২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ঃ কসবা ফ্রন্টে যুদ্ধ
বার্তা সংস্থা রয়টার আগরতলা থেকে বলেছে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা যা একেবারে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত সেখানে পাক বাহিনীর গোলাবর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেছে।
ব্যাপক রক্তক্ষয়ের পর মিত্র বাহিনী চন্দ্রপুর দখলে নিলেও পাক বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে তীব্র আক্রমণে চন্দ্রপুর (কসবা) দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আনার জন্য মেজর আইনউদ্দিন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাক সেনাদের আক্রমণে শহীদ হন।
আখাউরার গঙ্গাসাগর ফ্রন্টে ভারতীয় বাহিনী মুক্তি বাহিনীর যৌথ আক্রমনে উভয় পক্ষের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাক বাহিনী তাদের দখল বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
এই দুই যুদ্ধে পাক বাহিনী কতৃক আটক বিভিন্ন অস্রশস্র আখাউরা রেলস্টেশনে নিয়ে দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের প্রদর্শন করা হয়। গতদিন জেনারেল নিয়াজির সফরের পর কিছু বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে স্থানীয় কম্যান্ডার যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেন পরে ব্যাটেলিয়ন দফতর আখাউরায় তাদের অস্র এবং ভারতীয় বাহিনীর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ দেখানো হয়। পাকিস্তানী বাহিনী সকল নিহতদের বাশে বেধে গাড়ীতে এবং ট্রেনে আনে কিন্তু বাশ গুলি প্রায় ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।
মন্দভাগ/সালদা নদী যুদ্ধ
মন্দভাগ অবস্থান পুনর্দখল করার জন্য পাকবাহিনী একত্র হলে মুক্তিবাহিনী সুযোগ বুঝে পাক অবস্থানের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে। এতে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। মন্দভাগ পুনর্দখল করতে অসমর্থ হয়ে পাকবাহিনী সালদা নদীর কাছে মনোরা রেল সেতুর নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনী অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। ১০৬ আর. আর গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর একটি বাঙ্কার ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী সমস্ত শক্তি দিয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করলে শেষ পর্যন্ত শত্রুবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে দক্ষিন দিকে সরে যায়। যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর একজন শহীদ এবং ৪ জন আহত হয়।
পাকিস্তানী ভাষ্য
পাকিস্তানী বাহিনী কুমিল্লা সেক্টরে এক ব্যাটেলিয়ন ভারতীয় বাহিনী নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। কসবার উত্তরে ৫৭ ডিভিশনের ৩১১ ব্রিগেডের ১৯ পাঞ্জাব সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। তারা ১১৭ টি লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। লাশ গুলি বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিল। লাশ নেয়ার জন্য তারা কয়েকবার চেষ্টা করেও বেরথ হয়। এখানে ৬ টি মেশিনগান ২২ টি হাল্কা মেশিন গান ৪৬ টি রাইফেল বিপুল পরিমান গোলাবারুদ আটক করা হয়। (চন্দ্রপুর যুদ্ধ বুঝিয়েছে)
নোটঃ চন্দ্রপুর আমার নানাবাড়ি। ৭১ এ নানার বাড়িটি পাকা বাড়ীতে রুপান্তর করা হয়। ৯৫% কাজ হওয়ার পর তারা আগরতলা চলে যায় তখন পাকবাহিনী এ বাড়ীতে প্লাটুন লেভেল ক্যাম্প করে। এ ক্যাম্পটি দখল নিলে ভারতীয় বাহিনী কৌণিক ভাবে কুমিল্লা সিলেট সড়কে চলে যেতে পারত। এ ফ্রন্টে ভারতীয় বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরবর্তী অভিযান বাতিল করা হয়। পরে ব্রিগেড অধিনায়ককে এ ব্যার্থতার জন্য অবসর দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে বাড়ীর ইটের গ্যাপ এ শুকনা রুটি পাওয়া গিয়েছিল।
পাকিস্তানী বাহিনী এক দিকে বিদেশী সাংবাদিকদের এনে তাদের দিয়ে তাদের সাফল্য প্রচারের বেবস্থা নিয়েছিল তখন ভারতীয় অবস্থান থেকে কসবা রেল ষ্টেশন এলাকা দখলে রাখার চিত্রায়ন করে এসোসিয়েট প্রেস। শেষে কসবার ছবি।