ ও আইনসভান সদস্যরা অবগত নন এমন কি নতুন তথ্য তিনি জানতে ইচ্ছুক? দশ লক্ষ বাঙালি কে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা এবং প্রায় এক কোটি মানুষকে বাস্তুত্যাগে বাধ্য করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকারকে তার প্রশাসন নিন্দা করেননি। এখন তথ্যসগ্রাহক পাঠিয়ে কী ফল তারা লাভ করতে চান, তা জানি না।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে এতে আমাদের সংকল্পের কোন ব্যত্যয় হবে না। সে সংকল্প হলাে দেশকে শত্রুমুক্ত করে নিজেদের অভিপ্রেত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।”
সূত্র: সপ্তাহ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১