You dont have javascript enabled! Please enable it! হানাদার সৈন্যরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ ছাড়াও তাদের শরীর থেকে নানা প্রকার স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে আসত - সংগ্রামের নোটবুক

হানাদার সৈন্যরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ ছাড়াও তাদের শরীর থেকে নানা প্রকার স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে আসত

হানাদার বাহিনী নাগেশ্বরী এসেই প্রথমে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। কিছুদিন পর তারা জনগণকে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে।

পাক বর্বর বাহিনী একদিন নাগেশ্বরী থানার বাইরে থেকে একজন লোক ঘরে নিয়ে আসে। প্রথমে মারপিট করে, পরে হানাদাররা উক্ত লোকটিকে নির্মমভাবে ভলিবল এবং ফুটবলের ন্যায় কিল-ঘুষি এবং বুট জুতোর লাথি মেরে হত্যা করে।
সাধারণতঃ কিল,ঘুষি, লাথি, রাইফেলের বাঁট প্রভৃতির দ্বারা নির্মমভাবে বর্বর সৈন্যরা নির্দোষ জনগণের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।

হানাদার দস্যু বাহিনী নাগেশ্বরী দখলের তিন দিন পর একদিন সকাল ১০ টায় নাগেশ্বরী বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকের গ্রামে প্রবেশ করে। জনৈক আছমত মিয়ার গৃহে পাক সৈন্যরা ঢুকে আছমত মিয়া ও অন্য পুরুষদের বের করে দিয়ে তার পুত্রবধূর (২০) উপর পাশবিক অত্যাচার করে।

নাগেশ্বরী থানার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের আনছার হাটে একদিন মুক্তিযোদ্ধারা পাক সৈন্যদের মারার জন্য মাইন পুঁতে রাখে। দুর্ভাগ্যবশতঃ জনৈক রাখাল ও তার গরু উক্ত মাইনের শিকার হলে খবর পেয়ে নাগেশ্বরী থেকে কিছু সংখ্যক পাক সৈন্য আনছার হায়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অনেক লোক ধরে। বর্বর সৈন্যরা আনছার হাটের নিকটস্থ বাড়ি থেকে কিছুসংখ্যক মেয়েছেলে ধরে এবং বাছাই করে অপেক্ষাকৃত কম বয়স্কা মেয়েছেলেদের উক্ত হাটের নিকটবর্তী হাবিবর রহমানের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে ছেড়ে দেয়। ঐ দিন ঐ এলাকা থেকে মোট ১০ জন পুরুষকে হানাদাররা ধরে নিয়ে এসে নাগেশ্বরী ঈদগাহ মাঠে বিভিন্ন স্থান থেকে ধৃত আরো কতিপয় লোকসহ মোট ৩৬ ব্যাক্তিকে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করেছে।

হানাদার সৈন্যরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ ছাড়াও তাদের শরীর থেকে নানা প্রকার স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে আসত।

২৭ শে মে হানাদার বাহিনী নাগেশ্বরী থানায় প্রবেশের পরপরই ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে।  হানাদাররা নাগেশ্বরী বাজারে প্রবেশ করে প্রথমেই হিন্দু পট্টিতে দোকান ও বাড়ীঘর অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত করে। অতঃপর হানাদাররা ঢাকাইয়া পট্টি অগ্নিসংযোগে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

ঐ দিনই  বাজারসংলগ্ন সাঞ্জুয়ার ভিটার মুক্তিযোদ্ধা মোসলেমের বাড়ী এবং প্রতিবেশী রমজানের বাড়ী তারা পুড়িয়ে দেয়।  উক্ত দিন হানাদার সৈন্যরা নাগেশ্বরী বাজার জামে মসজিদের নিকট পপাটুয়া (টমেটু) নামে একটি পাগলকে গুলি করে হত্যা করে। অপর একটি পাগলিনীকে ঐ দিন দস্যু সেনারা হিন্দু পট্রি সংলগ্ন আজিজার মিয়ার গৃহে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে। নাগেশ্বরী বাজারে হিন্দুপট্টি এবং ঢাকাইয়া পট্টিতে অগ্নিসংযোগের ফলে পার্শ্ববর্তী বহু ব্যবসায়ী ও গৃহস্থের বাড়ীঘর ভস্মীভূত হয়েছে।

পাক হানাদার বাহিনী নাগেশ্বরী থানায় পৌঁছেই ডাকবাংলা এবং হাইস্কুলে ঘাঁটি করে। কিছুদিন পরেই এখান থেকে তারা জনগণকে নির্যাতন শুরু করে। পাক সৈন্যরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়তো এবং লোক ধরে এনে দৈহিক নির্যাতন চালাতো। সাধারণত দৈহিক নির্যাতনের প্রক্রিয়া ছিল কিল, ঘুষি, বুট জুতার লাথি, রাইফেলের বাঁট এবং বেয়নেট দিয়ে আঘাত হেনে তীব্রভাবে অত্যাচার করে।

মুক্তি  ও মিত্রবাহিনী নাগেশ্বরী মুক্ত করার জন্য এগুতে থাকলে নাগেশ্বরী বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জনতা ও তাদের পরিবারবর্গ নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের জন্য চলে যেতে থাকে। পাক বর্বর সৈন্যরা নাগেশ্বরী বাজারের চটাৎ ও জম মাঝিকে একদিন ধরে নিয়ে গিয়ে জবাই করে মেরে ফেলেছে।

স্বাক্ষর/-
মোঃ আলতাফ হোসেন (দুলু)
নাগেশ্বরী, রংপুর