You dont have javascript enabled! Please enable it!

জিয়ার পাকিস্তানপন্থী হবার পেছনের কারণ কী ছিলো?

১। পাকিস্তান সেনা কাঠামাের আওতায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জিয়াউর রহমান পাকিস্তানী ধ্যান-ধারণা ও আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। পাকিস্তানী রাজনীতির প্রাসাদ চক্রান্তে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা ১৯৫৮ সনের ৭ই অক্টোবর সামরিক আইন জারি করেন, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ ভেংগে দেন। রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত এবং ১৯৫৬ সনে রচিত শাসনতন্ত্রের মৃত্যু বলে ঘােষণা করেন। একই সাথে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মােহাম্মদ আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খান ২৭শে অক্টোবর অস্ত্রের মুখে জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জার নিকট হতে পাকিস্তানের পেসিডেন্ট পদটি গ্রহণ করে একাধারে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, প্রধান সামরিক প্রশাসক এবং প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন। বলাবাহুল্য জেনারেল আইয়ুবের এ ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রতিটি অফিসার ও সেনা সদস্যদ্বারা ব্যাপক ভাবে সমর্থিত হয়েছিল। ‘নিজের রাষ্ট্র দখলের’ আনন্দে পাকিস্তানী অফিসার ও সেনা সদস্যগণ প্রকাশ্যতঃ গর্ববােধে উল্লাসিত হয়ে উঠেছিলাে।জেনারেল আইয়ুবের এই ধারা ও পরবর্তী পদক্ষেপের মাধ্যমে এক দশকের বেশীকাল ধরে তিনি ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন।

২। জেনারেল আইয়ুবের এই পদক্ষেপগুলাে সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে তদানীন্তন ক্যাপ্টেন জিয়ার মনে স্বাভাবিকভাবেই গভীর রেখাপাত করে থাকবে। জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসনের পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণের পর তার বিশেষভাবে প্রয়ােজন হয়ে পড়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা প্রবাহের নিখুঁত তথ্য প্রাপ্তির। জেনারেল আইয়ুবের একথাও অজানা ছিলনা যে তার কাঙ্খিত শাসন ক্ষমতার প্রতিবন্ধকতা আসবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। সেজন্য পূর্ব পাকিস্তানে উপর তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরী ছিলাে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বেসরকারী প্রশাসনের উচ্চপদসমূহে যেমন পরিবর্তন সাধন করেন, তেমনি গােয়েন্দা সংস্থাগুলিতে বিশ্বস্ত লােক নিয়ােগের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বাঙালী সেনা অফিসারদের মধ্যে জিয়াউর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের গােয়েন্দাবাহিনীতে নিয়ােগ প্রাপ্ত হন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিলগ্নে জিয়াউর রহমানকে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক গােয়েন্দা বিভাগে পাঠান যখন সামরিক শাসনের উচ্ছাস কেটে গেছে। মওলানা ভাসানী, আবুল মনসুর আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল খালেক, হামিদুল হক চৌধুরী প্রমুখ কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতে জেনারেল আইয়ুবকে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ করতে না পারেন তার জন্য ‘পােরাে’ জারী করে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের যখন রাজনৈতিকভাবে ‘জবাই’ করার ব্যবস্থা জারী হয়েছে, যখন ছাত্র আন্দোলনে নতুন কৌশলে ও মাত্রায় ধূমায়িত হচ্ছে সেই মুহূর্ত পূর্ব পাকিস্তানের উপর দৃষ্টি রাখার জন্য জেনারেল আইয়ুবের প্রশাসনে বিশ্বস্ত লােক প্রয়ােজন ছিলাে। সেই প্রয়ােজনের তালিকায় জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন খাটি বিশ্বস্ত এবং অনুগত ব্যক্তিত্ব। জিয়াউর রহমান জেনারেল আইয়ুব খানের ‘নেক নজরে’ ছিলেন। এ কারণে আইয়ুব খান তাকে পূর্ব পাকিস্তান সামরিক গােয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন।১

৩। সামরিক শাসনের আওতায় গােয়েন্দাগিরি করতে এসে সেদিনের তরুণ সামরিক অফিসার হিসেবে জিয়াউর রহমান যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা তাকে পরবর্তীকালে ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসন পরিচালনায় যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। সন্দেহ নেই।

৪। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট। জেনারেল সফিউল্লাহকে হটিয়ে জিয়াউর রহমান প্রধান সেনাপতির পদ দখল করেন। ১৯৭৫ সনের ৩০শে আগষ্ট সামরিক ক্ষমতার বলে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘােষিত হয়।

Reference: জেনারেল জিয়ার রাজত্ব – অধ্যাপক আবু সাঈদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!